অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর
অভিষেক
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
অভিষেক কবিতার সারাংশ নামকরণ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
অভিষেক কবিতার উৎস
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘মেঘনাদবধ কাব্য তার শ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। পাঠ্যের অন্তর্ভুক্ত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত।
অভিষেক কবিতার সারাংশ
নারায়ণ-পত্নী লক্ষ্মী মহাবীর ইন্দ্রজিতের ধাই-মার ছদ্মবেশে ইন্দ্রজিতের কাছে হাজির। তাকে দেখে ইন্দ্রজিৎ সােনার আসন থেকে উঠে প্রণাম করে তার উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলেন। ছদ্মবেশী লক্ষ্মী লঙ্কার দুরবস্থার কথা জানালেন। ইন্দ্রজিতের প্রিয় ভাই বীরবাহু যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শােকার্ত রাবণ স্বয়ং যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সজ্জিত হচ্ছেন। এইসব খবরও দিলেন। অবাক হয়ে মেঘনাদ জানতে চাইলেন কে, কখন তার প্রিয় ভাইকে হত্যা করল। ইন্দ্রজিৎ নিশাযুদ্ধে রামচন্দ্রকে বধ করেছেন। তাঁর শর প্রয়ােগে শত্রুসৈন্য খণ্ড খণ্ড হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভ্রাতৃহত্যার শােকবার্তা। তার ধাত্রীমা কোথা থেকে এ খবর পেয়েছেন তা জানতে চাইলেন মেঘনাদ। প্রত্যুত্তরে লক্ষ্মী জানালেন যে, রামচন্দ্র মায়াবী, তিনি মরেও জীবন পেয়েছেন। ইন্দ্রজিৎ যেন সত্বর রাক্ষসকুলের মানসম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করেন।
ক্ষোভে-দুঃখে মেঘনাদ গায়ের অলংকার খুলে ছুড়ে ফেললেন। শত্রুবেষ্টিত লঙ্কার কথা ভেবে এবং বামাদলের মাঝে অলস সময় যাপনের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলেন।তিনি রাবণ-আত্মজ ইন্দ্রজিৎ। তিনি শত্রুদের নিধন করবেন। তিনি বীরসাজে সজ্জিত হলেন। তিনি বীরদর্পে রথে চড়ে বসলেন। এমন সময় প্রমীলা স্বামীর হাত দুটো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন যে, তাকে ফেলে মহাবীর কোথায় চলেছেন। ইন্দ্রজিৎ স্ত্রীর কাছে বিদায় নিলেন এই বলে যে, শত্রু রামচন্দ্রকে যুদ্ধে বধ করে তিনি ত্বরায় ফিরে আসবেন। উচ্চ ধ্বনি তুলে তার রথ আকাশপথে যাত্রা করল।
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
রাক্ষসরাজ রাবণ বীরের সাজে সজ্জিত হচ্ছেন। রণবাদ্য বাজছে। ওই সঙ্গে হস্তীর গর্জন, অশ্বের হরেসাধ্বনি আর পদাতিক সৈন্যের হুংকার শোনা যাচ্ছে। এমন সময় দ্রুতগতিতে মেঘনাদ এসে হাজির। পিতার চরণে প্রণাম জানিয়ে করজোড়ে পুত্র ইন্দ্রজিৎ জানালেন যে, তিনি শুনেছেন রামচন্দ্র মরেও বেঁচে উঠেছেন। ওই মায়া কী তিনি তা বুঝতে পারছেন না। তাকে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হােক। তিনি তাদের ধ্বংস করবেন, নতুবা তাদের বেঁধে এনে পিতার রাজপদে সমর্পণ করবেন। লঙ্কেশ রাবণ মনে করেন তার পুত্র মেঘনাদ রাক্ষসকুলতিলক। তিনি রাক্ষসকুলের ভরসা। তাকে ওই কাল যুদ্ধে পাঠাতে তার প্রাণ চায় না। তিনি মনে করেন বিধাতা তার প্রতি বিরূপ। নইলে কখনও জলে শিলা ভাসে। কখনও কেউ শুনেছে মরা লােক জীবন ফিরে পায়।
পুত্র মেঘনাদ পিতাকে যুদ্ধে যেতে দিতে রাজি নন। বীরপুত্র থাকতে পিতা যুদ্ধে গেলে মেঘবাহন ইন্দ্র হাসবেন। পিতা তাকে আর-একবার যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেন। এবার রামচন্দ্র নিহত হয়ে কীভাবে বেঁচে ওঠেন তা তিনি দেখবেন। রাক্ষসপতি পুত্রকে শােনালেন কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর খবর। তিনি পুত্রকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবের আরাধনা করতে বললেন। তাঁকে সেনাপতির পদে বরণ করে গঙ্গাজলে অভিষিক্ত করলেন।
অভিষেক কবিতার নামকরণের সার্থকতা
নারায়ণ-পত্নী লক্ষ্মী ধাই-মার ছদ্মবেশে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছেন বিশেষ উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য হলাে রাবণপুত্রকে বীরবাহুর পতন ও পিতা রাবণের যুদ্ধযাত্রায় প্রস্তুতির খবর দিয়ে যুদ্ধগমনের জন্য উত্তেজিত করা। তা ছাড়া রাত্রির যুদ্ধে রামচন্দ্রকে নিধন করার ঘটনাটা মায়ার ছলনা মাত্র। রামচন্দ্র মৃত বলে মনে হলেও তিনি জীবিত। এসব খবর শুনিয়ে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে প্রলুব্ধ করার কাজে লক্ষ্মী সফল। নারীমহলে অলস সময় যাপনের জন্য রাবণপুত্র নিজেকে ধিকৃত করে অবিলম্বে বীরদর্পে রথে চড়ে বসেন। আকাশপথে গমন করে পিতার কাছে হাজির হন। পিতাতখন যুদ্ধযাত্রার রণসাজে সজ্জিত হচ্ছেন। গজ ও অশ্বের গর্জন, পদাতিক সৈন্যদলের হুংকার আসন্ন যুদ্ধযাত্রার আবহ তৈরি করেছে। রাবণি পিতাকে যুদ্ধযাত্রা থেকে নিবৃত্ত করলেন। পিতা বীর পুত্রকে সেনাপতির পদে বরণ করে গঙ্গাজলে তার অভিযেক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন।
ওপরের ঘটনাবলির পরিণামে ইন্দ্রজিৎ সেনাপতির পদে নিযুক্ত ও অভিষিক্ত হয়েছেন। সে-অর্থে পাঠ্যভুক্ত সংকলিত অংশের নাম ‘অভিযেক’ হওয়া সংগত হয়েছে। তা ছাড়া মেঘনাদবধকাব্য’-র প্রথম সর্গের নাম ‘অভিযেক’। বিশেষত অভিষেকের অংশটি সংকলিত হয়েছে। সেই দৃষ্টে প্রথম সর্গের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে ‘অভিষেক’ নামকরণ যথাযথ হয়েছে। বলে মনে করি।
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
অভিষেক কবিতার রচনাধর্মী প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ।। নমি পুত্র…………। পিতা-পুত্রের সংলাপ বর্ণনা করো
উত্তর : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’র অন্তর্গত ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশে ‘পিতা’ বলতে লঙ্কেশ্বর ‘রাবণকে এবং ‘পুত্র’ বলতে রাবণাত্মজ ইন্দ্রজিৎকে বােঝানাে হয়েছে।
প্রমােদকাননে ইন্দ্রজিৎ ধাত্রী-মা প্রভাষার মুখে লঙ্কার দুর্দিনের কথা জেনে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ছুটে যান লঙ্কাপুরীতে। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি দেখেন যে পিতা লঙ্কেশ্বর রাবণ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যুদ্ধে উন্মাদনাসূচক রণবাদ্য বাজছে, গজ- অশ্বের গর্জন ও হ্রেষাধ্বনি শােনা যাচ্ছে। পদাতিক বাহিনীর হুঙ্কারে চতুর্দিক মুখরিত। রাক্ষস সৈন্যগণ মেঘনাদকে দেখে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। পিতাকে প্রণাম করে করজোড়ে জানতে চাইলেন—শত্রু রামচন্দ্র মরেও নাকি পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। এটা কী ধরনের মায়ার মায়া তা মেঘনাদের বােধগম্য হচ্ছে না। তিনি পিতা রাবণের কাছে রামচন্দ্রকে সমূলে বিনাশ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু লঙ্কাধিপতি রাবণ ইন্দ্রজিৎকে জানান যে, তিনিই একমাত্র রাক্ষসকুল ভরসা। তাকে বারবার যুদ্ধে পাঠাতে রাবণের মন চায় না। তিনি মেঘনাদকে আরও জানান যে, বিধাতা বিরূপ বলেই রামচন্দ্রের মতাে লােক মরেও পুনরায় বেঁচে উঠেছে। কিন্তু দেব-দৈত্য-নরের ত্রাস সারকারী থাকতে পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে জগতে কলঙ্ক রটবে-ইন্দ্র করবেন উপহাস, রুষ্ট হবেন অগ্নিদেবও। অতএব মেঘনাদ পিতার কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি রং চাইলেন। অবশেষে রাবণ তাকে সম্মতি দেন। তবে প্রথমে তিনি , ইন্দ্রজিৎকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবতার পূজা সমাপনের ; নির্দেশ দেন। যুদ্ধযাত্রার সময়ক্ষণও রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে জানিয়ে । দিয়ে বলেন-দিনমণি যেহেতু অস্তাচলগামী, তাই পরদিন প্রভাতে দে যেন তিনি যুদ্ধযাত্রা করেন। এই বলে লঙ্কাধিপতি রাবণ পুত্র
ইন্দ্রজিৎকে গঙ্গোদক দ্বারা অভিষিক্ত করলেন সেনাপতি পদে।
প্র: ) ‘হেন কালে তথা/দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।”—মেঘনাদ কখন, কোথায় উপস্থিত হলেন? সেখানে পিতার সঙ্গে তাঁর যে কথােপকথন হয় তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশে পুত্রশােকে কাতর লঙ্কেশ্বর যখন রণসজ্জা গ্রহণ করে চলেছেন । তখন মেঘনাদ এসে উপস্থিত হন।
স্বর্ণলঙ্কার রাজধানীতে যেখানে চলছিল লঙ্কেশ্বর রাবণের রণসজ্জা। প্রমােদ-উদ্যান থেকে যাত্রা করে মেঘনাদ সেখানে এসে উপস্থিত হন।
কথােপকথন : লঙ্কায় এসে ইন্দ্রজিৎ পিতা লঙ্কেশ্বরকে প্রণতি জানিয়ে বলেন যে, তিনি শুনেছেন, রঘুপতি রাঘব মরেও নাকি পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। তিনি এ মায়া বুঝতে পারছেন না। পিতার অনুমতি চেয়ে পাপীকে সমূলে নাশ করার প্রতিশ্রুতি দেন ইন্দ্রজিৎ। বলেন ঘাের শরানলে ভস্ম করে বায়ু অস্ত্রে তাকে উড়িয়ে দেবেন। নতুবা বেঁধে এনে দেবেন রাজপদে। পুত্রের বীরত্বপূর্ণ উক্তিতে পিতা তাঁর শির চুম্বন করে বলেন যে, ইন্দ্রজিৎই লঙ্কার রাক্ষসকুলের ভরসা, তাই এই কালসমরে তাঁকে পাঠাতে চায় না তাঁর মন। ঈশ্বর তাঁর প্রতি বিরূপ, নতুবা শিলা কখনও জলে ভাসে না; লােক মরে গিয়ে পুনরায় বেঁচে ওঠে এ কথা কেউ কখনও শােনেনি।
উত্তরে ইন্দ্রজিৎ বীরদর্পে বলেন যে, তুচ্ছ রামচন্দ্রকে ভয় পাওয়ার কোনাে কারণ নেই। ইন্দ্রজিৎ থাকা সত্ত্বেও পিতা লঙ্কেশ্বর যদি যুদ্ধে যান তাহলে তাঁর নামে পৃথিবীতে কলঙ্ক রটে যাবে। ইন্দ্রজিৎ আরও বলেন যে, দু-বার তিনি যুদ্ধে রাঘবকে হারিয়েছেন, এবার তাঁকে কোনাে ওষুধে যেন বাঁচানাে না যায়, এমন আঘাতটাই করবেন। এই সময় ভ্রাতা কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে রাক্ষসপতি রাবণ ইন্দ্রজিৎকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করে পরদিন প্রভাতে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেন। তবে যদি একান্ত সমরে/ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজইষ্টদেবে,—/নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি!
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্ন ।। ‘কি হেতু মাতঃ গতি তব আজি/এ ভবনে’ ‘মাতঃ’ বলে যাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে তাঁর পরিচয় দাও। বক্তার সঙ্গে তাঁর যে কথােপকথন হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশটির বকা হলেন বীর মেঘনাদ। তিনি মাতঃ বলে যাকে সম্বােধন করেছেন, তিনি হলেন ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশে আসা লােকমাতা রমা। রমা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন এবং ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানাের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রমােদ উদ্যানে ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশে রমার আগমন ঘটলে ইন্দ্রজিৎ তাঁকে প্রণাম জানিয়ে তার আগমনের কারণ জানতে চান। জানতে চান লঙ্কা কুশলে আছে কিনা। ছদ্মবেশী রমা তাঁর শির চুম্বন করে জানান, স্বর্ণলঙ্কার দশা কহতব্য নয়। ঘােরতর রণে ভ্রাতা বীরবাহু নিহত হয়েছেন। শােকার্ত লঙ্কেশ্বর যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সসৈন্যে সজ্জিত হচ্ছেন। প্রভাষা-রােহিণীকে ভগবতী সম্বােধন করে সবিস্ময়ে ইন্দ্রজিৎ জানতে চান, কে তাঁর প্রিয়ানুজকে বধ করেছে। নিশারণে তিনি রঘুবরকে সংহার করেছেন। শর বর্ষণ করে শত্রুদের খণ্ড খণ্ড করে কেটেছেন। এই অদ্ভুত সংবাদ জননী কোথায় পেলেন।‘এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননী/কোথা পাইলে তুমি, শীঘ্ৰ কহ দাসে’। উত্তরে ছদ্মবেশী রমা ইন্দ্রজিৎকে পুত্র সম্বােধন করে বললেন, সীতাপতি মায়াবী মানব। তাঁর শরে মরে আবার বেঁচে উঠেছে। তিনি তাকে দ্রুত লঙ্কায় যাত্রা করার আদেশ দেন। এই কালসমরে রাক্ষসকুলের মান রক্ষা করতে বলেন।—“যাও তুমি ত্বরা করিঃ রক্ষ রক্ষকুল মান/এ কালসমরে, রক্ষঃ-চূড়ামণি!
অভিষেক কবিতার বড় প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।বক্তা কে? কোন্ কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে? এতে তার চরিত্রের কোন্ দিক ফুটে উঠেছে?
উত্তর : মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশটির বক্তা হলেন বীর ইন্দ্রজিৎ।
উপযুক্ত বীরসন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও পিতা যদি যুদ্ধে যান তাহলে তা সন্তানটির পক্ষে বড়াে কলঙ্কজনক ব্যাপার। পিতাকে যুদ্ধে পাঠালে এই কলঙ্কই হতাে ইন্দ্রজিতের।
– ইন্দ্রজিতের উক্তিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর চরিত্রের কয়েকটি দিক-পিতৃভক্তি, স্বদেশপ্রেম, বীরের প্রত্যয় প্রভৃতি।
মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে পিতাকে যুদ্ধে না পাঠানাের প্রয়াসের মধ্যে ইন্দ্রজিতের পিতৃভক্তির চিত্র পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। উপযুক্ত সন্তান হিসেবে আসন্ন যাবতীয় আপদ-বিপদকে তিনি স্বস্কন্ধে নিতে চান। ইন্দ্রজিৎ স্বর্ণলঙ্কার অলংকার। স্বদেশ-স্বজাতির গৌরব তিনি কোনােভাবেই ক্ষুন্ন হতে দেবেন না। তাই তাে ভ্রাতা বীরবাহুর মৃত্যু এবং লঙ্কার দুরবস্থার সংবাদ পাওয়া মাত্র তিনি পিতার কাছে ছুটে এসেছেন। পিতাকে নিরস্ত করে তিনি যুদ্ধযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইন্দ্রজিৎ দৃঢ়ভাবে আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি বীর। একাধিকবার তিনি রামচন্দ্রকে পরাস্ত করেছেন। এমনকি হত্যা করেছেন। মায়ার ছলনায় তিনি বেঁচে আছেন। এবার আর তাঁর বাঁচার উপায় ইন্দ্রজিৎ রাখবেন না। তাঁর বলিষ্ঠ উক্তি—দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে! –
প্রশ্ন ।। প্রমীলা ও ইন্দ্রজিতের কথােপকথন বিবৃত করাে।
– – উত্তর : কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবিতা- ‘অভিষেক। মূল গ্রন্থ—মেঘনাদবধ কাব্য।
|| ইন্দ্রজিৎ মায়াবী, মহাবীর, ধনুর্ধর, রাবণপুত্র। তাঁর পত্নী প্রমীলা সুন্দরী। কোমলস্বভাবা, বুদ্ধিমতী, বীরাঙ্গনাও। সেই প্রমীলা, শ্রীরামের সঙ্গে লঙ্কার যুদ্ধে যেতে উদ্যত স্বামী ইন্দ্রজিতের পথ রােধ করে দাঁড়িয়েছেন। কারণ এই যুদ্ধ কালযুদ্ধ। আর স্বামীর বিরহে তিনি কীভাবে কাল কাটাবেন? ছদ্মবেশিনী ধাত্রী-মার কাছ থেকে প্রিয় ভাই বীরবাহুর অসম্ভব মৃত্যুর কথা শুনে ক্রুদ্ধ মেঘনাদ কনক-বলয়াদি ছুড়ে ফেললেন। নিজেকে ধিক্কার দিলেন। তারপর বীর-আভরণে সেজে রথে চড়ে বীরদর্পে যুদ্ধে যেতে উদ্যত হলেন। ঠিক এই সময় প্রেমার্স প্রমীলা পথ ঘিরে দাঁড়ালেন। স্বামীর হাত দুটি ধরে কেঁদে উঠলেন— “কোথা প্রাণসখে,/ রাখি এ দাসীরে, কহ চলিলা আপনি? কী করে তার বিরহে প্রাণ ধরে থাকবেন অভাগিনী? গহন বনে লতা যদি দলপতি হাতির পা জড়িয়ে ধরে, যদি লতার সে রঙ্গরসে মন না দিয়ে যূথনাথ চলে যায়, তবুও তাকে তাে চরণাশ্রমে রাখে? “তবে কেন তুমি, গুণনিধি,/ত্যক্ত কিঙ্করীরে আজি?”
যাওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ বললেন ,শীঘ্রই তিনি ফিরে আসবেন। তারই কল্যাণে রাঘব রামকে যুদ্ধে বিনাশ করবেন অবশ্যই। অতএব, “বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।” প্রেমবিরহিণী প্রমীলার পথ রােধ যৌক্তিক এবং প্রেমমধুর আবেশে আদ্রর্তর। আবার প্রমীলার প্রতি বী ইন্দ্রজিতের সান্ত্বনা যেমন সম্ভাব্য শৌর্যসূচক, তেমনই গাঢ় প্রেমবিশ্বাসে কানায় কানায় ভরা।
অভিষেক কবিতার ছোট প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ।। উঠিল পবন-পথে’—পবন-পথ মানে কী? পবনপথে কী উঠল?
উওর : পবন-পথ মানে আকাশপথ।
পবন-পথে ইন্দ্রজিতের রথ উঠল।
– প্রশ্ন ।। ‘শিঞ্জিনী আকর্ষি রােষে,—বাক্যাংশটির অর্থ কী?
উওর : বাক্যাংশটির অর্থ হলাে ধনুকের ছিলা ক্রোধবশে (প্রবলভাবে) টেনে।
প্রশ্নঃ) ‘টঙ্কারিলা ধনুঃ—অর্থ কী?
উত্তর : ধনুকে টঙ্কার দিলেন। ধনুকের ছিলা টেনে ছাড়ার শব্দ হলাে টঙ্কার।
প্রশ্ন ) কাঁপিলা লঙ্কা, কাপিলা জলধি!’—অর্থ কী? কেন কাঁপল?
উত্তর : লঙ্কা রাজ্যটি কেঁপে উঠল। সমুদ্র কেঁপে উঠল। যুদ্ধে উদ্যত ইন্দ্রজিতের ধনুকের টঙ্কারে কেঁপে উঠল।
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্ন ) “উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ;- কৌশিক-ধ্বজ কী?
– উত্তর : কৌশিক-ধ্বজ হলাে ইন্দ্ৰধ্বজ-ইন্দ্রের রথ-পতাকা। ইন্দ্রজয়ী ইন্দ্রজিৎ রথে চেপে যুদ্ধে গিয়েছেন। সে পতাকা উড়ছে।
প্রশ্নঃ।। ‘রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি,’—কে, কাকেবলছেন? বাক্যাংশের অর্থ কী?
উত্তর : রাবণ বলছেন পুত্র মেঘনাদ ইন্দ্রজিৎকে।
রাক্ষসবংশের চূড়ামণি, শ্রেষ্ঠ বীর।
প্রশ্ন ) হায়, বিধি বাম মম প্রতি।’-বক্তা কে? বিধি বাম মানে কী?
উত্ত: বক্তা হলেন লঙ্কাধিপতি রাবণ। ভাগ্যবিধাতা তাঁর প্রতি প্রতিকূল, এটাই অর্থ
প্রশ্ন ।। ‘অসুরারি-রিপু,–এর অর্থ কী?
: = উত্তর : অসুরের অরি (শত্রু) = অসুরারি (দেব)। অসুরারিররিপু (শ) = অসুর। অর্থাৎ ইন্দ্রজিৎ।
প্রশ্ন ) এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।’—কোন্ কলঙ্ক জগতে ছড়াবে?
উত্তর : পুত্র ইন্দ্রজিৎ থাকতে থাকতে, পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে, ইন্দ্রজিতের নামে কলঙ্ক জগতে ছড়াবে।
প্রশ্নঃ।। মেঘবাহন কে? কেন তিনি মেঘবাহন?
: উত্তর : মেঘবাহন হলেন ইন্দ্র। মেঘে, আকাশে তার যান বা রং চলে, তাই তিনি মেঘবাহন।
প্রশ্নঃ।। ‘হাসিবে মেঘবাহন;’- কে হাসবে?
উত্তর : পুত্র ইন্দ্রজিতের উপস্থিতি সত্ত্বেও পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে, ইন্দ্রজিতের ভীরুতা প্রকাশ পাবে। তাই ইন্দ্রজিতের কাছে পরাজিত ইন্দ্র হাসবে।
প্রশ্ন ) ‘দেহ তার, দেখ, সিন্ধুতীরে ভূপতিত,’—বক্তব্যটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : বলীয়ান ভাই কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগিয়েছিলেন রাবণ। অকালে ঘুম ভাঙার কারণে যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর দেহ সমুদ্রতীরে মাটিতে পড়ে আছে।
প্রশ্ন ) নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর,-কাকে, কেন এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : পিতা রাবণ কর্তৃক পুত্র ইন্দ্রজিৎকে বলা হচ্ছে। নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সমাপন করে যুদ্ধে গেলে, ইন্দ্রজিৎ সে যুদ্ধে অজেয় হবেন, এটাই ইন্দ্রজিতের প্রতি ইষ্টদেব অগ্নির আশীর্বাদ।
প্রশ্ন ।। ‘অস্তাচলগামী দিননাথ এবে; বাক্যের অর্থ পরিস্ফুট করাে। বক্তা এরপর কী বলেছেন?
উওর: দিননাথ সূর্য অস্তে যাচ্ছেন, অর্থাৎ রাত্রি আসছে।
বক্তা এরপর বলেছেন, রামচন্দ্রের সঙ্গে প্রভাতে ইন্দ্রজিৎ যেন যুদ্ধ করেন।
প্রশ্ন ) ‘অভিষেক করিলা কুমারে।’—কীভাবে অভিষেক করা হলাে?
উত্তর : পিতা রাবণ পুত্ৰ ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধ করার জন্য সেনাপতি পদে বরণ করলেন। যথাবিধি গঙ্গাজল সিঞ্চন করে অভিষেক করা হলাে।
প্রশ্ন ।। “কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে, বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর : রামচন্দ্রের মরে পুনরায় বেঁচে ওঠা সম্পর্কে সন্দেহবশত লঙ্কেশ্বর রাবণ উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।শিলা বা পাথরের জলে ভাসার মতােই মৃত ব্যক্তি বেঁচে ওঠাও অবিশ্বাস্য ব্যাপার বলে রাবণের মত।
প্রশ্ন ।। “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা” কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?
উত্তর : ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা’ হলেন ইন্দ্রজিতের ধাই-মা প্রভাষা। তিনি সমুদ্র-কন্যা লক্ষ্মীর ছদ্মবেশে প্রমােদ উদ্যানে ইন্দ্রজিতের কাছে ভ্রাতার মৃত্যুসংবাদ এবং শােকার্ত লঙ্কেশ্বরের রণসজ্জায় সজ্জিত হওয়ার কথা জানাতে এসেছিলেন।
প্রশ্ন ) ‘কিন্তু অনুমতি দেহ,’-কে, কীসের অনুমতি চেয়েছেন?
উত্তর : লঙ্কার অলঙ্কার বীর ইন্দ্রজিৎ লঙ্কেশ্বর রাবণের কাছে মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করা অনুমতি প্রার্থনা করেছেন।
প্রশ্ন ।। ‘এ মায়া পিতঃ বুঝিতে না পারি।’-বক্তা কোন্ মায়া বুঝতে পারছেন না?
উত্তর : যে যােদ্ধাকে নিশারণে বক্তা হত্যা করেছেন, শর নিক্ষেপ করে শত্রুদলকে খণ্ড খণ্ড করে কেটেছেন, নিহত সেই যােদ্ধা কোন মায়াবলে বেঁচে উঠে বীরবাহুকে হত্যা করেন, এই মায়া বক্তা বুঝতে পারছেন না।
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
অভিষেক কবিতা প্রশ্ন উত্তর মধুসূদন দত্ত
প্রশ্ন ) তার শােকে মহাশােকী রাক্ষসাধিপতি’রাক্ষসাধিপতি কার শােকে শােকগ্রস্ত?
উত্তর : মায়াবী যােদ্ধা শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কেশ্বর রাবণের প্রিয়পুত্র বীরবাহুকে হত্যা করেছেন; তাই পুত্র হারানাের শােকে লঙ্কেশ্বর শােকগ্রস্ত হয়েছেন।
প্রশ্ন ) কেবধিল কবে প্রিয়ানুজে?’—এই প্রশ্নের উত্তরে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী বলেছেন?
উত্তর : ইন্দ্রজিতের এই প্রশ্নের উত্তরে ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশী রমা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন যে, মায়াবী মানব সীতাপতি তার শরে মরেও বেঁচে উঠেছেন।
প্রশ্ন।। ‘বাঁধিয়া আনিয়া দিব রাজপদে’-কে, কাকে রাজপদে বেঁধে এনে দিতে চেয়েছেন?
উ : বীর ইন্দ্রজিৎ মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রকে যুদ্ধে পরাস্ত করে বেঁধে এনে রাজপদে দিতে চেয়েছেন।
প্রশ্নঃ।। ‘কাঁপিলা লঙ্কা’ –লঙ্কার কেঁপে ওঠার কারণ কী?
উ : লঙ্কার উদ্দেশে যাত্রাকালে ইন্দ্রজিৎ রথে উঠে সরােযে টঙ্কার দেন ধনুতে, ভয়ংকর সেই টঙ্কার পক্ষীন্দ্র গরুড়ের চিৎকারের মতো শােনা যায়। এই শব্দে লঙ্কা কেঁপে ওঠে।
প্রশ্নঃ।।‘তব শরে মরিয়া বাঁচিল’-কার শরে কে মরে বাঁচল?
উওর : ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশী রমা ইন্দ্রজিৎকে জানিয়েছেন যে, ইন্দ্রজিতের শরে মরে গিয়েও বেঁচে উঠেছেন মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্র।
প্রশ্ন ) পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে/ভৈরবে। – পক্ষীন্দ্র কে?
উত্তর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে অংশটি উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে পক্ষীন্দ্র বলতে পক্ষীদের মধ্যে ইন্দ্র অর্থাৎ, প্রধান গরুড় পাখিকে বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন ) ‘নাহি চাহে প্রাণ মম’-কী চায় না বক্তার প্রাণ?
উত্তর : বক্তার অর্থাৎ, লঙ্কেশ্বর রাবণের প্রাণ প্রিয় পুত্র ইন্দ্রজিৎকে মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠাতে চায় না। কারণ বিধাতা তাঁর প্রতি বাম অর্থাৎ, প্রতিকূল।
প্রশ্ন ) ‘অভিষেক’ কবিতায় রাবণ ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য কী করতে বললেন?
উত্তর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের অভিষেক কবিতায় লঙ্কেশ্বর রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে যাওয়ার আগে ইষ্টদেবকে পুজো করতে এবং নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করতে বলেছেন।
প্রশ্ন ) ‘নাদিলা কর্বুরদল’ -কর্বুরদললের ‘নাদ’-এর কারণ কী? –
উত্তর : কর্বুরদল অর্থাৎ, রাক্ষস সেনাদল বীরবাহুর মৃত্যুতে লঙ্কেশ্বর রাবণের নির্দেশে রণসাজে সজ্জিত হচ্ছিল, এই অবস্থায় বীর ইন্দ্রজিৎকে দেখে তাদের রণােল্লাস তীব্র হয়ে ওঠে এবং তারা উচ্চনাদে ফেটে পড়ে।
প্রশ্ন ।। ‘প্রভাতে যুঝিও, বৎস, কেন প্রভাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে?
উওর : বক্তা রাবণ একজন সমরকুশলী যােদ্ধা। তিনি রাত্রিকালীন যুদ্ধের অসুবিধাগুলি বুঝতে পারেন। মায়াবী যােদ্ধার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আরও ভয়ানক। তাই পুত্রকে প্রভাতে যুদ্ধ করতে বলেছেন।
প্রশ্ন ) ‘আগে পূজ ইষ্টদেবে’-বক্তা ইষ্টদেবকে কেন আগে পুজো করতে বলেছেন?
উত্তর : বক্তা রাবণ একজন দেবনির্ভর রাজা। কিন্তু বিধাতা তার প্রতি বিরূপ। তাই প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে ইষ্টদেবের পুজো দিয়ে তার আশীর্বাদ নিয়ে যুদ্ধে যেতে বলেছেন।
অভিষেক কবিতার সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর
প্ৰয় ) ‘ঘুচাব ও অপবাদ’-কোন অপবাদ ৰকা কীভাবে ঘোচাবেন?
উ : ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ তথা ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিতের কণ্ঠে এই বীরােচিত প্রতিজ্ঞাবাক্য ঘােষিত হয়েছে। ভ্রাতাবীরবাহু মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রের হাতে নিহত হওয়ায় শােকার্ত লঙ্কেশ্বর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, লঙ্কা শত্রু পরিবেষ্টিত, এই অবস্থায় লঙ্কার ত্রিলােকজয়ী বীরপুত্র ইন্দ্রজিৎ প্রমােদ-উদ্যানে বামাদের সঙ্গে আমােদ-প্রমােদে মত্ত, এটা বড়াে লজ্জার ব্যাপার। বীরের পক্ষে এটা একটা বিরাট অপবাদ। বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার জানিয়ে এই অপবাদ ঘােচানাের উপায় হিসেবে যুদ্ধযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছেন। শত্রুকুলকে নিধন করে তিনি ঘােচাবেন তার অপবাদ।
প্রশ্ন ) রক্ষ রক্ষঃকুল-/মান, এ কালসমরে রক্ষঃচূড়ামণি!’- কাকে রক্ষচুড়ামণি বলা হয়েছে? বক্তা কালসমর বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উওর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশে রক্ষচূড়ামণি বলে সম্বােধন করা হয়েছে লঙ্কার বীর যােদ্বা ইন্দ্রজিৎকে।
কালসমর কথাটি বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় কাল রূপ সমর কিংবা কাল ঘনিয়ে তােলে যে সমর। কাল’ কথাটির অর্থ হলাে মৃত্যু, ব্যাপকার্থে ধ্বংস। রামচন্দ্রের সঙ্গে লঙ্কেশ্বরের যে যুদ্ধ বেধেছিল তা লঙ্কার কাল ঘনিয়ে এনেছিল। যুদ্ধে লঙ্কার বীর সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বীরবাহুর, কুম্ভকর্ণের। ধ্বংসযজ্ঞ চলছে নিরন্তর। মায়াবী যােদ্ধা রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বােঝা যাচ্ছে না। তবে ঘটে যাচ্ছে লকার ভাগ্য বিপর্যয়। এখন শেষ মহারথী লঙ্কেশ্বর যুদ্ধে যেতে উদ্যত।
প্রশ্ন।। ‘ জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া’- কাকে মহাবাহু বলা হয়েছে? তার বিস্ময়ের কারণ কী?
উওর : মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশে উল্লিখিত মহাবাহু হলেন লঙ্কার অলঙ্কার বীর ইন্দ্রজিৎ।
ইন্দ্রজিৎ সীতাপতি রামচন্দ্রকে নিশারণে পরাস্ত এবং নিহত করেছেন। শর নিক্ষেপ করে খণ্ড খণ্ড করে কেটেছেন শত্রুদের। যুদ্ধজয়ের আনন্দে প্রমােদ-উদ্যানে বামাদের সঙ্গে তিনি যখন আমােদ-প্রমােদে মত্ত তখন ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশী রমার মুখে শুনতে পান বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ। সীতাপতি রামচন্দ্র তাকে হত্যা করেছেন। তিনি লঙ্কার দশাও করুণ করে তুলেছেন। যে সীতাপতিকে ইন্দ্রজিৎ স্বয়ং হত্যা করেছেন, তার পক্ষে বেঁচে ওঠা এবং বীরবাহুকে হত্যা করা কীভাবে সম্ভব! এই কথা ভেবে তিনি > বিস্মিত।
প্রশ্নঃ।। ‘হা ধিক মােরে’—কে, কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন?
উওর: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন।
ইন্দ্রজিৎ যখন প্রমােদ-উদ্যানে বামাদের সঙ্গে আমােদপ্রমােদে মত্ত তখন ধাত্রী-মা প্রভাষার ছদ্মবেশী রমার মুখে ভ্রাতা বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পান। তিনি আরও জানতে পারেন শােকার্তলঙ্কেশ্বররণসজ্জায় সজ্জিত হচ্ছেন। এই সংবাদ ইন্দ্রজিৎকে বিস্মিত এবং অপরাধী করে তােলে। মাতৃভূমি যখন বিপদাপন্ন, দেশের বীর সন্তান যখন শত্রুর হাতে নিহত তখন ইন্দ্রজিতের মতাে স্বদেশপ্রাণ, ত্রিলােকজয়ী বীরের পক্ষে আমােদ-প্রমােদের সময় কাটানাে লজ্জাকর। তাই ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন।
প্রশ্ন ) ‘হায়, বিধি বাম মম প্রতি’-বক্তা কে? তিনি এমনকথা বলেছেন কেন?
উত্তর: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশটির বক্তা হলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ।
ভ্রাতা বীরবাহুর মৃত্যুতে ব্যথিত, ক্রুদ্ধ ইন্দ্রজিৎ সীতাপতি রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাইলে পুত্রস্নেহকাতর রাবণ বিচলিত হয়ে পড়েন। লঙ্কায় যা ঘটে যাচ্ছে তা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, অবিশ্বাস্য। শিলা জলে ভাসছে, মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যুদ্ধ করছে। মৃত্যু হচ্ছে বলশালী মহাবীরদের। কুম্ভকর্ণ নিহত। নিহত বীর পুত্র বীরবাহু। এই অবস্থায় ইন্দ্রজিতের যুদ্ধে যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। লঙ্কেশ্বরের প্রাণাধিক প্রিয়পুত্র ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার একমাত্র ভরসা। তাকে যুদ্ধে পাঠাতে বক্তার ভয় করে; তাই তিনি এই উক্তি করেন।
প্রশ্ন ।। ‘হাসিবে মেঘবাহন;’-কার উক্তি? মেঘবাহন কেন হাসবে?
উত্তর: উক্তিটি ইন্দ্রজিতের।
যুদ্ধে ইন্দ্রকে জয় করেছিলেন বলেই তিনি ইন্দ্রজিৎ। সেই ইন্দ্রজিৎবর্তমানে তার পিতা দুর্ধর্ষরণে যাবেন, আর ইন্দ্রজিৎবামাদল মাঝে বিলাস করবেন, এটা একান্ত অনুচিত। এতে ইন্দ্রজিতেরই আত্ম-অপমান। ইন্দ্রজিতের কাছে পরাজিত ইন্দ্র যখন এই সংবাদ শুনবেন, এই দৃশ্য দেখবেন, তখন ইন্দ্রজিতের ভীরুতার কথা ভেবে খুব হাসবেন। সেটাও কি সইবার ? মেঘের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতেন বলে ইন্দ্র মেঘবাহন, আর ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদ।