মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি আলোচনা কর ,ব্যাখ্যা করও বিচার কর Teacj Sanjib
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি আলোচনা কর ,ব্যাখ্যা করও বিচার কর Teacj Sanjib
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি:
মিলের পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি:
মিল-প্রণীত পরীক্ষণমূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি (Mill’s Methods of Experimental Enquiry)
প্রশ্ন । মিল প্রণীত অন্বয়ী পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর ও বিচার কর।
(Explain and examine Mill’s method of agreement.)
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি: * উত্তর : কার্য-কারণ নিয়মের ওপর ভিত্তি করে আরোহ অনুমানে সাবিক সংশ্লেষক বচ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এইজন্য কার্যকারণ নিয়ম আবিষ্কার এবং ওই নিয়ম প্রমাণ করা আরো অনুমানের প্রধান কাজ। কিন্তু এই কাজ সহজসাধ্য নয়।
আরোহ পদ্ধতি বা মিলের পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি
ধরণ প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই জটিল। তা ছাড়া কোনো ঘটনার কারণ “বিষ্কার করতে হলে ঐ ঘটনাকে তার পরিবেশ থেকে আলাদা করে বিচার-বিশ্লেষণ করতে ঘ। এই কাজ অনেক ক্ষেত্রেই দুঃসাধ্য। কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাস হল নিয়ম আবিষ্কারের তিহাস। এর উপযোগিতা কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কারের উপর নির্ভরশীল। কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার ও প্রমাণ যে পদ্ধতি অনুসারে করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে। বেকন এই তীয় পদ্ধতির উদ্ভাবক। যুক্তিবিজ্ঞানী মিল প্রাকৃতিক নিয়ম আবিষ্কার ও নিয়ম প্রমাণের জন্য : চিটি পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। এগুলির অন্যতম হল অন্বয়ী পদ্ধতি।
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতির সূত্র ঃ
যে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে সেই ঘটনাটি ঘটছে এমন • ২ বা ততোধিক দৃষ্টান্তে যদি কেবল একটি বিষয় সাধারণ হয় এবং ওই সাধারণ বিষয়টির ন্য যদি দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে মিল থাকে, তবে ওই সাধারণ বিষয়টি অনুসন্ধানের বিষয়ীভূত • টনার কারণ বা কার্য বা কারণের অপরিহার্য অংশ।
→ ‘ল-প্ৰণীত অন্বয়ী পদ্ধতি অপসারণ পদ্ধতির প্রথম সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সূত্র অনুসারে দি কোনো পূর্বগামী ঘটনা অপসারণ করলেও কোনো একটি ঘটনা ঘটে তবে ওই পূর্ববর্তী চনা উক্ত ঘটনার কারণ বা কারণাংশ নয়। এই সূত্র থেকে বলা যায় যে, যদি দুটি ঘটনাকে মিরা বার বার একসঙ্গে ঘটতে দেখি, তাহলে সে দুটির মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ থাকার ভাবনা আছে। অন্বয়ী পদ্ধতির সূত্রে একই কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টান্তে একটি ঘটনা পস্থিত থাকলে যদি অন্য একটি ঘটনা উপস্থিত থাকে তবে ঘটনা দুটির মধ্যে কার্যকারণ বন্ধ থাকা সম্ভব।
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি: পদ্ধতিটির ব্যাখ্যা ঃ
পদ্ধতিটির ব্যাখ্যা ঃ
এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোনো ঘটনার কারণ বা কার্য নির্ণয় করা যায়। ºার্নাটি যদি কারণ হয় তবে তার কার্য অনুসন্ধান করি। আবার ঘটনাটি যদি কার্য হয় তবে তার বরণ অনুসন্ধান করি। যে ঘটনার কারণ বা কার্য আমরা অনুসন্ধান করছি তার দুই বা ততোধিক ান্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংগ্রহ করি। কোনো কার্যের কারণ নির্ণয় করতে হলে দৃষ্টান্তের বর্গামী ঘটনাগুলিকে বিশ্লেষণ করতে হয়। যদি দেখা যায় প্রতিটি দৃষ্টান্তে একটি ঘটনা সমভাবে পস্থিত এবং অন্য ঘটনাগুলি সমভাবে উপস্থিত নয়, তবে ওই সাধারণ ঘটনাটি অনুসন্ধেয় নার কারণ। আবার, কোনো ঘটনার কার্য নির্ণয় করতে হলে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ওই নাটি ঘটছে এমন দুই বা ততোধিক অনুগামী দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করতে হয়। অনুগামী দৃষ্টান্তগুলির ধ্য যে বিষয়টি সাধারণ সেই বিষয়টি মূল ঘটনার কার্য বলে গণ্য হবে। সুতরাং, অন্বয়ী পদ্ধতি য়োগ করে আমরা কারণ থেকে কার্যের বা কার্য থেকে কারণের অনুমান করতে পারি।
কার্য থেকে কারণ নির্ণয় :
দৃষ্টান্ত: পূর্বগামী ঘটনা ABCD AEFG AHIS.
