ধাতু ও ক্রিয়াপদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা – teacj sanjib

 ধাতু ও ক্রিয়াপদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা – teacj sanjib

 

 

. ধাতু ও ক্রিয়াপদ

 

পারস্পরিক সম্পর্ক :

ধাতু-ও-ক্রিয়াপদ

 

ধাতু কাকে বলে?

 

ধাতু : ক্রিয়ার মূল হচ্ছে ধাতু।

 

ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে যে মূল অবিভাজ্য অংশটা পাওয়া যায় তাকেই বলে ধাতু । ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয়।

 

 যেমন— কর (ধাতু) + ই (বিভক্তি) = করি খেল্ (ধাতু) + ই (বিভক্তি) = খেলি

 হাস্ (ধাতু) + ইতেছে (বিভক্তি) = হাসিতেছে

 যা (ধাতু) + ইব (বিভক্তি) = যাইব

 

 ক্রিয়াপদ ঃ

 ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগে যে ক্রিয়াবোধক পদ গঠিত হয় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন—

 

চল + এ = চলে

 হাস + ইতেছে = হাসিতেছে 

খা + ইল = খাইল লিখ + ইবেন = লিখিবেন 

বাক্যে প্রয়োগ : হাতি হেলে দুলে চলে। বালিকাটি হাসিতেছে।

 রাম ভাত খাইল না। 

তিনি হয়তো তোমাকে চিঠি লিখিবেন। নজরুল কবিতা লিখতেন। 

বিদ্যাসাগর বাংলার নারীদের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছেন।

 শেষ দুটি বাক্যে ‘লিখতেন’ এবং ‘করেছেন’ পদ দুটি হল ক্রিয়াপদ। কেননা এ দুটি পদই কোনো কাজ করাকে বোঝাচ্ছে। এ পদ-দুটি ভাঙলে আমরা পাই—

 

লিখ্ + (ইতেন) -তেন

 

কর + ছেন

 

এই  বিশ্লেষণ থেকে প্রত্যেক শব্দের জন্য দুটি করে অংশ আমরা পাই। এদের আলাদা আলাদা নাম আছে। এদের প্রথম অংশকে বলে ধাতু আর দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় ধাতু বিভক্তি। দুটি অংশ মিলে ক্রিয়াপদ তৈরি হয়।

 

 ধাতু ও ক্রিয়ার গঠনগত শ্রেণিবিভাগ :

 

বাংলা ধাতুগুলিকে উৎপত্তি ও প্রকৃতির দিক থেকে বিচার করে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়-

 

(১) একদল বা মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু 

(২) বহুদল বা সাধিত ধাতু

(৩) বহুপদ বা সংযোগমূলক ধাতু

 

(১) একদল বা মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু :

 

  যে-সকল ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না, যে- সকল ধাতু স্বয়ং সিদ্ধ, সেগুলিকে মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। যেমন—কর, লিখ্, দেখ্‌, বল্, হাস্, খা, যা।

 

মৌলিক ধাতু আবার তিন প্রকার। (ক) সংস্কৃত বা তৎসম মৌলিক ধাতু ঃ যেমন— লিখ, চল্, কর্, বল্ ইত্যাদি।

 

(খ) প্রাকৃতজ বা তদ্ভব মৌলিক ধাতু ঃ যেমন—হাস্, নাচ্, পড়, মর্, ধর্, শুন, যা, খা ইত্যাদি।

 

(গ) খাঁটি বাংলা মৌলিক ধাতু : যেমন—ডাক, কাট, ফেল, ভাজ, ঠেল ইত্যাদি। 

 

(২) বহুদল বা সাধিত ধাতু ঃ 

 

 যে-সকল ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিশ্লেষণ করলে অন্য একটা ধাতু বা শব্দ এবং এক বা একাধিক প্রত্যয় পাওয়া যায় সেই সকল ধাতুকে বহুদল বা সাধিত ধাতু বলে। যেমন— বল্ + আ = বলা চা + ওয়া = : চাওয়া খড় + আ = খড়া

যা + ওয়া = যাওয়া।

 

সাধিত ধাতু তিন প্রকার—(অ) প্রযোজক ধাতু, (আ) নাম ধাতু, (ই) ধ্বন্যাত্মক ধাতু।

 

 (অ) প্রযোজক ধাতু ঃ যে-ধাতু প্রেরণ করা বা প্রবর্তন করা অর্থে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ বা ‘ওয়া’ প্রত্যয় যোগ করে গঠিত হয় সেই ধাতুকে প্রযোজক ধাতু বলে। যেমন—নাচ মূল ধাতু এই ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ‘নাচা’ গঠিত হয়। বাক্যে প্রয়োগ : নেমন্ত্রন্ন বাড়িতে বেশ খাওয়াল। এরকম রাগ দেখাইতেছিস কেন? কাজটা শ্যামলকে দিয়ে করাও। কাউকে দিয়ে বলাও কেন?

 

(৩) নামধাতু ঃ 

 

 নাম পদ অর্থাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে-ধাতু গঠিত হয় সেই ধাতুকে নামধাতু বলে। নামপদ থেকে ধাতুটি গঠিত বলে এর নাম নামধাতু।

 

হাত + আ — হাতা—‘হাতানো’

ঘুম + আ -ঘুমা—’ঘুমানো’

জুতা + আ = জুতা–‘জুতানো’

 

(১)আ-অন্তঃ

 বল্ + আ > বলা, কর্ + অ > করা, চল্ + আ > চলা,শুন্ + আ > শোন।

 

 (২) ইয়া / এ অন্তঃ

বল্ + ইয়া > বলিয়া, বল্ + এ > বলে, চল্‌ + ইয়া > চলিয়া, চল্ + এ > চলে, কর্ + ইয়া > করিয়া, কর্ + এ > করে। 

 

 (৩) ইতে / তে-অন্ত : 

বল্ + ইতে > বলিতে, বল্ + তে > বলতে, চল্ + ইতে > চলিতে, চল্ + তে > চলতে, কর্ + ইতে > করিতে, কর্ + তে > করতে।

 

(৪) ইলে / লে-অন্ত :

 কর্ + ইলে > করিলে, কর্ + লে > করলে, বল্ + ইলে > বলিলে, বল্ + লে > বললে, চল্ + ইলে > চলিলে, চল্ + লে > চললে। আ-অন্তঃ 

শুন্ বল্ + আ > বলা, কর্ + অ > করা, চল্ + আ > চলা, + আ > শোন।

 

ক্রিয়ার অন্বয়গত শ্রেণিবিভাগ

 

অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক ক্রিয়া।

 

অকর্মক ক্রিয়াপদ ঃ যে-সকল ক্রিয়াপদের কর্ম থাকে না সেই সকল ক্রিয়াপদকে অকর্মক ক্রিয়াপদ বলে। যেমন—

 

শিশুটা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

 

এখানে বেড়াচ্ছে ক্রিয়াপদটার কো ক্রিয়াপদ। কর্ম নেই। অতএব ‘বেড়াচ্ছে’ ক্রিয়াপদটা অকর্মক ক্রিয়াপদ।

 

সকর্মক ক্রিয়াপদ ঃ 

যে-সকল ক্রিয়াপদের কর্ম থাকে, সেই সকল ক্রিয়াপদকে সকর্মক ক্রিয়াপদ বলে। যেমন—

 

শ্যাম বাগানে ফুল তুলছে।

 

ঠাকুরমা ঠাকুর ঘরে বসে প্রতিদিন রামায়ণ পড়েন।

 

দ্বিকর্মক ক্রিয়া ঃ কোনো কোনো ক্রিয়ার দুইটি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। দুইটি কর্মের মধ্যে যেটি বস্তুবাচক সেটিকে মুখ্যকর্ম এবং যেটি ব্যক্তিবাচক সেটিকে গৌণকর্ম বলে।

 

যেমন

 

হরি ধোপাকে কাপড় দাও। রামকে

 

তোমার বইটি দাও। মা শিশুকে চাঁদ দেখাইতেছেন। উপরের বাক্যগুলিতে কাপড়, বই, চাঁদ বস্তুবাচক তাই এগুলি মুখ্যকর্ম, আবার ধোপাকে, রামকে, শিশুকে ব্যক্তিবাচক অর্থাৎ গৌণকর্ম। সমাপিকা ক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান—ক্রিয়ার কাল ও তার প্রকার এবং ক্রিয়ার ভাব

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *