History Class X

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা দশম শ্রেণির ইতিহাস টেকজ সঞ্জীব

 ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা দশম শ্রেণির ইতিহাস টেকজ সঞ্জীব

 

 

স্বাধীন ভারতের সংবিধান :

 

সংবিধান প্রণয়ন :

ভারতের-সংবিধানের-বৈশিষ্ট্য-গুলি-আলোচনা-দশম-শ্রেণির-ইতিহাস-টেকজ-সঞ্জীব

 

→ গণপরিষদ : স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতীয় নেতৃবর্গ স্বাধীন ভারতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধানের খসড়া তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকারে নিযুক্ত ‘মন্ত্রি মিশন’ বা ‘ক্যাবিনেট মিশন’-এর রিপোর্টে সংবিধানের খসড়া তৈরি করার জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করার সুপারিশ করা হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে প্রাদেশিক আইন সভা কর্তৃক গণপরিষদের নির্বাচন হয়। এই গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৯। এই আসনের মধ্যে কংগ্রেসের সদস্য ২০৫ জন, মুসলিম লীগের ৭৩ জন, কমিউনিস্ট ১ জন এবং অন্যান্য ১৪ জন সদস্য ছিলেন। এছাড়া দেশীয় রাজ্যগুলির মনোনীত ৯৩ জন সদস্য ছিল। এই গণপরিষদের উপর সংবিধান রচনা করার দায়িত্ব ছিল। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদের প্রথম সভা বসে। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ  এই সভার সভাপতি হন। মুসলিম লিগ ও দেশীয় রাজন্যবর্গ এই সভায় যোগ দেয়নি। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ছাড়া এই সভার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল গফফর খান প্রমুখ। মুসলিম লিগ মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে অনড় থেকে মুসলিমদের জন্য পৃথক গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায়। স্বাধীনতা ও দেশবিভাগের পরে পাকিস্তানে গণপরিষদ গঠিত হয়।

 

গণপরিষদের লক্ষ্য ঃ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়, সংবিধান প্রণয়নের মূল লক্ষ্য হবে একটি ‘স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ হিসাবে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করা। সংবিধান প্রবর্তন : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান নামে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। ফলে ভারতের গণপরিষদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৯ জন। গণপরিষদ ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি সংবিধান খসড়া প্রস্তুত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টায় সংবিধান রচিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে নভেম্বর ভারতের গণপরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এই রচিত সংবিধান ও জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জানুয়ারি গৃহীত সংবিধান বলবৎ হয়। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ২২ শে জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চক্রবর্তী রাজা গোপালচারী। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের নতুন সংবিধান অনুযায়ী ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ভারত সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র-হিসাবে ঘোষিত হয়।

 

সংবিধানের লক্ষ্য : 

 

 ভারতীয় সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধান। এই সংবিধানে প্রথমে ৩৯৫ টি ধারা ও ৮ টি তফসিল ছিল। ভারতের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতির স্বার্থের সামঞ্জস্য বিধান করে এই সংবিধান রচিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধান অনুকরণ করে এবং ভারতীয় ভাবধারা যুক্ত করে এই সংবিধানকে পুষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে যে, জনগণ এই সংবিধান রচনা ও গ্রহণ করে নিজেদের অর্পণ করেছে। এতে আরো বলা হয়েছে।

 

প্রত্যেক ভারতবাসীর ধর্ম এবং জাতীয় ঐক্য ও অখন্ডতা অক্ষুন্ন রেখে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃভাব জাগরিত করা হবে।

 

ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা ঃ 

 

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ কথাটি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সার্বভৌম কথাটি অর্থ হল দেশের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ভারত পূর্ণ স্বাধীন এবং বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত। গণতন্ত্র বলতে বলা হয়েছে ভারতের জনগণ প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে থাকেন। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই আইনসভা গঠিত হয়। সংবিধানের দ্বারা ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয় শাসক অর্থাৎ মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি। প্রজাতন্ত্র বলতে বোঝায় ভারতে কোনো বংশানুক্রমিক রাজার স্থান নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি জনগণের পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। জনস্বার্থে সরকার পরিচালিত হয় এবং কাজের জন্য সরকার জনগণের কাছে দায়ী থাকেন।

 

 

প্রথমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি সংযুক্ত ছিল না। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৪২তম সংবিধান সংশোধনের দ্বারা সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকে রাষ্ট্রের হাতে। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ৪৪তম সংশোধনের সাহায্যে ভারতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সূচনা করা হয়। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানাকে আইনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

 

ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। ধর্মনিরপেক্ষতার তাৎপর্য হল ভারতে কোনো ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপে স্বীকার করা হয় না। এখানে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কোনো সংযোগ থাকবে না। রাষ্ট্র সকল ধর্মের প্রতি সমান নিরপেক্ষ থাকবে এবং ধর্মমতের জন্য কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ দেওয়া হবে না। সংবিধানের প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে যে, ভারতের সকল নাগরিক যাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়, চিন্তা, মতপ্রকাশ, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে রাষ্ট্র সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধার স্বার্থ থাকবে এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার ভিত্তিতে সকলের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের বিকাশ ঘটানো হবে। উচ্চ আদর্শ হিসাবে ভারতকে জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার কথাও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। 

 

ভারতে সংবিধানের বৈশিষ্ট্য :

 

ভারতের সংবিধানের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করা যায় –

 

সংবিধানের বিশালতা ঃ ভারতের সংবিধান বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের সংবিধান এত বিপুল আয়তনের নয়। ইংল্যান্ড বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো যেসব দেশে বহুদিন ধারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, সেইসব দেশের সংবিধানের অনুসরণে অসংখ্য ধারা বা উপধারা ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে মোট ৭৮ বার সংবিধানের সংশোধন হওয়ায় নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়ে ভারতীয় সংবিধানের আয়তন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

 

নির্দেশমূলক নীতি ঃ সংবিধানের অপর বৈশিষ্ট্য হল, নির্দেশমূলক নীতি। জলকল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসাবে সংবিধানের আদর্শ ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কতকগুলি নীতি ও নির্দেশ সরকারকে করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে সরকার এই নীতিগুলি পালন করতে বলা হয়েছে। এই নীতি পালন পালন করলে দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

ভারতের সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য

 

মৌলিক অধিকার ঃ সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কয়েকটি মৌলিক অধিকার ও মৌলিক কর্তব্য স্বীকৃত হয়েছে। মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি। সরকারে কোনো আইন বা কাজের দ্বারা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে যে কোনো নাগরিক সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের সাহায্য নিতে পারে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকেদের ১০টি মৌলিক কর্তব্য সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা : সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ভারতের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভারতের সংসদ বা পার্লামেন্ট প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে গঠিত হয়। এই মন্ত্রিসভা সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে রাজ্য বিধান সভা ও সংসদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী।

 

প্রস্তাবনা ঃ ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারত সম্পূর্ণ স্বাধীন।

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ঃ 

 

ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ। সংবিধানে কেন্দ্রে একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলিতে রাজ্য সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলি কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে পৃথক তালিকা করে বণ্টন করা হয়েছে। কতকগুলি বিষয়কে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকায় রাখা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারেরই এই সব বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। তবে কোনো রাজ্য সরকারের প্রণীত আইন যদি কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধী হয় সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রণীত আইনটি বাতিল হয়ে যাবে এবং কেন্দ্রীয় আইনটি চালু হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলিতেও আইন প্রণয়ন করতে পারে।

 

ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এককেন্দ্রিক প্রবণতা

 

এককেন্দ্রিক প্রবণতা ঃ ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ও এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকলেও জরুরি অবস্থায় কেন্দ্র রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে। তাছাড়া যেসব বিষয়ের উল্লেখ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য তালিকাতে নেই, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় সরকার সেইসব বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। সুতরাং ভারতীয় সংবিধান মূলত যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান হলেও পরিস্থিতির প্রয়োজনে তাকে এককেন্দ্রিক সংবিধানে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। ভারতীয় সংবিধানের এটি একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

 

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ

 

এক নাগরিকত্ব : 

 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মতো ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের দ্বি-নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয় নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় নাগরিকত্ব ও নিজ নিজ রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন। কিন্তু ভারতীয়রা যে রাজ্যে বসবাস করুন না কেন, তাঁরা কেবল ভারতের নাগরিক হিসাবেই স্বীকৃত। প্রদেশগুলির পৃথক নাগরিকত্ব নেই।

 

 নমনীয় ও অনমনীয় ঃ ভারতীয় সংবিধানে নমনীয়তা ও অনমনীয়তার মিশ্রণ ঘটেছে। নমনীয় কথার অর্থ এই সংবিধান সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতিতে সংশোধন করা যায়। কিন্তু সংবিধানের কিছু অংশ সহজে পরিবর্তন করা যায় না। ওই সব অংশের সংশোধনের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। সেইজন্য এই সংবিধানকে অনমনীয় সংবিধানও বলা যায়।

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

ধর্মনিরপেক্ষতাঃ 

 

সংবিধানে ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। নাগরিকদের নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচরণের স্বাধীনতা থাকলেও রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে কোনো ধর্মকে এখানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

 

প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার : গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের আদর্শ অনুযায়ী ভারতীয় সংবিধানে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটদানের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। ভারতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেক নাগরিকের ভোটদানের অধিকার রয়েছে। 

 

ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারঃ

 

ভারতের সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার দ্বারা প্রতিটি ব্যক্তি নাগরিক সুখ সুবিধা ভোগ করতে পারে। ভারতের সংবিধানে সাতটি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তবে এই অধিকার অসীম বা অবাধ নয়।

 

(১) সাম্যের অধিকার : ভারতের প্রত্যেক নাগরিক আইনের চোখে সমান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, জন্মস্থান ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোনো রূপ পার্থক্য করতে পারে না। রাষ্ট্র নাগরিকদের সমানভাবে রক্ষা করবে। নাগরিকদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না।

 

(২) স্বাধীনতার অধিকার : ভারতের নাগরিকগণ স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে। শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় সমাবেশ, সভা, সমিতি, গঠন করতে পারবে। যেকোনো বৃত্তি অবলম্বন করার স্বাধীনতা নাগরিকদের আছে।  স্বাধীনভাবে ভারতের যেকোনো স্থানে চলাফেরা ও বসবাস করতে পারবে। সম্পত্তি অর্জন, রক্ষা ও বিক্রয় করতে পারবে। তবে এই অধিকার অবাধ নয়।

 

 

(৩) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার :

 ভারতের সকল ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় যে কোনো ধর্মাচরণ করতে পারবে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পাদনে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না। তবে রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা ও নীতিজ্ঞান বিরোধী কোনো ধর্মাচরণ হলে তা দন্ডনীয় হবে।

 

(৪) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার ঃ রাষ্ট্র ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। কোনো নাগরিককে বেগার খাটানো যাবে না। ১৪ বৎসরের কিশোর কিশোরীকে কারখানায় কঠোর পরিশ্রম করানো যাবে না।

 

(৫) সম্পত্তির অধিকার ঃ সকল নাগরিকের সম্পত্তি, ভোগ, দখল, অর্জন করার অধিকার আছে। ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাষ্ট্র কোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না।

 

(৬) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার : প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা লাভের অধিকার থাকবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজ পছন্দমত শিক্ষা সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিবেশন করার অধিকার আছে।

 

(৭) সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার : ভারতের নাগরিকরা যদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে প্রতিবিধান চাওয়ার অধিকার নাগরিকদের আছে।

 

ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের কর্তব্য ও নির্দেশমূলক নীতিঃ

 

ভারতীয় সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই তাদের পালনীয় কিছু কর্তব্যের কথাও বলা হয়েছে। সমাজের কল্যাণের জন্য প্রয়োজন হলে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ উপেক্ষা করা, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রভৃতি কর্তব্য পালনের জন্য নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারতকে একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার কয়েকটি নির্দেশমূলক নীতি ঘোষণা করা হয়। নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য কর্ম ও শিক্ষার সংস্থান করা, সমান কাজে সমান বেতন, নাগরিকদের সবরকমের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করা। বার্ধক্যে ও অসুস্থ অবস্থায় নাগরিকদের চিকিৎসার সুরক্ষা দেওয়া, অনুন্নত শ্রেণির মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *