Class 8

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান বক্সারের যুদ্ধ ও ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ব্যবস্থা প্রশ্ন উত্তর

 

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান বক্সারের যুদ্ধ ও ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ব্যবস্থা প্রশ্ন উত্তর

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান বক্সারের যুদ্ধ ও ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ব্যবস্থা এই অধ্যায়ের বিভিন্ন প্রশ্ন উওর আলোচনা করা হয়েছে।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান প্রশ্ন উত্তর

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান : ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান-বক্সারের-যুদ্ধ-ও-ব্রিটিশ-রেসিডেন্ট-ব্যবস্থা-প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন 1 . মিরকাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের ক্ষেত্রে কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যাবসার কী ভূমিকা ছিল? বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রভাব কী হয়েছিল ?

উওর:-

মিরকাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধে ব্যক্তিগত ব্যাবসার ভূমিকা :

মিরজাফরের পর তার জামাই মিরকাশিমকে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলার নবাব পদে বসায়। কিন্তু মিরকাশিম ছিলেন দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনচেত নবাব। তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের বিনা শুল্কে ব্যক্তিগত বাণিজ্যকে মেনে নিতে পারেননি। আসলে ব্রিটিশ কোম্পানি দস্তক প্রথার ছাড় নিয়ে বিনা শুল্কে বাণিজ্য চালাত।

অপর দিকে দেশীয় ও বিদেশি বণিকদের শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য করতে হত। এই শুল্ক বৈষম্যের কারণে নবাবের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল এবং দেশীয় বণিকরাও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল। তাই নবাব হিসেবে মিরকাশিম দেশীয় বণিকদের ওপর থেকে বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেন।

এতে মিরকাশিম দেশীয় বণিকরা বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় কিছুটা সুবিধা পেলেও নবাবি কোশাগার আরও বেশি করে অর্থ সংকটে পড়ে। অপরদিকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানিও নবাব মিরকাশিমের এই পদক্ষেপে ক্ষিপ্ত হয়। ফলে কোম্পানি ও নবাবের মধ্যে এক বিরোধের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রভাব:

বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার পর ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে যত বেশি সম্ভব রাজস্ব আদায় করা। এর ফলে বাংলা এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যার নাম ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।

প্রশ্ন 2 বক্সারের যুদ্ধের বর্ণনা দাও। অথবা, বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

সূচনা: পলাশির পর বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি বাংলার বাইরে সাম্রাজ্য বিস্তারের সুযোগ পায় ।

বক্সারের যুদ্ধ

[1] প্রেক্ষাপট: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক দাবির সবটুকু মিরজাফর মেটাতে পারেননি। তাই সেই অর্থনৈতিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কোম্পানি মিরজাফরকে সরিয়ে তাঁর জামাই মিরকাশিমকে বাংলার নবাব পদে বসায়। কিন্তু স্বাধীনচেতা মিরকাশিম গোপনে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন।

[2] মিরকাশিমের পদক্ষেপ: মিরকাশিম প্রথমেই বাংলার রাজধানী হিসেবে মুরশিদাবাদের বদলে মুঙ্গেরকে বেছে নেন। পাশাপাশি তিনি নবাবের পুরানো সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দিয়ে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

[3] ব্রিটিশের ভূমিকা: ব্রিটিশ কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্যে দস্তকের অপব্যবহার করে কর ফাঁকি দেয়। নবাব বাধ্য হয়ে দেশীয় বণিকদের ওপর থেকেও বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেন। মিরকাশিমের এই ভূমিকায় ব্রিটিশ ক্ষুব্ধ হয় ।

[4] যুদ্ধের সূচনা: মিরকাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরাসরি সংঘাত বাঁধে (১৭৬৩ খ্রি.)। কাটোয়া, মুরশিদাবাদ, গিরিয়া, উদয়নালা এবং মুঙ্গেরের যুদ্ধে মিরকাশিম কোম্পানির কাছে হেরে যান।

পরে মিরকাশিম অযোধ্যার শাসক সুজা-উদদৌলা, দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে নিয়ে এক ব্রিটিশবিরোধী জোট গঠন করেন। এই জোটের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বক্সারের যুদ্ধ বাঁধে (১৭৬৪ খ্রি.)।

[5] পরিণাম: বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী জিতে যায়। মুঘল সম্রাট কোম্পানির সঙ্গে আপোস রফা করে নেন। সুজা-উদ্‌ দৌলা ও মিরকাশিম পালিয়ে যান। বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর উত্তর ভারতে ও ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতার প্রসার ঘটে। দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। শেষপর্যন্ত কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান:

| প্রশ্ন 3 বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্বগুলি উল্লেখ করো।

সূচনা: বাংলার নবাব মিরকাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্‌ দৌলা, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এদের মিলিত জোট বক্সারের যুদ্ধে ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনীর কাছে হেরে যায়। বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যায় ।

বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল

[1] ঔপনিবেশিক শাসনের দৃঢ়তায়: পলাশির যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।

[2] ব্রিটিশদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ: বক্সারের যুদ্ধে নবাব বাহিনী ও ইংরেজ বাহিনী উভয়েই নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে। এই সর্বাত্মক লড়াইয়ে ব্রিটিশরা জয়ী হওয়ায় ইংরেজ বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল।

[3] উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার: বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে উত্তর ভারত জুড়ে কোম্পানির আধিপত্য ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলা কোম্পানির অনুগত শাসকে পরিণত হন এবং মুঘল বাদশা কোম্পানির দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

[4] দেওয়ানি লাভ: বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে । ফলে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষেত্রেও কোম্পানির আধিপত্য স্থাপিত হয়।

[5] নির্ণায়ক যুদ্ধ হিসেবে: বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসে এক নির্ণায়ক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি ইংরেজ বাহিনী হেরে যেত, তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্যরকমভাবে লেখা হত।

( বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের জন্য ‘লর্ড’ উপাধিতে ভূষিত হন।)

প্রশ্ন 4 * পলাশির যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোটি ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতাবিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও ৷

• সূচনা: পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়ী হয়ে ভারতে তাদের জয়যাত্রার সূচনা ঘটায়। অপরদিকে বক্সারের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর এদেশে কোম্পানির রাজনৈতিক আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

পলাশি অপেক্ষা বক্সারের অধিক গুরুত্ব

[1] ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ হিসেবে: পলাশি নয়, বক্সারের যুদ্ধই ছিল ভারতের ইতিহাসের ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলাফল যদি ইংরেজদের প্রতিকূলে যেত, তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্যরকমভাবে লেখা হত।

[2] ঔপনিবেশিক শাসনের দৃঢ়তায় : পলাশির যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ঔপনিবেশিক শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।

[3] বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় : পলাশির যুদ্ধে জিতে বাংলায় ইংরেজ কোম্পানির জয়যাত্রার সূচনা ঘটে। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ শক্তিকে বাধা দেওয়ার মতো আর কোনো শাসক রইল না। ফলে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ নিষ্কণ্টক হয়।

[4] উত্তর ভারতে আধিপত্যের সূচনা: বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর কোম্পানি বাংলায় নিজেদের আধিপত্যকে দৃঢ় করে উত্তর ভারতের দিকে নজর দেয়। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলা কোম্পানির অনুগত শাসকে পরিণত হন এবং নামসর্বস্ব মুঘল বাদশা কোম্পানির দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

ফলে সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা ঘটে।
বাংলার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের

[5] আর্থিক লুণ্ঠনের সূচনায়: পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর কোম্পানি পর বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলায় কোম্পানির অবাধ অর্থনৈতিক লুণ্ঠন শুরু হয়।

প্রশ্ন 5 *ধরো তুমি ব্রিটিশ কোম্পানির একজন কর্তাব্যক্তি। ৭৬-এর মন্বন্তর-এর সময় তুমি বাংলায় ঘুরলে তোমার কী ধরনের অভিজ্ঞতা হবে? মন্বন্তরের সময়ে মানুষকে সাহায্যের জন্য কোম্পানিকে কী কী করতে পরামর্শ দেবে তুমি ?

অভিজ্ঞতা

৭৬-এর মন্বন্তরের প্রধান কারণ ছিল অনাবৃষ্টি। পরপর দু-বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে বাংলার খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে। মাঠের ধান শুকিয়ে খড় হয়ে গেছে। সারা বাংলায় কার্যত শ্মশানের নীরবতা নেমে এসেছে। কৃষকরা কৃষিকার্যে উৎসাহ হারিয়েছে।

বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত রাজস্বের চাপে পড়ে বাংলার সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রামবাংলায় দারিদ্র্যের করাল ছায়া নেমে এসেছে। চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল।

গুটি বসন্ত, মহামারি, কলেরায় গ্রামবাংলার এক-তৃতীয়াংশ লোক মারা গেছে। চারিদিকে শবদেহ, পূতি গন্ধ আর হাহাকার। বাজার থেকে চাল উধাও হয়েছে। ফলে খাদ্যহীন বাংলা ধুঁকছে। কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের জুলুমে বাংলার গরিব সাধারণ কৃষককূল সর্বস্বান্ত হয়েছে।

পরামর্শ

মন্বন্তরের সময় মানুষকে সাহায্যের জন্য কোম্পানির প্রতি আমার পরামর্শগুলি হল—

[1] তদন্তকারী বোর্ড তৈরি করে কোম্পানিকে আত্মসমীক্ষা ও প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

[2] দ্রুত গোটা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য বণ্টন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

[3] রাজস্ব আদায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে ও পরবর্তী বেশ কিছু বছর রাজস্বের হার সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।

[4] কোম্পানির অসাধু, সুবিধাবাদী ও অত্যাচারী কর্মচারীদের বরখাস্ত করতে হবে।

[5] বাংলার কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কৃষকরা যাতে পুনরায় কৃষিকাজ শুরু করতে পারে, তার জন্য তাদেরকে আর্থিক ঋণদান ও সার সরবরাহসহ অন্যান্য কৃষিজ উপকরণের সাহায্যদান করতে হবে।

প্রশ্ন 6 স্বত্ববিলোপ নীতি সম্পর্কে কী জান? [

সূচনা: ডালহৌসির উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ছিল স্বত্ববিলোপ নীতি।

ত্ববিলোপ নীতি:

[1] পরিচিতি: বড়োলাট ডালহৌসি এক ঘোষণায় বলেন,(কোম্পানির আশ্রিত কোনো দেশীয় রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে। এই নীতি ‘স্বত্ববিলোপ নীতি’ (Doctrine of Lapse) নামে পরিচিত। ডালহৌসি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে এই নীতির প্রয়োগ করেন।

[2] প্রয়োগ পদ্ধতি: ডাইরেক্টর সভা কর্তৃক ঘোষিত (১৮৩৪ খ্রি.) দত্তক প্রথা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিকে ডালহৌসি প্রয়োগ করেছিলেন। এই নীতি প্ৰয়োগ করার আগে ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনভাগে ভাগ করেন—

(i) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য,
(ii) কোম্পানির সৃষ্ট রাজ্য,
(iii) কোম্পানির আশ্রিত বা কোম্পানির অধীনস্থ রাজ্য।

[3] শর্তাবলি: স্বত্ববিলোপ নীতির প্রধান শর্তগুলি ছিল—

(i) কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের রাজার পুত্র সন্তান না থাকলে রাজারা দত্তক নিতে পারবেন না এবং সেই রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে।

(ii) ইংরেজআশ্রিত রাজ্যগুলি দত্তক নেওয়ার আগে কোম্পানির অনুমতি নেবে নতুবা ওই রাজ্যটি সরাসরি কোম্পানির শাসনাধীনে আসবে।

(iii) দেশীয় স্বাধীন রাজ্যগুলির সম্পর্কে কোম্পানি নিরপেক্ষ থাকবে ।

[4] প্রয়োগ: ডালহৌসি এই নীতির প্রথম প্রয়োগ ঘটান কোলবা রাজ্যে (১৮৪০ খ্রি.)। এরপর তিনি একে একে সাতারা (১৮৪৮ খ্রি.), সম্বলপুর ও জৌনপুর (১৮৪৯ খ্রি.), ভগৎ (১৮৫০ খ্রি.), উদয়পুর (১৮৫২ খ্রি.), ঝাঁসি (১৮৫৩ খ্রি.), নাগপুর (১৮৫৪ খ্রি.), কর্ণাটক (১৮৫৬ খ্রি.) ইত্যাদি রাজ্য গ্রাস করেন।

[5] সমালোচনা : স্বাধীন দেশীয় রাজ্য, কোম্পানির সৃষ্ট রাজ্য ও কোম্পানির আশ্রিত রাজ্যগুলিতে স্বত্ববিলোপ নীতির নির্ধারণে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে এই নীতির অপপ্রয়োগ ঘটে। উদয়পুর রাজ্যটি ব্রিটিশের সৃষ্ট না হলেও তাকে স্বত্ববিলোপ নীতির বলি হতে হয়েছিল।

প্রশ্ন 7 *ধরো তুমি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বাংলার একজন বাসিন্দা। কোম্পানি কর্তৃক প্রবর্তিত অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ও প্রভাব সম্পর্কে জানিয়ে তোমার বন্ধুকে একটা চিঠি লেখো।

প্রিয় নয়ন,

আশা করি তোমরা সকলেই ভালো আছো। আমাদের খবর একপ্রকার ভালো। তুমি নিশ্চয়ই জান যে, ভারতে ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে ওয়েলেসলি ও ডালহৌসি এমন কিছু নীতি চালু করেছেন, যেগুলি ভারতবাসীর পক্ষে মোটেই মঙ্গলজনক নয়।
বিশেষত ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি ভারতবাসীর আর্থসামাজিক তথা রাজনৈতিক জীবনে কুপ্রভাব ফেলেছে।

ওয়েলেসলি এবং ডালহৌসি দুজনেই চেয়েছেন এই দুই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ভারতে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার ও সুদৃঢ় করতে। ভারতবাসীর কল্যাণ সাধনের প্রচার করা হলেও এই নীতিগুলির মূল উদ্দেশ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটানো।

ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়োগ করে বলেন কোনো দেশীয় রাজা এই নীতি গ্রহণ করলে ইংরেজ তার রাজ্যকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ও অভ্যন্তরীণ বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
এ ছাড়াও এই নীতি মেনে চলার জন্য দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর বেশকিছু শর্ত চাপানো হয়। যেমন—দেশীয় রাজ্যে একদল ইংরেজ সেনা রাখা এবং তাদের নিজ খরচে রক্ষণাবেক্ষণ করা, কোম্পানির অনুমতি ছাড়া অন্য

কারোর সঙ্গে মিত্রতা বা যুদ্ধ না করা ইত্যাদি। আমার মনে হয় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি হল একটি ফাঁদ এবং এই ফাঁদে পড়ার অর্থ ছিল কোনো রাজা বা রাজ্যের স্বাধীনতার বিসর্জন। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাজা বা রাজ্যগুলি প্রকৃত অর্থে আত্মরক্ষার অধিকার হারাত।

অপরদিকে তুমি দেখবে ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশীয় রাজ্যগুলিকে গ্রাস করতে শুরু করেছেন। তুমি জানো ডালহৌসি তার স্বত্ববিলোপ নীতিতে বলেন কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট কোনো রাজ্যের রাজার পুত্র না থাকলে তিনি দত্তক নিতে পারবেন না ।
সেই রাজ্য কোম্পানিভুক্ত হবে। এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ডালহৌসি একাধিক দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছেন ।

ওয়েলেসলি ও ডালহৌসির নীতিগুলি দেশীয় রাজা তথা হিন্দুসমাজকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। আমার তো মনে হয় এই ক্ষোভ স্বাভাবিক। তুমি কী মনে করো এই দুই নীতি সম্পর্কে তোমার মনোভাব জানিয়ে আমার পত্রের উত্তর দিয়ো। ভালো থেকো। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম ।
ইতি
সঞ্জীব

নয়ন
বাঁকুড়া —৭২২১0১

প্রশ্ন ৪ *অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি বিষয়ে টিপু সুলতান ও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর মধ্যে একটি কথোপকথন লেখো।

কথোপকথন: বিষয়—অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি

টিপু সুলতান: শুনেছেন নিশ্চয়ই, ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তারের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেছে।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও: হ্যাঁ শুনেছি, তবে নীতিটি সম্বন্ধে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই।

টিপু সুলতান: শুনুন, এই নীতিতে মূলত বলা হয়েছে—কোনো দেশীয় রাজ্য এই নীতি গ্রহণ করলে তাঁর রাজ্যকে ইংরেজরা বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিপদ থেকে রক্ষা করবে।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও: এতো ভালো কথা, কেননা বিপদে ইংরেজদের সাহায্য পাওয়া যাবে।

টিপু সুলতান: না, আরও শর্ত আছে, শুনুন। এই নীতিতে আরও বলা হয়েছে। নীতি গ্রহণকারী দেশীয় রাজ্যে একদল ইংরেজ সৈন্য ও একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট থাকবে, যাদের খরচ চালাতে হবে ওই দেশীয় রাজ্যকেই।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও: তাই নাকি! তাহলে তো আমাদের অর্থভাণ্ডারে টান পড়বে।

টিপু সুলতান: শুধু তাই নয়। এই নীতিতে আরও বলা হচ্ছে যে—ওই দেশীয় রাজ্যটি কোম্পানির অনুমতি ছাড়া অপর কোনো শক্তির সঙ্গে মিত্রতা বা যুদ্ধ করতে পারবে না ।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও : কী বলছেন? এতো সরাসরি দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতাকে খর্ব করার প্রচেষ্টা।

টিপু সুলতান: তাহলেই ভাবুন ব্রিটিশ কীভাবে আমাদের মতো দেশীয় রাজ্যগুলিকে দখল করার জন্য ফাঁদ পেতেছে।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও: তাইতো দেখছি। আপনি যেভাবে ফরাসিসহ বিদেশি সাহায্যে নিজের স্বাধীন ভিত্তি মজবুত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তা এই নীতির ফলে বাধাপ্রাপ্ত হবে।

টিপু সুলতান: আপনি কী করবেন জানিনা, তবে প্রাণ থাকতে আমি এই নীতি গ্রহণ করব না ।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও: আসলে কী জানেন, পেশোয়া পদ নিয়ে আমাদের মারাঠা সর্দারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। তাই শেষপর্যন্ত আমি ইংরেজদের প্রভাবমুক্ত হয়ে কতদিন স্বাধীনভাবে চলতে পারব তা জানি না ।

প্রশ্ন 9 ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অধীনতামলুক মিত্রতা নীতি থেকে স্বত্ববিলোপ নীতিতে বিবর্তনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে ?

● সূচনা: ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার

[1] অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি: লর্ড ওয়েলেসলিভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের বিস্তারের জন্য অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চালু করেন। তিনি এই নীতি প্রয়োগ করে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেন।

তিনি সরাসরি অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশীয় শক্তিগুলিকে অধীনতামলুক মিত্রতা নীতি মেনে নিতে বাধ্য করেন। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়োগ করে মহিশুরের সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। মহীশূর রাজ্যের বেশকিছু অঞ্চলে সরাসরি ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাওকে বেসিনের সন্ধি (১৮০২ খ্রি.)-র মাধ্যমে অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তিতে সই করানো হয়। যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ কোম্পানি পেশোয়ার সমস্ত এলাকার দখল নিলে বিভিন্ন মারাঠা শক্তি অধীনতামলুক মিত্রতা নীতি মেনে নেয়। দাক্ষিণাত্যে ও দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকার চূড়ান্ত রূপ পায় ।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান : বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

প্রশ্ন 1 টীকা লেখো: দেওয়ানি লাভ।

দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে।

[2] স্বত্ববিলোপ নীতি: লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগ নেয়। ডালহৌসি এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ভারতীয় শাসকদের পুরুষ উত্তরাধিকারীহীন শাসন এলাকাগুলি দখল করেন।
তিনি একে একে সাতারা, সম্বলপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চলের দখল নেন। তিনি সিপাহি বিদ্রোহ অর্থাৎ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের ষাট ভাগেরও বেশি অঞ্চলে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ

প্রেক্ষাপট : পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর ইংরেজ কোম্পানির পক্ষে বাংলায় ক্ষমতা বিস্তার করা অনেক সহজ হয়। বাংলাতে কোম্পানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য সুনিশ্চিত হয়। একদিকে উত্তর ভারতে কোম্পানির ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়ে অপরদিকে দিল্লির মুঘল সম্রাটের সার্বভৌমত্ব সমস্যায় পড়ে।

দেওয়ানির অধিকার দান ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দানে বাধ্য হন।

প্রশ্ন2: নজম-উদদৌলার পরিচয় দাও।

মিরজাফর ও তাঁর সর্বকনিষ্ঠা পত্নী মনিবেগমের পুত্র ছিলেন নজম-উদ্‌ দৌলা। মিরজাফরের মৃত্যুর (৫ ফেব্রুয়ারি, ১৭৬৫ খ্রি.) পর তাঁর নাবালক দ্বিতীয় পুত্র নজম-উদ্‌ দৌলা বাংলার মসনদে বসেন। নাবালক নবাব নজম-উদ্‌ দৌলাকে কোম্পানি একটি সন্ধি স্বাক্ষরে (২০ ফেব্রুয়ারি, ১৭৬৫ খ্রি.) বাধ্য করে। এই সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করে।

দ্বৈতশাসনের ভাগীদার: দেওয়ানি (রাজস্ব আদায় ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব) লাভের মাধ্যমে বাংলার রাজনীতিতে কোম্পানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। নবাব নজম-উদদৌলার হাতে রয়ে যায় শুধুমাত্র নিজামত (আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শাসন কাজ পরিচালনার দায়িত্ব) ক্ষমতা। বাংলায় শুরু হয় দ্বৈত শাসন, যার একজন অংশীদার হিসেবে নজমউদদৌলা নিজের দায়ভার এড়াতে পারেন না। নজম-উদ্‌ দৌলা

প্রশ্ন 3 দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব বা ফলাফল লেখো।

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি ছিল—

শিল্পবাণিজ্যের ধ্বংসসাধন : দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিনা শুল্কে বাণিজ্যিক অধিকারকে কাজে লাগিয়ে বাংলার বাণিজ্যে একচেটিয়াভাবে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্যের ধ্বংসসাধন ঘটে।

কৃষকদের দুর্দশা বৃদ্ধি: কোম্পানির ইজারাদাররা (রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীরা) কৃষকদের কাছ থেকে চড়া হারে রাজস্ব আদায় শুরু করলে কৃষকদের দুঃখদুর্দশা বাড়ে।

দুর্নীতির প্রসার: বিল অব এক্সচেঞ্জ, বাঁধ, সেতু ও রাস্তা নির্মাণের সূত্রে | কোম্পানির কর্মচারীরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর; দ্বৈতশাসনের কুফল হিসেবে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১১৭৬ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১৭৭০ খ্রি.) নেমে আসে।

প্রশ্ন 4। টীকা লেখো: ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।

আঠারো শতকের মধ্যভাগে বাংলার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে এক নেতিবাচক ঘটনা ছিল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।

সময়কাল: ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ তথা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটেছিল।

প্রেক্ষাপট: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈত শাসন চলেছিল। এই সময়কালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব রাজস্ব আদায় করা।

পরিণতি: ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পরিণতি হিসেবে বাংলায় ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। ঠিকমতো বর্ষা ও জলসেচের অভাবে কৃষিকাজ নষ্ট হয়েছিল। অভাবের তাড়নায় কৃষকরা গোরু, মহিষ, কৃষিজযন্ত্রপাতি, এমনকি পুত্র-কন্যাদেরও বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হয় ।

প্রশ্ন 5 ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলিকে কী কী ভাগে ভাগ করেন তার বর্ণনা দাও।

ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলিকে কোম্পানি সৃষ্ট রাজ্য, কোম্পানির আশ্রিত (করদ) রাজ্য এবং দেশীয় স্বাধীন রাজ্যরূপে ভাগ করেন ।

কোম্পানি সৃষ্ট রাজ্য : এই রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে ওই রাজ্য কোম্পানির সাম্রাজ্যভুক্ত হবে এবং ওই রাজা দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন না ।

কোম্পানির আশ্রিত (করদ) রাজ্য: এই শ্রেণির রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজারা কোম্পানির অনুমতি নিয়ে দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু কোম্পানি অনুমতি না দিলে ওই রাজ্য কোম্পানির সাম্রাজ্যভুক্ত হবে।

দেশীয় স্বাধীন রাজ্য: দেশীয় স্বাধীন রাজ্যের রাজারা ইচ্ছামতো দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন। স্বাধীন রাজ্যগুলিতে কোম্পানি কোনোরকম হস্তক্ষেপ করবে না।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান : 6 প্রশ্ন ও চাক টীকা লেখো: অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি।

প্রবর্তন: ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেল ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন।

স্বরূপ: ওয়েলেসলি এই নীতি প্রয়োগ করে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়েলেসলি সরাসরি বা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশীয় শক্তিগুলিকে এই নীতি মেনে নিতে বাধ্য করেন।

নীতির প্রয়োগ, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়োগ করে মহীশূরের সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাওকে বেসিনের সন্ধির মাধ্যমে অধীনতামূলক মিত্রতার চুক্তিতে সই করানো হয় (১৮০২ খ্রি.)।

প্রশ্ন 7 টীকা লেখো: ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব।

আঠারো শতকে ভারতে দুই বাণিজ্যিক শক্তি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বিরোধ বাঁধে।

সংঘাতের কারণ: ভারতে উপনিবেশ গঠন আর বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্রিটিশ বণিক কোম্পানির সঙ্গে ফরাসি বণিক কোম্পানির সংঘাত বাঁধে। সংঘাতকাল: ব্রিটিশ বণিকদের সঙ্গে ফরাসি বণিকদের এই সংঘাত চলেছিল প্রায় ২০ বছর (১৭৪৪ খ্রি.–১৭৬৩ খ্রি. পর্যন্ত)।

সংঘাতস্থল: ইঙ্গ-ফরাসি সংঘাত মূলত দক্ষিণ ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল। করমন্ডল উপকূল ও তার পশ্চাদভূমি কর্ণাটক (ইউরোপীয়দের দেওয়া নাম) অঞ্চলে এই দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল। ৩টি ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের মূল কেন্দ্র ছিল এই অঞ্চল । পরিণাম: বন্দিবাস বা তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধে (১৭৬০ খ্রি.) ফরাসিরা ব্রিটিশদের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর-কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না ।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান অনুশীলনী:

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি: আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান 

প্রশ্ন 1 “মিরকাশিমকে বাংলার নবাবপদে বসিয়ে কোম্পানির ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়”—বিশ্লেষণ করো।

O ইংরেজ কোম্পানি ভেবেছিল মিরজাফরকে সরিয়ে মিরকাশিমকে বাংলায় নবাবপদে বসালে আরও বেশি পরিমাণে আর্থিক শোষণ করা যাবে। এ ছাড়াও কোম্পানির ধারণা ছিল মিরকাশিম তাদের আদেশ মেনেই চলবে। কিন্তু পরে মিরকাশিমের স্বাধীনচেতা মনোভাব কোম্পানির ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে।

প্রশ্ন 7 টীকা লেখো: ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব।

আঠারো শতকে ভারতে দুই বাণিজ্যিক শক্তি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বিরোধ বাঁধে।

সংঘাতের কারণ: ভারতে উপনিবেশ গঠন আর বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্রিটিশ বণিক কোম্পানির সঙ্গে ফরাসি বণিক কোম্পানির সংঘাত বাঁধে। সংঘাতকাল: ব্রিটিশ বণিকদের সঙ্গে ফরাসি বণিকদের এই সংঘাত চলেছিল প্রায় ২০ বছর (১৭৪৪ খ্রি.–১৭৬৩ খ্রি. পর্যন্ত)।

সংঘাতস্থল: ইঙ্গ-ফরাসি সংঘাত মূলত দক্ষিণ ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল। করমন্ডল উপকূল ও তার পশ্চাদভূমি কর্ণাটক (ইউরোপীয়দের দেওয়া নাম) অঞ্চলে এই দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল। ৩টি ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের মূল কেন্দ্র ছিল এই অঞ্চল । পরিণাম: বন্দিবাস বা তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধে (১৭৬০ খ্রি.) ফরাসিরা ব্রিটিশদের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর-কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না ।

প্রশ্ন 2 বক্সারের যুদ্ধের পর ক্লাইভ ধীরে ধীরে বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের জন্য কী করেছিল?

লর্ড ক্লাইভ বক্সারের যুদ্ধজয়ের সুবিধাকে ধীরে ধীরে বিস্তৃত করতে উৎসাহী ছিলেন। ফলে বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত উত্তর ভারতের ক্ষমতা সরাসরি দখল না করে কোম্পানি মুঘল সম্রাটের প্রতি মৌখিক আনুগত্য জানায়।
সেইমতো ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও সুজাউদদৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দুটি চুক্তি করে, যেগুলিকে এলাহাবাদ চুক্তি বলা হয় ।

প্রশ্ন 3 “বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জিতে যাওয়ার সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ”——উক্তিটি বিশ্লেষণ ফলাফল ছিল বে করো।

বাংলায় কোম্পানির দেওয়ানি অধিকার লাভের ফলে ভারতে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইংরেজদের ক্ষমতা বিস্তৃত হয়। সুবা বাংলার রাজস্ব আদায়ের আইনি অধিকার কোম্পানিকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল।

প্রশ্ন। 4 ক্লাইভের পরে ব্রিটিশ কোম্পানির দুই শাসক ভেরেলেস্ট ও কার্টিয়ারের মূল কৃতিত্ব কী ছিল ?

O ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানির অধিকার পাওয়ার পর রবার্ট ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে (১৭৬৭ খ্রি.) বাংলার গভর্নর হন ভেরেলেস্ট (১৭৬৭-৬৯ খ্রি.)। তাঁর আমলে দ্বৈতশাসনের কুফল হিসেবে কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি, উৎকোচ গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য দস্তকের অপব্যবহার চরমে পৌঁছোয়। তিনি এগুলি দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেন ৷

ভেরেলেস্টের পর গভর্নর হন কার্টিয়ার (১৭৬৯-৭২ খ্রি.)। তিনি আমিলদারী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটান এবং দুর্নীতি রোধের লক্ষ্যে আরও বেশি সংখ্যক পদাধিকারী নিয়োগ করেন। এ ছাড়া তিনি সেই সময় বাংলার নায়েব নিজাম রেজা খানের একচেটিয়া ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে তাঁর আমলে সংঘটিত ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের মোকাবিলায় তিনি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হন।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উওর:

প্রশ্ন 5 *দেওয়ানির অধিকার লাভের ফলে ব্রিটিশ বণিকদের মানদণ্ড’ কীভাবে রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছিল ?

● ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে এসেছিল। কালক্রমে ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় । ফলে ধীরে ধীরে ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে। এইভাবে আঠারো শতকে বণিকের মানদণ্ড ক্রমে রাজদণ্ডে পরিণত হয়।

প্রশ্ন 6 অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?

দেওয়ানি লাভের পর বাংলায় একদিকে রাজনৈতিক ও নিজামতের ক্ষমতা থাকে বাংলার নবাবের হাতে অপরদিকে অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার পেয়েছিল ব্রিটিশ কোম্পানি। ফলে নবাবের হাতে ছিল অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব, অপরদিকে ব্রিটিশ কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা। যা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

প্রশ্ন 7 : দ্বৈত শাসনের কুফল কী ছিল ?

দ্বৈত শাসনের ফলে [1] ব্রিটিশ কোম্পানি অর্থনৈতিক ক্ষমতা লাভ করায় কৃষক-সহ ভারতবাসীর ওপর আর্থিক শোষণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। [2] রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলার নবাব ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ায় শাসন ক্ষমতার ওপরেও ব্রিটিশের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

প্রশ্ন 8 ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের কাজ কী ছিল?

রেসিডেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ কোম্পানি চূড়ান্ত ক্ষমতার রূপ পেয়েছিল। রেসিডেন্ট বা ব্রিটিশ কোম্পানির প্রতিনিধিরা কোম্পানির ব্যাবসায়ীক স্বার্থরক্ষার কাজ করত। পাশাপাশি তারা কোম্পানির হয়ে ভারতীয় রাজশক্তি কাজের ওপর নজরদারি চালাত।

প্রশ্ন 9 ভারতে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ব্যবস্থা কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?

ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (পরোক্ষ) শাসন চালাত। কোম্পানি নিজের ব্যাবসায়িক স্বার্থরক্ষার জন্য বিভিন্ন রাজদরবারে নিজেদের প্রতিনিধি (রেসিডেন্ট) রাখত। এইভাবে ভারতে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।

প্রশ্ন 10 কে, কবে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তন করেন ?

বড়োলাট ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন।

প্রশ্ন 11 শ্রীরঙ্গপত্তনমের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল ?

১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরঙ্গপত্তনমের সন্ধি হয়েছিল।

টিপু সুলতান ও কর্নওয়ালিসের মধ্যে শ্রীরঙ্গপত্তনমের সন্ধি হয়েছিল।

প্রশ্ন 12 বন্দিবাসের যুদ্ধ কবে হয়েছিল? এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল ?

১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাস (তৃতীয় কর্ণাটক)-এর যুদ্ধ হয়েছিল।

এই যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। ফরাসিরা হেরে যাওয়ায় এরপর থেকে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।

প্রশ্ন 13 ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ কাকে বলা হয় ?

১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চারটি যুদ্ধ হয় কোম্পানি ও মহীশুরের মধ্যে। সেগুলিকে ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ বলা হয়। প্রথম দুটি যুদ্ধ হয়েছিল মহীশূর শাসক হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজদের। আর শেষ দুটি যুদ্ধ হয়েছিল হায়দার পুত্র টিপু সুলতানের সঙ্গে ইংরেজদের।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান ছোট প্রশ্ন উত্তর:

শূন্যস্থান পূরণ করো : আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান 

1. ব্রিটিশ কোম্পানিকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দেন ____ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম/সম্রাট ফারুকশিয়র/সম্রাট ঔরঙ্গজেব)।

2. দেওয়ানি লাভের সময় বাংলার নবাব ছিলেন। ___ নজম-উদ্‌ দৌলা/মিরজাফর/মিরকাশিম)।

3. বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব ছিলেন ___ মিরজাফর/মিরকাশিম/নজম-উদ্‌ দৌলা)।

 

4. বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা ১৭৬৫ সালে। ___ লাভ করেছিল।

দেওয়ানী।

5. দ্বৈতশাসনের ফলে কোম্পানি লাভ করে — দায়িত্ব/ দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা/অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব / দায়িত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা)।

6. —– খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সরাসরি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে।

1772।

7. ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তখন ছিল ___ খ্রিস্টাব্দ।

1770।

৪. স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন ____ টিপু সুলতান/সাদাত খান/নিজাম)।

নিজাম।

9. বন্দিবাসের যুদ্ধ হয়েছিল ____ খ্রিস্টাব্দে।

1760।

10. রঘুনাথ রাও পেশোয়া _____ কে হত্যা করেন।

নারায়ণ রাওকে।

11. ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ____ স্বাক্ষরিত হয়। (সলবাইয়ের সন্ধি/বেসিনের সন্ধি/লাহোরের সন্ধি)।

সলবাইয়ের সন্ধি

একটি বাক্যে উত্তর দাও: আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান 

1. মিরকাশিম বাংলার রাজধানীকে কোথায় স্থানান্তরিত করেন ?

মিরকাশিম বাংলার রাজধানীকে মুঙ্গের-এ স্থানান্তরিত করেন।

2. কবে এলাহাবাদের দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?

[] ● ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

3. এলাহাবাদের চুক্তি অনুযায়ী সুজা-উদদৌলা কী পান ?

এলাহাবাদের দুটি চুক্তি অনুযায়ী সুজা-উদদৌলা কোম্পানিকে বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকা দানের বিনিময়ে অযোধ্যার শাসনভার ফিরে পান।

4. পলাশির যুদ্ধ ও বক্সার যুদ্ধের মৌলিক পার্থক্য কী ছিল ?

• পলাশি ও বক্সার যুদ্ধের মৌলিক পার্থক্য ছিল পলাশির যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, বক্সারের যুদ্ধ জয়ে তা আরও সফল হয়।

5. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে ক-টি চুক্তি হয়েছিল?

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে ২টি চুক্তি হয়েছিল।

6. মুঘল বাদশাহ ১৭৬৫-এর দেওয়ানি প্রদানের বিনিময়ে কী লাভ

● মুঘল বাদশাহ ১৭৬৫-এর দেওয়ানি প্রদানের বিনিময়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব লাভ করেন। করেন ?

7. শেষ শক্তিশালী মুঘল সম্রাট কে ?

● শেষ শক্তিশালী মুঘল সম্রাট হলেন দ্বিতীয় শাহ আলম ৷

৪. কোন্ গভর্নরের আমলে বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে ?

• গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস-এর আমলে বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে।

9. কোন্‌ যুদ্ধগুলি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ নামে পরিচিত?

[] ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মহীশূরের মধ্যে চারটি যুদ্ধ হয়। এগুলি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

10. মহীশূরের রাজধানী কোথায় অবস্থিত ছিল ?

● মহীশূরের রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে অবস্থিত ছিল।

11. কবে মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল ?

• ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।

12. কে ‘মহীশূর শার্দূল’ নামে পরিচিত ছিলেন ?

● টিপু সুলতান ‘মহীশুর শার্দুল’ নামে পরিচিত ছিলেন।

13. ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব কত বছর ধরে চলেছিল ?

● ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব ২০ বছর ধরে চলেছিল, ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

14. বন্দিবাসের যুদ্ধ কবে হয় ?

বন্দিবাসের (তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে হয়।

15. কোন্ রাজ্য রক্ষা করতে গিয়ে টিপু সুলতানের মৃত্যু হয় ?

মহীশূর রাজ্য (রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম) রক্ষা করতে গিয়ে টিপু সুলতানের মৃত্যু হয়।

16. জোসেফ ডুপ্লে কে ?

জোসেফ ডুপ্লে ছিলেন পন্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর জেনারেল।

17. কোন যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে ?

বন্দিবাস বা তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

18. ১৮০২ সালে কাদের মধ্যে বেসিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এর মধ্যে বেসিনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

19 মারাঠাদের শেষ পেশোয়া কে ছিলেন?

● মারাঠাদের শেষ পেশোয়া ছিলেন দ্বিতীয় বাজিরাও।

20. সলবাই-এর সন্ধি কাদের মধ্যে হয়?

সলবাই-এর সন্ধি ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মারাঠাদের মধ্যে হয়েছিল।

21. লাহোর চুক্তি (১৮৪৬ খ্রি.) অনুযায়ী কোন্ কোন্ অঞ্চলে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ?

[ লাহোর চুক্তি (১৮৪৬ খ্রি.) অনুযায়ী জলন্ধর দোয়াব অঞ্চলে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান mcq:

আঞ্চলিক-শক্তির-উত্থান : বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

প্রশ্ন 1. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা বাংলার দেওয়ানি লাভ করে – দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে/ দ্বিতীয় বাহাদুর সাহার নিকট থেকে/© ফারুকশিয়রের নিকট থেকে © ঔরঙ্গজেবের নিকট থেকে।

দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে।

2. ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন – রবার্ট ক্লাইভ ® ওয়ারেন হেস্টিংস © কার্টিয়ার O ভেরেলেস্ট

ওয়ারেন হেস্টিংস।

3. — ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতান মারা যান। @ প্রথম ® দ্বিতীয় © তৃতীয় © চতুর্থ

চতুর্থ।

4. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন – লর্ড ক্লাইভ ® লর্ড আমহার্স্ট © লর্ড ডালহৌসি © লর্ড ওয়েলেসলি –

লর্ড ওয়েলেসলি।

5. পেশোয়া পদ বিলুপ্ত করা হয় ___ ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের পর।
প্রথম ® দ্বিতীয় © তৃতীয় Ð চতুর্থ

তৃতীয়।

6. স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক ছিলেন – রবার্ট ক্লাইভ ® হেস্টিংস © ডালহৌসি © বেন্টিঙ্ক

ডালহৌসি

7. লাহোরের চুক্তি হয়েছিল – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ® ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে © ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে © ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে

১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ।

________________________

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *