বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Teacj Sanjib
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Teacj Sanjib
৷৷ বিজ্ঞান ও কুসংস্কার ॥
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার: * ভূমিকা ঃ
“ধর্মকারা প্রাচীরে বজ্র হানো।
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো ॥” –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার: প্রাচীনযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতিনির্ভর। প্রকৃতির নির্মম ঝড় ঝঞ্ঝায় সে বিপর্যস্ত হয়েছে। বন্যা তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। প্রচণ্ড খরায় তার স্বাভাবিক জীবন পুড়ে খাক হয়েছে। ভূকম্পনে জনজীবন হয়েছে বিপর্যস্ত। একটা সময় চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ এ-সব কিছুকে
মানুষ দৈব-নির্ভর বলে ভেবেছে। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে নানাভুল ধারণা ছিল। এই ধারণার জায়গা থেকে মানুষের মনের বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্ম দেয় কুসংস্কারের।
* বিজ্ঞান ও কুসংস্কার কী? ঃ
বিজ্ঞান হল বিশেষ ধরনের জ্ঞান। তা অজানাকে জানতে, অদেখাকে দেখতে এবং দুর্বোধ্যকে বুঝতে সাহায্য করে। তার জন্য বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষারও প্রয়োজন। যেটা গবেষণালব্ধ অমোঘ সত্য সেটা বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচার, বিবেচনা, যুক্তি দিয়ে বিশেষ জ্ঞানে পৌঁছোনোর বিষয়। বিজ্ঞান চেতনার অভাবে মানুষের মনে বাসা বাঁধে অন্ধ বিশ্বাস। এই অন্ধ বিশ্বাসের পিছনে কোনো যুক্তি নির্ভরতা নেই। কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই। এই যুক্তিবিহীন অন্ধ বিশ্বাসই হল কুসংস্কার।
- আরো পড়ুন- চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা
* বিজ্ঞানচিন্তায় অবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রভাব ঃ
অন্ধবিশ্বাসের দৌলতে মানুষের মনের মধ্যে এমন কতকগুলো জায়গা আছে যেখানে বিজ্ঞান অকেজো। কারণ তার যুক্তিতে বিজ্ঞান সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। পরীক্ষা পাশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান একেবারে অচল। বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রেও ; খেলাতে জেতার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান একেবারে চুপচাপ। শুরু হয় জ্যোতিষশাস্ত্রের পর্যালোচনা। এসবই দৈববিশ্বাস তথা কুসংস্কারের ফল।
ডাক্তারও বিভিন্ন বিষয়ে পরাভূত দৈববিশ্বাসের কাছে। তাই বিজ্ঞানের চেয়ে দৈবের ওপর মানুষের আস্থা আজও অনেক বেশি। অতীতে অন্ধবিশ্বাসের জেরে গ্যালিলিও বিধর্মী হিসেবে প্রতিপন্ন হন। কোপানির্বাসের মতো বিজ্ঞানীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আজও সর্বত্র কুসংস্কারের জয়জয়কার। তা না হলে শিক্ষিত মানুষের হাতে রং-বেরংয়ের আংটি সেজে উঠবে কেন?
গ্রামে কলেরা লাগলে ওলাবিবির পুজো, শুভদিনে যাত্রা করা, টিকটিকি ডাকলে এবং হাই তুললে তুড়ি দেওয়া—এসব কর্মকাণ্ডের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। আজও সমাজে ধর্মের নামে ভয় দেখিয়ে ভণ্ডধার্মিক সহ নানান ধড়িবাজ পয়সা রোজগার করে। এসব কুসংস্কারের প্রভাব আজও সমাজে বর্তমান।
* কুসংস্কারের প্রভাবে ক্ষতি :
বিজ্ঞানশিক্ষার অভাবে সমাজ ও সভ্যতা আজ অপূরণীয় ক্ষতির শিকার। সাগরে সন্তান-বিসর্জন, সজ্ঞানে গঙ্গা লাভের আশায় মুমূর্ষু রোগীকে গঙ্গাতীরে নিয়ে গিয়ে বুক সমান জলে ডুবিয়ে রাখা, ডাইনি ভেবে মানুষকে পুড়িয়ে মারা আমাদের সমাজে দুর্লভ নয়। আজও শোনা যায় নাগিনী কন্যার দীর্ঘশ্বাস কিংবা নিশির ডাকে আত্মঘাতী হওয়ার মর্মন্তুদ কাহিনি। মানুষ প্রকৃত শিক্ষার অভাবে আজও এই ক্ষতির শিকার।
* কুসংস্কার দূরীকরণ :
কুসংস্কার দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। মানুষের বিজ্ঞান চেতনাকে বৃদ্ধি করতে পারলেই এ সমাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানকর্মী ও বিজ্ঞানজীবী পরিচালিত বিতর্ক সভা, আলোচনা চক্র প্রদর্শনী অনেক সুফল আনতে পারে। এ বিষয়ে ভারতে ২৬টি ‘বিজ্ঞান জাঠা’ ও তাদের ৫টি আঞ্চলিক জাঠা স্থাপিত হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে বিজ্ঞানজীবির কার্যকরী ভূমিকা এপ্রসঙ্গে স্মরণীয়।
১৯৯৩ সালে ভারতের কয়েকজন বিজ্ঞানীর জন্মশতবর্ষ হিসেবে বিজ্ঞানমেলা চালু করা হয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে। এভাবে বিজ্ঞান চেতনা সকলের মনে পৌঁছে দিতে পারলে কুসংস্কার দূরীকরণ সম্ভব হবে। অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা বৃদ্ধি ও যুক্তিনির্ভর মানসিতাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে কুসংস্কারের প্রভাব থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
* কুসংস্কাররোধে ছাত্রসমাজ :
ছাত্রসমাজ ‘চিরমুক্তিকামী’। তাদের একনিষ্ঠ সংগ্রাম, অকুণ্ঠ ত্যাগস্বীকার, নিঃস্বার্থ আত্মদান আনতে পারে বিশ্বের সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তি। পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে আনন্দঘন শান্তির নীড়। মানবতার প্রতিষ্ঠায় নতুন সমাজ, নব সংস্কারমুক্ত জাতি গড়ে উঠবে। বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব চেতনাসম্পন্ন ছাত্ররাই পারে মানুষের মনে বাস্তবের প্রতিফলন ঘটাতে, মানুষকে বৈজ্ঞানিক চিন্তা -চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে।
* উপসংহার :
বিজ্ঞান যুক্তিগ্রাহ্য দৃষ্টি দিয়ে ভ্রান্তধারণার মোহমুক্তি ঘটাতে পারে। আজ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে বিজ্ঞানসংস্থাগুলি কুসংস্কার রোধে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। মানুষ বিজ্ঞান শিক্ষার আলোকে বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠলে সমাজে আর কুসংস্কার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কুসংস্কারের মূঢ়তা এক সময় বাস্তব সত্যের আলোতে আলোকিত হয়ে শুচিস্নাত হবে। এভাবে দেশ ও জাতির বুক থেকে ঘটবে কুসংস্কারের মুক্তি।