Bengali Class ix

আমরা কবিতা প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

 আমরা কবিতা প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

 

        আমরা কবিতা

 

আমরা

 

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

 

 

উৎস

 

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতাটি কবির ‘কুহু ও কেকা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। কবির ‘কুহু ও কেকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘আমরা’ কবিতাটি গৃহীত।

আমরা-কবিতা-প্রশ্ন-উত্তর-নবম-শ্রেণি-বাংলা

 

আমরা কবিতা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সারাংশ

  মুক্তবেণীর গঙ্গা যেখানে মুক্তি বিতরণ করছে সেই তীর্থ বরদ বঙ্গে বাঙালির বাস। অবিভক্ত বঙ্গভূমির পূর্বদিকে শ্রীহট্টের কমলালেবু ফুলের সমারােহ, পশ্চিমে বিহার মালভূমি অঞ্চলে মহুয়া ফুলের সম্ভার। উত্তরে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফাবৃত শৃঙ্গ বঙ্গমাতার মুকুটবিশেষ। তার আলােকে ভুবন আলােকিত। কনকধান্যে বঙ্গজননীর কোল ভরা। তাঁর বুকভরা স্নেহ। মায়ের পদযুগল পদ্মশােভিত। মায়ের দেহ অতসী ও অপরাজিতায় অলংকৃত। বঙ্গভূমির দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের শত তরঙ্গ বঙ্গমাতার বন্দনা গান গায়। বাঙালি ওই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে বাস করে।

 

 বঙ্গভূমি ছিল ব্যাঘ্র ও সর্পসংকুল। বাঙালিকে বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়েছে। বাঙালি হেলায় সাপ নাচিয়েছে। * সাপের মাথায় নেচেছে। বাঙালি চতুরঙ্গ সাজিয়ে রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। বাঙালির ছেলে বিজয়সিংহ।নিজের শক্তির পরিচয় দিয়ে সেই সিংহল রেখেছেন। বাঙালি দু-f – দিকে দুই শত্রু মগদস্য ও মােগল আক্রমণ রুখেছে। চাঁদ-প্রতাপের হুকুমে দিল্লির সম্রাটকে হটে যেতে হয়েছে।

 

 বাংলার মাটিতে বসে সাংখ্যকার কপিল সাংখ্যদর্শনের সূত্রগুলি রচনা করেছেন। অতীশ দীপংকর তিব্বতে গিয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলেছেন। বাঙালির ছেলে রঘুনাথ শিরােমণি শাস্ত্রের তর্কযুদ্ধে পক্ষধর মিশ্রকে হারিয়ে যশের মুকুট পরেছেন। বাঙালি কবি জয়দেব সংস্কৃতে রাধাকৃষ্ণুের কোমলকান্ত পদ রচনা করেছেন। বরভূধর (বরােবুদুর) ও শ্যাম-কাম্বােজের ওংকারধাম বাঙালি স্থপতির স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। ধ্যানের ধনে মূর্তি গড়ে ভাস্কর শিল্পী বিটপাল ও ধীমান বাংলার ভাস্কর্য শিল্পের নিদর্শন রেখেছেন। অজন্তায় বাঙালির পটশিল্পের নিদর্শন রেখেছেন কোনাে বাঙালি পটশিল্পী। বাঙালি কীর্তনে আর বাউল গানে তার হৃদয়ের গােপন দ্বারগুলি হাট করে খুলে ধরেছে।

 

 বাঙালি দুর্ভিক্ষে মরেনি। মহামারি নিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি কপালে অমৃতের টিকা পরে বেঁচে আছে। বাঙালি আকাশ-প্রদীপ জ্বালে। দেবতাকে আত্মীয়রূপে ভজনা করে ও মানুষের ঠাকুরালি করে কুটিরে স্থাপন করেছে। বাঙালির হৃদয় অমৃতমন্থন করে নদিয়ার নিমাই মানবমূর্তি ধারণ করেছেন। তাঁর মধ্যে বিশ্ব-অধিপতি ঈশ্বর দর্শন করেছে বাঙালি। বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ গুরু শ্রীরামকৃষ্ণুের বাণী সারা জগতে প্রচার করেছেন। বাঙালির ছেলে বিবেকানন্দের প্রতিভাগুণে বাঘ ও গােরুর সমন্বয় তথা অসম্ভবকে সম্ভব করা সফল হয়েছে।

 

 বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসুর সাধনার বলে জড়ের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। তান্ত্রিক সাধকের শবসাধনার চেয়ে বিজ্ঞানের এই নতুন সাধনা ১ বড়াে। বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় দুই বিষম ধাতুর মিলন ঘটিয়েছেন। বাংলার নব্য রসায়নচর্চা গরমিলকে মিলিয়ে দিচ্ছে। বাঙালি কবি জগৎকে মহামিলনের গান শুনিয়েছেন। বাঙালি । জন্ম ও বাঙালির জীবন-প্রাণ ব্যর্থ নয়। ভবিষ্যৎকে আশার বাণী । বাঙালিই শুনিয়েছে। বিধাতার আশীর্বাদে বিধাতার কাজ বাঙালি সাধন করবে।

 

  রাজা বিক্রমাদিত্যকে একটি করে গল্প শুনিয়ে বেতাল শােনানাে গল্পের ওপর রাজাকে একটি করে প্রশ্ন করত। উত্তর দিতে হতাে রাজাকে। বাঙালি যেন ওই প্রশ্নের ব্যাপারটা কেড়ে নিয়ে জবাব দিয়েছে নির্ভয়ে সবার আগে। সত্যের জন্য সবকিছু পণ করে বাঙালি সত্যপথের অবিচল পথিক হয়েছে। সব চাঞল্য, সব

 

প্রলােভনকে জয় করে সে সত্যের পথে চলেছে। যুগ যুগ ধরে সাধনায় সিদ্ধি ও সাফল্য পেয়েছে বাঙালি। বিশ্ব-প্রাণের হাটে সাফল্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। ভাবপ্রবণ বাঙালি বুকভরা মুক্তি নিয়ে গম্ভীরা নিশিযাপন বা আপন ভাবে মগ্ন থেকেছে। সৃজনপদ্মের গভীরে গুপ্ত অতুলনীয় মণি হলাে বাঙালির ভবিষ্যৎ অমরত্বের বীজ, যা আজও তার হস্তগত।

 

 শ্মশানের বুকে পঞ্চবটী রােপণ করেছে বাঙালি। বাঙালিই সেই পঞ্চবটীর ছায়ায় শতকোটি জগৎবাসীকে মিলিত করবে। অতীতে যে গৌরবজনক ঘটনার সূচনা হয়েছে তা সম্পন্ন হয়ে বাঙালির গৌরব জগত্ময় প্রচারিত হবে। প্রতিভার গুণেই তা সফল হবে, তার বেশি কিছু লাগবে না। বাহুবল লাগবে না। হিংসা-প্রতিহিংসার সৃষ্টিও হবে না। জগৎবাসীকে মিলনের মহামন্ত্রে বাঙালিই দীক্ষিত করবে। তাতে মুক্তবেণীর তীরের অধিবাসী বাঙালি দেবতার ঋণ থেকে মুক্ত হবে।

 

আমরা কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) ‘আমৱা’ কবিতায় কবির স্বজাতিবােধের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলােচনা করাে। 

 

উত্তর: : উপস্থাপনা : কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত স্বজাতিবৎসল ও স্বজাতিপ্রেমিক। তাঁর অনেক কবিতায় স্বজাতি বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রতিভাবান বাঙালির কীর্তি ও যশ, বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, অধ্যাত্ম চিন্তা, সাধনা ও সিদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে দীর্ঘ আলােচনা করেছেন। আমরা কবিতা সেগুলির মধ্যে অন্যতম।

 

বাঙালির সাহস ও বীরত্ব : ‘আমরা কবিতায় কবি বাংলার প্রাচীন ইতিহাস আলােচনা প্রসঙ্গে বাঙালির অসাধারণ সাহস ও বীরত্বের গৌরবময় একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। বাঙালি একসময়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে, বিষধর সাপকে বশীভূত করে জীবন নির্বাহ করেছে। বাঙালি চতুরঙ্গ সেনাবাহিনী সাজিয়ে রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে সেই পুরাণের যুগে। তা কিন্তু সাহস ও বীরত্বের ছােটোখাটো দৃষ্টান্ত নয়। মগ দস্যুদের আক্রমণ রােখা, মােগলদের আক্রমণ প্রতিহত করা কম শৌর্য ও বিক্রমের পরিচয় নয়।

 

সাহিত্য, দর্শন ও শিল্পে বাঙালির অবদান : বাঙালির পদাবলি কাব্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উজ্জ্বল অধ্যায়। বাংলার মাটিতে সৃষ্ট সাংখ্যদর্শন বাঙালি জাতির মূল্যবান কীর্তি। অতীশ দীপংকর বাঙালির গৌরব ও গর্ব। তর্কযুদ্ধে জয়ী হওয়া কিশাের বালক রঘুনাথ শিরােমণির এক বিশাল কীর্তি। স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও 1 পটচিত্র শিল্পে বাঙালি শিল্পীদের অবদান বাংলার সংস্কৃতি ইতিহাসের ( উজ্জ্বল অধ্যায়। কীর্তন ও বাউল গান বাঙালির হৃদয়-মন প্রকাশের সেরা মাধ্যম।

 

 মন্বন্তর ও মারীর কাছে হার না মেনে বাঙালি জীবনপথের সদর্প যাত্রী। বাঙালি দেবতাকে আত্মীয় করে নিতে পারে। বাঙালির 1 সাধনার সিদ্ধি হলাে দুই সাধক মানবপ্রেমিক শ্রীচৈতন্য ও স্বামী বিবেকানন্দ। বিজ্ঞানসাধক হিসেবে দুই আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিশ্বকে দিয়েছেন গবেষণালব্ধ মূল্যবান সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখ কবি ও গীতিকাররা বিশ্বমানবকে শুনিয়েছেন মহামিলনের গান। বাঙালিই পারে বিশ্বকে মহামিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করতে।

 

কবি সত্যেন্দ্রনাথের এই স্বাজাত্যবােধ তুলনাহীন।

 

প্রয়) কপিল সাংখ্যকার ও অতীশ দীপংকর সম্পর্কে কবি সত্যেন্দ্রনাথ কী বলেছেন? স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও পটচিত্র শিল্পে বাঙালির অবদান আলােচনা 

 

উত্তর: কপিল সাংখ্যকার ও অতীশ দীপংকর মন কপিলদেব ছিলেন জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার ও আদি বিন ব্যক্তি। তিনি বাংলার মাটিতে বসে সাংখ্যদর্শনের সূত্রগুলি লেখেন। এক-একটি সূত্র হীরকখণ্ডের মতাে মহামূল্যবান সূত্রগুলির সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি যেন হীরক হার গড়েছেন মহাপাণ্ডিত্যের দিক থেকে বাংলার ছেলে অতীশ দীপংকরের না উল্লেখযােগ্য। তিনি ছিলেন বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও বহু বৌদ্ধ গ্রন্থের রচয়িতা। তিনি তিব্বতে গিয়ে জ্ঞানে – দীপশিখা জ্বালিয়েছিলেন।

 

বাংলার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও পটচিত্র শিল্প : প্রাচীন বাংলা স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও পট শিল্পের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। বাংলা, স্থাপত্য শিল্পীরা ভারতের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যবদ্বী শ্যাম-কম্বােজে স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন রাখেন। যবদ্বীপের কেদুতে সমতলভূমির মাঝে অবস্থিত একটি ছােটো পাহাড়কে ঘিরে বরােবুদূর

 শিলা মন্দির স্থাপিত হয়। এটি বাঙালি স্থাপত্য। শিল্পীদের স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। আর-একটি নিদর্শন হলাে শ্যাম-কম্বােজের ওংকারধাম। বিটপাল ছিলেন বরেন্দ্রভূমির ভাস্কর্য শিল্পী। তিনি ছিলেন পালযুগের শিল্পী। ভাস্কর্য ছাড়া চিত্র ও মূর্তিনির্মাণ শিল্পে তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। বিটপালের মতাে সমান প্রতিভাবান ভাস্কর্য শিল্পী ছিলেন ধীমান। বাংলার পটশিল্পের যথেষ্ট খ্যাতি আছে। অজন্তা গুহাচিত্রে বাংলার পটচিত্রের নিদর্শন আজও আছে। কোনাে এক পটচিত্র শিল্পী লীলায়িত তুলিতে চিত্রগুলি এঁকেছিলেন। সবই বাঙালি প্রতিভার প্রকাশ ও বাঙালির গৌরব। |

 

প্রশ্ন ) কীর্তনে আৱ বাউলের গানে’ বাঙালি কী ‘ করেছে? নিমাই ও বিবেক সম্পর্কে কবি সত্যেন্দ্রনাথ কী ও বলেছেন লেখাে। 

 

উত্তর: কীর্তন ও বাউল গান : কীর্তন হলাে রাধাকৃষ্ণুের লীলাবিষয়ক গান। বাউল গান হলাে বাউল সম্প্রদায়ের রচিত ও তাঁদের গাওয়া গান। দু-ধারার গানই বাঙালির লেখা। দু-ধরনের গানে বাঙালির মনের কথা, তার হৃদয়ের কথা প্রকাশিত হয়। দু-ধারার গানের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার মনের, তার হৃদয়রাজ্যের সব কটি দরজা হাট করে খুলে ধরে। নিজেকে প্রকাশ করে থাকে। দু-ধরনের গানেই বাঙালি মনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ হয়ে থাকে।

 

নিমাই : নিমাই ও বিবেক হলেন যথাক্রমে নবদ্বীপের মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য আর পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণুের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। দুজনেই বাংলা মায়ের দুই কৃতী সাধক সন্তান। দুইই যুগ যুগ ধরে বাঙালির দীর্ঘ তপস্যার সিদ্ধি যেন। নিমাই বাঙালির হৃদয়-মন্থনজাত অমিয় মাখা মানুষের দেহধারী। মানুষের হৃদয়জাত সহগুণ হলাে স্নেহ মমতা সহমর্মিতা সংবেদনশীলতা প্ৰেম-প্রীতি-ভালােবাসা। এগুলি মানুষের ও মানবিক মহৎ গুণ। এগুলিই হলাে মানুষের হৃদয়জাত মহৎ গুণ। এরই সমাবেশে শ্রীচৈতন্যের দেহের অবয়ব গঠন। তাঁর চোখে বাঙালি দেখেছে বিশ্বপিতা ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি।

 

বিবেকানন্দ : স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন আর-এক তাপস। নির্ভীক বীর সন্ন্যাসী। যুবশক্তির আধার। তিনি নির্ভীক পদক্ষেপে শিকাগাে মহাধর্মসম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নির্ভীক কণ্ঠে সনাতন হিন্দুধর্মের সারকথা তুলে ধরেন তাঁর ইতিহাসবিখ্যাত ভাষণে। সভার সকলকে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করেন। বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর বাণী। তাঁর বাণীতে মুগ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য দুনিয়ার কিছু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার ব্যাপারে কবি বলেছেন বিবেকানন্দ ব্যাঘ্রে বৃষভে সমন্বয় ঘটিয়েছেন, অর্থাৎ সে দেশীয় খ্রিস্টান ধর্মের সঙ্গে এদেশীয় হিন্দু ধর্মের সমন্বয়ের পথ তৈরি হয়েছে।

 

আমরা কবিতার প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 9

 

প্রশ্ন ) কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তেৱ ‘আমৱা’ কবিতা অবলম্বনে বঙ্গভূমির প্রাকৃতিক শােভা বর্ণনা করাে। বাঙালির সাহসিকতা ও বীরত্বের গৌরবময় ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তগুলি আলােচনা করাে।

 

উত্তর:  প্রাকৃতিক শােভা : গঙ্গা ও তার উপনদীশাখানদী বাহিত পলিমাটি গঠিত ভূভাগ হলাে বঙ্গভূমি। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বঙ্গভূমিকে ‘বঙ্গজননী রূপে কল্পনা করেছেন। এই বঙ্গজননী অখণ্ড বঙ্গভূমি। তার বাঁহাত কমলার ফুলে (পূর্বপ্রান্তে সিলেটে কমলালেবু ফুলের সমারােহ) ডান হাত মহুয়ার ফুলের মালায় (পশ্চিম প্রান্তে বিহারের হােটোনাগপুরে মহুয়া ফুলের সমারােহ) শােভিত। বঙ্গজননীর ললাট অথাৎ উওর প্রান্তে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গা যা বরফে ঢাকা এবং রােদে দীপ্ত ও সমুজ্জ্বল। যার আলােয় জগৎ আলােকিত। বঙ্গজননীর

 

কোলে সােনা রং-এর কনক ধানের সম্ভার। চরণে পদ্ম, দেহ অতসী ও অপরাজিতা ফুলে অলংকৃত।

 

 বাঙালির সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় : বাঙালির আছে সাহসিকতা, বীরত্বের ইতিহাস ও গৌরবময় কাহিনি। সে বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। সে হেলায় সাপ খেলায় সাপের মাথায় নাচেও। এমনই তার সাহসিকতা ও পৌরাণিক যুগে বাঙালি চতুরঙ্গ সৈন্যবাহিনী নিয়ে রামচন্দ্রের পিতামহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। বাঙালির ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করে নিজ শক্তির পরিচয় দিয়ে সেই দেশের নাম রেখেছেন সিংহল। বাংলার পূর্বদিকে আরাকানের মগেরা ছিল ভয়ংকর , দস্যু। তারা বাংলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লুটপাট করে খুবই ক্ষতি করত। পশ্চিমদিক থেকে মােগল সৈন্য বাংলা জয়ের জন্য আক্রমণ করত। বাঙালি সব্যসাচীর মতাে দু-হাতে দুই শত্রু মগ ও মােগলের আক্রমণ রুখে দিয়েছিল। বাংলার বারােভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম শক্তিধর ও স্বাধীনচেতা ছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায় আর যশােহরের জমিদার প্রতাপাদিত্য রায়। চাঁদ রায় জীবিত অবস্থায় দিল্লির মােগল সম্রাটের অধীনতা স্বীকার করেননি। প্রতাপাদিত্য রায় বাংলার মােগল সুবেদারকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্য রায়ের হুকুমে দিল্লির সম্রাটকে পিছু হঠতে হয়। বাঙালির এই সাহসিকতা ও বীরত্বের গৌরবময় ইতিহাসই বাঙালির গর্ব। 

 

আমরা কবিতা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ সাধনা ফলেছে, প্রাণ পাওয়া গেছে জগৎপ্রাণেৱ হাটে,-উদ্ধৃত অংশটি প্রসঙ্গসহ ব্যাখ্যা

 

উত্তর : আলােচ্য অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা কবিতা থেকে উদ্ধৃত। এই কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ জগৎ ও জীবনের নানা ক্ষেত্রে বাঙালির শ্রেষ্ঠত্বের গুণগান করেছেন। বাঙালি সত্য পথের পথিক। সত্যের সাধক। সত্যের পথে অনেক বাধা, অনেক প্রলােভন। বাঙালি সবকিছু সত্যের পথে অবিচল থেকে সফল হয়েছে। মনের অকারণ সন্দেহ-সংশয় ও চলতাকে জয় করেছে। বাঙালির সাধনা ও কর্মপ্রচেষ্টা বহুদিনের। প্রতিভাশক্তি ও সাধনার জোরে তার কর্মপ্রচেষ্টা শুধু সফল হয়নি, বিশ্বসভায় তা পেয়েছে স্বীকৃতি।

 

প্রশ্ন । ‘লাগিবে না তাহে বাহুবল কিব। জাগিবে না ঘেষাঘেষি ;—উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

 

উত্তর: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের রচিত ‘আমরা’ কবিতা . থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত। অতীতে যে গৌরবজনক ঘটনার সূচনা হয়েছে তা সম্পন্ন হয়ে বাঙালির গৌরব জগৎসভায় প্রচারিত হবে। প্রতিভা ও কর্মক্ষমতার গুণে তা সফল হবে। বাঙালির দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ সাধনা কখনও ব্যর্থ হয় না। তার জন্য বাহুশক্তির দরকার হয় না। হিংসা-দ্বেষ, ২ হানাহানি, রক্তক্ষয়ের প্রয়ােজন নেই। বাঙালির অসামান্য প্রতিভা ও সাধনাশক্তিই যথেষ্ট। তার দ্বারাই জগৎসভায় সে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে শােভিত হতে পারে। 

 

প্রশ্ন ) ‘আমাদের এই কুটিরে দেখেছি মানুষের ঠাকুৱালি ;-কাৱ লেখা কোন্ কবিতা থেকে উদ্ধৃত? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

(উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে সংকলিত।

 

মহৎ কাজের দ্বারা ঠাকুরের ভাব বা দেবতাসুলভ মহিমা লাভ হলাে ঠাকুরালি। বাঙালিদের মধ্যে অনেকেই মহৎ কর্মসাধনের মাধ্যমে দেবমহিমার অধিকারী হয়েছেন। বাঙালির কুটিরেই তাঁদের আবির্ভাব। মানুষের মাঝেই তাঁদের মানবপ্রেম ও তাঁদের মহৎ কাজের প্রকাশ। যেমন—নদিয়ার নিমাই, দক্ষিণেশ্বরের ঠাকুর রামকৃয়, বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ প্রমুখ।

 

প্রশ্ন ) ‘বাঙালিৱ হিয়া অমিয় মথিয় নিমাই ধরেছে কায়া।’-উৎস উল্লেখ কৱে উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করা। 

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা কবিতা থেকে গৃহীত।

 

হিয়া হলাে হৃদয়। সমুদ্রমন্থনের ফলে সুধাভাণ্ড নিয়ে লক্ষ্মী উঠেছিলেন। যে সুধা বা অমৃত শুধু সুখকর ও তৃপ্তিদায়ক অমৃতই নয়, পান করলে অমরত্বের অধিকারী হওয়া যায়। সমুদ্রমন্থনের মতাে বাঙালির হৃদয় মন্থন করে উঠে আসে হৃদয়জাত সৎগুণ, যেমন—দয়া, মায়া, সহানুভূতি, মমত্ব, প্রেমপ্রীতি, ভালােবাসা ইত্যাদি। এই সৎ ও মানবিক গুণের সমাবেশে নদিয়ার  বৈয়ব সাধক, পণ্ডিত, যুগাবতার নিমাই বা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দেহাবরণ গঠিত।

 

প্রশ্ন ) ‘বীৱ সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগজ্ঞয়,—–উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর : স্বামী বিবেকানন্দের বয়স তখন তিরিশ। আমেরিকার শিকাগাে শহরে অনুষ্ঠিত ধর্মমহাসম্মেলনে ভারতের সনাতন হিন্দুধর্মের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। হিন্দুধর্মের আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন বিষয়ে তিনি ভাষণ দেন। তাঁর বক্তব্য মহাসম্মেলনে উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। তাঁর বাণী শুধু আমেরিকা নয়, সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সেজন্য কবি সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন ‘বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়।

 

প্রশ্ন )‘বাঙালির ছেলে ব্যাঘ্নে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।’–এখানে বাঙালিৱ ছেলে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? ব্যাঘ্রে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়’ বলতে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

 

উত্তর : কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতার এই অংক ‘বাঙালির ছেলে’ বলতে স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলেছেন।

 

ব্যাঘ্র হলাে বাঘ আর বৃষভ হলাে যড়। গােরু আর বাঘ খাদ্যখাদক সম্পর্ক। মাংসাশী বাঘের খাদ্য হলাে গােরু। দুইয়ে, মধ্যে সমন্বয় বা বন্ধু সম্পর্ক সাধন সম্ভব নয়। বাস্তবে একেবারে অসম্ভব ঘটনা। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো ভাষণ অসম্ভব ঘটনাই ঘটিয়ে ফেলে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পাশ্চাত্যবাসী ভারতীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কখনােই ভালাে নজরে দেখেন না। তাঁরাও স্বামী বিবেকানন্দের প্রচারিত হিন্দুধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ যেন অসম্ভব সম্ভব হয়ে ওঠে।

 

প্রশ্ন ) ‘তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ে পেয়েছে সাড়া,/ আমাদের এই নবীন সাধনা শর-সাধনার বাড়া।’-‘বাঙালি সাধক’ কে? ‘জড়ের (পয়েছে সাড়া বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই নবীন সাধনা শবসাধনাৱ বাড়া’—অর্থ বুঝিয়ে দাও। 

 

. উত্তর; ‘বাঙালি সাধক হলেন কঠোর বিজ্ঞানসাধক বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।

 

কঠোর বিজ্ঞান সাধনার দ্বারা বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু দেখিয়ে দেন গাছ জড়বস্তু নয়। গাছেরও প্রাণ আছে।

 

‘এই নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া’ বলার অর্থ হলাে যে, জড়বস্তুর মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য যে কঠোর সাধনা, তা তান্ত্রিক সাধকের শব-সাধনার চেয়ে অধিক সাধনা।

 

প্রশ্ন:- ‘বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

 

উত্তর : এখানে ‘ বিয়া’ শব্দের অর্থ মিলন।

 

‘বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে’ বলতে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বুঝিয়েছেন যে, এদেশে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রসায়ন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিভিন্ন বিপরীতধর্মীয় ধাতুর বা মৌলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন যৌগ।

 

প্রশ্ন ) ‘আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে বৱদ বঙ্গে ;-‘-এই উদ্ধৃতিৱ উৎস কী? উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর : কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে আলােচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত।

 

গঙ্গা যেন বেণীবন্ধন মুক্ত হয়ে বঙ্গভূমিতে প্রবাহিত। উপনদী ও শাখানদীসহ গঙ্গার মুক্ত জলধারা বঙ্গভূমিতে বিতরিত। মুক্ত জলধারা যেন বিতরিত মুক্তিবিশেষ। গঙ্গার জলপ্রবাহের কৃপায় বঙ্গভূমি উর্বর পলিমাটি গঠিত ও সরস। সেজন্য বঙ্গভূমি কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ। তা ছাড়া পবিত্র বঙ্গভূমিতে বহু তীর্থের সমাবেশ। বিশেষ করে গঙ্গার তীরে তীর্থের প্রাধান্য। তাদেরই আশীর্বাদপুষ্ট বঙ্গভূমিতে বাঙালির বাস।

 

 প্রশ্ন ) ‘বাম হাতে যাৱ কমলাৱ ফুল, ডাহিনে মধুক-মালা,/ভালে কাঞন-শৃঙ্গ-মুকুট, কিৱণে ভুবন আলা,–এই অংশে কবি বঙ্গভূমির সীমানির্দেশক অবস্থান বুঝিয়েছেন—আলােচনা করাে। 

 

উত্তর: কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা কবিতার এই অংশে বঙ্গভূমিকে বঙ্গজননী রূপে কল্পনা করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ যখন ‘আমরা কবিতা লিখেছিলেন তখন বঙ্গভূমি ছিল অবিভক্ত। 1 অবিভক্ত বঙ্গভূমি তথা বঙ্গজননীর বাঁহাত অর্থাৎ, পূর্ব প্রান্তে ছিল শ্রীহট্ট। সেখানে কমলালেবুর ফুলের সমারােহ ছিল। ডানহাত বা পশ্চিম প্রান্ত ছিল বিহারের ছােটোনাগপুরে মধুময়  মহুয়া ফুলের সম্ভার। ললাট অর্থাৎ, উত্তরে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা গিরিশৃঙ্গ। যা বরফে ঢাকা ও যার ওপর রােদ পড়ে প্রতিফলিত আলােয় জগৎ আলােকিত।

 

প্রশ্ন ) কোল-ভৱা যাৱ কনক ধান্য, বুক-ভৱা যাৱ স্নেহ,/ চরণে পদ্ম, অতসী অপরাজিতায় ভূষিত দেহু,—উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর : কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতায় বঙ্গভূমি বঙ্গজননী রূপে কল্পিত। তিনি মূর্তিমতী মানবী। বঙ্গভূমি শস্যশ্যামল । সােনার বরণ পাকা ধানে মায়ের কোল ভরা। বঙ্গভূমি সরস ও শস্যশ্যামল বলে মায়ের বুকখানা

 

স্নেহ কোমল। বাঙালি স্নেহপরায়ণ। বাংলায় পদ্ম অত অপরাজিতা ফুলের সমারােহ। মায়ের পা যেন পদ্মে শোভিত দেহ যেন অতসী ও অপরাজিতা ফুলে অলংকৃত। ফুল সেন মায়ের অলংকার।

 

প্রশ্ন ) ‘সাগৱ যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ ভঙ্গে,-কাৱ লেখা কোন্ কবিতার অন্তর্গত? উদ্ধৃত অংশটির অর্থ বিশ্লেষণ করাে।

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা কবিতার অন্তর্গত।

 

বঙ্গভূমির দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। অখণ্ড বঙ্গভূমির সমগ্র দক্ষিণ প্রান্ত বঙ্গোপসাগর ও সাগরের উপকূলভাগ। সাগরে সবসময় শতশত ঢেউ উঠছে। ঢেউগুলি এসে উপকূলে আছড়ে পড়ছে। দেখে মনে হয় সাগর তার শতশত ঢেউ দিয়ে বাংলা মায়ের বন্দনা রচনা করছে। সাগরের কলধ্বনিই হলাে মায়ের বন্দনা-গান।

 

প্রশ্ন>  ‘বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ কৱিয়া আমৱা বঁচিয়া আছি,/ আমৱা হেলায় নাগেৱে খেলাই, নাগেৱি মাথায় নাচি।’-আলােচনা করাে।

 

উত্তর: বঙ্গভূমির উত্তর অংশে তরাই ও ডুয়ার্স অরণ্য অঞ্চল। দক্ষিণাংশের বিস্তীর্ণ ভূভাগ সুন্দরবন। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে শাল, সেগুন প্রভৃতি গাছের বন। তা ছাড়া গ্রামাঞলের যত্রতত্র দেখা যায় ঝােপ-জঙ্গল। সেজন্য বাঘ ও সাপের প্রাধান্য ছিল এক সময়ে। বাঙালিকে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হতাে। বাংলায় সাপুড়ে বৃত্তিধারী লােকের বাস ছিল। তারা সাপ খেলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত সাপের মাথায় নৃত্য করেছিলেন শ্রীকৃয়। সেই কাহিনি বাঙালির লােককাহিনি রূপে গৃহীত।

 

প্রশ্ন ) ‘শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী,/তাহাৱি ছায়ায় আমরা মিলার জগতের শতকোটি।—শ্মশানের বুকে পঞ্চবটী রােপণের কারণ কী? পঞ্চবটীৱ ছায়ায় আমরা কীভাবে জাতের শতকোটি মানুষকে মেলাব? 

 

> উত্তর : শ্মশান হলাে মৃতদেহ দাহ করার জায়গা। এখানে জীবনের শেষ। দাহ স্থানের অদূরে লাগানাে হয়েছে অশ্বথ, বট, বেল, আমলকী ও অশােক গাছের চারা। এদের সমাহার হলাে পঞ্চবটী। যা জীবনপ্রবাহের প্রতীক। নবজীবনের সূচনা পঞ্চবটীতে। জীবনের সমাপ্তির পাশে জীবন সূচনার স্বপ্ন রূপায়ণ হলাে পঞ্চবটী রােপণের কারণ।

 

পঞ্চবটীর ছায়া প্রাণময়তার প্রতীক। ওই প্রাণতীর্থে বাঙালিই পারে সকলকে আপনার করে নিতে। বাঙালির আন্তরিক আহ্বানে জগৎবাসী মিলিত হবে পঞ্চবটীর ছায়ায়।

 

প্রশ্ন ) ‘মুক্তবেণীৱ গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতৱে বঙ্গো’—উদ্ধৃতিটির অর্থ বিশ্লেষণ করাে। 

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। গঙ্গানদী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে বেরিয়ে বঙ্গভূমির দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। গঙ্গার অসংখ্য শাখা ও উপশাখা নদী। গঙ্গার বাধাহীন মুক্ত জলধারা ওইসব শাখা-উপশাখা নদীপথে উত্তর ভারত ও বঙ্গভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রবাহিত। সে অর্থে বেণীমুক্ত চুলের মতাে বিস্তৃত। গঙ্গার জলধারা বাঙালির কাছে অতি পবিত্র। তারা বিশ্বাস করে গঙ্গাজল পাপ নাশ করে মুক্তির পথ দেখায়। সেই অর্থে গঙ্গা মুক্তি বিতরণ করে।

 

আমরা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর

 

প্রশ্ন ) ‘সিংহল নামে ৱেখে গেছে নিজ শৌর্যেৱ পরিচয়’—উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে। 

 

উত্তর: আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের রচিত ‘আমরা’ কবিতার অংশবিশেষ। আলােচ্য অংশে কবি বাঙালির বীরত্বের গুণকীর্তন করেছেন। বিজয়সিংহ ছিলেন বাংলার রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত সিংহপুরের রাজকুমার। তিনি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দীতে লঙ্কাদ্বীপ যাত্রা করে সেখানে বাহুবলে লঙ্কার অংশবিশেষ দখল করে রাজ্য স্থাপন করেন। তাঁর নাম অনুসারে – লঙ্কার নাম হয় সিংহল। কবি বলতে চেয়েছেন ওই ঐতিহাসিক ঘটনায় বাঙালির বীরত্বের পরিচয় নিহিত আছে।

 

প্রশ্ন ) ‘চাদ-প্রতাপের হুকুমে হঠিত হয়েছে দিল্লিনাথে ।-উদ্ধৃত পঙক্তিতে ইতিহাসের ঘটনাটি আলােচনা করাে। 

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা কবিতার অংশবিশেষ। আলােচ্য অংশে কবি স্বাধীনচেতা বাংলার বারােভূঁইয়াদের অন্যতম বিক্রমপুরের চাঁদ রায় ও যশােরের প্রতাপাদিত্যের বাহুবল ও পরাক্রমের কথা আলােচনা করেছেন। এঁরা ছিলেন দিল্লির মােগল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গিরের রাজত্বকালের সমসাময়িক বাংলার জমিদার। এঁরা মােগল সম্রাটের বশ্যতা অস্বীকার করে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। যুদ্ধের প্রথমদিকে মােগল সৈন্যকে হঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রতাপাদিত্য। যদিও প্রতাপাদিত্য শেষে পরাজিত ও বন্দি হয়েছিলেন।

 

প্রশ্ন ] ‘জ্ঞানের নিধন অদিবিদ্বান, কপিল সান্ধ্যকাৱ/ এই বাংলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীৱকহাৱ।–সংক্ষেপে তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

 

উত্তর; আলােচ্য উদ্ধৃতি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের রচিত ‘আমরা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলােচ্য অংশে কবি সাংখ্যদর্শন রচয়িতা কপিল মুনির জ্ঞান, বিদ্যা ও সাংখ্যদর্শন রচনায় কৃতিত্ব বিষয়ে আলােকপাত করেছেন। পিতা কর্দম প্রজাপতি ও মাতা দেবমূর্তির পুত্রসন্তান হলেন কপিল মুনি। তিনি ছিলেন বিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডার। তিনি আদি দর্শনশাস্ত্র রচয়িতা। তিনি বাংলার ২ মাটিতে বসে সাংখ্যদর্শনের সূত্রগুলি রচনা করেন। তাঁর রচিত দর্শনের এক একটি সূত্র হীরকখণ্ডতুল্য মহামূল্যবান। সাংখ্যদর্শনের সূত্রগুলি যেন হীরকখণ্ডে তৈরি মালা।

 

প্রশ্ন ) মন্বন্তৱে মৱিনি আমৱা মাৱী নিয়ে ঘৱ কৱি,/বাঁচিয়া গিয়েছি বিধিৱ আশিসে অমৃতেৱ টিকা পৱি।—উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে। 

 

উত্তর। : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা কবিতা থেকে গৃহীত। বাঙালি বারবার দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে। কলেরা বসন্তের মতাে সংক্রামক ব্যাধির মড়কে বহু বাঙালি মারা গেছে। তা সত্ত্বেও বাঙালি যেন মন্বন্তর ও মারী নিয়ে সংসার করে। মন্বন্তর ও মারী বাঙালির নিত্যসঙ্গী। আসলে বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালির ললাটে অমৃতের তিলক পড়েছে। বাঙালি পেয়েছে অমরত্ব। তারই জোরে বাঙালি অস্তিত্ব রক্ষা করে যুগ। যুগ ধরে বেঁচে আছে।

আমরা কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ কাৱ নবীন সাধনা এবং তার সাধনা শব- সাধনার চেয়ে বড়ো কেন?

 

উত্তর : নবীন সাধনা হলাে আধুনিক বিজ্ঞান সাধনা, বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ওই সাধনার বলে জড়ের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছেন যা শব-সাধনার চেয়ে বড়াে।

 

প্রশ্ন ) বিষম ধাতু নিয়ে কে কী করেছেন?

 

: উত্তর : বিষম ধাতু নিয়ে বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় গবেষণা করে বিষম ধাতুর মিলন ঘটিয়েছেন।

 

প্রশ্ন ) বাঙালি জনম ও বাঙালি প্রাণ কেন বিফল নয় বলে মনে করা হয় ?

 

 উত্তর : বাঙালি জনম ও বাঙালি প্রাণ বিফল নয় এই কারণে যে, বাঙালি কবি জগৎবাসীকে শুনিয়েছেন মহামিলনের গান। 

 

প্রশ্ন ) শ্মশানের বুকে পঞ্চবটীৱ ছায়ায় আমরা কী করব?

 

উত্তর : শ্মশানের বুকে পঞ্চবটীর ছায়ায় আমরা জগতের শতকোটি মানুষকে মিলিত করব। 

 

প্রশ্ন ) বাঙালির গৌৱবে ভুবন কীভাবে ভৱবে বলে বাঙালি কবি মনে করেন?

 

উত্তর: কবি মনে করেন, বিধাতার বরে অতীতে বঙ্গভূমিতে  যেসব ঘটনার সূচনা হয়েছে তা সফল হলে জগৎ বাঙালির গৌরবে ভরে যাবে।

 

প্রশ্ন ) বঙ্গভূমির অতীতের ঘটনা কীভাবে সফল হবে বলে কবি মনে করেন?

 

উত্তর: কবি মনে করেন, অতীতের ঘটনা বাঙালির প্রতিভার বলে সফল হবে, সেজন্য বাহুবল বা ঘেষাঘেষির প্রয়ােজন হবে না।

 

প্রশ্ন )  বাঙালি দেব-ঋণ থেকে কীভাবে মুক্ত হবে বলে কার মনে করেন?

 

বর: কবি মনে করেন, বাঙালি মিলনের মহামন্ত্রে জগৎবাসীকে দীক্ষিত করায় দেব-ঋণ থেকে মুক্ত হবে।

 

প্রয়.)‘পক্ষশাতন’ শব্দটির অর্থ কী? কে, কার পৃক্ষশাতন কৱেছিলেন?

 

উত্তর: ‘পক্ষশাতন’ কথার অর্থ হলােছেদন করা বা  ডানা  ছেটে ফেলা। পক্ষধর মিশ্রের খ্যাতির ডানা ছেটে দিয়েছিলেন বাঙালি পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণি।

 

প্রশ্ন) মুক্তবেণীর গঙ্গা বলতে কী বোঝায়?

 

উত্তর : ‘বেণী’ শব্দের অর্থ বিনুনি। বিনুনি খােলা চুল যেমন ছড়িয়ে যায়, তেমনি গঙ্গা নদী বঙ্গদেশে এসে বহু শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে গেছে।

 

প্রশ্ন- ‘মানুষেৱ ঠাকুৱালি’ বলতে কী বােঝাে?

 

উত্তর : বাঙালি প্রিয় মানুষকে দেবতারূপে বরণ করে। মানুষের দেবত্বে উত্তরণের ব্যাপারটিকে কবি এখানে বােঝাতে চেয়েছেন।

 

প্রশ্ন ) ‘ কিরণে ভুবন আলা’-ভুবন আলা’ শব্দটির তাৎপর্য লেখো।

 

উত্তর : বঙ্গভূমির ‘ভালে থাকা কাঞ্চনজঙঘার স্বর্ণোজ্জ্বল আলােয় জগৎ আলােকিত হয়ে ওঠে।

 

প্রশ্ন ) এক হাতে মােৱা মগেৱে ব্লুখেছি’– কীভাবে আমরা মগেৱে ব্লুখেছি?

 

উত্তর : আরাকান রাজ্যের অধিবাসী মগ দস্যুদের প্রতিহত করার কথা এখানে স্মরণ করা হয়েছে।

 

প্রয়) ‘ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌৱবে’-ভুবন কীভাবে ভরে উঠবে?

 

উত্তর : বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালির অশেষ গৌরবগাথা ভুবনকে পূর্ণ করে তুলবে।

 

প্রশ্নঃ ‘বরদ বঙ্গে’ বলতে কী বােঝাে? 

 

উত্তরঃ বরদ বঙ্গে বলতে বাঙালিকে নানাভাবে বরদানকারী বঙ্গদেশকে বােঝানাে হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ‘আমৱা’ কবিতায় ‘আমৱা’ বলতে কাদেৱ বােঝানাে হয়েছে ?

 

উত্তর : ‘আমরা’ কবিতায় আমরা বলতে কবি বঙ্গদেশে বসবাসকারী বঙ্গজননীর সন্তানদের বােঝাতে চেয়েছেন। :

 

প্রশ্নঃ ‘বাম হাতে যাৱ কমলাৱ ফুল’-কমলাৱ ফুল। বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? 

 

উত্তর : বঙ্গদেশের বাম দিকের পার্বত্য অঞ্চলে কমলালেবুর প্রাচুর্যের দিকটিকে এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন )‘ডাহিনে মধুক-মালা’ কথার দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?

 

উত্তর : ‘মধুক-মালা’ শব্দদ্বয়ের দ্বারা মহুয়া গাছের সারিকে বােঝানাে হয়েছে।

 

 

প্রশ্ন ) অতীতে বাঙালি মগ ও মোগলকে কীভাবে, রুখেছিল?

 

উত্তর : অতীতে বাঙালি এক হাতে মগ দস্যুদের আর-এক হাতে মােগল রাজশক্তিকে নিজ বাহুবলে রুখেছিল।

 

প্রশ্ন ) কোন্ কোন্ বাঙালির কীসে কাকে হঠতে হয়েছিল ?

 

. উত্তর : চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্য রায়ের হুকুমে দিল্লির মােগল সম্রাটের সৈন্যবাহিনীকে হঠতে হয়েছিল।

 

প্রশ্ন ) কপিল কে ছিলেন ও কীভাবে হীৱক হাৱ গেঁথেছিলেন?

 

উত্তর : কপিল মুনি ছিলেন জ্ঞানের আধার, আদি পণ্ডিত এবং সাংখ্যদর্শন রচয়িতা। সাংখ্যদর্শনের সূত্রগুলি হীরক হারের মতাে গেঁথেছিলেন।

 

প্রশ্নঃ অতীশ দীপংকর কীভাবে তিব্বতে পৌঁছে জ্ঞানেৱ দীপ জ্বালেন?

 

: উত্তর : বাঙালি মহাপণ্ডিত অতীশ দীপংকর তুষারঢাকা হিমালয় পর্বতমালা লঙ্ন করে তিব্বতে গিয়ে সেখানে জ্ঞানের দীপ জ্বালেন।

 

প্রশ্ন ) বাঙালির ছেলে কীভাবে যশেৱ মুকুট পরে ফিরে আসেন?

 

উত্তর : বাঙালির ছেলে রঘুনাথ শিরােমণি তর্কযুদ্ধে’ মহাপণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে পরাজিত করে যশের মুকুট পরে ফিরে আসেন। 

 

প্রশ্ন ) কবি জয়দেব কীভাবে সংস্কৃতে স্বর্ণপদ্মকে সুরভিত করেন?

 

উত্তর : কবি জয়দেব ‘গীতগােবিন্দ’ গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণবিষয়ক কান্ত কোমল পদ সংস্কৃতে রচনা করে স্বর্ণপদ্মকে যেন সুরভিত করেছেন।

 

প্রশ্ন )বৱভূধৱ’-এর ভিত্তি কে স্থাপন করেছেন?

 

উত্তর : ‘বরভূধর’-এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন বাংলার বিখ্যাত ও দক্ষ স্থপতি।

 

প্রশ্ন ) ভারতের বাইরে বাঙালিৱ স্থাপত্য শিল্পের প্রাচীন কীর্তির নিদর্শন কী?

 

উত্তর : ভারতের বাইরে বাঙালির স্থাপত্য শিল্পের প্রাচীন কীর্তির নিদর্শন হলো শ্যাম-কম্বােজের ওঙ্কার-ধাম।

 

প্রশ্নঃ কোন্ কোন্ বাঙালি ভাস্কর্য শিল্পীর  অবিনশ্বর কেন?

 

উত্তর; বাঙালি ভাস্কর্য শিল্পী বিটপাল ও ধীমান ধ্যানের ধনতে মূর্তি দিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন বলে তাঁদের নাম অবিনশ্বর।

 

প্রশ্ন ) বাংলাৱ পটশিল্পী কীভাবে ও কোথায় পটশিল্পকে অক্ষয় করে রেখেছেন?

 

উত্তর : বাংলার পটশিল্পী অজন্তা গুহায় লীলায়িত তুলিকায় পটচি এঁকে পটচিত্র শিল্পকে অক্ষয় করে রেখেছেন।

 

প্রশ্ন ) বাঙালি কীভাবে তার মনের গােপন দ্বার খুলে ধরেছে ?

 

. উত্তর : বাঙালি তার মনের গােপন রাজ্যের যতগুলি দরজা ছিল তা খুলে ধরেছে কীর্তন আর বাউলের গানে।

 

প্রশ্ন ) বাঙালি কপালে অমৃতেৱ টিকা পরে কীভাবে বেঁচে গিয়েছে?

 

 উত্তর: বাঙালির কপালে অমৃতের টিকা পরে বিধাতার আশীর্বাদে মন্বন্তরে না মরে ও মারী নিয়ে ঘর করে বেঁচে গেছে।

 

 প্রশ্ন ) বাঙালি আকাশ-প্রদীপ জ্বালে কেন?

 

উত্তর : বাঙালির দেবতাকে আপনজন বা আত্মীয় বলে বিশ্বাস, সেজন্য তার উদ্দেশ্যে আকাশ-প্রদীপ জ্বালে।

 

  আমরা কবিতা ছোট প্রশ্ন

 

প্রশ্ন ) বাঙালি তাৱ কুটিৱে কী দেখেছে?

 

উত্তর : বাঙালি তার অশেষ পুণ্যবলে ও সৌভাগ্যে কুটিরে দেখেছে মানুষের ঠাকুরালি। 

 

প্রশ্ন ) বাঙালি তাৱ ঘৱেৱ ছেলের চোখে কী দেখেছে ?

 

উত্তর : বাঙালি তার দীর্ঘ সাধনায় ও নিষ্ঠায় ঘরের ছেলের চোখে দেখেছে বিশ্বভূপের ছায়া। 

 

প্রশ্ন ) নিমাই কীভাবে দেহ ধারণ করেছেন?

 

উত্তর : বাঙালির হৃদয় মথন করা অমৃতধারায় মানবদেহ ধারণ করেছেন নদিয়ার নিমাই পণ্ডিত। 

 

প্রশ্ন ) বিবেক কে এবং তাঁর বাণী কী হয়েছে?

 

উত্তর : বিবেক হলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর বাণী জগৎময় প্রচারিত হয়েছে।

 

প্রশ্নঃ) আমরা বাঙালিরা কোথায় বাস করি? 

 

উত্তর : মুক্তবেণী গঙ্গা যেখানে মুক্তি বিতরণ করে, আমরা বাঙালিরা সেই তীর্থ বরদ বঙ্গভূমিতে বাস করি।

 

প্রশ্ন )বঙ্গজননীৱ দু-হাতে ও ললাটে কী আছে?

 

: উত্তর: বঙ্গজননীর বাঁহাতে কমলার ফুল, ডানহাতে মধুকমালা ও ললাটে কান-শৃঙ্গ আছে, যার আলােয় জগৎ আলােকিত।

 

প্রশ্ন)  বঙ্গমাতাৱ কোল-ভৱা ও বুকভরা কী আছে ?

 

উত্তর : বঙ্গমাতার কোল-ভরা মাঠের ফসল কনকধান্য ও বুকভরা অফুরান স্নেহ আছে।

 

প্রশ্ন ) বঙ্গমাতাৱ চরণ ও দেহ কীসে ভূষিত?

 

উত্তর: বঙ্গমাতার চরণ পদ্মে ও দেহ অতসী ও অপরাজিতা ফুলে ভূষিত।

 

প্রশ্ন) বঙ্গ মাতার বন্দনা কে কিভাবে করছে?

 

উত্তর : দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বঙ্গমাতার বন্দনা করছে শত তরঙ্গ ভঙ্গে।

 

প্রশ্নঃ আমরা বাঙালিরা কিভাবে বেচে আছি?

 

উত্তর: আমরা বাঙালিরা বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে, হেলায় সাপ নাচিয়ে ও সাপের মাথায় নেচে বেঁচে আছি।

 

প্রশ্ন) আমরা বাঙালিৱা রামচন্দ্রের প্রপিতামহেৱ সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ কৱেছিলাম?

 

উত্তর : আমরা বাঙালিরা রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলাম চতুরঙ্গ সৈন্যদল সাজিয়ে।

 

প্রশ্ন > বিজয়সিংহ শৌর্যেৱ পৱিচয় কীভাবে রেখেছিলেন?

 

উত্তর : বিজয়সিংহ লঙ্কাদ্বীপ জয় করে দ্বীপের নামের সঙ্গে নিজ নাম জুড়ে সিংহল নাম দিয়ে শৌর্যের পরিচয় রেখেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *