আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে-Teacj Sanjib
■ আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে-Teacj Sanjib
আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়:
আবহবিকারের ধারণা
আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা:
আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন—বৃষ্টিপাত, উয়তা, আদ্রর্তা, বায়ুর চাপ, তুষারপাত প্রভৃতির মাধ্যমে ভূত্বকের উপরিভাগের শিলাসমূহের ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে শিলাস্তর ক্রমশ শিথিল হতে হতে ছােটো ছােটো শিলাখণ্ডে ও শিলাচূর্ণে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে।
1. নামকরণ: আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা শিলার ‘বিকার’ বা ‘পরিবর্তন ঘটে বলে প্রক্রিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে। আবহবিকার।
2. নিয়ন্ত্রক আবহবিকারের প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হল—জলবায়ু, উদ্ভিদ, ভূপ্রকৃতি, আদি শিলার প্রকৃতি, সময়, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী প্রভৃতি।
আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা: আবহবিকারের প্রকারভেদ:
3. প্রকারভেদ: আবহবিকার মূলত তিন প্রকার। যথা— ১.যান্ত্রিক আবহবিকার (শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়), ২. রাসায়নিক আবহবিকার (শিলার বিয়ােজন হয়) এবং ৩.জৈবিক আবহবিকার (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা শিলার পরিবর্তন হয়)।
আবহবিকারে বৈশিষ্ট্য:
4. আবহবিকারে বৈশিষ্ট্যগুলি হল—১. আবহবিকারে শিলার বিচূর্ণন ও বিয়ােজন ঘটে, ২. এটি একটি স্থৈতিক বা থিতিশীল প্রক্রিয়া, ৩.এর মাধ্যমে শিলাচূর্ণের অপসারণ হয় না, ৪. আবহবিকারের শক্তি শিলার গঠন, শিলার প্রকৃতি ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল, ৫.এটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া।
5. প্রভাব: আবহবিকারের প্রভাবগুলি হল—১. আবহবিকারের ফলে গােলাকৃতি পাহাড়, ইনসেলবার্জ, স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট, সকহোল, গুহা প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ২.মৃত্তিকা সৃষ্টিতেও হবিকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, ৩. আবহবিকারের ফলে শিলাপের উচ্চতা কমে যায় এবং তাই ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বাড়ে। ৪. আবহবিকারের অবশিষ্টাংশ হিসেবে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবীভূত সিলিকা বা বালি পাওয়া যায়।
পুতি ক্ষয়ের ধারণা
কোনাে উচ্চভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকারজাত নুড়ি, পাথর প্রভৃতি যখন অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে নীচের দিকে নামতে থাকে তখন তাকে পুঞ্জিত ক্ষয় (Mass wasting) বলে।
1. নামকরণ: উচ্চভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকারসৃষ্ট শিলাচূর্ণ ‘গ’ বা ‘পুঞ্জ’ আকারে নেমে আসে বলে এরূপ নামকরণ হয়েছে।
2. নিয়ন্ত্রক: পুঞ্জিত ক্ষয়ের নিয়ন্ত্রকগুলি হল—ভূমির ঢাল, উচ্চতা, আবহবিকারসৃষ্টপদার্থের আকৃতি ও পরিমাণ, উদ্ভিদের উপস্থিতি, উন্নতা, বৃষ্টিপাত, অভিকর্ষজ বল প্রভৃতি। এ ছাড়া জল, বায়ু, বরফ প্রভৃতিও পুঞ্জিত ক্ষয়কে প্রভাবিত করে।
3. প্রকারভেদ:
পুঞ্জিত ক্ষয় মূলত চার প্রকার। যথা—১.ধীর প্রবাহ, ২ দ্রুত প্রবাহ, ৩. ধস ও ৪.অবনমন। আবার, প্রকৃতি অনুসারে পুঞ্জিত ক্ষয় বিভিন্ন প্রকার হয়, যেমন— মৃত্তিকা প্রবাহ, কর্ম প্রবাহ, ভূমিধস প্রভৃতি।
4. বৈশিষ্ট্য; পুঞ্জিত ক্ষয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ১.পুঞ্জিত ক্ষয় ঢালযুক্ত ভূমিভাগে দেখা যায়, ২. অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে পুতি ক্ষয় সক্রিয় হয়, ৩. পুঞ্জিত ক্ষয় বীর বা দ্রুতগতিতে হতে পারে, ৪. এই প্রক্রিয়ায় ক্ষয়িত পদার্থ প্রাকৃতিক বহনকারী শক্তির (নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি) দ্বারা বাহিত হয় না। :
5. প্রভাব: পুঞ্জিত ক্ষয়ের প্রভাবগুলি হল—১) পাহাড়ি অঞ্চলে পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে ধ্বস নামে , ২. পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে জীবন ও সম্পদহানি ঘটে, ৩. পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে খাড়া ঢাল, ভূমিঢালে হয় ট্যালাস, শঙ্কু প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
● ক্ষয়ীভবন ও নগ্নীভবনের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
ক্ষয়ীভবনের ধারণা
আবহবিকারজাত পদার্থসমূহ নদী, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা থানান্তরিত বা অপসারিত হলে, তাকে ক্ষয়ীভবন (Erosion) বলে।
1. প্রক্রিয়া: ক্ষয়ীভবনের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল—অবঘর্ষ, ঘর্ষণ, উৎপাটন, অপসারণ প্রভৃতি।
. 2. মাধ্যম: জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাচূর্ণ স্থানান্তরিত হয়।
3. বৈশিষ্ট্য: ক্ষয়ীভবনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—১. ক্ষয়ীভবনের ফলে শিলার অপসারণ ঘটে, ২. ক্ষয়ীভবনের ফলে নীচের শিলাস্তর ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয়, ৩. আবহবিকারের ওপর ক্ষয়ীভবন নির্ভরশীল, এটি দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রক্রিয়া।
4. উদাহরণ: মরুভূমি অঞলে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে শিথিল বালুরাশি ও শিলাচূর্ণ অন্যত্র অপসারিত হয়।
নগ্নীভবনের ধারণা
আবহবিকার, পুঞ্জিত স্থলন এবং ক্ষয়ীভবন—এই তিনটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সম্মিলিত কার্যে ভূত্বকের উপরিভাগের শিলাস্তর উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে যায়। এজন্য এই তিনটি প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে নগ্নীভবন (Denudation) বলে।
1. প্রক্রিয়া: নগ্নীভবনের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল—আবহবিকার, পুঞ্জিত স্থলন এবং ক্ষমীভবন।
2. বৈশিষ্ট্য: নগ্নীভবনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—১.আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ওপর নগ্নীভবন নির্ভরশীল, ২. শিলার প্রকৃতি, ভূমির উচ্চতা, জলবায়ু ইত্যাদি নগ্নীভবনকে প্রভাবিত করে, ৩. নগ্নীভবনের মাধ্যমে ভূমিভাগের উচ্চতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ভূমি উঁচুনীচু অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে মসৃণ হয়, ৪.এটি একটি সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, ৫.এর ফলে নীচের শিলাস্তর ভূপৃষ্ঠে দৃশ্যমান হয়।
3. স্থানিক তারতম: উয় মরু তাণ্ডলে নগ্নীভবনের হার কম কিন্তু হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চল ও নদীবহুল উয়-আর্দ্র জলবায়ু অঞলে নগ্নীভবনের হার বেশি।
4. গুরুত্ব: নগ্নীভবন প্রক্রিয়া ভূমিরূপের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এর মাধ্যমে ভূমিভাগের উচ্চতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ভূমি উঁচুনীচু অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে মসৃণ ও পর্যায়িত হয়।
আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা:
● আবহবিকারের সঙ্গে জলবায়ু কীভাবে সম্পর্কিত ?
আবহবিকারের সঙ্গে জলবায়ুর সম্পর্ক : আবহবিকারের সঙ্গে জলবায়ু প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। একটি নির্দিষ্ট জলবায়ু অঞলে নির্দিষ্ট প্রকার আবহবিকারের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। যেমন—
1 নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল: নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে সারাবছর উয়তা ও বৃষ্টিপাত বেশি বলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি। আবার এই অঞ্চলে অধিক উয়তার কারণে যান্ত্রিক আবহবিকারও দেখা যায়।
2 মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল: মৌসুমি জলবায়ু অঞলে উয়-আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয়প্রকার আবহবিকারই লক্ষ করা যায়।
3 উয় মরু জলবায়ু অঞল: উয় মরু জলবায়ু অঞলে অধিক উয়তার প্রসর ও প্রায় বৃষ্টিহীনতার কারণে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য (যেমন—শল্কমােচন, ক্ষুদ্রকণা বিসরণ প্রভৃতি) দেখা যায়।
4 আদ্র-নাতিশীতােয় জলবায়ু অঞ্চল: আর্দ্রনাতিশীতােয় জলবায়ু অঞলে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় প্রকার আবহবিকার ক্রিয়াশীল থাকে।
5 শীতল পার্বত্য জলবায়ু বা তন্দ্রা ও মেরু জলবায়ু অঞ্চল: শীতল পার্বত্য জলবায়ু বা তুন্দ্রা ও মেরু অঞলে তাপমাত্রা খুব কম বলে তুষার কেলাস গঠন প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি ঘটে।
■ যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা করাে।
যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া
যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল—
1. প্রতরাই খণ্ডীকরণ: উয়তার প্রভাবে শিলা যখন চাই বা ব্লকের মতাে বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়, তখন তাকে প্রস্তরাই খণ্ডীকরণ (Block disintegration) বলে।
পদ্ধতি : শিলা তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় উয়তার তারতম্যের কলে শিলার বাইরের এবং ভেতরের স্তরের মধ্যে প্রসারণ ও সংকোচনের পার্থক্য ঘটে। এই অসম সংকোচন-প্রসারণের ফলে শিলাস্তরে একাধিক অনুভূমিক ও উল্লম্ব ফাটল সৃষ্টি হয়। এই কাটল বরাবর একাধিক খণ্ডে শিলাস্তর ভাগ হয়ে যায়।
বৈশিষ্ট্য: যান্ত্রিক আবহবিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] ব্যাসল্ট শিলায় যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি দেখা যায়। [ii] এই আবহবিকারের ফলে শিলায় আনুভূমিক ও উল্লম্বভাবে একাধিক ফাটল সৃষ্টি হয়। [ii] এই ধরনের আবহবিকারের ফলে শিলার। চৌকাকারে বিচূর্ণন ঘটে এবং [iv] চাইয়ের আকারে শিলা । বিভক্ত হয়।
অবস্থান: অধিক উয়তাযুক্ত অঞ্চলে বিশেষত উয় মরুভূমিতে আবহবিকার দেখা যায়।
2. শল্কমােচন: শল্ক’ শব্দের অর্থ বাকল (গাছের ছাল)। উন্নতার। প্রভাবে শিলাস্তর বাকলের মতাে খুলে যায় ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এই প্রক্রিয়াকে শল্কমােচন (Exfoliation) বলে।
পদ্ধতি: সমসত্ত্ব শিলার ভেতর ও বাইরের অংশের মধ্যে উন্নতার। প্রভাবে প্রসারণ (দিনের বেলায়) ও সংকোচন (রাত্রিবেলায়। সমহারে হয় না। তাই ওপরের শিলাস্তর পেঁয়াজের খােসার। মতাে মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এজনা এইপ্রকার আবহবিকারকে Onion Weathering-ও বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য; শল্কমােচনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] এই আবহবিকার গ্রানাইট শিলায় বেশি দেখা যায়। [ii] এই ধরনের আবহবিকারের ফলে উচ্চভূমির মাথাগুলি গােলাকার হয় এবং [iii] সমসত্ত্ব শিলায় এই ধরনের আবহবিকার ঘটে।
অবস্থান: সাহারা, থর প্রভৃতি উয় মরুভূমিতে শল্কমােচন প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
3. ক্ষুদ্রকা বিসরণ:
উয়তার হাসবৃদ্ধির ফলে অসম চরিত্রের খনিজে গঠিত শিলাগুলির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় বিভক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিসরণ (Granular disintegration) বলা হয়।
পদ্ধতি: অসমসত্ব শিলার খনিজগুলির তাপ গ্রহণ ও বর্জনের হার আলাদা হওয়ায় অসম প্রসারণ ও সংকোচনের কারণে শিলাটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
বৈশিষ্ট্য: ক্ষুদ্রকণা বিসরণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] অসমসত্ত্ব শিলায় এই আবহবিকারের প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। [ii] শিলাগুলি ফাটলে বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার মতাে শব্দ হয় এবং [ii] এই আবহবিকারের মাধ্যমে কালক্রমে বালুকণা সৃষ্টি হয়।
অবস্থান: উয় মরুভূমি অঞলে যেখানে দৈনিক উয়তার প্রসর বেশি, সেখানে এই প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
4. তুষারের কার্য: শীতল জলবায়ুতে তুষারের কেলাস গঠনের দ্বারা যান্ত্রিক উপায়ে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়।
পদ্ধতি:তুন্দ্রাও মেরুল এবংশীতলপার্বত্য অঞ্চলে শিলাস্তরের ফাটলে জমা জল তুষার কেলাসে পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে যায় এবং তখন শিলাগাত্রে চাপ পড়ে ও শিলা বিচূর্ণ হয়।
বৈশিষ্ট্য: তুষারের কেলাস গঠনের ফলে সৃষ্ট আবহবিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] তুষারের কেলাস গঠনের মাধ্যমে এই আবহবিকার ঘটে। [ii] পর্বতের পাদদেশে ও ঢালে শঙ্কু আকৃতির টুকরাে টুকরাে শিলা বা শিলাখণ্ড জমে নুড়িক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এর নাম স্ত্রী বা ট্যালাস।
অবস্থান: শীতল জলবায়ু অঞ্চলে এই ধরনের আবহবিকার দেখা যায়।
5. অন্যান্য প্রক্রিয়া: যান্ত্রিক আবহবিকারের অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে লবণ কেলাস গঠন, ডার্ট ক্র্যাকিং, বােল্ডার ক্লিভিং, ভারমুক্ত হয়ে শিলার প্রসারণ, কলয়েড উৎপাটন, বৃষ্টির ফোটার আঘাতের ফলে ক্ষয় প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য।
আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা:
■ রাসায়নিক আবহবিকার বলতে কী বােঝ? এর প্রধান প্রক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা করাে। 1+4
রাসায়নিক আবহবিকার
বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় উপাদান এবং জল ও অম্ল যখন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে, তখন তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে। এর ফলে শিলার খনিজ মৌলের পরিবর্তন ঘটে এবং শিলার প্রধান খনিজগুলি গৌণ খনিজকণায় পরিণত হয়।
রাসায়নিক অবহবিকারের প্রক্রিয়াসমূহ
রাসায়নিক আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল—
1. জারণ: জল বা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে শিলার খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন (02) সংযুক্ত হলে তাকে জারণ বা অক্সিডেশন বলে।
পদ্ধতি: লৌহ অক্সাইডযুক্ত শিলার সঙ্গে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নতুন খনিজের সৃষ্টি হয় ও শিলার বিয়ােজন ঘটে।
বিক্রিয়া : 4Feo + 3H20 + 02, 2Fe203, 3H20 (ফেরাস অক্সাইড( (জল) (অক্সিজেন) (সােদক ফেরিক অক্সাইড)
বৈশিষ্ট্য: জারণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] জারণের প্রভাবে লৌহযুক্ত শিলায় মরচে পড়ে। [i] এই পদ্ধতিতে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
2. অগারযােজন: বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলের সংযােগে উৎপন্ন কার্বনিক অ্যাসিড দ্বারা শিলা মধ্যস্থিত খনিজের পরিবর্তন হওয়ার রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে অঙ্গারযােজন (Carbonation) বলে।
পদ্ধতি:বৃষ্টির জল, বাতাসের co2, গ্যাসের সঙ্গে মিশে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে (C02, + H20 — H2CO3), যা চুনাপাথরজাতীয় শিলার সঙ্গে বিক্রিয়া করে শিলার বিয়ােজন ঘটায়।
বিক্রিয়া: CaC03 + H2C03 – Ca(HCO3)2 (ক্যালশিয়াম কার্বনেট)(কার্বনিক অ্যাসিড)(ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট)
বৈশিষ্ট্য: অঙ্গারযােজনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] বৃষ্টির জলের দ্বারা এই আবহবিকার বেশি ঘটে। [i] চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে এই আবহবিকার বেশি সক্রিয়।
3. জলযােজন:
শিলা মধ্যথিত খনিজের সাথে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার বিয়ােজন ঘটলে তাকে বলে জলযােজন (Hydration)।
পদ্ধতি: কতকগুলি খনিজের জল শােষণ করার ক্ষমতা বেশি। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা মধ্যস্থিত খনিজের সাথে জলের অণু যুক্ত হলে খনিজগুলি স্ফীত হয়ে যায় ও শিলার বিয়ােজন ঘটে।
বিক্রিয়া: 2Fe203; + 3H20 – 2Fe2,03, 3H20 (হেমাটাইট) (জল) (লিমােনাইট)
বৈশিষ্ট্য: জলযােজনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[i] এই আবহবিকারের ফলে শিলাগঠনকারী খনিজগুলি আয়তনে বৃদ্ধি পায়। [ii] এই প্রক্রিয়ায় জল শােষণের ফলে শিলা নমনীয় হয়। [i] এই আবহবিকারের ফলে সমধর্মী খনিজের সৃষ্টি হয়।
4. আবিশ্লেষণ: শিলা মধ্যথিত খনিজের সাথে আয়নিত জলের বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার বিয়ােজন ঘটলে তাকে বলে আবিশ্লেষণ (Hydrolysis)। .
পদ্ধতি: জল হাইড্রোজেন (H+) ও হাইড্রক্সিল (OH_) আয়নে ভেঙে গিয়ে শিলা মধ্যস্থিত খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নতুন খনিজ পদার্থ সৃষ্টি করে এবং শিলার বিয়ােজন ঘটায়।
বিক্রিয়া: H2,0 – H + + OH-
KOH (অর্থোকেজ (আয়নিত জল) (অ্যালুমিননা। (পটাশিয়াম
KAISi3,O8 + (H+ + OH-) HAISI308 + kOH
বেশিষ্ট্য: আবিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] তড়িবিশ্লিষ্ট বা আনিত জলের সাহায্যে এই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটে। [i] এই প্রক্রিয়ার নতুন খনিজের সৃষ্টি হয়। [ii] এই প্রক্রিয়া সংঘটনে দিষ্ট উন্নত প্রয়োজন হয়।
5. দ্রবণ: দ্রবণ (Solution) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিপসাম, সৈধব লবণ। প্রভৃতি জলে দ্রবীভূত হয় ও শিলার বিয়ােজন ঘটে। এটি রাসায়নিক আবহবিকারের একটি প্রক্রিয়া।
● জৈবিক আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি উল্লেখ করাে।
জৈবিক আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়সূমহু
জৈবিক আবহবিকার প্রধানত দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়— 1 জৈব যান্ত্রিক আবহবিকার এবং 2 জৈব রাসায়নিক আবহবিকার।
1. জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার: জৈব্যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন .
প্রক্রিয়াগুলি হল—
১ প্রাণীর সাহায্যে: মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী যেমন— কেঁচো, ইদুর, প্রেইরি কুকুর, শিয়াল, খরগােশ, উইপােকা, বিভিন্ন মূষিক-জাতীয় প্রাণী শিলাস্তরের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে জৈব যান্ত্রিক আবহবিকারে সাহায্য করে। এই সকল প্রাণীরা শিলাস্তরে এবং শিথিল পদার্থের মধ্যে গর্ত ও গুহা তৈরি করে। উইপােকা মাটি খুঁড়ে ভূপৃষ্ঠের নীচের স্তরের মাটি ও শিলা ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্তরে নিয়ে এসে শিলার আবহবিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মাটিতে বসবাসকারী প্রাণীরা তাদের নিশ্বাসের সাথে যে C02, ত্যাগ করে তা মাটির অভ্যন্তরস্থ শিলা ও মাটির প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে মৃত্তিকার আবহবিকার ঘটায়। মানুষ খনিজ দ্রব্য উত্তোলন, কৃষিকাজ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, অবিবেচনাপ্রসূত কার্যকলাপ প্রভৃতির মাধ্যমে দ্রুত শিলার আবহবিকার ঘটাতে সাহায্য করে।
২ উদ্ভিদের সাহায্যে: উদ্ভিদের শিকড় মাটির মধ্যে প্রবেশ করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হয় ও শিলাসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়। উদ্ভিদের শিকড় প্রায় 175 ফুট পর্যন্ত মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এর সাহায্যে শিলার যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে।
2. জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার; জৈব রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলি হল— 1 শিলাস্তরের ওপরে জন্মানাে শ্যাওলাজাতীয় উদ্ভিদ পচে গিয়ে হিউমাস তৈরি করে। ওই হিউমাস মৃত্তিকায় অবস্থিত জলের সঙ্গে মিশে হিউমিক অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা দ্রুত রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায়। 2 চুনাপাথর-জাতীয় শিলাস্তরের মধ্যে যেসব প্রাণী বাস করে তাদের নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত Co2, জলের সাথে মিশে কার্বনিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। ওই অ্যাসিড চুনাপাথরের সাথে বিক্রিয়া করে এবং শিলার বিয়ােজন ঘটায়। 3 উদ্ভিদের পাতা, ফুল, ফল, শিকড়, ডালপালা প্রভৃতি মাটিতে পচে গিয়ে যে অ্যাসিড তৈরি করে, তা থেকে শিলার আবহবিকার ত্বরান্বিত হয়।4 উদ্ভিদের শিকড় প্রস্বেদনের সময় C02, ত্যাগ করে, যা মাটিতে অবস্থিত জলে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে এবং শিলার বিয়ােজন ঘটায়।