পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত রূপে কারণ আলোচনা কর-teacj sanjib

 পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত রূপে কারণ আলোচনা কর-teacj sanjib

পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত রূপে কারণ

পর্যাপ্ত-আবশ্যিক-শর্ত-রূপে-কারণ-আলোচনা-কর-teacj-sanjib

 

 

✪ উত্তর : > পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত : পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত হল এমন একটি ঘটনা বা ঘটনাসমাবেশ, যার উপস্থিতিতে সর্বদা একটি নির্দিষ্ট কার্য ঘটে এবং যার অনুপস্থিতিতে ওই নির্দিষ্ট কার্যটি কখনও ঘটে না।

 

। আক্ষরিক দৃষ্টান্ত ঃ কারণ বলতে যদি পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত ধরা হয় এবং এই অর্থে যদি A, B-এর কারণ হয়, তবে বলা যায় যে –

 

A ঘটলে B ঘটবে।

এবং

A না ঘটলে B ঘটবে না।

 

। মূর্ত দৃষ্টান্ত ঃ আর্দ্র-ইন্ধনে (ভিজে জ্বালানিতে) বহ্নিসংযোগ ধূমের পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত। কারণ, আর্দ্র-ইন্ধনে বহ্নিসংযোগ ঘটলে ধূম উৎপন্ন হবে এবং আর্দ্র-ইন্ধনে বহ্নিসংযোগ না ঘটলে ধূম উৎপন্ন হবে না।

 কারণ ও পর্যাপ্ত শর্ত

। কারণ ও পর্যাপ্ত শর্ত : এক্ষেত্রে আমরা কারণ থেকে কার্যের অনুমান করতে পারি, কিন্তু কার্য থেকে কারণের অনুমান নির্ভুলভাবে করতে পারি না। কিন্তু কার্যের অভাব থেকে কারণের অভাব অনুমান করা যায়। পর্যাপ্ত শর্ত সম্পূর্ণ কারণ নয়। বিষপান মৃত্যুর পর্যাপ্ত শর্ত। কোনো ব্যক্তি বিষপান করেছে দেখে আমরা বলতে পারি যে, তার মৃত্যু হবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির মৃত্যু দেখে আমরা সুনিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, ওই ব্যক্তি বিষপান করেছে। কারণ এটি পরীক্ষা সাপেক্ষ। বিষপান ছাড়াও অন্যভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। একই কার্যের একাধিক পর্যাপ্ত শর্ত থাকতে পারে। এগুলির কোনো একটি ঘটলে নির্দিষ্ট কার্যটি ঘটবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি মৃত্যু না হয় তবে একথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সে বিষপান করেনি। * কারণ ও আবশ্যিক শর্ত : এক্ষেত্রে আমরা কারণের অভাব থেকে কার্যের অভাব অনুমান করতে পারি। কার্য থেকে কারণের অনুমান করতে পারি। কিন্তু কারণ থেকে কার্যের অনুমান করতে পারি না। আবশ্যিক শর্তের সঙ্গে কারণকে অভিন্ন বলা যায় না। বহ্নি সংযোগ না করলে

ধূম উৎপন্ন হবে না। কারণের অভাব থাকলে কার্যের অভাব থাকবে। তবু বহ্নি সংযোগ করলে ধূম উৎপন্ন হবেই, এমন কথা বলা যায় না। ভিজে কাঠে বহ্নি সংযোগ করলে তবেই ধূম উৎপন্ন হবে। একটি কার্যের উৎপত্তির জন্য বিভিন্ন শর্তের উপস্থিতি প্রয়োজন। এগুলির প্রত্যেকটি আবশ্যিক শর্ত। আবশ্যিক শর্তের অনুপস্থিতিতে কার্য ঘটে না। কিন্তু এ থেকে আমরা বলতে পারি না যে, আবশ্যিক শর্ত উপস্থিত হলে কার্যটি ঘটবেই। কোপির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বলা। যায় যে, অক্সিজেন উপস্থিত না থাকলে (অনুপস্থিত থাকলে) দহন হবে না ; কিন্তু এই থেকে। বলা যায় না যে, অক্সিজেন থাকলে দহন হবে। দহন কার্যের উৎপত্তির জন্য নানা শর্তের। উপস্থিতি প্রয়োজন। এগুলির অন্যতম হল অক্সিজেন থাকা। সুতরাং, আবশ্যিক শর্ত কারণের। একটি অংশ। কোনো একটি কার্যের অনেক শর্তই আবশ্যিক। বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ থাকা বৈদ্যুতিক ট্রেন চলার একটি আবশ্যিক শর্ত। কারণ তারে বিদ্যুৎ না থাকলে ট্রেন চলবে না। কিন্তু কেবল তারে বিদ্যুৎ থাকলেই ট্রেন চলবে না। ট্রেন চলার জন্য ট্রেনের ইঞ্জিন সচল থাকা চাই, ড্রাইভার থাকা চাই ইত্যাদি। এগুলি প্রত্যেকটি আবশ্যিক শর্ত। কারণ এগুলির কোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে ট্রেন চলবে না। কিন্তু এই থেকে বলা যাবে না যে, এগুলির কোনো একটি উপস্থিত থাকলে ট্রেন চলবে।

কারণ ও পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত

→ কারণ ও পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত ঃ এক্ষেত্রে আমরা কার্য থেকে কারণের অনুমান এবং কারণ থেকে কার্যের অনুমান করতে পারি। Copi বলেন, কোনো ঘটনার কারণরূপে পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি নির্দিষ্ট কার্যের একটিমাত্র পর্যাপ্ত-আবশ্যিক শর্ত থাকে। এজন্য আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শর্তকে একত্র করে কোনো কার্যের কারণ ধরা হয়। বলা হয় যে, কোনো কার্যের কারণ হল এমন একটি অবস্থা যার অব্যবহিত পরে কার্যটি নিয়ত ঘটে এবং যা নিয়ত কার্যটির অব্যবহিত পূর্বে ঘটে। এক্ষেত্রে আমরা কারণ থেকে কার্যের অনুমান করতে) পারি, কারণের অভাব থেকে কার্যের অভাব অনুমান করতে পারি। আবার কার্য থেকে কারণের অনুমান করতে পারি এবং কার্যের অভাব থেকে কারণের অভাব অনুমান করতে পারি। 

পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত রূপে কারণ

 বহুকারণবাদ কী? (What is the doctrine of plurality of causes ? )

 

* উত্তর ঃ বহুকারণবাদের প্রচারক হলেন মিল ও বেইন। এই মতবাদ অনুসারে একটি নির্দিষ্ট কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণেরদ্বারা ঘটতে পারে (a given effect may be produced by different causes in different cases)। উভয় যুক্তিবিদ মনে করেন যে, একই কারণ), থেকে একই প্রকার কার্য ঘটলেও একই কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণের দ্বারা সংঘঠিত হতে, পারে। যেমন— মৃত্যু এই ঘটনাটি দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য ঘটতে পারে, কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য ঘটতে পারে, জলে ডুবে বা আত্মহত্যার ফলেও ঘটতে পারে। একেই বহুকারণবাদ বলে। সুতরাং, এই মতবাদ অনুসারে একটি কার্য সব ক্ষেত্রে একটি কারণের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তা নয়, একটি কার্যের বিভিন্ন বিকল্প কারণ থাকতে পারে (same effect may be produced by different causes in different cases) |

বহুকারণবাদের মূল্যায়ন

• বহুকারণবাদের মূল্যায়ন : সাধারণ দৃষ্টিতে বহুকারণবাদ যুক্তিসংগত বা সমর্থনযোগ্য। কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মতবাদ সমর্থনযোগ্য নয়। এই মতবাদ মেনে নিলে কার্য থেকে

কারণের অনুমান অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই মতবাদ যে অবৈজ্ঞানিক, তা তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো যায়। যেমন

কার্যের বিশেষীকরণ

(১) কার্যের বিশেষীকরণ ( Specialising the effect) : কারণকে বিশেষভাবে এবং কার্যকে সাধারণভাবে গ্রহণ করলে বহুকারণবাদের সৃষ্টি হয়। কিন্তু কারণকে বিশেষভাবে গ্রহণ করলে কার্যকেও বিশেষভাবে গ্রহণ করা উচিত। এখন, কার্যকে সাধারণভাবে গ্রহণ না করে যদি, কারণের মতো বিশেষভাবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে বহুকারণবাদ ভ্রান্ত বলে প্রতিপন্ন হয়ে যায়। এরূপ ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, একটি বিশেষ কার্য একটি বিশেষ কারণ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন— মৃত্যু এই কার্যটিকে সাধারণভাবে গ্রহণ না করে, অর্থাৎ কেবলমাত্র মৃত্যু না বলে যদি রোগে মৃত্যু, আত্মহত্যায় মৃত্যু, বিষপানে মৃত্যু, জলে ডুবে মৃত্যু ইত্যাদি বলা হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কার্যের নির্দিষ্ট কারণই থাকবে এরূপ বলা যায়। কারণ বিষপানে মৃত্যুর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কারণের দ্বারা সংঘটিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে নেই। – –

কারণের সামান্যীকরণ

(২) কারণের সামান্যীকরণ (Generalising the cause) : অনুরূপভাবে, কার্যকে সাধারণভাবে গ্রহণ করলে কারণকেও সাধারণভাবে গ্রহণ করতে হবে। কারণকে বিশেষভাবে গ্রহণ না করে কার্যের মতো সাধারণভাবে গ্রহণ করলে বহুকারণবাদ ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়ে যায়। মৃত্যুকে যদি সাধারণ অর্থে গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ বিষপানজনিত মৃত্যু, রোগজনিত মৃত্যু, জলে ডুবে মৃত্যু এগুলির বিশেষ ধর্ম উপেক্ষা করে এগুলির সাধারণ ধর্ম মৃত্যুকে কার্যরূপে গ্রহণ করা যায়, তবে বলা যায় যে, এ ঘটনাটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ঘটনা বর্তমান। এটি হল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ। এই ঘটনা সবরকম মৃত্যুর সাধারণ কারণ। এভাবে একটি কার্যের একটি কারণই পাওয়া যাবে। –

যৌক্তিক দিক

– (৩) যৌক্তিক দিক (Logical aspect) : যুক্তির দিক থেকে বহুকারণবাদ সমর্থন করা যায় না। কারণের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তার সঙ্গে বহুকারণবাদের মিল নেই (The doctrine is inconsistent with the invariability of cause)। কারণের সংজ্ঞা হল কারণ, কার্যের নিয়ত অপরিবর্তনীয় শর্তহীন পূর্ববর্তী ঘটনা। এখন মৃত্যু কার্যের প্রতি বিষপান, গুলিবিদ্ধ হওয়া প্রভৃতিকে কারণ বললে এগুলি সবই অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা হয়ে যায়। কিন্তু এরকম বলা বাস্তবসম্মত নয়। এর কারণ হল, বিষপানে মৃত্যুর ক্ষেত্রে গুলিবিদ্ধ হওয়া পূর্ববর্তী ঘটনা হয় না। আবার, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিষপান অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা হতে পারে না। সুতরাং, বহুকারণবাদ কারণের লক্ষণের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

 

এই আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বহুকারণবাদ যুক্তিযুক্ত নয়। একটি কার্যের একটি কারণ অথবা একটি কারণের একটি কার্য থাকে। প্রকৃতির জটিলতা এবং কার্যকারণ সম্বন্ধের যথার্থ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের অভাবের ফলে বহুকারণবাদের উদ্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *