সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা-Teacj Sanjib

 সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা-Teacj Sanjib

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর

 

সিন্ধুতীরে

সৈয়দ আলাওল

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি

 সিন্ধুতীরে কবিতার বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

সিন্ধুতীরে কবিতার উৎস

 

সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্যতম প্রখ্যাত কবি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।

সিন্ধুতীরে-কবিতার-প্রশ্ন-উত্তর-দশম-শ্রেণী-বাংলা-Teacj-Sanjib

 

 

সিন্ধুতীরে কবিতার বিষয়বস্তু

 

বিষয়-সংক্ষেপ

 

 সমুদ্রমধ্যে এক দিব্যপুরী। অতি মনােরম স্থান। সেখানে দুঃখ -ক্লেশ নেই। সদাইবিরাজ করছে সত্য ও ন্যায়ধর্ম। সেই দিব্যধামে এক রূপবতী কন্যা পতিত হয়েছেন। সমুদ্রকন্যা গুণবতী পদ্মা সমুদ্রতীরে দিব্যস্থান দেখেপর্বতের এক পাশেফল-ফুলের একবাগান গড়েছেন। বাগানে ফুটেছে মনােহর সুগন্ধি ফুল। সুলক্ষণ বৃক্ষ বাগানে বিরাজ করছে। ওই উদ্যানে বিবিধ হেমরত্নে বিভূষিত টুঙ্গি নির্মিত হয়েছে। তাতে কন্যা পদ্মাবতী সবসময় অবস্থান করেন। নানা সুখে খেলা ও হাসি-খুশিতে পিতৃভবনে রাত্রিযাপন করে প্রত্যুষে পদ্মাবতী এলেন সমুদ্রতীরের উদ্যানে সখীদের সঙ্গে রঙ্গ- কৌতুকে মজে। হঠাৎ দেখলেন অপ্সরা রম্ভার চেয়েও রূপবতী এক কন্যা অচেতন অবস্থায় ভূপতিত হয়ে রয়েছেন। পদ্মাবতী কন্যার রূপ-সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত। অনুমানে ভাবলেন কন্যা ইন্দ্রশাপে বিদ্যাধরি কিংবা কোনাে স্বর্গভ্রষ্টা দেবী অচৈতন্য অবস্থায় ভূপতিত নয় তাে? তার চোখের তারা বিস্ফারিত ও নিশ্চল। বসন আলুথালু। কেশ এলােমেলাে। হয়তাে প্রবল ঝড়ে সমুদ্রযান ভেঙে কন্যাটি ভেসে এসেছে। ছবির পুতুলের মতাে দেখতে অপরূপা অচেতন সুন্দরীর কেবল শাসটুকু বইছে।

 

সিন্ধুতীরে কবিতার সারাংশ

 

 স্নেহশীলা পদ্মাবতীর একান্ত কামনা বিধাতা যেন অচেতন কন্যার জ্ঞান ফিরিয়ে সুস্থ করেন। পদ্মাবতীকে তিনি যেন নিরাশ না করেন। কন্যা পিতার পুণ্যেও নিজের ভাগ্যবলে যেন বেঁচে ওঠে। পদ্মাবতী প্রাণপণে চিকিৎসা করবেন। দেব নিরঞ্জন যেন কৃপা করেন। কন্যাকে বাগানের মাঝে নিয়ে যাওয়ার জন্য পদ্মাবতী সখীদের আদেশ করলেন। বাগানে এনে তাকে বসনে ঢেকে মাথায় ও পায়ে আগুনের সেঁক দেওয়ার কাজ চলল। তন্ত্রমন্ত্র ও মহৌষধি প্রয়ােগ করা হলাে। চারদণ্ড ওভাবে চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রুষা করার পর কন্যা চেতনা ফিরে পেল। কবি আলাওল পরিশেযে কাব্য রচনার নির্দেশক গুণী মাগন মােহন্তকে কৃতজ্ঞতা জানালেন।

 

সিন্ধুতীরে কবিতার নামকরণ

 

 ভূমিকা : ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার কবি হলেন বাংলা সাহিত্যের সতেরাে শতকের সৈয়দ আলাওল। কবিতাটি তার ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে গৃহীত।

 

 নামকরণের সার্থকতা : প্রথমেই দেখতে পাই সমুদ্রমধ্যে জলের ভিতর এক দিব্যপুরী। দুঃখ-ক্লেশহীন সত্যধর্ম ও সদাচার বিরাজিত মনােহর সে-দেশ।

 

সেখানেই সিন্ধুতীরে সমুদ্ররাজের কন্যা গুণবতী পদ্মা দিব্যস্থান দেখে ফল-ফুল শােভিত পর্বতের পাশে উদ্যান বানালেন। উদ্যানে ২ ফুটল সুলক্ষণ বৃক্ষে বৃক্ষে সুগন্ধ-সুরভিময় মনােহর পুষ্পরাজি। ওই সিন্ধুতীরে হেমরত্নমণ্ডিত বিচিত্র টঙ্গি-প্রাসাদে থাকেন রাজকন্যা পদ্মা। 

 

 প্রভাতে পিত্রালয় থেকে সখীগণের সঙ্গে কৌতুক করতে  করতে এলেন সিন্ধুতীরে নিরন্ধ্র প্রাসাদে। তারা হঠাৎ দেখলেন, সেই সিন্ধুতীরে পড়ে আছে চেতনহীন রম্ভাপেক্ষা রূপবতী এক কন্যা। পদ্ম ভাবলেন, প্রবল ঝড়ঝায় ভেঙেছে সমুদ্রের নাওখানি। তাই – ভেসে এসেছে সিন্ধুতীরে।

 

 ওই সিন্ধুতীরে পদ্মা বিধির কাছে, দেব নিরঞ্জনের কাছে কন্যার জীবন প্রার্থনা করেছেন।

 

 তারপর ওই কন্যার চিকিৎসার জন্য পদ্মার নির্দেশে তার সখীগণ ও তিনি কন্যাকে বস্ত্রে ঢেকে সিন্ধুতীরের উদ্যানে নিয়ে এলেন। সেখানেই আগুন জ্বেলে অচেতন মেয়েটির মাথায় ও পায়ে সেঁক দিলেন। তন্ত্র, মন্ত্র ও মহৌষধি প্রয়ােগ করলেন।

 

প্রায় চার দণ্ড ধরে বহু যত্নে চিকিৎসা করায় সমুদ্রের জলে ভেসে-আসা কন্যা চেতনা ফিরে পেলেন। স্থান সিন্ধুতীর।

 

অতএব কবিতার সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ সমুদ্রতীরেই ঘটেছে। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই কবিতার নামকরণ ‘সিন্ধুতীরে’ হওয়ায় সার্বিক সমর্থনযােগ্য হয়েছে।

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি

সিন্ধুতীরে কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

 

 

প্রশ্ন ) সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশ অনুসারে রাজকন্যা পদার সৌন্দর্যবােধটি উদঘাটিত করাে।

 

উত্তর : ‘ সিন্ধুতীরে’ কবিতার কবি সৈয়দ আলাওল সৌন্দর্যপ্রিয় ছিলেন। তার সেই সৌন্দর্যবােধ সমুদ্ররাজের কন্যা গুণবতী ও রূপবতী পদ্মর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। বর্ণনার মাধুর্যে রাজকন্যার সৌন্দর্যপ্রিয়তা প্রকাশিত হয়েছে।

 

রাজকন্যা সিন্ধুতীরে একটি দিব্যস্থান বাছাই করে সেখানে একটি সুন্দর বাগান তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। নানা ফল ও ফুলে শােভিত একটি পর্বতের পাশে তিনি গড়ে তুললেন একটি মনােরম উদ্যান। সেই উদ্যানে তৈরি করা হলাে নানা ফলের সুলক্ষণ বৃক্ষশ্রেণি। আর সেইসব বৃক্ষলতা তৈরি করা হলাে যেখানে ফুটে উঠল সুগন্ধ-সুরভিতে ভরা নানা মনােহর পুষ্প। আর বানানাে হলাে উচ্চতর প্রাসাদ—টঙ্গি। টঙ্গিতে শােভা পেল নানা উজ্জ্বল স্বর্ণরত্ন। এতে রাজকন্যার সৌন্দর্যবােধটি ফুটে উঠেছে। 

 

এক প্রত্যুষে সখীগণের সঙ্গে রঙ্গকৌতুক করতে করতে পদ্মা আসছিলেন উদ্যানটিতে। সখীগণ ঘুরে দেখছিলেন এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। পদ্মা দেখলেন, অপ্সরা রম্ভাকেও হার মানানাে চেতনা রহিত এক রূপবতী কন্যা পড়ে আছেন। সেই কন্যার পকলা দেখে রাজকন্যা বিস্মিত হলেন। তিনি অনুমান করলেন বুঝিবা ইন্দ্রের অভিশাপে অভিশপ্ত কোনাে বিদ্যাধরী, কিংবা স্বর্গভ্রষ্ট কোনাে সুন্দরী করিণী। অচৈতন্য কন্যার চক্ষু দুটি উন্মীলিত, কিন্তু নিশ্চল। সেরকমই তাসবত তার বসন। আর, বিস্রস্ত কেশদাম। হয়তাে প্রবল ঝড়ে সমুদ্রে ভেসে চলা তার নৌকোটি ভেঙে ভেসে এসেছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে। তার সারা অঙ্গা সমুদ্রের লানা। মনে হলো, চিত্রের পুতলির মতো পড়ে আছে মনােরমা কন্যাটি, শ্বাসটুকু বইছে মাত্র।

 

উপরােক্ত আলােচনার মধ্য দিয়ে পদ্মার সৌন্দর্যবােধটি পরিস্ফুট হয়েছে।

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি:

প্রশ্ন ) ‘সিধুতীরে’ কাব্যাংশ অনুসারে রাজকন্যা পদ্মার সেবাপরায়ণতার পরিচয় দাও।

 

উত্তর : ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় কবি সৈয়দ আলাওল সমুদ্ররাজের কন্যা রূপবতী ও গুণবতী পদ্মার মানবিক মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন। সেই মানবিকতায় উঠে এসেছে সেবাপরায়ণতার আদর্শ।

 

সুরুচিশীল ও সৌন্দর্যপ্রিয় রাজকন্যা পদ্মা নিজের মনােমতাে ফুলে ফলে পরিপূর্ণ একটি মনােরম উদ্যান বানিয়েছিলেন। স্থানসমুদ্রতীরের ফুলফল শােভিত এক পর্বতের পার্শ্বভূমি। এক বিরল ভােরে সখীদের সঙ্গে হাসিরঙগ করতে করতে তিনি উদ্যানে আসছিলেন। এসে দেখলেন বিস্ময়কর দৃশ্য। বিস্রস্ত বেশবাস, আলুথালু কেশ ও হতচেতন রূপবতী এক কন্যা মাটিতে পড়ে আছে। তাকে দেখে তিনি বিহ্বল হয়ে পড়েন। তার আরােগ্যের বিধি ও ঠাকুর নিরঞ্জনের নিকট প্রার্থনা করেন। অতি যত্নে বস্ত্রে ঢেকে তাকে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে আসেন ও সেবাযত্ন করেন। পদ্মা সখীদের আগুন জ্বালতে বললেন। সমুদ্রের জলে সিক্ত শীতল দেহখানিকে আগুন দিয়ে সেঁক দেওয়া হতে থাকে। বিশেষত মাথায় ও পায়ে আগুনের তাপ দিয়ে শরীরের উষ্মতা ফিরিয়ে আনা হতে থাকে তন্ত্র, মন্ত্র ও মহৌষধিও প্রয়ােগ করা হয়। এভাবে প্রায় চার দণ্ড সময় ধরে চিকিৎসা-সেবা করা হয়। অবশেষে চেতনহারা কন্যার চেতনা ফিরে আসে। 

 

এই ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত করা যায়, এক অজানা অচেনা হতচেতনা কন্যার জন্য বিহ্বল হয়ে পড়া, ঠাকুরের কাছে জীবনপ্রার্থনা করা, উচিত সেবাযত্ন করা ইত্যাদিতে রাজকন্যা পদ্মার সেবাপরায়ণতার আদর্শটি উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পায়।

 

প্রশ্ন)  সিন্ধুতীরে’ কবিতায় সমুদ্রকন্যা পদ্মার চরিত্রটি যেভাবে পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখাে।

 

উওর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’কাব্য থেকে সংকলিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মার এক মনােগ্রাহী চিত্র উঠেছে। কবি মনের মাধুরী মিশিয়ে নানান চরিত্রগুণে রাজকন্যা পদ্মকে অনন্যা করে তুলেছেন।

 

রাজকন্যা পদ্মার চরিত্রের যে গুণ অর্থাৎ, বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষিত হয় তা হলাে, (ক) সৌন্দর্যবােধ, (খ) প্রাণােচ্ছলতা, (গ) ঈশ্বর বিশ্বাস, (ঘ) পিতৃ শ্রদ্ধা, (ঙ) অনুভবের গভীরতা, (চ) সখীপ্রীতি (ছ) সেবাপরায়ণতা।

 

সমুদ্রতীরে এক দিব্যস্থানে ফুলে-ফলে সমৃদ্ধ এক পর্বতের পাশে পদ্ম রচনা করেছেন তার প্রমােদ-উদ্যান। নির্মাণ করেছেন হেমরত্নখচিত এক প্রাসাদ। এখানেই সর্বক্ষণ থাকেন তিনি। আনন্দে-কৌতুকে, উদ্দীপনায়, কর্মপ্রাণতায় চমৎকার একটা প্রাণােচ্ছলতা পদ্মার আচরণে ফুটে উঠেছে। যেন সবুজ-সতেজ পাহাড়ের কোলে গতিচল ঝরনাধারা। পদ্ম ঈশ্বরপ্রাণ রাজকন্যা। অচেতন পদ্মাবতী ও তার সখীদের চেতনা ফেরানাের প্রশ্নে ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনার মধ্যে ফুটে ওঠে তাঁর ঈশ্বর-নির্ভর হৃদয়টি। ঈশ্বরের কাছে তাঁর আকুল প্রার্থনা—“কৃপা কর নিরঞ্জন।

 

পিতার প্রতি সর্বদা সশ্রদ্ধ রাজকন্যা পদ্ম। পিতাকে তিনি পুণ্যবান পুরুষ বলে বিশ্বাস করেন। তাই তাে অচেতন পদ্মাবতীর চেতনা ফেরানাের প্রশ্নে পিতার পুণ্যের শক্তিকেও একটা শক্তি বলে মনে হয়েছেতার। মান্দাসেভাসমান অচেতন পদ্মাবতীও তাঁর সখীরা পদ্মার কোনাে আত্মীয়া বা পরিচিত কেউ নন, কিন্তু তাদের মুমূর্ষঅবস্থা দেখে প্রবল স্নেহবােধে উতলা হয়ে ওঠেন তিনি। তাদের চেতনা ফেরাতে সচেষ্ট হন। সখীদের সঙ্গে রাজকন্যা পদ্মার রঙ্গ-রসিকতায় তার অনাবিল হৃদয়টির পাশাপাশি সখীপ্রীতির চিত্রটিও ফুটে উঠেছে।সখীরা তার রঙ্গ-কৌতুকের সঙ্গী এবং আজ্ঞাধীন। 

 

সেবাপরায়ণতা পদ্মার চরিত্রে এক হীরকোজ্জ্বল দ্যুতি দান করেছে। প্রাণপণ চিকিৎসায়, তন্ত্রে-মন্ত্রে, মহৌষধি প্রয়ােগে চার দণ্ডের অক্লান্ত সেবাযত্নে তিনি পঞ্চকন্যার চেতনাফিরিয়ে এনেছেন। সুতরাং রাজকন্যা হিসেবে পদ্মা অনন্যা।

 

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি:

সিন্ধুতীরে কবিতা সৈয়দ আলাওল

 

প্রশ্ন ।। “কৃপা কর নিরঞ্জন”–কে, কেন নিরঞ্জনের কৃপা প্রার্থনা করেছেন? এতে তাঁর চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটে উঠেছে?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশটি সমুদ্র-রাজকন্যা পদ্মার উক্তি। পদ্ম নিরঞ্জনের কৃপা প্রার্থনা করেছেন।

 

। পিতৃগৃহে নিশিযাপন করে সকালে উদ্যানে আসার সময় পদ্মা ও তার সখীরা সিন্ধুতীরে একটি মান্দাসে পদ্মাবতী ও তার চার সখীদের অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। রূপবতী পদ্মাবতীকে দেখে বিস্মিত রাজকন্যা পদ্মা গভীরভাবে স্নেহকাতর হয়ে পড়েন। অচৈতন্য পদ্মাবতীর কিঞ্চিৎ প্রাণবায়ু তখনও ছিল। তাকে এবং তাঁর সখীদের বাঁচানাের জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। তীব্র ব্যাকুলতাবশত পিতার পুণ্যের শক্তিতে এবং নিজের ভাগ্যবলে এই রম্ভাজয়ী সুন্দরী নারী ও সখীদের প্রাণ বাঁচানাের চেষ্টা করেন তিনি। সেই সঙ্গে ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করেন।

 

সমুদ্র-রাজকন্যা পদ্মার এই ব্যাকুল প্রার্থনায় তাঁর স্ফটিকস্বচ্ছ, আবেগপ্রবণ হৃদয়টির চিত্র ফুটে উঠেছে। ফুটে উঠেছে নারী হৃদয়ের শাশ্বত সৌন্দর্যের চিত্র। রূপসী পদ্মাবতী তার পরিচিত কেউ নন। তবুও তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখে অত্যন্ত স্নেহকাতর হয়ে পড়েছে তার হৃদয়। তাকে এবং সখীদের বাঁচানাের চেষ্টায় তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। শঙ্কিত চিত্তে বলেন—“বিধি মােরে না কর নৈরাশ।পিতার পুণ্যের শক্তিতে এবং নিজের ভাগ্যের জোরে তিনি বাঁচিয়ে তুলতে চান তাদের। প্রাণপণ চিকিৎসা করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। তাঁর চেষ্টায় সাফল্যের জন্য নিরঞ্জনের কৃপা প্রার্থনা করেন। তাঁর আদেশক্রমের সখীরাবসনে ঢেকে পঞ্চকন্যাকে উদ্যানে নিয়ে আসেন এবং চিকিৎসা শুরু করেন। লক্ষণীয় রাজকন্যা হলেও পদ্মার চরিত্রগত সরলতা, সখীপ্রেম, মুমূর্যকে বাঁচিয়ে তােলার মানসিকতা তাঁকে অসাধারণ মানবীতে পরিণত করেছে।

 

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি:

প্রশ্নঃ।।  ‘দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা’ কার রূপের কলা দেখে কে বিস্মিত হয়েছিলেন? তাকে কোথায়, কী অবস্থায় দেখা গেছে? দেখার পর উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করেছিলেন? 

 

উওর : আরাকান রাজসভার শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’কাব্য থেকে সংকলিত ‘সিন্ধুতীরে’কাব্যাংশে চিতােররাজ রত্নসেনের পত্নী পদ্মাবতীর রূপের কলা দেখে সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মা বিস্মিত হয়ে যান।

 

পিতৃগৃহে নিশিযাপন করে প্রাতঃকালে সখীদের সঙ্গে রঙ্গ-রসিকতায় মত্ত পদ্মা উদ্যানের দিকে আসছিলেন। এই সময় সিন্ধুতীরে একটি মান্দাসে অচেতন অবস্থায় পদ্মাবতী ও তার চার সখীদের দেখতে পান। সখীদের মাঝে রম্ভাজয়ী সুন্দরী পদ্মাবতীর সৌন্দর্য দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে যান। তাঁর মনে হয় স্বর্গের নর্তকী বিদ্যাধরি যেন ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গভ্রষ্টা হয়ে অচৈতন্য অবস্থায় ভূমিতে পড়ে আছেন। বিস্ফারিত তার দু-চোখ, বসন এলােমেলাে, কেশদাম আলুলায়িত।

 

–‘বেকত দেখিয়ে আঁখি তেন স-বসন সাক্ষী

বেথানিত হইছে কেশ বেশ।

 তবে কিঞিৎ শ্বাস এখনও আছে।

 

সমুদ্রলাঞ্ছিতা অচেতন পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের দেখে পদ্মার মনে গভীর স্নেহােদয় হয়। তিনি পিতার পুণ্যের শক্তিতে এবং নিজের ভাগ্যবলে চিত্রের পুতুলের মতাে মেয়েটিকে বাঁচিয়ে তুলতে প্রয়াসী হন। দুখিনী এই নারীটির কথা ভেবে প্রাণপণ চিকিৎসার সংকল্প নিয়ে পদ্মা ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করেন-‘চিকিৎসিমু প্রাণপণ কৃপা কর নিরঞ্জন’। সমুদ্রলাঞ্ছিতা অচেতন এই পঞ্চকন্যাকে বসনে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন তিনি সখীদের। উদ্যানে এনে শুরু হয় তাদের চিকিৎসা। আগুন জ্বেলে কেউ গায়ে সেঁক দেন। কেউ মাথায় সেঁক দেন, কেউ দেন পায়ে। চলে তন্ত্র-মন্ত্রের প্রয়ােগ। প্রয়ােগ করা হয় মহৌষধি। এইভাবে চারদণ্ড কঠোর পরিশ্রম করে বহু যত্নে চিকিৎসার মাধ্যমে পঞ্চকন্যার চেতনা ফিরে আসে।

 

 

প্রশ্ন ।। ‘তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ’-কন্যাটি কে? তিনি যে স্থানটিতে থাকেন তার বর্ণনা দাও। এ প্রসঙ্গে তার সৌন্দর্যপ্রীতির পরিচয় দাও। 

 

উত্তর : সৈয়দ আলাওল অনুদিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে সংকলিত ‘ সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে সংগৃহীত এই অংশে যে কন্যাটির কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম।

 

মান্দাসে ভাসতে ভাসতে পদ্মাবতী অচৈতন্য অবস্থায় এক দিব্য পুরীতে পৌঁছান। সে এক অতি মনােহর দেশ। সেখানে কারও মনে কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই। সত্যবাদিতা, ধর্মাচরণ এবং সদাচারের মধ্য দিয়ে সবাই জীবন কাটায়। এই মনােহর দেশে ফল-ফুলে পরিপূর্ণ এক পর্বতের পাশে পদ্মা উদ্যান নির্মাণ করেন। উদ্যানটি নানান মনােহর সুগন্ধিত পুষ্পে পরিপূর্ণ। আছে নানান ফলের বৃক্ষও। এখানে হেমরত্নে উজ্জ্বল একটি টঙ্গি’অর্থাৎ, প্রাসাদনির্মাণ করে পদ্মা সেখানে সর্বক্ষণ থাকেন।

 

সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মার প্রাণচাঞ্চল্য যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনি প্রশংসনীয় তার সৌন্দর্যরুচি। ঝরনার মতাে স্বচ্ছ, পবিত্র, প্রাণচঞ্চল পদ্মা প্রাসাদ নির্মাণের জন্য যে স্থানটি নির্বাচন করেছেন কবির ভাষায় তা দিব্যস্থান। সেখানে ফলে-ফুলে শােভিত একটি পর্বত আছে। এই পর্বতের পাশে যে উদ্যানটি তিনি নির্মাণ করেন সেটি নানান মনোেহর, সুগন্ধিত পুষ্পে পরিপূর্ণ। আছে নানান সুলক্ষণ ফলের বৃক্ষও। বলা বাহুল্য, স্থানটি দেবস্থানের মতাে নানান সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। পদ্মার টঙ্গি অর্থাৎ, প্রাসাদটি স্বর্ণনির্মিত আর তাতে আছে বিভিন্ন রত্নের কারুকাজ। সেই স্বর্ণ আর রত্নের দীপ্তি উজ্জ্বল করে রাখে প্রাসাদটিকে।রাজকন্যা পদ্মার এই সৌন্দর্যপ্রীতিতার চরিত্রে এক বিশেষ মাত্রা দান করেছে।

 

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি:

সিন্ধুতীরে কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

 

প্রশ্ন ) রাজকন্যা পদ্মার গড়া ‘উদ্যানটির বর্ণনা দাও।

 

উত্তর : মধ্যযুগের কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় দেখা যায়, রাজকন্যা পদ্মা সমুদ্রতীরে রুচিসুন্দর উদ্যান গড়েছেন। তাঁর মনােমতাে স্থানটি স্বর্গীয় সুষমায় মনােহর। ফল ফুলের প্রাচুর্যে ভরা ওপরে এক পর্বত। তারই পাশে গড়লেন উদ্যানটি। নানা সুগন্ধি মনােহর ফুলে ফোটা সুলক্ষণ তার বৃক্ষগুলি। তাতে বিচিত্র টঙ্গি, অর্থাৎ নীরন্দ্র প্রাসাদ, নানা হেমরত্নের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানেই রাজকন্যা সর্বক্ষণ আমােদে- আহ্লাদে কাটান।

 

প্রশ্ন ) চেতন রহিত কন্যাটির আঁখি, বসন ও কেশের অবস্থা কীরকম এবং কেন?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওল তার ‘ সিন্ধুতীরে’ কবিতায় চেতন রহিত কন্যাটির আঁখি, বসন ও কেশের সংক্ষিপ্ত অবস্থাটি লিখেছেন। আসলে রাজকন্যা পদ্মার দৃষ্টিতেই অবস্থাটি দেখা। কন্যাটি ভেসে এসেছে সমুদ্রের তরঙ্গভঙ্গে। হয়তাে বা প্রবল ঝড়ে ভেঙেছে তার নৌকোখানি। অশেষ ক্লেশ বয়ে গিয়েছে। তার শরীরের ওপর দিয়ে। তার আঁখি দুটি খােলামাত্র; কিন্তু দৃষ্টির চেতনা নেই। বসনও আলুথালু। সে কারণে কেশসৌন্দর্য নেই। বিস্রস্ত তার কেশবেশ।

 

প্রশ্ন ) কাকে চিত্রের পােতলি সমা’ বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘ সিন্ধুতীরে’কবিতায় ভােরবেলায় রাজকন্যা পদ্মার গড়া উদ্যানে হঠাৎ অচৈতন্য দেবকন্যা সমান মেয়েটিকে দেখলেন চার সখীসহ স্বয়ং পদ্মা। ভেবেছেন, হয়তাে সমুদ্রের ঝড়ে ভেঙে যাওয়া নৌকো থেকে জলের ঢেউয়ে ভেসে এসেছে মনােরমা মেয়েটি। দেখে মনে হচ্ছে, চিত্রের পুতুল যেমন নির্বাক, তুলতুলে, তেমন এই মেয়েটি। শ্বাসটুকু বইছে মৃদুভাবে। আহা, কী হাল হয়েছে তার।

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি:

প্রশ্ন ) সখীগণসহ রাজকন্যা পদ্ম কীভাবে অচেতন  কন্যার যত্ন নিলেন?

 

 উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসা অচেতন মনােরমা কন্যার যত্ন করা হয়েছে। যত্ন করেছেন সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মা ও তার সখীগণ। পদ্মর আজ্ঞায়

 

পাঁচজনে মিলে বস্ত্রে ঢেকে উদ্যানের মধ্যে সেই কন্যাকে তারা নিয়ে। গেলেন। তারা তন্ত্রে, মন্ত্রে, মহৌষধি দিয়ে মাথায় ও পায়ে সেক দিতে লাগলেন। প্রায় চারদণ্ড মতাে সময় ধরে বহু যত্নে পণ্ডকন্যা। চিকিৎসা করায় অচেতন কন্যার চেতনা ফিরে এল।

 

প্রশ্ন ) সিন্ধুতীরে কবিতা অনুসারে রাজকন্যা পদ্মার সখীপ্রীতির পরিচয় লেখাে। 

 

উত্তর : সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মার সখীপ্রীতির মাধুরীটি আমরা দেখতে পাই কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটিতে।

 

এক প্রত্যুষে পিতৃগৃহ থেকে সখীগণের সঙ্গে হাসিকৌতুক করতে করতে এলেন নিজ নির্মিত উদ্যানে। মনে কৌতুক নিয়ে তিনি ও তার সখীরা দেখলেন, অতিশয় রূপবতী আলুথালু বেশে এক কন্যা অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন উদ্যানে। তার নির্দেশে সখীগণ বসনে ঢেকে কন্যাকে উদ্যানের মাঝে নিয়ে এলেন। সখীপ্রীতিতে তারা নানা চিকিৎসায় কন্যার চেতনা ফেরালেন।

 

প্রশ্ন ) সিন্ধুতীরে’ কবিতা অনুসারে রাজকুমারী পদ্মার রূপপ্রীতির প্রমাণ দেখাও।

 

উওর : কবিতা আলাওল রচিতসিন্ধুতীরে’কবিতায় সমুদ্ররাজের কন্যা গুণবতী পদ্মার হৃদয়ে রূপপ্রীতিটি সর্বাংশে ছিল।

 

রূপ ও সৌন্দর্যপ্রীতির কারণে তিনি স্বয়ং সুশােভন একটি উদ্যান রচনা করেছিলেন। উদ্যানমধ্যে হঠাৎ দেখা অচেতন কন্যার রূপবিভায় তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। কন্যাটি রূপে রম্ভা অপেক্ষাও উত্তম। মনে করেছেন। ভেবেছেন, হয়তাে বা ইন্দ্রশাপে কোনাে বিদ্যাধরি, কিংবা স্বর্গভ্রষ্ট কোনাে করিণী। তাঁর মনে হয়েছে, কন্যাটি চিত্রের পুত্তলি সমান মনােরমা। এমনই তার রূপ তথা সৌন্দর্যপ্রীতি!

 

প্রশ্ন ) হীন আলাওল সুরচন৷’ –আলাওল নিজেকে ‘হীন আলাওল’ বলেছেন কেন? তিনি কীভাবে তার কাব্যরচনা করলেন?

 

উত্তর : প্রথমত মধ্যযুগের জনপ্রিয় কবি আলাওল নিজেকে ‘হীন আলাওল’ বলে তার বিনয় নম্রতা প্রকাশ করেছেন। জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিগণের ধর্মই হলাে বিনয় তথা নম্রতা।

 

সতেরাে শতকের কবি আলাওল আরাকান রাজসভার কা ছিলেন। সেখানে আরাকানের প্রধানমন্ত্রী মাগনঠাকুর, অথম সুলেমান, পণ্ডিত সৈয়দ মুসা, সৈয়দ মসুদ শাহ এবং আরাকানরাজ শ্রীচন্দ্র সুধর্মার নির্দেশে অনেক কাব্য অনুবাদ করেন। এখানে। শ্ৰীযুক্ত মাগনের নামে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

 

 

প্রশ্নঃ।। ‘চিকিৎসিমু প্রাণপণ’-কার চিকিৎসা করা হবে? চিকিৎসার বিবরণ দাও।

 

উওর : সিংহলরাজের কন্যা, চিতােররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মাবতী ও তার সখীদের চিকিৎসা করা হবে।

 

বুপে রম্ভাজয়ী সুন্দরী পদ্মাবতীকে চেতনাহীন অবস্থায় দেখে গন্নার মনে প্রবল স্নেহােদয় হয়। তিনি তার এবং তার সখীদের চেতনা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন। ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করে অচেতন এই পঞ্চকন্যাকে বসনে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে আসার আজ্ঞা নেন। এখানে নানাভাবে চিকিৎসা চলে। আগুন জ্বেলে কেউ গায়ে সেক দেয়। কেউ মাথায় সেঁক দেয়। কেউ বা সেঁক দেয় পায়ে। তান্ত্রিক মতে, মন্ত্রশক্তি প্রয়ােগ করে এবং মহৌষধি প্রয়ােগ করে চরদণ্ড ধরে প্রাণপণ চিকিৎসা করা হয়। এইভাবে পঞকন্যা চেতনা ফিরে পান।

 

প্রশ্নঃ।। ‘তন্ত্রে মন্ত্রে মহৌষধি দিয়া’-কার জন্য এই পরিচর্যা? কীভাবে, কারা এই পরিচর্যা করেছিলেন? 

 

(উত্তর : সিংহলরাজের কন্যা, চিতােররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীদের জন্য এই পরিচর্যা।

 

সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম ও তাঁর সখীরা এই পরিচর্যা করেছিলেন। পদ্মর আদেশে তার সখীরা বসনে ঢেকে অচেতন পদ্মাবতী ও তার সখীদের উদ্যানে নিয়ে আসেন। এখানে নানাভাবে চলে তাদের পরিচর্যা। আগুন জ্বেলে কেউ গায়ে সেঁক দেয়। কেউ মাথায় সেঁক দেয়। কেউ বা সেঁক দেয় পায়ে।তান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়ােগ করে চিকিৎসা চলে। মন্ত্রশক্তির প্রয়োেগও করা হয়। প্রয়ােগ করা হয় মহৌষধি। এইভাবে চারদণ্ড ধরে চলে পরিচর্যা। ধীরে ধীরে ফিরে আসে। পঞ্চকন্যার চেতনা।

 

প্রশ্নঃ) ‘পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।”—পঞ্চকন্যা কারা? তারা অচেতন হয়েছিলেন কেন? 

 

উ : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’কবিতা থেকে উদ্ধৃত

 

এই অংশে যে পঞ্চকন্যার কথা বলা হয়েছে তারা হলেন, চিতােররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মবতী ও তার চার সখী চন্দ্রকলা, বিজয়া, বিধুন্নলা ও রােহিণী।

 

ভয়ানক সামুদ্রিক তাণ্ডবে চিতােরের রাজা রত্নসেনের নৌকো ভেঙে গেলে তিনি স্ত্রী পদ্মাবতী ও তার সখীদের নিয়ে একটি মান্দাসে উঠে পড়েন। দুর্ভাগ্যবশত সেই মান্দাসটিও দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি স্ত্রী পদ্মাবতী ও তার সখীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এই অবস্থায় সমুদ্রের ভয়ংকর রূপ, ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব দেখে পদ্মবতী ও তার সখীরা মূৰ্ছিতা হয়ে যান। তাদের মান্দাসটি ভাসতে ভাসতে সিন্ধুতীরে সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মর মনােরম উদ্যানে এসে পড়ে।

 

” প্রশ্ন ) “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।’—পঞ্চকন্যার নাম লেখাে। তারা কীভাবে চেতনা ফিরে পেলেন? অথবা, পদ্ম ও তার সখীরা কী রূপে পঞ্চল্যার চেতনা ফিরিয়ে এনেছিলেন?

 

উত্তর : পশু কন্যা হলেন চিতোেররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মবতী ও তার চার সখী— —ি(১) চন্দ্রকলা, (২) বিজয়া, (৩) বিধুন্নলা ও (৪) রােহিণী।

 

একটি মান্দাসে ভেসে এসে পঞ্চকন্যা অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন সিন্ধুতীরের এক দিব্যস্থানে। সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম সখীদের সঙ্গে উদ্যানে ফেরার পথে তাদের দেখতে পান। রূপে রম্ভাজয়ী সুন্দরী পদ্মাবতীকে দেখে পদ্মার মনে প্রবল স্নেহােদয় হয়। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন পদ্মাবতীর কিঞ্চিৎ শ্বাস তখনও আছে। তার চেতনা ফেরানাের জন্য তিনি নিরঞ্জনের কৃপা প্রার্থনা করেন। পঞ্চকন্যাকে বসনে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে আসার আদেশ দেন সখীদের। শুরু হয় চিকিৎসা। আগুন জ্বেলে গা-মাথা-পায়ে সেঁক দেওয়া হয়। তন্ত্রে-মন্ত্রে, মহৌষধি প্রয়ােগের মাধ্যমে চার দণ্ডের প্রাণপণ চিকিৎসায় তাঁদের চেতনা ফিরে আসে। – –

 

সিন্ধুতীরে কবিতার ব্যাখ্যা

 

প্রশ্ন ।। ‘ সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার কী গুণের পরিচয় পাওয়া যায়?

 

উত্তর : সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম নানান গুণে গুণবতী। কবি স্বয়ং বলেছেন—“সমুদ্র নৃপতি সুতাপদ্মা নামে গুণযুতা’। প্রশংসনীয় পদ্মার সৌন্দর্য রুচি। তার ঈশ্বর বিশ্বাস, পিতৃভক্তি, সখীপ্রীতি তাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। তবে যে গুণটি তাকে একেবারে অনন্যা করে তুলেছে তা হলাে অনুভূতিপ্রবণতা। তাঁর স্নেহকোমল হৃদয়টির তুলনা নেই। সমুদ্রলাঞ্ছিতা পদ্মাবতী ও সখীদের মুমূর্ষ অবস্থা তাঁকে বড়াে ব্যাকুল করে তুলেছে। তাদের চেতনা ফেরানাের চেষ্টায় তিনি ঈশ্বরকে স্মরণ করেছেন। সখীদের সহযােগিতায় তাদের নিজের উদ্যানে এনে চার দণ্ডের প্রানপন পরিচর্যার মাধমে চেতনা ফিরিয়ে এনেছেন।

 

প্রশ্নঃ।।  ‘অতি মনােহর দেশ’ –মনােহর কথার অর্থ লেখাে। এই প্রসঙ্গে মনােহর দেশটির বর্ণনা দাও।  অথবা, “অতি মনােহর দেশ”—এই ‘মনােহর দেশে’র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও। 

 

উত্তর : মনােহর কথার সরলার্থ হলাে, যা মনকে হরণ করে অর্থাৎ, মনকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। এককথায় অতি সুন্দর।

 

‘মনােহর দেশ’ বলতে কবি সমুদ্রতীরের এমন একটি স্থানের কথা বলেছেন যেখানে পদ্মাবতী ও তার সখীরা অচৈতন্য অবস্থায় একটি মান্দাসে ভেসে এসেছিলেন। এখানেই সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মা তারস্বর্ণে-রত্নে নির্মিত উজ্জ্বল টঙ্গিতে সর্বক্ষণ থাকেন। এই মনােহর দেশে কারও মনে কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই। সততা, সদাচার এবং নাচরণের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে সবাই। স্থানটি ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ এক দিব্যস্থানের মতাে। এখানে একটি পর্বত আছে। সেই পর্বতর্টিও সুন্দর সুন্দর সুগন্ধী ফুলে এবং নানান ফলে সমৃদ্ধ।

 

প্রশ্নঃ।। “তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ’–কন্যাটি কে? তিনি কোথায় সর্বক্ষণ থাকেন? 

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘ সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশ থেকে উধৃত এই অংশে যে কন্যাটির উল্লেখ আছে তিনি হলেন সমুদ্ররাজের গুণবতী কন্যা পদ্মা।

 

পদ্মা সিন্ধুতীরে এক অতি মনােহর দেশে থাকেন। সেখানে কারও মনে কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই।সততা,সদাচার এবং ধর্মাচরণের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে সবাই। এখানে এক দিব্যস্থান দেখে নিয়ে ফল-ফুলে পরিপূর্ণ এক পর্বতের পাশে পদ্মা উদ্যান নির্মাণ করেন। নানান মনােহর সুগন্ধিত পুষ্প এই উদ্যানটির শােভা বর্ধন করে। নানান ফলের বৃক্ষও আছে। হেমরত্নে উজ্জ্বল একটি টঙ্গি’ অর্থাৎ, এখানে প্রাসাদ নির্মাণ করে পদ্মা সর্বক্ষণ তাতে থাকেন।

 

প্রশ্নঃ।। ‘যদি হইল সময় প্রত্যুষ’—প্রত্যুষকালে কী হলাে? 

 

> উত্তর : সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মা পিতৃগৃহে নিশি যাপন করে প্রত্যুষকালে অর্থাৎ, সকালে সখীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, রঙ্গরসিকতায় মেতে উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। এই সময় তিনি সিন্ধুতীরে একটি মান্দাস দেখতে পান। তারা কৌতূহলবশত মান্দাসটির কাছে ছুটে যান, দেখেন চার সখী চারদিকে, মাঝে রূপবতী রম্ভার চেয়েও সুন্দরী এক নারী। সবাই অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন। আতঙ্কে বিস্ফারিত চোখ, এলােমেলাে বসন, আলুলায়িত কেশ বেশ, সামান্য শ্বাসটুকু শুধু আছে। 

 

সিন্ধুতীরে কবিতার ছোট প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) মূৰ্হিতা কন্যার জীবন ফেরানাের জন্য রাজকন্যা পদ্ম কী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবলেন?

 

উত্তর : মুছিত কন্যার জীবন ফেরানাের জন্য রাজকন্যা পদ্ম প্রাণপণ চিকিৎসা করার শপথ নিলেন।

 

প্রশ্ন ) পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।’—পঞ্চকন্যা কীভাবে চেতনা ফিরে পেল?

 

উত্তর : সমুদ্রতটে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা পঞকন্যা সমুদ্রসুতা পদ্মা ও তার সখীদের সেবা ও মহৌষধির দ্বারা চেতনা প্রাপ্ত হয়।

 

প্রশ্ন ।। ‘কন্যারে ফেলিল যথা’-কন্যাটি কে?

 

: উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশটিতে উল্লিখিত কন্যাটি হলেন চিতােররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মাবতী।

 

** প্রশ্ন ।। “কন্যারে ফেলিল যথা”-কন্যাকেকোথায় ফেলা হলাে? 

 

উত্তর : আরাকান রাজসভার শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে নেওয়া আলােচ্য অংশে চিতাের-রাজ রত্নসেনের স্ত্রী পদ্মাবতীকে সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত এক দিব্যপুরীতে ফেলার কথা বলা হয়েছে।

 

প্রশ্নঃ।। ‘পদ্মাবতী’ কাব্যাংশটি কোন্ কবির কাব্য অবলম্বনে লেখা?

 

উত্তর: ‘পদ্মাবতী’কাব্যাংশটি প্রসিদ্ধ হিন্দি-কবি মুহম্মদ জায়সীর  ‘পদুমাবৎ’কাব্য অবলম্বনে লেখা।

 

প্রশ্ন ) কবি সৈয়দ আলাওলের অন্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের অন্য কয়েকটি গ্রন্থ (অনুবাদমূলক) হলাে—১. সয়ফুলমুলুক বদিওজ্জমাল, ২. সপ্তপয়কর, ৩. তােহফা, ৪. দারাসেকেন্দরনামা ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন ) সৈয়দ আলাওল কোন্ শতকের কবি?

 

উত্তর : ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটির কবি সৈয়দ আলাওল সতেরাে শতকের কবি।

 

প্রশ্ন ) সৈয়দ আলাওল কার নির্দেশে কাব্যরচনা করেন?

 

উত্তর : সৈয়দ আলাওল প্রধানমন্ত্রী মাগন ঠাকুর, অর্থমন্ত্রী, সুলেমান, পণ্ডিত সৈয়দ মুসা, সৈয়দ মসুদ শাহ এবং আরাকানরাজ শ্রীচন্দ্র সুধর্মার নির্দেশে অনেকগুলি কাব্য লেখেন।

 

প্রশ্নঃ।। কোন্ কাহিনি অবলম্বনে ‘পদ্মাবতী’ কাব্যটি প্রশ্ন লেখা?

 

উত্তর : দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন চিতােররাজ রত্নসেনকে হত্যা করেন। তার পত্নী পদ্মিনী নারীধর্মরক্ষার্থে জহরব্রতে প্রাণ দেন। এটিই কাহিনি।

 

প্রশ্ন ) দিব্য পুরী’টির মাহাত্ম্য কীরকম ছিল?

 

উত্তর : সমুদ্রমধ্যখ দিব্য পুরীটি ছিল অতি মনােহর দেশ। সেখানে কোনাে দুঃখ কেশ ছিল না। ছিল সত্যধর্ম এবং সদা সদাচার।

 

প্রশ্ন ) ‘সমুদ্রনৃপতি সুতা’ কে ছিলেন?

 

উত্তর : সমুদ্রপতিসুতা ছিলেন পদ্ম।তিনি খুবই গুণবতী ছিলেন।

 

প্রশ্ন ) পদ্মা কোথায়, কীরকম উদ্যান রচনা করলেন? 

 

উত্তর : রাজকন্যা পদ্মা সিন্ধুতীরে দিব্যস্থান দেখে গড়লেন। উদ্যানটি ছিল ফল ফুলের প্রাচুর্যে ভরা ওপরের এক পর্বতের পাশে।

 

প্রশ্নঃ।।রাজকন্যা পদ্মার উদ্যানে টঙ্গির পরিচয় দাও।

 

উত্তর : রাজকন্যাপদ্মারউদ্যানে বিচিত্র টঙ্গি,অর্থাৎজলমধ্যস্থউচ্চ বিলাসগৃহছিল। সে গৃহ নানা স্বর্ণরত্নে রঞ্জিত তথা আলােকদীপ্ত ছিল।

 

 প্রশ্ন ) রাজকন্যার চার সখী চারিভিত লক্ষ্য করে কী দেখলেন?

 

উত্তর : রাজকন্যা পদ্মার কৌতুকিনী চার সখী চারিভিত লক্ষ করে দেখলেন যে, তন্মধ্যে অপ্সরা রম্ভা অপেক্ষাও রূপবতী চেতনাহীন এক কন্যা পড়ে আছে।

 

প্রশ্ন ) নিপতিতা কন্যাকে দেখে বালা বিস্মিত হলেন কেন?

 

উত্তর : নিপতিতা কন্যার রূপের কলা বা সৌন্দর্য দেখে বালা পদ্ম বিস্মিত হলেন।

 

প্রশ্ন ) বিদ্যাধরি বলতে কী বােঝাে? অথবা, বিদ্যাধরি কাকে বলে?

 

! উত্তর : বিদ্যাধরি দেবকুলে জাত। এরা কামরূপী—ইচ্ছা করলেই রূপবদলাতে পারেন, আকাশগামী এবং হিমালয়বাসী।শাস্ত্রে, পুরাণে, কাব্যে বিদ্যাধরিদের উল্লেখ আছে।

 

প্রশ্নঃ।। চেতনরহিত কন্যাকে রাজকন্যা পদ্ম কী অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলেন? 

 

উত্তর : রাজকন্যা পদ্মা দেখলেন, চেতনরহিত কন্যার আঁখি দুটি খােলা, বসন এলােমেলাে এবং কেশ বেশ অবিন্যস্ত।

 

প্রশ্নঃ।। চেতন রহিত কন্যাকে রাজকন্যা পদ্মা কোন ‘পােতলি’র সঙ্গে কীরকম তুলনা করেছেন? 

 

উত্তর : চেতন রহিত নিপতিত মনােরমা কন্যাকে রাজকন্যা পদ্ম চিত্র-পুতলির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যার কিত্মািত্র শাস এখনও রয়েছে।

 

প্রশ্নঃ।। রাজকন্যা পদ্মা বিধিকে কী প্রার্থনা করলেন? 

 

(উ : রাজকন্যা পদ্মা অতি স্নেহভরে বললেন, কন্যার প্রাণ ফেরার বিষয়ে বিধি যেন তাকে নিরাশ না করেন।

 

প্রশ্ন ) বাহুরক কন্যার জীবন।’—কীসের প্রভাবে রাজকন্যা পদ্ম কন্যার জীবন ফেরার কামনা করেছেন? –

 

উত্তর : পিতার পুণ্যের ফলে এবং তার নিজের ভাগ্যের বনে রাজকন্যা পদ্মা মৃর্তিা কন্যার জীবন ফেরার কামনা করেছেন।

 

 

প্রশ্নঃ।। ‘দিব্য পুরী সমুদ্র মাঝার।’—দিব্য পুরী সম্পর্কে কী জানা যায়?

 

উত্তর : উল্লিখিত দিব্য পুরীতে একটি অত্যন্ত মনােহর দেশ আছে। সেখানে কারও কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই। সত্যতা, ধর্মে মতি এবং সদাচার এখানকার বৈশিষ্ট্য।

 

প্রশ্নঃ।।  ‘মনেতে কৌতুক বাসি’—এই কৌতুকের কারণ কী?

 

উত্তর : সকালে সখীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, রঙ্গ-রসিকতায় মত্ত পদ্ম উদ্যানের দিকে আসার সময় সিন্ধুতীরে একটি মান্দাস দেখতে পান। এই মান্দাসটি দেখে তার মনে কৌতূহল জাগে।

 

প্রশ্ন ।। ‘তাহাতে বিচিত্র টঙ্গি’—“টঙ্গি’ শব্দের অর্থ কী?

 

উত্তর : ‘টঙ্গি’কথার অর্থ হলাে উঁচু গৃহবিশেষ। এখানে শব্দটি প্রাসাদ বা বিলাসগৃহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ‘চিকিৎসিমু প্রাণপণ’-কার চিকিৎসা করবেন বক্তা? 

 

 

উত্তর : বক্তা অর্থাৎ, সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম সিংহল রাজকন্যা পদ্মবতী ও তার সখীদের চিকিৎসা করবেন।

 

প্রশ্নঃ।। পদ্মা তার সখীদের কি আজ্ঞা দিয়েছিলেন?

 

উত্তর : সমুদ্ররাজেরকন্যা পদ্ম অচেতনপঞকন্যাকেবসনে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে আসার আদেশ দেন সখীদের।

 

প্রশ্নঃ।। ‘বিধি মােরে না কর নৈরাশ’-বক্তার এই প্রার্থনা কেন?

 

উত্তর : রূপবতী অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে পদ্মর মনে অত্যন্ত সেহােদয় হয়। তিনি তার প্রাণ রক্ষার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এই ব্যাকুলতাবশত বক্তা এই প্রার্থনা করেন।

 

প্রশ্ন ) ‘রূপে অতি রম্ভা জিনি’-কার রুপের কথা বলা হয়েছে?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে সংকলিত ‘সিন্ধুতীরে’কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশে চিতোেররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মাবতীর রূপের কথা বলা হয়েছে।

 

 

প্রশ্নঃ।। অতি স্নেহ ভাবি মনে- এই স্নেহের কারন কি?

 

উত্তর : পদ্ম অচেতন অবস্থায় পদ্মাবতী ও তার সখীদের দেখতে পান।তাদের ভয়ে বিস্ফারিত চোখ, অসংলগ্ন বসন, আলুথালু  বেশ দেখে তার মনে স্নেহােদয় হয়। 

 

প্রশ্নঃ।। শ্ৰীযুত মাগন গুণী’—মাগন গুণী কে ছিলেন? 

 

উত্তর : মাগন গুণী বলতে মাগন ঠাকুরের কথা বলা হয়েছে। তিনি রােসাঙ্গরাজ নরপদিগ্যির বিশ্বস্ত মন্ত্রী ছিলেন। তার নির্দেশেই কবি সৈয়দ আলাওল ‘পদ্মাবতী’কাব্যটি রচনা করেন।

 

প্রশ্নঃ।। ‘পঞজনে বসনে ঢাকিয়া।—পঞজন কারা?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে উল্লিখিত পজন হলেন, সিংহল রাজকন্যা পদ্মা ও তার চার সখী—চন্দ্রপ্রভা, রােহিণী, বিজয়া ও বিধুন্নলা।

 

প্রশ্নঃ।। ‘বহু যত্নে চিকিৎসিতে-কতক্ষণ ধরে চিকিৎসা চলেছিল? 

 

উত্তর : অচেতন পদ্মাবতী ও তার সখীদের প্রাণ রক্ষা করতে তন্ত্রে-মন্ত্রে, মহৌষধি প্রয়ােগে চার দণ্ড ধরে চিকিৎসা করেন পদ্ম ও তার সখীরা।

 

প্রশ্ন ) আলাওল তার কবিতার শেষে মাগনের নাম উল্লেখ করেছেন কেন?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওল রােসাঙ্গরাজেরমন্ত্রী মাগন ঠাকুরের পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করেছিলেন। তাঁরই নির্দেশে ‘পদ্মাবতী’ কাব্যটি অনুবাদ করেন। তাই কবিতার শেষে তার নাম উল্লেখ করেছেন। এটা মধ্যযুগীয় সাহিত্যরীতি।

 

প্রশ্ন ) পদ্ম ও তার সখীরা কীভাবে পঞ্চকন্যার চিকিৎসা করেন?

 

উত্তর : পদ্মা ও তাঁর সখীরা গা-মাথা-পায়ে সেঁক দিয়ে, তন্ত্রমন্ত্র প্রয়ােগ করে, মহৌষধি প্রয়ােগ করে পঞ্চকন্যার চেতনা ফেরান।

 

প্রশ্নঃ।। যদি হৈল সময় প্রত্যুষ।’—প্রত্যুষকালে কী হলাে? ‘অতি স্নেহ ভাবি মনে’—এই স্নেহের কারণ কী?

 

উত্তর : প্রত্যুষকালে অর্থাৎ, সকালে পদ্মা সখীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, রঙ্গ-কৌতুকে মেতে উদ্যানের দিকে আসছিলেন। এই সিন্ধুতীরে একটি মান্দাসে অচেতন অবস্থায় তিনি পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের দেখতে পান।

 

প্রশ্নঃ।।’ সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটির কবির নাম কী?

 

 উত্তর : সিন্ধুতীরে’কাব্যাংশটির কবির নাম সৈয়দ আলাওল। 

 

প্রশ্নঃ।।’ সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি কোন্ কাব্য থেকে

 

উত্তর : ‘ সিন্ধুতীরে’কাব্যাংশটি ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে নেওয়া। 

 

প্রশ্নঃ।। সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি পদ্মাবতী কাব্যের কোন্ খণ্ড থেকে গৃহীত হয়েছে?

 

উত্তর : ‘ সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের ‘পলা সমুদ্রখণ্ড থেকে গৃহীত হয়েছে।

 

সিন্ধুতীরে কবিতা

 

প্রশ্নঃ।। ‘কন্যারে ফেলিল’-কন্যাকে কোথায় ফেলা হয়েছিল?

 

উত্তর : কন্যাকে ফেলা হয়েছিল সিন্ধুতীরের একদিব্যপুরীতে, এক অতি মনােহর দেশে। সেখানে কারও কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই। সবাই সৎ, ধার্মিক এবং সদাচারী।

 

প্রশ্নঃ।। ‘অতি মনােহর দেশ’—সেই দেশকে কেন মনােহর বলা হয়েছে?

 

উত্তর : দেশটিকে অতি মনােহর বলা হয়েছে কারণ সেখানে কারও কোনাে দুঃখ-ক্লেশ নেই, সবাই সৎ-ধার্মিক-সদাচারী। সুগন্ধ ফুলে-ফলে, সৌরভে স্থানটি সর্বক্ষণ আমােদিত।

 

প্রশ্নঃ।। ‘তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ’-কন্যাটি কোথায় থাকে?

 

উত্তর : কন্যাটি অর্থাৎ, পদ্ম সিন্ধুতীরের এক দিব্যস্থানে ফল-ফুল শােভিত এক পর্বতের পাশে উদ্যান নির্মাণ করেছেন। সেই উদ্যানে স্বর্ণ-রত্ন নির্মিত এক প্রাসাদে তিনি থাকেন।

 

প্রঃ) ‘মধ্যেতে যে ন্যাখানি’। এই কন্যাটি সম্পর্কে কী মন্তব্য করা হয়েছে?

 

উত্তর : কন্যাটি অর্থাৎ, মৃতি পদ্মাবতী সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে যে, তিনি রূপে স্বর্গের অপ্সরী রম্ভাকেও হারিয়ে দেবেন।

 

প্রশ্নঃ।। ‘অনুমান করে নিজ চিতে। -কী অনুমান করে?

 

উত্তর : পদ্মবতী ও তাঁর সখীদের অচেতন অবস্থায় দেখে পদ্ম অনুমান করেছেন যে, সমুদ্রের প্রবল বাতাসে অর্থাৎ, সমুদ্রের ঝড়ে এঁদের নৌকো ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কে কষ্টে এই অবস্থা হয়েছে।

 

প্রশ্ন) ‘বেথানিত হৈছে কে বেশ’‘বেথানিত’ শব্দের অর্থ কী?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে গৃহীত এই অংশে বেথানিত’শব্দটির সরলার্থহলাে বিস্থানিত অর্থাৎ, থানচ্যুত হওয়া অর্থাৎ, অসংবৃত, এলােমেলাে অবস্থা।

 

– প্রশ্ন ) ‘মােহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ’-সিন্ধু-ক্লেশ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

 

উত্তর : সিন্ধু-ক্লেশ কথাটির অর্থ হলাে সিন্ধু দ্বারা সৃষ্ট ক্লেশ। পদ্মাবতী ও তাঁর সখীরা সমুদ্রের ঝড়ে যে ভয় এবং কষ্ট পেয়েছিলেন তাকেই ‘সিন্ধু-ক্লেশ’বলা হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ‘বিস্মিত হইল বালা’-বালার বিস্মিত হওয়ার কারণ কী?

 

উত্তর : বালা অর্থাৎ, সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্মা অচেতন পদ্মাবতীর রূপের কলা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। পদ্মাবতী স্বর্গের অপ্সরী রম্ভার চেয়েও সুন্দরী ছিলেন।

 

প্রশ্ন ) সিন্ধুতীরে কবিতায় দুজন নারীকে কন্যা বলা হয়েছে, কন্যা দুটি কে কে?

 

উত্তর : কবি সৈয়দ আলাওলের ‘ সিন্ধুতীরে’ কবিতায় যে কন্যা দুটির উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, সমুদ্ররাজের কন্যা পদ্ম এবং চিতােরের রানা রত্নসেনের দ্বিতীয়া পত্নী পদ্মাবতী। :

 

প্রশ্ন ) ‘সমুদ্রনৃপতি সুতা’-কাকে সমুদ্রনৃপতি সুতা বলা হয়েছে?

 

উত্তর : সমুদ্ররাজের গুণবতী কন্যা পদ্মাকে সমুদ্রনৃপতি সুতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে উদ্ধৃতাংশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *