ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রফেসর শঙ্কু নবম শ্রেণী
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রফেসর শঙ্কু নবম শ্রেণী
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পের উৎস
প্রােফেসর ত্রিলােকেশ্বর শঙ্কুকে নিয়ে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি রচনা শুরু ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে। লেখক সত্যজিৎ রায়ের বয়স তখন চল্লিশ। দীর্ঘ একত্রিশ বছর ধরে সত্যজিৎ প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রি নিয়ে চল্লিশটি কাহিনি লিখেছেন। প্রথম কাহিনি ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’। আমাদের আলােচ্য আরও দুটি কাহিনি হলাে ‘কর্ভাস’ ও ‘স্বর্ণপণী। এই তিনটি কাহিনিরও উৎস হলাে সত্যজিৎ রায়ের ‘শঙ্কু সমগ্র’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রােফেসর শঙ্কু শুধু কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি নয়, ওর সঙ্গে মিশে আছে ভ্রমণ, রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চার।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পের বিষয়বস্তু
বিষয়-সংক্ষেপ
তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে লেখক প্রােফেসর ত্রিলােকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিখানা পান। পেপক তখন অফিসে বসে পুজো সংখ্যার জন্য একটা লেখার প্রফ দেখছিলেন। তারকবাবু এর আগে কয়েকবার গল্প দিয়ে গেছেন। গরিব মানুষ। প্রতিবার লেখা দিয়ে পাঁচ-দশ টাকা নিয়ে গেছে। এবার ডায়রিখানা দিয়ে পড়তে বললেন।
বছর পনেরাে হলাে প্রােফেসর শঙ্কু নিরুদ্দেশ। একটা ভীষণ এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে নাকি প্রাণ হারিয়েছেন এমন কথা কেউ কেউ বলেন। আবার তিনি বেঁচে আছেন এ কথাও শােনা যায়। তিনি নাকি আত্মগােপন করে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন, যথাসময়ে আত্মপ্রকাশ করবেন। তবে মূল কথা তিনি একজন বৈজ্ঞানিক।
তারকবাবুর কাছে প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রি কী করে এল সে খবর জানানাের জন্য তিনি বছরখানেক আগে সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে উল্কাপাতের প্রসঙ্গ এনে বললেন যে, উল্কাপাতে যে গর্ত হয়েছিল, তার ভিতর থেকে তিনি ডায়রিখানা পেয়েছেন। ডায়রিখানার বিনিময়ে কুড়ি টাকা পেয়ে খুশি হয়ে তিনি চলে যান। ডায়রিখানা বিচিত্র। তাতে লেখা কালির রং পালটায়। প্রথমে ছিল সবুজ, তা থেকে হয়ে যায় লাল, পরে পরে হয় নীল, হলদে। ডায়রির কাগজ কী এমন বস্তু দিয়ে তৈরি যে, তা ছেড়ার সাধ্য মানুষের নেই। উনুনের আগুনে ঘন্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকেও পােড়ে না। ডায়রিতে প্রােফেসর শঙ্কু লিখেছেন
১ জানুয়ারি :
প্রােফেসর শঙ্কু মর্নিং ওয়াক সেরে শােওয়ার ঘরে ঢুকে এক বিদঘুটে চেহারার লােক দেখে ভীষণ চেঁচিয়ে ওঠেন। আসলে আয়নায় তাঁর নিজের চেহারা দেখেছেন। আয়নায় নিজেকে দেখার প্রয়ােজন হয় না বলে আয়না ঢাকা থাকে। বছর শেষ হয়েছে বলে কাজের লােক প্রহ্লাদ ক্যালেন্ডারখানা সরিয়ে নেওয়ায় এই বিপত্তি। প্রহ্লাদকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়ােগ করেন প্রােফেসর শঙ্কু।
২ জানুয়ারি :
প্রহ্লাদ ঘড়িতে দম দিতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে ফেলায় রকেট উৎক্ষেপণ ক্ষেত্রে প্রােফেসর শঙ্কুর হাজিরা ঘটে সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে উৎক্ষিপ্ত রকেট গোৎ খেয়ে পড়ে অবিনাশবাবুর মুলাের খেতে। সেজন্য অবিনাশবাবু পাঁচশাে টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন। প্রােফেসর তাই তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অস্ত্রের কথা ভাবতে থাকেন।
৫ জানুয়ারি :
প্রহ্লাদ বােকা হলেও সাহসী। একটা টিকটিকি ওপর থেকে বাইকনিক অ্যাসিডের শিশির ওপর পড়ে সেটা উলটে দেয়। অ্যাসিড পড়ে গড়িয়ে প্যারাডক্সাইট পাউডারের স্কুপের দিকে যাচ্ছিল। দুটির মধ্যে সংযােগ ঘটলে কী সর্বনাশই না হতে পারত। কিন্তু প্রহ্লাদ গামছা দিয়ে অ্যাসিড মুছে । বিপদ থেকে রক্ষা করে। তাই প্রােফেসর শঙ্কু ওকে রকেটে নেওয়ার মনহ করেন।
৬ জানুয়ারি :
প্রােফেসর শঙ্কুর রকেটের পােশাকের আস্তিনে ঢুকে পড়া উচিংড়েগুলিকে বের করার জন্য যখন ঝাড়াঝুড়ি করছেন তখন অবিনাশবাবু এসে হাজির। বিজ্ঞানের কথা উঠলেই তার ঠাট্টাতামাশা শুরু হয়। রকেট তৈরির সময় তাঁর উক্তি হলাে যে, ওই হাউইটা কালীপুজোর সময় ছাড়লে ছেলেরা আমােদ পেত। অবিনাশবাবুকে খাতির করে বসিয়ে চা দেওয়া হলাে স্যাকারিনের বদলে প্রােফেসর শঙ্কুর তৈরি একটি বড়ি দিয়ে। চা খাওয়ার পরেই হাই উঠবে। তারপর গভীর ঘুম। ঘুমের মাঝে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবেন অবিনাশবাবু।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি
৮ জানুয়ারি :
প্রােফেসর শঙ্কু নিউটনকে Fish Pill খাওয়ালেন। নিউটনের এখন Fish Pill বেশি পছন্দ। প্রােফেসর তার জন্য পােশাক ও হেলমেট তৈরি করার কথা ভাবলেন। কারণ নিউটনকে সঙ্গে নেওয়ার মনস্থ করেছেন।
১০ জানুয়ারি :
বিধুশেখর যন্ত্র মানুষ। স্রষ্টা প্রােফেসর শঙ্কু তাকে যেমন চালাবে সে সেইমতাে চলবে। কিন্তু বিধুশেখরকে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমী মনে হয়। একদিন একটা ঘটনা চোখে পড়ল। রকেট তৈরির জন্য ধাতু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চলছিল। ব্যাঙের ছাতা, সাপের খােলস আর কচ্ছপের ডিমের খােলা মিশিয়ে একটা কমপাউন্ড তৈরি করে তার সঙ্গে ট্যানট্রাম বােরােপ্যাক্সিনেট না একুইয় ভেলােসিলিকা ২ কোটা মিশিয়ে ধাতুটা তৈরি হবে তা নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। ট্যানট্রামটাই এক চামচ ঢালতে যেতেই বিধুশেখর লােহার মাথাটা এদিক-ওদিক করে ‘না’ ইংগিত করছে। বাধা পেয়ে সেটা ছেড়ে ভেলােসিলিকা হাতে নিতে মাথা নেড়ে ‘হা বলার ইঙ্গিত করছে। শেষপর্যন্ত প্রােফেসর ভেলােসিলিকা মিশিয়ে ধাতুটা তৈরি করেন।
১১ জানুয়ারি :
বিধুশেখর কেন ওরকম তাওয়াজ করছিল ওর কলকবজা খুলেও প্রােফেসর শঙ্কু কোনো কারণ খুঁজে পাননি। প্রােফেসর শঙ্কু কিছুদিন ধরে অনুভব করছিলেন বাইরের জগতের প্রতি তাঁর টান। এ টান মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উলটো টান। এ টান তিনি একটা বিশেষ দিন থেকে অনুভব করেন। সেদিন তিনি বাগানের আরামকেদারায় শুয়ে উল্কাপাত দেখছিলেন। উল্কাটা একটু অন্যরকম দেখতে। উল্কাটা তাঁর কাছাকাছি এসে বাগানের পশ্চিমদিকের গোলঞ্চ।
গাছটার পাশে থেমে প্রকাণ্ড এক জোনাকির মতাে জ্বলতে থাকে। আসলে ঘুমের ভিতর স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। ওর আয়, প্রােফেসর পরের দিন থেকে রকেটের বিষয়ে ভাবতে থাকে। আর-একটা ব্যাপার হলাে, গােল ফুল ফুটতে লাগল অন্য চেহারা। ফুলের পাঁচটা পাপড়ি হাতের পাঁচটা আঙুলের মতাে লগ ; ঝােলা। দিনে কুচকুচে কালাে রঙের হয়, রাতে ফসফরাসের মতে জ্বলে আর যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
১২ জানুয়ারি :
কক ভাের পাঁচটায় মঙ্গলযাত্রা। ল্যাবরেটরিতে প্রহ্লাদকে ডেকে এনে পােশাক ও হেলমেট পরিয়ে দেখা হলাে। তার চেহারা ও হাবভাব দেখে প্রােফেসরের হাসি পেল। বিধুশেখরও ভঙ্গি আওয়াজ করে হাসি প্রকাশ করল। নিউটনকেও পােশাক ও হেলমেট পরানাে হয়েছে।
২১ জানুয়ারি :
রকেট পৃথিবী ছেড়েছে সাত দিন। যাত্রী আর মালপত্রের ওজন পনেরাে মন বত্রিশ সের তিন ছটাক। এক-একটা Fish Pill খেয়ে নিউটনের সাত দিন চলে। প্রহ্লাদ আর প্রােফেসরের এক-একটা বটিকা ইন্ডিকা খেয়ে একদিনের খিদে-তেষ্টা মিটে যায়।
২৫ জানুয়ারি :
প্রােফেসর শঙ্কু বিধুশেখরকে বাংলা শেখাচ্ছেন। প্রহ্লাদ বিধুশেখরের উচ্চারণ শুনে হাসে। তার আদৌ পছন্দ হয় না। কেমন লাগছে’ প্রশ্নের উত্তরে বিধুশেখর ‘ভাল’-র উচ্চারণ করে ‘গাগাে। রকেট থেকে মঙ্গলগ্রহকে দেখা যাচ্ছে বাতাবিলেবুর মতাে। কয়েক মাস কেটেছে, আরও মাসখানেক লাগবে মঙ্গলগ্রহে পৌছােতে প্রহ্লাদ রামায়ণ শেষ করে মহাভারত পড়ছে। বিধুশেখরের বাংলা উচ্চারণে প্রােফেসর সন্তুষ্ট না হলেও ওর স্মৃতিশক্তির প্রখরতা প্রােফেসরকে অবাক করে। কিছুদিন আগে তার গাওয়া দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটি বিধুশেখর তার উচ্চারণে গাইতে থাকে।
মঙ্গলগ্রহের গায়ের রেখাগুলি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলগ্রহে নামবার জন্য যা যা নিতে হবে সব গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ওই গ্রহে ছােটো ছােটো কিংবা বড়াে, অহিংস কিংবা হিংস্র প্রাণীর অস্তিত্ব আছে প্রােফেসরের বিশ্বাস। প্রহ্লাদ সরল বিশ্বাসে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে মঙ্গল নামের গ্রহে কোনাে অনিষ্ট হতে পারে না।
বিধুশেখর ক-দিন চুপচাপ ছিল। একদিন হঠাৎ লাফ মেরে উঠে যন্ত্রপাতির বাের্ডটার কাছে যে হ্যান্ডেল টানলে রকেট উলটো দিকে যায় সেটা ধরে প্রচণ্ড টান দেয়। সকলে ঝাঁকুনির চোটে রকেটের মেঝেতে গড়াগড়ি যায়। তাকে আপাতত অকেজো করার জন্য বােতাম টিপে নিরস্ত করা হয়। মঙ্গলের রকেটটা ল্যান্ড করতে আর মাত্র পাঁচ ঘণ্টা বাকি।
দু-ঘণ্টা হলাে রকেট মঙ্গলে ল্যান্ড করেছে। প্রােফেসর শঙ্কু একটা হলদে রঙের পাথরের ওপর বসে ডায়রি লিখছেন। সেখানকার গাছপালা, মাটি, পাথর সবকিছু নরম রবারের মতাে। সামনে নদী বয়ে যাচ্ছে। জল স্বচ্ছ পেয়ারার জেলির মতাে। লাল নদী। সেগুলিকে আকাশ থেকে লাল সুতাের মতাে দেখাচ্ছিল। ঘাস, গাছপালা সবই নীল রঙের। আকাশের রং সবুজ। তখনও প্রাণী চোখে পড়েনি। নদীর জলের কুলকুল শব্দ ছাড়া সব নীরব ও নিস্ত।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পের বিষয়-সংক্ষেপ
ঠান্ডা নেই বরং গরমের দিকে। ঝড় এলেও ক্ষণস্থায়ী এবং হাড় কাঁপিয়ে দেয়। দূরে বরফের পাহাড় থাকতে পারে। নদীর জলের স্বাদ অমৃততুল্য। এক টোক খেয়েই সব ক্লান্তি যেন মুছে গেল।
বিধুশেখর বিপদের সংকেত দিল। মঙ্গলের নিজস্ব গন্ধ আছে। প্রহ্লাদ পাথর কুড়াচ্ছে। আকাশের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তখন ভাের, শিগগির সূর্য উঠবে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রােফেসর শঙ্কু একটা টিলার ওপর উঠে জায়গাটা দেখার বাসনায় আছেন। তাঁর নাকে আসে আঁশটে গন্ধ আর-একটি অদ্ভুত শব্দ। এক বড়ােসড়াে ঝিঝি যেন ‘তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি’ বলে ডাকছে। হঠাৎ বিকট চিৎকার শুনে প্রােফেসরের রক্ত জল হওয়ার উপক্রম।
প্রহ্লাদের চোখ ঠিকরে যেন বেরিয়ে আসছে। সে ডান হাতে নিউটনকে ধরে লম্বা লম্বা পায়ে যেন লাফ দিতে দিতে রকেটের দিকে চলেছে। তার পিছনে যে ধাওয়া করেছে সে মানুষ, জন্তু, মাছ কোনােটাই নয় সবগুলির যেন মিলিত চেহারা। লম্বায় প্রায় তিন হাত, পা আছে, হাতের বদলে ডানা আছে, বিরাট মাথা, দাঁতহীন হাঁ, প্রকাণ্ড সবুজ চোখ । গা আঁশে ঢাকা, রােদে চিকচিক করছে। ভালাে ছােটার ক্ষমতা নেই। পদে পদে হোঁচট খায়। সেজন্য প্রহ্লাদকে নাগালের মধ্যে পাবে না। প্রােফেসর তাঁর সাংঘাতিক অস্ত্রটা হাতে নিয়ে ছুটলেন। প্রহ্লাদের ক্ষতি হলে তাহলেই অস্ত্র প্রয়ােগ করবেন। নইলে প্রাণীহত্যা রাবেন না। শত্রুকে বিশ-পঁচিশ গজ পিছনে ফেলে প্রহ্লাদ রকেটে উঠে পড়েছে। বিধুশেখর রকেট থেকে নেমে জন্তুটাকে রুখে পড়িয়েছে। ওদিকে দু-তিনশাে একইরকম জন্তু দুলতে দুলতে রকেটের দিকে আসছে। তাদের মুখেও একই তিন্তিড়ি আওয়াজ। বিধুশেখরের লােহার হাতের এক বাড়িতেই জন্তুটা ধরাশায়ী। প্রােফেসর দৌড়ে গিয়ে বিধুশেখরকে জাপটে ধরলেন। তাকে থামানাের জন্য তার কাধের বােতাম টিপে ধরে তাকে অচল করলেন। পিছনের মঙ্গলীয় সৈন্য একশো গজের মধ্যে এসে গেছে। বিধুশেখরের কোমরের স্বজ খুলে দু-ভাগে ভাগ করে আনেক কষ্টে রকেটে তুললেন। রকেটের দরজা বন্ধ করার আগের মুহূর্তে প্রােফেসর পায়ে স্যাতসেঁতে ভাব অনুভব করেন। তারপর অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে। দেখেন রকেট উড়ে চলেছে।
কে রকেট চালিয়েছে। কোনদিকে রকেট চলেছে প্রােফেসর শঙ্কুর সবই অজানা থেকেছে। আর ওসব নিয়ে তাঁর মনে হাজারো প্রশ্ন। যন্ত্রপাতি নেড়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। রকেট উড়ে চলেছে। প্রােফেসর জানেন ভবিষ্যৎ অজ্ঞেয় ও অন্ধকার।
প্রহ্লাদ অনেকটা সামলে উঠেছে। নিউটনের অরুচি অনেকটা কমেছে। প্রহ্লাদ অসংলগ্ন কথাবার্তা বললেও তার বলার ভিত্তিতে প্রােফেসর যা জেনেছেন তা হলাে, নদীর ধারে পাথর কুড়ােতে কুড়ােতে আঁশটে গন্ধ পায়। মুখ তুলে উদ্ভট জন্তুটাকে দেখেছে। নিউটন জন্তুটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাঁটুতে কামড়ে দেয়। জন্তুটা বিকট চিৎকার করে পালিয়ে যায়। পরক্ষণে সেরকম আর-একটা জন্তু এসে প্রহ্লাদকে তাড়া করে। তারপরের ঘটনা জানা। বিধুশেখর আশ্চর্য সাহসের পরিচয় দেয়। তাকে একদিন বিশ্রাম দেন প্রােফেসর । তাকে ফের জোড়া লাগিয়ে বােতাম টিপতেই সে মানুষের মতাে স্পষ্ট কথা বলছে।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্প
অনির্দেশের পানে ছুটে চলা রকেটে সময়- -দিন-তারিখ সব গুলিয়ে গেছে। নিউটন নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। বিধুশেখর সাধুভাষায় জানলা খুলতে বলে। জানলার বাইরে দেখা যায় অসংখ্য সােনার বল বড়াে বড়াে হয়ে ফেটে ফোয়ারা ছােটাতে থাকে। তারপর মিলিয়ে যায়। সবাই অবাক। জানলা আর বন্ধ করা হয় না।
রকেট একসময় বড়াে বড়াে পাথরের চাঁইয়ের ভিতর দিয়ে যেতে থাকে। তাতে সবাই ভয় পেয়ে যায়। একসময় বিধুশেখরের চাচানাে শুনে প্রােফেসর দেখেন রকেট চাঁদের মতাে এক গ্রহের পাশ দিয়ে চলেছে। বিধুশেখর বলে টাফা। টাফায় নাকি প্রথম সভ্য জগতের লােক বাস করে। ওখানকার সভ্যতা নাকি পৃথিবীর সভ্যতার চেয়েও প্রাচীন। এখানকার লােকেরাও নাকি বুদ্ধিমান।
ওই গ্রহে রকেট থেকে নামার পরে ওখানকার বিরাট চেহারার পিঁপড়ে প্রাণী প্রােফেসর শঙ্কুকে অভ্যর্থনা করে। পিঁপড়ে প্রাণীদের ঘর নেই। মটির গর্তে থাকে। প্রােফেসর শঙ্কুর ভালাে লাগে না। ডায়রি লেখা বন্ধ করে দেন। ডায়ৱিৱ অস্তিত্ব লােপ : লেখক ভেবেছিলেন প্রােফেসর শঙ্কুর ডায়রি পড়ার পর ডায়রিটি জাদুঘরে দেবেন। কিন্তু লেখাটা কপি করে প্রেসে দেওয়ার পরে ডেয়াে পিপড়েরা তা খেয়ে ফেলে। এটা লেখকের কাছে এক বিরাট বিস্ময়।