আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন Teacj Sanjib
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন Teacj Sanjib
আরোহমূলক দোষ
আরোহমূলক দোষ: প্রশ্ন । মন্দ উপমাযুক্তি কাকে বলে?
আরোহমূলক দোষ:উত্তর : দুটি বস্তু বা ব্যক্তি বা ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করে এদের মধ্যে কোনো একটিতে কোনো বিশেষ গুণ আছে দেখে যদি অনুমান করা হয় যে অপরটিতেও ওই বিশেষ গুণটি থাকবে তবে সেই যুক্তিকে উপমাযুক্তি বলা হয়। দুটি বস্তুর বা ঘটনার বা ব্যক্তির মধ্যে যদি সাদৃশ্য মৌলিক হয় তবে উপমাযুক্তি সাধু হয় । সাদৃশ্য মৌলিক না হলে বা সাদৃশ্যের গুরুত্ব তুচ্ছ হলে উপমাযুক্তি মন্দ হয়।
মন্দ উপমাযুক্তি এক প্রকার অনুমান সংক্রান্ত দোষ। উপমাযুক্তির অপপ্রয়োগের ফলে এই দোষের উদ্ভব হয়। উপমাযুক্তিতে এই দোষ হয়, অর্থাৎ উপমাযুক্তি মন্দ হয় যখন
(১) উপমিত বিষয়ের পক্ষে সাদৃশ্যগুলি প্রাসঙ্গিক না হয় এবং
(২) সাদৃশ্যমূলক ধর্মগুলি গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক না হয় অর্থাৎ সাদৃশ্য যদি বাহ্য বা গৌণ হয়।
প্রশ্ন ২। অবৈধ সামান্যীকরণ কী ?
* উত্তর : এক জাতীয় কয়েকটি ব্যক্তি বা বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সমজাতীয় সকল বস্তু বা ঘটনা বা ব্যক্তি সম্বন্ধে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াকে সামান্যীকরণ (generalization) বলে। সংশ্লেষক বচনের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্বন্ধে নতুন তথ্য দেয়। বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদে নিহিত থাকে না। কাজেই যে সার্বিক বচনের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্বন্ধে কোনো নতুন জ্ঞান দান করে তাকে সার্বিক সংশ্লেষক বচন বলে। যেমন ‘সকল ছাত্র হয় সৎ’। কয়েকটি ছাত্রকে সৎ দেখে এই সার্বিক সংশ্লেষক বচনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরোহ অনুমানে এই সামান্যীকরণ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সামান্যীকরণ বৈধ হতে পারে আবার অবৈধ হতে পারে। প্রকৃতির একরূপতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের উপর ভিত্তি করে যখন সামান্যীকরণ করা হয় তখন সামান্যীকরণ বৈধ হয়। অপরদিকে যখন কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখে, কার্য-কারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন তাকে অবৈধ সামান্যীকরণ বলে। অবৈধ সামান্যীকরণ একপ্রকার অনুমান সংক্রান্ত দোষ।
প্রশ্ন । অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করার দোষ কখন যুক্তিতে ঘটে?
উত্তর : কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক, বাস্তব বা অবাস্তব ঘটনা জড়িত থাকে। কার্য উৎপাদনের ব্যাপারে যেসবের কোনো ভূমিকা নেই এমন পূর্ববর্তী ঘটনাকে অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনা বলে। কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে প্রাসঙ্গিক বা বাস্তব উপাদানগুলির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যদি প্রাসঙ্গিক উপাদানকে অবহেলা করে কোনো অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করা হয়, তবে যুক্তি অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষে দুষ্ট হবে। অন্বয়ী পদ্ধতি ও সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে যুক্তিতে এই দোষের উদ্ভব হয়।
প্রশ্ন । একই কারণের সহকার্যকে পরস্পরের কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ যুক্তিতে কখন হয়?
* উত্তর : কারণ হল কোনো একটি ঘটনার নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা এবং কার্য হল কোনো একটি ঘটনার নিয়ত অনুগামী ঘটনা। এখন কোনো কারণের একাধিক কার্য থাকতে পারে। একাধিক কার্যগুলিকে সহকার্য বলা হয়। কিন্তু কখনো কখনো আমরা কোনো সাধারণ কারণের দুটি সহকার্যের একটিকে অন্যটির কার্য বা কারণ বলে মনে করি। অর্থাৎ একই কারণের দুটি কার্যের মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ কল্পনা করি। এর ফলে যুক্তিতে দোষ হয়। এই দোষের নাম সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বা কার্য বলে গ্রহণ করার দোষ।
ঁ প্রশ্ন । যুক্তিতে কাকতালীয় দোষ কখন হয়?
+ উত্তর ঃ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় যে, কারণ হল শর্তহীন অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা। কারণ অবশ্যই কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা হয়। কিন্তু যে-কোনো পূর্ববর্তী ঘটনা কারণ নয়। যে-কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কোনো একটি পরবর্তী ঘটনার কারণ বললে যুক্তিতে যে দোষ বা অনুপপত্তি (fallacy) ঘটে, সেই দোষকেই কাকতালীয় দোষ ( fallacy of post hoc ergo propter hoc) বলা হয়। পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করলে যুক্তিতে এই দোষ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। অসতর্ক হয়ে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগ বা লৌকিক কুসংস্কার এই দোষের উৎস।
প্রশ্ন । আবশ্যিক শর্তকে সম্পূর্ণ কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ যুক্তিতে কখন ঘটে?
* উত্তর : কোনো কার্যের শর্তনিরপেক্ষ অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা হয়। কারণ হল আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শর্তের সমষ্টি। যে শর্তের অনুপস্থিতিতে কার্যটি ঘটে না, সেই শর্তকে আবশ্যিক শর্ত বলে। অক্সিজেন -এর উপস্থিতি দহনের আবশ্যিক শর্ত। কারণ অক্সিজেন না থাকলে দহন হবে না। তবু অক্সিজেনকে দহনের একমাত্র কারণ বলা যায় না, এজন্য যে, কেবল অক্সিজেন থাকলে দহন হবে না। দহনের জন্য অগ্নি সংযোগের প্রয়োজন হয়। কারণ অক্সিজেন উপস্থিত থাকলেও যদি অগ্নি সংযোগ না করা হয়, তবে দহন হবে না। মূল কথা, কার্যের উপস্থিতির জন্য আবশ্যিক শর্ত দায়ী হলেও সম্পূর্ণরূপে দায়ী নয়। এজন্য আবশ্যিক শর্তকে সম্পূর্ণ কারণ বললে আরোহ যুক্তিতে দোষ হয়। একেই আবশ্যিক শর্তকে সম্পূর্ণ কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ বলে।
প্রশ্ন । মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত দাও।
আরোহমূলক দোষ
analogy.) ● উত্তর : মানুষের মতো গ্রামোফোনের বুদ্ধি আছে ; কারণ মানুষের মতো এটি গান করতে পারে, হাসতে পারে, কথা বলতে পারে।
মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি ; মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের তুলনা করা হাস্যকর ব্যাপার। • মন্দ উপমা যুক্তির অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :
(১) মানুষের মতো মৌমাছিরা বাসস্থান তৈরি করতে পারে। সুতরাং, মানুষের মতো মৌমাছিরাও বুদ্ধিমান।
মন্তব্য : বাসস্থান নির্মাণের ভিত্তিতে মানুষের সঙ্গে মৌমাছির তুলনা করা যায় না। মানুষ তার প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের বাসস্থান নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু মৌমাছিরা কেবল একপ্রকার মৌচাক নির্মাণ করে এবং তা তারা সহজাত প্রবৃত্তির বশে করে।
(২) মানুষের মতো নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের জীবন আছে। সুতরাং, তাদেরও মানুষের মতো সুখ-দুঃখ আছে।
মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। কারণ জীবনের সঙ্গে সুখ-দুঃখের অবস্থার একটা আবশ্যিক সম্বন্ধ আছে। মানুষও প্রাণী। কাজেই, মানুষের মতো নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের অনুভূতি থাকাই স্বাভাবিক।
(৩) শুল্ক-প্রাচীর (tariff walls) ব্যাবসা-বাণিজ্যের অন্তরায়, কারণ প্রাচীর সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগের অন্তরায়।
মন্তব্য : এটি একটি মন্দ উপমা যুক্তি। কারণ দেওয়াল বাধা হলেও এটি আশ্রিতদের রক্ষা করে। শুল্ক-প্রাচীরও দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করে। তবু সাদৃশ্য দুটিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
(৪) নিম্নতর প্রাণীরা মানুষের মতোই যন্ত্রণা বোধ করে।
মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। মানুষের সঙ্গে নিম্নতর প্রাণীর শ্রেণিগত সাদৃশ্য থাকায় মানুষের যন্ত্রণা বোধ থেকে নিম্নতর প্রাণীদেরও যন্ত্রণা বোধ আছে, এই অনুমান যুক্তিযুক্ত। বাক্যে প্রকাশ করতে না পারলেও সব প্রাণীর যন্ত্রণা বোধ থাকা স্বাভাবিক।
(৫) ছোটো শিশুর মতো এই ছোটো চারাগাছটির জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং, মানবশিশুর মতো চারাগাছটির চিন্তাশক্তি আছে।
মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি । এই যুক্তিতে সাদৃশ্যমূলক ধর্ম ও অনুমিত ধর্মের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। কোনো কিছুর জন্ম, বৃদ্ধি, মৃত্যু থাকলেই তার চিন্তাশক্তি থাকবে এমন কথা বলা যায় না। তা ছাড়া চিন্তাশক্তি কেবল মানুষেরই আছে। উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর নেই।
আরোহমূলক দোষ:
(৬) পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করা গেছে। পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব আছে। অতএব, মঙ্গলগ্রহে জীবের অস্তিত্ব আছে।
মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। কারণ দুটি গ্রহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। পৃথিবীর মতো মঙ্গলে বায়ুমণ্ডল আছে, জল, স্থল আছে। উভয় গ্রহের জলবায়ুর প্রকৃতি, তাপমাত্রা প্রায় সমান। গ্রহ দুটি সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে, উভয়ে সূর্য থেকে আলোক সংগ্রহ করে। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব আছে। অতএব, মঙ্গলগ্রহেও জীবনের অস্তিত্ব থাকা স্বাভাবিক।
(৭) রাম ও শ্যাম সমবয়সী, একই স্কুলে পড়ে, একই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। রাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। অতএব শ্যামও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবে।
মন্তব্য : এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। রাম ও শ্যামের মধ্যে যে সাদৃশ্যের কথা বলা হয়েছে তা মৌলিক নয়। দুজনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈসাদৃশ্য থাকার সম্ভাবনা বিচার করা হয়নি। সমবয়সী হলে বা একই স্কুল বা একই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেই দুজনের মেধা সমান হয় না। কাজেই, রাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে শ্যাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবে, একথা বলা যায় না।
(৮) মানুষের মতো উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, বিনাশ আছে। মানুষের যেমন বুদ্ধি আছে উদ্ভিদেরও সেরকম বুদ্ধি থাকবে, একথা বলা যায়।
মন্তব্য : উদ্ভিদ ও মানুষের মধ্যে যে সাদৃশ্য ধর্ম ও অনুমিত ধর্মের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। দুটির মধ্যে জন্ম, বৃদ্ধি, বিনাশ দেখে বলা যায় না যে, মানুষের বুদ্ধি আছে বলে উদ্ভিদেরও বুদ্ধি থাকবে। তাছাড়া প্রাণীকুলের মধ্যে কেবল মানুষেরই বুদ্ধি আছে। উদ্ভিদের জীবন আছে, চিন্তাশক্তি নেই।
(৯) রাম ও শ্যাম দুই যমজ ভাই, রামের বুদ্ধ্যঙ্ক 120, উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী, পড়াশোনায় মনোযোগী, গণিতে দক্ষ। শ্যামের বুদ্ধ্যঙ্ক 120, পড়াশোনায় মনোযোগী, উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী। সুতরাং, শ্যামও গণিতে দক্ষ হবে।
মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। হেতুবাক্যে যে সব ধর্মের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলির ভিত্তিতে এই রকম সিদ্ধান্ত গঠন!করা যুক্তিযুক্ত। তবে রাম গণিতে দক্ষ বলে শ্যামও গণিতে দক্ষ হবে, এমন কথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় না। শ্যাম গণিতে দক্ষ না হয়ে ইতিহাসে বা ভূগোলে দক্ষ হতে পারে।
(১০) গাছের মতোই কারখানার জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। গাছের প্রাণ আছে। সুতরাং, কারখানার প্রাণ আছে।
মন্তব্য ঃ এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। গাছ, উদ্ভিদ, কারখানা বিমূর্ত ধারণা। শ্রেণিগত চরিত্র দুটির ভিন্ন। কাজেই, অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো
সম্বন্ধ নেই। উদ্ভিদের সঙ্গে কারখানার তুলনা করা চলে না। কারখানার প্রাণ থাকতে পারে না।
(১১) মানুষের মন্তব্য : মতো যখন গাছের প্রাণ আছে তখন মানুষের মতো গাছের চিন্তাশক্তি আছে। যুক্তিটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। মানুষের মতো গাছের প্রাণ থাকলেও চিন্তাশক্তি কেবল মানুষের আছে। এক্ষেত্রে অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই।
আরোহমূলক দোষ:
(১২) রাষ্ট্র জীবদেহ সদৃশ। জীবদেহের মৃত্যু আছে। কাজেই রাষ্ট্রের মৃত্যু আছে।
মন্তব্য ঃ আলংকারিক অর্থে রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রের সঙ্গে জীবদেহের তুলনা করা যায় না। এই ক্ষেত্রে অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। সুতরাং, এটি মন্দ উপমা যুক্তি।
(১৩) জীবদেহের মতো জাতির জন্ম, বর্ধন ও লয় আছে। সুতরাং, জাতিও এক জীবদেহ। মন্তব্য : আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে প্রকৃত সাদৃশ্য অনুমিত হয়েছে। ______ কাজেই এটি মন্দ উপমা যুক্তি। জাতি একটি বিমূর্ত ধারণা। জীবদেহ মূর্ত ধারণা। একটির সঙ্গে অন্যটির তুলনা করা চলে না।
আরোহমূলক দোষ:
(১৪) একটি দেশের রাজধানীর সঙ্গে জীবদেহের হৃৎপিণ্ডের বহু সাদৃশ্য আছে। সুতরাং, রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি পেলে রাজধানীর রোগ বলেই মনে করতে হবে।
মন্তব্য : রাজধানাকে আলংকারিক অর্থে : রাজধানীকে আলংকারিক অর্থে জীবদেহের হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কাজেই এই আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে প্রকৃত সাদৃশ্য অনুমান করা যুক্তিযুক্ত নয়। সুতরাং, এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। হৃৎপিণ্ডের আয়তন বৃদ্ধি একটা রোগ। কিন্তু রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি রোগ নয়। জীবের কেবল রোগ হয়। রাজধানী একটি বিমূর্ত ধারণা। রাজধানীর রোগ হয় না। (lasthysic) (১৫) দুটি বৃক্ষের মধ্যে উচ্চতা, পুষ্প, পত্র, শাখা-প্রশাখা বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। একটির ফল
মিষ্ট, সেহেতু অপরটির ফল মিষ্ট হবে।
মন্তব্য ঃ এটি মন্দ উপমা যুক্তি। দুটি বৃক্ষের সাদৃশ্যের বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তা ছাড়া মৃত্তিকার উপাদান ফলের মিষ্টতার অন্যতম শর্ত। দুটি বৃক্ষের মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান ভিন্ন হলে একই জাতীয় দুটি গাছের ফলের স্বাদ ভিন্ন হয়। সুতরাং, সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতার পরিমাণ খুবই কম।
(১৬) উপনিবেশগুলি ফলের মতো। ফল পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি উপনিবেশগুলি উন্নত হলে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মন্তব্য ঃ এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। কোনো দেশের উপনিবেশগুলি আলংকারিক অর্থে বৃক্ষের ফলের মতো। কাজেই এই আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে
প্রকৃত সাদৃশ্য কল্পনা করা ঠিক নয়। সুতরাং, আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তকে সত্য বলা যায় না।
(১৭) মানুষের মতো কুকুরের চোখ, কান, মাথা আছে। মানুষ চিন্তা করতে পারে। অতএব, কুকুরও চিন্তা করতে পারে।
মন্তব্য : এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। প্রাণীদের মধ্যে কেবল মানুষ চিন্তা করতে পারে। মানুষ উন্নত ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারী। মানুষের মস্তিষ্কের গঠন অন্য প্রাণীদের মস্তিকের গঠন থেকে ভিন্ন। অন্য প্রাণীদের ক্রিয়াগুলি বুদ্ধিপ্রসূত নয়। ক্রিয়াগুলি সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
(১৮) পাকস্থলি থেকে যেমন পাচক রস নির্গত হয়, যকৃৎ থেকে যেমন পিত্তরস নির্গত হয়, তেমনি মস্তিষ্ক থেকে নিশ্চয়ই চিন্তা নিঃসৃত হয়।
মন্তব্য : শরীরের অভ্যন্তরে যেসব রস নির্গত হয় সেগুলি অনালী বা সনালী গ্রন্থির ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের ক্রিয়ার সঙ্গে অনালী ও সনালী গ্রন্থির ক্রিয়ার তুলনা করা যায় না। মস্তিষ্কের বিশেষ ধরনের ক্রিয়ার ফলে মনে চিন্তার সৃষ্টি হয়। সুতরাং এটি মন্দ উপমা যুক্তি।
(১৯) প্রায়ই জলে স্নান করবে না। কারণ এক টুকরো দড়ির মতো শরীরেও পচনের আশঙ্কা আছে।
মন্তব্য : মানবদেহের সঙ্গে দড়ির কোনো সাদৃশ্য নেই। দড়ি ভিজলে পচে যায়। শরীর ভিজলে পচে যায় না। সিদ্ধান্তটির সম্ভাব্যতার মাত্রা শূন্য। (২০) নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান তাঁর পতনের কারণ। কাজেই, হিটলারের রাশিয়া অভিযানও তার পতনের কারণ।
মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি। দুটি অভিযানের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করে দুটির মধ্যে আর একটি বিষয়ে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়েছে। যুক্তিটি অবৈধ। কারণ এই সাদৃশ্যের ভিত্তি হল কয়েকটি অগভীর (superficial) সাদৃশ্য, সাদৃশ্যগুলি মৌলিক নয়।
আরোহমূলক দোষ:
“ প্রশ্ন । অবৈধ সামান্যীকরণের দৃষ্টান্ত দাও।
* উত্তর :
(১) একটি বিদেশি পর্যটক কোনো দেশে এসে কয়েকজন অসাধু লোক দেখে সিদ্ধান্ত করলেন যে, ওই দেশের সব লোক অসাধু
বিচার : যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। দেশের কয়েকজন অসাধু লোক দেখে বিদেশি পর্যটক সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে এই সিদ্ধান্ত গঠন করেছেন। তাঁর সামান্যীকরণের ভিত্তি হল অবাধ অভিজ্ঞতা। বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত আছে কিনা, দেশে সাধু লোক আছে কি না, তা তিনি খুঁজে দেখেননি। অর্থাৎ বিপরীত
দৃষ্টান্তকে উপেক্ষা করে কেবল কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্ডের ভিত্তিতে এই সামান্যীকরণ করা হয়েছে। কাজেই, এই সামান্যীকরণ অবৈধ।
অবৈধ সামান্যীকরণের অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন
(১) কোনো স্থানের কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীকে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল ওই স্থানের সব ব্যবসায়ী অসাধু ।
বিচার : যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কয়েকজন অসাধু লোক দেখে, অবাধ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে, সার্বিক সংশ্লেষক বচনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিপরীত দৃষ্টান্ত উপেক্ষা করা হয়েছে।
(২) আজ পর্যন্ত আমি যত হাঁস দেখেছি সেগুলি সবই সাদা। সুতরাং, সব হাঁস সাদা।
বিচার : যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণের দৃষ্টান্ত। কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কিছু হাঁস সাদা দেখা গেছে। এই অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সামান্যীকরণ করা হয়েছে। কার্য-কারণ নিয়ম এই সামান্যীকরণের ভিত্তি নয়। হাঁস হলেই যে তার সাদা রং হবে—এটি আবশ্যিক নয়। বস্তুত কালো রং-এর যে হাঁস আছে –এই নঞর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
(৩) আমি যত কাক দেখেছি সেগুলি সবই কালো। সুতরাং, সব কাক কালো।
বিচার : যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখে অবাধ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সামান্যীকরণ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে সাদা কাক আছে —এই বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত উপেক্ষা করা হয়েছে। কাক এবং কালোর মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই।
(৪) আজ পর্যন্ত নারীরা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনি। সুতরাং, নারীরা পুরুষের থেকে নিকৃষ্ট।
বিচার : এক্ষেত্রে কতিপয় দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে অবাধ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সামান্যীকরণ করা হয়েছে। বিপরীত দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এমন অনেক নারী আছেন যাঁরা পুরুষের সমকক্ষ ছিলেন বা আছেন।
(৫) আমি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করি না। কারণ যারা পরামর্শ গ্রহণ করে তাদেরও মরতে হবে।
বিচার ঃ মানুষ মরণশীল। সব মানুষের একদিন মৃত্যু হবে। এই সার্বিক সত্য থেকে একথা বলা যায় না যে, ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করলে রোগমুক্তি হয়, মানুষ দীর্ঘদিন সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্ত দেখে, অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা সত্ত্বেও মৃত্যু হয়েছে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সামান্যীকরণ করা হয়েছে। কাজেই, যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণের দৃষ্টান্ত।
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর
(৬) টেলিগ্রাম মাত্রই অশুভ, কারণ তারা প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ আনে।
বিচার : এটি অবৈধ সামান্যীকরণের দৃষ্টান্ত। অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই সামান্যীকরণ করা হয়েছে। কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দেখা গেছে যে, টেলিগ্রাম অশুভ সংবাদ বহন করেছে। বিপরীত দৃষ্টান্ত, অর্থাৎ টেলিগ্রাম শুভ সংবাদ বহন করেছে, এটা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বা উপেক্ষা করা হয়েছে। টেলিগ্রাম মাত্রই অশুভ সংবাদ বহন করে না।
(৭) আমি যতজন শিক্ষক দেখেছি তারা সবাই সৎ। সুতরাং, সব শিক্ষকই সৎ।
বিচার : যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। আমি আজ পর্যন্ত যেসব শিক্ষক দেখেছি তাঁরা সবাই সৎ, এই থেকে সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে সিদ্ধান্ত করেছি সব শিক্ষকই সৎ। অসৎ শিক্ষক যে থাকতে পারে তা বিচার করা হয়নি। এক্ষেত্রে সামান্যীকরণের ভিত্তি হল অবাধ অভিজ্ঞতা। এই অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা যায় না যে, সব শিক্ষকই সৎ।
(৮) মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। কেননা তা যদি হত তাহলে ডাক্তাররা ব্যবস্থা পত্রে এটি উল্লেখ করতেন না।
বিচার : এই ক্ষেত্রে কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখে সামান্যীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। ডাক্তাররা রোগীর বিশেষ অবস্থায় মদ্যপান ব্যবস্থা পত্রে লিখে থাকেন। সাধারণ অবস্থায় মদ্যপানের নির্দেশ তাঁরা দেন না। বিপরীত দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কার্য-কারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে এই সামান্যীকরণ করা হয়নি। কাজেই, এই সামান্যীকরণ অবৈধ।
(৯) সব পাখি দন্তহীন। কারণ যেসব পাখি পর্যবেক্ষণ করেছি তাদের একটিরও দাঁত নেই।
বিচার ঃ পর্যবেক্ষণের সাহায্যে কয়েকটি দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হল। দেখা গেল যে, পাখিগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য আছে, কিন্তু তাদের সকলেরই দাঁত নেই। পাখি হওয়া এবং দাঁত না থাকার মধ্যে অন্বয় লক্ষ্য করে, অর্থাৎ অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে, সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে, সব পাখি দন্তহীন। পাখি হওয়া ও দাঁত না থাকার মধ্যে কোনো কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। এ দুটি ঘটনার মধ্যে সহাবস্থান থাকতে পারে। কাজেই, এই সামান্যীকরণ অবৈধ।
(১০) আমি আজ পর্যন্ত যত মানুষ দেখেছি তারা সবাই স্বার্থপর। অতএব, সব মানুষই স্বার্থপর।
বিচার ঃ ৭নং বিচারের অনুরূপ।
(১১) একজন বিদেশি পর্যটক ভারতবর্ষে এসে বেশ কিছু লোককে খালিপায়ে হাঁটতে দেখে সিদ্ধান্ত করলেন সব ভারতীয় খালিপায়ে হাঁটে।
বিচার ঃ ৭নং বিচারের অনুরূপ।
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন
প্রশ্ন । অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষের দৃষ্টান্ত দাও।
● উত্তর :
(১) দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ।
বিচার ঃ দুর্ভিক্ষের সঙ্গে দেবতার রোষের কোনো কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। ‘দেবতার রোষ’ এই ক্ষেত্রে অবান্তর বিষয়। এই অনুমানের ভিত্তি হল কোনো বন্ধ ধারণা বা কুসংস্কার। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে কুসংস্কারবশত একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলা হয়েছে।
● অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :
(ক) মধু সেবন রোগ নিরাময়ের কারণ।
বিচার : মধু সহযোগে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়। যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করা’ নামক দোষ ঘটেছে। অন্বয়ী পদ্ধতির ভ্রান্ত প্রয়োগের ফলে এরূপ দোষ হয়েছে। এক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের ব্যাপারে মধু সেবন অবান্তর ঘটনা। মধু সেবনের সঙ্গে রোগ নিরাময়ের কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকতে পারে না। যে-কোনো নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা যায় না। মধু সেবন রোগ নিরাময়ের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা হলেও কারণ নয়।
(খ) মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকাতার উত্তাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব ওই ক্লাবের সদস্য বৃদ্ধি কলকাতার উত্তাপ বৃদ্ধির কারণ।
বিচার : এই ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত দুটির মধ্যে সমানুপাতিক পরিবর্তন লক্ষ করে, অর্থাৎ সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে অপপ্রয়োগ করে, কার্য-কারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলকাতার তাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো ক্লাবের সদস্য বৃদ্ধি অবান্তর ঘটনা। এই অবান্তর বিষয়কে কারণ বলায় যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করা নামক দোষ’ ঘটেছে।
(গ) ভাগ্য খারাপের জন্য ছেলেটি এবার অকৃতকার্য হল।
বিচার : ‘ভাগ্য খারাপ’ একটি অবান্তর বিষয়। কার্য উৎপাদনে এর কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। এই অবান্তর বিষয়কে কারণ বলায় যুক্তিটিতে ‘অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ’ ঘটেছে।
(ঘ) কলকাতায় বাৎসরিক মৃত্যুর হার দিল্লি অপেক্ষা অধিক। সুতরাং, কলকাতা দিল্লি অপেক্ষা অধিক অস্বাস্থ্যকর স্থান।
বিচার : মৃত্যুহারের উপর ভিত্তি করে দুটি স্থানের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত করা যায় না। দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় মৃত্যু হার অধিক—এর একটি সম্ভাব্য
কারণ হল কলকাতায় জনসংখ্যার অনুপাত দিল্লি অপেক্ষা বেশি অথবা কলকাতা অপেক্ষা দিল্লিতে চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত ও চিকিৎসা গ্রহণ সহজসাধ্য। কলকাতায় মৃত্যুর হার বেশি, কারণ কলকাতা অধিক অস্বাস্থ্যকর একথা বললে প্রাসঙ্গিক বিষয়কে অবহেলা করে অবান্তর বিষয়কে কারণ বলা হবে। কাজেই যুক্তিটিতে ‘অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ’ হয়েছে। –
(ঙ) যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতের জনসংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে।
বিচার ঃ পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে ও ঘটনা দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ অনুমান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সহগামীতার সম্বন্ধ থাকলেও কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে প্রথমটি একটি অবান্তর ঘটনা। কাজেই, যুক্তিটিতে অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে।
(চ) রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে তা বোঝাই গিয়েছিল। কারণ, পরীক্ষার হলে যাবার পথে তার সঙ্গে একটি অপয়া লোকের দেখা হয়েছিল।
বিচার ঃ রামের ফেল করার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে আমরা একটি অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করেছি। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে কোনো লোককে পয়া বা অপয়া বলা হয়। কার্য উৎপাদনে তার কোনো ভূমিকা নেই। সুতরাং, যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ’ ঘটেছে।
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন
ঁ প্রশ্ন । সহকার্যকে কারণ বা কার্য মনে করা দোষের দৃষ্টান্ত দাও।
* উত্তর : ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা বৃদ্ধিই গ্রীষ্মের অসহ্য উত্তাপ বৃদ্ধির কারণ। যুক্তিটিতে সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, উত্তাপ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। :: পারদস্তম্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি, গ্রীষ্মের উত্তাপ বৃদ্ধির কারণ।
বিচার : পারদস্তম্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি ও তাপ বৃদ্ধি, এই ঘটনা দুটির মধ্যে একমুখী সহপরিবর্তন লক্ষ করে প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু দুটি ঘটনাই সহকার্য। এ দুটির সাধারণ কারণ হল বায়ুমণ্ডলে উত্তাপ বৃদ্ধি। • অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :
(১) ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা হ্রাসের ফলে পার্শ্ববর্তী হ্রদের জল জমে বরফে পরিণত হল।
যুক্তিটিতে সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে পারদত্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস পায়নি, হ্রদের জল জমেনি
পারদত্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে, হ্রদের জল জমতে শুরু করেছে পারদস্তম্ভের উচ্চতা আরও হ্রাস পেয়েছে, হ্রদের জল জমে বরফে পরিণত হয়েছে। পারদস্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস হ্রদের জল জমে বরফ হওয়ার কারণ।
বিচার : পারদস্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস ও হ্রদের জল জমে বরফে পরিণত হওয়ার মধ্যে একমুখী সহপরিবর্তন লক্ষ করে প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু উভয়ই সহকার্য। এ দুটির সাধারণ কারণ হল বায়ুমণ্ডলে উত্তাপ হ্রাস। সুতরাং, যুক্তিটিতে সহকার্যকে পরস্পরের কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে।
(২) জোয়ারের পর ভাটা আসে। সুতরাং, জোয়ার ভাটার কারণ।
বিচার ঃ যুক্তিটিতে সহকার্যকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে। জোয়ার এবং ভাটা উভয়ই সহকার্য। এদের সাধারণ কারণ হল চন্দ্রের আকর্ষণ। একটি ঘটনাকে অপর একটি ঘটনার নিয়ত পূর্বগামী বা অনুগামী দেখে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটিকে অন্যটির কারণ বা কার্য বলা হয়েছে। জোয়ার ও ভাটা একটি অপরটির সহগামী। জোয়ারের পর নিয়ত ভাটা আসে বা ভাটার পর নিয়ত জোয়ার আসে। কিন্তু দুটি ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। উভয়ে সহকার্য।
(৩) রাত্রির পর দিন আসে। সুতরাং, রাত্রি দিনের কারণ।
বিচার : যুক্তিটিতে সহকার্যকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে। রাত্রি এবং দিন —একটি অন্যটির কারণ বা কার্য নয়। উভয়ই সহকার্য। দুটি ঘটনারই কারণ হল পৃথিবীর আহ্নিক গতি। কিন্তু ঘটনা দুটির একটিকে অন্যটির নিয়ত পূর্বগামী বা অনুগামী দেখে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে দুটির মধ্যে কার্য-কারণ সম্বন্ধ কল্পনা করা হয়েছে। অন্বয়ী পদ্ধতি এই ক্ষেত্রে সহকার্য সম্বন্ধকে কার্য-কারণ সম্বন্ধ থেকে পৃথক করতে ব্যর্থ হয়েছে।
(৪) কারখানাটির চিমনির ধোঁয়া নীচে নেমে আসাতেই বৃষ্টি শুরু হল। সুতরাং, চিমনির ধোঁয়া নিম্নগামী হওয়া বৃষ্টিপাতের কারণ।
বিচার : চিমনির ধোঁয়া নিম্নগামী হওয়া ও বৃষ্টিপাতের মধ্যে পূর্বগামী-অনুগামী সম্বন্ধ থাকলেও কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। উভয়ই সহকার্য অর্থাৎ উভয়ে একটি এই সাধারণ কারণটি হল ভারী শীতল বাতাসের সাধারণ কারণের কার্য প্রবাহ। অত্যধিক গরমে বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে। ঠান্ডা বাতাস ওই শূন্যস্থান পূরণ করে। ভারী ঠান্ডা বাতাসের চাপে চিমনির ধোঁয়া নিম্নগামী হয়। আবার ঠান্ডা বাতাসে জলীয় বাষ্প জমে বৃষ্টিপাত হয়। কাজেই যুক্তিটিতে সহকার্যকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে।
আরোহমূলক দোষ
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর দর্শন
আরোহমূলক দোষ প্রশ্ন উত্তর