মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্ন । অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে ?
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর: → উত্তর : সাধারণভাবে ৩০°– ৩৫° উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে। উত্তর গোলার্ধে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ে শীতল ও ভারী বায়ু ওপর থেকে নীচে নামে। এখানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরাল বায়ুপ্রবাহ বিশেষ দেখা যায় না। ফলে এখানকার বায়ুমণ্ডলে একটি শান্তভাব বিরাজ করে। একে উপক্রান্তীয় শান্তবলয় বলে।
প্রাচীনকালে অশ্ববোঝাই পালতোলা জাহাজসমূহ উত্তর আমেরিকা থেকে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে যাবার সময় উপক্রান্তীয় শান্তবলয়ে এসে মাঝে মাঝেই প্রায় গতিহীন হয়ে পড়ত। তখন খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব কমাতে এবং জাহাজকে কিছুটা হালকা করার জন্য নাবিকেরা অনেক অশ্বকে জলে ফেলে দিত। এইজন্য ৩০°– ৩৫° উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে।
→ প্রশ্ন । ভূপৃষ্ঠে স্বাভাবিক বায়ুচাপ কত ?
• উত্তর : ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ প্রতি বর্গ সেমিতে ১.০৩ বা ১ কিগ্রা ওজনের সমান। অর্থাত ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ ৭৬০ মিমি বা 1013.2 মিলিবার।
প্রশ্ন । সমস্নরেখা কাকে বলে ?
→ উত্তর : কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানে গড় উন্নতা একইরকম থাকে (সাধারণত জানুয়ারি ও জুলাই মাসে), মানচিত্রে সেইসব স্থানের ওপর দিয়ে যে রেখা টানা হয় তাকে সমোয়রেখা বলে। সমস্নরেখা হল পৃথিবীর মানচিত্রে একই সময়ে একই উদ্বৃতাবিশিষ্ট স্থানগুলির ওপর দিয়ে অঙ্কিত রেখা। সাধারণত জানুয়ারি ও জুলাই মাসেই উন্নতার চরমভাব দেখা যায় বলে জানুয়ারি ও জুলাই মাসের গড় উন্নতার ভিত্তিতে সমস্নরেখা গুলো আঁকা হয় ভূপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা অক্ষরেখা বরাবর বাড়ে কমে বলে সমস্নরেখা গুলি মানচিত্রের পূর্বপশ্চিমে বিস্তৃত থাকে।
প্রশ্ন । সমচাপরেখা বলতে কী বুঝায় ?
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর: → উত্তর : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বছরের বিভিন্ন সময়ে বায়ুচাপের তারতম্য লক্ষ করা যায় উন্নতার মতো উচ্চতার পার্থক্যেও বায়ুচাপের তারতম্য হয়। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুচাপে পরিবর্তিত করে বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, ভূপৃষ্ঠের সমচাপবিশিষ্ট বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয় তাকে সমপ্রেষ বা সমচাপরেখা বলে। পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বায়ুচাপের বিভিন্নতার জন্য আলাদা আলাদা সমপ্রেষরেখা আঁকা হয়ে থাকে। সমপ্রেষরেখাগুলো প্রধানত জানুয়ারি ও জুলাই মাসে ২ মিলিবার তফাতে টানা হয়।
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর: প্রশ্ন । উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুচাপের সম্পর্ক আলোচনা করো।
→ উত্তর : উষ্ণতা ও বায়ুর চাপ গভীর সম্পর্কযুক্ত। কারণ
(১) কোনো অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ হলে তা প্রসারিত ও হালকা হয়। ফলে এরূপ বায়ুর চাপ কম হয়।
(২) অপরদিকে কোনো অঞ্চলের বায়ু শীতল হলে তা ভারী ও ঘন হয় এবং এরূপ বায়ুর চাপ বেশি হয়। কাজেই উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুচাপ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ উদ্ধৃতা কমলে বায়ুচাপ বাড়ে এবং উন্নতা বাড়লে বায়ুচাপ কমে।
(৩) কোনো অঞ্চলের বায়ু হঠাৎ ব্যাপকভাবে উষ্ণ হয়ে পড়লে সেই অঞ্চলে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে শীতল উচ্চচাপের বায়ু ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। অর্থাৎ, বায়ু সর্বদা উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীকালে এই বায়ুও পর্যায়ক্রমে উন্ন হয়ে ওপরে উঠে যায় ।
(৪) উষ্ণ বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা অধিক । এই কারণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর চাপ কম হয়। এইজন্য ক্রান্তীয় অঞ্চলে বর্ষাকালে নিম্নচাপ লক্ষ করা যায়
→ প্রশ্ন । বায়ু প্রবাহিত হয় কেন ?
• উত্তর : ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে যখন কোনো এক স্থানের বায়ু অপর একটি স্থানের দিকে ছুটে যায়, তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে। বায়ু নিম্নলিখিত কারণে প্রবাহিত হয়। যেমন
(১) বায়ুচাপের তারতম্য—বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য, অর্থাৎ বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর:
২) উষ্ণতার তারতম্য : কোনো অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায়, এবং ওই অঞ্চলের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে।
(৩) বাতাসের গতিবিক্ষেপ : কোনো অঞ্চলে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটলে সেখানকার বায়ু প্রসারিত হয়, ফলে ওই অঞ্চলের দিকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
(৪) বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ : আবার কোনো অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও বায়ু প্রসারিত হয়, ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ওই অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর: প্রশ্ন । ফেরেল সূত্র ও বাইস ব্যালট সূত্র কাকে বলে ?
• উত্তর : ফেরেলের সূত্র : ১৮৫৫ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত আবহ ও বায়ুবিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল বলেন যে, নিরক্ষরেখা থেকে আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরুর দিকে ক্রমশ কমতে থাকে। আবর্তনবেগের এই পার্থক্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি উত্তর থেকে দক্ষিণে বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হওয়ার সময় সোজাপথে প্রবাহিত না হয়ে গতিবিক্ষেপ ঘটে। এই গতিবিক্ষেপ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ঘটে। পৃথিবীর আবর্তনের ফলেই বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বা ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। এই কারণে বায়ুর গতিবিক্ষেপের এই সূত্র ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত।
বাইস ব্যালট সূত্র : ১৮৫৭ সালে বাইস ব্যালট নামক জনৈক ওলন্দাজ (হল্যান্ডবাসী) আবহবিজ্ঞানী বায়ুর গতিবিক্ষেপের সূত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকাশ করেন। তাঁর মতে উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকে বায়ুর চাপ কম অনুভূত হবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থা অনুভূত হয়। বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত এই বৈশিষ্ট্যই বাইস ব্যালট সূত্র নামে পরিচিত ।
প্রশ্নঃ। সমুদ্ৰবায়ু ও স্থলবায়ু কাকে বলে ?
• উত্তর : সমুদ্রবায়ু : সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র বায়ুর প্রভাব দেখা যায় । স্থলভাগ যত শীঘ্র উত্তপ্ত হয় জলভাগ তত শীঘ্র উত্তপ্ত হয় না। দিবাভাগে সূর্যতাপে সমুদ্রের তীরবর্তী স্থলভাগ সমুদ্র ভাগ অপেক্ষা অতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়। উত্তপ্ত ভূমির সংস্পর্শে এসে ওই স্থানের বায়ু উত্তপ্ত ও লঘু হয়ে ওপরে উঠে যায়। এইভাবে স্থলভাগের ওপরকার বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন সমুদ্র থেকে শীতল ও উচ্চচাপবিশিষ্ট বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এই বায়ুপ্রবাহকে সমুদ্রবায়ু বলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বায়ুর বেগ প্রবলতর হয় এবং অপরাহ্নে সর্বাপেক্ষা গতিময় হয়।
স্থলবায়ু ঃ সন্ধ্যার পর তাপ বিকিরণ করে স্থলভাগ তাড়াতাড়ি শীতল হয়। কিন্তু সারাদিনের তাপ সঞ্চয় করে সমুদ্রের জল তখনও উত্তপ্ত থাকে। সেইজন্য সেখানকার বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায় বায়ু ওপরে উঠতে থাকে। এর ফলে স্থলভাগ থেকে শীতল বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় ; এই বায়ুপ্রবাহকে স্খলবায়ু বলে। রাত্রি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থলভাগ যত শীতল হতে থাকে স্থলবায়ুর বোও তত বৃদ্ধি থাকে এবং রাত্রিশেষে প্রবলতর হয়।
প্রশ্ন । গর্জনশীল চল্লিশা কাকে বলে ?
• উত্তর : উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ অধিক থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর গতি ও বেগ বেশি পরিবর্তিত হয়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে স্থলভাগ প্রায় না থাকায় উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু ৪০° দঃ থেকে ৬০° দঃ অক্ষাংশের মধ্যে সারা বছর প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। সেইজন্য একে দুরন্ত পশ্চিমা বায়ু বলে। যে অক্ষাংশগুলির মধ্যদিয়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয় তদনুসারে এই বায়ুর বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। যেমন—৪০° দঃ অক্ষাংশে এই বায়ুকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা’, ৫০° দঃ অক্ষাংশে এই বায়ুকে ভয়ংকর পঞ্চাশা এবং ৬০° দঃ অক্ষাংশে এই বায়ুকে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ‘ষাট’ বলা হয়।
→ প্রশ্ন। বর্ষাকালে বায়ুর চাপ কম হয় কেন ?
• উত্তর : বায়ুর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে জলীয় বাষ্প যথেষ্ট হালকা। জলীয় বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর থেকে হালকা বলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুও হালকা হয়। এই কারণে শুষ্ক বায়ু যত বেশি পরিমাণে জলীয় বাষ্প ধারণ করতে থাকে ততই হালকা হয়, ফলে এরূপ বায়ুর চাপও কম হয় তাই বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এই বায়ু হালকা হয় অর্থাৎ এই বায়ুর চাপ কম হয়। এইজন্যই আমাদের দেশে বর্ষাকালে বায়ুর নিম্নচাপ লক্ষ করা যায়।
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্ন । ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে ?
— উত্তর : ঘূর্ণবাত : ভূপৃষ্ঠের ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় মণ্ডলের কোনো অল্প পরিসর স্থানে যখন অত্যধিক উন্নতার ফলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়, ওই নিম্নচাপের বাইরের দিকে থাকে উচ্চচাপ । তখন ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের বায়ুশূন্যতাকে পূরণ করার জন্য চারদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে এবং এই বায়ু নিম্নচাপের কেন্দ্রে প্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে উয় ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এরূপ কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকেই ঘূর্ণবাত বলে। এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে বা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে বা ঘড়ির কাঁটার দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত : ভূপৃষ্ঠের নাতিশীতোয় ও শীতল অঞ্চলের কোনো অল্পবিস্তর স্থান যদি তীব্র ঠান্ডার জন্য খুব শীতল হয়ে পড়ে তাহলে ওই স্থানে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং ওই উচ্চচাপের বাইরের দিকে থাকে নিম্নচাপ। এই উচ্চচাপ কেন্দ্রের শীতল ও ভারী বায়ু ঘূর্ণায়মান অবস্থায় নিম্নমুখী হয়ে বাইরের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবলবেগে কুণ্ডলীর আকারে ছুটে যায়। এরূপ কেন্দ্রবহির্মুখী ও নিম্নগামী ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকেই প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। এই বায়ু উত্তর
গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে বা ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে বা ঘাড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন । কালবৈশাখী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
• উত্তর : গ্রীষ্মকালের অপরাহ্ণে পূর্ব ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ এবং এর সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচণ্ড ঝড় এবং শিলারষ্টি হয়। এতে কালবৈশাখী বলে। এটি একটি আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ। এই ঝড় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় এবং স্বল্পকাল স্থায়ী হয়। ধূলিমেঘ উড়িয়ে হঠাৎ গাছপালা তেলপড় ঝরে এর আবির্ভাব ঘটে এবং ঝড়ের পর গরম বেশ কমে যায়। সাধারণত এই ঘূর্ণবাত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসে বলে ইংরেজিতে একে ‘
Nor-Wester’ বলে ৷
→ প্রশ্ন । চরম আর্দ্রতা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা কাকে বলে ?
→ উত্তর : চরম আর্দ্রতা : বায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জলীয় বাষ্প বাতাসে এই জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে। কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বহু একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করে থাকে তাকে ওই বায়ুর চরম অর্দ্রতা বলে। চরম আর্দ্রতা গ্রামে প্রকাশ করা হয়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা : কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে অবস্থিত প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণের সঙ্গে ওই একই উচ্চতায় একই আয়তনের বায়ুকে সম্পৃক্ত হতে আর যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় সেই দুইয়ের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ,
আপেক্ষিক আর্দ্রতা =
নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ
——————-
ওই তাপমাত্রায় সমপরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের পরিমান।
→ প্রশ্ন । বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলতে কী বোঝো?
উত্তর : শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের পর এই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বহুলাংশে কমে যায়। পর্বত অতিক্রম করে এই বায়ু যখন পর্বতের অপর পার্শ্বে অর্থাৎ অনুবাত চালে পৌঁছোয় তখন কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পাহাড় বা পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আসার ফলে ক্রমশ অধিক উন্ন হতে থাকে ও জলীয় বাষ্প ত্যাগ করার পরিবর্তে আরও অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প বহন করার ক্ষমতা লাভ করে।
এর ফলে পর্বতের অনুবাত পার্শ্বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশই কমে যেতে থাকে এবং নীচের দিকে নেমে আসার পর বৃষ্টিপাত মোটেই আর হয় না। পর্বতের বর্ষণবঞ্চিত এই অনুবাত পার্শ্বকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
প্রশ্ন । কীভাবে ওজোন স্তরের ক্ষয় হয় ?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে ওজোন গ্যাসের একটি পুরু স্তর পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে। এই ওজোন স্তর সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে দেয় না। কিছু কিছু বায়ুদূষক, যেমন—নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ওজোন স্তরকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ওজোন স্তরে ছিদ্র। এর মধ্যেই আন্টার্কটিকার ওপর ওজোন স্তরে আবিষ্কৃত হয়েছে এক বিরাট ছিদ্র।
এই ছিদ্রপথে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ছে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের ক্যানসার, চোখের ছানি বাড়ে, উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষ বিঘ্নিত হয় : এছাড়া ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের প্রজনন কমে যায়, ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হয়।
→ প্রশ্ন ৷অম্ল বৃষ্টি কীভাবে সৃষ্টি হয় তা লেখো।
→ উত্তর : শিল্পাঞ্চলের বাতাসে দূষকরূপে মিশে থাকা অতিরিক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিডরূপে বৃষ্টির সঙ্গে নেমে আসে। অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য বৃষ্টির জলের অম্লতা বৃদ্ধি পায়। একে বলে অম্ল বৃষ্টি। ফলে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যায়, বনাঞ্চলের ক্ষতি হয়, তাছাড়া বাড়ি-ঘর, দামি স্থাপত্য, ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্বেল পাথরের স্থাপত্য ও মূর্তির ক্ষতি ‘স্টোন ক্যানসার’ নামে পরিচিত।
→ প্রশ্ন । এল নিনো কী ? মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন উত্তর:
• উত্তর : এল নিনো ঘটনাটি বায়ুমণ্ডল-সমুদ্র পরিবেশজনিত একপ্রকার বিপর্যয়। যখন এল নিনো বিপর্যয় ঘটে তখন দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল অঞ্চলের জল গরম হয়ে ওঠে এবং সমুদ্রের গভীর স্তর থেকে প্ল্যাঙ্কটনসমূহ ওপরে উঠে আসতে পারে না, উক্ত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক বিপর্যয় ঘটে। পূর্বদিকের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জল গরম হয়ে ওঠায় ওপরের বাতাসকে উত্তপ্ত করে এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
ফলে উপকূল অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়ার গতি বেড়েই চলে যা উত্তর আমেরিকার উপকূল অঞ্চলকেও আঘাত করে। এর সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। ট্রপিক্যাল প্রশান্ত মহাসাগরে বায়ুমণ্ডল-সমুদ্র পরিবেশজনিত এই সামগ্রিক বিপর্যয়কে এল নিনো বলে। সমগ্র পৃথিবীর আবহাওয়ার ওপর এর প্রভাব পড়ে।
→ প্রশ্ন । পরিবেশ দূষণ প্রতিকারে মানুষের ভূমিকা কী হবে ?
উত্তর : পরিবেশের চরম পরিণতি হিসাবে মানবসভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। বর্তমানে মানুষকে পরিবেশ দূষণের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে ৫ই জুন পরিবেশ দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। মানুষই পরিবেশকে বেশি দূষিত করছে। তাই আত্মবিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা তাকেই গ্রহণ করতে হবে।
→ প্রশ্ন ৷ ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলা হয় কেন ?
• উত্তর : ছোটোনাগপুর মালভূমি ভারতের খনিজ সম্পদের আধার। এই মালভূমি অঞ্চলে ভারতের মোট উৎপাদিত খনিজ দ্রব্যের শতকরা ৪০ ভাগ পাওয়া যায়।
এই মালভূমি অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খনিজ দ্রব্য, অর্থাৎ ৫০ ভাগ কয়লা, ৪০ ভাগ আকরিক লোহা, ৮০ ভাগ অভ্র, ৫০ ভাগ তামা, ৩০ ভাগ বক্সাইট, ৩৫ ভাগ গ্রাফাইট, এবং প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম, বেরিলিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সীসা, ক্রোমাইট, চুনাপাথর, চিনামাটি, কায়ানাইট, ডলোমাইট ইত্যাদি পাওয়া যায়।
এছাড়াও এই মালভূমি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কয়লা, আকরিক লেহা, তামা, বক্সাইট, অভ্র, চিনামাটি, ফায়ারক্লে, চুনাপাথর, অ্যাসবেসট্স, গ্রাফাইট, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি খনিজসম্পদ সঞ্চিতও আছে। খনিজ সম্পদের এই বিপুল সঞ্চয় ও উত্তোলনের জন্য ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলে।
প্রশ্ন । এশিয়াকে ‘পর্বত হৃদয় মহাদেশ’ বলে
• উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া। আয়তনে সুবিশাল বলে এশিয়া মহাদেশের ভূপ্রকৃতিও খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই মহাদেশের কোথাও আছে সুউচ্চ পর্বতমালা আবার কোথাও আছে সুবিশাল মালভূমি বা বিস্তীর্ণ সমতলভূমি। তবে এশিয়ার ভূপ্রকৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই মহাদেশের মধ্যভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য অঞ্চল।
এই মহাদেশের মধ্যভাগে দুটি পর্বতগ্রন্থি, যথা—পামির ও আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে অসংখ্য পর্বতমালা বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়েছে। মধ্যভাগে এই বিশাল পার্বত্য অঞ্চলের অবস্থানের জন্য এশিয়াকে ‘পর্বত হৃদয় মহাদেশ” বলে।
→ প্রশ্ন এশিয়ার উত্তরবাহিনী নদীগুলি বন্যাপ্রবণ কেন ?
উত্তর : এশিয়ার উত্তরাংশে সাইবেরীয় সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত উত্তরবাহিনী নদীগুলি হল ওব, ইনিসি ও লেনা। মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদীগুলি মূলত শীতল জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুমেরু মহাসাগরে পড়েছে। এই নদী তিনটির নিম্নপ্রবাহ হিমমণ্ডলে অবস্থিত বলে শরতের প্রায় শুরু থেকেই নদীগুলির নিম্নপ্রবাহে মোহনার কাছে জল জমে বরফে পরিণত হয়।
এ অবস্থায় বসন্তকালে যখন নদীগুলির উচ্চ ও মধ্যপ্রবাহে (যেহেতু নাতিশীতোষ্বমণ্ডলে অবস্থিত) বরফ গলে যায় তখনও নিম্নপ্রবাহের বরফ জমে থাকে। এর ফলে উচ্চ ও মধ্যপ্রবাহ থেকে আসা জলরাশি নিম্নপ্রবাহে অর্থাৎ সমুদ্রে পৌঁছোতে না পেরে মধ্যপ্রবাহের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্লাবিত হয় এবং বন্যার সৃষ্টি করে। এই কারণেই এশিয়ার উত্তরবাহিনী নদীগুলি বন্যাপ্রবণ।
→ প্রশ্ন ৭। অন্তর্বাহিনী নদী কাকে বলে ?
• উত্তর : যেসব নদী কোনো দেশ বা মহাদেশের উচ্চভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে স্থলভাগের বাইরে কোনো জলাশয়ে মেশেনি, অর্থাৎ মহাদেশের মধ্যেই কোনো হ্রদ, সাগর, জলাভূমি বা মরুভূমিতে মিশে যায় তাদের অন্তর্বাহিনী নদী বলে। যেমন—ইউরাল, আমুদরিয়া, মিরদরিয়া, হেলমন্দ, টারিম, জর্ডন, লুনি ইত্যাদি।