নীলনদ ও নীলনদ অববাহিকা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
নীলনদ ও নীলনদ অববাহিকা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর ।
নীলনদ অববাহিকা:
→ প্রশ্ন । মিশরের রাজধানীর নাম কী ? উত্তর : মিশরের রাজধানীর নাম কায়রো।
প্রশ্ন । সুদানের রাজধানীর নাম কী ? উত্তর : সুদানের রাজধানীর নাম খাতুম।
→ প্রশ্ন । ব্লু-নীল ও হোয়াইট নীলের সংযোগস্থলে কোন্ শহর অবস্থিত ? উত্তর : বুনীল ও হোয়াইট নীলের সংযোগস্থলে খাতুম শহর অবস্থিত।
→ প্রশ্ন । মিশরের প্রধান বন্দরটির নাম কী ? • উত্তর : ‘মিশরের প্রধান বন্দরটির নাম আলেকজান্দ্রিয়া।
→ প্রশ্ন । নীলনদের কোন্ অংশটি হোয়াইট নীল নামে পরিচিত ?
উত্তর ঃ সুদানে প্রবেশ করার পর নীলনদের মূল ধারার সঙ্গে বার-এল-গজল এবং সোবার্ট নামক দুটি উপনদী মিলিত হয়েছে এবং এই মিলিত ধারাই হোয়াইট নীল নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
→ প্রশ্ন । নীলনদ অববাহিকার কোন অংশে এবং কেন সাভানা তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে ?
— উত্তর ঃ নীলনদ অববাহিকার উৎস অঞ্চলের পরে উগান্ডা থেকে সুদানের মালাকাল পর্যন্ত ক্রান্তীয় জলবায়ুর উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য সাভানা তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
→ প্রশ্ন । নীলনদ অববাহিকায় কোথায় এবং কেন মিশ্র প্রকৃতির গাছ দেখা যায় ?
• উত্তর : নীলনদ অববাহিকায় মোহনার কাছে নদীর বদ্বীপ অংশে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে অল্প বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোয় আবহাওয়ার জন্য মিশ্র প্রকৃতির গাছ দেখা যায়।
→ প্রশ্ন ৷ নীলনদ কোথা থেকে উৎপন্ন হয়ে কোন্ সাগরে পড়েছে ?
উত্তর : আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে টাঙ্গানিকা হ্রদের উত্তর-পূর্বে বুরুন্ডি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে নীলনদ ৬৫০০ কিমি পথ উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে ভূমধ্যসাগরে মিশেছে।
→ প্রশ্ন । নীলনদ অববাহিকায় সাড কী ?
→ উত্তর : নীলনদ অববাহিকার জলাভূমি অংশে আগাছা, নলখাগড়া, প্যাপাইরাস জাতীয় উদ্ভিদ এত বেশি পরিমাণে থাকে যে নীলনদ ও তার উপনদীসমূহের গতিপথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যায়। নীল অববাহিকার জলাভূমিসমূহের ভাসমান এইসব উদ্ভিদকেই সাড বলে।
প্রশ্ন । নীলনদের অববাহিকায় কৃষিতে
জলসেচের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
→ উত্তর ঃ মিশর সাহারা মরুভূমির পূর্বাংশে অবস্থিত। নীলনদ অববাহিকার উৎস অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও উত্তরের খাতুম থেকে মোহনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, বার্ষিক ২৫ সেমি মাত্র। অঞ্চলটি মরুপ্রায় জলবায়ুর অন্তর্গত। এই রকম প্রতিকূল পরিবেশ হওয়া সত্ত্বেও নীলনদ অববাহিকা জলসেচের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিকাজে খুবই উন্নত।
(১) প্রাচীনকাল থেকে এখানে পারসিক চক্র, ডোঙা প্রভৃতির সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ করে ধান, গম, যব, আখ, তুলো, ভুট্টা ইত্যাদি চাষ করা হত।
(২) নীলনদ অববাহিকায় বন্যার অতিরিক্ত জলে নদীগুলি প্লাবিত হওয়ার পর সেই জল তীরবর্তী কৃষিক্ষেত্রগুলিতে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়। বাঁধগুলির মধ্যে আসোয়ান বৃহত্তম। এর ফলে জমিগুলি স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত জল পেয়ে থাকে।
(৩) বর্তমানকালে নীলনদের ওপর বিভিন্ন
বাঁধ বা জলাধার নির্মাণ করে জলসেচ করা হয়। জলসেচের এই ব্যাপক ব্যবহারের জন্যই বৃষ্টিহীন মরুভূমি আজ শস্যশ্যামলা ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
→ প্রশ্ন । “মিশর একটি মরুপ্রায় কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ”—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আফ্রিকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মিশর দেশটি প্রকৃতপক্ষে সাহারা অঞ্চলে অবস্থিত। নীলনদ অববাহিকায় অবস্থিত মিশর প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিকাজে উন্নত।
এর কারণগুলি হল— ডোঙা এবং আধুনিককালে নদী
(১) এই অববাহিকা অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকে পারসিক চক্র,ডোঙা এবং আধুনিককালে নদী উপত্যকা পরিকল্পনার মাধ্যমে জলসেচের ব্যাপক প্রসার ঘটানো হয়েছে।
(২) নীলনদের নিম্ন অববাহিকায় অর্থাৎ মিশরে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা হয়ে থাকে। এই বন্যার জল কৃষিক্ষেত্রগুলিতে বাঁধের সাহায্যে আটকে রাখা হয়। সেচকার্যের সুবিধার জন্য মিশরে একটি বৃহদাকৃতির বাঁধ নির্মাণ করা হয় যার নাম আসোয়ান। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রগুলিতে প্রতিবছরই নতুন পলি পড়ে। ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। আর ওইসব জমিতেই নীলনদের জল সেচকার্যে ব্যবহার করে সারা বছর শস্য উৎপাদন করা হয়।
উল্লিখিত কারণসমূহের জন্য মিশর মরুপ্রায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তুলো (অর্থকরী ফসল), ধান, গম, যব, ভুট্টা, আম, তামাক, চিনাবাদাম, মিলেট, কফি ইত্যাদি উৎপাদনে খুবই উন্নত হয়েছে।
মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় কেন:
[ প্রশ্ন । মিশরকে নীলনদের দান বলে কেন ?
→ উত্তর ঃ গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের বিখ্যাত উক্তি—“Egypt is the gift of the Nile”বা ‘মিশর নীলনদের দান’।
নীলনদ উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার পাঁচটি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও এই নদীর অধিকাংশ গতিপথই মিশর ও সুদানের মধ্যে বিস্তৃত। মিশর দেশটি প্রকৃতপক্ষে সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫ সেমিরও কম। এরকম শুষ্ক পরিবেশে কৃষিকাজ করা সম্ভব হয় না। এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে নীলনদ প্রবাহিত না হলে সাহারা মরুভূমি সমগ্র মিশরকে গ্রাস করে ফেলত।
নীলনদের নিম্ন অববাহিকায় অর্থাৎ মিশরে প্রতি বছরই বন্যা হয়ে থাকে এবং এই বন্যার জল কৃষিক্ষেত্রগুলিতে বাঁধের সাহায্যে আটকে রাখা হয়। এর ফলে এই অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রগুলিতে প্রতিবছর নতুন পলি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এই উর্বর জমিতে নীলনদের জল সেচকার্যে ব্যবহার করে সারা বছর বহুবিধ কৃষিজ ফসল যেমন—ধান, গম, আখ, তুলো (অর্থকরী ফসল) উৎপাদিত হয়। মরু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও মিশরকে এরূপ শস্যশ্যামলা করে তোলার জন্যই মিশরকে নীলনদের দান বলে।
নীলনদের গতিপথ:
→ প্রশ্ন । নীলনদের গতিপথ বর্ণনা করো।
→ উত্তর : অবস্থান : নীলনদ বিশ্বের একক দীর্ঘতম (৬৬৫০ কিমি) নদী। এই নদের অববাহিকার আয়তন প্রায় ৩৫ লক্ষ বর্গ কিমি। আফ্রিকার টাঙ্গানিকা হ্রদের কাছে বুরুন্ডির উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে নীলনদ ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। অবশ্য এর মধ্যে মিশর ও সুদান—এই দুটি দেশেই নীলনদ অববাহিকার ৭৫ ভাগ বিস্তৃত।
গতিপথ : নীলনদ বিশ্বের একক দীর্ঘতম নদী। ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, জলবায়ু ইত্যাদির পার্থক্য অনুসারে নীল অববাহিকাকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে ভাগ করা যায় যেমন—
(ক) উৎসস্থল থেকে সুদানের খাতুম পর্যন্ত নীলনদের উচ্চপ্রবাহ ঃ
টাঙ্গানিকা হ্রদের -পূর্বে বুরুন্ডি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন কাগেরা নদী উত্তর-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ভিক্টোরিয়া পড়েছে। এখানে এই নদী ওয়েব নামে এক জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে বেরিয়ে এই নদী উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে অ্যালবার্ট হ্রদে পড়েছে।
অ্যালবার্ট হ্রদ থেকে বেরিয়ে এই নদী বার-এল-জেবেল নামে সুদানে প্রবেশ করেছে। সুদানের মালাকাল শহরের কাছে মধ্য আফ্রিকার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বার-এলগজল এবং ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে সোবার্ট নামে দুটি উপনদী মিলিত হয়েছে এরপর এই মিলিত জলধারা হোয়াইট নীল নামে সুদানের খাতুম পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। তবে এই অংশে সাড়ের (নীল অববাহিকার জলাভূমিসমূহের ভাসমান উদ্ভিদ) প্রভাবে নদীর গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়েছে।
(খ) খাতুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদের মধ্যপ্রবাহ :
খাতুমের কাছে ইথিওপিয়া উচ্চভূমির টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্লু-নীল এসে হোয়াইট নীলের সঙ্গে মিশেছে। এটি নীলনদের দীর্ঘতম উপনদী। এরপর হোয়াইট নীল ও ব্লু নীলের মিলিত জলধারা নীলনদ নামে প্রবাহিত হয়েছে। খাতুম থেকে মিশরের আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদের গতিপথে ৬ টি খরস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। এই অংশে আটাবারার কাছে পূর্বদিক থেকে সর্বশেষ উপনদী আটাবারা এসে মিশেছে।
(গ) আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত
নীলনদের নিম্নপ্রবাহ :
আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত অঞ্চল বৃষ্টিহীন মরুভূমি হওয়ায় একমাত্র সেচপ্লাবিত অঞ্চল ছাড়া অন্যত্র চাষবাস হয় না।
(ঘ) কায়রো থেকে মোহনা পর্যন্ত বদ্বীপ প্রবাহ :
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে উত্তরদিকে ভূমধ্যসাগরে নীলনদের মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত । নীলনদ এখানে বদ্বীপ সৃষ্টি করে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। এই অঞ্চলটি বেশ চওড়া এবং বদ্বীপ অংশে বহু হ্রদ ও উপহ্রদ গঠিত হওয়ায় অত্যন্ত উর্বর। হ্রদগুলির মধ্যে মানজালা বৃহত্তম। নীলনদের বদ্বীপ অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ২০০ কিমি এবং আয়তন প্রায় ২৫,০০০ বর্গ কিমি।
→ প্রশ্ন । মিশরের কৃষিকাজে অতীতে বন্যা ও বর্তমানে নদী পরিকল্পনার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : নীলনদ অববাহিকা উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার মরুপ্রায় অঞ্চলে অবস্থিত। তাই নীলনদ অববাহিকার জলবায়ু উয় মরু প্রকৃতির। বিভিন্নভাবে জলসেচের মাধ্যমে এই অঞ্চলে কৃষিকাজের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এই অঞ্চলে জলসেচের উন্নতির মূলে অতীতের বন্যা এবং বর্তমানে বিভিন্ন নদী-উপত্যকা পরিকল্পনার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
অতীতে বন্যার গুরুত্ব ঃ
অতীতে নীলনদ অববাহিকায় বন্যার ফলে নদীতে যে অতিরিক্ত জল আসত তা নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলকে প্লাবিত করত বা বন্যা হত। তাই নদীর দুই তীরে উঁচু স্বাভাবিক বাঁধ এবং তারপরেই বিস্তৃত প্লাবনভূমি সৃষ্টি হয়েছে। এই অতিরিক্ত জল দক্ষতার সঙ্গে খালপথ দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়ে বাঁধ দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে আটকে রাখা হত।
এইভাবে দুইএকমাস আটকে রাখার ফলে ওই কৃষিক্ষেত্রে একদিকে যেমন নতুন পলি জমা হত, তেমনি অপরদিকে ওই অংশের মাটি ব্যাপকভাবে জল শোষণ করার ফলে পরবর্তীকালে জলের প্রয়োজন বিশেষ দেখা দিত না। এই প্লাবনভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপন্ন হত। এইভাবে বন্যার অতিরিক্ত জলকে বিভিন্ন কৃষিক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে প্রবাহিত করে অতীতকাল থেকে এখানে কৃষিকাজের উন্নতি হয়েছে।
