প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর বাংলা দশম শ্রেণি Teacj Sanjib

 প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর বাংলা দশম শ্রেণি Teacj Sanjib

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর

প্রলয়ােল্লাস

 কাজী নজরুল ইসলাম

 

 প্রলয়োল্লাস কবিতার উৎস, বিষয়বস্তু ,নামকরণের সার্থকতা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

প্রলয়োল্লাস-কবিতার-প্রশ্ন-উত্তর-বাংলা-দশম-শ্রেণি-Teacj-Sanjib

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার উৎস

 

কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত ‘অগ্নিবীণা’ তার প্রথম মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল অক্টোবর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়ােল্লাস’। অবশ্য এটি গীতিকা হিসেবে সমধিক প্রচলিত। অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রলয়ােল্লাস’ কবিতাটি পাঠ্যভুক্ত হয়েছে।

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তু

 

বিষয়-সংক্ষেপ

 

  নতুনের অগ্রদূত কালবৈশাখী আসছে। আসছে তার প্রলয়ংকর ঝড়ের পতাকা উড়িয়ে। সকলে তার জয়ধ্বনি করুক। সে অনাগত। সে প্রলয়-নেশায়নৃত্যপাগল। সে আসছে। সেসমুদ্রপারের ব্রিটিশরাজের সিংহদ্বারে প্রলয়ের ংকর ধাক্কা হেনেছে। মহাকালের রুদ্ররূপে বহু মৃত্যু ঘটিয়ে বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে ভয়ংকর রূপে সে আসছে। আকাশ ঝড়ের ঝাপটায় দোদুল্যমান। জ্বালামুখী সর্বনাশী ধূমকেতু তার চামর ডুলাচ্ছে। বিশ্বপিতার বুকে বিশ্বমাতার রক্তমাখা কৃপাণ দোদুল দোলায় দুলছে। চরাচর অট্টরােলে স্তব্দ।

 

  কালবৈশাখীর নয়নকটাহ দ্বাদশ সূর্যের অগ্নিতাপে তপ্ত। দিগন্তরের কান্না রুদ্ররূপী কালবৈশাখীর পিঙ্গলবর্ণ জটায় লুটিয়ে পড়ছে। তার নয়ন নিঃসৃত জলধারায় (কালবৈশাখীর বর্ষণে) সপ্ত সমুদ্র দুলে উঠছে। বিশ্বমায়ের আসনখানি তার বিপুল বাহুর ওপর পাতা। কালবৈশাখীরূপী প্রলয়ংকর রুদ্রদেবের জয়ধ্বনি উখিত হয়েছে। প্রলয় বুঝি সমাগত। জগৎ জুড়ে তার উপস্থিতি। জরায় মরমর যারা তাদের প্রাণ বিয়ােগ হবে। দুঃখের মহারাত্রির অবসান হবে। উষা আসবে অরুণ হাসি হেসে করুণ বেশে। শিবের জটায় দেখা যাবে শিশু-চাদের অম্লান হাসি। ঘর আলােয় আলােকিত হবে।

 

  কালবৈশাখী মহাকালের সারথি। সে রাতড়িৎ চাবুকে আঘাত হানে। বাজ পড়ার আওয়াজে ও ঝড়-তুফানে তাশ্বের হ্রেষাকন ধ্বনিত হয়। খুরের দাপট তারায় প্রতিহত হওয়ার ফলে তাকাশে ছােটে। অন্ধকার কারাগারে দেবতারা বাঁধা পড়েন যজ্ঞের যুপকাষ্ঠে ও পাষাণ-পে। রথে চড়ে তার আসার ঘর্ঘর আওয়াজ ওই শােনা যায়। ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়া নিরর্থক। প্রলয় তাে আসে নবসৃষ্টির ব্যথা-বেদনা নিয়ে নিপ্রাণ কুৎসিত ও কদর্যতাকে ধ্বংস করার জন্য প্রলয়রূপী নবীড়ে, আবির্ভাব। ধ্বংসের বাহক হয়েও তার মুখে মধুর হাসি। সে আছে চিরসুন্দরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে। ভাঙা-গড়া, ধ্বংস ও সৃষ্টি না স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, তাকে কী জন্য ভয়? তার জয়ধ্বনি করে প্রদ, জ্বেলে সানন্দে বরণ করে নেওয়া হােক। মনে রাখতে হবে ভারত বেশে আসছে সুন্দর। তাকে জয়ধ্বনি করে স্বাগত জানানাে হােক।

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার নামকরণের সার্থকতা

 

নামকরণ

 

‘প্রলয়ােল্লাস’ প্রকৃতপক্ষে কবিতা নয়, গান। এটি কবি নজরুলের ‘নজরুলগীতিকা’ গ্রন্থের একটি উল্লেখযােগ্য গান। গানটি দেশাত্মবােধক।আমাদেরআলােচ্যবিষয়—‘প্রলয়ােল্লাস’ নামকরণ কতখানি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।

 

প্রলয় কথাটির অর্থ ধ্বংস। উল্লাস কথার অর্থ আনন্দ। অর্থাৎ, প্রলয়জনিত যে উল্লাস, তা-ই প্রলয়ােল্লাস। সচরাচর প্রলয় দেখে উল্লাস আসে না। কিন্তু কবি প্রলয়ের নানা রূপচিত্র দেখিয়েছেন এবং উল্লাসের যুক্তিও দেখিয়েছেন।

 

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলনের উদ্দাম কালবােশেখি ঝড় প্রলয়-নেশার নৃত্যে পাগল। সিন্ধুপারের ব্রিটিশরাজের সিংহদ্বারে সে ধমক হেনে আগল ভাঙছে। ধরেছে মহাকালের চণ্ডরূপ। বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে ভয়ংকর রূপে আসছে। তার কৃয় কালাে কেশের ঝাপটায় আকাশকে দোলাচ্ছে। ধূমকেতু চামর দুলাচ্ছে। বিশ্বপিতার বুকে সে বিশ্বমাতার রূপ ধরেছে। হাতে রক্তমাখা খঙ্গ দোদুল দুলছে।

 

তার ভয়াল চোখের কটায় দ্বাদশ রবির অগ্নিজ্বালা। পিঙ্গল জটায় দিগন্তরের কান্না লুটাচ্ছে। অশুর বিন্দুতে সাতসাগর দোল খাচ্ছে। জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনাচ্ছে। মহাকালের সারথিরূপে সে রক্তবর্ণ বিদ্যুতের চাবুক হানছে। বজে, ঝড়-তুফানে কাঁদছে হ্রেষা খুরের দাপটে নীলাকাশে ছুটছে উল্কা। তার আগমনের রথঘর্ঘর এই শােনা যায়।

 

কবির যুক্তি, ধ্বংস দেখে ভয় নয়। প্রলয় নতুন সৃজনের জন্যই নবীন আসছে অসুন্দরকে ছিন্ন করতে। প্রলয় বয়েও চিরসুন্দহে মধুর হাসিটি। ভাঙাগড়াটা তারই খেলা। কাল-ভয়ংকরের বে আসছে সে। আসল লক্ষ্য, স্বাধীনতা লাভ। তার সম্ভাব্য আনউেক উল্লাস— জয়ধ্বনি। 

 

কবিতায় প্রলয়ের নানা চিত্র এবং উল্লাসের অকাট্য যুক্তি ও তুলে ধরা হয়েছে। তাই প্রলয়ােল্লাস’ নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর:

প্রলয়োল্লাস কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

 

বড় প্ৰশ্ন

 

প্রশ্ন) ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতাকে লক্ষ্য করে মহাকালতত্ত্ব ও কালবােশেখির ঝড়ের সাদৃশ্যটি আলোচনা করাে। অথবা, কবিতায় কবির মূল বক্তব্যকে ছাপিয়ে মহাকাল-তত্ত্বই প্রাধান্য পেয়েছে–আলােচনা করাে। অথবা, কবিতায় মহাকাল-তত্ত্ব প্রাধান্য পেলেও মূল বক্তব্যের ক্ষতি হয়নি—আলােচনা করাে।

 

অথবা, কবিতায় স্বাধীনতা লাভের প্রবল প্রেরণাটি কালবােশেখি র ঝড় ও মহাকালের ধ্বংসাত্মক ও সৃজনাত্মকক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে, আলােচনা করাে।

 

 উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নজরুলগীতিকা’গীতিকাব্যের অন্তর্গত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় মহাকাল-তত্ত্ব সংগতভাবেই বিন্যস্ত করেছেন। বাহ্যত, কালবােশেখি ঝড়ের ধ্বংস ও সৃষ্টিশীল রূপটি বিস্ফোরণে উল্লসিত হয়েছে।

 

কিন্তু কবির মূল লক্ষ্য যে দেশের স্বাধীনতা অর্জন, সেজন্য মুক্তিকামীদের প্রতি তার দুর্দম প্রেরণা দান কবিতার ছত্রে ছত্রে আগুনের মতাে ছড়িয়েছে।

 

মহাকালের ধ্বংসশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা কবি প্রকাশ করেছেন কালবােশেখি ঝড়ের উদ্দামতার মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে, ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আনবার জন্য আন্দোলনকে অগ্নিগর্ভ করে তুলেছিলেন। তাকে কবি এখানে আরও বেগবান করে দিয়েছেন।

 

তখন শােষক ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্যে  বিড়ম্বনার অন্ত ছিল না। এজন্য কবিকেও বারবারদণ্ড পেতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও নির্ভীক কবি এখানে বেপরােয়া হয়ে উঠেছেন। 

 

মােট কথা, দুর্ধর্ষ মহাকাল, উদ্ধত কালবােশেখির ঝড় এবং প্রবল স্বাধীনতা আন্দোলন- তিনে মিলে আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরণ করেছে।

 

মহাকাল এখানে প্রলয় নেশায় নৃত্যপাগল। জগৎ জুড়ে যে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে, সেটা ঘটাবেন মহাকাল। তিনিই এখানে রথী। তিনিই এখানে ধ্বংস ও সৃজনের দেবতা। এই ঝড়নূতনের পতাকা ওড়াচ্ছে। বজশিখার মশাল জ্বেলে আসছে। তার নয়ন কটায় বারাে সূর্যের ( আগুন। তার বজ, তার ঝড়-তুফান ইত্যাদি ধ্বংস ঘটিয়ে নতুন বৃষ্টির সৃষ্টি আনছে। ইংরেজ রাজদরবারে হানা, অন্ধকারায় যূপকাষ্ঠে বাঁধা পড়া ইত্যাদি ধ্বংসমূলক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আনবার নতুন সৃষ্টি এর লক্ষ্য।

 

অতএব উক্ত তিনের সমাবেশে ধ্বংস ও সৃষ্টি-সম্ভাবনার মহাকাল-তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হলাে স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তপ্ত প্রেরণা জোগানাে।

 

প্রশ্নঃ।। “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?’-কবি কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? তিনি ধ্বংস দেখেও ভয় না করতে বলেছেন কেন?

 

উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় জড়ত্বগ্রস্ত, পরাধীন, মুমূর্ষায় ভারতবাসীকে শৃঙ্খলমুক্তির বাণী শুনিয়েছেন। কবি বলেছেন, প্রলয় আসছে ভয়ংকরের বেশে। সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে আঘাত হেনে আগল ভেঙেছে সে। বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে অট্টহাসি হাসতে হাসতে তার আগমন ঘটছে। বড়াে বিধ্বংসী তার রূপ। তার অট্টহাসির হট্টগােলে চরাচর স্তব্ধ হয়ে গেছে। জয় প্রলয়ঙ্কর!’ ধ্বনি তুলে জগজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে তােলার সংকল্পে তার ভয়ংকর আগমনে ভীত-সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। তাদের ভয় দূর করে কাল ভয়ংকরের জয়ধ্বনিতে মুখরিত করতে কবির এই উক্তি।

 

ধ্বংস দেখেও কবি ভয় না করতে বলেছেন ভয়ার্ত কাল-ভয়ংকরের এই ধ্বংসলীলা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণােদিত। পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ আত্মশক্তিহীন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, জড়ত্বগ্রস্ত ভারতবাসী মুমূষুপ্রায়। ভারতের সমাজ-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে কাল-ভয়ংকরের ধ্বংসলীলা একান্ত আবশ্যক। ভয়ংকর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নব প্রাণশক্তির জাগরণ। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে যেভাবে চৈত্রের চিতাভস্ম উড়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায় জরাজীর্ণ যা কিছু তৈরি হয় নতুনের পটভূমি; জাগে নব প্রাণ সে ভাবেই মুমূর্ষ ভারতবাসী লাভ করবে নবযৌবনের তেজ। কাজেই ধ্বংসেই নিহিত নবতর সৃষ্টির ইঙ্গিত। ধ্বংস আপাত ভয়ের হলেও বস্তুত ভয়ের বিষয় নয়। তাই কবি ধ্বংস দেখেও ভয় না করতে বলেছেন। 

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর:

প্রশ্ন ।। ‘কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর।’-কাল-ভয়ংকরের পরিচয় দাও। কীভাবে তিনি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন বলে কবি মনে করেন? 

 

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় । ধ্বংসাত্মক বৈপ্লবিক শক্তির অভ্যুত্থানকে কাল-ভয়ংকরের ভয়ংকর তাণ্ডবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ব্যঞ্জনাগর্ভ কাব্য ভাষায় বর্ণনা করেছেন কাল-ভয়ংকরের রূপ। কবিরবর্ণনায় নূতনের কেতন উড়িয়ে কালবােশেখিরমতােতার আগমন ঘটছে। হাতে তারবজশিখারমশাল। অনাগত প্রলয়-নেশায় সে নৃত্য-পাগল। মুখে তার ভয়ংকর হাসি। তার নয়ন কটাক্ষে দ্বাদশ রবির বহ্নি জ্বলছে। দিগন্তের ক্রন্দন লুটিয়ে পড়েতারপিঙ্গল জটায়। তার একবিন্দুনয়নজলে দুলে ওঠেসপ্তসিন্ধু। কণ্ঠেতার‘জয় প্রলয়ংকরধ্বনি। সে মহাকাল-সারথি।তার রক্ত-তড়িৎ চাবুকের আঘাতে হ্রেষার কঁাদন জাগে ঝড়-তুফানের বজ্রগানে। তার রথাশ্বের ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে নীল খিলানে উল্কা ছােটে। মহাকালের এই কাল- ভয়ংকর রূপ দেখে চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায়।

 

কবি সুন্দরের পূজারি। কাল-ভয়ংকরের তাণ্ডবে তিনি মােটেই শঙ্কিত নন। বরং তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। ভয়ংকরতার আড়ালে থাকা সুন্দরকে তিনি দেখেছেন। তাই তার আগমনে ভীত-সন্ত্রস্ত জাতিকে মাভৈঃ মন্ত্র শুনিয়ে তিনি বলেন— ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?’। ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ধ্বংস শুধু ধ্বংস নয়, এতে আছে সৃষ্টির প্রেরণা। ধ্বংস এবং সৃষ্টি চিরকাল পাশাপাশি। ধ্বংসেই আছে নবতর, সুন্দরতর সৃষ্টির বার্তা। তাই প্রলয় ডেকে এনেও মহাকালের মুখে মধুর হাসি। ধ্বংসের ধাক্কায় এই জাতির ভীরুতা, দুর্বলতা, দাসত্ব ঘুচে যাবে। দূর হয়ে যাবে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মান্ধতা।নব প্রাণশক্তিতে জাগবে গােটা জাতি। আলােকময় হবে জীবন। ভাঙা-গড়া তাে চিরসুন্দরের সুন্দরতর সৃষ্টিরই একটা প্রক্রিয়া মাত্র। 

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ক্লাস টেন

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর:

প্ৰশ্ন।। ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে যে চিরসুন্দর!’ —প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা অবলম্বনে উদ্ধৃত চরণটির মর্মার্থ নিজের ভাষায় লেখাে।

 

অথবা, ‘ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর ? -কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ভাঙা-গড়া খেলার কোন্ রূপকে ফুটিয়ে তুলেছেন?

 

উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় নূতনের কেতন উড়িয়ে ভয়ংকর কালবৈশাখীর আগমন বার্তা ঘােষণা করেছেন। শুনিয়েছেন ধ্বংসযজ্ঞের শঙ্খধ্বনি। মহাকালের চণ্ড রূপ ধারণ করে বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে ভয়ংকরের আগমন ঘটছে। প্রলয়ের নেশায় সে নৃত্য-পাগল। সৃষ্টির স্থিতিকে বিনষ্ট করার খেলায় মেতে বিকট হাসি হাসছে সে। তার হাসির অট্টরােলের হট্টগােলে চরাচর স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার নয়ন কটাক্ষে দ্বাদশ রবির বহ্নি জ্বলছে। তার একবিন্দু নয়নজলে সপ্ত মহাসিন্ধু দুলে উঠছে। ‘জয় প্রয়লংকর’ ধ্বনি তুলে ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছে সে। জরায়-মরা মুমূর্যদের ধ্বংস করে সে এগিয়ে চলেছে।

 

এই ধ্বংসযজ্ঞের মহাকাল-সারথিকে, মহারুদ্রের তাণ্ডবকে কবি নির্ভীক কণ্ঠে স্বাগত জানিয়েছেন। ভীত-সন্ত্রস্ত জাতিকে মাভৈঃ বাণী শুনিয়ে বলেছেন—‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?’ ধ্বংস দেখে ভয়ের কিছুই নেই। প্রলয়ে আছে নব সৃষ্টিরই বেদনা।  জীবনহারা অসুন্দরকে বিদায় জানিয়ে সুন্দরের আসন সাজাতে গেলে ধ্বংসকে স্বাগত জানাতেই হবে। ধ্বংস যে শুধু ধ্বংস নয়, এ যে ভাঙা-গড়ার খেলা। সৃষ্টির ঊষা লগ্ন থেকে এই খেলা চলছে। তাই তাে প্রলয় বয়ে এনেও মহাকালের মুখে মধুর হাসি। মহাকাল যে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক। যে ভাঙছে সে-ই গড়বে আরও সুন্দরতর করে। এই ভাঙা-গড়া চিরসুন্দরের সুন্দরতর সৃষ্টিরই একটা প্রক্রিয়া মাত্র। এই ভাঙা-গড়া খেলার প্রবাহেই ভেসে যাবে। ঔপনিবেশিকদের শােষণ জাল, ভেসে যাবে পুরাতন জরাজীর্ণ লােকাচার, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ভীরুতা, দুর্বলতা, দাসত্ব। তাই নির্ভীক কণ্ঠে সকলকে তার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি। বধূদের প্রদীপ তুলে ধরে তাকে স্বাগত জানাতে বলেছেন।

 

প্রশ্ন।। ‘অন্ধ কারার বদ্ধ কূপে/দেবতা বাঁধা যত্রশূপে –‘অন্ধ কারার বদ্ধ কূপে’ কথাটির অর্থ কী? ‘দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-শূপে’ কথাটি বিশ্লেষণ করাে।

 

উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি উৎকলিত হয়েছে।

 

বিপ্লবের প্রতি আস্থাশীল কবি ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে কথাটি যথেষ্ট তাৎপর্যবহ অর্থে ব্যবহার করেছেন এখানে। ব্রিটিশ নৈরাজ্যবাদের প্রতিবাদে কবিতা লিখে, দেশের বৈপ্লবিক শক্তিকে উৎসাহদানের অপরাধে কবি স্বয়ং কারাবরণ করেছেন কয়েক বার। কারাগার ছিল শােষণমূলক ব্রিটিশ শাসনের প্রধানতম হাতিয়ার। দেশের মুক্তি সংগ্রামীদের, ব্রিটিশ অপশাসনের প্রতিবাদীদের নির্বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ করতেন তারা। আর এই কারাগারগুলি ছিল বন্ধ কূপের মতাে অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখানে স্নান-প্রাতঃকৃত্যের ব্যবস্থা ছিল নিকৃষ্টমানের। দেওয়া হতাে নিকৃষ্টমানের খাদ্য। সেই সঙ্গে অকথ্য অত্যাচার চলত বন্দিদের ওপর। এককথায় জেল জীবন ছিল নরকের দুঃস্বপ্ন। কত বন্দির অসহায় মৃত্যু ঘটেছে এখানে। –

 

বিপ্লবের প্রতি আস্থাশীল কবি ভারত তথা বিশ্বের মুক্তি সংগ্রামীদের আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতেন। নানান সুরে, ছন্দে, কবিতায়, গদ্যে তাদের বন্দনাগান গেয়েছেন বারবার। দেশের মুক্তি সংগ্রামীদের তিনি দেবতুল্য গণ্য করেন। পরাধীন দেশবাসীর দারিদ্র-দুঃখ-কষ্ট-লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাজি রেখে যারা বিপ্লবের কণ্টকময় পথে চলেন তারা মানবের বেশে দেবতা। এই দেবতারা ব্রিটিশদের কারাগারে যজ্ঞ-শূপে আবদ্ধ পশুর মতাে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দিন কাটান। বস্তুত এখানে প্রহসনমূলক বিচারে বিপ্লবীদের ফাঁসি কাঠে ঝােলানাের বিষয়কে বুঝিয়েছেন কবি। দেবতাদের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যূপকাষ্ঠে পশুবলি দেওয়া হয়, কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে বলি দেওয়া হয় দেবতাদেরই।

 

প্রশ্ন ।।. এবার মহানিশার শেষে/ আসবে উষা/অরুণ হেসে/ করুণ বেশে!’—‘মহানিশার শেষে’ কথাটির মাধ্যমে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন? উষার অরুণ হেসে আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করাে। 

 

 উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত ‘মহানিশার শেষে’ কথাটি যথেষ্ট তাৎপর্যবহ। মহানিশা হলাে এক দীর্ঘ তমসাময় অধ্যায়। ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে দীর্ঘ দুশাে বছর ধরে ভারতবাসীরা ছিল তিমিরাচ্ছন্ন। | শােষণমূলক সাম্রাজ্যবাদী শাসনে অন্যায়-অবিচার-উৎপীড়ন চলত বল্পাহীনভাবে। শাসকের নিদারুণ নৃশংসতায় সন্ত্রস্ত ভারতবাসী যাবতীয় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে দুর্বল, দৈবশক্তিনির্ভর এক দাসত্বসুলভ মানসিকতা অর্জন করেছিল। ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, আলস্য, উদ্যমহীনতা গতিহীন করে তুলেছিল জীবনধারাকে। আশা-স্বপ্নহীন এক নিদারুণ দুঃস্বপ্নের দিন যাপন করত দেশবাসী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে বিপ্লবী শক্তির উত্থানের মধ্যে কবি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের ইঙ্গিত পেয়েছেন।

 

ইতিহাস সচেতন কবি দেখেছেন ঔপনিবেশিক শােষণক্লিষ্ট দেশগুলিতে বৈপ্লবিক শক্তির জাগরণ ঘটছে। সিন্ধুপারের সিংহদ্বারেও আঘাত হেনে চলেছে বিপ্লবী বীর সন্তানেরা। শােষিত বঞ্চিত, অত্যাচারিত, অপমানিত মানুষগুলি মুক্তি আন্দোলনে কোমর বেঁধেছে। দিনকে দিন তীব্রতর হচ্ছে আন্দোলনের গতি। শােষণমূলক ঔপনিবেশিক শাসনের বজ্রমুষ্টি শিথিল হয়ে আসছে। মুক্তি আন্দোলনের তীব্র প্রবাহে এবার খড়কুটোর মতাে ভেসে যাবে ব্রিটিশশক্তিরশাসনযন্ত্র।পরাধীন ভারতবর্ষস্বাধীনহবে।ঔপনিবেশিক শাসনের তমসাময় অধ্যায়ের শেষে ঘটবে অরুণােদয়। জাতির জীবনে – নব প্রাণস্পন্দন আসবে। রচিত হবে আত্মবিকাশের পটভূমি। অরুণের » প্রশান্ত হাসিতে উজ্জ্বল ঝলমলে একটা সকাল আসবে।

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর:

প্রলয়োল্লাস কবিতার সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর

 

কাল-এই রুদ্র মূর্তি। অপ্রতিহত, অগ্নিগর্ভ বৈপ্লবিক অভুথানকে কবি মহাকালের রুদ্র সৃষ্টির রূপকে উপস্থাপিত করেছেন এখানে।

 

– প্রশ্ন)  ‘ দিগন্তরের কঁাদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!’- বুঝিয়ে লেখাে।

 

– উত্তর : রােদে, মেঘে, ঝড়ে, বিদ্যুতে কালবােশেখি – মহাকালের জটা ধূলিধূসর। হলুদ-নীলাভ পিঙ্গল তার রং। আকাশের রং তখন এমনই হয়। ঝড়ের (নাচের) দাপটে উন্মত্ত জটা। [তুলনীয়— ‘প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে,/হে নটরাজ, জটার বাঁধন পড়ল খুলে।’] কিন্তু কালবােশেখির চাবুক খেয়ে দুই দিগন্তের কান্না এসে জটায় লুটিয়ে পড়ে। বিশ্ব পরিবেশ ‘রক্ষে করাে’আর্তিতে মিনতি জানায়। তখন মহাকালের জটা নিজের রূপে নিজেই ভয় পেয়ে যায়।

 

প্রশ্ন ) সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে’– কীভাবে দোলে ব্যাখ্যা করাে।

 

উত্তর : সাত মহাসাগর আয়তনে ও গভীরতায় বিশাল। সেই সাগরে দোল ওঠে জোয়ারভাটায়, ঝড়ে ঝায়। সেও এক বিশাল ব্যাপার। কিন্তু যিনি স্রষ্টা, তিনি ‘অপােরণীয়া, মহতাে মহীয়ান’– অর্থাৎ তিনি অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র, আবার মহতের চেয়েও মহৎ। শাস্ত্রে আছে তার বিশালতার চারপাদের একপাদে মাত্র গ্রহনক্ষত্রাদির বৃহৎ ব্ৰত্মাণ্ডের অবস্থান। কবি-কল্পনায় সেই স্রষ্টার অনুকম্পার অশ্রুবিন্দুতে তার কপােলতলে সাত মহাসমুদ্র দুলে ওঠে। কালবােশেখির তথা মহাকালের মাহাত্ম প্রসঙ্গে এমন আধ্যাত্মিক অবতারণা। –

 

প্রশ্ন ।। ‘বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর মর্মার্থ লেখাে।

 

উত্তর : বিশ্বপিতা সর্বশক্তিমান। আবার সর্বশক্তি হলেন বিশ্বমাতা। কাজেই বিশ্বমাতার শক্তিতে বিশ্বপিতা শক্তিমান। এও ঠিক যে, একই আধারে দুয়ের মহামিলন। সাংখ্যদর্শনের মতে পুরুষ নির্গণ, কর্তা, দুষ্টা। প্রকৃতি তাকে চালিত করেন। অর্থাৎ, প্রকৃতি-চালিত পুরুষ তখন জগতের নিয়ন্তা। এখানে বিশ্বমাতা করালবদনা শ্যামা তার হাতে রক্ত-খঙ্গ দুলছে দুষ্টকে নিধন করবেন বলে। তিনিই রয়েছেন বিরক্ষকের (বিশপতার) বক্ষ-কোলে। বলা যেতে পারে, অত্যাচারী শােষকের সাজা হবেই। তিনি সাজা দেবেন, তিনি জাগ্রত মহাশক্তি। 

 

প্রশ্ন>) ‘জরায়-মরা মুমূষুদের প্রাণ-লুকানাে ওই বিনাশে।’—অংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

 

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ধ্বংস ও সৃষ্টির শাশ্বত বার্তাটিই নবরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

কবি ধবংসাত্মক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানকে মহাকালের প্রলয়ংকর মূর্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। মহাকাল একাধারে ধ্বংসকারী এবং সৃষ্টিকর্তা। তার তাণ্ডবে জরাজীর্ণ যা কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়ে নব প্রাণশক্তিতে জেগে ওঠে। দীর্ঘকালের ঔপনিবেশিক শাসনে শােষিত-বঞ্চিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, দুর্বল, আত্মবিশ্বাসহীন, মৃতপ্রায় ভারতবাসীদের ধ্বংস করে নব প্রাণশক্তিসম্পন্ন, তেজোদ্দীপ্ত করে তুলবে বিপ্লব। শেখাবে প্রবলভাবে বাঁচার মন্ত্র।

 

প্রশ্ন ) ‘এবার মহানিশার শেষে / আসবে উষা অরুণ হেসে’–মহানিশা কী? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন? 

 

উত্তর : ‘মহানিশা’ শব্দটির সরলার্থ হলাে গভীর রাত্রি। তবে এখানে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে শােষণ-বঞ্চনা, অন্যায়-অত্যাচার, অবজ্ঞা-অবিচার, আশা-স্বপ্নহীন, নৈরাজ্যময় ঔপনিবেশিক শাসনের অন্ধকারময় অধ্যায়কে বােঝাতে।

 

– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসন-মুক্তির যে আন্দোলন ভারত তথা গােটা বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছিল তা দেখে কবি আশাবাদী। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসনের অন্ধকারময় অধ্যায়ের অবসান ঘটতে চলেছে। শােষিত, বঞিত, নিপীড়িত, হতাশ, অসহায়, দুর্বল মানুষগুলির দুঃস্বপ্নের দিন শেষ হয়ে আসছে। পরাধীন জাতিগুলি এবার স্বাধীনতা লাভ করবে। তারা নিজের সভ্যতা-সংস্কৃতি নিয়ে, নিজের ছন্দে, শােষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে বাঁচবে।

 

প্রশ্ন ) ওই স্তব্ব চরাচর!’- চরাচর স্তন্ধ কেন?

 

উত্তর : চরাচর – বিশ্বজগতের জঙ্গম ও স্থাবর স্তব্ধ— বিস্ময়ে হতবাক। সে ওই কালবােশেখির- মহাকালের ভারতবর্ষের মুক্তি আন্দোলনের ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক রূপ।

 

কালবােশেখির বজ্রশিখায়, কালাে কেশের ঝাপটায়, ধূমকেতুর চামর ঢুলানােয়, চোখের বারাে সূর্যের আগুনে, সপ্ত মহাসিন্ধুর দোলায়, রক্ত-তড়িৎ চাবুকে, বজ্রগানে, ঝড়-তুফানে, অশ্বখুরের দাপটে উদ্ধা ছােটানােয় মহাকালের চণ্ড-রুপে, বিশ্বমায়ের হাতের দোদুল রক্ত কৃপাণে, রথঘর্ঘর—ভারতবর্ষের মুক্তি আন্দোলনের আগুন ঝরানাে জনরােষে—অট্টৱােলে হট্টগােলে চরাচর বাক্যহারা।

 

প্রশ্ন ।। ‘আসছে নবীন-জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!’ –উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখাে। 

 

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’কবিতা থেকে উধৃত এই অংশে চির নবীন বৈপ্লবিক শক্তির আগমনবার্তা ঘােষণা করা হয়েছে।

 

বিপ্লব আসছে কালবৈশাখীর বেশে, প্রলয়ংকর মহাকালের মুর্তি ধারণ করে। মহাকাল একই আধারে সংহারক এবং সৃষ্টিকর্তা। সে ধবংস করে সুন্দরতর সৃষ্টির প্রয়ােজনে। তার ধ্বংসের মধ্যেই আছে নব সৃষ্টির ঘােষণা। দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শােষণ-শাসনে আত্মশকিহীন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, জরাজীর্ণ, মৃতপ্রায় জাতিটিকে কবি এককথায় অ-সুন্দর বলে উল্লেখ করেছেন। এই অ-সুন্দরকে ধ্বংস করতেই আগমন ঘটছে নবীনের। তার এই ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে 1 জীবনহারা, অ-সুন্দর লাভ করবে নব প্রাণশক্তি।

 

প্রশ্নঃ) ‘আসছে এবার অনাগত’ এবং ‘আসছে ভয়ংকর!’— এই অনাগত ভয়ংকর কে? অনাগতও ভয়ংকরের রূপ আঁকো।

 

: উত্তর : এই অনাগত ভয়ংকর হলাে কালবােশেখি ঝড়ের প্রতীকে ভারতবর্ষের প্রবল স্বাধীনতা আন্দোলন।

 

অনাগত কালবােশেখির ঝড় সমস্ত কিছুকে লন্ডভন্ড করে প্রলয় ঘটানাের নেশায় তাণ্ডব নৃত্যে পাগল। মহাকাল শিবের রুদ্র রূপ। তার। মৃত্যুর তথা ধ্বংসের গহন অন্ধকূপে তার হুংকার অভিযান। ধূম্র মেঘের ধূপে, বজ্রবিদ্যুতের মশাল জ্বালা অগ্নিময় তার রূপ। বস্তুত ভারতবর্ষ স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে সুতীব্র বিস্ফোরণের আকার ধারণ করেছিল।

 

প্রশ্ন ) বিশ্ব পাতার বক্ষ-কোলে’ -এর পৌরাণিক অনুষঙ্গটি লেখাে।

 

উত্তর : সচরাচর দেখা কালীমাতার রূপপ্রতিমা এরকম— শ্মশানে। শায়িত শিব। পরিধানে বাঘের ছাল, সঙ্গে ত্রিশূল, ডমরু ইত্যাদি। ভস্মমাখা অঙ্গ ও কণ্ঠে জড়ানাে উদ্যত ফণা সাপ। তন্ত্রমতে ইনিই বিশ্বপিতা—বিশ্বপাতা—বিশ্বরক্ষক। দৈত্যদলনে রণ-উন্মত্তা বিশ্বমাতাকে প্রশান্ত করবার জন্য স্বয়ং শিব মায়ের চলার পথে শুয়ে পড়েন।

 

দৈবাৎ তাঁর বুকের ওপর একটি চরণ পড়ে মায়ের। হতভম্ব মাতা সসম্ভ্রমে জিভ কেটে দাঁড়িয়ে পড়েন। মায়ের রূঢ় হাতে রক্ত কৃপাণ ঝুলছে। লােল তাঁর জিহ্বা।

 

প্রশ্ন ) ‘দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাদের কর–চিত্রটি স্পষ্ট করাে।

 

উত্তর : দিগম্বর হলেন দিগবসন—নগ্ন শিব। দিকই তার অম্বর, অর্থাৎ বস্ত্র। সময়ে সময়ে আত্মভােলা দেবাদিদেব নিজের অজান্তে নগ্ন হয়ে পড়েন। আবার তিনি যােগীশ্রেষ্ঠ। তাই তাঁর শিরােদেশের চারপাশে সাধনজ্যোতি। তাঁর ওই শিরােদেশ জটাসমূহে আকীর্ণ।ওই জটার পাশে নিয়ত রয়েছেন শিশু- চাঁদ—বালচন্দ্র। জটায় ছড়িয়ে পড়া বালচন্দ্রের জ্যোৎস্না হাস্যময়। হাসিটি আনন্দের ও মঙ্গলের সূচনা করে।

 

| প্রশ্ন ।। ওই যে মহাকাল-সারথি’—মহাকাল কে? তার সারথি কে? তার ভূমিকা কী? 

 

উত্তর : মহাকাল হলেন ত্রিজগতের কালনিয়ন্তা শিব। 

 

তিনি কালকে ভাঙেন, কালকে গড়েন।

 

 মহাকালের রথের সারথি হলেন কালবােশেখি পুরুষ।

 

সারথি চাবুক চালিয়ে রথের ঘােড়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করেন। মহাকালের সারথি পুরুষ কালবােশেখি রক্তবর্ণ বিদ্যুতের চাবুক চালান। বজ্রের গানে আর ঝড়-তুফানে ঘােড়র কান্নার হেষা ওঠে। আর, ঘােড়ার খুরের দাপট তারায় গিয়ে লেগে আকাশের নীল খিলানে উল্কা ছােটায়। রথের সারথির এমনই তীব্র ভূমিকা।

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার সংক্ষিপ্ত ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

 

 

প্রশ্ন ) দেবতা বাঁধা যজ্ঞ কূপে পাষাণ-পে!’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

 

উত্তর : বিপ্লবের প্রতি আস্থাশীল কবি নজরুল ইসলাম ভারত তথা বিশ্বের মুক্তিসংগ্রামীদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। নানাভাবে তিনি তাদেরই বন্দনা গান গেয়েছেন। তার বিচারে মুক্তিসংগ্রামীরা দেবতুল্য। দেশমাতার চোখের জল যাদের কাদায়, দেশের দুঃখ -দারিদ্র্য, অপমান সহ্য করতে না পেরে যাঁরা প্রাণঘাতী যুদ্ধে নামেন, তাদের প্রতি বড়াে নির্দয় ব্যবহার করেন। শােষক ঔপনিবেশিকরা। তাদের বন্দি করে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেন। বিচারের নামে প্রহসন চালিয়ে তাঁদের ফঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেন। কারাগারে পাষাণ-ক্রুপে চলে এই অপমানকর নির্মমতা।

 

প্রশ্ন ।।  ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় কবি ধ্বংস দেখেও ভয় না পেতে বলেছেন কেন?

 

উত্তর : কাল-ভয়ংকরের প্রলয়ংকর মূর্তি ভয়ানক-ভীতিপ্রদ। ধ্বংসের খেলা খেলতে খেলতে তার আগমন ঘটছে। দিকে দিকে ফুটে উঠেছে তার ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক আবির্ভাবের সংকেত। এই অবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত দেশবাসীকে সৃষ্টির শাশ্বত বাণী শুনিয়ে আশ্বস্ত করেছেন কবি। ধ্বংস শুধুই ধ্বংস নয়, ধ্বংসের নেপথ্যে আছে। সুন্দরতর সৃষ্টির আশ্বাস। ধ্বংসের বেদনার মধ্যেই আছে নবতর সৃষ্টির আনন্দ। জীবনহারা অ-সুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরের আসন সাজাবে ধ্বংসের অধীশ্বর। কাজেই ধ্বংসকে দেখে ভয় পাওয়ার কোনাে হেতু নেই।

 

প্রশ্নঃ।। ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে’-নূতনের কেতন কী? কথাটিতে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন? 

 

উত্তর : ‘কেতন’ শব্দের অর্থ পতাকা। সুতরাং ‘নূতনের কেতন’ কথাটির অর্থ দাঁড়ায় নতুন দিনের পতাকা অর্থাৎ, আসন্ন শুভ দিনের ইঙ্গিত।

 

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শােষণ-শাসনের দীর্ঘ অন্ধকারময় অধ্যায়ে শােষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, অসহায় ভারতবাসী যাবতীয় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হতাশ এবং দুর্বল হয়ে পড়েছিলে। ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার নষ্ট করেছিল তাদের জীবনীশক্তি। বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নব প্রাণশক্তিতে জেগে উঠবে ভারতবর্ষ। আসবে নতুন দিন। অবসান ঘটবে জড়তা, দাসত্ব, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের। ভারতবর্ষের এই আশা, স্বপ্নময় দিনেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন কবি।

 

প্রশ্নঃ।।  ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!’—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

 

উত্তর : কবিকাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’কবিতা থেকে উধৃত এই অংশের সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে’ কথাটি যথেষ্ট ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ।

 

ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করতে যে বৈপ্লবিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বহিবিশ্বে এমনকি ইংল্যান্ডের বুকে আক্রমণ হেনেছেন বিপ্লবীরা। কবি সে কথাই বলেছেন। আবার এও হতে পারে ‘ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে’ বলতে কবি আন্দামানের সেলুলার জেলের কথা বলেছেন। বিপ্লবীরা সেই ছেলের প্রধান ফটক ভেঙে ফেলেছিল। সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরাট সাড়া ফেলেছিল এই ঘটনা। যাইহােক, এখানে কবির মূল বক্তব্য বিপ্লবীরা অকুতােভয়, প্রয়ােজনে দেশের তথা বিশ্বের যে-কোনাে স্থানে তারা আঘাত হানতে পারেন।

 

প্রশ্ন)  ‘তােরা সব জয়ধ্বনি কর!’—কবি কাদের, কেন জয়ধ্বনি করতে বলেছেন? 

 

উত্তর : প্রলয়ােল্লাস’কবিতায় পরাধীন ভারতবর্ষের ঔপনিবেশিক শাসন-শােষণের শিকার,অবজ্ঞাত, অত্যাচারিত মুক্তিকামী সন্তানদের কাল-ভয়ংকরের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি।

 

নতুনের কেতন উড়িয়ে কালবৈশাখীর বেশে কাল- ভয়ংকরের আবির্ভাব ঘটছে। মহাকালের চণ্ডরূপ ধারণ করে বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে ভয়ংকর হাসি হাসতে হাসতে মহাপ্রলয়ের বেশে তার আগমন। জরায়-মরা মুমূর্ষদের ধ্বংস করে, পরাধীনতার শৃঙ্খল মােচন করে নব প্রাণশক্তিতে ভরপুর নতুন ভারতবর্ষ গড়ে তুলবে সে। তাই তার ভয়ংকর রূপে ভীত না হয়ে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি।

 

প্রশ্ন)  ‘বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর ভয়ংকর কে? তার আসার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

 

উত্তর : প্রলয়ােল্লাস’কবিতা থেকে গৃহীত এই অংশে ‘ভয়ংকর বলতে কবি বৈপ্লবিক শক্তির অভ্যুত্থানকে বুঝিয়েছেন। এই শক্তিকে তিনি মহাকাল, মহাকাল-সারথি, কাল-ভয়ংকর ইত্যাদি বিশেষণেও বিশেষিত করেছেন।

 

‘বজশিখা’ শব্দটির মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছেন, প্রচণ্ড উগ্র তেজের কথা এবং ‘মশাল’ শব্দটিতে দুঃসাহসিক অভিযানের একটা ইঙ্গিত আছে। মােট কথা শােষিত, বঞিত, উৎপীড়িত, অসহায়, দুর্বল, জরায়-মরা মুমূর্ষ প্রায় ভারতবাসীকে রক্ষা করতে প্রচণ্ড উগ্র তেজে, দুঃসাহসিকভাবে এগিয়ে আসছে ভয়ংকর, সেই ইঙ্গিতটাই এখানে স্পষ্ট। তার আগমনে উড়বে নূতনের কেতন। ধ্বংসের মধ্য থেকে সুন্দরতর সৃষ্টির পটভূমি তৈরি হবে।

 

প্রলয়োল্লাস কবিতার ছোট প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ।।  ‘জয় প্রলয়ঙ্কর। প্রলয়ঙ্কর কে? তাঁর জয় চাওয়া হয়েছে কেন?

 

উত্তর : যিনি প্রলয় ঘটান তিনি প্রলয়ঙ্কর। এখানে কালবােশেখি হলাে প্রলয়ঙ্কর। সে পুরাতনকে ধ্বংস করে চিরসুন্দর নুতনের প্রতিষ্ঠা করে। তাই তার জয় চাওয়া হয়েছে।

 

প্রশ্ন ।। কে প্রলয়-নেশায় নৃত্য-পাগল হয়েছিলেন? 

 

উত্তর : মহাকাল শিব প্রলয়-নেশায় নৃত্য-পাগল হয়েছিলেন। 

 

প্রশ্ন  ‘হাসছে ভয়ংকর! ভয়ংকর হাসছে কে? 

 

উত্তর : সৃষ্টি তথা জয় সম্ভাবনার উল্লাসে ভয়ংকর হাসছে। 

 

প্রশ্নঃ।। কীভাবে প্রলয় ঘনিয়ে আসে? 

 

উত্তর : ওই বিনাশে, অর্থাৎ, জরায়-মরা মুমূর্যদের প্রাণ-লুকিয়েদেওয়া ধ্বংসাত্মকতায় জগজুড়ে এবার প্রলয় ঘনিয়ে আসে।

 

প্রশ্ন)‘তােরা সব জয়ধ্বনি কর!’—কবি কাসে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?

 

উত্তর : যে বিপ্লবী শক্তি কালবৈশাখীর মতাে ভয়ংকর কি, মহাদেবের মতাে রুদ্রমূর্তি ধরে এদেশের ইংরেজ শাসনের ঘটাবে, কবি তার উদ্দেশ্যে পরাধীন দেশবাসীকে জয়ধ্বনি বলেছেন।

 

প্রশ্ন ) দিগম্বরের জটায় কে হাসে? তাতে কী হবে? 

 

উওর : দিগম্বর শিবের জটায় শিশু-চাঁদের জ্যোৎস্না হাসে। তাতে ঘর ভরে যাবে।

 

প্রশ্ন) ‘কেতন ওড়ে-কেতন কীসের প্রতীক।

 

উত্তর : কেতন’শব্দটির অর্থ পতাকা। কিন্তু উদ্ধৃতাংশে স্বাধন আসা-সম্ভাবনার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) অন্ধকারার বদ্ধ কূপে কে, কী অবস্থায় বাঁধা? 

 

উত্তর : অন্ধ কারার বন্ধ কূপে পাষাণ-স্তুপের ওপর যজ্ঞ-কাঠে দেবতা বাঁধা।

 

প্রশ্নঃ।। রথঘর্ঘর কীসের

 

উত্তর : রথারােহী কালবােশেখির উপস্থিতি কালের রথচক্রের ঘূর্ণন শব্দ হলাে রথঘর্ঘর।

 

-প্রশ্নঃ।। ধ্বংস দেখে ভয় নয় কেন? 

 

উত্তর : ধ্বংস দেখায় ভয়ের কিছু নেই। কারণ, নতুন সৃজনের বেদনায় প্রলয়ের ধ্বংসাত্মক রূপ ভয়ের নয়, আনন্দের।

 

প্রশ্ন ) প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!’—কথার অর্থ কী?

 

উত্তর : প্রলয় হলাে ধ্বংসের চূড়ান্ত অবস্থা। প্রলয়ের পরেই সৃষ্টি। এটাই জাগতিক জীবনের মূল সত্য। যে-কোনাে মহত্ত্বের সৃষ্টির সঙ্গে থাকে বেদনা। তাই প্রলয়ের বেদনা বস্তৃত সৃষ্টির বেদনা।

 

প্রশ্ন ) নবীন কী করতে আসছে? 

 

উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’কবিতায় উল্লিখিত নবীন আসছে জীবনহারা সুন্দরকে ছেদন করতে।

 

প্রশ্নঃ।। সপ্ত মহাসিন্ধু কি কি?

 

উত্তর : সপ্ত মহাসিন্ধু হলাে ১. লবণ, ২. ইক্ষু, ৩.সূরা, ৪. সর্পিঃ, ৫.দধি, ৬. দুগ্ধ ও ৭.জল।

 

প্রশ্ন ।। ‘এই তাে রে তার আসার সময়’ | কার আসার সময়?

 

উত্তর : প্রলয়ােল্লাস’কবিতা থেকে গৃহীত এইঅংশেকালবােশে ঝড়ের, তথা স্বাধীনতার আসার সময়ের কথা বলা হয়েছে।

 

প্রশ্নঃ।।  প্রলয় বয়েও আসছে হেসে—’—প্রলয় বয়েও হাসি কেন?

 

উত্তর : প্রলয়ের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির স্বাধীন – হাসি।

 

প্রশ্নঃ।। প্রলয়ের হাসি মধুর কেন?

 

উত্তর : প্রলয়ের মধ্য দিয়ে আসবে সৃষ্টির জয়। জয়ের হাসি মধুর হয়।

 

প্রশ্নঃ।।‘সে’ কে? সে কীভাবে অসিছে?

 

: ‘সে’ হলো কালবােশেখি। সে চিরসুন্দর নূতনকে গড়ার জন্য কালো কেশের ঝাপটা মেরে, দুরন্ত বেশে, প্রলয় ঘটিয়েও মধুর হেসে আসছে।

 

প্রশ্নঃ।। চিরসুন্দর কে?

 

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা উল্লিখিত চিরসুন্দর হলেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা মহাকাল।

 

প্রশ্নঃ) এবার মহানিশার শেষে’-‘মহানিশা’ কথাটির অর্থ কী?

 

উত্তর : ‘মহানিশা’ কথার অর্থ গভীর রাত্রি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শােষণ-বঞ্চনাময়, অত্যাচার-অবিচারপূর্ণ দীর্ঘ অধ্যায়টিকে কবি মহানিশা বলেছেন। এই সময় দীনতা, হীনতা, দাসত্ব, ধর্মান্ধতাও কুসংস্কারে আক্রান্ত ছিল ভারতবাসী।

 

প্রশ্নঃ) ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’–‘অন্ধ কারার বদ্ধ কুল’ কথাটির অর্থ কী?

 

উত্তর : ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’ বলতে কবি ব্রিটিশরাজের দমন-পীড়নের হাতিয়ার জেলখানাগুলির কথা বলেছেন। এই জেলখানাগুলির কক্ষ ছিল ছােটো ছােটো আলাে-বাতাস হীন কূপের মতাে।

 

প্রশ্নঃ) দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-কূপে’–এখানে দেবতা বলতে কাদের বােঝানাে হয়েছে?

 

উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে গৃহীত এই অংশে কবি দেবতা বলতে মুক্তি সংগ্রামীদের বুঝিয়েছেন। দেশমাতাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে, দেশবাসীকে স্বাধীন করতে যারা প্রাণ উৎসর্গ করা সংকল্প নেন তারা তাে দেবতাই।

 

প্রশ্নঃ ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?’—ধ্বংস দেখেও কবি ভয় করতে নিষেধ করেছেন কেন?

 

উত্তর : ধ্বংস এবং সৃষ্টি একই সূত্রে গাথা। মহাকাল একাধারে ধ্বংসকর্তা এবং সৃষ্টিকর্তা। সুন্দরতর সৃষ্টির জন্য ধ্বংস অনিবার্য তাই ধ্বংসে ভয়ংকরতা থাকলেও তা দেখে কবি ভয় করতে নিষেধ।

 

প্রশ্নঃ) “ প্রলয়ের হাসির কারণ কি? 

 

উর : প্রলয়কথার অর্থ ধ্বংস অর্থাৎ প্রলয় হলাে ধ্বংসের পরিপূর্ণ প, যা যথেষ্ট আতঙ্কজনক প্রলয়ংকরমহাকাল প্রলয় বয়ে আনলেও মুখে তার হাসি কারণ এই প্রলয়ই নতুনতর, সুন্দরতর সৃষ্টির ক্ষেত্র। প্রলয়ের মধ্য দিয়ে আসবে সৃষ্টির জয়।

 

প্রলয়োল্লাস কবিতা

 

প্রশ্নঃ। ‘বধূরা প্রদীপ তুলে ধর।-বধূদের প্রদীপ তুলে ধরতে বলা হয়েছে কেন?

 

 ভয়কর কালবৈশাখীর বেশে প্রলয়ংকর মহাকালের নন পটছে। দাসের খেলায় সে নও। তবে তার ধবংসের “হে আছে সুন্দরতর সৃষ্টির বার্তা। আছে শৃঙ্খলমুক্ত দেশমাতার * হই পদের প্রদীপ তুলে ধরতে বলেছেন কবি।

 

প্রশ্নঃ।। প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কালবৈশাখীর ঝড় কীসের প্রতীক?

 

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় কালবৈশাখী ঝড় ধ্বংসের মাধ্যমে সুন্দরতর, নতুনতর, তেজোদ্দীপ্ত সৃষ্টির প্রতীক।

 

প্রশ্ন) ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’—কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন? 

 

উত্তর : পরাধীন ভারতবর্ষের শােষণ-বঞ্চনা, অন্যায়-অবিচারের শিকার, অপমানিত, অবজ্ঞাত, মুক্তিকামী নাগরিকদের কবি জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।

 

প্রশ্নঃ ।।‘প্রলয়ােল্লাস’ শব্দটির অর্থ কী? 

 

উত্তর : ‘প্রলয়ােল্লাস’শব্দটির অর্থ হলাে প্রলয়ের কারণে আনন্দ

 

প্রশ্নঃ কালবােশেখির ঝড় কীসের প্রতীক?

 

উত্তর : কালবােশেখির ঝড় অন্যায় অসত্য পুরাতনকে উড়িয়ে নতুনকে প্রতিষ্ঠার প্রতীক। প্রকারান্তরে প্রবল আন্দোলনের দ্বারা পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতায় মুক্তি।

 

প্রশ্ন ।। বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে কে অবস্থান কছেন? তাঁর রূঢ় হাতে কেমন খঙ্গ দুলছে?

 

উত্তর : বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে বিশ্বমাতা অবস্থান করছেন। 

 তাঁর রূঢ় হাতে শত্রুনাশন রক্তমাখা খঙ্গ দুলছে।

 

প্রশ্ন ।। ‘তাহার নয়নকটায়,’–কী চলেছে?

 

উত্তর : কালবােশেখির ভীষণ ভয়াল কটায় (কড়াইতে)দ্বাদশ রবির অগ্নিজ্বালা চলেছে।

 

প্রশ্ন ।। দ্বাদশ রবি বলতে কাকে বােঝায়?

 

উত্তর : দ্বাদশ রবি হলেন দক্ষকন্যা কশ্যপপত্নী অদিতির বসুমিত্র প্রভৃতি বারাে জন পুত্রসন্তান।

 

প্রশ্ন ) দিগন্তর কাকে বলে?

 

উত্তর : দিগন্তর দিগন্তকে বােঝায়। অপরপক্ষে, দুই দিগন্তের মধ্যবর্তী স্থানকে বােঝায়।

 

প্রশ্ন ) বিশ্বমায়ের অাসন কোথায় ?

 

উত্তর : কালবােশেখির বিশাল বিপুল বাহুর ওপর বিশ্বমায়ের অসি পাতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *