সান ইয়াৎ সেনের অবদান উল্লেখ কর ইতিহাস Teacj Sanjib

সান ইয়াৎ সেনের অবদান উল্লেখ কর ইতিহাস Teacj Sanjib

সান ইয়াৎ সেনের অবদান:

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: আধনিক চীনের ইতিহাসে ডাঃ সান ইয়াৎ-সেনের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। পেশায় চিকিৎসক দরিদ্র খ্রীষ্টান পরিবারের এই সন্তান শৈশবেই মাতৃভূমির দদশায় ব্যথিত হতেন ৷ অকর্মণ্য মাঞ্চ বংশের বিতাড়ন ও সেখানে পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনই হল চীনের পরিত্রাণের উপায় বলে তিনি মনে করতেন।

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: তুং-মেং-হাই গঠন

এই উদ্দেশ্যে চীন-জাপান যুদ্ধের পরেই তিনি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মান বংশকে শাসনমঞ্চ থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপর তিনি
প্রথমে ইংল্যান্ড ও পরে জাপান যান। সেই সময় জাপান ছিল প্রবাসী বিপ্লবীদের কর্মকেন্দ্ৰ। প্ৰবাসী ও দেশস্থ সমস্ত বৈপ্লবিক সংস্থাকে একত্রিত করে তুং-মেং-হাই সামে একটি সসেংবদ্ধ বিপ্লবী দল গঠন করেন। এরই মাধ্যমে চীনে বৈপ্লবিক ভাবধারা প্রসারলাভ করতে থাকে ।

সান-ইয়াৎ-সেনের-অবদান-উল্লেখ-কর-ইতিহাস-Teacj-Sanjib

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দের বিপ্লব

বক্সার বিপর্যয় ও রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের পর সম্রাজ্ঞী জসি সংস্কারের মাধ্যমে একই সঙ্গে চীন ও মাঞ্চ, বংশকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন কিন্তু, ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই চেষ্টার অবসান ঘটে । তুং-মেং-হ-ই-এর শক্তি বৃদ্ধি পায়। অবশেষে রেলপথের জাতীয়করণ ও হ্যাংকাউ-এর বিষ্ফোরণকে কেন্দ্র করে ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দের বিপ্লব সংঘটিত হয়। মাঞ্চ বংশের পতন ঘটল, চীনে প্রতিষ্ঠিত হল প্রজাতন্ত্র।

এর সভাপতি হলেন সর্বজনমান্য নেতা ডাঃ সান। কিন্তু, সেই সময় অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও প্রভাবশালী জেনারেল ইউয়ান শি-কাইকে দেশের শাসনভার অর্পণ করলে দেশের সংহতি বৃদ্ধি পাবে আশা করে’ ডাঃ সান তাঁকে স্বেচ্ছায় সভাপতি পদ ছেড়ে দেন ৷ কিন্তু, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ইউয়ান বিদেশী বণিকদের নানাপ্রকার সংযোগ সংবিধা দান করে তাদের সমর্থন লাভ করেন। নিজেকে সম্রাট পদে অভিষিক্ত করার জন্য সচেষ্ট হন।

কুয়োমিন তাং দল ও তার আদর্শ

ইউয়ানের স্বার্থপরতায় ডাঃ সান ক্ষুদ্ধ হন। প্রজাতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি কুয়োমিনতাং দল গঠন করেন। এরপর তিনি ইউয়ান শি-কাই, রাজতন্ত্রের সমর্থক ও সামন্তপ্রভুদের বিরুদ্ধে আপসহীন যুদ্ধ চালিয়ে যান। ডাঃ সান বিঘোষিত তিনটি বিশেষ আদর্শ— — ‘সান, মিন ও চতু’ ছিল কুয়োমিতাং দলের চীনের পড়ুনগঠন-পরিকল্পনার মূল ভিত্তি। তাঁর মতে ‘সান’ বা জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য হল, সমস্ত বিদেশী আধিপত্য থেকে চীনের মাক্তি এবং জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত চীনাদের সমান অধিকার। তাঁর দ্বিতীয় নীতি “মিন’ বা গণতন্ত্রের লক্ষ্য হল, চীনে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন। সতরাং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সর্বপ্রথম চীনাদের গণতান্ত্রিক শিক্ষা দিতে হবে। তাঁর তৃতীয় নীতি ‘চ’ বা জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভূমির সমবণ্টন ও পংজির নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন।

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: ইউয়ানের মৃত্যু ও বিশৃঙ্খলা

সান ইয়াৎ-সেনের চিন্তাধারা জনগণকে মোহগ্রস্ত করেছিল। তারা দলে দলে কুয়োমিন,তাং-এর সদস্যপদ গ্রহণ করতে থাকে। ইতিমধ্যে ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দে ইউয়ান শি-কাই দেহত্যাগ করেন। ফলে স্বার্থপর প্রাদেশিক সামরিক শাসনকর্তারা শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয় । তাদের অত্যাচার ও পারস্পরিক ক্ষমতাদ্বন্দ্বে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
ইউয়ানের মত্যু ও বিশ,খেলা দেশের এই অরাজকতার অবসানের জন্য কুয়োমিনতাং দল দক্ষিণ চীনের ক্যান্টনে এক প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন ডাঃ সান-এর প্রজা তান্দ্রিক সরকার গঠন করে। ডাঃ সান হলেন এর সভাপতি। তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার
গঠনের উদ্দেশ্যে উত্তর চীনের সামরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁর সে প্রচেষ্টা অবশ্য ব্যর্থ হয়।

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: জাতীয় ঐক্যের জন্য প্রয়াস

ইতিমধ্যে ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে রাশিয়ায় সাম্যবাদী বিপ্লব সংঘটিত হয়। ডাঃ সান বুশ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় কুয়োমিতাং দলকে পড়ুনর্গঠিত করেন। রংশ বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণে একটি শক্তিশালী চীনা সৈন্যবাহিনী গঠিত হয়। সান চীনে ইউরোপীয় দেশগগুলি যে সমস্ত অন্যায় অধিকার ভোগ করছিল সেগুলিকে বাতিল করতে সচেষ্ট হন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাদের সঙ্গে সমান মর্যাদা ও সংযোগসডুবিধার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করা।

তিনি বুঝেছিলেন যে, এর জন্য শুধুমাত্র চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করলেই চলবে না, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সে জন্য তিনি প্রাণপাত প্রয়াস করতে থাকেন। ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েই তিনি ঐ উদ্দেশ্যে চীনের সামরিক নেতাদের সঙ্গে আপস-আলোচনার জন্য ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে পিকিং যান। ঐ আলোচনা ব্যর্থ হয়। সেখানেই তাঁর ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ও দেহান্তর ঘটে।

সান ইয়াৎ সেনের অবদান: চীনের ইতিহাসে সান ইয়াৎ-সেনের স্থান

সান ইয়াৎ-সেনের চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রগাঢ় দেশপ্রেম ও অননঢুকরণীয় আত্মত্যাগ চীনের জাতীয় চেতনায় উদ্দীপকের কাজ করেছিল। তাঁরই নেতৃত্বে মাঞ্চ, বংশের অবসান ঘটে। তাঁর ‘সান, মিন, চ’ এর আদর্শ জনগণকে নবজীবনের পথ দেখিয়েছিল। তিনি ছিলেন চীনের একতা, জাতীয়তা ও স্বাধীনতার একনিষ্ঠ পাজারী। আধদনিক চীনের জনক হিসেবে আজও তিনি সংগ্র সহস্র চীনবাসীর শ্রদ্ধার পাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *