প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ : প্রাচীন আফ্রিকা ও আদিম মানব প্রশ্ন-উত্তর একাদশ শ্রেণির ইতিহাস
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ : প্রাচীন আফ্রিকা ও আদিম মানব প্রশ্ন-উত্তর একাদশ শ্রেণির ইতিহাস
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
এখানে প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ, প্রাচীন আফ্রিকা ও আদিম মানব এই অধ্যায় গুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
নব্য প্রস্তর পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করে। অথবা, নব্য প্রস্তর যুগ সম্পর্কে লেখাে৷
সূচনা: পাথরের যুগের শেষ পর্যায় নতুন পাথর বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age) নামে পরিচিত। মধ্য প্রস্তর সংস্কৃতির শেষ দিকে পৃথিবীতে অনুকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি হলে আদিম মানবের জীবনযাত্রায় উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। আনুমানিক খ্রি.পূ. ৮০০০-৪০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কাল হল নতুন পাথরের যুগ।
নব্য প্রস্তর যুগের মানবজীবনের বিভিন্ন দিক
1 জীবিকা
i. পশুপালন: এযুগের মানুষ পশুপালনের কৌশল আয়ত্ত করে। কুকুর, ভেড়া, গােরু, গাধা, হাতি প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শেখে। খাদ্যের জোগান ছাড়াও গৃহপালিত পশুকে তারা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে।
ii. কৃষির সূচনা: নব্য প্রস্তর পর্বে আবাসস্থলের পাশে বীজ বা গাছের শিকড় পুঁতে দেওয়া শুরু হয়। এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে।
2 সমাজ : এযুগে পরিবারগুলির সামাজিক কাঠামাে আরও সুসংঘবদ্ধ হয়। সমাজে একক বা দলগত বিবাহরীতি চালু হয়। সমাজে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং শ্রমবণ্টন ব্যবস্থা চালু হয়।
4 হাতিয়ার : নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি, নিড়ানি, ছেনি, বাটালি, কাস্তে, বর্শার ফলা, ছােরা, উঁচ প্রভৃতি। কুঠার, কোদাল-সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয়।
5 আগুনের ব্যবহার : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল আবিষ্কার করে। আগুনের সাহায্যে তারা কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে বা সেদ্ধ করে খেতে শিখল, গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে বুনাে জানােয়ারদের তাড়াতে শিখল এবং শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখল।
6 চাকার আবিষ্কার :
নব্য প্রস্তর যুগে এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হলো চাকা। চাকার ব্যবহারের মাধ্যমে মৃৎপাত্র উৎপাদনে পরিবর্তন আসে, পাশাপাশি চাকাকে কাজে লাগিয়ে যানবাহন তৈরির ধারণা সৃষ্টি হয়।
7 ভাষার উন্নয়ন: নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার উন্নতি ঘটেছিল। এযুগে সমাজ কাঠামাে অনেক সংঘবদ্ধ হওয়ায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কিছু ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
৪. শিল্প
i. ববয়ন শিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে বস্ত্রবয়ন শিল্পের সূচনা ঘটেছিল। শণের আঁশ থেকে তৈরি সুতাে দিয়ে এসময়ের কারিগররা লিনেন কাপড় বুনতে শেখে। মেসােপটেমিয়ার কারিগররা ভেড়ার লােম দিয়ে পশমি কাপড় বানাতে শেখে।
ii. মৃৎশিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে মৃৎশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। চাকাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে। মাটির তৈরি পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। পাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের নকশা এবং রং করার কৌশল চালু হয়।
9 শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাস: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ পাথর কেটে দেবীমূর্তি গড়তে শিখেছিল। মেসােপটেমিয়ার ইউবেইদ এবং ইজিয়ান এই ধরনের মূর্তি মিলেছে।
উপসংহার: প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য পর্যায় ছিল নব্য প্রস্তর যুগ। এই সময় মানুষ কৃষিকাজ, স্থায়ী বসতি নির্মাণ, আগুনের ব্যবহার প্রভৃতি শেখে এবং তারা খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। সর্বোপরি, এই পরিবর্তনগুলি ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক দ্রুত। তাই কৃষি সহ বিভিন্ন বিষয়ের এইসব ব্যাপক অগ্রগতিকে ঐতিহাসিক ভি. গর্ডন চাইল্ড নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
‘মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
অথবা, মধ্য প্রস্তর যুগের উপর একটি বিবরণ দাও।
ভূমিকা: প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের দ্বিতীয় পর্যায় হল মধ্য প্রস্তর যুগ। এই যুগকে ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ’ বলেও অভিহিত করা হয়। উত্তর ইউরােপের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটের বিভিন্ন স্থানে এই যুগের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। খাদ্য সংগ্রহকারী পুরা প্রস্তর যুগ ও খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী এই যুগের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়—
মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য
1 সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগের সময়সীমা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দ পর্যন্ত ছিল এই যুগের সময়সীমা।
2 হাতিয়ার : এ যুগের হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ারের চেয়ে উন্নত।
i. আকার : পাথরের ‘ফ্লেক’ থেকে নির্মিত এই পর্যায়ের হাতিয়ারগুলি ছিল আকারে ক্ষুদ্র। বেশিরভাগ হাতিয়ারের দৈর্ঘ্য ৫ সেন্টিমিটারের বেশি হত না।
ii. বিশেষত্ব: হাতিয়ারগুলির সাথে কোনাে দন্ড জাতীয় বস্তুকে জুড়ে বা গেঁথে নিতে হত। অর্থাৎ এযুগের হাতিয়ারগুলির বেশিরভাগই . ছিল মিশ্র আয়ুধ ।
iii. উপাদান : হাতিয়ারগুলি তৈরি হত মূলত কোয়ার্টজ, চার্ট, অ্যাজেট, ক্যালসেডনি জাতীয় পাথর, জীবজন্তুর হাড় প্রভৃতি দিয়ে।
iv. উল্লেখযােগ্য হাতিয়ার : এ যুগের উল্লেখযােগ্য হাতিয়ারগুলির মধ্যে ছিল ধারালাে ছুরি, ব্লেড, তিরের ফলা, বর্শা, হারপুন প্রভৃতি।
3 যাতায়াত ব্যবস্থা: এ যুগের মানুষ স্থলপথে বরফের ওপর দিয়ে চলার জন্য কুকুরে টানা স্লেজগাড়ি ব্যবহার করত। জলপথে যাতায়াতের জন্য তারা ব্যবহার করত গাছের গুঁড়ি থেকে বানানাে নৌকা।
4 জীবিকা ও অর্থনীতি : পশুপাখি শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ ছিল এ যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। তারা কুঁজওয়ালা যাঁড়, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, লাল হরিণ, বনবিড়াল, শূকর, গণ্ডার, হাতি, কচ্ছপ, নেউল, বিভিন্ন পাখি প্রভৃতি শিকার করত। এছাড়া তারা নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ। ও শামুক সংগ্রহ করত এবং পশুপালন করত। এ যুগে কুকুর, গবাদিপশু, শূকর, মহিষ, ভেড়াকে পালন করা শুরু হয়। এ যুগের শেষের দিকে কৃষিকাজের সূত্রপাতও ঘটেছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। মধ্য প্রস্তর যুগে শিকার ও পশুপালন নির্ভর এক মিশ্র আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
5 মানবদেহের গড়ন: এ যুগের মানুষের দেহের গড়ন ছিল বেশ বলিষ্ঠ। নারী ও পুরুষ লম্বায় ছিল যথাক্রমে ১৭০ ও ১৮০ সেমি। তবে পশুর আক্রমণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের অল্প বয়সে প্রাণ হারাতে হত।
6 ধর্মবিশ্বাস: মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ বিশ্বাস করত যে, মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে। তাই তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃত মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করত।
7 শিল্পকর্ম : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের শিল্পের মধ্যে ছিল মৃৎশিল্প এবং চিত্রকলা।
i. মৃৎশিল্প : এই সময় কুমােরের চাকা আবিষ্কৃত না হওয়ায় হাতে করেই টিপে টিপে মাটির জিনিসপত্র তৈরি হত।
ii. চিত্রশিল্প : এই সময়ে গুহাচিত্রের প্রসার ঘটে। গুহার গায়ে নানা ধরনের জ্যামিতিক চিত্র আঁকা হত। সুইডেন, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশের গুহায় মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের আঁকা পশুর চিত্র পাওয়া গেছে।
উপসংহার: প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্তর্ভুক্ত মধ্য প্রস্তর যুগ ছিল এমন একটি পর্যায় যখন মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগ পেরিয়ে এসে নব্য প্রস্তর যুগের দিকে যাত্রা করেছে। এই সময়কার মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে সেই যুগলক্ষণই ফুটে ওঠে।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
প্লেইস্টোসিন যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করাে।
ভূমিকা: পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ | সময়কালকে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতগণ বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক যুগে বিভক্ত করেছেন। এই যুগগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল প্লেইস্টোসিন যুগ। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার চার্লস নীয়াল এই যুগটির নামকরণ করেন। ভুতত্বে অন্যান্য পর্বগুলির তুলনায় অতি সাম্প্রতিক এই প্লেইস্টোসিন (Pleistocene) পর্বেই মানব প্রজাতির সৃষ্টি হয়। এ যুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ
প্লেইস্টোসিন যুগের বৈশিষ্ট্য
1 সময়কাল: ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জিওলজিক্যাল সায়েন্সের-এর আলােচনা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্লেইস্টোসিন যুগের সূচনা হয়। এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বে।
2 ভূগঠনের পরিবর্তন: প্লেইস্টোসিন যুগে পৃথিবীর গঠনগত যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলি ধীরে ধীরে সরতে সরতে তা দীর্ঘকাল পর এখনকার অবস্থায় পৌছায়। এই সময় মাটির বর্তমান গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় এবং সমুদ্রে জলস্তরের উচ্চতা কমে যায়।
3 তুষার যুগ : প্লেইস্টোসিন যুগের দীর্ঘ সময় জুড়ে তীব্র শীতের অস্তিত্ব ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগ ক্রমশ শীতল হয়ে এই সময় পৃথিবীতে তুষার যুগের আবির্ভাব ঘটে। প্রায় সমগ্র উত্তর গােলার্ধ বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে যায়।
4 পরিবর্তনশীল আবহাওয়া : প্লেইস্টোসিন যুগে বারবার আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। এই যুগের মধ্যেই পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি উষ্ণ ও শীতল যুগের আবির্ভাব হয়। ড. আলব্রেখট পেঙ্ক ও ড. ব্রুনার তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, এইসময় [i] গুনজ (gunz), [i] মিডেল (Mindel), [i] রিস্ (Riss) ও [iv] উরম (Wurm)—এই চারটি তুষার যুগের উদ্ভব হয়েছিল এবং প্রতিটি যুগ গড়ে ১ লক্ষ ২৫ বছর স্থায়ী হয়েছিল। প্রতিটি তুষার যুগের মাঝখানে একটি করে উষ্ণ যুগের অস্তিত্ব ছিল।
| 5 প্রজাতির বিলুপ্তি: প্লেইস্টোসিন যুগে বারবার আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়। এই প্রতিকূল পরিবেশে ম্যামথ, বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিশালাকার পাখি প্রভৃতির বিলুপ্তি ঘটে।
| 6 অাধুনিক মানুষের আবির্ভাব; প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ দিকে হােমাে স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটে। চিন্তাশক্তি ও বিচক্ষণতার জন্য পশুর সঙ্গে মানুষের বিরাট পার্থক্য গড়ে দেয়। :
7 আন্তর্মহাদেশীয় পরিয়ান:
এ যুগের অধিকাংশ সময় তুষার যুগ বিরাজ করায় সমুদ্রের জল বরফে পরিণত হয় এবং ভূভাগের বেশির ভাগ স্থান বরফে ঢেকে যায়। এভাবে থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে সংযােগ গড়ে উঠলে থলভাগের পশু ও মানুষের পক্ষে বরফের সমুদ্র অতিক্র করে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া সম্ভব হয়।
৪ সমাজ গঠনের সূচনা : প্লেইস্টোসিন যুগে আধুনিক মানব তা উন্নত মগজের সহায়তায় ক্রমে উন্নততর জীবন গড়ে তােলে। এই সময় ধীরে ধীরে মানব সমাজ গঠন প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। মানুষ প্রয়ােজনে তাগিদে বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরি করতে শুরু করে।
উপসংহার: প্লেইস্টোসিন যুগ হল একটি ভূতাত্ত্বিক পর্ব। এযুগে বারবার আবহাওয়া ও অন্যান্য ভূগাঠনিক পরিবর্তন মানুষকে পরিস্থিতির সঙ্গে। খাপ খাইয়ে চলতে শিখিয়ে দেয়। এর ফলে মানুষ পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পরবর্তীকালে উন্নততর সভ্যতা গড়ে তােলে।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও। এই যুগের গুরুত্ব কী?
| নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রা ।
1 কৃষিকাজের সূচনা: নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কার ঘটে। মানুষ এই সময় গম ও যবের চাষ করতে শেখে। ফলে এযুগে মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়।
2 পশুপালন: এই সময় কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালন শুরু হয়। বেশকিছু বন্যপশু এই সময় গৃহপালিত পশুতে রূপান্তরিত হয়। প্রথমদিকে কুকুর, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি পশুকে পােষ মানানাে হয়।
3 স্থায়ী বসতি : কৃষিকাজ ও পশুপালনের ফলে মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। ফলে গৃহনির্মাণ পদ্ধতির বিকাশ ঘটে এবং কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
4 ধাতুর ব্যবহার: নব্য প্রস্তর যুগের শেষদিকে ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে সভ্যতার দ্রুত অগ্রগতি ঘটে। এই সময় মানুষ তামা ও টিন মিশিয়ে ব্রোঞ্জ ধাতু তৈরি করতে শেখে।
5 হাতিয়ারের উন্নতি; নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের ব্যবহার্য হাতিয়ারগুলির চরম উন্নতি সাধিত হয়। কাস্তে, কুঠার, জাঁতা, হামান, বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র এসময় তৈরি শুরু হয়। ব্রোঞ্জের তৈরি হাতিয়ারগুলি পাথরের হাতিয়ারের চেয়ে অনেক উন্নত ও মজবুত হয়। চাকা এযুগের একটি উল্লেখযােগ্য আবিষ্কার।
6 সাংস্কৃতিক অগ্রগতি : এযুগে মানব সংস্কৃতির যথেষ্ট পরিবর্তন ও অগ্রগতি ঘটে। গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সামাজিক জীবনের অগ্রগতি শুরু হয়।
7 পােশাক: এযুগে বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতি ঘটে। মানুষ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র পরিধান করতে শুরু করে।
৪ নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব: নব্য প্রস্তর যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অগ্রগতি তাকে কেউ কেউ নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
উপসংহার: নব্য প্রস্তর যুগের জীবনযাত্রা নিঃসন্দেহে আগের প্রাচীন প্রস্তর ও মধ্য প্রস্তর যুগের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। হাতিয়ারের গুণগত পরিবর্তন, স্থায়ী বসতি নির্মাণ এবং কৃষিকাজের প্রসার দ্বারা আদিম মানুষের খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হওয়া নব্য প্রস্তর যুগকে এক অভিনবত্ব প্রদান করেছে।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারি খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয় ?
সূচনা: নব্য প্রস্তর যুগের আগে পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন করতে জানত না বলে মানুষ বিভিন্ন হাতিয়ারের সহায়তায় তারা বন্য পশু শিকার করত এবং বনের ফলমূল, পাখির ডিম, নদীর মাছ প্রভৃতি সংগ্রহ করত। অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ে আদিম মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক (Food-gath- erer)। পুরুষ ও নারী উভয়েই খাদ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত থাকত।
আদিম মানুষ:শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারী
1 পুরুষের শিকার
i. হাতিয়ার: হােমাে স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের। আগে অনুন্নত মানুষ পাথর ও লাঠির বেশি কোনাে হাতিয়ারের ব্যবহার জানত না। পরবর্তীকালে মানুষ পাথরের বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে। যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতিয়ারগুলিও উন্নত হতে থাকে।
i. পশুশিকার
[a] শিকারে অংশগ্রহণ: এসময় পুরুষরা শিকারের কাজে অংশ নিত। তারা পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার বা অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পশু শিকার করত এবং শিকার করা পশুর মাংস সংগ্রহ করত।
[b] দলবদ্ধতা: এ যুগের মানুষ একাকী শিকারে না গিয়ে দলবদ্ধভাবে শিকারে বের হত। এভাবে প্রাচীন কালে শিকারি মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল বা সংগঠনটিকে ক্ল্যান’ (Clan) নামে অভিহিত করা হয়। রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষদের নিয়ে মূলত ক্ল্যান গঠিত হত।
[c] গােষ্ঠীর ভূমিকা: প্রতিটি মানবগােষ্ঠীই নির্দিষ্ট এলাকায় শিকার করত। সেখানে অন্য গােষ্ঠীর শিকারের অধিকার থাকত না। খুব বড়াে শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কখনাে কখনাে কয়েকটি ক্ল্যান ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেত। এরূপ সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত সমাজকে বলা হত ট্রাইব’ (Tribe)।
iii. মাংস বণ্টন: শিকার করে পাওয়া পশুর মাংস তারা সকলের মধ্যে ভাগ করে নিত। প্রথমদিকে তারা আগুনের ব্যবহার জানত না বলে কাঁচা মাংস খেত। পরবর্তীকালে আগুনের ব্যবহার শিখে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস করে।
2 নারীর খাদ্য সংগ্রহ: পরিবারের নারীরা নিকটবর্তী বনজঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, পাখির ডিম প্রভৃতি সংগ্রহ করত। তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার তৈরি করত এবং সন্তানের যত্নাদি করত। খাদ্য রাখার প্রয়ােজনীয় মৃৎপাত্রগুলিও মেয়েরাই তৈরি করত। এভাবে খাদ্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সুদূর অতীতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শ্রমবিভাজন গড়ে উঠেছিল।
3 আদিম মানুষের সংস্কৃতি : প্রাগৈতিহাসিক যুগে দীর্ঘকাল ধরে শিকারি আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। শিকারি ও খাদ্যসংগ্রাহক আদিম মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল—
i. লােম ও হাড় সংগ্রহ: আদিম মানুষ পশুর মাংস বা দুধ ছাড়াও পশুর লােম, চামড়া ও হাড় সংগ্রহ করত। চামড়া ও লােম দিয়ে তারা পরিধেয় বস্ত্র, শীতবস্ত্র এবং পশুর হাড় ও শিং দিয়ে তারা বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করল।
ii. বাসগৃহ নির্মাণ : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধভাবে নদী বা জলাশয়ের ধারে বাসগৃহ নির্মাণ করতে শুরু করে। তাদের তৈরি বাসগৃহগুলি ছিল তিন ধরনের, যথা—থল বসতি, হ্রদ বসতি, গুহা বসতি।
[a] থল বসতি: মাটির ওপর কৃষিজমির ধারে তৈরি হত স্থলবসতি। বড়াে বড়াে পাথরের চাই দিয়ে তৈরি হত ঘরের দেয়ালগুলি। পাথর ছাড়া মাটি, কাঠ, পাথর, বাঁশ, চামড়া প্রভৃতি উপকরণকে কাজে লাগিয়ে স্থলবসতিগুলি নির্মিত হত।
[b] হ্রদ সতি; হ্রদের জলের মধ্যে এই ধরনের ঘর তৈরি করা হত। সুইটজারল্যান্ডের নিউচ্যাটেল হ্রদে এই ধরনের বসতি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা গেছে।
[c] গুহা বসতি: আদিমকাল থেকেই মানুষ ছিল গুহাবাসী। তাই নতুন পাথরের যুগে এসে মানুষ গুহায় বাস করার অভ্যাস একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি।
iii. স্থায়ী বসতির মানােন্নয়ন: নতুন পাথরের যুগের মানুষের যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ এই পর্বে আরও উন্নত রূপ লাভ করে। সময় এগােনাের সঙ্গে সঙ্গে বসতির সংখ্যা বেড়ে ছােটো ছােটো গ্রাম গড়ে উঠতে শুরু করে। এ যুগের শেষের
দিকে রােদে শােকানাে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু হয়।
উপসংহার: আদিম যাযাবর থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হতে মানুষের দীর্ঘ সময় লেগেছিল। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ যাযাবর জীবনকে ফেলে এসে স্থায়ী জীবনের স্বাদ পায়। এর ফলে মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ
আফ্রিকায় আদিম মানবের অভিপ্রায়ণের কারণ ও প্রকৃতি কীরুপ ছিল ?
ভূমিকা: প্রাচীন আফ্রিকা হল মানব কৃষ্টির জাদুঘর। সেখানে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু সেখানকার আদিম মানুষ প্রয়ােজনের তাগিদে দূরদূরান্তের অজানা ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এই অভিপ্রায়ণের কারণগুলি নিম্নরূপ
আফ্রিকার আদিম মানবের অভিপ্রায়ণের কারণ
1 অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধান: প্লেইস্টোসিন যুগের একটা বড়াে সময়কাল জুড়ে পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে তুষার যুগ ও উয়যুগ বিরাজ করেছিল। তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্যের ফলে আবহাওয়া এ সময়কার মানুষের বাঁচার পক্ষে প্রতিকূল হয়ে ওঠে। তাই অপেক্ষাকৃত অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানে মানুষ নতুন স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
2 স্থলভাগের সংযুক্তি : প্লেইস্টোসিন যুগের তুষার-পর্বে সমুদ্র ও নদীনালার জলরাশি বেশ কয়েকবার শীতল হয়ে বরফে পরিণত হয়। ফলে এতদিন সমুদ্রের জলরাশি দ্বারা বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন স্থলভাগ বরফের দ্বারা সংযুক্ত হয়ে পড়ে। এই সুযােগে আদিম মানুষ বরফের ওপর দিয়ে অন্য জায়গায় যাত্রা করে।
3 খাদ্যের সংগ্রঙ্কে প্রয়ােজন: একই জায়গায় ক্রমাগত পশু | শিকার ও ফলমূল সংগ্রহের ফলে একসময় আফ্রিকার আদিম মানুষদের খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তাই শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের প্রয়ােজনেও আফ্রিকার আদিম মানুষ নতুন স্থানের উদ্দেশ্যে অভিপ্রায়ণ করে।
আদিম মানবের অভিপ্রায়ণের প্রকৃতি
প্রাচীন আফ্রিকার আদিম মানুষের অভিপ্রায়ণের প্রকৃতি ছিল নিম্নরূপ–
আন্তমহাদেশীয় পরিয়ান: আফ্রিকার আদিম মানুষেরা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পাড়ি দেয়। তারা আফ্রিকার ভূখণ্ড ছাড়িয়ে সর্বপ্রথম নিকটবর্তী ইউরােপীয় ভূখণ্ডে পৌছায়। পরে তারা এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও পৌছে যায়।
2 সময়ের বিস্তার : আফ্রিকার আদিম মানুষের বিভিন্ন মহাদেশীয় পরিযানে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তারা বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধুমাত্র এশিয়া ও ইউরােপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তেই তাদের সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর।
3 বেঁচে থাকার তাগিদ: আদিম মানুষের এই পরিযানের পিছনে কোনাে দিগ্বিজয় বা ধর্মবিজয়ের উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল বেঁচে থাকার তাগিদ । মূলত খাদ্য সংগ্রহ ও অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানেই তারা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়ে।
4 সমুদ্র অতিক্রম: তুষার যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রের জলরাশি ঠান্ডায় বরফে পরিণত হলে সমুদ্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলির মধ্যে সংযােগ স্থাপিত হয়। ফলে শুধুমাত্র স্থলভাগ অতিক্রম করে নয়, ফের সমুদ্র অতিক্রম করে আফ্রিকার আদিম মানুষ দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে।
5 পর্যায়ক্রম: আফ্রিকার আদিম মানুষের পরিযান ঘটেছিল দুটি পর্যায়ে।
i. প্রথম বহির্গমন: মনে করা হয় যে, হােমমা ইরেক্টাস প্রজাতির একটি মানব গােষ্ঠী সর্বপ্রথম আফ্রিকার বাইরে যাত্রা করে। এই যাত্রা প্রথম বহির্গমন’ বলে অভিহিত হয়। আজ থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ বছর আগে এই গােষ্ঠীর উত্তরসূরিরা চিন, জাভাসহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করত।
ii. দ্বিতীয় বহির্গমন; আফ্রিকার আদিম মানবের দ্বিতীয় বহির্গমনটি ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এই সময় আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে হােমাে স্যাপিয়েন্সদের একটা বড় মাপের পরিযান ঘটেছিল। এটি আফ্রিকার মানব গােষ্ঠীর দ্বিতীয় বহির্গমন’ হিসেবে পরিচিত
আদিম মানবের অভিপ্রায়ণের প্রকৃতিপরিযানের অভিমুখ :
1. ইউরােপে: আফ্রিকার সঙ্গে ইউরােপ মহাদেশের প্রধান সংযােগথল ছিল আরব ভূখণ্ড, আধুনিক গবেষণাধর্মী অভিমত হল আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষ আরবের দক্ষিণ প্রান্তের পথ ধরে ইউরােপের দিকে এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তারা উত্তরদিকের মিশরীয় পথকে পরিহার করে।
ii. এশিয়ায় : আদিম আফ্রিকার অধিবাসীরা দুটি মূল ধারায় ভাগ হয়ে এশিয়া মহাদেশে পৌঁছায়। প্রথম ধারাটি আফ্রিকা থেকে ইউরােপ হয়ে স্থলপথ ধরে এশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই পরিযান পর্বে প্রথমে পশ্চিম এশিয়া এবং পরে চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যবদ্বীপ (জাভা)সহ নানা স্থানে তারা যাত্রা শুরু করে। আর দ্বিতীয় ধারাটি আরব হয়ে ইউরেশিয়ার পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করে।
iii. উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়; আদিম আফ্রিকাবাসী বেরিং প্রণালী ধরে এশিয়া হয়ে উত্তর আমেরিকার দিকে পাড়ি দেয়। সেখান থেকে তারা আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়। শেষে তারা দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছােয়।
iv. অস্ট্রেলিয়ায়:তুষার যুগে আদিম আফ্রিকাবাসীর মধ্যে অনেকেই এশিয়া থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পৌঁছােয়।
উপসংহার: গবেষকরা আধুনিককালের বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর মানুষের ডিএনএ-এর সাথে আফ্রিকার আদিম মানুষের জীবাশ্মের ডিএনএ-এর তুলনামূলক আলােচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, একদা আফ্রিকা থেকেই আদিম মানুষ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, আফ্রিকার বহু প্রাচীন জীবাশ্মগুলির ডিনএ-এর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মানব গােষ্ঠীর ডিএনএর বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
প্লেইস্টোসিন থেকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