ছাত্রদলের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
ছাত্রদলের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
ছাত্রদলের গান
কাজী নজরুল ইসলাম
এখানে কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ছাত্রদলের গান কবিতার কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
• ছাত্রদলের গান কবিতার উৎস
→ নজরুলের দশম কাব্যগ্রন্থ ‘সর্বহারা’ প্রকাশিত হয় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। আমাদের পাঠ্য ‘ছাত্রদলের গান’ ওই ‘সর্বহারা’ কাব্য থেকে সংগৃহীত। এটি প্রধানত গান; কবি ছাত্র সম্মেলনে গাইবার জন্য এটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু কবিতা হিসেবে পাঠ করলে এর কাব্যমূল্য নষ্ট হয় না। এমন অনেক কবিতা বা গান আছে, যা একইসঙ্গে গেয় এবং পাঠ্য, যেমন নজরুলের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’, রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’, ‘দুর্ভাগা দেশ’ প্রভৃতি। ‘ছাত্রদলের গান’-এর সাঙ্গীতিক মূল্য ছাড়া কাব্যমূল্য আছে বলেই মধ্যশিক্ষা পর্ষৎ এটিকে পাঠ্য তালিকাভুক্ত করেছেন। আমরা এটিকে কবিতা বলেই উল্লেখ করব।
→ ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতাটি আনুষ্ঠানিক রচনা; সাধারণত অনুষ্ঠান শেষ হলে এ ধরনের রচনার মূল্য হারিয়ে যায়। কিন্তু এমন অনেক রচনা আছে, যা কখনো হারায় না, যা মহৎ প্রতিভার সৃষ্টি; এগুলি সমসাময়িকতার দাবি মিটিয়েও কালোত্তীর্ণ বলে গণ্য হয়।
→ ‘ছাত্রদলের গান’ এইরকম একটি সার্থক রচনা। রবীন্দ্রনাথ যেমন ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় যৌবন-বন্দনা করেছেন, ‘আঠার বছর বয়স’ কবিতায় সুকান্ত যেমন জয় ঘোষণা করেছেন তারুণ্যের, তেমনি ‘ছাত্রদলের গান’-এ আছে একদিকে ছাত্রদের উদ্দেশ্য ও আদর্শের শপথবাণী, অন্যদিকে নবযৌবনের অকুণ্ঠ বন্দনাগীতি। এ কবিতার কথাবস্তু উত্তমপুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত বলে কবি যেন এই যৌবনশক্তির সঙ্গে এখানে একাত্ম হয়ে পড়েছেন। এর ফলে কবিতাটির আবেদন অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে। াল।
• ছাত্র দলের গান কবিতার সংক্ষিপ্তসার
→ ছাত্রদল হল দেশের যৌবনশক্তি। গতিই হল এই যৌবন শক্তির ধর্ম। যখন তথাকথিত বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন রক্ষণশীল মানুষেরা নানারকম কুসংস্কার ও সামাজিক বাধানিষেধের অচলায়তনে আবদ্ধ থাকে, তখন এই নবযৌবনের যাত্রীদল সবরকম বাধা-বিঘ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে কর্তব্যের পথে এগিয়ে চলে। আগে থেকে এদের কোন প্রস্তুতি থাকে না; ভবিষ্যৎ এদের কাছে অনিশ্চিত, তবু এদের উদ্দাম চলার বেগ থামে না, নিজেদের রক্তের মূল্যে এরা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত, রক্ত দিয়েই এরা পৃথিবীর মুক্তি কিনে নিতে চায়।
→ ধূমকেতুর মত এরা লক্ষ্মী ছাড়া, এরা লক্ষহীন, আকস্মিক; এরা অপরিণামদর্শী বলেই বারবার ব্যর্থতা আসে, বারবার বিনষ্টি ঘটে। বরদা লক্ষ্মী নয়, অলক্ষ্মীই এই হতভাগ্যদের ভাগ্যদেবী; জীবনসমুদ্রের উদ্গত গরল আকণ্ঠ পান করে এরা হয়ে গেছে নীলকণ্ঠ। মৃত্যুর সঙ্গে এরা পাঞ্জা লড়ে। অযুত প্রাণের অকালমৃত্যু মর্মান্তিক দুঃখের, ওই দুঃখই যৌবনের বিধিলিপি এবং এদেরই আত্মাহুতিতে লেখা হয় জাতির নব ইতিহাস। তাই এদের মৃত্যু দুঃখের হলেও, গৌরবের।
→এরা সাবধানী নয়, ভেবেচিন্তে নিরাপত্তার আড়ালে আত্মগোপন করতে জানে না; এরা ভুল করে, তাই মৃত্যুর বলি হতে হয়। তবু এদের চোখের আলোয় ঘরে ঘরে জ্ঞানের দীপ জ্বলে ওঠে এদের বুকেই আছে যথার্থ আদর্শের বাণী; এদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় নিত্যকালের কর্তব্যের আহ্বান। দেশ ও জাতির জন্য এরা নানান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করে; এই মৃত্যুর অভিঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে সারস্বত সাধনার পীঠস্থান।
→ এত মৃত্যু, এত ধ্বংসের মধ্যেও ছাত্রদল কিন্তু খুবই আশাবাদী। দারুণ সর্বনাশের দিনে এরা প্রাণ দান করে; অত্যাচারীর শোষণ-শাসন থেকে বিংশ শতাব্দীর মানবমুক্তি এদের দ্বারাই একদা হবে সম্ভব। প্রেম-প্রীতিপূর্ণ মানবসমাজ এরাই গড়ে তুলবে। ছাত্রদলের মধ্যে দিয়েই বিশ্ববাসীর স্বপ্ন একদিন সার্থক হবে, — এরই ইশারা রয়েছে দূর নক্ষত্রলোকের ওই জ্যোতির্ময় ছায়াপথে। –
ছাত্রদলের গান কবিতার নামকরণ
নামকরণের তাৎপর্য
→ নজরুল বিদ্রোহী কবি, তিনি নবযৌবনের কবি। তিনি তারুণ্যের কবি। প্রচণ্ড প্রাণশক্তির তিনি অধিকারী; আবার তিনি উদ্দাম, উচ্ছল, খেয়ালি, বেহিসেবি। সুভাষচন্দ্র যে বলেছিলেন, যৌবন সকল দেশে লক্ষ্মীছাড়া ও সর্বহারা, সে-কথাটা নজরুল সম্বন্ধে খুব বেশি করে খাটে। ব্যক্তিজীবন ও কবিজীবন মিলিয়ে নজরুলের ব্যক্তিচরিত্রের যে সামগ্রিক রূপ, তাকেই তিনি ‘ছাত্রদলের গানে’র মধ্যে প্রতিফলিত করেছেন। এক হিসাবে কবিতাটি বাংলা মায়ের দামাল ছেলে সৈনিক কবি নজরুলের নিজের জীবনের গান এবং ছাত্রদলেরও জীবনসঙ্গীত।
→
ছাত্ররাই দেশের আশা-আনন্দ-ভবিষ্যৎ। সমস্ত জড়তা ও স্থবিরতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, তাদের মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনসংগ্রাম, তাদের জ্ঞানের এষণা, তাদের আদর্শ, তাদের কর্তব্যবোধ এবং সর্বোপরি দেশমাতৃকার জন্য গৌরবময় মৃত্যুবরণ,—এসব কিছুই নজরুল কবিতাটিতে সোচ্চারভাবে ঘোষণা করেছেন। আবার ছাত্ররা যেহেতু দেবতা নয়, তাই দোষত্রুটিও তাদের অনেক। তাদের উদ্দামতা, অপরিণামদর্শিতা, হঠকারিতা—সবকিছুই কবি উল্লেখ করেছেন। তারা হয়ত কিছু বেশি ভুল করে, কারণ তারা বেশি কাজ করে।
এত দোষ সত্ত্বেও তারা যে কোন দেশের, যে কোন জাতির, গর্ব। দেশ ও জাতির উন্নতি তাদের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ছাত্রজীবনের এই সামগ্রিক রূপটি কবি কবিতাটির স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করে প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি স্তবকের শেষে ‘আমরা ছাত্রদল’ বাক্যটি যেমন কবিতার বক্তব্যকে শক্তিশালী করেছে, তেমনি গানের ‘ধুয়া’রূপে ব্যবহৃত হয়ে শ্রোতার মনে ভাবটিকে গভীরভাবে করেছে সংহত ও উদ্দীপিত। তাই কবিতাটির শিরোনাম যথোচিত। –নামকরণ যথার্থ।
ছাত্রদলের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: ১। “যুগে যুগে রক্তে মোদের/সিক্ত হল পৃথ্বীতল।”—উক্তিটি কাদের? অংশটুকু ব্যাখ্যা কর। কবিতা অবলম্বনে তাদের বক্তব্যের সারোদ্ধার কর।
[] উত্তর: সৈনিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতার ছাত্ররা হল এই উক্তিটির বক্তা।
→ উদ্ধৃত অংশে ছাত্ররা বলতে চেয়েছে যে, পৃথিবীর সব দেশেই যুগে যুগে তারা দুর্বার সাহস এবং অজেয় প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন রকম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়। রক্ষণশীল শক্তি তাদের কায়েমি স্বার্থরক্ষার জন্য কঠোর হাতে সেইসব বিদ্রোহ ও আন্দোলনকে দমন করতে এগিয়ে আসে। তারই ফলে ঘটে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের বুকের রক্তে পৃথিবীর মাটি ভিজে যায়, পিছল হয়ে যায় ধরিত্রী। পিছল কথাটার মধ্যে দিয়ে ছাত্রদের আত্মদানের আধিক্যকেই বোঝানো হয়েছে। রক্ত স্রোতের মত প্রবাহিত হয় বলেই মাটি পিছল হয়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় বলেছেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,…/আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’ এই কবিতার মধ্যে কবি যৌবনশক্তিকেই ওইভাবে সংবর্ধিত করেছেন, তাদের জাগিয়ে তুলেছেন সবরকম জড়তা, কুসংস্কার ও অবিচারের বিরুদ্ধে। । নজরুলের ছাত্রদল হল দেশের জাগ্রত যৌবন শক্তি। এরাই আমাদের আশা, আনন্দ ও ভবিষ্যৎ। দেশের মানুষ যখন রক্ষণশীলতা, কুসংস্কার ও নানারকম বাধানিষেধের অচলায়তনে আবদ্ধ থাকে, তখন এই সংগ্রামী ছাত্রদল সবরকম বাধাবিঘ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে মুক্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যায়।
এরা কোনরকম আখেরের কথা ভাবে না। বিচার-বিবেচনা না করেই বিপদের ঝুঁকি নেয়; এরা অপরিণামদর্শী; কাজ আরম্ভের আগে এরা থাকে অপ্রস্তুত; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে এদের অভিযান চলে নাঙ্গা পায়ে। এরা নির্ভীক, দুঃসাহসী। এঁদের উদ্দাম চলার বেগ এদের কোন বাধাতেই থামে না। নবীন ঊষার স্বর্ণদ্বারে পৌঁছানোর জন্য এদের জীবনপণ; নিজের রক্তের মূল্যে এরা কিনে নিতে চায় পৃথিবীর সমস্ত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি।
→ ধূমকেতুর মতই ছাত্রদের এই আবির্ভাব আকস্মিক, এরা লক্ষহীন। এরা অপরিণামদর্শী বলেই বারবার ব্যর্থতা আসে, বহু প্রাণের বিনষ্টি ঘটে। লক্ষ্মীর বদলে অলক্ষ্মীই এদের ভাগ্যদেবী। জীবনসমুদ্রের উত্থিত গরল আকণ্ঠ পান করে এরা নীলকণ্ঠ; পৃথিবীকে নির্বিষ, বাসযোগ্য করে তোলাই এদের জীবনসাধনা। তাই মৃত্যুর সঙ্গে এরা সংগ্রাম করে চলে। অযুত প্রাণের অকালমৃত্যু মর্মান্তিক, কিন্তু তা যতই মর্মান্তকি হোক, ওই মৃত্যু ও ছাত্রদের ওই আত্মদানেই রচিত হয় জাতির নব ইতিহাস। তাই এদের মৃত্যু গৌরবের।
→ ছাত্ররা সাবধানী নয়, অনেক সময় ভুল করে; তাই মৃত্যুর বলি হতে হয় এদের। তবু এদের চোখে আছে জ্ঞানের দীপ, বুকে আছে আদর্শের বাণী। এদের কণ্ঠেই নিত্যকালের কর্তব্যের আহ্বান ধ্বনিত হয়। দেশ ও জাতির জন্য এরা মৃত্যুবরণ করে; এই মৃত্যুর অভিঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে সারস্বত সাধনার পীঠস্থান।
→ যত ভুল-ভ্রান্তি, দোষ থাকুক না কেন, ছাত্রদল তবু কিন্তু যে-কোন দেশ ও জাতির গৌরব। মৃত্যুর মধ্যেও এরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। বিংশ শতাব্দীতে শোষিত মানুষের মুক্তি এদের আত্মত্যাগের ফলেই সম্ভব হয়েছে। প্রেম-প্রীতিপূর্ণ মানবসমাজ এরাই একদিন গড়ে তুলবে। ছাত্রদলের এষণা ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই বিশ্ববাসীর স্বপ্ন একদিন সার্থক হবে; দূর নক্ষত্রলোকের জ্যোতির্ময় ছায়াপথে রয়েছে তারই ইঙ্গিত, তারই ইশারা।
প্রশ্নঃ আমরা ধরি মৃত্যু-রাজার….. মোদের জীবনইতিহাস।”—কার লেখা, কোন্ কবিতা থেকে গৃহীত? ‘আমরা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? মৃত্যু রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ’ কথাটি ব্যাখ্যা কর। মৃত্যু কিভাবে তাদের জীবন ইতিহাসে লেখে?
উত্তর: চির যৌবনের পূজারী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত।
→ এখানে ‘আমরা’ বলতে দেশের সংগ্রামী তরুণ ছাত্রদলকে বোঝানো হয়েছে।
→ মৃত্যু-রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার রাশ’ কথাটি কবি ছাত্রদের মৃত্যুঞ্জয়ী সাহসের পরিচয় দান প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। প্রাচীন ভারতবর্ষে, বিশেষ করে পৌরাণিক যুগে আমরা অশ্বমেধযজ্ঞের বিবরণ শুনি। এই যজ্ঞের রীতি অনুযায়ী একটি সুলক্ষণাক্রান্ত অশ্বের কপালে যজ্ঞকারী রাজার পরিচয়সহ জয়পত্রিকা এঁটে অশ্বটিকে যজ্ঞের আগে ছেড়ে দেওয়া হত। অশ্বটি ইচ্ছামত দেশে দেশে বিচরণ করত। ওই রাজার সার্বভৌমত্ব যারা স্বীকার করতে চাইত, তারা কেউ অশ্বটির বিচরণে বাধা সৃষ্টি করত না, কিন্তু যে ঘোড়া ধরত তার সঙ্গেই অনিবার্য হয়ে উঠত যুদ্ধ।
এখানে মৃত্যুরাজ যমকে যজ্ঞকারী রাজার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে; তাঁর যজ্ঞাশ্ব যথেচ্ছ বিচরণ করছে, অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে জীবজগৎকে মৃতুরাজ শাসন করছেন; মৃত্যুর হাত থেকে কারো নিষ্কৃতি নেই। সকলেই মৃত্যুভয়ে ভীত, শঙ্কিত কিন্তু ছাত্রদল নির্ভীক, তারা মৃত্যুর শাসন মানতে চায় না; তাই তারা মৃত্যু রাজার যজ্ঞ-ঘোড়ার লাগাম ধরে তার গতিরোধ করে দেয়। চিত্রকল্পটি বড় সুন্দর; এই প্রসঙ্গে রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে লব-কুশের যুদ্ধের চিত্রটি আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে,— We live in deeds, not in years অর্থাৎ আমরা বাঁচি আমাদের কাজের মধ্যে দিয়ে, কীর্তির মধ্যে, – বৎসর গণনার মধ্যে দিয়ে নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— ‘যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ/কেহ কভু তাহাদের করেনি সম্মান।’ কেবল মরে প্রাণ দেওয়া একান্ত নিরর্থক, কিন্তু মহৎ আদর্শের জন্য জীবন দেওয়া খুবই সার্থক। এই সূত্রে নজরুল বলেছেন, ছাত্রদলই দেশের যৌবনশক্তি; এরাই দেশের আশা, আনন্দ, ভবিষ্যৎ। এই নবযৌবনের প্রতীক ছাত্রদল সবসময় সবরকম বাধা-বিঘ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে কর্তব্যের পথে এগিয়ে চলে ।
ফলে, নিত্যকালের কর্তব্যের আহ্বানে ছাত্ররা দেশের জন্য, জাতির জন্য অক্লেশে প্রাণ দিতে পারে। মৃত্যুর মধ্যেও এরা দেখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তাই এদের অযুত প্রাণের মর্মান্তিক আত্মদানে রচিত হয় জাতির নব ইতিহাস। তাদের এই নিঃস্বার্থ আত্মদানের গৌরব জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। যেমন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বীর শহীদের আত্মোৎসর্গের কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে, সেইভাবে এদের ইতিহাসও একদিন লেখা হবে।
মোটকথা প্রাণ দেওয়াটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল নিষ্ঠা, ভক্তি। ছাত্রদের এই ভক্তি বা নিষ্ঠা প্রশংসনীয়। তাই তারা আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে জাতির নব ইতিহাস রচনা করে চলেছে।
প্রশ্ন: ৩। “মোদের মৃত্যু লেখে মোদের/জীবন ইতিহাস”—কার লেখা কোন্ কবিতার অংশ? জাতীয় ইতিহাসের কোন্ প্রেক্ষাপটে কবির এই উক্তি? কবিতায় কবির মূল বক্তব্যটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর:উক্তিটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতার একটি স্মরণীয় অংশ।
→ উক্ত কবিতাটি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে রচিত। দেশ ও জাতির তখন তীব্র সংকটকাল; ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে দেশকে স্বাধীন করবার জন্য দিকে দিকে তখন শুরু হয়েছে
আন্দোলন। সেদিনের আন্দোলন অহিংস এবং সহিংস দুই-ই ছিল। তা পথ যাই হোক, সকলের লক্ষ ছিল দেশমাতৃকার মুক্তিসাধন। শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী মানুষ একে একে এই আন্দোলনের সামিল হয়েছিল। আন্দোলন যত শক্তিশালী হচ্ছিল, ইংরেজ শাসকের দমননীতি ততই হয়ে উঠছিল কঠোর এবং হিংস্রতর। বীর শহীদের তাজা রক্তে সেদিন দেশের মাটি ভিজে যেতে থাকল; রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা হতে থাকল জাতীয় ইতিহাসের নব অধ্যায়। সেদিনের ইতিহাসে ‘কবি দিল গান, বীর দিল প্রাণ’।
এই নবজাগ্রত জাতীয় ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল যৌবনের পূজারী নজরুলের কবিসত্তা। তাই তিনি দেশাত্মবোধে দীক্ষিত যৌবনের প্রতীক ছাত্রদলের কণ্ঠে এই ঐতিহাসিক সত্যটি প্রকাশ করেছেন।
→ [এই অংশের উত্তর ১ নং প্রশ্নোত্তরের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম অনুচ্ছেদগুলি লেখ— ‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর’ থেকে ‘তাঁরই ইঙ্গিত পর্যন্ত’। এরপরে যোগ কর ঃ]। এইভাবে কবি ছাত্রদলের আশা উদ্দীপনা ও সংগ্রামী মনোভাবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন। ছাত্রদলের গান তাই যেন কবিরও জীবনসংগীত।
প্রশ্ন: । “সবাই যখন বুদ্ধি যোগায় …… আমরা ভাঙি কূল।”—কার লেখা? কোন্ কবিতার অংশ? ‘আমরা’ কারা? বুদ্ধিমান ও সাবধানীদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য নির্দেশ কর। উদ্ধৃতিটির মধ্যে বক্তার কোন্ বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: কবি কাজী নজরুলের লেখা এই অংশটি তাঁর ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতা থেকে সংগৃহীত হয়েছে।
→ ‘আমরা’ বলতে এখানে ছাত্রদলকে বোঝানো হয়েছে।
→ কবি মনে করেন, সমাজের বুদ্ধিমান ও সাবধানী মানুষদের সঙ্গে এই দেশহিতব্রতধারী ছাত্রদলের দুস্তর পার্থক্য আছে। বুদ্ধিমান ও সাবধানি মানুষরা কোন কাজ করার আগে অনেক চিন্তা ও বিচারবিবেচনা করে, কোন ঝুঁকি নিতে চায় না। যেখানে বাস্তবিক কোন ভয়ের কারণ থাকে না, সেখানেও তারা অকারণে ভয় পেয়ে থাকে। ওরা সংস্কারাচ্ছন্ন ও রক্ষণশীল; বাঁধা পথ ছেড়ে, চিরাচরিত নিয়ম-নীতি ভেঙে ওরা নতুন কিছু করার জন্য এগিয়ে যেতে পারে না।
অন্যপক্ষে তরুণ ছাত্রদল ঠিক এদের বিপরীত; এরা নির্ভীক, সাহসী।— শুধু সাহসী নয়, এরা দুঃসাহসী। এরা বাঁধা পথে চলতে চায় না। বাঁধা পথ ছেড়ে যে কোন বিপজ্জনক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে এদের দারুণ আনন্দ; এরা মনে করে, -‘আপদ আছে, জানি আঘাত আছে/তাই জেনে তো বক্ষে পরাণ নাচে,’/ তাই মনে হয়, এরা হঠকারী, আপাত অপরিণামদর্শী, কিন্তু বাস্তব সত্য হল, এরাই আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। –
সাবধানীরা যখন নানান প্রতিরোধের প্রাচীর তুলে, বিধি-নিষেধের বেড়া দিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত করে, ছাত্ররা তখন বাধার বাঁধকে ভেঙে অর্থাৎ বিধি-নিষেধের বেড়া ভেঙে নব উন্মাদনায় দেশ ও জাতির জন্য আত্মাহুতি দেয়। কবির ভাষায়, ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন তাহার, সৃষ্টি তাহার খেলা।’ তাদের বুকের রক্তে লেখা হয় মানবসভ্যতার নতুন ইতিহাস।
→ উক্তিটির মধ্যে ছাত্রদলের নির্ভীক দুঃসাহসী মনোবলের প্রকাশ ঘটেছে। এরা নতুনের অগ্রদূত, মরণবিজয়ী ‘মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীর’ দল। এরা হয়তো ভুল করে, অপরিণামদর্শিতার ফলে অকালমৃত্যু বরণ করে, কিন্তু কাজ করতে গেলে তো ভুল হবেই এবং ভুলের মধ্যে দিয়ে সত্যকে না জানলে সঠিক জানাও হয় না।
ছাত্রদলের গান কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
← সংক্ষিপ্ত বিষয়মুখী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: । “মোদের পায়ের তলায় মূচ্ছে তুফান/ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল।”—ছাত্রদের এই আত্মবিশ্বাস কিভাবে ব্যক্ত হয়েছে সংক্ষেপে লেখ।
● উত্তর: বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ছাত্রদল হল তরুণ যৌবনের প্রতীক; যৌবনের ধর্মই হল বাধা-বিপত্তি ঠেলে উদ্দাম বেগে এগিয়ে চলা। কোন বিধিনিষেধ, কোনোরকম স্থবিরতা, কোনো কুসংস্কার তাদের প্রতিরোধ করতে পারে না। এরা দেশ ও জাতির নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা। ঊষার দুয়ারে আঘাত হেনে এরা একদিন মাতৃভূমির জন্য ‘রাঙা প্রভাত, আনবে। এই উদ্দাম তেজোদ্দীপ্ত ছাত্রদলের অভিযানের পথে যে কোন বাধা, তা যতই কঠিন এবং কঠোর হোক না কেন, সেই প্রাচীর এরা ভেঙে গুঁড়িয়ে এগিয়ে যাবে।
ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে বিঘ্নসঙ্কুল পথে এদের দুর্বার অভিযান। পায়ের নীচে বিপুল প্লাবন, ঊর্ধ্ব আকাশে তীব্র ঝটিকা ও প্রচণ্ড বর্ষণকে দলিত, মথিত ও উপেক্ষা করে এরা লক্ষের পথে অগ্রসর হয়; প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কোন বাধাই এদের উদ্যম ও আত্মবিশ্বাসকে দমন করতে পারে না। বিংশ শতাব্দীর শোষিত মানুষের মুক্তি এরা আপন রক্তের মূল্যে একদিন কিনে আনবে। দূর আকাশের জ্যোতির্ময় ছায়াপথে আছে সেই সুস্থ শান্তিপূর্ণ স্বৰ্গসম মাতৃভূমি গড়বার ইঙ্গিত। বস্তুত, উদ্দাম প্রাণোচ্ছলতা, গতিময়তার মধ্যেই ছাত্রদলের অগাধ আত্মবিশ্বাস অভিব্যক্ত হয়েছে।
→ নজরুলের নিজের ভেতরের উদ্দাম প্রাণোচ্ছলতা এবং অগাধ আত্মবিশ্বাস এখানে ছাত্রদলের আত্মবিশ্বাসকে উদ্বোধিত ও সঞ্জীবিত করেছে। তাই ছাত্রদলের গান যেন কবির নিজেরই জীবনসংগীত।
প্রশ্ন: “আঁধার রাতে বাধার পথে/যাত্রা নাঙ্গা পায়,”—কোন্ কবিতায় কাদের যাত্রার কথা বলা হয়েছে? আঁধার রাত, বাধার পথ এবং নাঙ্গা পা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
● উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতায় দুর্গম পথের অভিযাত্রী ছাত্রদলের যাত্রার কথা এখানে বলা হয়েছে।
→ ‘আঁধার রাত’, ‘বাধার পথ’ এবং ‘নাঙ্গা পা’—এই শব্দগুলিকে কবি এখানে বস্তুরূপে ব্যবহার না করে তাদের স্বরূপের ব্যঞ্জনা দিয়ে কবিতাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। অজানা গন্তব্যপথের বিপদসঙ্কুল রহস্যময়তাকে আঁধার রাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বাধার পথের মাধ্যমে কবি নানারকম বাধার কথা বলতে চেয়েছেন; যেমন সামাজিক বাধা, সংস্কারের বাধা, রাজনৈতিক বাধা প্রভৃতি।
‘নাঙ্গা পা’ বলতে বোঝানো হয়েছে নগ্ন বা খালি পা; হঠাৎ যাত্রার আদেশ এলে খালি পায়েই ছুটতে হয়; পায়ে জুতো পরা বা প্রস্তুত হয়ে নেবার সময় থাকে না। ছাত্রদের তেমনি কর্তব্যের আহ্বানে অপ্রস্তুত অবস্থাতে বেরিয়ে পড়তে হবে। এই ব্যঞ্জনাগুলি কাব্যাংশটিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ এবং রসোত্তীর্ণ করেছে।
প্রশ্ন: । “যখন লক্ষ্মীদেবী স্বর্গে উঠেন/আমরা পশি নীল অতল।”—উদ্ধৃতাংশটির কবি ও কবিতার নাম কী? ‘আমরা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? ‘লক্ষ্মীদেবী স্বর্গে উঠেন’কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম
কবিতার নাম ‘ছাত্রদলের গান’
→ ‘আমরা’ বলতে এখানে তরুণ ছাত্রদলকে বোঝানো হয়েছে।
,→ লক্ষ্মীদেবী হলেন ধনৈশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মহামুনি দুর্বাসার অভিশাপে তিনি ক্ষীরোদ সাগরের গভীর তলদেশে এক সময় অবস্থান করেন। ফলে স্বর্গরাজ্য শ্রীহীন ও লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়ে। তখন দেবাসুর মিলিত হয়ে সমুদ্র মন্থন করেন। লক্ষ্মীদেবী ওই মন্থনে অমৃত-ভাণ্ড নিয়ে উত্থিতা হয়ে স্বর্গে আবার ফিরে আসেন। সমুদ্রবক্ষ ত্যাগ করে সৌভাগ্যের দেবী স্বর্গে আরোহণ করলে ‘নীল অতল’ সমুদ্র হয়ে ওঠে বিপদসঙ্কুল। কিন্তু, অমিত বলের অধিকারী দুঃসাহসী ছাত্রদল সেই বিপদসঙ্কুল অতলান্ত সাগর-সলিলেও ঝাঁপ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে বিপদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনে,—অর্থাৎ যে-কোনরকম আপদ-বিপদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ছাত্ররা আত্মবলিদানে সদাপ্রস্তুত।
প্রশ্নঃ আমরা তাজা খুনে লাল ক’রেছি/সরস্বতীর শ্বেত কমল।”—কোন্ কবির রচনা ও কোন্ কবিতায় আছে? ‘আমরা’ বলতে কারা? ‘তাজা খুনে’র অর্থ কী? কীভাবে ‘সরস্বতীর শ্বেত কমল’ লাল করেছে?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেছেন এই কাব্যাংশাটি। ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতায় এই অংশটি আছে। → ‘আমরা’ বলতে দেশমাতৃকার মুক্তিকামী তরুণ ছাত্রদল।
→ ‘তাজা খুনে’ কথাটির অর্থ টাটকা শোণিতে অর্থাৎ তরুণ-রক্তে।
→ সরস্বতী বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ছাত্রদের বিদ্যাদেবীর আরাধনাই হল প্রধান কাজ,—আর সেই বিদ্যাদেবীর ‘শ্বেত কমল’ শুভ্রতা ও পবিত্রতার প্রতীক। ছাত্ররাও শ্বেত-কমলতুল্য নিষ্কলঙ্ক, শুভ্র ও পবিত্রতার প্রতীক । কিন্তু প্রয়োজনবোধে এই তরুণ ছাত্রদলই বুকের রক্ত দিয়ে ‘সরস্বতীর
শ্বেতকমল’কে শোণিতার্দ্র করে রাঙিয়ে দিতে কুণ্ঠিত নয়—অর্থাৎ দেশমাতৃ মুক্তির বলশালী তরুণ ছাত্রদল রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে সদাপ্রস্তুত।
প্রশ্ন । ‘মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল।’ —বক্তা কারা? বিশ্ববাসীর স্বপ্ন কী? কারা কীভাবে সেই স্বপ্ন সফল করবে?
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ছাত্রদলের গান’ শীর্ষক কবিতা থেকে উদ্ধৃত পংক্তিতে কথাগুলি বলেছে যৌবনশক্তিতে উদ্দীপ্ত ছাত্রদল।
অত্যাচারীর শাসন বা শোষণ থেকে সমগ্র মনুষ্য জাতির মুক্তি এবং প্রেম-প্রীতিপূর্ণ মানব সমাজের সারস্বত প্রতিষ্ঠা হওয়াটাই বিশ্ববাসীর স্বপ্ন বলা যেতে পারে।
যৌবনরাগে অভিষিক্ত ছাত্রদল তাদের মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনসংগ্রাম, তাদের জ্ঞানের এষণা, তাদের আদর্শ, কর্তব্যবোধ এবং সর্বোপরি দেশমাতৃকার জন্য গৌরবময় মৃত্যুবরণের মধ্যে দিয়ে এই স্বপ্নকে সার্থকরূপে সফল বা বাস্তবায়িত করতে পারবে বলে কবি আশাবাদী। কবি জানেন, ছাত্ররা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রশ্ন । ‘মোদের কক্ষচ্যুত ……. প্রাণ।’ — মোদের বলতে কাদের? ‘কক্ষচ্যুত’ শব্দের অর্থ কী? ধূমকেতু কী? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য সংক্ষেপে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ছাত্রদলের গান’ শীর্ষক কবিতা থেকে উদ্ধৃত পংক্তিতে ‘মোদের’ বলতে যৌবনশক্তিতে দৃপ্ত ছাত্রদলের কথাই এখানে বোঝানো হয়েছে।
গ্রহ বা উপগ্রহরা যে পথে পরিক্রমা করে, মহাকাশের সেই পথটিকে বলা হয় ‘কক্ষপথ’। সেই পথ থেকে যখন গ্রহ বা উপগ্রহ বিচ্যুত হয়ে যায়, তখনই সে হয়ে পড়ে কক্ষচ্যুত। ইংরেজিতে যাকে আমরা comet বলি; বাংলায় সেইটিই হল, ‘ধূমকেতু’। সাধারণত কক্ষচ্যুত পুচ্ছবিশিষ্ট বিশেষ ধরনের জ্যোতিষ্কই ধূমকেতু নামে পরিচিত।
‘ছাত্রদলের গান’ কবিতায় নজরুল দেখালেন, ছাত্রদলই হল দেশের যৌবনশক্তি। গতিই হল এই ছাত্রদলের যৌবনের ধর্ম। দেশের রক্ষণশীল মানুষরা যখন রক্ষণশীলতা, কুসংস্কার ও নানারকম বাধানিষেধের অচলায়তনকে স্বীকার করে নিয়ে নির্দিষ্ট একটি কক্ষপথে আবর্তন করে, সেই সময়ে ছাত্রদলের অবস্থান দেখা যায় একেবারে বিপরীত মেরুতে। ধূমকেতুর মতনই ছাত্রদের আবির্ভাব, এই আবির্ভাব আকস্মিক। ধরাবাঁধা কক্ষপথ ছেড়ে যে কোন বিপজ্জনক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়াতেই এদের আনন্দ। এই ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণেই তারা অপরিণামদর্শী, —লক্ষহীন। যদিও অপরিণামদর্শী বা লক্ষহীন হবার ফলে অকালমৃত্যু তাদের বরণ করে নিতেই হয়; কিন্তু ছাত্রদল এটা উপলব্ধি করেছে যে, কাজ করতে গেলে তো কক্ষচ্যুতি ঘটবেই এবং কক্ষচ্যুতির মধ্যে দিয়ে অর্থাৎ ভুলের মধ্যে দিয়ে সত্যকে না জানলে, তা সঠিক জানা হয় না।