কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট ওয়ান বাংলা ব্যাকরণ

 কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট ওয়ান বাংলা ব্যাকরণ

 

 

কারক ও অকারক পদের বিভক্তি ও অনুসর্গ

 

কারক কাকে বলে উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার

 

কারক — বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য, সর্বনাম অথবা বিশেষ্যের অর্থে ব্যবহৃত কোনাে পদের সঙ্গে যেসম্বন্ধ বা সম্পর্ক তাকে বলা হয় কারক।

কারক-চেনার-সহজ-উপায়-পার্ট-ওয়ান-বাংলা-ব্যাকরণ

 

মনে রাখতে হবে যে-কোনাে সম্বন্ধ বা অন্বয়কে কারক-সম্পর্ক বলা যায় না। বাক্যে পরস্পর পদের মধ্যেও অন্বয় ঘটতে পারে কিন্তু তাকে কারক-সম্পর্ক বলা যায় না, শুধুমাত্র ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য পদের অন্বয়কেই কারক-সম্পর্ক বলা যায়। সুতরাং বলা যায় ক্রিয়াভিন্ন অন্যপদের সঙ্গে নামপদের যে-সম্বন্ধ তাতে কারক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।

বাক্যের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন কারক-সম্পর্ক এবং কারক-অকারক পদে বিভক্তি ও অনুসর্গের ব্যবহারের তাৎপর্য আলােচনার পূর্বে বেশ কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। তাতে শিক্ষার্থীদের উদ্দীষ্ট বিষয়টি সহজ হয়ে উঠবে।

 

কারক ও বিভক্তি

 

শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে পদ বলে। শব্দকে পদবাচ্য হতে গেলে বাক্যস্থিত শব্দগুলির পরস্পরের মধ্যে একটা সম্বন্ধ বা অন্বয় গড়ে তুলতে হয়। আর এই অন্বয় গড়ে ওঠে শব্দ-বিভক্তি ও অনুসর্গের মাধ্যমে। কার্যত বাক্যে কোনাে শব্দ বিভক্তিযুক্ত না হয়ে ব্যবহৃত হতে পারে না। বিভক্তি-চিহ্ন যুক্ত হলেই সে পদবাচ্য হয়ে ওঠে। যেখানে বিভক্তি যথেষ্ট নয়, সেখানে অনুসর্গ বিভক্তির কাজ করে। তাহলে কিন্তু অনেক বাক্যে কোনাে পদই বিভক্তিশূন্য নয়। কিন্তু অনেক বাক্যে দেখা যায়—বিশেষ্য, সর্বনাম বা বিশেষ্যস্থানীয় কোনাে পদের সঙ্গে কোন্ বিভক্তি আছে তা স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে না, আছে অথচ অপ্রকাশিত। এক্ষেত্রে একে আমরা শূন্য (০) বিভক্তি রূপে চিহ্নিত করি। কেউ কেউ একে ‘অ’-বিভক্তি হিসেবে কল্পনা করে নিয়েছেন। যাইহােক, বিভক্তি দুধরনের হয়—শব্দ বিভক্তি ও ক্রিয়া-বিভক্তি। ক্রিয়া-বিভক্তির সাহায্যে পরুষ ও কাল অনুসারে ক্রিয়াপদ গড়ে তােলা হয়, আর শব্দ-বিভক্তির সাহায্যে বাক্যের মধ্যে পদের পরস্পর সম্পর্ক ও সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য পদে সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। অবশ্য অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গেও কারকসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। যেমন—সে ভাত খেয়ে মাঠে গেল। সমাপিকা ক্রিয়া ‘গেল’-এর সঙ্গে মাঠে’-এর অধিকরণ-সম্বন্ধ এবং ‘খেয়ে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে ‘ভাত’-এর কর্ম-সম্বন্ধ।

 

শব্দ বিভক্তি : যে সকল বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যের মধ্যে শব্দকে পদে উন্নীত করে বাক্যথিত পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে ও ক্রিয়াপদের সঙ্গে বক্যের অন্তর্গত বিশেষ্য সর্বনাম অথবা বিশেষ্য স্থানীয় কোনাে পদের কারক সম্পর্ক নির্ণয় করে তাদের বলা হয় শব্দ-বিভক্তি। 

 সুতরং বাক্যের মধ্যে পদের পরস্পর সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে বিভক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সহজ করে বােঝা যাবে।

 

কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

  সে মাঠে খেলা করে। রতন বােনকে বই দিল। শিক্ষকমশাই তােমায় ডেকেছেন। বাক্যগুলিতে লক্ষ করলে দেখা যাবে—প্রথম বাক্যে সে < (স + ০ বিভক্তি), মাঠে < এ-বিভক্তি) ; দ্বিতীয় বাক্যে রতন < (রতন + ০ বিভক্তি), বােনকে < (বােন + কে), বই (বই + ০ বিভক্তি) ; তৃতীয় বাক্যে শিক্ষকমশাই < (শিক্ষকমশাই + 0 বিভক্তি), তােমায় < তুমি + এ (য়) বিভক্তি) কীভাবে শব্দের সঙ্গে বিভক্তিগুলি যুক্ত হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। 

 

বাংলায় শব্দ বিভক্তির অস্তিত্ব 

 

এ (য়), কে, রে (এরে), তে (এতে), র (এর)

 

বস্তুত বাংলা কারকে যে-বিভক্তিগুলির প্রয়ােগ হয় তা সংখ্যায় মূলত পাঁচটি। এদের মধ্যে ‘রে (এরে)—প্রধানত কবিতায় ব্যবহৃত হয় এবং র (এর) সমন্ধ পদের নিজস্ব

 

বিভক্তি। কেননা সম্বন্ধ পদে অন্য কোনাে মৌলিক বিভক্তি যুক্ত হয় না। সুতরাং বাংলা কারকে বিভক্তি প্রয়ােজনের তুলনায় যথেষ্ট কম।

 

উল্লিখিত শব্দ-বিভক্তি ও তার প্রসারণগুলি লক্ষ কর ?

 

১. এ (য়) বিভক্তি ও ‘এ’-শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয় অকারান্ত অথবা ব্যঞ্জনান্ত শব্দের শেষে। ‘য়’-বিভক্তিটি ‘এ’ বিভক্তির প্রসারণ। ‘এ’-বিভক্তি যখন ‘আকারান্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন ‘এ’ বিভক্তি য়’ বিভক্তিতে রূপান্তরিত হয়,

 

যথা : ঘরে < (ঘরে + এ), মাঠে < (মাঠ + এ), শাখায় < (শাখা + এ), জলায় < (জল + এ), মাথায় < (মাথা + এ)।

 

২. ‘কে’-বিভক্তি : এই ‘কে’-বিভক্তির কোনাে প্রসারণ বাংলায় নেই। অ-কারান্ত, ‘আ’কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত সব ক্ষেত্রেই অপরিবর্তিত থাকে।

 

যথা : অমলকে < (অমল + কে), রমাকে < (রমা + কে), তােমাকে < (তুমি + কে), আমাকে < (আমি + কে)।

 

৩. রে (এরে) বিভক্তি : ‘রে’-শব্দ-বিভক্তি মূলত কবিতায় ব্যবহৃত হয়। আকারান্ত শব্দের সঙ্গে ‘রে’ যুক্ত হয় কিন্তু অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে এরে’ হয়ে যায়।

 

যথা : সােমারে <(সােমা + রে), অমলরে < (অমল + এ রে), বিজনেরে < (বিজন + এ রে)।

 

৪. র (এর) বিভক্তি : এই শব্দবিভক্তি একান্তভাবে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি। আকারান্ত শব্দের সঙ্গে ‘র’ যুক্ত হয় কিন্তু অন্য স্বরান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে এর’ হয়ে যায়।

 

যথা : শ্যামার < (শ্যাম + র), গনেশের < (গনেশ + এর), মহেশের < (মহেশ + এর)।

 

৫. তে (এতে) বিভক্তি : ই’ কারান্ত ও উ’ কারান্ত, ‘আ’ কারান্ত শব্দের সঙ্গে ‘তে’ যুক্ত হয়, আর ‘অ’ কারান্ত ও ব্যঞ্জনা শব্দের শেষে ‘তে’ বিভক্তি ‘এতে’ হয়ে যায়।

 

যথা : বাড়িতে < (বাড়ি + তে), জমিতে < (জোমি + তে), সুরুতে < (সুরু + তে), মেরুতে < (মেরু + তে), ঘরেতে < (ঘর + এতে), জলতে < (জল + এতে), শাখাতে < (শাখা + তে), গােরুতে < (গােরু + তে), বসেতে < (বস + এতে)। 

 

৬. (০) শূন্য বিভক্তি ও যে শব্দ-বিভক্তি শব্দে যুক্ত হয়ে বাক্যে শব্দটিকে পদে উন্নীত করে অথচ অপ্রকাশিত বা অদৃশ্য অবস্থায় থাকে তাকেই কারক-বিভক্তির আলােচনা শূন্য (০) বিভক্তি বলা হয়।

 

[(০) শূন্য বিভক্তিকে আধুনিক কালে অনেকেই ‘অ’-বিভক্তি রুপে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। অবশ্য এই ‘অ’-বিভক্তি গ্রহণ করায় যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ]

 

৭. তির্যক বিভক্তি ও যে বিভক্তিগুলি সব কারকেই প্রয়ােগ করা হয় সেগুলিকে বলা হয়। তির্যক বিভক্তি। ‘এ’ ও ‘তে বিভক্তিকে তির্যক বিভক্তি বলা হয়।

 

অনুসর্গ ও শব্দ-বিভক্তির পার্থক্য

 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সর্বসাকুল্যে পাঁচটি বিভক্তির মধ্যে একটি বিভক্তি র (এর)’ তো সম্বন্ধ পদের জন্য নির্দিষ্ট, বাকি চারটি বিভক্তি দিয়ে ছটি কারক নিয়ন্ত্রিত হয়। অবশ্য পাঁচটি বিভক্তিই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে বাংলায় বিভক্তির অভাব পূরণের জন্য বেশ কিছু অনুসর্গকে বিভক্তির প্রয়ােজনে ব্যবহার করা হয়। যদিও প্রাকৃতভাষায় অনুসর্গ জাতীয় কয়েকটি পদের ব্যবহারের মধ্যে সেই অনুসর্গের ব্যবহার শুরু, তবু বলতে হয় পরবর্তীকালে এই অনুসর্গ জাতীয় পদগুলি ধ্বনি-পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাভাষায় ব্যবহারযােগ্য হয়ে উঠেছে।

 

অনুসর্গ : অনুসর্গ এক ধরনের অব্যয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ কতগুলি অব্যয় বিশেষ্য, সর্বনাম বা বিশেষ্যস্থানীয় পদের পরে বসে শব্দ-বিভক্তির কাজ করে এবং কারক- সম্পর্ক বােঝাতে সাহায্য করে। এদের বলা হয় অনুসর্গ। 

 এই অনুসর্গকে পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়ও বলা হয়। তবে আধুনিক কালে প্রয়ােগ কম।

 

অনুসর্গ দুদিক থেকে গড়ে ওঠে—নামপদ-জাত ও অসমাপিকা ক্রিয়াজাত। নামপদজাত বলতে বােঝায় মূলত বিশেষ্য বা বিশেষণ থেকে আগত। আর অসমাপিকা ক্রিয়াজাত বলতে বােঝায় অসমাপিকা ক্রিয়ার অনুসর্গরূপে ব্যবহার।

 

বাংলায় প্রচলিত নামপদজাত অনুসর্গের উদাহরণ

 

দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃর্ক, নিমিত্ত (জন্য) নিকটে (কাছে), মধ্যে (মাঝে), উদ্দেশে, দূরে, উপরে, ভিতরে, বিনা, ব্যতীত, সহিত (সঙ্গে, সাথে) দিকে, অপেক্ষা (চেয়ে), পাশে, কারণে ইত্যাদি।

 

প্রয়ােগ লক্ষ কর :

 

মা রান্নার জন্য ব্যস্ত। তাকে দিয়ে একাজ হবে না। সে চাকুরির উদ্দেশে রওনা হল। টেবিলের উপরে বইটি রাখ। রামের অপেক্ষা শ্যাম বড়াে। বনের মধ্যে লুকিয়ে আছে। 

 

বাংলায় প্রচলিত ক্রিয়াজাত অনুসর্গের উদাহরণ ?

 

চাহিয়া (সাধু) > চেয়ে (চলিত), হইতে > হতে, লাগিয়া > লেগে, বলিয়া > বলে, হইয়া > হয়ে, ধরিয়া > ধরে, থাকিয়া > থেকে ইত্যাদি।

 

প্রয়ােগ লক্ষ কর :

  সে আমার চেয়ে ভালাে। গাছ হইতে ফলটি পড়িল। তিল থেকে তেল হয়। সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু। তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। দোষ করেছ বলে শাস্তি পেলে। অসীম মুম্বাই হয়ে আসবে।

 

অনুসর্গকে মৌলিক শব্দ-বিভক্তির সঙ্গে এক করে বিচার করা উচিত নয়। অনুসর্গ ও শব্দবিভক্তি উভয়ে কারক নির্ণয়ে সাহায্য করলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

 

 ১. শব্দ-বিভক্তির চিহ্নগুলি অর্থহীন, কিন্তু অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।

 

২. শব্দ-বিভক্তি চিহ্নগুলি পদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়, কিন্তু অনুসর্গ পদের পরে পৃথকভাবে অবস্থান করে, কখনও স্বাধীন অস্তিত্ব হারায় না।

 

৩. শব্দ-বিভক্তির স্বাধীন প্রয়ােগ নেই, কিন্তু অনুসর্গের স্বাধীন প্রয়ােগ আছে।

 

 ৪. শব্দ-বিভক্তি সব সময় শব্দের অন্তে বসে কিন্তু অনুসর্গ প্রধানত শব্দের পরে বসে, কখনাে কখনাে শব্দের পূর্বেও অবস্থান করে।

 

৫. একটি শব্দ-বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলে কারক-সম্পর্ক সুনির্দিষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়। এরজন্য আর অন্য কোনাে বিভক্তির প্রয়ােজন হয় না কিন্তু অনুসর্গের ক্ষেত্রে অনেক সময় পূর্বপদে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন—সে রতনকে বই দেয়। ব্যক্তিগত সুখের জন্য পরের ক্ষতি কোরাে না।

 

কারক ও তার শ্রেণিবিভাগ

 

কারক– কর্তৃকারক , কর্মর্কারক,  করণকারক, অপাদান কারক, অধিকরণ কারক, নিমিত্ত কারক

 

ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের প্রত্যক্ষ সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক সম্পর্ককে মােটামুটিভাবে ছ-ভাগে ভাগ করা যায়—(১) কর্তৃকারক, (২) কর্মকারক, (৩) করণকারক, (৪) অপাদানকারক, (৫) অধিকরণকারক ও (৬) নিমিত্তকারক।

 

১. কর্তৃকারক

 

কর্তৃকারক কাকে বলে

 

রতন বই পড়ে। সােমা চিঠি লেখে। বিশ্বজিৎ গাড়ি চালায়। অসীম ছবি আঁকে। তিনি ভাত খাচ্ছেন।

 

উপরের বাক্যগুলিতে যথাক্রমে ‘পড়া’ কাজ সম্পন্ন করছে রতন; ‘দেখা’ কাজ সম্পন্ন করছে সােমা ; চালানাে কাজ সম্পন্ন করছে বিশ্বজিৎ ; আঁকা’ কাজ সম্পন্ন করছে অসীম, ‘খাওয়া’ কাজ সম্পন্ন করছেন তিনি।

 

তাহলে দেখা যাচ্ছে এরা প্রত্যেকেই ক্রিয়া সম্পন্ন করছে এবং এই ক্রিয়া-সম্পাদকদের মধ্যে একটি সর্বনামপদ বাকিগুলি বিশেষ্য পদ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ক্রিয়াপদকে ‘কে’ প্রশ্ন করে কর্তা তথা কর্তৃকারক নির্ণয় করা যায়।

 

কর্তৃকারক :-  যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে বলা হয় কর্তা। বিশেষ্য বা সর্বনামবাচক এই কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে বলে কর্তা সম্পর্ক এবং এই কর্তারই হয় কর্তৃকারক।

 

কর্তার প্রকারভেদ

 

কর্তৃকারক নির্ণয় করতে গেলে কর্তার প্রকারভেদ সম্পর্কে সম্যক পরিচয় থাকা প্রয়ােজন। সেদিক থেকে বিচার করে, অহেতুক জটিলতায় না গিয়ে মােটামুটি প্রচলিত ও সহজ প্রকারভেদ উল্লেখ করা হল।

 

১. কর্তৃবাচ্যের কর্তা : কর্তৃবাচ্যে কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ক সােজাসুজি অর্থাৎ সাক্ষাৎ সম্পর্ক। কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার যে কর্তা তাকেই কর্তৃবাচ্যের কর্তা বলা হয়।

 

প্রসঙ্গত সাক্ষাৎ সম্পর্ক, ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। সাক্ষাৎ সম্পর্ক বলতে বােঝায় তখনই যখন কর্তা যে-পুরুষের ক্রিয়াপদও সেই পুরুষের হয়।

 

যথা : মা বেড়াচ্ছেন। আমি সকালে বেড়াই। সে ভােরে বেড়ায়। তুমি সন্ধ্যায় বেড়াও। রতনে রতন চেনে।

 

এখানে—‘না’, ‘আমি’, ‘সে’, তুমি’, রতনে’ -এদের সঙ্গে ক্রিয়ার সাক্ষাৎ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সুতরাং এরা কর্তৃবাচ্যের কর্তা।

 

২. অনুক্ত কর্তা : কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তার যেভাবে সাক্ষাৎ-সম্পর্ক থাকে কর্মবাচ্যে বা ভবাচ্যে সেভাবে থাকে না। উভয় ক্ষেত্রে কর্তা গৌণভাবে অবস্থান করে। কর্মবাচ্যে বা ভবচ্যে এই গৌণভাবে অবস্থান করা কর্তাকেই অনুক্ত কর্তা বলা হয়।

 

যথা ; আমার খাওয়া হয়েছে। তাকে এখন যেতে হবে। তার ঘরে থাকা হয়। রামের লেখা হল। বােমার ভাত খাওয়া হয়নি। রীতার যাওয়া হল না ইত্যাদি।

 

৩. নিরপেক্ষ কর্তাঃ বাক্যের মধ্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া যদি ভিন্ন হয় তাহলে সারি কিন্তু কর্তাকেই নিরপেক্ষ কর্তা বলা হয়। কেননা এর সঙ্গে সমাপিকা ক্রিয়ার কোন সম্পর্ক থাকে না।

 

যথা:  তুমি এলে তানি যাব পুলিশ এলে আমি এথান ত্যাগ করব। মা ঘুমােলে ভাই পরে রহিম গেলে মহিন আসবে। খােকা ঘুনােলে মা বেরােবেন ইত্যাদি।

 

৪. প্রযোজক কর্তা ও বারের মধ্যে যে কর্তা নিজে ক্রিয়া সম্পন্ন না করে অন্যকে দিয়ে

সম্পন্ন করায় তাকে বলে প্রয়োজক কর্তা।

 

যথা : মা মেয়েকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। কার্যত প্রত্যক্ষভাবে দেখা কাজ সম্পন্ন করছে। 1

 

৫. প্রযােজ্য কর্তা : প্রযােজক কর্তা যাকে কর্মে প্রবৃত্ত করে তাকে প্রযােজ্য কর্তা বলে।

 

যথা ও বাবা মেয়েকে দিয়ে গান গাওয়ান। গান গাইছে ‘মেয়ে’ কিন্তু বাবা তাকে দিয়ে গাওয়াচ্ছেন।

 

৬. সমধাতুজ কর্তা ; বাক্যে অকর্মক ক্রিয়াপদ যে-ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয় সেই একই ধাতু নিষ্পন্ন কোনাে বিশেষ্য পদ যদি সেই ক্রিয়ার কর্তারূপে কাজ করে তাহলে সেই কর্তাকে সমধাতুজ কর্তা বলা হয়।

 

যথা ঃ সে বড়াে বাড় বেড়েছে। বাক্যটিতে কার্যত ‘বেড়েছে’ ক্রিয়ার কর্তা বাড়’, বাড়’ ও ‘বেড়েছে’ দুটি পদই একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন।

 

৭. সহযােগী কর্তা : বাক্যের মধ্যে যখন দুটি কর্তার পারস্পরিক সহযােগিতার ভাব নিয়ে ক্রিয়া সম্পন্ন বােঝায় তখন সেই কর্তা দুটিকে সহযোগী কর্তা বলা হয়।

 

যথা ঃ বাঘে গরুতে একঘাটে জল খায়। মায়ে মেয়ে রান্না করে।

 

৮. ব্যতিহার কর্তা ও বাক্যের মধ্যে যে-কর্তার দ্বারা পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পন্ন বােঝায় তাকে বলা হয় ব্যতিহার কর্তা। আসলে এই ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে একটা প্রতিযােগিতার ভাব লক্ষ করা যায়।

 

যথা ঃ রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে। পডিতে পন্ডিতে তর্ক করে।

 

কর্তৃকারকে বিভক্তির প্রয়ােগ

 

কর্তায় প্রধানত (0) শূন্য বিভক্তি, এ (য়) বিভক্তি এবং তে (এতে) বিভক্তির প্রয়ােগ বেশি।

 

(০) শূন্য বিভক্তির প্রয়ােগ ।

 

রতন (০) ভালাে সাঁতার জানে। ঘােড়া (0) ছুটছে। সে (0) অনেক রাত জেগে পড়ে। মা (0) এখনও অসুস্থ আছে।

 

এ (য়) বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

পাগলে (এ) কিনা বলে, ছাগলে (এ) কিনা খায়। ঝড়ে (এ) আমাদের খুব উপকার করেছে। ঘােড়ায় (য়) গাড়ি টানে। চোরে (এ) চুরি করে। গাধায় (য়) ধােপার বােঝা বয়। বাপ-বেটায় (য়) ঝগড়া করে। মায়ে ঝিয়ে (এ > য়ে) গল্প করে।

 

তে (এতে) বিভক্তির প্রয়ােগ 

 

বুলবুলিতে (তে) ধান খেয়েছে। গরুতে (তে) লাঙল দিল। মূখেতে (তে) বুঝিতে পারে । সাধুতে (তে) বুঝিতে পারে চোরের কৌশল? সমুদ্রেতে (এতে) গর্জন করছে।

 

 র (এর) বিভক্তির প্রয়ােগ 

 

প্রধানত অনুক্ত কর্তায় র’ বা ‘এর’ বিভক্তির প্রয়ােগ হয়।

 

রতনের (এর) একাজ হবে না। শ্যামলের (এর) মাঠে যাওয়া হয়। রমার (র) ভুল হল। জগার (র) দিল্লি যাওয়া হল না। আপনার (র) জানা আছে।

 

এই প্রসঙ্গে উমেষ। যে, আধুনিক বাংলা চলিত গদ্যে কর্তৃকারকে অনুসর্গের প্রয়োগ বলা যায় বিরল দৃষ্টান্ত।

 

২. কর্মকারক

 

কর্ম কারক কাকে বলে

 

শিক্ষক মশাই ছাত্রদের বাংলা পড়ান। চাষিরা মাঠে ধান কাটে। বােপা কাপড় কাচে। সু ছবি তাঁকে। সে এ খবর কাউকে দেবে না।

 

; উপরের বাক্যগুলিতে ক্রিয়াসম্পাদক বা কর্তা, কী পড়ান, কাকে পড়ান—এর উত্তরে হ যথ”কমে বাংলা’, ‘ছাত্রদের; কী কাটে উত্তরে তাসে ‘ধান ; কী কাচে উত্তরে আসে কাপড়’ : কী আঁকে উত্তরে আসে ছবি’ ; কী দেবে না, কাকে দেবে না উত্তরে আসে কম খবর’, কাউকে। বাক্যগুলিতে কর্তা যা করে তাকেই বলে কর্ম। ক্রিয়াপদকে ধরে উ বা কাকে প্রশ্ন করলে তার উত্তরে কর্ম পাওয়া যায়।

 

কর্মকারক : বাক্যের মধ্যে কর্তা যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়াসম্পন্ন করে তাকে বলা হয় কর্ম এবং কর্মের সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে বলা হয় কর্মসম্পর্ক। এই কর্মেরই। হয় কর্মকারক।

 

সুতরাং উপরের বাক্যগুলিতে বাংলা, ছাত্রদের, কাপড়, ছবি, খবর, কাউকে এগুলি কর্ম ও ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি কর্মকারক।

 

প্রশ্ন আসতে পারে কর্মকারকে ক্রিয়াপদকে কী বা কাকে প্রশ্ন করা হবে কেন। যে কোনাে একটা করলেই তাে হয়। হয় না, তার কারণ কর্ম দুধরনের—মুখ্যকর্ম ও গৌণকর্ম। <্য কতপ্রাণীবাচক এবং গৌণকর্ম প্রাণী বাচক। কী প্রশ্ন করে অপ্রাণীবাচক কর্ম অর্থাৎ : ক ও কাকে’ প্রশ্ন করে প্রাণিবাচক অর্থাৎ গৌণকর্ম পাওয়া যায়। কর্মকারক প্রসঙ্গে মধাতুজ কর্ম সম্বন্ধে আলােচনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

 

সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন সেই ধাতু থেকে নিপন্ন বিশেষ্য পদ অনেক সময় সেই ক্রিয়ার কর্ম হিসেবে ব্যবহূত হয়। এই কর্মকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম।

 

বাদ আজ একটা লম্বা ঘুম ঘুমিয়েছে। বাক্যটিতে ঘুমিয়েছে ক্রিয়াপদটি প্রকৃতপক্ষে ক. হয়। একই ধাতু থেকে জাত ‘ঘুম’ এই বিশেয্যপদটি এখানে কর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

 উল্লেখ্য যে অকর্মক্রিয়ার সকর্মত্ব লাভে সমধাতুজ কর্মের একটি বিশেষ

 

 কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ্য কর ।

 

সে আজ বেশ খেলা  খেলল । সােনা এখন চাপা হাসি হাসছে। নরেনের বিয়েতে আমরা কি খাওয়ায় না খেলাম।এমন কান্না কেঁদোনা।

 

কর্ম কারকে বিভক্তির প্রয়োগ

 

(০) শূন্য বিভক্তি প্রয়ােগ :

 

চাযী চাষ (০) করে। বাঘ হরিণ (0) খায়। ওরা মাঠে বীজ (0) বােনে. পাকা ধান (0) কাটে। সে ভালাে খেলা (0) খেলছে। ভিখারিকে ভিক্ষা (০) দাও। ধােপা কাপড় (0) কাচছে। অবস্থা (০) বুঝে ব্যবস্থা (০) নিও। লােকটি অনেক কথা (০) বলে গেল।

 

 কে-বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

তােমাকে (কে) কে না চেনে? গুরু শিষ্যকে (কে) ক্ষমা করলেন। আগুনকে (কে) সকলেই ভয় পায়। ছেলেকে (কে) মেরো না। দরিদ্রকে (কে) সেবা কর। আমাকে (কে) দেখে মা চিন্তান্বিতা। তারা মানুষকে (কে) চায় করতে খাটো’। বাবা-মাকে (কে) ভর্তি করিও। তােমাকে (কে) খুজছিলাম।

 

রে (এ রে)-বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

সাধারণত কবিতার ভাষায় কর্মকারকে ‘রে’ বিভক্তি হয়। আধুনিক গদ্যে কর্মকারকে ‘রে’ বিভক্তি চলে না। তবে পূর্ববঙ্গীয় কথ্য ভাষায় এর কিছু প্রয়ােগ আছে।

 

যথা : দাদাকে ডাক, তােমাকে বলি। আমাকে যখন ডাকলা? বাবারে বল আজ যাব।

 

উল্লেখ্য, অকারান্ত শব্দের পরে ‘রে’ বিভক্তি এর’ হয়ে যায়। অন্যক্ষেত্রে ‘রে থাকে।

  ঈশ্বরীরে (রে) জিজ্ঞাসিল ঈশ্বরী পাটনী। দেবতারে (রে) প্রিয় করি প্রিয়েরে (এরে) দেবতা।’ ‘মিথ্যারে (রে) কোরােনা উপাসনা। ‘বধূরে (রে) ডাকিছে প্রিয় বারে বারে। ‘রেখাে মা দাসেরে (এরে) মনে। আপনারে (রে) বড় বলে বড় সেই নয়, তােমারে (রে) বধিবে যে গােকুলে বাড়িছে সে।’ ‘পাটনী তাহারে (রে) করে পার’, ‘পদ্মালয়া পন্নী সীতারে (রে) পাইয়া।

 

এ (য়, য়ে) বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

কর্মকারকে ‘এ’ বিভক্তিরি প্রয়ােগ ও কবিতার বেশি লক্ষ করা যায়।

 

‘কেশরী কভু ক্ষুদ্র শশকে (এ) বধে’? ‘জিজ্ঞাসিছে জনে জনে (এ)। রামে (এ) দেখি মুনিবর উঠিলা যতনে’। ধৃতরাষ্ট্রে (এ) ভয় নাহি করে কেহ আর’। অন্ধ আতুরে (এ) করােনা ঘৃণা। মা তােমায় (য়) কত দিন দেখিনি। এখন আর নয় পুলিশে (এ) খবর দাও

 

৩. করণকারক ।

 

করণ কারক কাকে বলে

 

ব্যায়ামে শরীর সুস্থ হয়। এ কলমে লেখা হয় না। টাকায় কি না হয়। আকাশ মেঘে ঢাকা। ঘর্ষণে তাপের সৃষ্টি হয়।

 

উপরের বাক্যগুলিতে শরীর সুস্থ হয় কী উপায়ে—উত্তরে আসে—ব্যায়ামে’। লেখা হয় না কীসের দ্বারা—উত্তরে আসে–কলমে’ ; সব কিছু হয় কীসের দ্বারা উত্তরে আসে ‘টাকায়’ ; আকাশ কীসের দ্বারা ঢাকা—উত্তরে আসে—মেঘে’ ; তাপ সৃষ্টি হয় কীসের সাহায্যে উত্তরে আসে ঘর্ষণে।

 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ক্রিয়াসম্পন্ন হচ্ছে কোনাে না কোনাে উপায়ে বা কারও সাহায্যে । কারও দ্বারা। এক্ষেত্রে ব্যায়ামে, কলমে, টাকায়, মেঘে, ঘর্ষণে—এই পদগুলি কারণপদ তথাৎ করণ কারক হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্রিয়াপদকে ধরে—কার দ্বারা, কীসে, কী। উপায়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তারই হয় করণ কারক।

 

করণ কারক :- কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে যে উপায়ে বা যার সাহায্যে তাকে বলা হয় করণকারক। কেননা তার সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তা করণসম্পর্ক।

 

করণ কারকের প্রকারভেদ

 

নানা অর্থে করণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই কারণে জটিল বিশ্লেষণে নানা শ্রেণির কারণসম্পর্ক উল্লেখ করা যায়। সেই জটিলতায় না গিয়ে সহজ-সরল অপরিহার্য কয়েকটি শ্রেণি উল্লেখ করা হল। সেদিক থেকে বিচার করে করণ-পদকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়—(১) যন্ত্রণাত্মক করণ, (২) উপায়াত্মক করণ, (৩) বীপ্সা-সূচক করণ।

 

১. যন্ত্রণাত্মক করণ ও ক্রিয়া সম্পাদনের পার্থিব, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপায়কে যন্ত্রণাত্মক করণ

 

যথা ঃ কুড়ুল দিয়ে কাঠ কাটে। আমরা কানে শুনি, চোখে দেখি। চেয়ারটা পা দিয়ে সরিয়ে দিল। কাটা দিয়ে তাকে বিধল। হাওয়ায় মেঘ উড়ে যায়। 1

 

২. উপায়াত্মক করণ : ক্রিয়া সম্পাদনের উপায় যেখানে বাস্তব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় সেক্ষেত্রে সেই করণ-পদকে বলা হয় উপায়াত্মক করণ।

 

যথা: ব্যায়ামে শরীরে ভালাে হয়। ভয়ে ভুলে যাই। আনন্দে তার চোখ থেকে জল পড়ছে। সে সেবায় তুষ্ট হয়। পরের ব্যাথায় ব্যাথী কজন হয়।

 

উল্লেখ্য যে, হেতু অর্থে করণকে উপায়াত্মক করণের অন্তর্ভুক্ত করা শ্রেয়।

 

 ৩.বিষ্প| সূচক করণ ঃ বিষ্প| শব্দের অর্থ হল যুগপৎ ব্যাপ্তি। ক্রিয়া সম্পাদনের উপায় যদি যুগপৎ ব্যাপ্তি অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বীপ্সাসূচক করণ বলা হয়।

 

যথাঃ তারায় তারায় ভরেছে আকাশ। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেঙেছে পাড়। রােগে রােগে শীর্ণ দেহ। কথায় কথায় আঘাত করে।

 

করণ কারকে বিভক্তির প্রয়ােগ

 

(0) বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

বাক্যের ক্রিয়াপদে খেলা করা বা প্রহার করা বােঝালে অনেক সময় করণ-কারকে শূন্য

 

যথা : ছেলেরা মাঠে বল (0) খেলে। লাঠি (0) মেরে ওর মাথা ফাটিয়ে দিল। বাবা ছেলেবে, বেত (৫) বলেন। ওরা পাশা (0) খেলছে। তরবারি (0) খেলে।

 

 এ ( য় , য়ে ,)বিভক্তির প্রয়ােগ

 

হাতে(এ) না পারি ভাতে (4) মারব। আগুনে (এ) পুড়ে গেল। এ কলমে (এ) লেখা হয় না। নিজের হাতে (এ) একাজ করেছি। উঠোনটা কয়েকদিনে ঘাসে (এ) ভরে গিয়েছে। টাকায় (য়) সব হয় না। পাতায় (য়) মুড়ে দিও। এখন ও মনের জালায় (য়) জ্বলছে। খাইয়ে (য়ে) পেট ভরেছে, মম ভরেনি। ভালােবেসে (এ) তােমায় আমি আপন করেছি। কণ্ঠে কণ্ঠে (এ) তান উঠেছে। চোখে (এ) দেখে, কানে (এ) শুনে, হাতে (এ) কর কাজ। তারায় তারায় (য়) আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

 

তে (এতে) বিভক্তির প্রয়ােগ :

 

সব কিছু বুদ্ধিতে (তে) বিচার করা যায় না। ছুরিতে (তে) পেনসিল কাটে। অশ্রুতে (তে) কাপড় ভিজিও না। আজ গরমেতে (এতে) খুব কষ্ট হচ্ছে। ফুলতে (তে) বন ভরে গেছে। গােরুতে (তে) লাঙল টানে। আজ ট্যাক্সিতে (তে) বাড়ি ফিরেছি।

 

করণ কারকে অনুসর্গের প্রয়ােগ

 

 করণকারকে প্রধানত দিয়া (দিয়ে), কর্তৃর্ক, দ্বারা, করিয়া (করে) হইতে (হতে) অনুসর্গগুলি ব্যবহৃত হয়।

 

হাতদিয়ে টেবিল ঠেলােনা। চাকর দিয়ে এ কাজ কোরাে না। নিজে না করে লােকদিয়ে এ কাজ করিও। দুর্গার মূর্তিটি মাটি দিয়ে তৈরি। গ্লাসে করে জল আনিও। নৌকা করিয়া নদী পার হইলাম। আজ রিক্সা করে বাড়ি ফিরবে। তােমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না। চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। তােমা হইতে আমার কোনাে উপকার হইল না। আগে পালকিতে করে লােকে যেত। রাবণ কর্তৃক সীতা অপহৃতা হইলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *