পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয় কেন? পৃথিবীর এই অভিগত গােলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।

 পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয় কেন? পৃথিবীর এই অভিগত গােলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।

পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয় কেন

■ পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয় কেন? পৃথিবীর এই অভিগত গােলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও। পৃথিবী মানুষের আবাসস্থল ব্যাখ্যা দাও|

পৃথিবীকে-অভিগত-গােলক-বলা-হয়-কেন-পৃথিবীর-এই-অভিগত-গােলক-আকৃতির-সপক্ষে-প্রমাণ-দাও

 

পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলার কারণ

 

কোনাে গােলকের দুই প্রান্ত চাপা ও মধ্যভাগ স্ফীত হলে, তাকে অভিগত গােলক বলে। পৃথিবীর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু প্রান্তদ্বয় একটু চাপা ও মধ্যভাগ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু স্ফীত। তাই পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয়।

 

পৃথিবীকে অভিগত গােলক বলা হয় কেন ● পৃথিবীর অভিগত গােলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণসমূহ 

 

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর আকৃতি সম্পূর্ণ গােলাকার নয়, উপবৃত্তের মততা বা অভিগত গােলাকৃতি। এর সপক্ষে প্রমাণগুলি হল—

 

1. পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস ও মেরু ব্যাসের পার্থক্য: পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস 12757 কিমি এবং মেরু ব্যাস 12714 কিমি। পৃথিবী নিখুঁত গােলাকার হলে উভয় অঞ্চলের ব্যাসের পার্থক্য হত না। ব্যাসের মান থেকে বােঝা যায়, মেরুদ্বয় অপেক্ষা নিরক্ষীয় অঞ্চলের পরিধি বেশি অর্থাৎ পৃথিবী অভিগত গােলক।

 

2. ঘড়ির সময়ের পার্থক্য: 1671 সালে রিচার নামে এক ফরাসি জ্যোতির্বিদ গিয়ানার রাজধানী কেইন দ্বীপে (5° উত্তর অক্ষাংশ) দেখতে পান, তার দোলকযুক্ত ঘড়ি প্রতিদিন 2% মিনিট করে ধীরে চলছে। অথচ ঘড়িটি প্যারিস শহরে (49° উত্তর অক্ষাংশে) ঠিকমতাে সময় দিত। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল, দোলকযুক্ত ঘড়ির দোলনকাল নির্ভর করে সেই স্থানের মাধ্যাকর্ষণ বলের ওপর।

 

পরবর্তীকালে, স্যার আইজ্যাক নিউটন এই ঘটনার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে। বলেন, যে স্থান পৃথিবীর কেন্দ্রের যত কাছে সেই স্থানের ওপর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবও তত বেশি। অর্থাৎ, নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঘড়ির দোলনকাল বেশি এবং মেরু অঞ্চলে কম। কারণ পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মেরু অঞ্চলের দূরত্ব নিরক্ষীয় অঞ্চল অপেক্ষা কম। এর থেকে পৃথিবীর অভিগত গােলাকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

 

3. পৃথিবীর আবর্তন গতি গতিবিদ্যার নিয়ম অনুসারে, কোনাে নমনীয় গােলাকার বস্তু তার অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরলে ওই বস্তুর ওপর ও নীচের অংশ কেন্দ্রমুখী বলের জন্য সংকুচিত ও মধ্যভাগ কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের প্রভাবে স্ফীত হয়। সৃষ্টির সময়ে পৃথিবী ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। তখন থেকেই পৃথিবী নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। সুতরাং, এই আবর্তন গতির জন্য পৃথিবী অভিগত গােলাকার রূপ ধারণ করে অর্থাৎ পৃথিবীর মধ্যভাগ স্ফীত ও প্রান্তদ্বয় চাপা হয়।

 

4. ওজনের পার্থক্য: যে স্থান পৃথিবীর কেন্দ্রের যত কাছে অবস্থিত হবে, মাধ্যাকর্ষণ বল সেই স্থানে অবস্থিত বস্তুর ওপর তত বেশি হবে। ফলে বস্তুর ওজনও বাড়বে। তাই দেখা গেছে, কোনাে বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে বেশি হয়। কারণ পৃথিবীর মেরু অঞ্চল চাপা হওয়ায় তা পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে এবং নিরক্ষীয় প্রদেশ স্ফীত হওয়ায় তা দূরে অবস্থান করে। পৃথিবী অভিগত গােলকের মতাে বলেই বস্তুর ওজন সর্বত্র সমান না হয়ে মেরু অঞ্চলে বেশি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে কম হয়।

 

5. পৃথিবীর বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য : রয়াল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস নামক সংস্থা কিটো বা কুইটো (0°), প্যারিস (49° উ:) এবং ল্যাপল্যান্ড (68° উ:) শহরে পৃথিবীর পরিধির একটি নির্দিষ্ট বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নিখুঁতভাবে পরিমাপ করে। ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিটো শহরে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, প্যারিস শহরের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য কিটো শহর থেকে বেশি এবং ল্যাপল্যান্ড শহরের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। এই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল যেহেতু মেরু অঞ্চলের তুলনায় স্ফীত তাই নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

● ‘পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মতােই বা জিওয়েড।’—ব্যাখ্যা দাও। 

 

পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মতোই বা জিওয়েড।

 

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী সৃষ্টির প্রাথমিক পর্বে পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার ছিল। নিজ অক্ষের ওপর ক্রমাগত আবর্তনের ফলে এর মধাংশ বরাবর অতিরিক্ত কেন্দ্রবিমুখ বলের সৃষ্টি হয় এবং সেজন্য পৃথিবীর মধ্যাংশ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা স্ফীত হয়ে অভিগত গােলকের রূপ নেয়। তবে পরবর্তী সময়ে আরও গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, পৃথিবীর আকৃতি প্রকৃত অভিগত গোলক নয়। 

 তার কারণ 1. পাহাড় পর্বত, মালভূমি, সব ৩ প্রভৃতির জন্য পৃথিবীর পৃষ্ঠ উচুনীচু, ঢেউ খেলানো এবং বন্ধুর প্রকৃতি, হিমালয় পর্বতের মাউন্ট এভারেস্ট (উচ্চতা 1,040 মিটার) পৃথিবী, উচ্চতম স্থান, আর প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত (গভীরতা প্রায় 11,000 মিটার) হল পৃথিবীর নিম্নতম স্থান। নিরক্ষীয় অঞ্চলেও কোথ, আছে মহাদেশ, আবার কোথাও মহাসাগর। এসব থেকে বােন। আমায় পৃথিবীর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমতল না। 2. সাম্প্রতিককালে মহাশূন্যে গেলি, কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানাে ছবি ও তথ্য থেকে জানা গেছে পৃথিবীর শধ দক্ষিণ মেরুই চাপা, উত্তর মেরু চাপ নয়। দক্ষিণমেবু 20 মিটারে অধিক নীচু এবং উত্তর মেরু 20 মিটারের অধিক উচু। 3) দলি গােলার্ধের মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চল ৪ মিটার উঁচু এবং উত্তর গোলার্ধের ১৮ অক্ষাংশীয় অঞ্চল ৪ মিটাব নীচু হয়ে আছে।

 

পৃথিবীর এই অনিয়মিত তরঙ্গায়িত গােলাকৃতি পৃষ্ঠের সঙ্গে পৃথিবীতে উপস্থিত কোনো বস্তুর আকারের মিল নেই। তাই বলা হয়, পৃথিবী প্রকৃত আকৃতি পৃথিবীর মতােই বা ‘Geoid’।

 

 

◆ সৌরজগতে একাধিক গ্রহ থাকা সত্ত্বেও কেবল পৃথিবীতে মানুষ সহ অন্যান্য জীবের বাসভূমি গড়ে উঠেছে কেন? ব্যাখ্যা দাও।

 

  অথবা, পৃথিবী মানুষের আবাসস্থল।’—ব্যাখ্যা দাও।

 

পৃথবীতে মানুষ সহ অন্যান্য জীবের বাসভুমি গড়ে ওঠার কারণ

 

(সৗরজগতে ছেটো বড়ো একাধিক গ্রহ থাকলেও একমাত্র পৃথিবীতেই জীবের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন অনুকূল পরিবেশগত কারণে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বিকাশ লাভ করেছে। পৃথিবীতে মানুষ সহ অন্যান্য জীবের বাসভূমি গড়ে ওঠার কারণ

 

1. পরিমিত উষ্ণতা :জীবের বিকাশের জন্য পরিমিত উষ্ণতা প্রয়োজন ।পৃথিবীর গড় উষ্ণতা 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রায়। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ এর উপযোগিতা থাকায় প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। সূর্যের কাছে গ্রহগুলিতে ( যেন-বুধ ও শুক) খুব বেশি উরু এবং হেং গ্রহগুলিতে (যেমন—বৃহস্পতি, শনি প্রভৃতি) উন্নত অত্যন্ত কম হওয়ায় এ কি ঘটেনি।

 

 

2, প্ৰয়োজনীয় জলে প্রাচুর্য: জলের অপর নাম জীবন পৃথিবীতে প্রায় 71% জলভাগ দ্বারা আবৃত। জীবনধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় জলের প্রাচুর্য থাকায় পৃথিবীতে জীবেৱ বিকাশ ঘটেছে অন্য গ্রহগুলিতে (যেমন—শুক্র গ্রহে) জল এর সন্ধান পাওয়া যায়নি ।

 

4 খাদ্যের যোগান : খাদ্য তৈরির প্রয়ােজনীয় উপাদান যেমন সৌরশক্তি, জল, বিভিন্ন প্যার্মীয় উপাদান (C, 0, N), খনিজ পদার্থ Fe,Cu পৃথিবীতে নির্দিয় মাত্রায় পাওয়া যায়। সবুজ উদ্ভিদ ওই উণাঙ্গনগুলিং সাহায্যে হাস্য তৈরি করে। তাই বলা যায়, এই উপাদানগুলি সমগ্র জীবজশতের খাদোর জোগান সুনিশ্চিত করে।

 

২ পর্যাপ্ত সূর্যালোক: লোক সূর্যালােক ছাড়া জীষের বিকাশ সম্ভব নয় লােকের মাধ্যমে যে সৌরশক্তি পৃথিবীতে আসে তা সমস্ত জীবের প্রাণের উৎস। এই পর্যাপ্ত সূর্যালােকের উপস্থিতিতেই বুজ উক্তি খাদ্য তৈরি করে থাকে।

 

6. অন্যান্য অবস্থা : বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের আনুপাতিক পরিমাণ, আবহমণ্ডলীয় ঘটনা (যেমন—মে, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ), খায়ক্রমে দিন ও রাত্রির সংঘটন, অতুপৰিবর্তন, শিলামশুল ও মৃত্তিকার উপস্থিতি প্রভৃতি বিষয়গুলি সম্মিলিতভাবে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।

 

ওপরের আলােচনা থেকে সহজেই বােঝা যায়, পৃথিবীই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ, যেখানে অনুকুল পরিবেশের জন্য প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে

 

● গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর পরিচয় দাও।

 

গ্রহ হিসেবে পৃথিবী

 

পৃখিবী সৌরজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ। গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

 

1. অবস্থান সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থান তৃতীয় অর্থাৎ বুধ ও শুক্র গ্রহের পরেই পৃথিবীর স্থান।

 

2. সূর্য থেকে দূরত্ব সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব 14 কোটি ৪৫ লক্ষ কিলােমিটার বা প্রায় 15 কোটি কিলােমিটার।

 

3 আকৃতি পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গােলকের মতাে। অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ মে কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগে নিরক্ষীয় অঞ্চল সামান্য ফীত।

 

5. ব্যাস পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস 1275 কিমি এবং মেরু 12714 কিমি (প্রায়)।

 

6. পৃথিবীর গাত পৃথিবীর দুটি গতি আছে, যথা—নিজ অক্ষে চারদিকে আবর্তন গতি এবং সূর্যের চারপাশে পরিক্রমণ গতি আবর্তন গতির সময়কাল 23 ঘন্টা 56 মিনিট সেকেন্ড এবং পরিক্রমণ গতির সময়কাল 365 দিন 5 ঘন্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড ‘

 

7. কক্ষপথ: পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এর দৈর্ঘ্য ৩6 কোটি কিলােমিটার (প্রায়)। কক্ষপথের একটি নাতি বা কেন্দ্রে অবস্থিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *