ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রশ্ন উত্তর টেকজ সঞ্জীব

 ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রশ্ন উত্তর টেকজ সঞ্জীব

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

প্রােফেসর শঙ্কু

 

 ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি গল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন-) যে জিনিসটাকে অক্ষয় অবিনশ্বর বলে মনে হয়েছিল, সেটা হঠাৎ পিঁপড়ের খাদ্যে পরিণত হলাে কী কৱে?’-লেখকের বর্ণনা দৃষ্টে বিবৃত করাে। 

ব্যোমযাত্রীর-ডায়রি-প্রশ্ন-উত্তর-টেকজ-সঞ্জীব

 

উত্তর : ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ কাহিনির শেষে তারক চাটুজ্যের দেওয়া প্রােফেসর শঙ্কুর লেখা ডায়রি কী করে অবলুপ্ত হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছেন লেখক সত্যজিৎ রায়।

 

ডায়ৱি নিশ্চিহ্ন : প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা কোথায় তা জানার কৌতূহল অনেকের মনেই প্রশ্ন হয়ে উঁকি দিতে পারে। ওই আশ্চর্য জিনিসটা দেখবার কোনাে উপায় আছে কিনা এ কথা জানার কৌতূহলও তাদের মনে জাগতে পারে। তার প্রত্যুত্তরে লেখক সত্যজিৎ রায় বলেছেন যে, তাঁর নিজের ইচ্ছে ছিল যে, ডায়রিটা ছাপানাের পর, তার কাগজ ও কালি কোনাে বিজ্ঞানীকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে ডায়রিটিকে জাদুঘরে দিয়ে দেবেন। জিনিসটা সেখানে থাকলে সকলের দেখার অবাধ সুযােগ থাকবে। তা হওয়া সম্ভব হয় না। কারণটা বড়াে আশ্চর্যজনক। লেখাটা কপি করে প্রেসে দেওয়ার পরে বাড়ি ফিরে লেখক শােওয়ার ঘরের তাক থেকে ডায়রিটা নামাতে গিয়ে দেখেন জায়গাটি ফাঁকা। অদ্ভুত ব্যাপার যে, ডায়রির পাতার গুঁড়াে আর লাল মলাটের সামান্য অংশই পড়ে রয়েছে। তার ওপর চরে বেড়াচ্ছে ক্ষিপ্রপদ শ’খানেক ক্ষুধার্ত ডেয়াে পিঁপড়ে। ওরা সমস্ত ডায়রিটা খেয়ে পেটে পুরেছে। যে সামান্য অংশটুকু পড়েছিল তাও লেখকের চোখের সামনে উদরস্থ করে ফেলে। লেখক কেবল অবাক হয়ে হাঁ করে চেয়ে থাকেন। প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রিখানা এভাবেই অবলুপ্ত হয়ে যায়।

 

প্রশ্ন ) ‘সেই দিনটার কথা অজিও বেশ মনে আছে ।—মনে থাকার কারণ কী?

 

মনে থাকার কারণ বছর বারাের আগের আশ্বিন মাস। বাগানে আরামকেদারায় শুয়ে শরতের মৃদু ( বাতাস উপভােগ করছেন প্রােফেসর শঙ্কু। তিনি আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিনগুলিতে রাতের আহার সেরে এইভাবে আরামকেদারায় শুয়ে থাকেন। কারণ এই সময় রাতে সবচেয়ে বেশি এক ঘণ্টায় আট-দশটা উল্কাপাত হয়। তিনি উল্কাপাত দেখতে খুব ভালােবাসেন। সেদিন কতক্ষণ শুয়েছিলেন খেয়াল নেই। হঠাৎ দেখলেন, একটা উল্কা যেন একটু অন্যরকমের। উল্কাটা যেন ক্রমশ বড়াে হচ্ছে। আর তাঁর মনে হলাে সেটা যেন তাঁর দিকেই আসছে। তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। উল্কাটা তাঁর দিকে এসে আবার চলে গেল বাগানের পশ্চিম দিকে গােল গাছটার কাছে। উল্কাটা প্রকাণ্ড জোনাকির মতাে হয়ে জ্বলতে লাগল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। চেয়ার ছেড়ে উল্কাটিকে দেখতে যাওয়ার জন্য উঠে যেতেই তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। স্বপ্ন বলে তাঁর বিশ্বাস করতে খটকা লাগছে দুটি কারণে। এক ] আকর্ষণ, যার বশে পরদিন থেকেই তিনি রকেটের বিষয় ভাবতে শুরু করেন। দুই D গােল গাছ। যার ফুল ফুটছে পরের দিন থেকে এক নতুন ধরনের। ফুলের পাঁচটা পাপড়ি আঙুলের মতাে লম্বা ঝােলা ঝােলা। দিনে থাকে কুচকুচে কালাে, রাতে ফরফরাসের মতাে জ্বলতে থাকে। হাওয়ায় দুললে মনে হয় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

 

প্রশ্নঃ ‘আমরা সাত দিন হলাে পৃথিবী ছেড়েছি। —পৃথিবী ছেড়ে ৱকেট যাত্রায় মালপত্রের ওজনসহ বিবৱণ দাও। প্রােফেসর শঙ্কুৱ ডায়ৱি অনুসরণে নিউটন, বিধুশেখর ও প্রহ্লাদেৱ কথা লেখাে। 

 

মালপত্র ও সেগুলির ওজন : যাত্রী ও মালপত্র নিয়ে ওজন দাঁড়িয়েছেপনেরাে মন বত্রিশ সের তিন ছটাক। রকেট যাত্রীদের জন্য পাঁচ বছরের রসদ সঙ্গে আছে। নিউটনের জন্য আছে Fish Pill। একটা পিল খেলে। সাতদিনের খাওয়া হয়ে যায়। প্রহ্লাদ ও প্রােফেসর শঙ্কু  নিজের জন্য নিয়েছেন বটিকা-ইন্ডিকা। একটা বড়ি খেলে চব্বিশ ঘণ্টার খিদে-তেষ্টা মিটে যায়। এক মন বটিকা-ইন্ডিকা  নেওয়া হয়েছে।

 

নিউটন, বিধুশেখর ও প্রহ্লাদ : বেড়াল নিউটন এক জায়গায়  বেশিক্ষণ বন্ধ থাকতে পারে না। তাই রকেটে প্রথম ক-দিন ছটফট করছিল। কাল থেকে প্রোফেসরের টেবিলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  বাইরের দৃশ্য দেখছে। নিউটন আকাশের দৃশ্য দেখে আর লেজের উগা নাড়ে। তাকাশের জ্বলন্ত গ্রহনক্ষত্র দেখে বােধ হয় ওর মনে।

 

অনুভূতি হয় অসংখ্য বেড়ালের চোখ। বিধুশেখরের কোনাে কাজকাম নেই। চুপচাপ বসে আছে। ওর বলের মতাে গােল গােল নিস্পল, কাচের চোখ দেখে বােঝবার উপায় নেই ওর মন ও আছে কিনা। বাইরের দৃশ্য সম্পর্কে প্রহ্লাদের কোনােরক কৌতূহল নেই। সে কেবল রামায়ণ পড়ে। ওর সৌভাগ্য যে, প্রােফেসরের কাছে বাংলা শিখেছিল।

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পের প্রশ্নোত্তর

 

প্রশ্ন)  ‘তখন ডায়ৱি লিখতে লিখতে এক কাণ্ড হয়ে গেল।—কী কাণ্ড হলাে লেখাে।

 

সংঘটিত কাণ্ড : রকেট চলেছে মঙ্গলগ্রহের দিকে। প্রােফেসর শঙ্কু তখন ডায়রি লিখছেন। বিধুশেখর ক-দিন একটু চুপচাপ। কেন তা অবশ্য প্রােফেসর জানেন না। তখনও প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। কথা শুনে শুধু নকল করতে পারে। চুপচাপ থাকতে থাকতে সেদিন কী যে হলাে হঠাৎ এক লাফে যন্ত্রপাতির বাের্ডটির কাছে গিয়ে যে হ্যান্ডেলে টান দিলে রকেট উলটো দিকে যায়, তাতেই প্রচণ্ড টান দিল। ঝাকুনির চোটে সবাই তাে মেঝেতে গড়াগড়ি। প্রােফেসর শঙ্কু উঠে গিয়ে বিধুশেখরের কাঁধের বােতামে চাপ দিতে সে বিকল হয়ে হাত-পা মুড়ে পড়ে গেল। প্রােফেসর শঙ্কু তারপর হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ফের মঙ্গলের দিকে রকেটকে রওনা করালেন। তিনি ভাবতে লাগলেন বিধুশেখরের এরকম পাগলামির কারণ কী ? আরও ভাবলেন, বিধুশেখরকে আপাতত অকেজো করে রাখবেন। মঙ্গলগ্রহে পৌছে চালু করবেন। তাঁর বিশ্বাস, ওর সঙ্গে বড্ড বেশি কথা বলায় ওর মনের ওপর চাপ পড়েছে। তাতে ওর মাথাটা বিগড়েছে। মঙ্গলগ্রহে ল্যান্ড করতে আর পাঁচ ঘণ্টা বাকি আছে। গ্রহের গায়ের নীল জায়গাগুলি প্রথমে জল বলে মনে হচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে অন্য কিছু। সরু সরু লাল সুতােগুলি কী তা এখনও স্পষ্ট হচ্ছে না।

 

প্রশ্ন ) ‘আমৱা দু’ঘণ্টা হলো মঙ্গল গ্রহে নেমেছি।সদ্য দেখা মঙ্গলগ্রহের বর্ণনা দাও। 

 

মঙ্গলগ্রহেৱ বিবৱণ :বেশ কয়েক মাস ধরে দীর্ঘ পথ রকেটে চড়ে আসার পর মাত্র ঘণ্টা দুই হলাে মঙ্গলে নিয়ে। বিধুশেখর রকেটে আছে। প্রােফেসর শঙ্কু একটি হলদে নেমেছেন প্রােফেসর শঙ্কু তাঁর দুই সঙ্গী নিউটন আর প্রহ্লাদকে রঙের নরম পাথরের ওপরে বসে ডায়রি লিখছেন। মঙ্গলের গাছপালা, মাটি, পাথর সবই রবারের মতাে নরম। তাঁর সামনে বিশ হাত দূরে একটা নদী। প্রবহমান। তার জল দেখতে যেন পেয়ারার স্বচ্ছ জেলি। মঙ্গলের সব নদীই বােধ হয় লাল। আকাশ থেকে নদীগুলিকে লাল সুতাের মতাে দেখাচ্ছিল। আকাশ থেকে যে অংশগুলি জল বলে মনে হচ্ছিল সেগুলি ঘাস আর গাছপালা।

 

 সবই সবুজের বদলে নীল। মনে হয় উলটো রঙের। তখনও পর্যন্ত প্রাণীর দেখাসাক্ষাৎ নেই। কোনাে সাড়াশব্দও নেই। বয়ে চলা নদীর কুলকুল আওয়াজ ছাড়া আর কোনাে শব্দ নেই। ঠান্ডা তাে নেই-ই, বরং গরম। মাঝে মাঝে হাওয়া আসে, ক্ষণস্থায়ী, তবে তা হাড় কাঁপিয়ে দেয়। দুরে বরফের পাহাড় হয়তাে আছে, তারই বাতাস। নদীর জল প্রথমে পরখ করতে সাহস পাননি। নিউটনকে খেতে দেখে প্রােফেসর শঙ্কু আঁজলা ভরে জল খেয়ে দেখেন যেন অমৃত। পান করে তাঁর মনে হলাে শরীর ও মনের সব ক্লান্তি মুছে গেছে।

 

প্রশ্ন ) ‘প্রথমবাৱেৱ কেলেঙ্কাৱিটাৱ জন্য একমাত্র প্রহ্লাদই দায়ী।’- প্রহ্লাদ কে? প্রথমবাৱেৱ কেলেঙ্কাৱিৱ দায় একমাত্র প্রহ্লাদ কেন—আলােচনা করাে। 

 

প্রহ্লাদ : প্রহ্লাদ হলাে প্রােফেসর শঙ্কুর কাজের লােক। সে সাতাশ বছর ধরে প্রােফেসর শঙ্কুর কাজ করছে। 

 

প্রহ্লাদ দায়ী কেন : প্রহ্লাদ ঘড়িটার দম দিতে গিয়ে ভুল করে কাটাটাই ঘুরিয়ে ফেলেছে। প্রােফেসর শঙ্কু তা জানবেন  কী করে ? আকাশে রকেট উৎক্ষেপণ হবে। এটাই প্রথম উৎক্ষেপণ। উৎক্ষেপণের কাজ সেকেন্ডের বাঁধাধরা হিসেবে হয়ে থাকে। একটু এদিক-ওদিক হলে সব পণ্ড হয়। তার জায়গায় কাঁটা ঘােরানাের ফলে প্রােফেসর শঙ্কুর হাজির হতে দেরি হয়েছে। সাড়ে তিন ঘণ্টা। ফলে অঘটন ভালাে রকমই ঘটেছে। এর দায় তাে প্রহ্লাদের। অঘটনটা হল রকেটটা খানিকটা উঠে গোঁৎ খেয়ে পড়ে। রকেটের এই ধরনের পতন বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। তার স্রষ্টা ও চালক হাজির না থাকলে সে শক্তিহীন ও বিপথগামী হবে এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া রকেট গোঁৎ খেয়ে পড়ার ফলে আরও একটা অঘটন ঘটেছে। রকেট পড়েছে অবিনাশবাবুর মুলাের খেতে। তাঁর যা ক্ষতি হয়েছে, সেজন্য তিনি পাঁচশাে টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। প্রােফেসর শঙ্কু তাতে বিব্রত ও উত্তেজিত। অবিনাশবাবুর দাবি প্রােফেসরের মনে হয়েছে দিনে ডাকাতি। রকেট উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হওয়ার জন্য মানুষটার  সামান্যতম আক্ষেপ নেই, সহানুভূতি নেই, উলটে চান ক্ষতিপূরণ । লােকটাকে জব্দ করার জন্য প্রােফেসর নতুন কোনাে অস্ত্র উদ্ভাবনের কথা ভাবেন।

 

প্রশ্ন ) তাই ভাবছি হয়তো ওকে নেওয়াই ভালাে।’-ওকে’ বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে ? প্রােফেসর শঙ্কু তাকে ৱকেট সহযাত্রী কৱা ভালাে ভাবছেন  কেন?

 

উত্তর : ‘ওকে বলতে প্রােফেসর শঙ্কুর সাতাশ বছরের কাজের কি প্রদুদিকে বোঝানাে হয়েছে।

 

রকেট সহযাত্রী কৱা : প্রােফেসর শঙ্কু প্রহ্লাদকে রকেটের যাত্রী হিসেবে নেবেন কি ভাবছেন। প্রহ্লাদ বােকা মানুষ ঠিকই, কিন্তু বােকা মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার কিছু সুবিধাও আছে। প্রোফেসর বিশ্বাস করেন, তাঁর রকেট অভিযানে বুদ্ধিমান লােকই দরকার তা নয়। অনেক সময় বােকা মানুষ বেশি সাহসী হয়। ভয় পাওয়ার কারণটা জানে না বলেই সাহসী হতে ভয় পায় । প্রােফেসর এ কথা জানেন যে, প্রহাদ সাহসী। সে দৃষ্টান্ত প্রােফেসরের অজানা নয়। সেইবার যখন কড়িকাঠ থেকে একটা টিকটিকি প্রােফেসরের বাইকনিক অ্যাসিডের শিশিটার ওপর পড়ে সেটাকে উলটে ফেলে দেয়, তিনি দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু করতে পারেননি। অ্যাসিড গড়িয়ে প্যারাডক্সাইড পাউডারের তূপের দিকে যাচ্ছিল। দুটির সংযােগ হলে কী সাংঘাতিক ঘটতে পারে সেটা ভেবে তাঁর হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছিল। সে সময় প্রহ্লাদ ঘরে ঢুকে কাণ্ডকারখানা দেখে এক গাল হাসে। হাতের গামছা দিয়ে অ্যাসিড মুছে ফেলে । প্রােফেসর জানেন বেশি সময় নয়, মাত্র পাঁচ সেকেন্ড দেরি হলে ল্যাবরেটরি, বিধুশেখর, প্রহ্লাদ, টিকটিকি এ সবের কিছুই থাকত । ওই দৃষ্টান্ত থেকে প্রােফেসরের মনে হয়েছে প্রহ্লাদকে রকেটের সহযাত্রী করে নেওয়া ভালাে।

 

নবম শ্রেণী বাংলা ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

 

প্রশ্ন)  ‘এক দিনের ঘটনা খুব বেশি করে মনে পড়ে।ঘটনাটি কী লেখাে। 

 

ঘটনার বিবরণ : প্রােফেসর শঙ্কু তখন রকেটের পরিকল্পনা করছেন। তিনি প্রথমেই বুঝেছিলেন যে, কোনাে সাধারণ ধাতু দিয়ে রকেট তৈরি হবে না। অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর ব্যাঙের ছাতা, সাপের খােলস আর কচ্ছপের ডিমের খােলা দিয়ে একটা কম্পাউন্ড তৈরি করেন। তারপর ঠিক করেন ওই কম্পাউন্ডের সঙ্গে হয় ট্যানট্রাম বােরােপ্যাক্সিনেট, না হয় একুইয় ভেলােসিলিকা মিশিয়ে ধাতু তৈরি করা যাবে। প্রথমে দেখতে চাইলেন ট্যানট্রামের সঙ্গে মিশিয়ে। যেই ট্যানট্রাম এক চামচ ঢালতে যাবেন, অমনি প্রচণ্ড ঘটাং ঘটাং আওয়াজ শুরু। প্রােফেসর পিছন ফিরে দেখেন বিধুশেখরের লােহার মাথাটা ভীষণভাবে এপাশওপাশ হচ্ছে। তাতেই ঘটাং ঘটাং আওয়াজ উঠছে। মাথা নাড়ার ভঙ্গিটা কিন্তু খুব জোর দিয়ে নিষেধ করার সময় মানুষ যেমন মাথা নাড়ে সেরকম। ট্যানট্রাম হাত থেকে নামিয়ে রাখাতে বিধুশেখরের মাথা নাড়া থেমে যায়। প্রােফেসর শঙ্কু বিধুশেখরের কলকজা ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখেন। সব ঠিক আছে। ফের ট্যানট্রাম হাতে নিতেই একই আওয়াজ বিধুশেখরের। এবার ভেলােসিলিকা হাতে নিতেও একই শব্দ। তবে এবার মাথা নাড়ার শব্দ ‘না নয়, সম্মতিসূচক ‘হ্যা’ যেন। প্রােফেসর শঙ্কু ভেলােসিলিকা মিশিয়েই ধাতুটা তৈরি করেন।

 

প্রশ্ন ) সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়ৱি’ কাহিনিতে প্রােফেসর শঙ্কুৱ যে পৱিচয় প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে। 

 

বহুবিধ গুণের অধিকারী : সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ কল্পবিজ্ঞানের এক চমৎকার কাহিনি এই কাহিনির নায়ক হলেন কল্পিত বিজ্ঞানী-চরিত্র প্রােফেসর শঙ্কু। ই তিনি শুধু বিজ্ঞানী হিসেবে বিশাল জ্ঞানী মানুষ নন। বিজ্ঞানের বহুবিধ বিষয়ের আবিষ্কর্তা। আত্মমগ্ন বিজ্ঞানসাধক। নির্ভীক আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। তিনি বহুবিধ গুণের আধার। প্রতিভাবান মানুষ মাত্রই সাধারণ মানুষের থেকে জ্ঞান-বিদ্যা-বুদ্ধিতে আলাদা মাপের হন। তাঁদের ভাবনাচিন্তার জগৎ পৃথক মাপের। তাঁদের আত্মমগ্ন সাধনার জগৎ সম্পূর্ণ পৃথক। তাঁদের দৃষ্টি সুদূর ভবিষ্যতের দিকে। তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের কাজের দুনিয়া, তাঁদের আচার-আচরণ সাধারণ মানুষের পরিচিত জীবনযাত্রার সঙ্গে মেলে না। সেজন্য সাধারণ মানুষের চোখে তারা একটু খ্যাপাটে বলে ধরা পড়ে। প্রােফেসর শঙ্কুকে তাই সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে একটু খ্যাপাটে বলে মনে হয়।

 

বিশাল কৃতিত্বের অধিকাৱী : ব্যোম বা মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার মতাে তাঁর সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি, আকাশযানের রকেট তৈরি, তার ধাতু আবিষ্কার, তার যন্ত্রপাতি আবিষ্কার ও = তৈরি, বিড়ালের খাদ্য হিসেবে ফিস পিল, বটিকা-ইন্ডিকা আবিষ্কার, রােবট বিধুশেখর বা যন্ত্রমানব আবিষ্কার ও তৈরি, তাকে দৈহিক ও মানসিক শক্তিসম্পন্ন করে তােলা ইত্যাদি কী কর্মকাণ্ডই না একা হাতে সামলেছেন। এই বিশাল কৃতিত্বের অধিকারীও তিনি।

 

সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক, নির্ভীক অভিযাত্রী, ৱসিক ও রসবােধ তিনি একজন সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক। মঙ্গল ও টাফা গ্রহের ভূপ্রকৃতি ও প্রকৃতিজগতের খুঁটিনাটি বিষয়কে তাঁর ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি শুধু বিজ্ঞানসাধক নন, একজন নির্ভীক অভিযাত্রী নন, তিনি রসিক ও রসবােদ্ধা মানুষ। তাঁর ডায়রির লেখাতে তাঁর রসবােধের পরিচয় স্পষ্ট।

 

মমত্বপরায়ণ, স্নেহশীল, অসাধাৱ । পৱিচালক : তিনি তাঁর কাজের লােক প্রহ্লাদের ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়ােগ করলেও তার প্রতি তাঁর মমত্বের সামান্যতম খতি নেই। জীবজন্তুর প্রতিও তিনি মমত্বপরায়ণ ও স্নেহশীল। তাঁর সৃষ্ট যন্ত্রমানব বিধুশেখরের  রূপকার তিনিই। এদের নিয়েই মঙ্গল ও টাফা গ্রহ অভিযান তাঁর অসাধারণ পরিচালন ক্ষমতার দৃষ্টান্ত।

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর

 

সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) নতুন জগতের একটা গন্ধ থাকতে পাৱে সেটা ভাবতে পারিনি।”—নতুন জগৎ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? তাৱ গন্ধ সম্পর্কে প্রোফেসর শঙ্কু কী লিখেছেন? 

 

উত্তর : নতুন জগৎ’ বলতে মঙ্গলগ্রহকে বােঝানাে হয়েছে।

 

মঙ্গলগ্রহের নিজস্ব গন্ধ আছে প্রােফেসর শঙ্কু আগে ভাবেননি। রকেট থেকে মঙ্গলগ্রহে পা রেখেই গন্ধ টের পেয়েছেন। মঙ্গলের প্রতিটি জিনিস খুঁকে দেখেছেন, ওই গন্ধ আলাদা। আবহাওয়ায় মিশে আছে ওই গন্ধ। পৃথিবীরও একটা গন্ধ আছে যেটা আমরা টের পাই না। অন্য কোনাে গ্রহের লােক এলে ওই গন্ধ পাবে। যেমন—প্রােফেসর শঙ্কু মঙ্গলের গন্ধ পেয়েছেন।

 

প্রশ্ন ) বিধুশেখৱেৱ কথা মতাে ৱকেটেৱ জানালা খুলে প্রােফেসর শঙ্কু কী দেখলেন? 

 

উত্তর : বিধুশেখর বললে, ‘গবাক্ষ উদ্বাটন করহ’। প্রােফেসর শঙ্কু হাত বাড়িয়ে জানালা খুলতেই চোখ ঝলসানাে দৃশ্য তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য যেন অন্ধ করে দিল। দৃষ্টি ফিরে পেতে দেখলেন তাঁরা এক অদ্ভুত অবিশ্বাস্য জগতের মধ্য দিয়ে উড়ে চলেছেন। দৃষ্টি যতদূর যায় চোখ মেলে দেখলেন আকাশময় বুদ্বুদ ফুটছে আর ফাটছে। ফুটছে আর ফাটছে। এই আছে এই নেই। 

 

প্রশ্ন ) ‘আজকের অভিজ্ঞতা এক বিধুশেখৱ ছাড়া আমাদেৱ সকলেৱ ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করাে। 

 

উত্তর: আকাশ ভরে আছে বিশাল বিশাল পাথরের চাঁইয়ে। চাইগুলাে এবড়ােখেবড়াে। সেগুলির গর্ত থেকে অগ্নার হচ্ছে। প্রোফেসর শঙ্কুর রকেট পাথরের চাঁইয়ের ফাঁক দিয়ে ছুটে চলেছে বিদ্যুৎবেগে। ধাক্কা লাগলেই শেষ। সেজন্য প্রস্তুাদ ইষ্টনাম জপ করছে। নিউটন টেবিলের তলায় ঢুকে থরথর করে কাঁপছে। অবাক কাণ্ড, রকেট কিন্তু ম্যাজিকের মতাে মোড় ঘুরে নিজের পথে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই হলো অভিজ্ঞতা।

 

প্রশ্ন ) ‘এই একটা নতুন কথা ক-দিনই ওর মুখে শুনছি।—নতুন কথাটি কী?

 

: উত্তর : বিধুশেখর বাইরের দৃশ্য দেখে তারিফ করতে গিয়ে ‘তােফা’কে ‘টাফা’ উচ্চারণ করছে। প্রােফেসর শঙ্কু তখন নিউটনকে বড়ি খাওয়াচ্ছিলেন। বিধুশেখর জানালার কাছে গিয়ে ‘টাফা’ বলে চিৎকার করতে প্রােফেসর তাকিয়ে দেখলেন পরিষ্কার আকাশে ঝলমলে এক গ্রহ। চাঁদের মতাে নির্মল ও নিষ্কলঙ্ক। সে যা হােক, বিধুশেখরের মুখে উচ্চারিত ‘টাফা হলাে নতুন কথা।

 

প্রশ্ন ) ‘আজ জানালা দিয়ে অপূর্ব দৃশ্য’—দৃশ্যটি কী? 

 

উত্তর : আজ জানালা দিয়ে অপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল। দৃশ্যটি হলাে টাফার সারা শরীরে যেন অসংখ্য জোনাকির আলাে। অনির্বাণ নয়। জ্বলছে আর নিভছে। সেই পুঞ্জীভূত আলােয় প্রােফেসর শঙ্কুর রকেটের ভিতর আলােকিত। প্রােফেসরের মনে পড়ছে জোনাকি নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা। সকলের মন আজ খুশি খুশি।

 

প্রশ্ন ) টাফা কী? টাফার লােকগুলির বর্ণনা দাও।

 

উত্তর : টাফা একটি গাছ। যেখানে প্রােফেসর শঙ্কুর রকেট পেঁৗছেছে।

 

প্রােফেসর শঙ্কু রকেট থেকে নেমে দেখেন তাঁকে অভ্যর্থনা করতে টাকার অনেক লােক এসেছে। প্রকৃতপক্ষে ওরা মানুষ। নয়। বেশ বড়ােসড়াে পিঁপড়ে জাতীয় প্রাণী। শরীরের গড়ন কিছুটা সেরকম। মাথা নিরেট, চোখও বেশ বড়াে। সে অনুপাতে হাত-পা রােগা। এতই রােগা যে, যেন কোনাে কাজে লাগে না। মানুষের থেকে ওরা অনেক পিছিয়ে।

 

প্রশ্ন ) ‘আমি কেবল হাঁ করে চেয়ে রইলাম। গল্পকথকেৱ হাঁ করে চেয়ে থাকার কারণ কী? 

 

উত্তর : প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রির লেখা কপি করে প্রেসে দেওয়ার পর গল্পকথক বাড়ি ফিরে এসে তাক থেকে ডায়রি নামাতে গিয়ে দেখেন জায়গাটা ফাঁকা। ছােট্ট এক টুকরাে তাকে আছে। তার ওপর জলদি পায়ে ডেয়াে পিপড়ে ঘােরাফেরা করছে। ওরাই খাতাটা পেটে পুরেছে। বাকি অংশটুকু গল্প কথকের চোখের সামনে উদরস্থ করে। গল্পকথকের হাঁ করে চেয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনাে উপায় থাকে না।

 

প্রশ্নঃ  তাৱকবাবু কী উদ্দেশ্যে সুন্দৱবনের মাথারিয়া অঞ্চলে গিয়েছিলেন? 

 

উত্তর : সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে ভয়াবহ উল্কাপাত হয়েছিল। তারকবাবু উল্কাপাতে গর্ত হয়ে যাওয়া দৃশ্য দেখার অছিলায় গেলে ও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল অন্য। উল্কাপাতে বাঘ মারা যেতে পারে। বাঘের ছাল জুটিয়ে ফেলতে পারলে ভালাে দরে বিক্রি করে মােটা মুনাফা আসবে। গােটা চারেক বাঘের চামড়া তাে পাবেন। কিন্তু তিনি হতাশ। বাঘ দূরের কথা, হরিণটরিণও নেই। কিন্তু গােসাপের ছাল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন

 

প্রশ্ন ) ‘খাতাটা হাতে নিয়ে খুলে কেমন যেন খটকা লাগল।—খটকা লাগার কারণ কী? 

 

উত্তর  : খাতাটা হাতে নিয়ে খুলে খটকা লাগার কারণ হলাে খাতার রং নিজের থেকে পালটাচ্ছে। প্রথম বার দেখেছিলেন খাতায় লেখা কালির রং সবুজ। আর এখন গল্পকথক দেখছেন কালির রং লাল। বাড়িতে এসে খাতা খুলতেই কালির রং নীল দেখে তাঁর বুক ধড়াস করে ওঠে। এক আশ্চর্য অদ্ভুত ব্যাপার বলে তাঁর মনে হয়। দেখতে দেখতে নীল হয়ে গেল হলদে। তিনি পরিষ্কার বুঝলেন রং বদলানাের ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। তা ছাড়া খাতার পাতা ছিড়ছে না। টানলে রবারের মতাে বেড়ে যাচ্ছে।

 

প্রশ্ন ) Snuff-gun বা নস্যাটা ওৱ ওপৱ পৱীক্ষা কৱা গেল।’-ওৱ’ বলতে কাৱ? নস্যাস্ত্র ওৱ ওপর পরীক্ষা করার কারণ কী? 

 

উত্তর: ‘ওর’ বলতে প্রহ্লাদের। :

 

প্রোফেসর শঙ্কু কয়েক বছর দেয়াল আয়নায় নিজের চেহারা দেখেননি। দেখা অপ্রয়ােজনীয় ভেবে আয়নার ওপর ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রেখেছেন ঢাকনা হিসেবে। ইংরেজি বছর শেষ হয়েছে, সেই ভেবে প্রহ্লাদ বাহাদুরি করে ক্যালেন্ডার সরিয়ে নিয়েছে। প্রােফেসর শঙ্কু ঘরে ঢুকেই নিজের বিদঘুটে চেহারা দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছেন। প্রহ্লাদের এই হলাে অপরাধ। এই তাপরাধের কারণে তার ওপর প্রােফেসর শঙ্কুর নস্যাস্ত্র প্রয়ােগ। নস্যাস্ত্র প্রয়োগের ফল হলো হাঁচি হলে একটানা তেত্রিশ ঘন্টা।

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) এই সব লােককে জব্দ করার জন্য এক নতুন কোনাে অস্ত্রের কথা ভাবা দরকার। লােকটা। তাকে জব্দ করার জন্য নতুন কোনাে অস্ত্র দরকব্র কথা ভাববার কারণ কী?

 

উত্তর : লােকটা হলেন অবিনাশবাবু।

 

ভাবনা। প্রথমবার মঙ্গলযান রকেট পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। প্রােফেসর। মনে করেন ওই ব্যর্থতার জন্য প্রহ্লাদই দায়ী। সে ঘড়িতে স দিতে গিয়ে ভুল করে কাঁটা ঘুরিয়ে ফেলেছে। টাইমের হেরকেই হওয়ায় রকেট খানিকটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে পড়েছে। তাতে অবিনাশবাবুর মুলাের খেতের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তিনি সেজ। পাঁচশাে টাকা দাবি করেছেন। প্রােফেসর শঙ্কুর মনে হয়েছে অত টাকা দাবি করা দিনে ডাকাতির অনুরূপ। তাঁর কাছে সামান্য মুলাের ক্ষতি বড়াে হলাে, রকেট ব্যর্থ হওয়ার জন্য সামান্য সহানুভূতিটুকু নেই। সেজন্য অবিনাশবাবুকে জব্দ করার ইচ্ছা ও নতুন অস্ত্র প্রয়ােগের ভাবনা।

 

প্রশ্ন)  “আর একটা কথা আমার প্রায়ই মনে হয়। -কী কথা কাৱ প্রায়ই মনে হয়?

 

উত্তর: প্রােফেসর শঙ্কুর একটা কথা প্রায়ই মনে হয়। কথাটা হলাে বাইরের জগতের প্রতি প্রােফেসর শঙ্কুর টান আছে। অবশ্য তা লিখে বােঝানাে কঠিন বলে তাঁর মনে হয়। টানটা হলাে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঠিক উলটো কোনাে শক্তি। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ছাড়িয়ে যদি কিছুদূর ওপরে উঠতে পারা যায়, তাহলে এই টান আপনা থেকেই টেনে নিয়ে গিয়ে অন্য গ্রহে ফেলবে।

 

প্রশ্নঃ মঙ্গলযাত্রার জন্য কে কীভাবে তৈরি হয়েছে  লেখো।

 

উত্তর : মঙ্গলগ্রহে যাত্রার জন্য প্রহ্লাদ, বিধুশেখর ও নিউটন তৈরি। প্রহ্লাদকে ল্যাবরেটরিতে ডেকে এনে প্রােফেসর শঙ্কু পােশাক পরতে দিয়ে মাথায় হেলমেট চড়িয়ে দিয়েছেন। তার পােশাক ও হেলমেট পরিহিত চেহারা দেখে প্রহ্লাদ নিজে, প্রােফেসর শঙ্কু, এমনকি বিধুশেখর না হেসে পারেনি। বিধুশেখর লােহার চেয়ারে বসে তৈরি। নিউটনকে হেলমেট পরানে হয়েছে। পরানাের সময় সামান্য আপত্তি করেছিল। এখন চুপচাপ আছে। মাঝে মাঝে জিভ দিয়ে হেলমেটের কাচ চাটছে।

 

প্রশ্ন )  মঙ্গলগ্রহের প্রাণী নিয়ে প্রােফেসর শঙ্কুর ভাবনা কীরকম?

 

উত্তর : মঙ্গলগ্রহে প্রাণী আছে, এ ব্যাপারে প্রােফেসর শঙ্কুর | সন্দেহ নেই। তবে তারা যে কেমন, ছােটো না বড়াে, অহিংস না হিংস্র, তা তার জানা নেই। অবিকল মানুষের মতাে হবে তাও সম্ভব নয়। বিদঘুটে প্রাণী হলে প্রথমটা ভয়ের কারণ আছে। অবশ্য একটা কথা মনে রাখতে হবে প্রােফেসর শঙ্কুরা যেমন তাদের কখনও দেখেননি তেমনি তারাও এঁদের দেখেনি।

 

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি ছোট প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্ৰশ্ন। বিধুশেখৱেৱ কাঁধের বােতামটা টিপতে কী  হলাে?

 

উত্তর : বিধুশেখরের কাঁধের বােতামটা টিপতে সে বিকল হয়ে হাত-পা মুড়ে পড়ে গেল।

 

প্রশ্নঃ মঙ্গলগ্রহেৱ গাছপালা, মাটি, পাথৱ সবই  কমন?

 

উত্তর : মঙ্গলগ্রহের গাছপালা, মাটি, পাথর সবই কেমন যেমন নরম রবারের মতাে।

 

প্রশ্নঃ প্রবহমান নদীকে প্রথমে নদী বলে মনে হয়নি কেন?

 

উত্তর : নদী মনে হয়নি কারণ নদীর জল দেখলে মনে হয় যেন স্বচ্ছ পেয়ারার জেলি।

 

প্রশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কু নদীৱ জলের স্বাদ কীভাবে পরখ করলেন?

 

উত্তর : প্রােফেসর শঙ্কু নদীর জল নিউটনকে খেতে দেখে আঁজলা করে তুলে চেখে দেখেন স্বাদে অমৃত।

 

প্রশ্ন । বিধুশেখৱ ভয় পাওয়া গলায় ‘বিভং’ বা বিপদ বলায় প্রােফেসর শঙ্কু কী করলেন?

 

উত্তর : অগত্যা বিধুশেখরকে রকেটে রেখে প্রােফেসর শঙ্কুরা তিনটে প্রাণী মিলে মঙ্গলগ্রহের মাটিতে পা রাখলেন।

 

প্রশ্ন । মঙ্গলগ্রহেৱ যে নিজস্ব একটা গন্ধ আছে প্রােফেসর শঙ্কু তা কীভাবে টের পেলেন?

 

উত্তর : গ্রহের প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা করে এঁকে দেখেন বে, আবহাওয়ার সঙ্গে মিশে আছে মঙ্গলগ্রহের গন্ধ।

 

প্রশ্ন । বিকট চিৎকাৱে প্রােফেসর শঙ্কুৱ ৱক্ত জল হয়ে গেল কেন?

 

উত্তর : প্রােফেসর দেখলেন, ভীষণ ভয় পেয়ে যাওয়া প্রহ্লাদ ডান হাতের মুঠোয় নিউটনকে নিয়ে লাফাতে লাফাতে রকেটের দিকে চলেছে।

 

প্রশ্ন । প্রহ্লাদ নিউটনকে নিয়ে রকেটে চড়ে পড়ার পৱে আৱ-এক কাণ্ড ঘটল-কাণ্ডটা কী?

 

উত্তর : কাণ্ডটা হলাে, বিধুশেখর এক লাফে রকেট থেকে নেমে তেড়ে আসা জন্তুটাকে রুখে দাঁড়াল।

 

প্রশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কু আড়চোখে মঙ্গালীয় সৈন্যদেৱ কী দেখলেন?

 

উত্তর : প্রােফেসর শঙ্কু দেখলেন, প্রায় হাজার জন্তুর আঁশের ওপর রােদ পড়ে সেই চকচকানিতে চোখ ঝলসে যাওয়ার উপক্রম।

 

প্রশ্ন । ‘নিউটনেৱ অরুচিটাও কমেছে। নিউটনের অরুচিৱ কারণ কী?

 

উত্তর: নিউটনের অরুচির কারণ হলাে, মঙ্গলীয়ের গায়ে দাঁত : বসানাের ফলেই সম্ভবত ওটা হয়েছিল।

 

প্রশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কু বিধুশেখৱকে কয়েক দিন বিশ্রাম দিয়েছিলেন কেন?

 

উত্তর : কারণ বিধুশেখর রকেট থেকে বেরিয়ে মঙ্গলীয়দের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আশ্চর্য সাহসের পরিচয় দেয়।

 

প্রশ্ন । ‘আজ জানালা দিয়ে অপূর্ব দৃশ্য’—কী অপূর্ব দৃশ্য?

 

উত্তর : অপূর্ব দৃশ্য হলাে যে, টাফার সারা শরীরে যেন অসংখ্য জোনাকি জ্বলছে আর নিভছে, তার আলােয় কেবিনও আলােকিত।

 

প্ৰশ্ন। নস্যাক্সেৱ কাজ কী?

 

উত্তর ; নস্যাস্ত্রের কাজ হলাে যে, তাক করে গোফের কাছাকাছি মারতে পারলে হাঁচি শুরু হয়ে তেত্রিশ ঘণ্টার আগে থামে না।

 

প্রশ্ন । ‘একেই বলে দিনে ডাকাতি।কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?

 

উত্তর : রকেট কিছুটা উঠেই গোৎ খেয়ে পড়ে অবিনাশবাবুর মুলাের খেতের ক্ষতি করায় পাঁচশাে টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন, এই হলাে প্রসঙ্গ।

 

প্রশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কু একটা নতুন কোনাে অস্ত্রের কথা ভাবছেন কেন?

 

উত্তর : বিজ্ঞানের এত বড়াে একটা চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় লােকটার আক্ষেপ বা সহানুভূতি নেই, তাই নতুন কোনাে অস্ত্রের চিন্তা।

 

 প্রশ্ন । আৱ পাঁচ সেকেন্ড দেরি হলে আর কিছুই থাকত না কেন?

 

. উত্তর: বাইকনিক অ্যাসিডের সঙ্গে প্যারাডক্সাইড পাউডারের মিশ্রণে যে ভয়ংকর ধ্বংসকাণ্ড ঘটত, তাতে কিছুই থাকত না।

 

প্রশ্ন । ‘ছেলেরা বেশ আমােদ পাবে।”—কেন?

 

উত্তর : প্রােফেসর শঙ্কুর তৈরি রকেট, যা অবিনাশবাবুর ভাষায় হাউই, কালীপুজোর দিন ছাড়া হলে ছেলেরা বেশ আমােদ পাবে।

 

প্ৰশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কুৱ নতুন অস্ত্র কী? 

 

উত্তর: প্রােফেসর শঙ্কুর নতুন অস্ত্র হলাে স্যাকারিনের মতাে বড়ি আবিষ্কার, যা চায়ের সঙ্গে খেলে ঘুমের মধ্যে অসম্ভব ভয়ংকর স্বপ্ন দেখানাে যায়।

 

প্রশ্ন । যন্ত্রমানব বিধুশেখৱেৱ ক্ষমতাৱ সীমা কতটুকু?

 

উত্তর : যন্ত্রমানব বিধুশেখরের ক্ষমতার সীমা হলাে নড়াচড়া করা, নিজস্ব বুদ্ধি বা চিন্তাশক্তি বলতে তার কিছু নেই।

 

প্রঃ। শেষপর্যন্ত কীসের সঙ্গে কী মিশিয়ে ৱকেটের ধাতু তৈরি হলো?

 

উত্তর : ব্যাঙের ছাতা, সাপের খােলস আর কচ্ছপের ডিমের খােলার কম্পাউন্ডের সঙ্গে একুইয় ভেলােসিলিকা মিশিয়ে রকেটের ধাতু তৈরি হলাে।

 

প্ৰশ্ন । হাওয়ার দোলায় কী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে?

 

: উত্তর : উল্কাপাতের ফলে বদলে যাওয়া গােলঞ ফুল, যা পাঁচটা আঙুলের মতাে ঝােলা পাপড়ি আছে, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

 

প্রশ্ন ) প্রােফেসর শঙ্কু ও তার সহযাত্রীরা সাত দিন হলাে পৃথিবী ছেড়েছে কেন?

 

উত্তর : কারণ প্রােফেসর শঙ্কুর তৈরি ব্যোমযানে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য সাত দিন হলাে পৃথিবী ছেড়েছে।

 

প্রশ্ন । রকেট থেকে নিউটনেৱ দেখা গ্রহনক্ষত্রকে তাৱ কী বলে মনে হয়?

 

উত্তর : নিউটনের কাছে তার দেখা গ্রহনক্ষত্রকে অসংখ্য বেড়ালের চোখ বলে মনে হয়।

 

প্রশ্ন । বিধুশেখৱকে পৱীক্ষা করবার জন্য কী জিজ্ঞেস করা হয়েছিল? 

 

উত্তর : বিধুশেখরকে পরীক্ষা করবার জন্য সে কেমন আছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল।

 

প্রশ্ন । মঙ্গলগ্রহে নামবাৱ জন্য কী কী জিনিস গুছিয়ে রাখা হয়েছে?

 

উত্তর : মঙ্গলগ্রহে নামবার জন্য গুছিয়ে রাখা হয়েছে ক্যামেরা, দূরবিন, অস্ত্রশস্ত্র, ফাস্ট-এড বক্স ইত্যাদি। –

 

প্রশ্ন । প্রহ্লাদেৱ ভয়-ভাবনা নেই, সে দিব্যি নিশ্চিত আছে কেন? 

 

উত্তর ; প্রহ্লাদ ভয়-ভাবনাহীন নিশ্চিন্ত আছে, কারণ সে বিশ্বাস করে গ্রহের নাম মঙ্গল বলে কোনাে অনিষ্ট হতে পারে না।

 

প্রশ্ন । প্রােফেসর শঙ্কু ৱকেটের ভিতরে বসে যখন ডায়ৱি লিখছিলেন তখন কী কাণ্ড ঘটে গেল?

 

উত্তর : বিধুশেখর হঠাৎ যন্ত্রপাতির বাের্ডের কাছে উঠে গিয়ে রকেট উলটো দিকে যাওয়ার জন্য যে হ্যান্ডেল আছে তাতে প্রচণ্ড টান দিল।

 

|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *