নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য: নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠন :
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য: নিরপেক্ষ ন্যায় অবরােহ মাধ্যম অনুমান। নিরপেক্ষ ন্যায় তিনটি বচন দ্বারা গঠিত। বচনই নিরপেক্ষ বচন। এই অনুমানে প্রদত্ত দুটি বচন থেকে তৃতীয় বচনটি অনুমান করা । প্রদত্ত বচন দুটিকে আশ্রয়বাক্য বা হেতুবাক্য (Premise) বলে। আশ্রয়বাক্য দুটি থেকে বচনটি অনুমিত হয়, সেই বচনকে সিদ্ধান্ত বলে। যেমন :
A – সকল মানুষ হয় অপূর্ণ সত্ত্বা। আশ্রয় বাক্য।
A – রাম হয় মানুষ। আশ্রয় বাক্য।
A – রাম হয় অপূর্ণ সত্ত্বা। সিদ্ধান্ত ।
। যুক্তির প্রথম দুটি বচন আশ্রয় বাক্য। তৃতীয়টি সিদ্ধান্ত।
প্রতিটি নিরপেক্ষ বচনে দুটি পদ থাকে। একটি উদ্দেশ্য পদ অন্যটি বিধেয় পদ। সুতরাং, ন্যা তিনটি বচনে মােট ছয়টি পদ থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনটি পদ থাকে। কারণ, প্রতিটি পদকেদুবার করে উল্লেখ করা হয়। এই তিনটি পদের নাম সাধ্য পদ, পক্ষ পদ ও হেতু পদ।
পক্ষ পদ (Minor term) : যে পদ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য স্থানে থাকে তাকে পক্ষ পদ বা তাছাড়াও পক্ষ পদ পক্ষ আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে বা বিধেয় স্থানে থাকে।
সাধ্য পদ (Major term) : যে পদ সিদ্ধান্তের বিধেয় স্থানে থাকে সেই পদকে সাধ্য বলে। এছাড়াও সাধ্য পদ সাধ্য আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে বা বিধেয় স্থানে থাকে।
হেতু পদ (Middle term) : যে সাধারণ পদ আশ্রয় বাক্য দুটিতে থাকে কিন্তু সিদ্ধ উপস্থিত থাকে না, সেই পদকে হেতু পদ বলে। হেতু পদকে মধ্যপদও বলা হয়। ন্যায়ের যুক্তিবাক্য বা আশ্রয়বাক্য দুটির পৃথক নাম আছে। প্রথমটির নাম প্রধান আশ্রয়বাক্য সাধ্য আশ্রয়বাক্য (Major premise)। দ্বিতীয়টির নাম অপ্রধান আশ্রয় বাক্য বা পক্ষ আশ বাক্য (Minor Premise)। যে আশ্রয়বাক্যে সাধ্য পদ থাকে সেই আশ্রয়বাক্যকে সাধ্য আ বাক্য বলে। যে আশ্রয়বাক্যে পক্ষ পদ থাকে, সেই আশ্রয়বাক্যকে বলে পক্ষ আশ্রয় বাক্য।
দৃষ্টান্ত ।
A – সকল – M হয় P । সাধ্য আশ্রয় বাক্য
A- S হয় M । পক্ষ আশ্রয় বাক্য।
.:. A – -S হয় P। সিদ্ধান্ত।
ন্যায় অনুমানে প্রথমে সাধ্য আশ্রয়বাক্য, পরে পক্ষ আশ্রয় বাক্য, শেষে সিদ্ধান্ত থাকে। আলােচনা সুবিধার জন্য সাধ্যপদকে ‘P’, পক্ষ পদকে ‘S’ এবং হেতুপদকে ‘M’ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
* প্রশ্ন ২। নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর।
উত্তর :নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্য :
(১) নিরপেক্ষ ন্যায়, সংক্ষেপে ন্যায় একপ্রকার অবরােহ অনুমান (Deductive argument)। অবরােহ অনুমানের সিদ্ধান্ত কখনও আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয় না। সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে কম ব্যাপক বা আশ্রয়বাক্যের সমব্যাপক হয়। ন্যায় অবরােহ অনুমান। অবরােহ অনুমানের এই বৈশিষ্ট্য ন্যায়ের মধ্যে বর্তমান। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য আরােহ অনুমান (Inductive Argument) থেকে ন্যায় অনুমান পৃথক। আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সব ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্য থেকে অধিক ব্যাপক হয়।
(২) ন্যায় একপ্রকার মাধ্যম অনুমান (Mediate Inference)। মাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্ত দুই বা ততােধিক আশ্রয়বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্ত পরস্পর সংযুক্ত দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য অমাধ্যম অনুমান (Immediate Inference) থেকে ন্যায় পৃথক। কারণ, অমাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্ত একটিমাত্র আশ্রয় বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়।
যেমন :
A – সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব।
A – রাম হয় মানুষ।
.:. A – রাম হয় মরণশীল জীব।
সিদ্ধান্ত রাম হয় মরণশীল জীব’ কোনাে একটি আশ্রয়বাক্য (যেমন, রাম হয় মানুষ অথবা “সকল মানুষ হয় মরণশীল) থেকে পাওয়া যায় না।
(৩) ন্যায়ের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। যে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কোনাে সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্য দুটি থেকে বৈধ ভাবে নিঃসৃত করা যায় না।
(৪) ন্যায় অনুমানে যুক্তির আকারগত বৈধতা বিচার করা হয়। যুক্তির আকারগত বৈধতা থাকে যদি যুক্তিটির সিদ্ধান্ত ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে আশ্রয়বাক্য দুটি থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।
(৫) যুক্তির বাস্তব সত্যতা আছে কিনা, তা ন্যায় অনুমানে বিচার করা হয় না। তবে ন্যায়ের আশ্রয় বাক্য দুটির যদি ব সত্যতা থাকে, তবে সিদ্ধান্তেরও বাস্তব সত্যতা (Material truth) থাকবে। যদি আশ্রয়বাক্যের বাস্তব সত্যতা না থাকে তবে সিদ্ধান্তেরও বাস্তব সত্যতা থাকবে না। কিন্তু আশ্রয়বাক্যগুলির বাস্তব সত্যতা আছে কিনা, এই প্রশ্ন ন্যায় অনুমানে তােলা হয় না।
যেমন ঃ
A – সকল মানুষ হয় দেবতা। –
A – রাম হয় মানুষ। –
.:. A – রাম হয় দেবতা।
এই অনুমানের প্রধান আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের বাস্তব সত্যতা নেই। তবু ন্যায়টির আকারগত সত্যতা আছে। অর্থাৎ, ন্যায়টি বৈধ।
– আবার, কোনাে ন্যায়ের আশ্রয়বাক্য দুটি সত্য হলে সিদ্ধান্ত সত্য হতে পারে।
যেমন : A – সকল মানুষ হয় অপূর্ণ সত্ত্বা।
A – রাম হয় মানুষ।
A – রাম হয় অপূর্ণ সত্ত্বা।
এই যুক্তির আশ্রয়বাক্য দুটির বাস্তব সত্যতা আছে। এজন্য সিদ্ধান্তেরও বাস্তব সত্যতা আছে। যুক্তিটির আকারগত সত্যতা বা বৈধতা এবং বস্তুগত সত্যতা আছে। ) ন্যায়ের বৈধতা বা অবৈধতা কেবলমাত্র তার আকারের উপর নির্ভর করে। বিষয়বস্তু অর্থাৎ বচন তিনটির বাস্তব সত্যতা বা মিথ্যাত্বের উপর ন্যায়ের বৈধতা নির্ভর করে না। কোনাে বৈধ ন্যায়ের তিনটি বচনই মিথ্যা হতে পারে। যেমন :
A-সকল অমর ব্যক্তি হয় কাপুরুষ -মিথ্যা
A – সকল রাজা হয় অমর ব্যক্তি -মিথ্যা
A – সকল রাজা হয় কাপুরুষ-মিথ্যা উল্লিখিত ন্যায়টির তিনটি বচনই মিথ্যা, অথচ ন্যায়টি বৈধ হয়েছে।
প্রশ্ন ১। বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলি আলােচনা কর।
বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মাবলী
উত্তরঃ ন্যায়ের বৈধতা বিচারের জন্য এবং বৈধ ন্যায় গঠনের জন্য কতকগুলি নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলি অনুসরণ করে ন্যায় অনুমান গঠন করলে ন্যায় আকারগত দিক থেকে শুদ্ধ বা বৈধ হয়। নিয়মগুলির কোনাে একটি লঙ্ঘন করলে এক বা একাধিক দোষ বা অনুপপত্তি (fallacy) ঘটে বা অনুমান অবৈধ (invalid) হয়। এই নিয়মগুলিকে ন্যায়ের সাধারণ নিয়ম বলে। প্রতিটি নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমানে তিনটি বচন থাকবে। তিনের বেশি বা কম থাকবে না। অবশ্য এটি কোনাে নিয়ম নয়, বরং ন্যায়ের শর্ত। তিনটির অতিরিক্ত বচন থাকলে তাকে আর ন্যায় বলা যাবে না।
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-১
ন্যায় অনুমানে মাত্র তিনটি পদ থাকবে। তার বেশি নয় বা তার কমও নয়। যদি তিনটির অতিরিক্ত পদ থাকে, অর্থাৎ চারটি পদ থাকে, তবে ন্যায়টি চতুষ্পদঘটিত দোষে (fallacy of four terms) দুষ্ট হবে।
দৃষ্টান্ত :
(১) প্রদত্ত যুক্তি : বােলপুর বর্ধমানের কাছে। বর্ধমান কলকাতার কাছে। সুতরাং, বােলপুর কলকাতার কাছে।
যৌক্তিক আকার :
A – বর্ধমান হয় কলকাতার কাছে।
A – বােলপুর হয় বর্ধমানের কাছে। –
A – বােলপুর হয় কলকাতার কাছে। ..
এই যুক্তিটি চতুষ্পদঘটিত দোষে দুষ্ট। এই যুক্তির চারটি পদ আছে। যথা— (১) বােলপুর, (২) কলকাতার কাছে, (৩) বর্ধমান এবং (৪) বর্ধমানের কাছে। বর্ধমান ও বর্ধমানের কাছে এই দুটি এক পদ নয়।
(২) প্রদত্ত যুক্তি :
A – সকল সৈনাধ্যক্ষ হয় সৈনাধ্যক্ষের স্ত্রীর দ্বারা শাসিত।
A – সকল সৈন্য হয় সৈনাধ্যক্ষের দ্বারা শাসিত।
A – সকল সৈন্য হয় সৈনাধ্যক্ষের স্ত্রীর দ্বারা শাসিত। – –
এই যুক্তিটির তিনটি অতিরিক্ত পদ থাকায় যুক্তিটি চতুষ্পদ ঘটিত দোষে দুষ্ট। এই চারটি পদ হল ঃ (১) সৈন্য, (২) সৈন্যাধ্যক্ষের স্ত্রীর দ্বারা শাসিত, (৩) সৈন্যাধ্যক্ষ এবং (৪) সৈন্যাধ্যক্ষের দ্বারা শাসিত। সৈন্যাধ্যক্ষ এবং ‘সৈন্যাধ্যক্ষের দ্বারা শাসিত এই দুটি এক পদ নয়।
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
(৩) প্রদত্ত যুক্তি : ঈশ্বর মানুষের স্রষ্টা, মানুষ পাপের স্রষ্টা। অতএব ঈশ্বর পাপের স্রষ্টা। যৌক্তিক আকার :
A – মানুষ হয় পাপের স্রষ্টা।
A – ঈশ্বর হন মানুষের স্রষ্টা।
A – ঈশ্বর হন পাপের স্রষ্টা।
মানুষ’ ও ‘মানুষের স্রষ্টা’ এক পদ নয়। সুতরাং, যুক্তিটিতে চারটি পদ থাকায় যুক্তিটি। চতুষ্পদঘটিত দোষে দুষ্ট।
(৪) প্রদত্ত যুক্তি ও পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, চন্দ্র পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, সুতরাং, চন্দ্র সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
যৌক্তিক আকার
A – পৃথিবী হয় এমন যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
A – চন্দ্র হয় এমন যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
A – চন্দ্র হয় এমন যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
পৃথিবী এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এই দুটি এক পদ নয়। সুতরাং, যুক্তিটি চারিপদ- ঘটিত দোষে দুষ্ট।
(৫) প্রদত্ত যুক্তি : দিল্লি ভারতের অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিমবাংলা দিল্লির অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব পশ্চিমবাংলা ভারতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
যৌক্তিক আকার :
A – দিল্লি হয় ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
E – পশ্চিমবাংলা নয় দিল্লির অন্তর্ভুক্ত। –
E – পশ্চিমবাংলা নয় ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
যুক্তিটি চতুষ্পদ ঘটিত দোষে দুষ্ট। এই চারটি পদ হল—(১) পশ্চিমবাংলা, (২) ভারতের অন্তর্ভুক্ত, (৩) দিল্লি এবং (৪) দিল্লির অন্তর্ভুক্ত। দিল্লি ও দিল্লির অন্তর্ভুক্ত এক পদ নয়।
(৬) প্রদত্ত যুক্তি ও আমার বাহু টেবিলটি স্পর্শ করে আছে, টেবিলটি মাটি স্পর্শ করে আছে, অতএব আমার বাহু মাটি স্পর্শ করে আছে।
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
যৌক্তিক আকার :
A – টেবিলটি হয় এমন যা মাটি স্পর্শ করে আছে।
A আমার বাহু হয় এমন যা টেবিলটি স্পর্শ করে আছে। –
A: আমার বাহু হয় এমন যা মাটি স্পর্শ করে আছে। .. –
যুক্তিটি চতুষ্পদঘটিত দোষে দুষ্ট। এই চারটি পদ হল ঃ (১) আমার বাহু, (২) এমন যা মাটি স্পর্শ করে আছে, (৩) টেবিলটি এবং (৪) এমন যা টেবিল স্পর্শ করে আছে। টেবিলটি এবং এমন যা টেবিল স্পর্শ করে আছে, এই দুটি অভিন্ন পদ নয়।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-২
ন্যায় অনুমানে হেতু পদকে দুটি আশ্রয়বাক্যে অন্তত একবার ব্যাপ্য হতে হবে। হেতু পদ উভয় আশ্রয়বাক্যেই ব্যাপ্য হতে পারে। অর্থাৎ দুবারই ব্যাপ্য হতে পারে। কিন্তু যদি হেতু পদ একবারও ব্যাপ্য না হয়, তবে যুক্তি অব্যাপ্য হেতুদোষে (Fallacy of Undistributed Middle) দুষ্ট হবে।
দৃষ্টান্ত । (১) A – সকল ব্যক্তি যারা এই পদের যােগ্য হয় স্নাতক।
A – রাম হয় স্নাতক।
A – রাম হয় এই পদের যােগ্য। ..
হেতু পদ কোনাে আশ্রয়বাক্যেই ব্যাপ্য না হওয়ায় যুক্তিটি অব্যাপ্য হেতুদোষে দুষ্ট হয়েছে।
নিরপেক্ষ ন্যায় এর বৈশিষ্ট্য- নিরপেক্ষ ন্যায় গঠনের সাধারণ নিয়মাবলী
(২) A – সকল ঘােড়া হয় চতুষ্পদ। –
A – সকল কুকুর হয় চতুষ্পদ।
A – সকল কুকুর হয় ঘােড়া।
(৩) A – সকল জড়দ্রব্য হয় দ্রব্য যার মাধ্যাকর্ষণ আছে।
A – বাতাস হয় দ্রব্য যার মাধ্যাকর্ষণ আছে।
A বাতাস হয় জড়দ্রব্য।
..
(৪) A – সকল গ্রহ হয় গােলাকার।
A – এই চক্রটি হয় গােলাকার।
A – এই চক্রটি হয় একটি গ্রহ।
উল্লিখিত চারটি দৃষ্টান্তে কোনাে আশ্রয়বাক্যে হেতু পদ ব্যাপ্য হয়নি। এই কারণে প্রতিটি যুক্তি অব্যাপ্য হেতুদোষে দুষ্ট হয়েছে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৩
ন্যায় অনুমানে যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি, সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হবে না। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে যুক্তিটিতে দুটি দোষ ঘটতে পারে।
(ক) অবৈধ সাধ্যদোষ। (Fallacy of Illicit Major) (খ) অবৈধ পক্ষ দোষ। (Fallacy of Illicit Minor)
৪। (ক) অবৈধ সাধ্যদোষ
যখন কোনাে যুক্তির সাধ্য পদ সাধ্য আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য থাকে না, কিন্তু সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য থাকে, তখন ওই যুক্তিটিতে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটে।
অবৈধ সাধ্যদোষের দৃষ্টান্ত
(১)
A – সকল স্পষ্টবাদী ব্যক্তি হয় সৎ ব্যক্তি। E – রাম নয় স্পষ্টবাদী ব্যক্তি।
E রাম নয় সৎ ব্যক্তি।
উপরিউক্ত যুক্তির সাধ্য পদ সাধ্য আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়েও সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হওয়ায় যুক্তিটি অবৈধ সাধ্যদোষে দুষ্ট হয়েছে।
(২)
A – সকল গােরু হয় চতুষ্পদ জীব।
E – কোনাে কুকুর নয় গােরু।
.. E – কোনাে কুকুর নয় চতুষ্পদ জীব।
যুক্তিটি অবৈধ সাধ্যদোষে দুষ্ট।
(৩) প্রদত্ত যুক্তি
রাম মানুষ নয়। কারণ সে পরিশ্রমী এবং কোনাে কোনাে মানুষ নয় পরিশ্রমী।
যৌক্তিক আকার :
O – কোনাে কোনাে মানুষ নয় পরিশ্রমী ব্যক্তি।
A – রাম হয় পরিশ্রমী ব্যক্তি।
E – রাম নয় মানুষ। –
সাধ্য আশ্রয়বাক্যে সাধ্য পদ ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। সুতরাং যুক্তিটি ন্যায়ের নিয়ম লঙ্ঘন করায় অবৈধ সাধ্যদোষে দুষ্ট হয়েছে।
(৪) প্রদত্ত যুক্তি :
তার উন্মাদ হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ সে শিক্ষিত নয়।
যৌক্তিক আকার :
I- কোনাে কোনাে শিক্ষিত ব্যক্তি হয় উন্মাদ।
E – সে নয় শিক্ষিত ব্যক্তি।
E – সে নয় উন্মাদ। .. –
যুক্তিটির প্রধান আশ্রয় বাক্য I-বচন হওয়ায় সাধ্য পদ ‘উন্মাদ’ ব্যাপ্য হয়নি। কিন্তু সিদ্ধান্ত E-বচন হওয়ায় সাধ্য পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। এটি ন্যায়ের নিয়মবিরুদ্ধ। যুক্তিটি অবৈধ সাধ্যদোষে দুষ্ট।
৪। (খ) অবৈধ পক্ষদোষ :
যখন কোনাে যুক্তির পক্ষ পদ পক্ষ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তখন যুক্তি অবৈধ পক্ষদোষে দুষ্ট হয়।
তবে কোনাে পদ (সাধ্য পদ বা পক্ষ পদ) আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়ে সিদ্ধান্তে অব্যাপ্য থাকতে পারে। এমন হলে যুক্তিতে কোনাে দোষ ঘটবে না।
অবৈধ পক্ষদোষের দৃষ্টান্ত :
A – সকল মানুষ হয় মরণশীল।
A – সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। A – সকল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হয় মরণশীল।
যুক্তিটির পক্ষ পদ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’ পক্ষ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। সুতরাং, যুক্তিটি অবৈধ পক্ষদোষে দুষ্ট হয়েছে।
২) E – কোনাে মানুষ নয় পূর্ণ সত্তা।
A – সকল মানুষ হয় প্রাণী।
E – কোনাে প্রাণী নয় পূর্ণ সত্তা।
যুক্তিটির পক্ষ পদ ‘প্রাণী” পক্ষ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। সুতরাং, যুক্তিটি অবৈধ পক্ষদোষে দুষ্ট হয়েছে।
(৩) A – সকল জড়দ্রব্য হয় এমন বস্তু যার ওজন আছে।
A – সকল জড়দ্রব্য হয় এমন বস্তু যার বিস্তৃতি আছে।
A – সকল বস্তু যার বিস্তৃতি আছে হয় এমন বস্তু যার ওজন আছে।
যুক্তিটির পক্ষ পদ “এমন বস্তু যার বিস্তৃতি আছে” পক্ষ আশ্রয়বাক্য A-বচনের বিধেয় স্থানে থাকায় অব্যাপ্য আছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত A-বচন হওয়ায় এবং পক্ষ পদ উদ্দেশ্য স্থানে থাকার ব্যাপ্য হয়েছে। এটি বৈধ ন্যায়ের নিয়মবিরুদ্ধ। সুতরাং যুক্তিটি অবৈধ পক্ষদোষে দুষ্ট। ..
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৪
কোনাে বৈধ ন্যায়ের দুটি আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হতে পারে না। দুটি নঞর্থক আশ্রয় বাক্য থেকে কোনাে বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না। যে যুক্তির উভয় আশ্রয় বাক্য নঞর্থক সেই যুক্তিতে দুটি নঞর্থক হেতুবাক্যজনিত দোষ (Fallacy of two negative premises) ঘটে।
যেমন ঃ
E – কোনাে মানুষ নয় অমর।
E – কোনাে দেবতা নয় মানুষ।
E – কোনাে দেবতা নয় অমর।
যুক্তিটির প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্য, নঞর্থক বচন হওয়ায় যুক্তিটি নঞর্থক আশ্রয় বাক্যজনিত দোষে দুষ্ট। এই কারণে বৈধ ন্যায়ে অন্তত একটি আশ্রয় বাক্য বা হেতুবাক্য অবশ্য সদর্থক (affirmative) বচন হবে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৫
ন্যায় অনুমানের দুটি আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হতে পারে না। অন্তত একটি আশ্রয় বাক্য সদর্থক হবে। সুতরাং, একটি আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হলে অন্য আশ্রয়বাক্য সদর্থক হবে এবং সেগুলির
সিদ্ধান্ত অবশ্যই নঞর্থক হবে। বিপরীতক্রমে, কোনাে যুক্তির সিদ্ধান্ত যদি নঞর্থক বচন হয়, তবে একটি হেতুবাক্য অবশ্যই নঞর্থক এবং অন্যটি সদর্থক বচন হবে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৬
কোনাে যুক্তির দুটি আশ্রয়বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত সদর্থক হবে। বিপরীতক্রমে, সিদ্ধান্ত যদি সদর্থক বচন হয়, তবে উভয় আশ্রয় বাক্যই সদর্থক বচন হবে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৭
দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ কোনাে বৈধ যুক্তির দুটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ বচন হতে পারে না।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৮
বৈধ ন্যায়ের একটি হেতুবাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিশেষ বচন হবে। অষ্টম নিয়ম অনুসারে বৈধ যুক্তির দুটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ হতে পারে না। একটি আশ্রয় বাক্য বিশেষ হলে অন্য আশ্রয়বাক্যটি সার্বিক হবে এবং এগুলির সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিশেষ বচন হবে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম-৯
কোনাে যুক্তির প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক বচন হলে যুক্তি অবৈধ হবে। অর্থাৎ কোনাে বৈধ যুক্তির প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক বচন হতে পারে না।
বৈধ ন্যায়ের দশটি নিয়মকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, গঠন সম্পর্কীয় নিয়ম, বৈধতা সম্পর্কীয় নিয়ম ও অনুসিদ্ধান্ত।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনসম্পৰ্কীয় নিয়ম :
(১) প্রতিটি ন্যায় অনুমানে তিনটি পদ থাকবে, তিনটির কম নয়, আবার বেশিও নয়। (২) প্রতিটি ন্যায় অনুমানে তিনটি বচন থাকবে, তিনটির কম নয়, অথবা বেশি নয়।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতাসম্পৰ্কীয় নিয়ম
(৩) হেতু পদকে উভয় আশ্রয়বাক্যের মধ্যে অন্তত একবার ব্যাপ্য হতে হবে। (৪) যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি সেই পদকে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য করা যাবে না। (৫) ন্যায়ের দুটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক বচন হবে না।
(৬) একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক বচন হলে সিদ্ধান্ত নঞর্থক বচন হবে। (৭) দুটি হেতুবাক্য সদর্থক বচন হলে সিদ্ধান্ত সদর্থক বচন হবে।
অনুসিদ্ধান্ত ।
(৮) দুটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ বচন হলে যুক্তি অবৈধ হবে। (৯) একটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ বচন হলে সিদ্ধান্ত বিশেষ বচন হবে।
১০) প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ বচন ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক বচন হলে কোনাে বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়।