নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
নোঙর কবিতা
নােঙর
অজিত দত্ত
নােঙর কবিতার উৎস বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর গুলি আলোচনা করা হয়েছে
নোঙর কবিতার উৎস
কবি অজিত দত্ত ‘নােঙর কবিতা রচনা করেন ১৩৬৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। কবিতাটি ‘সাদা মেঘ কালাে পাহাড়’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কবিতাটি ‘সাদা মেঘ কালাে পাহাড় কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
নোঙর কবিতার সারাংশ
বিষয়-সংক্ষেপ
: নােঙৱবদ্ধ নৌকায় বৃথা দাঁড় টানা : দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দেওয়ার জন্য নৌকাখানি প্রস্তুত। কিন্তু তীরের ধারে নােঙর পড়ে নৌকাখানি বাঁধা। সারারাত ধরে কেবলই মিছে দাঁড় টানা হয়েছে।
জোয়াৱভাটার প্রভাব : জোয়ারের স্রোতে ফুলে ফুলে ওঠা ঢেউগুলি নৌকায় ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের দিকে ফিরে গেছে। তারপর ভাটার টান জোয়ারের স্রোতের যে প্রবল প্রাণশক্তি তাকে শুষে নিয়েছে। জোয়ারভাটার প্রভাবে তটে বাঁধা পড়া বাণিজ্যতরিখানা আটকে থেকে যায়।
: বিরামহীন দাঁড় টানা : যতই দাঁড় টানা হােক, যতই মাস্তুলে পাল বাঁধা হােক তবু নৌকাখানা নােঙরের কাছিতে চিরকাল বাঁধা। সাগরগর্জনে নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কম্পমান। প্রতিবার দাঁড় ফেললে শােনা যায় স্রোতের বিদ্রুপ। তারার দিকে চেয়ে যতই দিকের নিশানা করা হােক, ততই বিরামহীন দাঁড় টানা হয়।
নোঙর কবিতার মর্মার্থ
কবি মাত্রই কমবেশি রােমান্টিক মনের অধিকারী। কবি অজিত দত্ত তার ব্যতিক্রম নন। তাঁর রােমান্টিক কবি-মন সুদূরের পিয়াসী কিন্তু বাস্তব জীবন তাে সংসারসমুদ্রের তটে যেন নােঙরবদ্ধ। সংসার জীবনের নানা দায়দায়িত্বের ও মায়ার বাঁধনে বাঁধা যেন। তা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। কবি-কল্পনায় যতই সাতসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার চেষ্টা থাকুক, সারারাত ধরে দাঁড় টানার কঠিন কঠোর পরিশ্রম করা হােক, স্বপ্নপূরণের সফলতা আসে না। বাস্তবে সংসার জীবন যে জোয়ারভাটা ও উত্থানপতনের ঢেউয়ের ওঠাপড়ায়, আঘাতে প্রতিঘাতে জর্জরিত। সেখান থেকে সুদূরে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা কবি যতই করুন আকাশের তারা সুদূরের দিশা দিয়ে কবি- -হৃদয়কে সুদূরের জন্য যতই ব্যাকুল করুক, কবির রােমান্টিক স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
নোঙর কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) এ-তৱীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছােটে।‘তাৱা’ বলতে কারা? তারা মাথা ঠোকে কেন? তাৱা সমুদ্রের দিকে ফের ছােটে কেন?
উত্তর : তারা কারা : ‘তারা হলাে জোয়ারের ফলে সমুদ্রের জলে ফুলে ফুলে ওঠা উত্তাল ঢেউগুলি।
মাথা ঠোকার কারণ : জোয়ারের উত্তাল ঢেউগুলি সমুদ্রের বুক থেকে উপকূলের দিকে ছুটে আসে। আসে দুরন্ত গতিতে। সমুদ্রতীরে নােঙরবদ্ধ নৌকার ওপর আছড়ে পড়ে। কবি একেই বলেছেন মাথা ঠোকা। যেন মাথা দিয়ে পুঁতাে দেওয়া। নােঙরে বাঁধা অনড় অচল স্থবির নৌকাটাতে গতির আঘাত হানা। কিন্তু মাথা ঠোকার মতাে প্রচণ্ড আঘাতেও নােঙরবদ্ধ নৌকার স্থবিরত্ব ঘােচে না। নৌকা গতিশীল হয় না। তাকে গতিশীল করার জন্যই মাথা ঠোকা ।
সমুদ্রের দিকে ছােটার কারণ : নৌকায় মাথা ঠোকার ব্যর্থতা, অর্থাৎ নৌকাকে গতিশীল করতে না পারার অক্ষমতার অভিমান ঢেউকে প্রতিঘাত হানে। প্রকৃতপক্ষে আঘাতের বিপরীত প্রতিঘাত শক্তি ঢেউকে ফের শক্তিমান করে। তারা তখন উলটো মুখে সমুদ্রের দিকে ছােটে। সমুদ্রের দিকে ছােটার এই হলাে কারণ।
প্রশ্ন ) ‘স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।—দাঁড় জলে ফেললেই স্রোতের বিদ্রুপ’ শােনার কারণ কী?
: স্রোতের বিদ্রুপ শােনার কারণ :স্থিতির ল। সঙ্গে গতির দ্বন্দ্ব চিরকালের। কবি অজিত দত্তের লেখা ‘নােঙর’ কবিতার বৃহত্তম অংশ জুড়ে আছে স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্ব। দূর শীল। সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য পণ্যভরা তরিটি সমুদ্রকূলে নােঙরবদ্ধ। রের দাঁড় টেনে গতি সঞ্চার করে স্থিতিশীল নৌকাবস্তুটিকে সচল না। করার বৃথা চেষ্টা হয়েছে। স্থিতিশক্তির কাছে দাঁড়ের গতি মারণ সারের লঘু শক্তি স্বাভাবিকভাবে হার মেনেছে। জোয়ারের দেখা ২ উত্তাল ঢেউ প্রবল গতিতে এসে নােঙরবদ্ধ নৌকায় আঘাত হেনে এই { বন্ধনদশা ঘােচানাের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। পরাভূত গতি ব্যর্থ অভিমানে ছুটে গেছে সমুদ্রে। ঢেউ হলাে গতির প্রতীক। বার বার চলের যন্ত্রণায় বিধ্ব সে। নৌকাকে গতিশীল করার জন্য দাঁড় ফের ব্যর্থ হতে চেষ্টা করাতে ঢেউ আর নিশ্ৰুপ থাকতে পারে না। দাঁড়ের প্রতি – টানা { নিক্ষেপে ঢেউয়ের বিদ্রুপ বা পরিহাস শােনা যায়। এই পরিহাস দাঁড়ের জড়ত্ব ঘােচানাের ব্যর্থ চেষ্টার প্রতীক। ঢেউয়ের মতাে প্রাকৃতিক দুও। শক্তির কাছে দাঁড়ের সামান্য শক্তি ! জোনাকি যদি চাঁদের মতাে জ্যোৎস্না দেওয়ার চেষ্টা করে চাঁদ কি পরিহাসের হাসি হাসবে না? বিদ্রূপ করবে না ? স্রোতের বিদ্রূপের কারণ একই।
প্রশ্ন ) ‘নােঙৱ’ কবিতার রূপক বিশ্লেষণ করাে।
. উত্তর: রূপক কী? : কবি অজিত দত্তের লেখা ‘নােঙর একটি রূপক কবিতা। রূপকে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় যেন এক মনে হয়। যেমন—শােকসিন্ধু।‘শােক’ হলাে উপমেয়, ‘সিন্ধু হলাে উপমান। দুই-ই এত গভীর যে, গভীরতার দিক থেকে ‘শােক আর ‘সিন্ধুর মধ্যে যেন ভেদ বা তফাত নেই। বাইরের অর্থ হলাে উপমান। ভিতরের অর্থ হলাে উপমেয়। কবি যা বলতে চান তা 1 ভিতরের অর্থ।
বাইৱেৱ অর্থ :কবি বাণিজ্য-তরি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে চান। কিন্তু কিনারায় নােঙর পড়ে যায়। সারারাত দাঁড় টেনেও তাকে চালনা করা যায় না। জোয়ার এসে তরিতে মাথা ঠোকে। ভাটা জোয়ারের যে জোর তা শুষে নেয়। যতই দাঁড় টানা হােক, মাস্তুলে পাল বাঁধা হােক, তরি নােঙরে বাঁধা পড়ে থাকে। প্রতিবার দাঁড় পড়লে স্রোত বিদ্রুপের হাসি হাসে। আকাশের তারা দেখে দিকনির্ণয় করলে টানার গতি যেন বেড়ে যায়, কিন্তু তরি থাকে নােঙরবদ্ধ হয়ে।
ভিতৱেৱ অর্থ : রােমান্টিক কবিমাত্রই স্বপ্নবিলাসী, কল্পনাপ্রিয় ও সুদূরের পিয়াসী। সংসারের দায়দায়িত্ব ও মায়ার নােঙর বন্ধনে বাঁধা জীবন ও জীবিকা থেকে মুক্ত হয়ে কল্পনার জগতে পাড়ি দিতে চান কবি। কিন্তু শত চেষ্টাতেও মুক্তি আর মেলে না। বন্ধনের শিকলে বাঁধা পড়ে থাকে কবি-মন। কবির স্বপ্ন-কল্পনা-বাসনা !
জোয়ারের ঢেউয়ের মতাে উত্তাল হয়ে কবির মনের দ্বারে মাথা ঠুকে মরে। ভাটা কবি-মনের সব উৎসাহ-উদ্দীপনা শুষে নিয়ে নিরুৎসাহ ও নিরুদ্যম করে।
একটি সার্থক রূপক কবিতা।
প্রশ্ন) কবি অজিত দত্তেৱ ‘নােঙৱ’ কবিতায় ব্যবহৃত প্রর্তীকগুলি কী কী? কবি-ভাবনা প্রকাশে প্রতীকগুলি কতখানি সহায়ক হয়েছে আলোচনা করাে।
উত্তর: ব্যবহৃত প্রতীক : কবি-মনের ভাবকে ব্যঞ্জনাময় করে প্রকাশের চিহ্ন হলাে Symbol বা প্রতীক। কবি অজিত দত্ত ‘নােঙর কবিতায় তাঁর ভাবনাকে সুন্দর ব্যঞ্জনাময় করে প্রকাশের জন্য বেশ কিছু প্রতীক ব্যবহার করে একটি অপূর্ব বাকপ্রতিমা বা কথার ব্যঞ্জনাময় অবয়ব গড়েছেন। প্রতীকগুলি হলাে ‘দূর সিন্ধুপার বা সপ্তসিন্ধুপার’, ‘নােঙর’, ‘তটের কিনারা’, ‘ঢেউ’, ‘জোয়ার-ভাঁটা’, ‘কাছি’, ‘তরি’, ‘দাঁড়’ ইত্যাদি।
প্রতীকগুলি কতখানি সহায়ক : কবিমাত্রই কমবেশি রােমান্টিক। তাঁরা বাস্তব জীবনের বাইরে সুদূরের পিয়াসী। তাঁরা ভাবের কল্পলােকে বিচরণ করতে ভালােবাসেন। তাঁদের কল্পলােকই হলাে ‘সপ্তসিন্ধুপার’ বা ‘দূর সিন্ধু পার’-এর প্রতীক। নােঙর’ সেই জগতে পাড়ি দেওয়ার বাধা বা বাস্তব জগতের সঙ্গে কবিকে বেঁধে রাখার প্রতীক। তটের কিনারা হলাে বাস্তব জীবন। যেখানে কবি দায়দায়িত্ব, কর্তব্য ও মায়ার বাঁধনে বন্দি। কাছি হলাে এই সব সূত্রের প্রতীক।‘নােঙর যদি বন্ধন বা স্থিতি হয়, তাহলে ‘ঢেউ’ হলাে তার বিপরীত গতির প্রতীক। জোয়ার-ভাটা’ আশা-নিরাশার প্রতীক। ‘তরী’ হলাে জীবনতরি বা জীবনের প্রতীক। আর ‘দাঁড়’ হলাে অদম্য বাসনা, যা স্থবিরতা বা স্থিতিশীলতাকে চলমানতা দেওয়ার জন্য সতত সচেষ্ট। এইসব প্রতীক ব্যবহার করে কবি তাঁর কবি-ভাবনার বাকপ্রতিমা গড়েছেন।
প্রশ্ন ) ‘সাৱাৱাত মিছে দাঁড় টানি,/ মিছে দাড় টানি।–মিছে’ বলেছেন কেন? আবার বলেছেন, ‘সাৱাৱাত তবু দাঁড় টানি,/তবু দাঁড় টানি ৷-“তবু কথাটি কবি ব্যবহার করেছেন কেন?
উত্তর। -মিছে’ বলার কারণ : কবি অজিত দত্তের ‘নােঙর’ রােমান্টিক কবি-ভাবনার কবিতা। কবি -ভাবনার কবিতা। কবি সুদূরের পিয়াসী। তাঁর লেখা কাব্যসম্পদে তরি ভরে সুদূর সিন্ধুপারে তথা কল্পলােকে পাড়ি দিতে চান। কিন্তু ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাস। যাত্রা শুরু করার আগে ‘নােঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে। তটের কিনারায় তরি নােঙরবদ্ধ। নােঙরের বাঁধন না খুললে তরি রওনা হবে কী করে ? নােঙরের বাঁধন খােলা ও তরিকে গতিশীল করার জন্য রাতভর দাঁড় টানা চলল। দাড় নিক্ষেপে নােঙরের বাঁধন খােলা কি সম্ভব ? না, সম্ভব নয়। কাজেই মিছে দাঁড় টানা। ‘মিছে’ মানে ‘বৃথা। বৃথা টানা। অথচ বৃথা চেষ্টাই হয়েছে, কারণ আশা মরতে মরতেও মরে না। আর-একটু চেষ্টা করে দেখা যাক—এই ধরনের বৃথা আশা, বৃথা চেষ্টা চলতেই থাকে। এই কারণে ‘মিছে’ শব্দের ব্যবহার।
‘তবু’ ব্যবহাৱেৱ কাৱণ : নােঙর পড়ে গেছে কূলের কিনারে—এ কথা জানা। নােঙরবদ্ধ তরি দাঁড়ের টানে সচল হতে পারে না। এই বাস্তব সত্যতা জানা। তা সত্ত্বেও রাতভর দাঁড় টানা চলেছে। মিছে দাঁড় টানার মতাে বৃথা শ্রম। একই মানসিকতায় রাতভর তবু দাঁড় টানা হয়েছে। এখানে ‘তবু’-র অর্থ ‘তা সত্ত্বেও’।
কারণ বলেছি মানসিকতা একই। আর একটু চেষ্টা করে দেখ যাক এই ধরনের একই ব্যর্থ আশা, একই পুনঃপুন চেষ্টা। তাই ‘ তাে বলা হয় আশা মরতে মরতেও মরে না।
নোঙর কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন )নােঙৱেৱ কাছি বঁাধ তবু এ নৌকা চিরকাল।—উদ্ধৃতির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দাও। অথবা, নােঙৱেৱ কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল। -নাঙৱেৱ কাছিতে চিরকাল বাঁধা কেন?
: উত্তর : তরির নােঙরের বন্ধনমুক্তির জন্য কী চেষ্টাই না চলেছে। দাঁড় টানা, মাস্তুলে পাল বাঁধা, অর্থাৎ নৌকা চালানাের জন্য যতরকম উপায় আছে সবই প্রয়ােগ হচ্ছে। কিন্তু বাঁধন আর মুক্ত হয় না। এ যেন চিরকালের বাঁধন। কবি সংসার জীবনের গৃহী মানুষ। রােমান্টিক ভাবনায় স্বপ্নচারী হয়ে বন্ধনমুক্তির শত চেষ্টা করলেও সংসারের খুঁটির শক্ত বন্ধন থেকে মুক্তি পাবেন কী করে ? এ বন্ধন যে সারা জীবনের বন্ধন। .
প্রশ্ন ) ‘স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবাৱ দাড়ের নিক্ষেপে।-উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি অজিত দত্তের রচিত ‘নােঙর কবিতা থেকে গৃহীত। কবি দূর সমুদ্রে নৌযাত্রা করতে চান। কিন্তু তাঁর নৌকা সমুদ্র কিনারায় নােঙরবদ্ধ। নােঙরের বন্ধনমুক্তির জন্য দাঁড় নিক্ষেপ করেন। প্রতি দাঁড় নিক্ষেপে জলস্রোত ঠাট্টা-উপহাসে বিদ্রুপ করতে থাকে। বিদ্রুপের কারণ স্রোত চলমান গতিশীল। কবির নৌকা নােঙরবদ্ধ হওয়ায় এক ঠাইয়ে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীল। স্থিতিশীলের বিপক্ষে গতিশীলের বিদ্রুপ। ঠাট্টা-উপহাস।
প্রশ্ন ) ‘ততই বিরামহীন এই দাঁড় টানা। প্রসঙ্গ উল্লেখ কৱে উদ্ধৃতিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। বিরামহীন ঈড় টেনে চলার কারণ কী?
অথবা,
উত্তর : যখন দিকনির্ণয় যন্ত্র ছিল না তখন আকাশে তারার অবস্থান লক্ষ করে নাবিকেরা দিকনির্ণয় করত। কবি তারার দিকে তাকিয়ে যতই দিকনিশানা করতে থাকেন, ততই নােঙরের বন্ধন ২ থেকে মুক্তির আশায় উজ্জীবিত হয়ে অবিরাম দাঁড় টানা চলতে থাকে। আকাশের তারা সুদূরের দিশা দিয়ে কবিজন্য বড়াে বেশি ব্যাকুল করে। কবি কিন্তু অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান আরও বেশি শক্তি সংহত করে।
প্রশ্ন ) ‘সাৱাৱাত মিছে দাঁড় টানি,’-কার লেখা কোন কবিতা থেকে সংকলিত? ‘মিছে’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : কবি অজিত দত্তের লেখা ‘নােঙর কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত।
পণ্যভরা বাণিজ্য-তরি সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। মন্দ অদৃষ্ট। কখন যে সমুদ্রতটের কিনারায় নােঙর পড়েছে জানা নেই। মাভৈঃ বলে নৌকা ছেড়ে দেখা গেল নৌকা এগােয় না। সমুদ্র পাড়ি দিতে হবেই। মাঝিমাল্লারা, দাঁড় টানাে, দাঁড় টানাে। রাতভর দাঁড় টেনে নৌকার বন্ধনমুক্তি হলাে না। নােঙরের কাছিতে বাঁধা থেকে নৌকা দাঁড়িয়ে রইল তীরের একই ঠাইয়ে। দাঁড় টানা ব্যর্থ। সেটিই ‘মিছে’ বলার কারণ।
প্রশ্ন ) জোয়ারভাটার ভৌগােলিক তথ্যটি আলােচনা
উত্তর : পৃথিবীর ওপর চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের ওঠে | জলস্রোত তখন প্রবল বেগে তীরের দিকে এগােয়। নদী মােহানা দিয়ে জলস্রোত বিপরীতমুখে ছুটতে থাকে। জোয়ারের পর আসে ভাটা। জল তখন তার পূর্বাবস্থায় ফিরতে চায়। সেজন্য ভাটায় দেখা যায় জোয়ারের জলের বিপরীতমুখী স্রোত। ভাটার স্রোতের গতিবেগ দেখে মনে হয় সে যেন জোয়ারের স্রোতের প্রবল প্রাণশক্তিকে আহরণ করে গতিসম্পন্ন হয়েছে।
প্রশ্নঃ জোয়ারভাটা সমুদ্রতীৱে বাঁধা পড়া বাণিজ্য তরির ওপৱ কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর: জোয়ারের ফলে ফুলে ওঠা উচ্ছ্বসিত ঢেউ প্রবল বেগে তীরের দিকে ছুটতে থাকে। তীরে নােঙরের বাঁধনে বন্দি তরিখানার ওপর এসে আছড়ে পড়ে। দেখে মনে হয় তরিতে প্রবল বেগে মাথা ঠুকে গুঁতাে দিচ্ছে। কিন্তু আঘাত করলেই প্রতিঘাত খেতে হবে। কাজেই প্রতিঘাত খেয়ে ঢেউ ছােটে সমুদ্রের দিকে। জোয়ারের প্রাবল্য থিতিয়ে গেলে জল পূর্বাবস্থায় ফিরতে চায়, এই বিপরীত স্রোতই হলাে ভাটা। জোয়ারভাটার অবিরাম আঘাতে বিধ্বস্ত তীরে নােঙরে বাঁধাপড়া বাণিজ্য-তরিটি বিপর্যস্ত হতে থাকে।
প্রশ্ন ) দাঁড় টানা ও মাস্তুলে পাল বাধা সত্ত্বেও তীরে বাঁধা নৌকাটির দুৱবস্থার বর্ণনা দাও।
উত্তর : যতই দাঁড় টানা হােক, যতই মাস্তুলে পাল বাঁধা হােক, ; তবু পণ্যভরা বাণিজ্য-তরি নােঙরের কাছিতে তীরে বাঁধা। বন্দিমাত্রই নানা বিড়ম্বনা, নানা বিদ্রুপের বলি হয়। হতভাগ্য বাণিজ্য-তরিটির কপালে একই দুর্গতি। সাগরগর্জনে তার নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি ভয়েত্রাসে কম্পমান। দাঁড়ের প্রতি নিক্ষেপে তাকে শুনতে হয় স্রোতের বিদ্রুপ পরিহাস। যতই তারার দিকে তাকিয়ে দিকের নিশানা করে, ততই বিরামহীন দাঁড় টেনেও মেলে না সাফল্য। নােঙরে বাঁধা তরি যেখানে ছিল সেখানেই থাকে।
প্রশ্ন ) নােঙৱ গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। কবিৱ দূৱ সমুদ্রযাত্রায় এ বাধা কেন?
উত্তর: কবি অজিত দত্তের নােঙর একটি রােমান্টিক অনুভবের কবিতা। দূর সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য কবির পণ্যতরি প্রস্তুত। কিন্তু এমন মন্দ ভাগ্য যে, তীরের পাশে নােঙর পড়ে নৌযাত্রায় ভয়ংকর বাধা। নােঙর হলাে নৌযাত্রার পথে বাধার প্রতীক। হঠাৎ বাধায় নৌযাত্রা শুদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে কবি হলেন রােমান্টিক মনের। তিনি সুদূরের পিয়াসী। মন চায় সুদূরে যাত্রা। কিন্তু বাস্তব জীবন সংসারের খুঁটায় মায়ার বাঁধনে বাঁধা। এই বন্ধনই তাে সমুদ্রতটে নােঙরের বন্ধন।
প্রশ্ন) ‘এ-তৱীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছােটে।—উদ্ধৃতিটির অর্থ বিশ্লেষণ করাে।
: উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি অজিত দত্তের ‘নােঙর কবিতা থেকে গৃহীত। কবির দূর সমুদ্রযাত্রার তরিটি সমুদ্রকূলের কিনারে নােঙরবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জোয়ারের উত্তাল ঢেউ তরির ওপর আছড়ে পড়ছে। তা যেন ঢেউয়ের মাথা ঠুকে পড়া। কোনাে জিনিসে কিছু এসে আঘাত করলে তার প্রতিঘাত সে ফিরিয়ে দেয়। কাজেই নৌকায় আঘাত করা ঢেউগুলি প্রতিঘাত খেয়ে দ্রুত ফিরে যায় সমুদ্রে। আঘাত হেনে নােঙরের বন্ধনমুক্তির চেষ্টায় জোয়ারের ঢেউও ব্যর্থ হয়। তরিতে মাথা ঠুকে পড়া এই ব্যর্থতারই প্রতীক।
নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর saq
প্রশ্নঃ সাৱাৱাত মিছে দাঁড় টানার কারণ কী?
উত্তর : কবির অজান্তে তটের কিনারে নােঙর পড়েছে, দাঁড় টেনে সামনের দিকে আর এগােনাে যায় না।
প্রশ্নঃ দাঁড় টানা ও মাস্তুলে পাল বাধা সত্ত্বেও নৌকাৱ কী অবস্থা?
উত্তর : দাঁড় টানা ও মাস্তুলে পাল বাঁধা সত্ত্বেও নৌকা নােঙরের কাছিতে চিরকাল বাঁধা হয়ে থাকছে।
প্রশ্ন ) নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কী কারণে কাঁপছে ?
উত্তর : নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি ভয়ংকর সাগরগর্জনে ভয়ে ও ত্রাসে কাঁপছে।
প্রশ্ন ) প্রতিবাৱ জলে দাঁড় পড়লে কী শােনা যাচ্ছে?
(উত্তর : প্রতিবার জলে দাঁড় পড়লে শােনা যাচ্ছে স্রোতের বিদ্রুপ।
প্রশ্ন ) স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে কে?
উত্তর : স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে ভাটার শােষণ।
প্রশ্ন ) কবিকে স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে হয় কেন?
উত্তর : অজান্তে তটের কিনারে নােঙর পড়ে যাওয়ার ফলে কবি স্রোতের বিপরীত দিকে এগােতে পারেননি। তাঁর এই ব্যর্থতার জন্য বিদ্রুপ শুনতে হয়।
প্রশ্ন ) কীসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিরামহীন দাঁড় টানাৱ বৃদ্ধি?
উত্তর; তারার দিকে চেয়ে দিক নিশানা করার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিরামহীন দাঁড় টানার বৃদ্ধি।
প্রশ্ন ) সাৱাৱাত বিরামহীন দাঁড় টানার কারণ কী?
উত্তর : সারারাত বিরামহীন দাঁড় টানার কারণ হলাে, নােঙরের বাঁধন থেকে মুক্ত করে পণ্য তরিখানা যাতে সপ্তসিন্ধু পাড়ি দিতে পারে তার চেষ্টা করা।
প্রশ্ন )কবি কোন্ দিকে চেয়ে নিশানা করে থাকেন?
উঃ : কবি আকাশের তারার দিকে চেয়ে নিশানা করে থাকেন।
প্রশ্ন ) কবি অজিত দত্ত কী পার হওয়ার বাসনায় ছিলেন?
উত্তর : কবি অজিত দত্ত সপ্তসিন্ধু পার হওয়ার বাসনায় ছিলেন।
প্রশ্ন ) কবি পঁাড়ের নিক্ষেপে কী শুনতে পেয়েছিলেন?
উত্তর : কবি দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে পেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ) কবি অজিত দত্তেৱ নােঙৱ’ কী ধরনের কবিতা?
উত্তর : কবি অজিত দত্তের নােঙর’ রূপকধর্মী রােমান্টিক গীতিকবিতা।
প্রশ্ন )নােঙৱ’ কী?
উত্তর : কুয়াে থেকে বালতি তােলা কুয়াে কাঁটার মতাে দেখতে মােটা লােহার তৈরি যন্ত্রবিশেষ। দড়ি দিয়ে বাঁধা এই নােঙর মাটিতে আটকে দিয়ে তীরে তরি বাঁধা হয়।
প্রশ্ন ) ‘নােঙৱ’ কবিতায় কবি প্রকৃতপক্ষে কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তর : ক্লান্ত হতাশাময় জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও মানুষ দৈনন্দিন জীবনের মায়াডােরে বাঁধা আছে।
প্রশ্ন ) স্রোত কবিকে বিদ্রুপ কৱে কেন?
উত্তর : নােঙরে বাঁধা কবির জীবন-তরি স্রোতে ঠেলে এগােতে পারে না বলেই এই বিদ্রুপ।
নোঙর কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) জীবনের সঙ্গে তৱিৱ তুলনা আছে এমন দু-জন কবিৱ পঙক্তি উল্লেখ করাে ।
: বাংলা ভাষার আদি কবি লুইপাদের লেখা‘সােনে ভরতি করুণা নাবি রূপা তই নাইকো ঠাবি। (চর্যাপদ) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা
প্রশ্ন ) ‘সাগৱগর্জন ওঠে কেঁপে,—উদ্ধৃতিৱ ছাৱা কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর ; জীবনের তীরে বসে কবি শুনেছেন মহাসাগরের গর্জন ; তাঁর জীবনের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেপে উঠছে সেই সাগরগর্জনে।
প্রশ্ন ) নৌকা কী কাৱলে দুৱ সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারছে না?
উত্তর : তটের কিনারায় নৌকার নােঙর পড়ে যাওয়ায় নৌকা দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারছে না।
নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ কবি কীসের মাধ্যমে দূৱ সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান?
উত্তর : কবি দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান সমুদ্রের জলযান নৌকার মাধ্যমে।
প্রশ্ন ) নােঙৱ পড়ায় নৌকার মাঝিৱা সাৱাৱাত ধরে কী কৱছে ?
উত্তর ; তটের কিনারায় নােঙর পড়ায় নৌকার মাঝিরা সারারাত ধরে মিছে বিরামহীন দাঁড় টানছে।
প্রশ্ন )জোয়াৱেৱ ঢেউগুলি কী করছে ?
উত্তর : জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে উঠে নৌকায় মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
প্রশ্ন ) জোয়াৱেৱ পৱে ভাটা কী করছে?
উত্তর : জোয়ারের পরে ভাটা জোয়ারের স্রোতের যে প্রাণশক্তি তা শােষণ করছে।
প্রশ্ন ) বাণিজ্য-তরি কী অবস্থায় বঁধা পড়ে আছে?
উত্তর : জোয়ারভাটার ঘাত-প্রতিঘাতে তটের কাছে নােঙরবদ্ধ বাণিজ্য-তরি বাঁধা পড়ে আছে।