বর্তমানে নদী পরিকল্পনার গুরুত্ব ঃ বর্তমানে নীলনদের ওপর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ বা জলাধার নির্মাণের ফলে এই নদীর অতিরিক্ত জল ওই জলাধারে সঞ্চয় করে খালের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলসেচ করা হয়। নীলনদ অববাহিকায় এই প্লাবনের তুলনায় জলসেচের গুরুত্ব অনেক বেশি।
নীলনদ অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এরূপ নদী পরিকল্পনার সাহায্যে উৎকৃষ্ট দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো, গম, যব, ভুট্টা, আখ, বাজরা, খেজুর, ডাল, আলু, তৈলবীজ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই নদীর বিভিন্ন অংশে নির্মিত উল্লেখযোগ্য বাঁধগুলি হল—আসোয়ান (বৃহত্তম), সেনার, ইসনা, অ্যাসিউট, নাগহামাদি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নীলনদ অববাহিকার জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিবরণ:
→ প্রশ্ন । নীলনদ অববাহিকার জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিবরণ দাও।
উত্তর : জলবায়ু ঃ নীলনদ অববাহিকা দক্ষিণে প্রায় ৪° দঃ অক্ষাংশ থেকে উত্তরে ৩২° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অক্ষাংশের তারতম্যে এই অববাহিকার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রকম জলবায়ু দেখা যায় ।
(১) নীলনদের উৎস অঞ্চল নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু উম্ন-আর্দ্র নিরক্ষীয় প্রকৃতির। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে নীলনদের এই অংশে প্রচুর জল থাকে।
(২) এর পরবর্তী অঞ্চল অর্থাৎ উগান্ডা থেকে সুদানের মালাকাল পর্যন্ত অঞ্চলে ক্রান্তীয় উন্ন-শুষ্ক সাভানা প্রকৃতির জলবায়ু লক্ষ করা যায়।
(৩) মালাকালের পর থেকে সুদানের খাতুম পর্যন্ত অঞ্চলের জলবায়ু প্রবল উয় এবং বৃষ্টিপাত খুবই কম।
(৪) খাতুর্মের পর থেকে মিশরের আসোয়ান পর্যন্ত অঞ্চলের জলবায়ু সারা বছর প্রবল উম্ন এবং গ্রীষ্মকালে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় । এই অঞ্চল মরুভূমির অন্তর্গত।
(৫) আসোয়ানের পর থেকে মিশরের রাজধানী কায়রো পর্যন্ত অঞ্চলের জলবায়ু চরম প্রকৃতির। অর্থাৎ শীত-গ্রীষ্মের মধ্যে এমনকি দিন-রাতের মধ্যেও উন্নতার পার্থক্য খুব বেশি এবং অত্যন্ত কম বৃষ্টিপাত—এখানকার জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
(৬) কায়রোর পর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত এই নদীর বদ্বীপ অংশের জলবায়ু ভূমধ্যসাগরীয় প্রকৃতির। এখানে শীতকালে অল্প বৃষ্টিপাত হয় এবং গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল কোনোটাই খুব তীব্র নয়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ : নীলনদ অববাহিকার বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর তারতম্যের জন্য বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন—
(১) উৎস অঞ্চল নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার জন্য চিরহরিৎ বনভূমি দেখা যায়।
(২) উৎস অঞ্চলের পরে ক্রান্তীয় জলবায়ুর উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য সাভানা তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
৩) এরপর অপেক্ষাকৃত শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে ঝোপঝাড় ও গুল্ম জন্মায়।
(৪) আরও উত্তরে মরু প্রকৃতির জলবায়ু অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য কাঁটাজাতীয় বিভিন্ন দেখা যায়।
(৫) মোহনার কাছে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে মিশ্র প্রকৃতির গাছ জন্মায়।