সাম্রাজ্যবিস্তারকারী ও শাসন সংগঠক রূপে শেরশাহের কৃতিত্ব নির্ণয় কর
সাম্রাজ্যবিস্তারকারী ও শাসন সংগঠক রূপে শেরশাহের কৃতিত্ব নির্ণয় কর?
শেরশাহের কৃতিত্ব
হুমায়ুন ও শেরশাহের সংঘর্ষ আলােচনা কর। মােগল-আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেরশাহের সাফল্যের কারণ কি ছিল?
অথবা, মধ্যযুগের ভারতে শেরশাহের রাজত্বকালের মূল্যায়ণ কর?
শেরশাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ণ
শেরশাহের-কৃতিত্ব-নির্ণয়-কর
উত্তর।(১৫২৬ হইতে ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল মুঘল-পাঠান সংঘর্ষের যুগ নামে পরিচিত)যদিও বাবর পাঠান শাসনের অবসান ঘটাইয়া মুঘল শক্তির উন্মেষ ঘটাইয়াছিলেন, কিন্তু এই সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নাই। পরবর্তী কালে শেরশাহের সুযােগ্য নেতৃত্বে ভারতে আফগান শক্তির পুনরুত্থান হয়।
শেরশাহের জীবনী :
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেরশাহের আকস্মিক আবির্ভাব ও তাহার অভাবনীয় সাফল্য যেমন বিস্ময়কর তেমনি চমকপ্রদ। জন্ম ও বাল্যজীবন শেরশাহের আদি নাম ছিল ফরিদ; তিনি ১৪৭২ খ্রীষ্টাব্দে আফগান জাতির শূর উপদলের এক সামান্য জায়গিরদারের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। (শেরশাহ-র জীবনীকার
অধ্যাপক কানুনগাের মতে তিনি ১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তঁাহার বাল্যজীবন মােটেই সুখের ছিল না; নানা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়া, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়া তাহার প্রথম জীবন অতিবাহিত হইয়াছিল। তাঁহার পিতা হাসান ছিলেন সাসারামের জায়গিরদার। বিমাতার চক্রান্তে পিতৃস্নেহ হইতে বঞ্চিত হইয়া তিনি বাল্যকালেই গৃহত্যাগ করিতে বাধ্য হন।
শেরশাহের অসাধারণ স্মৃতিশক্তি, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও প্রতিভা
এই অবস্থায় জৌনপুরে একটি চাকুরি গ্রহণ করিয়া তিনি আপন শিক্ষায় মনােনিবেশ করেন। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির পরিচয় দিয়া তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই আরবী বা ফার্সী ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তঁাহার তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও প্রতিভার সংবাদ পাইয়া তাঁহার পিতা তঁাহাকে আহ্বান করিলেন এবং সাসারাম ও খেয়াসপুরের শাসনকার্যের দায়িত্ব অর্পণ করিলেন। দীর্ঘ এগার বৎসর (১৫১১-২২খ্রীঃ) তিনি এখানে শাসনকার্যে নিযুক্ত থাকিয়া শাসন ও রাজস্ব সংক্রান্ত বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তাহার জীবনচরিতে সাসারাম ও খেয়াসপুরের শাসনকর্তা (তারিখ-ই-শেরশাহ’) লিখিত আছে যে, “ এই এগার বৎসর ফরিদ অজ্ঞাতসারে নিজের হিন্দুস্থানের সাম্রাজ্য শাসনের উপযােগী শিক্ষায় ব্রতী ছিলেন। কিন্তু বিমাতার চক্রান্তে আবার তাহাকে সাসারাম ত্যাগ করিতে হয়।
শেরশাহের শের খা’ উপাধি লাভ
অতঃপর তিনি ভাগ্যান্বেষণে আগ্রায় চলিয়া যান, কিন্তু পিতার মৃত্যু হইলে তিনি ফিরিয়া আসিয়া সাসারামের জায়গিরদার হন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিহারের স্বাধীন সুলতান বহর খার অধীনে চাকুরি গ্রহণ করেন। এইখানেই সাহসিকতার সহিত নিজহস্তে একটি ব্যাঘ্র হত্যা করিলে তিনি বহর খা কর্তৃক ‘শের খা’ উপাধিতে ভূষিত হন এবং তাহার পুত্র বহর খার অধীনে চাকুরী; জালাল আঁর তত্ত্বাবধানের ভারপ্রাপ্ত হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বহর ‘ খার সহিত মতান্তর উপস্থিত হইলে তিনি ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে দিল্লীতে যাইয়া মােগল সম্রাট বাবরের অধীনে চাকুরি গ্রহণ করেন।এই সময়েই মােগল সামরিকব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ তাহার নজরে আসে। বাবর অবশ্য তাঁহার কার্যে সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে সাসারামের জায়গির ফিরাইয়া দিবার ব্যবস্থা করেন। ইত্যবসরে বহর তাঁর মৃত্যু হইলে শের ই নাবালক জালাল খার অভিভাবক হিসাবে বিহারের শাসনভার গ্রহণ করেন। •
মােগল-পাঠান সংঘর্ষ :বিহারের শাসনকার্য পরিচালনাকালে তিনি চুনার দুর্গের অধিপতির বিধবা পত্নীকে বিবাহ করিয়া চুনার দুর্গটি লাভ করিয়াছিলেন। তাঁহার উত্তরােত্তর শক্তিবৃদ্ধিতে শঙ্কিত হইয়া হুমায়ুন চুনার দুর্গ অবরােধ করিলেন। শের খাঁ মৌখিকভাবে তাহার বশ্যতা স্বীকার করিয়া তখনকার মত আত্মরক্ষা করিলেন। কিন্তু বিহারের লােহানী অভিজাতবর্গ বাংলার সুলতান মামুদ শাহের সহিত মিলিত হইয়া তাহার বিরুদ্ধাচরণ করিলেন। শের খা অতি সহজেই ১৫৩৪ খ্রীষ্টাব্দে তাহাদের মিলিত বাহিনীকে সূরজগড়ের যুদ্ধে শােচনীয়ভাবে পরাজিত করিলেন। এই যুদ্ধের ফলে শের খাঁ বিহারের স্বাধীন সুলতান হইয়া উঠিলেন। ইহার পর ১৫৩৬ খ্ৰীষ্টাব্দে শের খাঁ বাংলা আক্রমণ করিয়া যথেষ্ট ধন-দৌলত লাভ করিলেন এবং সুরজগড়ের যুদ্ধে জয়লাভ পরবৎসর আবার আক্রমণ চালাইয়া রাজধানী গৌড় পর্যন্ত অধিকার করিলেন। চুনার দুর্গ লাভ করিলেন।
এই সমস্ত কৃতিত্বের ফলে আফগানদের উপদলীয় বিরােধিতা বিনষ্ট হইবার পর শের খাঁ সাধারণভাবে আফগানদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল হইয়া উঠিলেন; মােগল প্রভুত্বের অবসান ঘটাইয়া আফগান প্রাধান্য পুনঃসংস্থাপনের নব-সম্ভাবনায় তাহারা শক্তিবৃদ্ধি শের খার চতুষ্পর্শ্বে সমবেত হইতে লাগিল। শের খার ক্ষমতা অত্যধিক বৃদ্ধি পাইতেছে উপলব্ধি করিয়া হুমায়ুন সসৈন্যে তাহার বিরুদ্ধে অগ্রসর হইলেন। পথে-চুনার দুর্গ দখল করিয়া তিনি বাংলায় উপস্থিত হইলেন। গৌড় তাহার পদানত হইল।
শের খা সম্মুখযুদ্ধে অগ্রসর না হইয়া পশ্চাদপসরণ করিলেন। কিন্তু অল্পকালের মধ্যে রােটাস, বারাণসী, জৌনপুর জয় করিয়া কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হইলেন। আগ্রা প্রত্যাবর্তনের পথ রুদ্ধ হইয়া যায় দেখিয়া হুমায়ুন বাংলা হইতে যাত্রা করিলেন। পথে চৌসা নামক স্থানে, ১৫৩৯ খ্রীষ্টাব্দে আফগান বাহিনী কতৃর্ক আক্রান্ত হইয়া শােচনীয়ভাবে পরাজিত হইলেন। শের খা নিজেকে বাংলা ও বিহারের স্বাধীন সুলতান বলিয়া ঘােষণা করিয়া শেরশাহ্ উপাধি গ্রহণ করিলেন। পরবৎসর ১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে হুমায়ুন আর একবার শেরশাহের সহিত শক্তি পরীক্ষা করিতে আসিয়া কনৌজের যুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজিত হইলেন এবং সিংহাসন ত্যাগ করিয়া পারস্যের পথে পলায়ন করিতে বাধ্য হইলেন। দিল্লী ও আগ্রা শেরশাহের পদানত হইল। অতঃপর শেরশাহ্ রাজ্যবিস্তারে মনােযােগী হইলেন।
শেরশাহের রাজ্যজয় :
হুমায়ুনের ভ্রাতা কামরাণ শেরশাহের সহিত সন্ধি করিয়া পাঞ্জাবের উপর তাহার আধিপত্য ত্যাগ করিতে স্বীকৃত হইলেন। সিন্ধুদেশ এরং মুলতানও তাহার সাম্রাজ্যভুক্ত হইল। ইত্যবসরে বাংলাদেশ বিদ্রোহ করিলে তিনি তাহা দমন করিয়া বাংলাদেশকে ১৯ টি সরকারে বিভক্ত করিয়া তাহার এক বিশ্বস্ত অনুচরকে বাংলার শাসনভার প্রদান করিলেন। বাংলার শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি পরিবর্তন করিয়া তিনি তখনকার শাসনকর্তাকে ‘আমীন-ই বাংলা’ উপাধি দান করিলেন। অতঃপর তিনি মালবের দিকে সসৈন্যে অগ্রসর হইয়া গােয়ালিয়র, সারাংপুর ও উজ্জয়িনী দখল করিলেন।, মালবের রায়সিন দুর্গটি তিনি প্রতারণার সাহায্য ছাড়া দখল করিতে সমর্থ হন নাই। অতঃপর শেরশাহ্ রাজপুতানা অঞ্চলে আক্রমণ চালাইলেন এবং যােধপুর বা মাড়াবার অবরােধ করিলেন। এখানে অতিকষ্টে কূটকৌশলের সাহায্যে তিনি মালদেবকে পরাজিত করিলেন। অতঃপর চিতাের বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। আজমীর হইতে আবু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাহার অধিকারভুক্ত হয়। অবশেষে ১৫৪৪ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে বুবেন্ডের বিখ্যাত কালিঞ্জর দুর্গ জয় করিতে যাইয়া এক বিস্ফোরণের ফলে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।
* শেরশাহের কৃতিত্ব ঃ
মধ্যযুগীয় ইতিহাসে যে সমস্ত শাসক নানা দিক দিয়া শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে গিয়েছেন, শেরশাহ তাহাদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও নিরলস কর্মদক্ষতা ছিল তাহার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। জীবনের নানা বিপর্যয় ও ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও তিনি নিজেকে শিক্ষিত করিয়া তুলিয়াছিলেন ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করিয়া তুলিয়াছিলেন। তাহার দৃঢ়তা, অধ্যাবসায়, চাতুর্য ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি তাহার জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করিয়া তুলিয়াছিল, সামান্য এক জায়গিরদার জনৈতিক দৃষ্টি হইতে তাহাকে দিল্লীর সিংহাসনে উন্নীত করিয়াছিল।
রাজনৈতিক দিক দিয়া তাহার প্রধান কৃতিত্ব হইল ভারতে আফগান শক্তির পুনরুত্থান, প্রসঙ্গত বলা যায়, আপন শক্তির পুনরুথান কোন আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। আফগান আমীর ও শসেক গােষ্ঠীর স্বাধীনতা প্রতি এতটা গভীর ছিল যে তাহারা মুঘলদের আধিপত্য ছিল না। কিন্তু শেরশাহের সুযােগ্য নেতৃত্বে আফগান শক্তি পুনরায়
সুসংহত হইল এবং রাজনৈতিক আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে পারিল।
শেরশাহের প্রতিভা
তাহার সামরিক প্রতিভা সর্বজনস্বীকৃত। হুমায়ুনের সহিত যুদ্ধে তিনি তাহার সামরিক দূরদৃষ্টি ও দক্ষতার পরিচয় দিয়াছিলেন মালব, রাজপুতানা ও বুন্দেলখন্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও তাহার সামরিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। শত্রুপক্ষকে পরাজিত করিবার জন্য তিনি কূটকৌশলেরও সাহায্য গ্রহণ করিতেন। শেরশাহ সাধারণত বীরধর্ম আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রায়সিন দুর্গ দখলের সময়ে তিনি যে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা তাহার চরিত্রে কিছুটা কলঙ্ক লেপন করিয়াছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। রাজ-আদর্শ সম্বন্ধেও তাহার ধারণা ছিল অতি উচ্চ। শাসক হিসাবে তিনি স্বৈরাচারী হইলেও প্রজাসাধারণের কল্যাণসাধনই তাহার মূল উদ্দেশ্য ছিল।
রাজস্ব-সংস্কার, কৃষক শ্ৰেণীকে রক্ষা করিবার বিবিধ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ প্রভৃতি তাহার সাক্ষ্য দেয়। জনসাধারণের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তিনি বহু অর্থনৈতিক সংস্কারসাধন করিয়াছিলেন, তাহাদের সুখ শান্তির জন্য পুলিশবাহিনী সুসংগঠিত করিয়াছিলেন। ন্যায় ও নিরপেক্ষ প্রজামঙ্গলকামী কার্যাবলী বিচারের জন্য সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন করিয়াছিলেন। ঘােড়ার পিঠে ডাকবহনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করিয়া যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত করিয়াছিলেন।
শেরশাহের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি
শেরশাহ্ নিজে ছিলেন ধর্মপরায়ণ মুসলমান, কিন্তু তিনি শাসনকার্যে কোন সময়েই ধর্মান্ধতা প্রদর্শন করেন নাই। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল প্রজার প্রতি তিনি সমান ব্যবহার করিতেন, হিন্দু ও মুসলমান প্রজার মধ্যে সাধারণত তিনি কোনরূপ বৈষম্যমূলক ব্যবহার করিতেন না; ধর্ম সম্বন্ধে তিনি ছিলেন উদার। তিনি তাহার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দ্বারা ধর্মে উদারতা বুঝিয়াছিলেন যে, দেশের সমগ্র জনসাধারণের সমর্থনের ভিত্তিতেই স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপিত হইতে পারে; তাই তিনি ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করিবার জন্য চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। হিন্দুদের মধ্যেও যােগ্য ব্যক্তিগণকে শাসন ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি বিচারের ক্ষেত্রে নিয়ােগ করিতে তিনি দ্বিধা করেন নাই।
শেরশাহের শাসক হিসাবেই কৃতিত্ব
* কিন্তু শাসক হিসাবেই শেরশাহ তার কৃতিত্ব দেখাইয়াছে সবচেয়ে বেশি। তিনি মাত্র পঁচ বৎসর দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যুদ্ধবিগ্রহে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি এই স্বল্প সময়ের মধ্যে শাসনক্ষেত্রে সে সংস্কারসাধন করিয়াছিলেন তাহা অভূতপূর্ব। কেন্দ্রীয় স্থানীয় আফগানদের দমন করিয়া তিনি কেন্দ্রীয় শাসনকে শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার শক্তিবৃদ্ধি করিয়া তুলিলেন, প্রদেশগুলির শাসনব্যবস্থাকে সুনিয়ন্ত্রিত করিলেন। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সেনানিবাস স্থাপন করিয়া, বিভিন্ন অংশের মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন করিয়া তিনি সাম্রাজ্যকে সংহত করিলেন, তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র একই ধরনের রাজনীতি ও মুদ্রার প্রচলন করিলেন, রাজকর্মচারীদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করিলেন। এইরূপ ভাবে তিনি শাসনব্যবস্থাকে সর্বভারতীয় শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করিলেন। সু বিচারব্যবস্থা ও ধমনিরপেক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠিত করিয়া তিনি দেশে এক নবযুগের সৃষ্টি করিলেন। শেরশাহ যে কেবলমাত্র যােদ্ধা এবং সুশাসক ছিলেন তাহাই নয়, তিনি বিদ্যানুবাগেরও বিদ্যানুরাগ ও ব্যক্তিগত জীবন পরিচয় দিয়া গিয়াছেন। আরবী ও ফার্সী ভাষায় তিনি যথেষ্ট তৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। শিক্ষাবিস্তাবকল্পেও তিনি যথেষ্ট উৎসাহ দেখাইয়া গিয়াছেন। তাহার প্রকৃতির মধ্যে নিষ্ঠুরতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই, অযথা রক্তপাতের পক্ষপাতী তিনি কোন সময়েই ছিলেন না।
আকবর ও শেরশাহ্ : আকবরের সহিত স্বভাবতঃই তাহার তুলনা করা হইয়া থাকে। একথা অনস্বীকার্য যে, আকবর তাহার শাসনকার্যে সাফল্যের জন্য শেরশাহের কাছে অনেকাংশে ঋণী। শেরশাহের রাজস্বনীতি, মুদ্রানীতি প্রভৃতি অবলম্বন করিয়াই আকবর তাহার শাসনব্যবস্থাকে আরও উন্নত করিয়াছিলেন। অবশ্য আকবর তাহার নিজস্ব সংগঠনী প্রতিভা ও সৃজনী শক্তির পরিচয় দিয়াছেন বহুক্ষেত্রে। আকবরের ধর্মনীতি ছিল শেরশাহের ধর্মনীতি অপেক্ষা আরও উদার। কারণ শেরশাহের সময়ে হিন্দুদের উপর জিজিয়া কর অব্যাহত ছিল; কিন্তু আকবর তাহা উঠাইয়া দিয়া ঐক্যসাধনে আরও অগ্রসর হইতে সক্ষম হইয়াছিলেন।
শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা
শেরশাহের শাসনসংস্কারসমূহ
প্রশ্ন ।। শেরশাহের শাসনসংস্কারসমূহ ব্যাখ্যা কর এবং আকবরের শাসনব্যবস্থায় তাহাদের প্রভাব নিরূপণ কর।
অথবা, শেরশাহের শাসনব্যবস্থা পর্যালােচনা কর।
তুমি কি শেরশাহকে যােদ্ধা অপেক্ষা শাসকরূপে যােগ্যতর বলিয়া মনে কর?
অথবা,
শেরশাহের শাসনব্যবস্থার বিবরণ দাও।
উত্তর। শেরশাহ ছিলেন একজন সাহসী বীর; হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি তাহার রণকুশলতা ও সামরিক প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন। সামান্য জায়গিরদারের পুত্র হইয়া দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করা এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধ জয় করিয়া রাজ্যবিস্তার করা কম কৃতিত্বের পরিচায়ক নহে। কিন্তু মাত্র পাচ বৎসর (১৫৪০-৪৫ খ্রীঃ) কাবে রাজত্বকালের মধ্যে তিনি শাসনব্যবস্থায় যে সংস্কারসাধন করিয়াছিলেন, এত পরিচয় তাহার যে উন্নতিবিধান করিয়াছিলেন, তাহা তাহাকে ভারত-ইতিহাসে অমর করিয়া রাখিয়াছে। তাহার অসাধারণ প্রতিভার সবচেয়ে বেশী পরিচয় পাওয়া যায় শাসনক্ষেত্রে
শেরশাহের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি :
কিন্তু তাহার শাসন প্রতিভার রূপ নির্ণয়ে সকল ঐতিহাসিকগণই কেমত নহেন। ঐতিহাসিক আসকীনের (Erskine)-এর মতে শেরশাহ্ ছিলেন মূলত একজন ভবজেতা, শাসনসংস্কারকরূপে তাহার কৃতিত্ব ততটা কৃতিত্বপূর্ণ ছিল না। অন্যদিকে ডাঃ হর এস.ত্রিপাঠি ও ডাঃ শরণের মতে শেরশাহ্ ছিলেন একজন শাসনতান্ত্রিক সংস্কারক মাত্র, আবিষ্কারক নহেন। তাহাদের মতে তিনি আলাউদ্দিন খজির শাসনব্যবস্থাকে কিছুটা উন্নত করিয়া পুনঃপ্রবর্তন করিয়াছিলেন মাত্র, কোন মৌলিকতার পরিচয় দিতে পারেন নাই। কিন্তু ডাঃ কানুনগাে স্পষ্ট এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, আকবর অপেক্ষা শেরশাহের সংগঠনী প্রতিভা ছিল অনেক বেশী।
আধুনিক ঐতিহাসিকগণের মতে শেরশাহ আলাউদ্দিনের শাসনপদ্ধতির কতকগুলি মূল নীতি গ্রহণ কাছিলেন সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহার উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়াছেন। ভারতের প্রাচীন ও মুসলমান যুগের শাসনপদ্ধতির শ্রেষ্ঠ ধরাগুলির উপর ভিত্তি করিয়া তিনি স্বীয় প্রতিভার দ্বারা একটি আনিক শবেবস্থার সৃষ্টি করিয়াছিলেন।
শেরশাহের শাসন সংস্কারের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হইল উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় তিনি হিন্দু ও মুসলমান প্রজাবর্গের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উচ্চ আদর্শ দ্বারাই অনুপ্রাণিত হইয়াছিলেন।
শেরশাহের বিভিন্ন শাসনসংস্কার :
(১) কেন্দ্রীয়শাসন: শেরশাহের শাসনব্যবস্থা ছিল স্বৈরতান্ত্রিক সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহার সমগ্র শাসনব্যবস্থাই ছিল প্রজাকল্যাণমূলক। রাজ্যের সমস্ত শাসনক্ষমতা শেরশাহের নিজহস্তে কেন্দ্রীভূত ছিল। কিন্তু প্রজার মঙ্গলের জন্যই তিনি সে ক্ষমতা প্রয়ােগ করিতেন। কেন্দ্রে সুচারুরূপে প্রজামঙ্গলকামী শাসনকার্য পরিচালনার জন্য চারিজন মন্ত্রী নিযুক্ত ছিলেন। এক একজন মন্ত্রীর উপর এক একটি বিভাগের দায়িত্ব অর্পিত ছিল। মন্ত্রী ছাড়াও আরও উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় রাজকর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
(২) সামরিকসংস্কার: সুলতান ছিলেন সৈন্যবাহিনীর সর্বাধিনায়ক; সৈন্য ও সামরিক কর্মচারীগণ প্রত্যক্ষভাবে তাহার অধীন ছিল। তিনি সৈন্যবাহিনীতে প্রয়ােজনীয় সংস্কারসাধন করেন। সৈন্য ও সামরিক কর্মচারীগণকে জায়গির দেওয়ার পরিবর্তে তিনি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং সামরিক কর্মচারীগণকে দুই-তিন বৎসর অন্তর স্থানান্তরে প্রেরণ করার নীতি প্রচলিত করেন। আলাউদ্দিন খলজির সামরিক নীতি অনুসরণ করিয়া তিনি ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করিয়াছিলেন। সর্বশেষে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেনানিবাস ও স্থায়ী সৈন্যবাহিনী স্থাপন করিয়া একজন ‘ফৌজদার’-এর অধীনে সেনাবাহিনী মােতায়েন করিলেন, অবশ্য সম্রাটের অধীনেও সরাসরি এক বিরাট বাহিনী সব সময়ে প্রস্তুত থাকিত। তাহার সময়ে সৈন্যবাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাইয়াছিল।
(৩) প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি তাহার সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে বিভক্ত করিয়াছেন। এই সরকারগুলির শাসনকার্য পরিদর্শনের জন্য ছিল ‘শিকদার-ই-শিকদারান’ ও ‘মুনসীফ-ই-মুনসীফান’। প্রত্যেকটি সরকারকে আবার বহুসংখ্যক পরগনায় বিভক্ত করা হইয়াছিল। শিকদার ছিলেন পরগণার অধিকর্তা এবং আমীন ছিলেন তাহার সর্বোচ্চ বেসামরিক কর্মচারী। পরগণার রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের ভার ছিল এই আমীনদের উপর। প্রয়ােজনবােধে শিকদার তাহাকে রাজকর্মচারীদের সামরিক সাহায্যদানে বাধিত থাকিতেন। অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে ছিল মুনসীফ, খাজাঞ্চী, হিন্দু ও ফার্সী হিসাব-লেখক প্রভৃতি। রাজকর্মচারীগণের উপর কোনরূপ স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি যাহাতে কাজ করিতে না পারে সেইজন্য তিনি তাহাদের স্থানান্তর করিবার নীতি গ্রহণ করিয়াছিলেন। গ্রামের শাসনভার সাধারণত স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপরই ন্যস্ত থাকিত।
(৪) রাজস্বনীতি: রাজস্বের ক্ষেত্রে শেরশাহ্ যে সংস্কার আনয়ন করিয়াছিলেন তাহা সত্যই অভূতপূর্ব। পূর্বে কানুনগাে নামক রাজকর্মচারীদের মৌখিক বিবরণের উপর নির্ভর করিয়াই জমির রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হইত। শেরশাহ এবার জমির নির্ভুল জরিপের ব্যবস্থা করিলেন এবং জমির উৎপাদিকা শক্তি অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারিত করিয়া দিলেন। জমির উৎপন্ন ফসলের ১/৩ বা ১/৪ অংশ
কবুলিয়ত ও পাট্টা
রাজস্ব হিসাবে নির্দিষ্ট হইল; প্রজাগণ ফসলের দ্বারা বা, অর্থ দ্বারা উহা রাজকোষে জমা দিতে পারিত। কমিশনের ভিত্তিতে ‘মুকাদ্দম’, ‘চৌধুরী’, পটোয়ারী প্রভৃতি কর্মচারী দ্বারা রাজার রাজস্ব আদায় হইত; তবে প্রজাগণ ইচ্ছা করিলে সরাসরি রাজকোষে রাজস্ব জমা দিতে পারিত। কবুলিয়ত’ ও ‘পাট্টা’র প্রচলন তিনিই করেন।
সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্দৈবের ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে রাজস্ব মকুব করা হইত, এমন কি প্রয়ােজনবােধে ঋণদানেরও ব্যবস্থা করা হইত। কৃষকদের উপর কৃষককূলের উন্নতি, যাহাতে কোন প্রকার উৎপীড়ন না হয় সেদিকে তাহার সজাগ দৃষ্টি ছিল; কারণ তিনি বুঝিয়াছিলেন যে কৃষককূলের উন্নতির উপরই রাজ্যের উন্নতি নির্ভরশীল। শেরশাহের এই সমস্ত সংস্কার ভারতের রাজস্বব্যবস্থার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী কালের রাজস্বনীতি মূলত শেরশাহের নীতিসমূহকে অনুসরণ করিয়াই নির্ধারিত হইয়াছিল।
, (৫) শিল্প ও বাণিজ্য : শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে শেরশাহ্ মুদ্রাব্যবস্থারও সংস্কারসাধন করিয়াছিলেন। তিনি প্রাচীন ও মিশ্রিত মুদ্রার প্রচলন করেন এবং ‘দাম’ নামে এক নূতন মুদ্রার প্রচলন করেন। আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক উঠাইয়া দিয়া তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির পথ আরও পরিস্কার করিয়া দিয়াছিলেন। যাতায়াতের ব্যবস্থা উন্নত নূতন নূতন পথ-ঘাট নির্মাণ করিয়া তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। বঙ্গদেশ হইতে পঞ্চনদ পর্যন্ত নির্মিত ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রােড, আগ্রা হইতে যােধপুর ও আগ্রা হইতে বুরহানপুর পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তাসমূহ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযােগ স্থাপন করিয়া যাতায়াত ব্যবস্থা; দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করিয়াছিল।
(৬) পুলিশ ও বিচারব্যবস্থা : দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়ােজনে শেরশাহ পুলিশব্যবস্থার উন্নতিসাধন করিয়াছিলেন। শান্তি বজায় রাখিবার জন্য এবং অপরাধীকে সায়েস্তা করিবার জন্য তিনি স্থানীয় জনসাধারণের উপরই নির্ভর করিতেন। পুলিশব্যবস্থা ও দেশের বিভিন্ন অংশের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য শেরশাহ্ গুপ্তচর নিয়ােগের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। শেরশাহ্ যে বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করিতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন তাহা ছিল নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা। প্রতি পরগণার দেওয়ানী বিচারের ভার ছিল আমীনদের উপর; আর ফৌজদারী বিচারের ভার ছিল কাজী ও মীর আদলের উপর। আইনের চক্ষে সকলেই ছিল সমান; জাতি, ধর্ম বা ব্যক্তির মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য করা হইত না। তবে দণ্ডবিধি সাধারণত কঠোর ছিল। গ্রাম-পঞ্চায়েত দ্বারা দেওয়ানী মামলার নিষ্পত্তি করিতে দেওয়া হইত।
শেরশাহের ধর্মনিরপেক্ষতা
(৭) ধর্মনিরপেক্ষতা : শেরশাহ্ তাহার শাসনব্যবস্থাকে প্রজামঙ্গলকামী ও নিরপেক্ষ করিয়া গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। পথের ধারে হিন্দু ও মসুলমান সকলের জন্য সরাইখানা নির্মাণ, রাস্তার ধারে বৃক্ষরােপণ, ঘােড়ার পিঠে ডাকচলাচলের ব্যবস্থা প্রবর্তন তাহারই সাক্ষ্য দেয়। শেরশাহের ধর্মমত সম্বন্ধে মতভেদ থাকিতে পারে; কিন্তু এ কথা সত্য যে, নিজে নিষ্ঠাবান মুসলমান হওয়া সত্বেও তিনি পরধর্মসম্বন্ধে উদার মনােভাব গ্রহণ করিয়াছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা উলেমাদের পরামর্শ গ্রহণ প্রয়ােজন মনে করিতেন না। রাজনীতি হইতে তিনি ধর্মকে বিচ্ছিন্ন রাখিতেই সচেষ্ট ছিলেন। তাহার শাসনব্যবস্থায় বহু হিন্দু উচ্চ রাজকর্মচারীর পদে নিযুক্ত ছিলেন। শেরশাহের ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে
ডঃ কানুনগাের মন্তব্য বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তাহার কথায় “হিন্দু ও মুসলমানের সৃষ্ট নূতন ভারতের প্রতীক হিসাবে শেরশাহ্ মধ্যযুগের শাসকদের মধ্যে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়া আছেন।”
সুতরাং একথা নিঃসংশয়ে বলা যায় যে, শেরশাহই ছিলেন প্রথম মুসলমান সম্রাট যিনি দেশের সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের ভিত্তিতেই আপন শাসনব্যবস্থায় ভিত্তি রচনা করিতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন। তাহার প্রজাহিতৈষী ও অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ধর্মীয় উদারতা আকবরের ‘রাষ্ট্রীয়নীতির ভিত্তি রচনা করিয়াছিল। অনেকে শেরশাহকে ভবিষ্যৎ মােগল সাম্রাজ্যের যথার্থ প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া গণ্য করেন, কারণ তিনি মােগল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক সংগঠনের ভিত্তি রচনা করিয়া যান। স্মিথ যথার্থই মন্তব্য করিয়াছেন যে, শেরশাহ্ আরও কিছুকাল জীবিত থাকিলে, মােগলগণ পুনরায় ভারতের ইতিহাসে আবির্ভূত হইতে পারিত না।
শেরশাহের কৃতিত্ব নির্ণয় কর