রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর টেকজ সঞ্জীব
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর টেকজ সঞ্জীব
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
রুপসী বাংলা
জীবনানন্দ দাশ
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর টেকজ সঞ্জীব
এখানে রূপসী বাংলা কবিতার প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
রূপসী বাংলা কবিতার উৎস
আমাদের পাঠ্য রূপসী বাংলা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। এটি ওই কাব্যগ্রন্থের ১৯ সংখ্যক কবিতা। কাব্যটি কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। (৩১ জুলাই ১৯৫৭)। এ-সম্বন্ধে অশােকানন্দ দাশ জানিয়েছেন, কবিতাগুলি প্রথম বারে, যেমন লেখা হয়েছিল, ঠিক তেমনই পাণ্ডুলিপিবদ্ধ অবস্থায় রক্ষিত ছিল; সম্পূর্ণ অপরিমার্জিত। পঁচিশ বছর আগে খুব পাশাপাশি সময়ের মধ্যে একটি বিশেষ ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে কবিতাগুলি লিখিত হয়েছিল।
আমাদের পাঠ্য সনেটটিতে অষ্টকে রয়েছে পেত্রার্কিয় মিলের রীতি, ষটকে সেক্সপিয়রের; কিন্তু সেখানেও নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রথম আটটি পঙক্তিতে ভাবের ক্রমােন্নতি সুন্দরভাবে অভিব্যক্ত হয়েছে; রূপসী বাংলার প্রতি ভালােবাসার গভীর আবেগ এবং তার সঙ্গে মৃত্যুচিন্তার বিষন্নতা পাঠকের মনকে ধীরে ধীরে আবিষ্ট করে তােলে; তারপর শেষ ছ’টি পঙক্তিতে এই ভাবটিকে পরিণতি দিয়ে কবি তার অন্তিম ইচ্ছাটি প্রকাশ করেছেন,—মৃত্যুর মাঝে তিনি রূপসী বাংলার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চেয়েছেন। শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর।
জীবনানন্দ রােম্যান্টিক কবি। রূপসী বাংলা’ হল তার নিসর্গ প্রেমের এক অনুপম কাব্য; তিলােত্তমা বাংলার অপরূপ রূপ কবি দু’চোখ ভরে দেখেছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের আম-জামকাঠাল-হিজল-জারুলের বন, তার খঞ্জন, পেঁচা, ইদুর, হাঁস, চিল, তার রূপশালী ধান, তার জলদী, তার গাঙুর, ধানসিড়ি নদী, তার শিশু, কিশােরী মেয়ে, বধূ,—সব কিছু কখনাে বস্তু বা প্রাণীরূপে, কখনাে বা প্রতীকী তাৎপর্যে, গভীর অর্থবহ হয়ে তাঁর কাব্যে এসে ধরা দিয়েছে। আবার অতীতচারণাও তাঁর কাব্যে আছে। শুধুমাত্র বাংলার বর্তমান রূপের মধ্যেই কবির দৃষ্টি ও অনুভব সীমাবদ্ধ থাকেনি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবিমন বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, কাব্যকবিতা, পুরাণ, রূপকথার রহস্যলােকে অভিসার করে তার অতীত সৌন্দর্যকে খুঁজে পেতে চেয়েছে।
এইভাবে দেখলে রূপসী বাংলা’ এক অনবদ্য প্রকৃতি প্রেম ও দেশপ্রেমের কাব্য। মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ কবিরা সকলেই জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার বন্দনা করেছেন; জীবনানন্দও রূপসী বাংলাকে দেখেছেন মাতারূপে। মায়ের সঙ্গে মিশে গিয়ে বাংলার বিচিত্র রূপ যেন পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভােগ করেছেন, ভালােবেসেছে, আর সেই মায়ের কোল থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে হবে ভেবে বেদনা বিধুর হয়ে উঠেছে।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
রূপসী বাংলা কবিতার বিষয়বস্তু
কবি জীবনানন্দ তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশকে মাতারূপে কল্পনা করে তাকে ‘তুমি’বলে সম্বােধন করেছেন। তিনি গভীর বেদনার সঙ্গে বলছে, একদিন এই বাংলা মায়ের বুক ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে। নীল আকাশের নরম বুক থেকে নক্ষত্র ঝরে পড়ে হিমের ভেতরে ডুবে যাচ্ছে এবং চারদিকে কুয়াশার মধ্যে ঝরে পড়ছে রূপশালী ধান,—এর মধ্যেও সেই মৃত্যুরই ইঙ্গিত। কবির যখন মৃত্যু হবে, হয়তাে তখন অন্ধকারের মধ্যে নিমপেঁচা আনন্দে ইদুর ধরে খাবে এবং মৃত্যুর সময়ে ইদুরের মনে যেমন ক্ষুদ খাবার আকাঙ্ক্ষা জেগে থাকে, তেমনি মৃত্যুমুখী কবির হৃদয়েও জেগে থাকবে জীবনকামনা; তার চোখের সামনে একদিকে জাগ্রত থাকবে সমুদ্যত নীল মৃত্যু; অন্যদিকে থাকবে বাঁকা চাদ, শূন্য মাঠ এবং শিশিরের গন্ধ।
মৃত্যু কখন আসবে তা কবি জানেন না; কালীদহে কখন ঝড় নাল ভেঙে দেয়, গাংচিল কখন শালিকের প্রাণনাশ করে, তা কবির অজ্ঞাত। তবু কবির ইচ্ছা, তার যেন বাংলার মাঠ-ঘাটেই মৃত্যু হয়; যমুনা নয়, যেন বাংলার গাঙুড়ের ঢেউয়ের গন্ধ তাঁর চোখে-মুখে লেগে থাকে আর তার বুকে জেগে থাকে রূপসী বাংলা। বাংলার মাটিতেই কবি শুয়ে থাকতে চান অর্ধনারীশ্বর হয়ে।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
রূপসী বাংলা কবিতায়র নামকরণের সার্থকতা
আমাদের পাঠ্য জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা কবিতাটির শিরােনাম কবির দেওয়া নয়; মধ্যশিক্ষা পর্ষৎ এ নামটি দিয়েছে। মূল কাব্যগ্রন্থে কোন কবিতারই নাম নেই। কবিতাগুলি শুধুই সংখ্যা। কবিতাগুলি আবার পরস্পরের পরিপূরক এবং সকলে মিলে রূপসী বাংলাদেশের চিত্ররূপময় এক অখণ্ড সত্তাকে প্রকাশ করেছে। সেদিক থেকে বিচার করলে কাব্যগ্রন্থের যে কোন কবিতাকেই রূপসী বাংলা নাম দেওয়া যেত এবং পর্যৎ সেভাবেই এই নাম দিয়েছেন।
রূপসী বাংলা’ নিসর্গপ্রীতি ও দেশপ্রেমের এক অনুপম কবিতা। রােম্যান্টিক কবিরা তাঁদের জন্মভূমিকে প্রধানত জননীরূপে কল্পনা করে তার বন্দনা করে থাকেন। মা যতই দীনাহীনা হােক, সন্তানের চোখে তার যেমন একটা শ্রদ্ধার রূপ আছে। তেমনি জন্মভূমির সমস্ত তুচ্ছতা ও দীনতা সত্ত্বেও কবিরা জন্মভূমিকে স্বর্গের মত পবিত্র ভাবেন এবং ভালােবাসেন।
রূপসী বাংলা কবিতা
জীবনানন্দ সেই শ্রদ্ধা ও আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/খুঁজিতে যাই না আর। এই হল বাংলা কবির রূপসী বাংলা। রূপসী বাংলার অজস্র রূপ কবি সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভােগ করেছেন, কিন্তু একদিন তাকে এই বাংলার বুক ছেড়ে মৃত্যুলােকে চলে যেতে হবে এই কথা ভেবে কবির মন হয়ে উঠেছে বেদনা বিধুর। আকাশের নরম বুক থেকে নক্ষত্র পতন এবং কুয়াশার মধ্যে রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার মধ্যে সেই ইঙ্গিতই প্রচ্ছন্ন। অন্ধকারে কুচক্রী পেঁচা যেমন করে ইদুর ধরে খায়, তেমনি মৃত্যু একদিন কবিকে গ্রাস করবে, কিন্তু তার দুচোখ ভরে জেগে থাকবে নিষ্ঠুর মৃত্যু আর বাংলার চাদ, শূন্য মাঠ এবং শিশিরের গন্ধ। মৃত্যুর নির্দিষ্ট কোন সময় নেই; কালীদহে পদ্মের নৃল কখন ঝড়ে ভাঙে, আর চিল কখন শালিকের প্রাণ হরণ করে, তা কবির অজানা; তবু তিনি বাংলার মাঠে-ঘাটেই মরতে চান এবং মৃত্যুর সময় যেন তার চোখে মুখে জেগে থাকে গাঙুড়ের ঢেউয়ের গন্ধ; যেন তার বুকের ওপর জেগে থাকে চিত্ররূপময়ী রূপসী বাংলা এবং কবি শুয়ে থাকতে চান ওই বাংলার বুকে অর্ধনারীশ্বরের মত একাত্ম হয়ে।
সমস্ত কবিতাটির ভাবকেন্দ্রে আছে, রূপসী বাংলা। তারই জন্যই কবির অকুণ্ঠ ভালােবাসা এবং তাকে ছেড়ে যেতে হবে বলেই কবির মনে করুণ মৃত্যুচিন্তা। মরণের বৃন্তে এই যে অনন্ত জীবন কামনা কবিতাটির আদ্যান্তে পরিব্যাপ্ত হযে আছে, রূপসী বাংলায় তার একমাত্র উপজীব্য বিষয় তাই কবিতার নামটি সার্থক প্রসঙ্গত বলে মনে করা যায়।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
রূপসী বাংলা কবিতার বড় প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন:।। একদিন চলে যাবে তােমার সন্তান”—কে, কার সন্তান? কার নিবেদন? চলে যাওয়ার অনুভূতি যে সব চিত্রের মাধ্যমে কবি ব্যক্ত করেছেন সেগুলিকে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “কখন মরণ আসে কে জানে”—মৃত্যুর আকস্মিকতা কবি যে সব বাস্তব চিত্রে প্রতিফলিত হতে দেখেছে সেগুলির বর্ণনা দাও। দৈহিক মৃত্যুর পর কবি কোথায় কীভাবে থাকতে চেয়েছেন?
উত্তর: রূপসী বাংলা কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ হলেন তার জন্মভূমি রূপসী বাংলার সন্তান।
রূপসী বাংলাকে উদ্দেশ্য করে কবি জীবনানন্দ একথা নিবেদন করেছেন।
বাংলার বুক থেকে চলে যাওয়ার অর্থ পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নেওয়া। এই শেষ বিদায় নেওয়ার অনুভূতি অর্থাৎ মৃত্যুর অনুভূতি কবি কয়েকটি প্রতীক বা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি চিত্রকে ঠিক বাস্তব মৃত্যুর দৃশ্য বলা যায় না; এগুলি রােমান্টিক কবির রােমান্টিক মৃত্যু কল্পনা। অন্য চিত্রগুলি মৃত্যুর বাস্তব দৃশ্য,—খাদ্য-খাদকের নখে-দন্তে ওই চিত্রগুলি রক্তাক্ত।
প্রথম চিত্রগুলির অন্যতম হল আকাশের নীলাভ নরম বুক থেকে নক্ষত্রের ঝরে পড়া। রবীন্দ্রনাথ একে তারকার আত্মহত্যা বলেছেন। কিন্তু একথা কে না জানে, তারকা বা নক্ষত্রের জীবন নেই। তাই নক্ষত্রের ঝরা বা উল্কা পতনকে বাস্তব মৃত্যু বলা যায় না। তেমনি হেমন্তের কুয়াশার মধ্যে যে রূপশালী ধান ঝরে যায়, তাকে রূপময় জীবনের অবসানের সঙ্গে তুলনা করা যায়, কিন্তু বাস্তবে তাকে মৃত্যু বলা যায় না। তবে এখানে যে মৃত্যুর কল্পনা আছে, সে মৃত্যু শান্ত সুন্দর, আদৌ ভয়ঙ্কর নয়। রীতিমত রােমান্টিক।
অপরপক্ষে কবি নিজের অনিবার্য মৃত্যুর অনুষঙ্গে কতকগুলি বাস্তব মৃত্যুচিত্রও এঁকেছেন। সেগুলি হল, নিম পেঁচার ইঁদুর ধরে খাওয়া, কালীদহের ঝড়ে পদ্মের নালভাঙা, গাংচিলের নখে শালিখের প্রাণবধ প্রভৃতি। মৃত্যু যেমন অতর্কিতে এসে মানুষকে নাশ করে, তেমনি ওই সব হিংস্র পক্ষী তাদের জীবিকার জন্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণীদের হত্যা করে; কখনাে বা প্রাকৃতিক প্রচণ্ড দুর্যোগ প্রকৃতিরই সুন্দর কমনীয় জিনিসকে বিনষ্ট করে। এখানে কবি ভয়ঙ্কর মৃত্যুর কথা বলেছেন।
কিন্তু বাস্তব হােক, কাল্পনিক হােক, কবির অনুভূতিতে সব মৃত্যুচিত্রই আশ্চর্যভাবে সত্য হয়ে উঠেছে, কারণ কবির নিজের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু এদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
কবির দৈহিক মৃত্যু হলেও কবির অনুভূতি অবিনশ্বর বলেই তিনি মনে করেছেন। কারণ তিনি কামনা করেছেন, মৃত্যুর মধ্যেও যেন রূপসী বাংলা তার সমস্ত ঐশ্বর্য ও মাধুর্য নিয়ে কবির বুকের ওপর যেন জেগে থাকে। ঠিক যেমন উমা ও মহেশ্বর একত্রে মিলিত হয়ে অর্ধনারীশ্বর মূর্তি ধারণ করেছিলেন, তেমনি কবি ওই একইরূপে তার রূপসী বাংলার সমগ্র সত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান। এই পৌরাণিক রূপকল্পটি কবির একাত্মতার ইচ্ছাকে তীব্রতর, গভীর ও মনােজ্ঞ করে তুলেছে।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: ।। “তবু যেন মরি আমি এই মাঠ-ঘাটের ভিতর, কার লেখা, কোন কবিতার অংশ ? যে মাঠ-ঘাটের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও। বক্তা সেই মাঠ-ঘাটের ভেতর মরতে চান কেন?
• উত্তর :প্রশ্নোক্তৃত পঙক্তিটি রবীন্দ্রোত্তর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা। এটি রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের ১৯ সংখ্যক কবিতা, রূপসী বাংলা’র অংশ।
উদ্ধৃত অংশে যে মাঠ-ঘাটের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবির জন্মভূমি,—অবিভক্ত বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট। এখানে আকাশের নীলাভ নরম বুকে শােভা পায় দীপ্যমান নক্ষত্র, হৈমন্তিক কুয়াশায় ঝরে পড়ে রূপশালী ধান, নিশীথের অন্ধকারে ভেসে আসে নিমপেঁচার ডাক, মেঠো ইঁদুর পাকা ফসল কুড়িয়ে গর্তে সঞ্চয় করে রাখে। এখানকার শূন্য মাঠের উপরে বাঁকা চাদ প্রহর জাগে, নিচে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু থেকে পাওয়া যায় ঘ্রাণ। সংক্ষেপে,
রূপশালী ধান, নিমপেঁচা, মেঠো ইদুর, গাংচিল, শালিখ, শস্যহীন মাঠ, গাঙুড়ের ঢেউ,—এইসব চেতন ও অচেতন বস্তু ও প্রাণীদের নিয়েই কবির ‘রূপসী বাংলার মাঠ-ঘাট। এটাই কবির চোখে দেখা বাংলার রূপ।
কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর জন্মভূমি অবিভক্ত বাংলাদেশকে দেখেছেন মাতারূপে
। স্বদেশপ্রেমিক কবির কাছে দেশের মাটিই যেন মা। যে বাংলার রূপ দেখে কবি পৃথিবীর আর কোন দেশের মুখ খুঁজতে যাননি, সেই বাংলাই কবির রূপসী বাংলা। এই রূপসী বাংলার অজস্র রূপ প্রকৃতিপ্রেমিক কবি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভােগ করেছেন, ভালােবেসেছেন। কবি জানেন, জীবনে মৃত্যু অনিবার্য। রূপসী বাংলার নিসর্গ ও জীবজগৎ তার এতই প্রিয় যে, তিনি বাংলার বুক ছেড়ে অন্য কোথাও মরতে চান না। তার একমাত্র অভীপ্সা, তিনি যেন বাংলার মাঠে-ঘাটে অজস্র রূপ আর অনির্বচনীয় মাধুর্যের মধ্যে তার জীবনের অন্তিম শয্যা রচনা করেন। মৃত্যুর মধ্যেও কবি বঙ্গজননীর রূপ-রস-গন্ধ-ভরা সান্নিধ্য প্রাণভরে চেয়েছেন। তার একান্ত কামনা হল, রূপসী বাংলার মাঠভরা ফসল, নীলাভ আকাশ, শস্যভরা মাটির সঙ্গে তার অন্তর-যােগ যেন বিচ্ছিন্ন হয় মৃত্যুর পরেও।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ।। আমারে কুড়ায়ে নেবে মেঠো ইদুরের মতাে মরণের ঘরে’—উদ্ধৃতিটি কোন কবির কোন্ কবিতার অংশ? আমারে’ বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে? কুড়ায়ে নেবে’ কথার অর্থ কী? কে কুড়ায়ে নেবে?
উত্তর: আলােচ্য অংশটি কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলা কবিতার একটি নির্মম করুণ উক্তি।
এখানে আমারে’ বলতে কবি নিজেকেই বুঝিয়েছেন। পারিপার্শ্বিক হত্যা ও মৃত্যুর দৃশ্য কবিকে অতিমাত্রায় মৃত্যুসচেতন করে তুলেছে।
এখানে কুড়ায়ে নেবে’কথাটির অর্থ হল গ্রাস করে নেবে; অন্ধকারে নিম পেঁচা যেমন ইঁদুরকে কুড়িয়ে নেয় বা গ্রাস করে নেয়, তেমনি মৃত্যুও অতর্কিতে এসে কবিকে গ্রাস করবে। মুমূর্ষ ইদুরের মুখে যেমন ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে, অর্থাৎ তার ক্ষুদ খাবার আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে থাকে, তেমনি স্রিয়মান কবির মনেও জেগে থাকবে জীবনকামনা; এ জীবন কামনা অবশ্যই ইঁদুরের মত একান্তভাবে জৈবিক নয়, ক্ষুদ খাবার আকাঙ্ক্ষা নয়,—তা শূন্য মাঠ, বাঁকা চাদ, শিশিরের গন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সুন্দরের জন্য আকাঙ্ক্ষা।
পেঁচা রূপ মৃত্যু এসে কবিকে ইঁদুরের মত কুড়িয়ে নেবে বা গ্রাস করে নেবে। পেঁচা এখানে মৃত্যুর প্রতীক। সে কুৎসিত, ধূর্ত, কোটচারী; অতর্কিতভাবে সে দুর্বল প্রাণীদের আক্রমণ করে হত্যা করে। কবির মৃত্যু হয়তাে রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার মত বা নক্ষত্রের পতনের মত শান্ত সহজ হবে না, সে মৃত্যু নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কররূপে অতর্কিতে আসবে কবির জীবনে। তাই কুচক্রী পেঁচার উপমাটি বেশ লাগনসই এবং সার্থক।
রূপসী বাংলা কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ।। রূপসী বাংলা কবিতায় কবি বাংলাকে রূপসী বলেছেন কেন? কবিতাটির প্রথম অংশে কোন্ কাল এবং দিনরাত্রির কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে, উদ্ধৃতিসহ আলােচনা করাে। মৃত্যুর পর কবি কী ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, লেখাে।
উত্তর: ১ম অংশ : বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/খুঁজিতে যাই না আর’—উদ্ধৃতাংশে যে বাংলার মুখের কথা কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছে, তা হচ্ছে তার জন্মভূমি অবিভক্ত বাংলাদেশ। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমে সাঁওতাল পরগণা পর্যন্ত ছিল এর ভৌগােলিক সীমানা। কবির মাতৃভূমি এই নদীমাতৃক বাংলাদেশই, তার দৃষ্টিতে রূপসী বাংলা’, রূপের তিলােত্তমা। মাতৃমহিমা যেমন মাতার শুধুমাত্র স্নেহ ও দেহরূপ নয়, সন্তানের অকৃত্রিম অনুরাগই তাকে মহিয়সী করে তােলে, তেমনি জীবনানন্দও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই মুগ্ধ হননি, তার আন্তরিক দেশানুরাগ বাংলাকে রূপসী তিলােত্তমারূপে কল্পনা করেছে। কবির দৃষ্টিতে বাংলাকে অপরূপ রূপসী করেছে গ্রামবাংলার প্রকৃতি। চেতন ও অচেতন বস্তু এবং সজীব প্রাণী সকলে মিলে। মাঠ-ঘাট, তামসী রাত্রে আকাশের নীলাভ নরম বুক’-এ দীপ্যমান নক্ষত্ররাজি, হেমন্তের শিশির কুয়াশা, দিকে দিকে রূপশালী ধান, অন্ধকারের মধ্যে নিমপেঁচার গান, মেঠো ইদুর, বাঁকা চাদ’-এর স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, দিগন্তবিস্তৃত শূন্য মাঠ, গাংচিল, শালিখ, কালীদহ, গাঙুড়ের ঢেউ কবির মনের গভীরে কল্পনার সাথী হয়েছে। জীবনানন্দের রােমান্টিক কবিমন বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, কাব্যগাথা, পুরাণ, রূপকথার রহস্যলােকে অভিসার করে তার অতীত সৌন্দর্যকেও খুঁজে পেতে চেয়েছে। এজন্যই রবীন্দ্রনাথের কাছে যা ‘সােনার বাংলা, জীবনানন্দের দৃষ্টিতে তা রূপসী বাংলা।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
২য় অংশ : চতুর্দশপদী বা সনেটধর্মী রূপসী বাংলা কবিতায় প্রথম আটটি ছত্রে অর্থাৎ অষ্টকে কবি স্পষ্ট করে কোন ঋতু বা দিনরাত্রির কোন সময়ের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু হিম, কুয়াশা, রূপশালী ধান, শিশিরের ঘ্রাণ, নক্ষত্র প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ করে এবং ওই শব্দগুলির সাহায্যে অনিবার্য মৃত্যুর অনুষঙ্গে অঙ্কিত চিত্রগুলির মাধ্যমে কবি তার প্রিয় হেমন্তকালকে এবং বিশেষভাবে হেমন্তের রাত্রিকে যে আভাসিত করেছেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
কুয়াশায় ঝরে পড়ে দিকে দিকে রূপশালী ধান একদিন’—মাঠে মাঠে কুয়াশায় স্বর্ণবর্ণ পাকা রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার দৃশ্য হেমন্তকালকেই ইঙ্গিত করে। আলােচ্য কবিতায় কবি মৃত্যুর কয়েকটি প্রতীকচিত্র অঙ্কন করেছেন। এই মৃত্যুচিত্রগুলির বেশির ভাগই হেমন্তের হিমেল প্রান্তরের পটভূমিতে আঁকা। বাঁকা চাঁদ’, শূন্য মাঠ’, শিশিরের ঘ্রাণ’—এই ছত্রটিতে আভাসিত হয়েছে হেমন্ত প্রকৃতির ছবি। |
‘যে ইঙ্গিতে নক্ষত্রও ঝরে/আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে দিয়ে হিমের ভিতরে/ডুবে যায়, কবিতার অষ্টকের এই পঙক্তিগুলিতে রাত্রির প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দিনের আলাের গভীরে’ থাকা নক্ষত্ররাজি দেখা নয়, রাত্রির অন্ধকারেই নীলাভ আকাশের বুক থেকে নক্ষত্রপতন দেখা যায়। এবং তা ওই হেমন্তেই হয়তাে বা নিমপেঁচা অন্ধকারে গা’বে তার গান,—নিশাচর পাখি নিমপেঁচার অন্ধকারে গান গাওয়াও রাত্রির ইঙ্গিত দেয়। বাঁকা চাদ, শূন্য মাঠ, শিশিরের ঘ্রাণ’—অষ্টকের সর্বশেষ এই ছত্রে ক্ষয়িষ্ণু বাঁকা চাঁদের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় ফসল কাটা মাঠের বর্ণনা এবং শিশিরের ঘ্রাণ রাত্রিকেই বিশেষভাবে আভাসিত করেছে।
রুপসী বাংলা কবিতা প্ৰশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: ।। “রূপসী বাংলা যেন বুকের উপর জেগে থাকে,”লেখা এবং কোন্ কবিতার অন্তর্গত? কার বুকের উপর রূপসী বাংলার জেগে থাকার বাসনাটি ব্যক্ত হয়েছে? রূপসী বাংলার প্রতি কবি তাঁর ভালবাসা কীভাবে পরিস্ফুট করেছেন? কবি তাঁর অনিবার্য মৃত্যুকে যে কটি চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার পরিচয় দাও।
অথবা, রূপসী বাংলা’কবিতায় কবি বাংলার প্রতি যে ভালােবাসা ব্যক্ত করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর(ক): রবীন্দ্রোত্তর যুগের অসামান্য কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা কবিতার একটি স্মরণীয় পঙক্তি হল এই আলােচ্য অংশটি।
কবি জীবনানন্দ নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাঁর মৃত্যুর সময়ে যেন রূপসী বাংলা তাঁর বুকের ওপর জেগে থাকে।
এই চতুর্দশপদী কবিতাটির প্রতিটি পঙক্তিতে কবি জীবনানন্দ দাশ তার মাতৃভূমি রূপসী বাংলার প্রতি জাগিয়েছেন ঐকান্তিক ভালবাসা। বাংলাদেশ কবির কাছে যেন রূপের তিলােত্তমা। তিনি সেই বাংলার মুখ দেখে পৃথিবীর আর কোন দেশের মুখ দেখতে চাননা। তা সে দেশ যতই সুন্দর হােক না কেন? কবি বাংলার অনির্বচনীয় রূপের সন্ধান করেছেন বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মধ্যে, দূর নক্ষত্রলােকে, বাংলার অতীত ইতিহাসে, পুরাণ, রূপকথা এবং কাব্য-সংস্কৃতির রহস্যময়তায়। জন্মভূমির জন্য কবির এই ভালবাসা অনিবার্য মৃত্যুর বিষন্ন ছায়াপাতে কিছুটা করুণ।
কবি ভালবেসেছেন বাংলার নির্জন প্রান্তর, রূপশালী ধান। হেমন্ত ঋতুর হিমেল বিষন্নতার সঙ্গে রয়েছে কবির অন্তরের যােগ; ইদুরের মুখে ক্ষুদের গন্ধের মত তার সমগ্র সত্তায় জেগে আছে
জীবন কামনা বাংলার শূন্য মাঠ এবং তার ওপর বাঁকা চাঁদ কবিকে করেছে অভিভূত। এই আশ্চর্য ইন্দ্রিয়সচেতন কবি ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর মধ্যে গন্ধ অনুভব করেন। জীবনে মৃত্যু অনিবার্য, তাই মৃত্যুতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু সেই মৃত্যু যেন কবির জন্য বাংলার মাঠে-ঘাটে শয্যা রচনা করে। যমুনা নয়, মৃত্যুর সময় যেন বাংলার গাঙুড়ের ঢেউয়ের গন্ধ তার চোখে-মুখে লেগে থাকে, বুকে জেগে থাকে যেন বাংলার অজস্র রূপ,—তারই মাঝে তিনি অর্ধনারীশ্বর হয়ে শুয়ে থাকতে চান। তিনি চান, মৃত্যুর পরে তার সমগ্র সত্তা যেন মাতৃসত্তায় লীন হয়ে যায়।
জীবনানন্দের কাব্যে মৃত্যুচিন্তা তাঁর কাব্য-ভাবনার একটি অন্যতম উঠেছে
বৈশিষ্ট্য, আর রূপসী বাংলা কাব্যে তাে প্রায় সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে এই চিন্তা। এই বাংলার মাঠে বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে র’ব’, ‘যেদিন সরিয়া যাব তােমাদের কাছ থেকে’, ‘ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তােমাদের নক্ষত্রের রাতে’ ইত্যাদি বহু কবিতায় কবির এই মর্তভূমি থেকে চলে যাবার চিন্তা। আলােচ্য কবিতায় কতকগুলি প্রতীকের সাহায্যে কবি এই সত্যটিকে নির্মমভাবে প্রকাশ করেছেন। আকাশ থেকে নক্ষত্রের ঝরে পড়া, হৈমন্তিক কুয়াশায় রূপশালী ধানের ঝরে পড়া, অন্ধকারে পেঁচার ইঁদুর-ধরা, এসব চিত্রের মধ্যে মৃত্যুর অনিবার্যতার চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। ঝড়ে কালীদহের কমলের নাল-ভাঙা, গাংচিলের শালিক ধরা,—এই দুটি চিত্রের মধ্যে পাই মৃত্যুর আকস্মিকতার অনুভব। সব চিত্রই মৃত্যুকবলিত জীবনের কারুণ্যকে প্রকাশ করেছে। এখানে কুয়াশা, পেঁচা, নক্ষত্র, ধান, ইঁদুর, পদ্মের নাল, শালিক মৃত্যুর এবং জীবনের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়েছে। রূপসী বাংলাকে ছেড়ে যেতে হবে বলেই কবির পক্ষে মৃত্যু যেমন অত্যন্ত করুণ হয়ে উঠেছে, তেমনি মরণের বৃন্তে জীবনের ফুল হয়েছে শতদলে বিকশিত; অর্থাৎ কবির জীবনকামনা উৎসারিত হয়েছে। শতধারায়; এ কামনা রূপসী বাংলার রূপ দেখার কামনা; তাই রূপসী বাংলা কবির চোখে হয়ে উঠেছে রূপের তিলােত্তমা।
রূপসী বাংলা জীবনানন্দ দাশ:
প্রশ্ন: ।। “রূপসী বাংলা যেন বুকের ওপর জেগে থাকে।’—বাংলাকে রূপসী বলার কারণ কী? উক্তিটির মধ্যে কবির কীরূপ মনােভাবের পরিচয় পাওয়া যায় বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ১ম অংশের উত্তরের জন্য ৪নং রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ১ম অংশের ২য় অনুচ্ছেদ দেখ। এই রূপসী বাংলাকে ভালােবেসে কবি তার অজস্র সৌন্দর্য ও অনির্বচনীয় মাধুর্যের মধ্যে মৃত্যুতেও শান্তি পেতে চেয়েছেন। তিনি কামনা করেছেন, যেন তার মৃত্যুর সময়ে বুকের ওপর জেগে থাকে রূপসী বাংলা এবং তিনি বাংলার সমগ্র রূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে দিতে পারেন। উমা ও মহেশ্বর মিলে যেমন অর্ধনারীশ্বর মূর্তি ধারণ করেন, তেমনি কবিও রূপসী বাংলার সঙ্গে অভেদাত্ম অনূভূতি লাভ করতে চেয়েছেন। কবির এই ঐকান্তিক কামনার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তার প্রকৃতিপ্রেম এবং দেশানুরাগ। পৌরাণিক অনুষঙ্গটি কবির এই অন্তিম কামনাকে অধিকতর তীব্র ও গভীর করেছে।
রূপসী বাংলা কবিতার প্রশ্ন
প্রশ্ন: ।। “তারি নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর।”—এ কামনা কার? কার নিচে কবি শুয়ে থাকতে চেয়েছেন? অর্ধনারীশ্বর শব্দটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: এই ঐকান্তিক কামনা প্রকাশ করেছেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। মৃত্যুর মধ্যেও কবি বঙ্গজননীর রূপ-রস-গন্ধ-ভরা সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি; তাই তিনি এরকম কামনা করেছেন।
তিলােত্তমা বাংলার অজস্র রূপ আর অনির্বচনীয় মাধুর্যের মধ্যে কবি তাঁর জীবনের অন্তিম শয্যা রচনা করতে চেয়েছেন। বাংলাকে ভালােবেসে তিনি মরণের মাঝেও বাংলা প্রকৃতির কোলে শান্তি পেতে চেয়েছেন।
অর্ধনারীশ্বর’ কথাটির মধ্যে আছে একটি পৌরাণিক অনুষঙ্গ। শিব ও পার্বতীর পরস্পরের মিলনের ফলে যে অপূর্বসুন্দর একটি মূর্তি রচিত হয়, তাকে বলা হয়েছে অর্ধনারীশ্বর। এই সমগ্র মূর্তিটির অর্ধাংশ পুরুষ এবং অর্ধাংশ নারী। কবি জীবনানন্দও মৃত্যুর মাঝে রূপসী বাংলার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান; তখন বাংলার প্রকৃতি ও কবিসত্তা মিলে যা পাওয়া যাবে তা হল অর্ধনারীশ্বরের অনুভূতি। এই চিত্রকল্পটির মধ্যে কবির প্রকৃতিপ্রেম এবং রােমান্টিক অনুভূতির চরম প্রকাশ ঘটেছে।