অনুগামী ঘটনা P P₁ P₂
A হল P-এর কারণ। বা P হল A-এর কার্য।
* মূর্ত দৃষ্টান্ত ঃ ধরা যাক, আমরা ম্যালেরিয়ার কারণ আবিষ্কার করতে চাই। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল যদু ও রামের ম্যালেরিয়া হয়েছে। এদের পূর্বগামী ঘটনাগুলি সংগ্রহ করা হল ও বিশ্লেষণ করা হল :
পূর্বগামী ঘটনা
(১) সিনেমা দেখা, ধূমপান, অ্যানোফিলিস মশক দংশন (২) বৃষ্টিতে ভেজা, ব্যায়াম করা, অ্যানোফিলিস মশক দংশন
অনুগামী ঘটনা
যদুর ম্যালেরিয়া হল
রামের ম্যালেরিয়া হল
অতএব: অ্যানোফিলিস মশক দংশন ম্যালেরিয়ার কারণ।
● কারণ থেকে কার্য নির্ণয় :
আক্ষরিক দৃষ্টান্ত :
পূর্বগামী ঘটনা
N
N,
N₂
অনুগামী ঘটনা
ABCD
AEFG
AHIS
… A হল N-এর কার্য। অথবা N হল কারণ, তার কার্য হল A।
* মূর্ত দৃষ্টান্ত : ধরা যাক, আমরা কীটনাশক ওষুধ ছড়ানোর ফল অনুসন্ধান করতে চাই। দুটি দৃষ্টান্তে দেখা গেল কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে এবং তার ফলে ইঁদুর মারা গেছে। এই ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, কীটনাশক স্প্রে করলে ইঁদুর মারা যায় :
পূর্বগামী ঘটনা
(১) যদু বাড়িতে কীটনাশক ওষুধ ছড়াল
(২) হরি বাড়িতে কীটনাশক ওষুধ ছড়াল
অনুগামী ঘটনা
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল, ছেলের সর্দি হল, ইঁদুর মারা গেল।
ছেলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল, কুকুর
চিৎকার করল, ইঁদুর মারা গেল।
… কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করলে ইঁদুর মারা যায়।
উভয় প্রকার দৃষ্টান্ত থেকে বলা যায় যে, কোনো ঘটনার নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা সেই ঘটনার কারণ এবং কোনো ঘটনার নিয়ত অনুগামী ঘটনা সেই ঘটনার কার্য।
→ অন্বয়ী পদ্ধতির সাধারণ আকারটি নিম্নরূপ :
পূর্বগামী ঘটনা
ABCD
AEFG
AGHI
অনুগামী ঘটনা
abcd
aefg
agh
… A হল a এর কারণ বা a হল A এর কার্য।
এখানে এমন তিনটি অনুগামী ঘটনার দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়েছে যেখানে অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে a উপস্থিত আছে। আবার, পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এমনবকতকগুলি পূর্বগামী ঘটনার দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে যেখানে A সাধারণ উপস্থিত আছে। এজন্য A-কে a-এর কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
যুক্তিবিজ্ঞানী কোপিকে অনুসরণ করে মূর্ত দৃষ্টান্তের সাহায্যে অন্বয়ী পদ্ধতিটির সূত্র ব্যাখ্যা যেতে পারে। ধরা যাক, নিমন্ত্রণ বাড়িতে খাওয়ার পর একই পরিবারের কিছু সদস্য আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত হল। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অর্ধেক সদস্যকে জিজ্ঞাসা করা হল তারা সেদিন কী কী খেয়েছিল। তাদের উত্তরের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হল :
১ম ব্যক্তি: ভাত, ডাল, চিংড়ি মাছ, চাটনি খেয়েছে।
২য় ব্যক্তি ঃ লুচি, মাংস, চিংড়ি মাছ খেয়েছে।
৩য় ব্যক্তি: কচুরি, চিংড়ি মাছ, দই খেয়েছে।
এই তালিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হল যে, চিংড়ি মাছ খাওয়া আন্ত্রিক রোগের কারণ। দষ্টান্তটির আক্ষরিক রূপ :
ভাত= A
ডাল = B
চিংড়ি মাছ = C
লুচি = E
মাংস = F
কচুরি = G =
দই = H
আন্ত্রিক রোগ = S
পূর্বগামী ঘটনা
দৃষ্টান্ত :
অনুগামী ঘটনা
(1) A B C D
(২) EFC
3) G CH
অনুগামী ঘটনা
S
S
S
… C হল S-এর কারণ।
প্রশ্ন । অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর :
অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত পর্যবেক্ষণ-নির্ভর পদ্ধতি। যেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষণের সুযোগ নেই সেই সব ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে দুটি ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার করা সম্ভব। বন্যা, মহামারি প্রভৃতিকে কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন
করা সম্ভব নয়। কাজেই পরীক্ষণের সাহায্যে এই সব প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এজন্য আমাদের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করতে হয় ও অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে দুটি ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্দ স্থির করতে হয়। একই কারণে আমরা বলতে পারি যে, পরীক্ষণ ভিত্তিক পদ্ধতি অপেক্ষা অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগ ক্ষেত্র অনেক বেশি ব্যাপক।
(২) অন্বয়ী পদ্ধতির সাহায্যে আমরা কোনো কার্যের কারণ আবিষ্কার করতে পারি, আবার কোনো কারণের কার্য আবিষ্কার করতে পারি।
(৩) এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে যা কারণ নয়, তা অপসারণ করা যায়। যেমন— যদি আম খাওয়া বন্ধ করলেও ফোঁড়া হয় তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বলা যায় যে, আম খাওয়া ফোঁড়া হওয়ার কারণ নয়। এভাবে অ-কারণ অপসারণ করে প্রকৃত কারণ আবিষ্কারে পদ্ধতিটি সাহায্য করে।
(৪) অন্বয়ী পদ্ধতি প্রমাণের পদ্ধতি নয়। কিন্তু পদ্ধতিটিকে এই কারণে মূল্যহীন বলা যায় না। দুটি ঘটনার মধ্যে যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ থাকতে পারে, সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়া এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য। অনেক ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে, কুইনাইন সেবনে ম্যালেরিয়া রোগ সেরেছে, তবে এই পদ্ধতি অনুসারে বলা যায় যে, কুইনাইন সেবন ও ম্যালেরিয়া রোগ সারার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ থাকা সম্ভব।
(৫) পদ্ধতিটি মূলত পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হলেও এটি বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে অ-কারণ অপসারণ করা যায়। অ-কারণ অপসারণ করতে পারলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ হয়। এর ফলে সম্ভাব্য কার্য-কারণ সম্বন্ধে প্রকল্প গঠন করা সহজ হয়। প্রকল্প যাচাই করে বৈজ্ঞানিক কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার করেন৷
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি: প্রশ্ন ৪। অন্বয়ী পদ্ধতির ত্রুটিগুলি কী কী?
“ উত্তর : মিল দাবি করেন যে, অন্বয়ী পদ্ধতি হল কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার ও প্রমাণের পদ্ধতি। এই দাবির যৌক্তিকতা কতটুকু তা বিচার করা যাক :
(১) অন্বয়ী পদ্ধতিকে সার্থক আবিষ্কারের পদ্ধতি বলা যায় না। অন্বয়ী পদ্ধতি পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি। কিন্তু পর্যবেক্ষণের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের ইন্দ্রিয় শক্তি সীমাবদ্ধ। আমাদের প্রত্যক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই অভ্যাস ও মানসিক প্রস্তুতির দ্বারা প্রভাবিত। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পর্যবেক্ষণ অনবেক্ষণ দোষে (fallacy of non-observation) দুষ্ট হয়, যেমন— ম্যালেরিয়ার কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বদ্ধ জলাশয়ের উপস্থিতি লক্ষ করে অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে একে ম্যালেরিয়ার কারণ বলতে পারি। এই অনুমান অনবেক্ষণ দোষে দুষ্ট। ম্যালেরিয়ার প্রকৃত কারণ মশা। জলাভূমি কেবল মশার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
(২) ওপর নির্ভর করি। এজন্য প্রয়োজনমতো দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির প্রয়োজনমতো দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। অথচ এই পদ্ধতিলব্ধ সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা দৃষ্টান্তের সংখ্যার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
(৩) মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি খুবই দুর্বল পদ্ধতি। দৃষ্টান্তের সংখ্যার উপর এই পদ্ধতির সিদ্ধান্তের নির্ভরযোগ্যতা নির্ভর করে। কোনো ঘটনার যাবতীয় পূর্ববর্তী ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায় না। এমনও হতে পারে যে, একটি ঘটনা আমাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি এবং সেটি প্রকৃত কারণ। এক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে তা মিথ্যা হতে বাধ্য।
(৪) কোনো ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে প্রকল্প প্রণয়ন করতে না পারলে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে কার্য-কারণ সম্বন্ধ নিশ্চয় করা যায় না। কোহেন ও ন্যাগেলকে অনুসরণ করে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। টাক পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে টাক মাথাবিশিষ্ট কিছু ব্যক্তির মধ্যে কোনো সাধারণ বিষয় খুঁজে বার করতে হয়। এই জন্য টাকের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন বিষয়কে প্রথম থেকেই বাদ দিতে হয়। টাকের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন ঘটনাগুলিকে প্রথমেই বাদ দিতে হলে সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে পূর্ব থেকে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এসব কারণে অন্বয়ী পদ্ধতিকে কার্য-কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কারের পদ্ধতি বলা যায় না।
(৫) মিল পদ্ধতিটিকে কার্য-কারণ সম্বন্ধ প্রমাণের পদ্ধতি বলে মনে করেন। কিন্তু পদ্ধতিটি পর্যবেক্ষণ-নির্ভর বলে দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারে না। সীমিত সংখ্যক সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় না যে, দুটি ঘটনার মধ্যে নিয়ত অব্যভিচারী সম্বন্ধ আছে। ধরা যাক, আমি পর পর তিন দিন ভোরে স্বপ্ন দেখলাম। তিন দিনই আমার স্বপ্ন সত্য হল। ঘটনা দুটির মধ্যে অন্বয় প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত করলাম যে, ভোরের স্বপ্ন সত্য হয়। কিন্তু এটি সুনিশ্চিত যে, ভোরের স্বপ্নের সঙ্গে এর সত্য হওয়ার কোনো কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই।
(৬) এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভুল সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হতে পারি। যেমন— মধু সহযোগে বিভিন্ন ওষুধ সেবনের ফলে যদি বিভিন্ন রোগী কোনো রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে, তবে এই পদ্ধতি অনুসারে বলতে হবে মধু সেবন রোগ নিরাময়ের কারণ, এইজন্য যে, মধু সেবন পূর্বগামী দৃষ্টান্তগুচ্ছে সাধারণ ঘটনা।
৭) অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে কার্য-কারণ সম্বন্ধকে সহকার্য (co-effect) সম্বন্ধ থেকে পৃথক করা যায় না। বিদ্যুৎ চমকের পর নিয়ত বজ্রপাত হয়। তাই এই পদ্ধতি অনুসারে বলতে হয় যে, বিদ্যুৎ চমক বজ্রপাতের কারণ। কিন্তু বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমক উভয়ই সহকার্য। মেঘে মেঘে ঘর্ষণ উভয়ের কারণ। আবার দিন ও রাত্রি একটি অন্যটির সহগামী। কিন্তু ঘটনা দুটির সহগামিতা থেকে একথা বলা যায় না যে, দিন রাত্রির কারণ। পৃথিবীর আহ্নিক গতি উভয়ের কারণ।
(৮) প্রতিবন্ধক কারণের জন্য এই পদ্ধতি দুটি ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ পারে না। বসন্তের টিকা নেওয়ার পরও অনেকের বসন্ত হতে দেখা যায়। সুতরাং, এই পদ্ধতি অনুসারে বলতে হয় টিকা বসন্তের প্রতিষেধক নয়। কিন্তু সিদ্ধান্তটি ভুল।
(৯) বহুকারণ সম্ভাবনা এই পদ্ধতি প্রয়োগের পথে বাধার সৃষ্টি করে। বহুকারণবাদ অনুসারে একই কার্য বহু কারণের দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে। যেমন— মৃত্যু কার্যটি বিষপানে, জলে ডুবে, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য অপরিবর্তনীয় সাধারণ পূর্বগামী ঘটনার অনুসন্ধান করা অর্থহীন। অবশ্য এই ক্ষেত্রে অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করা যায়।