আঁকা লেখা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
আঁকা লেখা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
আঁকা, লেখা
– মৃদুল দাশগুপ্ত
আঁকা লেখা কবিতার প্রশ্ন উত্তর, বিষয়বস্তু, নামকরণ, অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর এবং অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
আঁকা লেখা কবিতার বিষয়বস্তু:
বিষয়সংক্ষেপ
কবির শিল্পী মনকে রঙিন করে তোলে পরম প্রকৃতি। চিত্রাঙ্কনে ব্যস্ত কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করেন, রূপ-রস-গন্ধে সিঞ্চিত হয়ে ওঠে তাঁর মন। তাঁর এই ভাবনা প্রকাশিত হয় ছবি ও ছড়ায়।
প্রকৃতির বুক থেকেই তিনি সংগ্রহ করে নেন আঁকার রসদ। একদৃষ্টে তিনি লক্ষ করেন তিনটি শালিক যখন কলহ থামায় তখন, অবাক হয়ে ছোটো চড়াই সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। মাছরাঙা সেই ছোটো শিশুকে তার নীল রং ধার দিয়ে চিত্রাঙ্কনে সাহায্য করতে গিয়ে মৎস্য শিকারে উদাসীন হয়ে পড়ে।
প্রকৃতির বুকে রঙিন প্রজাপতি যেন কবিকে তাঁর ছবিতে তাকে তুলে ধরার অনুরোধ জানায়। গর্ত থেকে ইঁদুর ছানাটিও তাঁর ছবিতে স্থান পেতে চায়। এইভাবেই দ্বিপ্রহরে কবিমনকে প্রকৃতিদেবী আপ্লুত করে রাখেন। রং-তুলির মধ্যে কবি যেন এক সজীব সত্তা আরোপ করে তাদের আনন্দময় ক্রিয়াকলাপের মনোমুগ্ধকর চিত্রটি তুলে ধরেন।
ধীরে ধীরে রাত্রি নামে আকাশের বুকে, চন্দ্র প্রকাশিত হয়। ধরণি চাঁদের স্নিগ্ধ আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। চন্দ্রালোকিত হরিৎক্ষেত্র কবির দৃষ্টিতে দুধের পুরু সরের মতো প্রতিভাসিত হয়ে ওঠে।
মৃদুমন্দ বাতাসে কবিমন অপূর্ব অনুভূতিতে আবিষ্ট হয়ে ওঠে, ছড়ার ভাষায় তার সে ভাবনা খাতার পাতায় প্রকাশিত হয়। জোনাকির দল বকুল গাছে বর্ণবিন্যাসে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এই অনুভূতি পাঠককুলের সঙ্গে কবির যোগসূত্র গড়ে দেয়, যা তাঁর পরম প্রাপ্তি অর্থাৎ পদক পাওয়ার সমতুল্য।
আঁকা লেখা কবিতার নামকরণ:
নামকরণ একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় সম্পদ যে-কোনো সাহিত্যশৈলীর ক্ষেত্রে, কেন না যেমনই সাহিত্যরচনা হোক না কেন, নামকরণেই তার প্রথম পরিচয় রেখাটি উঠে আসে; পাঠক বুঝে নেন রচনাটির সম্ভাব্য বিষয় কী হতে পারে। অতএব সাহিত্যিক ও সাহিত্যপ্রকাশ উভয়ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি জরুরি বিষয়।
কবি-সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্তের ‘আঁকা, লেখা’ কবিতাটি কবি-মনস্তত্ত্বের অন্যান্য প্রকাশে অসাধারণ হয়ে উঠেছে। কবি এখানে যেন নিজেই শিশু হয়ে উঠেছেন। তাই ছবি আঁকার উপকরণগুলি গুছিয়ে নিয়ে ঠিক দুপুরে তিনি যখন ছবি আঁকতে বসেন,
তখন দেখা যায়, প্রকৃতির প্রাণসঞ্চারের প্রতীক হয়ে যেন আসে শালিক-চড়ুই-মাছরাঙা-প্রজাপতি কবির আঁকা ছবির ইঁদুররা বিষয় হয়ে উঠতে চায়। কবি যেন তাদের রং নিয়ে তাঁর চিত্রে ব্যবহার করেন, এই তাদের আবদার। এমনকি রং-তুলিরাও কবির ব্যবহারে তাদের খুশি জ্ঞাপন করতে ভোলে না ।
আবার দেখা যায়, রাত আসে। জ্যোৎস্নার চন্দনে প্রকৃতি হয়ে ওঠে নিজেই এক চিত্রবিষয়, মৃদুমন্দ বাতাস বয়। আর তখনই কবি বসেন ছড়ার মজা ঘনিয়ে তোলার কাজে। কবি অনুভব করেন আকাশের তারাগুলি যেন অতি সন্তপর্ণে তাঁর ঘনিষ্ঠতায় এসে হাজির হয়েছে। জোনাকির দলও রাত্রির অন্ধকার পটভূমিতে বকুল গাছের উপর উড়ে লিখে চলেছে ‘অ’-‘আ’।
এই অসাধারণ সময়ে কবির মনও পরম পুলকিত হয়ে ওঠে। এযেন তাঁর পরম পুলক, পদক প্রাপ্তি। অতএব দেখা যায় এক সৃজন-কুশলতায় মগ্ন কবি প্রকৃতির আশ্চর্য অনুষঙ্গে হয়ে ওঠেন সৃষ্টিশীল, আঁকেন ছবি, লেখেন কবিতা। তাই কবি প্রদত্ত ‘আঁকা, লেখা’ নামকরণটি কাব্যবিষয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্কযুক্ত বলেই নিবিড় সার্থকতা লাভ করেছে তা বলাই যায়।
আঁকা লেখা কবিতার অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ হাতেকলমে
১. ‘পিটপিটে চোখ’—শব্দটির মানে ‘যে চোখ পিটপিট করে তাকায় এইরকম আরো পাঁচটি শব্দ তৈরি করো। যেমন-কুড়মুড়ে চানাচুর ।
উত্তর: খটখটে রোদ। ঘুটঘুটে অধিকার।
ফুরফুরে হাওয়া। ফুটফুটে জোছনা।
উত্তর কনকনে ঠাণ্ডা। টকটকে লাল ।
২. ঠিক বানানটি বেছে নাও : প্রশ্ন বানान
২.১ মৎস্য / মৎস / মৎশ্য -উত্তর মৎস
২.২ দুধের স্বর/দুধের সর / দুধের শর উত্তরঃ দুধের সর
২.৩ প্রশ্ন বানান কাপন/কাঁপন / কাঁপণ
উত্তর কাঁপন
২.৪ ঈশৎ/ইষৎ /ঈষৎ – উত্তরঃ ঈষৎ
৩. নীচে দেওয়া শব্দগুলির সমার্থক শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো : সামান্য, আনন্দ, মীন, নক্ষত্র, মূষিক।
প্রদত্ত শব্দ — সমার্থক শব্দ
সামান্য – ঈষৎ
আনন্দ – খুশি
মীন – মৎস্য
নক্ষত্র – তারা
মূষিক – ইঁদুর
৪.কম্পন’ শব্দ থেকে এসেছে‘কাঁপন’ শব্দটি, অর্থাৎ ‘ম্প’ যুক্তাক্ষরটি ভেঙে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া ‘ম’ আগের ধ্বনিটিকে অনুনাসিক করে তুলেছে এবং একটি নতুন “আ” ধ্বনি চলে আসছে। এই নিয়মটি মনে রেখে নীচের ছকটি সম্পূর্ণ করো।
উত্তর:
চন্দ্র > চাঁদ
ষণ্ড > ষাঁড়
চম্পা > চাঁপা
অঙ্ক > আঁক
ঝম্প > ঝাঁপ
চিত্র >চিত্রিত
পুলক > পুলকিত
মাঠ > মেঠো
৫.একসঙ্গে অনেক প্রজাপতি থাকলে আমরা বলি ‘প্রজাপতির ঝাঁক। এইভাবে আর কী কী শব্দ তৈরি করা যায় শব্দঝুড়ি থেকে শব্দ নিয়ে নীচের শূন্যস্থান পূরণ করে দেখো : সারি, যূথ, ঝাঁক, দল, বহর, পাল।
উত্তর ৫.১ ভেড়ার পাল । ৫.২ কইমাছের ঝাঁক। ৫.৩ হস্তী যূথ ৫.৪ নৌকার বহর। ৫.৫ সুপুরি গাছের সারি। ৫.৬ ছাত্রদের দল।
আঁকা লেখা কবিতার প্রশ্ন উত্তর class 7:
৬. নীচের বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ লেখো : রং, , লেখা, ।
উত্তরঃ রং >রঙিন
লেখা >লিখিত
৭, নীচের বিশেষণগুলির পরে উপযুক্ত বিশেষ্য বসিয়ে বাক্যরচনা করো :
উত্তর ৭.১ ঈষৎ নীল ।
আকাশটা এখন ঈষৎ নীল।
৭.২ বেজায় খুশি। উঃ মালা নতুন জামা পেয়ে বেজায় খুশি।
৭.৩ পিটপিটে চোখ। উঃইঁদুরটা পিটপিটে চোখে দেখছে।
৭.৪ পরম শান্তি। উঃ ছেলের কৃতিত্বের কথা শুনে পরমেশবাবু পরম শান্তি পেলেন।
৭.৫ নীল মাছ। উঃ সমুদ্রে নীল মাছ দেখা যায় ।
৭.৬ গোপন কথা । উঃ গোপন কথা ফাঁস করা উচিত নয়।
৮.বিপরীত শব্দ লেখো : গোপন, ঈযৎ, খুশি, পুরু, ঝগড়া
উত্তর গোপন > প্রকাশিত
পুরু > পাতলা
ঈষৎ> অধিক
খুশি > অখুশি
ঝগড়া > মিলন
৯ বাক্য বাড়াও :
বাক্য
৯.১ ৯.২ ৯.৩ $.8 ৯.৫
৯.১ আমি যখন আঁকি। (কী, কীভাবে ? ) ৯.২ চাঁদের দুধের সর জমে যায়। (কোথায়? কেমন ?
৯.৩ পিটপিটে চোখ দেখছে চেয়ে (কে কোথা থেকে?
৯.৪ ছড়া লেখার শুরু। (কার? কখন?) ৯.৫ ‘আ’ লিখছে আ’ লিখছে। (কারা? কোথায় ? )
উত্তরঃ
আমি যখন আঁকি ছবি রঙ মাখিয়ে তুলি দিয়ে। চাঁদের দুধের সর জমে যায় দূরের মাঠে পুরু হয়ে ইঁদুর গর্ত থেকে পিটপিটে চোখে চেয়ে দেখছে। ছড়া লেখার শুরু শিশুর রাত্রিকালে।
বকুল গাছে জোনাকিরা ‘অ’ লিখছে ‘আ’ লিখছে।
১০. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১ কবি কখন ছবি আঁকেন ?
উত্তর কবি দুপুরবেলায় ছবি আঁকেন
১০.২ কখন তাঁর ছড়া লেখার শুরু?
উত্তর রাত্রিকালে চন্দ্রালোকিত পরিবেশে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছড়া লেখার শুরু হয় ।
১০.৩ তিনটি শালিক কী করে?
উত্তর তিনটি শালিক ঝগড়া থামায়।
১০.৪ কে অবাক হয়ে তাকায় ?
উত্তর চড়ুই পাখি শালিকদের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
১০.৫ মাছরাঙা কি চায়?
উত্তর মাছরাঙা তার নীল রং ধার দিতে চায়, যা ছবি আঁকার কাজে কবিকে সাহায্য করবে।
১০.৬ প্রজাপতিদের ইচ্ছা কী ?
উত্তর প্রজাপতির ইচ্ছা কবির অঙ্কিত চিত্রে তার স্থান থাকুক তাকে চিত্রিত করা হোক।
১০. ৭ গর্তে কে থাকে?
উত্তর গর্তে ইঁদুর থাকে ।
১০.৮ চাঁদের পুরু দুধের সর কোথায় জমে?
উত্তর চন্দ্রালোকিত রাতে নিকটবর্তী মাঠে চাঁদের পুরু দুধের সর সমতুল্য জ্যোৎস্না প্রতিভাসিত হয়।
১০.৯ কারা, কোথায় অ-আ লিখছে ?
উত্তর দশটি জোনাকি বকুল গাছে অ-আ লিখে চলেছে।
১০.১০/ কবি কোন বিষয়কে ‘পদক পাওয়া’ মনে করেছেন?
উত্তর ছড়া ও ছবির মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে কবির যোগসূত্র প্রস্তুত হয়, স্বীকৃতিকেই কবি পদকপ্রাপ্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন ।
একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর
দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর লেখো
১ কে, কীভাবে রং দিয়ে কবিকে সাহায্য করে ?
উত্তর কবি মৃদুল দাশগুপ্ত রচিত ‘আঁকা, লেখা’ কবিতায় মৎস্যশিকারি পক্ষী মাছরাঙা মৎস্যশিকারে উদাসীন হয়ে কবিকে ছবি আঁকায় সাহায্য করতে তার ডানার নীল রং ধার দিতে চায়।
২ ছবিতে প্রকৃতির মধ্য থেকে কোন্ পতঙ্গ কেন থাকতে চায় ?
উত্তর ছবি আঁকতে কবি যখন ব্যস্ত থাকেন প্রকৃতির বুক থেকে রঙিন প্রজাপতি তাঁর চিত্রে থাকতে চায়। প্রকৃতির চিত্রে তার ছবিও অন্য মাত্রা যোগ করে আরও রঙিন করে তুলতে পারে বলে কবির কাছে তার অনুরোধ সে যেন চিত্রে স্থান পায়।
৩ কবির ছড়া লেখার সময় প্রাকৃতিক পরিবেশ কেমন থাকে?
উত্তর কবি যখন ছড়া লিখতে বসেন, তখন রাত্রিকাল। মাঠময় চাঁদের জ্যোৎস্না প্লাবিত হয়ে জমিয়ে তুলেছে পুরু দুধের সর। আর পরিবেশ তখন ছড়িয়ে দিয়েছে মৃদুমন্দ বাতাস ফলে কবির মন উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে সৃষ্টিকর্মে।
৪. বর্ণবিন্যাসে কারা ব্যস্ত থাকে? কোথায়?
উত্তর: বর্ণবিন্যাসে রাত্রে জোনাকিরা ব্যস্ত থাকে।
বকুল গাছে দশটি জোনাকি অ-আ লিখে যেন তাদের বর্নবিস্তারে ব্যস্ত থাকে ।
৫ ‘ সেই তো আমার পরম পুলক’—’আমার’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তাঁর পুলকিত হওয়ার কারণ কী?
উত্তর ‘আমারএক্ষেত্রে তাঁর পুলকিত হওয়ার কারণ হল, ছবি এঁকে ছড়া লিখে তিনি তাঁর দর্শক ও পাঠকের সঙ্গে সত্যকার যোগসূত্র গড়ে তুলতে পেরেছেন।
’ বলতে কবি নিজেকেই বুঝিয়েছেন।
৬ ‘আঁকা, লেখা’ কবিতায় কবি কোন্ বিষয়কে পদক পাওয়া বলে মনে করেছেন?
উত্তর : পরমা প্রকৃতির রূপমুগ্ধ কবি ছবি ও ছড়ায় পাঠকের কাছে তাঁর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতির কথা তুলে ধরেছেন। কোনো বিষয়ে পদক দানের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে তার কৃতিত্বের স্বীকৃতি দান করা হয়। কবি মনে করেন, ছবি ও ছড়ার মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে তাঁর যে নিবিড় যোগসূত্র গড়ে উঠেছে, তা পদকপ্রাপ্তির থেকেও শ্রেষ্ঠ।
বোধমূলক প্রশ্নোত্তর
কমবেশি ছ-টি বাক্যে উত্তর লেখো
১ রং-তুলিরা বেজায় খুশি আজ দুপুরে আমার পেয়ে – পংক্তিটির বক্তব্যে কোন্ বিশেষত্ব প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর : প্রখ্যাত কবি ও ছড়াকার মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর কিশোরমনস্ক কবিতা ‘আঁকা, লেখা’-তে যখন ঠিক দুপুরে খুশির খেয়ালকে সঙ্গী করেন, রত হন অঙ্কন প্রচেষ্টায়, তখন দেখা যায় তাঁর ছবি আঁকার প্রধান উপকরণ হয়েছে রংতুলি।
এই যে কবি-শিল্পী তাঁর ছবি আঁকার ক্ষেত্রে রং আর তুলিকে উপকরণ করেছেন, দেখা যায়—এতে তারা ‘বেজায় খুশি’ হয়। এখানেই { কবি বক্তব্যের বিশেষত্বটি জোরালোভাবে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। রং-তুলি জীবন্ত পদার্থ নয়, তবুও কবির আঁকায় রং-তুলিরা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
২.’বাতাস ঈষৎ কাপন দিতেই আমার ছড়া লেখার শুরু।’-বাতাস কীভাবে কবিকে ছড়া লেখার কাজে উৎসাহিত করেছিল ?
উত্তর: কবিরা নানাভাবে তাঁদের সৃষ্টিকর্মে উৎসাহিত হন।
তার মধ্যে প্রকৃতির উৎসাহ প্রদান একটি বিশেষ ঘটনা । আধুনিক কবি ও ছড়াকার মৃদুল দাশগুপ্তের তাঁর ‘আঁকা, লেখা’ কবিতাটিতে প্রকৃতির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, প্রকৃতির অনুষঙ্গে তাঁর কবিতার দেহগঠন করেছেন। অতএব বোঝা যায়—তাঁর এই সৃষ্টিকর্মের পিছনে প্রকৃতির একটা ভূমিকা আছে।
কবি তাঁর প্রকৃতিমুগ্ধতা থেকেই উদ্ধৃত উক্তিটি কবিতায় উচ্চারণ করেছেন। তিনি যখন রাতেরবেলা মুগ্ধ চোখে দেখেন মাঠ জুড়ে চাঁদের-চন্দন দুধের সরের মতো পুরু হয়ে জমেছে, তখনই তিনি অনুভব করেন বাতাসের মৃদুমন্দ স্পর্শ। এই বাতাসের স্পর্শেই তিনি ছড়া লিখতে শুরু করেন।
৩‘সেই তো আমার পরম পুলক, সেই তো আমার পদক পাওয়া!’—কোন্ বিষয়কে কবি পদক পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উঃ। প্রকৃতিসচেতন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর প্রকৃতির রূপমুগ্ধতাকে ছবি ও ছড়ার মাধ্যমে পাঠকমহলে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এই সূক্ষ্ম অনুভূতিকে প্রকাশ করতেই তিনি ‘পদক’ পাওয়ার প্রসঙ্গ এনেছেন। ‘পদক’ হল সেই বস্তু, যা এক সম্মানজনক ভক্তি বা সম্মানজক অথবা প্রশংসাসূচক মেডেল। এ বস্তু দানের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার কৃতিত্বে স্বীকৃতি দান করা হয়।
অতএব কবি মনে করেছেন, ছবি আঁকা বা ছড়া লেখার মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে তার যে নিবিড় যোগসূত্র গড়ে উঠেছে, তা পদক পাওয়ার থেকেও অমূল্য। তাই তিনি এমন তুলনা করেছেন।
আঁকা লেখা কবিতা প্রশ্ন উত্তর: রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো
১.‘আঁকা, লেখা’ কবিতাটি প্রকৃতির ডাক কবি কীভাবে অনুভব করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তরা প্রকৃতি এক বিপুল-বিশাল অনুভব কিংবা অস্তিত্ব, যার পাশে প্রাণীকুল নেহাতই তুচ্ছ। তবু মানুষ প্রকৃতির অঙ্গনেই থাকে, আর বুদ্ধিধর জীব বলে প্রকৃতির কোল থেকেই তাকে জীবনের খোরাক সংগ্রহ করে নিতে হয়। কবি স্বভাবতই প্রকৃতিপ্রেমিক।
তিনি তাঁর ‘আঁকা, লেখা’ কবিতাটিতে প্রকৃতির সংস্পর্শ থেকেই নানা প্রসঙ্গে উপাদান সংগ্রহ করেছেন। দুপুরবেলা খুশ-খেয়ালে কবির চিত্রচর্চা শুরু হলে প্রকৃতির কুশীলব শালিক-চড়ুই- মাছরাঙা-প্রজাপতি ও ইঁদুর চিত্রমুগ্ধ দর্শক হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
এই পক্ষীকুল বা পশু-পতঙ্গ তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য-সহ হাজির হয় কবিতায়। কিচিরমিচির করা শালিক, চড়ুই কবির অঙ্কন প্রচেষ্টায় হতবাক হয়ে যায়। আর যে মাছরাঙা মৎস্যশিকারি,
সে মাছ ভুলে নিজের গায়ের রঙের নীলটুকু কবিকে আঁকার রং হিসেবে ধার দিতে চায়। প্রজাপতিও বর্ণময়, রঙে রঙে তার বর্ণময় প্রকাশ, তারাও চায়, কবির ছবিতে নিজেদের রাখতে ।
আপন স্বভাববৈশিষ্ট্যে অতি উজ্জ্বল গর্তের ইঁদুরও পিটপিটে চোখ মেলে কবির ছবি দেখে। আবার দেখা যায় রাতের বেলা সারা মাঠ জুড়ে চাঁদের চন্দনের দুধের সরের মতো জমে ওঠার ঘটনা কবিতায় ছায়া ফেলে, যখন কবি তাঁর ছড়া লেখার কাজে হাত দেন। কবি অনুভব করেন এমন জোছনার সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাসের প্রবাহ যেন যুগল গানের সুরের মিলন।
এইসময় প্রকৃতির আর-এক প্রসঙ্গ ‘তারার দল’ যেন নীরবতার মধ্যে কবির খুব কাছে এসে পড়ে। কবি দেখেন রাতের জোনাকিদের। মনে হয় যেন দূরের গাছে জোনাকিরা আলো জ্বেলে নানা রঙের ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তুলেছে। কবি প্রকৃতির রাজ্যে হারিয়ে যান।