জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা

 জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা

 

জ্ঞানচক্ষু

আশাপূর্ণা দেবী

 

 জ্ঞানচক্ষু গল্পের বিষয়বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর গুলি আলোচনা করা হয়েছে।

 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের বিষয়বস্তু

 

  ছােটোমাসির বিয়েতে তপন মায়ের সঙ্গে মামাবাড়ি আসে। শােনে নতুন মেসাে কলেজের অধ্যাপক ও লেখক। কোনাে লেখককে এর আগে তপন দেখেনি। লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা ছিল তারা দেবতা-টেবতার মতাে অসাধারণ কেউ। জলজ্যান্ত লেখক মেসােকে দেখে তার ভুল ভাঙে। লেখক মেসাে তাে তার বাবা, ছােটোমামা, মেজোকাকুর মতাে মানুষ। চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তার মধ্যে কোনাে রকম হেরফের নেই। 

জ্ঞানচক্ষু-গল্পের-প্রশ্ন-উত্তর-দশম-শ্রেণি-বাংলা

 

 একেবারে নিছক মানুষ। এখন তপনের কাছে লেখক’ মানে আকাশ থেকে পড়া কোনাে জীব নয়। তপনের মতাে মানুষই। এই স ধারণা থেকে তপনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস মাথাচাড়া দেয়—চেষ্টা করলে তারও লেখক হতে বাধা কোথায় ? তপন এক ফাঁকে সকলকে লুকিয়ে হােম-টাস্কের খাতা নিয়ে গিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে একাসনে বসে আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলে। পড়ে নিজেই রােমাঞ্চিত হয়।

 

 তপনের গল্প মেরে হাত দিয়ে সন্ধ্যাতারায় প্রকাশের উদ্যোগ : দেখে, হুবহু গল্পের মতােই হয়েছে। তপন নিজেই র আত্মতৃপ্তহয়ে ভাবে এখন তাকে লেখক’বলাচলে। নীচে নেমে এসে ছােটোমাসিকে লেখা গল্পের কথা বলে। তার বন্ধুতুল্য ছােটোমাসি লেখার ওপর চোখ বুলিয়েই ‘বেশ হয়েছে’ তারিফ করেই লেখাটা পৌছিয়ে দেন লেখক মেসাের হাতে। মাসির অনুরােধে মেসাে কথা দেয় সে যে সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় লেখে তাতে ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। তবেচাহাতের লেখা তাে এক-আধটুকুকারেকশান করতে হবে।

 

 বাড়ি ফিরে আসার পর গল্প লেখায় উৎসাহিত তপন আরও কয়েকটা গল্প লিখে ফেলে। তবে মেসাের হাতে পাঠানাে গল্পটা নিয়ে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব থাকে তার মনে। সেদিন নিরাশার বিষন্নতা নিয়ে তপন বাড়িতে বসেছিল, এমন সময় অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনাটা ঘটে। ছােটোমাসি আর মেসাে এল তাদের বাড়ি। হাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা। সন্ধ্যাতারা’ কেন ? তাহলে তপনের লেখা কি প্রকাশিত হয়েছে? পৃথিবীতে কি এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে? পত্রিকা তপনের হাতে আসতে সূচিপত্রে দেখে তার নামের পাশে তার গল্পের নাম ‘প্রথম দিন। লেখক তপনকে নিয়ে বাড়িতে শােরগােল পড়ে যায়। বাবা ও কাকা কিছু বাঁকা মন্তব্য করলেও মা তপনকে গল্পটা পড়ে শােনাতে বলেন।

 

  গল্প পড়তে গিয়ে তপন দেখে একটা বাক্যও তার নিজের নয়। কারেকশানের কথা মেসাে বলেছিল বটে, সে তাে এক-আধটুকু। তাই বলে প্রতিটা বাক্য! তপন ছাদের নির্জনতায় জামার তলা দিয়ে চোখ মুছে। সে মনে মনে শপথ নেয় এবার নিজের হাতে পত্রিকায় লেখা জমা দেবে। তাকে শুনতে না হয় অমুকে লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে। নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে যেন অপরের লেখা পড়তে না হয়। অপরের লেখা নিজের লেখা বলে পড়ার মধ্যে দুঃখ ও অপমান দুই-ই আছে।

 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ  ‘বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা”-কোন্ কথা ওঠে? সেই কথার প্রতিক্রিয়া কী ছিল? 

 

উত্তর : উদ্ধৃত অংশটি স্বনামধন্য লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

কিশাের তপনের লেখা গল্পটা ছােটোমাসি লেখক মেশাের হাতে দেয় মূল্যায়নের জন্য। তিনি উৎসাহব্যঞ্জক সুরে জানান যে তার গল্পটি দিব্যি হয়েছে শুধু একটু কারেকশান করে দিলেই ছাপানাে যাবে। ছােটোমাসি মেসােকে সেই ছাপানাে ও কারেকশান করার কাজটা করার অনুরােধ জানায়। মেসােমশাই জানান তিনি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদককে গল্পটি ছাপাতে দিলে তিনি ‘না’ করবেন না অর্থাৎ, পত্রিকা সম্পাদকের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটাই বড়াে করে দেখান এবং গল্পটি ছাপাতে দেবেন- এই কথাগুলিই বিকেলে তপনদের বাড়িতে চায়ের টেবিলে ওঠে।

 

পত্রিকায় তপনের গল্পটি ছাপানাের প্রসঙ্গে বাড়িতে সকলেই একরকম হাসাহাসি শুরু করে দেন। তপনের গল্প লেখার বিষয়টি কেউ গুরুত্ব না দিলেও নতুন লেখক মেসােমশাই বলেছিলেন, গল্প লেখায় তপনের হাত আছে। চোখও আছে। নচেৎ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা তাে সাধারণভাবে রাজারানির গল্প, খুন, জখম, অ্যাকসিডেন্ট অথবা না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া—এইসব মালমশলা নিয়ে গল্প লিখতে বসে। তপন সে সব দিকে না গিয়ে নিজের জীবনে বিদ্যালয়ে ভরতির প্রথম দিনের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছে। মেসাের মতে, তপনের হবে। অর্থাৎ গল্প লেখার ক্ষেত্রে তার সম্ভাবনা রয়েছে। তপন মেসােমশাইয়ের এইসব কথায় কিছুটা আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে শুধু বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। 

 

প্রশ্নঃ ‘লেখার পর যখন পড়ল, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের।-কোন্ লেখার কথা বলা হয়েছে? তার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠার কারণ কী? 

 

উত্তর : অসামান্য প্রতিভার অধিকারিণী, সুলেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামক গল্প থেকে আলােচ্য অংশটি নেওয়া।

 

বালক তপনের লেখা গল্পটি তার লেখক ছােটোমেসাে সন্ধ্যাতারা’

 

পত্রিকায় প্রকাশের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। তপন প্রতীক্ষায় থাকে—গল্পটির প্রকাশের আশায়। আর এরই মধ্যে সে আবারও আর একটা গল্প লিখে ফেলে সকলের অজান্তেই। আলােচ্য উদ্ধৃতিটিতে এই গল্পের কথাই বলা হয়েছে।

 

আলােচ্য গল্পের কিশাের তপনের ধারণা ছিল লেখক মানে । অলৌকিক জগতের কোনাে অধিবাসী। কিন্তু লেখক নতুন মেসসাকে দেখে সেই ধারণা তার বদলে যায়। লেখকরাও যে সাধারণ মানুষের মতােই এ কথার সে প্রমাণ পেয়ে ভাবতে বসে যে তারও তাহলে লেখক হতে কোনাে বাধা নেই। তাই সকলের অলক্ষ্যে বাড়ির তিনতলায় উঠে একান্তে হােমটাস্কের খাতায় আস্ত একটি গল্প একাসনে বসে লিখে ফেলে তপন। নিজের সৃষ্টির আনন্দে তপনের মন বুদ হয়ে যায়, শরীরে খেলে একটা শিহরণ। নিজেই তপন বিশ্বাস করতে পারছেনা—কী করে এতাে সুন্দর গল্প সে লিখে ফেলল। গল্পের ভাব ও ভাষাকে বাণীমূর্তি দেওয়ার আনন্দ যেন তার শরীরে কাটা দেয়।

 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2023

 

 তপনের বোবার মতো বসে থাকার কারণ কি?

 

 

উত্তর : প্রখ্যাত সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু শীর্ষক ছােটোগল্পের প্রধান চরিত্র তপন সম্পর্কে উক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

 

অপ্রত্যাশিতভাবে বালক তপন তার সাহিত্যিক ছােটোমেশাের আনুকূল্যে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের লেখা গল্পটি হাতে পায়। বাড়িতে এই নিয়ে শােরগােল পড়ে যায়। বেশ প্রশংসা হচ্ছিল তার। কিন্তু ছােটোমেসাে যখন বলেন, গল্পটা একটু কারেকশান করে দিয়েছেন তখন প্রশংসার সুরটা কেটে যায়। কিছু কটাক্ষও তাকে হজম করতে হয়। মায়ের নির্দেশে গল্পটা পড়তে গিয়ে তপন ক্রমশই বিষন্ন হয়ে পড়ে। সে দেখে পুরাে গল্পটাই কারেকশানের নামে পালটে দিয়েছেন ছােটোমেসাে। গল্পের প্রায় প্রত্যেকটি লাইন আনকোরা, নতুন। ওর অপরিচিত। গােটা গল্পেই তপন প্রায় অনুপস্থিত। বালক তপনের লেখকসত্তা যেন অপমানিত হয়। পত্রিকায় নিজের নাম ও গল্প প্রকাশের যে আনন্দ জেগেছিল তার, তা ক্রমে নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে। গল্প প্রকাশের প্রশংসাসূচক শব্দগুলি তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। গল্পটি পড়তে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। সে আর পড়তে পারে না। সে যেন বােবা হয়ে যায়।

 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2022

 

প্রশ্ন )  “আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।”—’আজ’ বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? দিনটি সবচেয়ে দুঃখের দিন মনে করা হয়েছে কেন? 

 

উওর : কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে অংশটি নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘আজ’বলতে সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে। যেদিন তপনের ছােটোমাসি ও মেসাে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার একটি সংখ্যা নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন।

 

দিনটিকে প্রথমে সবচেয়ে সুখের দিন বলেই মনে হয়েছিল তপনের। কারণ তার লেখা প্রথম গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছিল। বাড়িতে বেশ একটা শােরগােল পড়ে গিয়েছিল। বেশ প্রশংসা হচ্ছিল তার। কিন্তু ছােটোমেসাে যখন বলেন, গল্পটাকে একটু কারেকশান করে দিয়েছেন তখন প্রশংসার সুরটা কেটে যায়। কিছু কটাক্ষও তাকে হজম করতে হয়।তার গল্প প্রকাশিত হওয়ার আনন্দটা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। একটু ব্যথিত হয় সে।

 

মায়ের নির্দেশে গল্পটা পড়তে গিয়ে ক্রমশই বিষন্ন হয়ে পড়ে তপন। সে দেখে কারেকশানের নামে পুরাে গল্পটাই পালটে দিয়েছেন ছােটোমেসাে। গল্পের প্রায় প্রত্যেকটি লাইন নতুন, আনকোরা। ওর অপরিচিত। গােটা গল্পেই তপন প্রায় অনুপস্থিত। তপন ছােটো হলেও লেখক। তার লেখকসত্তাকে এভাবে অপমান করাকে নিষ্ঠুরতাই বলা যায়। পত্রিকায় প্রথম দিন’ গল্পের লেখক হিসেবে নিজের নাম দেখে যে গর্ববােধ জেগেছিল তপনের হৃদয়ে বড়াে লজ্জায় তা মাটির সাথে মিশে যেতে থাকে। গল্পটি পড়তে গিয়ে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। সে আর পড়তে পারে না। এই গল্পের প্রশংসাসূচক শব্দগুলি তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। সে বােবা হয়ে যায়। মা ধমকে ওঠেন। সে গড়গড়িয়ে পড়ে যায়। মাথায় কিছু ঢােকে না। এক সময় ব্যথিত হৃদয়ে বইটা ফেলে রেখে সে ছাদে উঠে যায়। দিনটাকে জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে – মনে হয় তার। 

 

প্রশ্নঃ  “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।”-“রত্ন’ ও ‘জহুরি’ বলতে কী বােঝােনাে হয়েছে? উদ্ধৃত উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে  দাও।

 

উত্তর : প্রখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামক গল্প থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। গল্পের কিশাের চরিত্র তপন নতুন লেখক ছছাটোমেসােকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাবে গল্প লেখা সহজ। যে কেউ তা লিখতে পারে। আর এই ভাবনাবশেই সে আচম্বিতে লিখে ফেলে একটি আস্ত গল্প। ছছাটোমাসিকে সর্বাগ্রে জীবনের প্রথম লেখা গল্পটি দেখায়। গল্পের মূল্যায়নের জন্য লেখকের ছােটোমেসােই উপযুক্ত। লেখার বিষয় লেখকই মূল্যায়ন করতে পারবেন। আর এই প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তিটির অবতারণা। উদ্ধৃতিটিতে ‘রত্ন’ বলতে তপনের লেখা গল্পটিকে এবং ‘জহুরি’ বলতে লেখকের ছােটোমেসােকেই বােঝানাে হয়েছে।

 

স্রষ্টা তপনের হৃদয় থেকে উৎসারিত সৃষ্টি অর্থাৎ, গল্পটি রত্নে’র মতােই মূল্যবান। রত্নটি আসল না নকল তা বুঝবেন রত্ন বিশেষজ্ঞ জহুরিরাই। গল্পটির মূল্যায়ন একমাত্র করতে পারেন লেখকরাই। তপনের ছােটোমেসাে শুধু লেখক নন, কলেজের প্রফেসারও। ফলে তিনি ‘জহুরি’র মতােই গল্পটির মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারেন। জ্ঞানী, সাহিত্যবােদ্ধ ব্যক্তি নতুন ছােটোমেসাের কাছে তপনের মাসি গল্পটি নিয়ে গিয়েছিল মূল্যায়নের জন্য। ছােটোমাসি জানেন সােনা যেমন চেনেন স্বর্ণকারেরা তেমনি রত্ন চেনেন জহুরিরা।‘জহুরি’ মেসােমশাইয়ের কাছে তপনের লেখা গল্পটির যথার্থ মূল্যায়ন হবে।

 

প্রশ্ন ) কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল। ‘ -কোন্ কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল? বিষয়টি সংক্ষেপে লেখাে। 

 

উত্তর : সুলেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কিশাের চরিত্র তপন তার নতুন মেসােমশাই সম্পর্কে একটি কথা

 

– শুনে তার চোখ বিস্ময়ে মার্বেল বা গােল হয়ে গিয়েছিল। আসলে তপনের নতুন মেসাে হলেন একজন লেখক এবং কলেজের প্রফেসর। মেসাে বই লেখেন। তাঁর বইও ছাপা হয়—এমনটাই 1 জেনেছে তপন। লেখক মানে একজন সত্যিকারেরই লেখক। এমন একজনকে স্বচক্ষে সে দেখবে বা দেখা পাবে—স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। লেখকরা যে তার বাবা, ছােটোমামা বা মেজোকাকার মতাে সাধারণ মানুষ—এ বিষয়ে যে সন্দেহ ছিল তা দূর হওয়ার কারণে বালক তপনের চোখ বিস্ময়ে গােল বা মার্বেল হয়ে গেল।

 

ছােটোমাসি গল্পের বালক চরিত্র তপনের চেয়ে বছর আষ্টেকের বড়াে। কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক ‘চিরকালের বন্ধুর মতােই। ছােটো মাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে তপন মামাবাড়িতে আসে এবং বিবাহ শেষে নতুন মেসাে ও ছােটোমাসি চলে যান। গ্রীষ্মবকাশের ছুটিতে ।

 

মেসাে ও মাসি আবার তপনের মামাবাড়িতে আসেন। তপন তার স্কুলের ছুটির জন্য মামাবাড়িতে থেকে গিয়েছিল। আর ঠিক এই সময়েই তপন মেলােমশাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। মেসাে একজন লেখক। তার বইও প্রচুর ছাপা হয়। অথচ লেখক মেসাের জীবনযাপন সাধারণ মানুষের মতাে। বালক তপন এই কারণে খুবই বিস্মিত হয়।

 

জ্ঞানচক্ষু গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর

 

 

প্রশ্ন> “যে ভয়ংকর আহ্বাদটা হবার কথা, সে আদি খুঁজে পায় না।”—‘আয়াদ’ হবার কথা ছিল কেন? “আহ্লাদ খুঁজে পাওয়ার কারণ কী? 

 

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীরচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’নামক গল্প থেকে নেওয়া আলােচ্য অংশে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশাের তপনের আহ্বাদের কথা বলা হয়েছে। কিশাের তপনের নবীন আবেগে লেখা গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার ঘটনায় আহ্লাদিত হওয়ার কথা ছিল।

 

কিন্তু কিশাের তপনের লেখা গল্পটি ছােটোমেসাের সহায়তায় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে চারিদিকে সকলে মেসাের মহত্ত্বের কথাই বলতে থাকে। বাবার কথায়, ফট করে লিখল আর ছাপা হলাে, কেমন করে সম্ভব। আসলে তপনের লেখা গল্পটি মেসাে আমূল ‘কারেকশান’ করে দিয়েছেন—তাই সম্ভব হয়েছে। মেজোকাকুর মন্তব্য—ওরকম লেখক মেসসা থাকলে তারাও চেষ্টা করে দেখত গল্প লেখা ও তা ছাপানাের। এসব কথায় কিশাের তপনের মনের আনন্দ – ম্লান হয়েছে। গল্প ছাপানাের মধ্যে সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।

 

প্রশ্নঃ তবে আর পায় কে তপনকে?’—কেন এমন আহ্লাদ-উত্তেজনা?

 

উত্তর : জ্ঞানচক্ষু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন ছােটোবেলা থেকেই গল্প পড়তে ভালােবাসে। অনেক গল্প পড়েছে। পড়ে পড়ে লেখকদের সম্পর্কে কিছু আজগুবি ধারণা গড়ে উঠেছিল তার মনে। কিন্তু নতুন মেসসাকে দেখে সে বুঝতে পারে লেখকেরা কোনাে ভিন্ন গ্রহের জীব নয়। তারাও সাধারণ মানুষ। এতে তার সৃষ্টিশীল মনটা একটু ভরসা পায়। সে লিখে ফেলে একটা গল্প। নতুন মেসাে গমটির প্রশংসা করে ছাপতেও দেওয়া যেতে পারে বলে জানান। এতে তপনের সৃষ্টিশীলতার আনন্দ একটা গর্ববােধ জাগিয়ে তােলে, তাই এই প্রতিক্রিয়া।

 

প্রশ্ন)  “তবে আর পায় কে তপনকে?’—তগন কে? তার সম্পর্কে এরুপ মন্তব্য করা হয়েছে কেন? 

 

তপন গল্প পড়তে ভালােবাসে। ছােটোবেলা থেকে রাশি রাশি গল্প শুনেছে আর এখন অনেক গল্প পড়ছে। এর ফলে তার হৃদয়েও একটা লেখকসত্তা উকি মেরে যায়। অর্থাৎ তারও লেখার মনটা জেগে ওঠে। কিন্তু তার মনে হয় লেখকেরা সাধারণ মানুষ নন। সাধারণ মানুষের পক্ষে গল্প লেখা সম্ভব নয়। তার নতুন মেসােকে দেখে সে যখন বুঝল লেখকেরাও সাধারণ তখন তার গল্প লেখার ইচ্ছেটা তীব্র হলাে। তার সৃষ্টিশীল মনটা একটা ভরসায় বড়াে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ল।

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর saq

প্রশ্নঃ ‘গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের”—তপন কে? কেন তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল? 

 অথবা, “মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল।”—কেন মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল? 

 

উত্তর : কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের মূল চরিত্র : তপন।

 

তপন তার নতুন মেসােকে দেখে জানল যে, লেখকেরা কোনাে আকাশ থেকে পড়া জীব নন। তাঁরাও সাধারণ মানুষ। এতে তপনের হৃদয়ের সৃজনশীলতা সাহস পেল। নিথর, নিস্তব্ধ দুপুরে তিনতলায় উঠে একাসনে বসেই একটা গল্প সে লিখে ফেলে। গল্পটি লেখামাত্র সৃষ্টিশীলতার আনন্দ, গর্ব তার মনে, শরীরে একটা সাড়া ফেলে। তাই সে শিহরিত হয়ে ওঠে, তার গায়ে কাঁটা দেয়, তার মাথার চুল খাড়া। 

 

উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি কথাকার আশাপূর্ণা দেবীর জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে নেওয়া।

 

লেখক নতুন মেসাে চলে যাওয়ার পর, মামার বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি এসেছে তপন। বাড়িতে সকলে বলছে, কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী’। সকলে ঠাট্টা করছে ‘তাের হবে। হ্যা বাবা তাের হবে।’ এসবকে অগ্রাহ্য করে উৎসাহের উত্তেজনায় আর, দু-তিনটে গল্প লিখে ফেলেছে। হােমটা ফেলে রেখে লুকিয়ে লিখেছে। এটাই তাকে নেশায় মাতােয়ারা করেছে।

 

প্রশ্ন)  “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে। -অলৌকিক ঘটনাটি কী?

 

অথবা, “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা।”–কোন্ ঘটনা ঘটেছিল?

 

উত্তর : জ্ঞানচক্ষু গল্পের মূল চরিত্র তপন একটি গল্প লিখেছিল। তার ছােটোমেসাে, যিনি একজন লেখক, তার লেখাটির প্রশংসা করেন এবং সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপতে দেবেন বলে নিয়ে যান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ছােটোমেসাে ও মাসি এক সংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে নিয়ে একদিন তপনদের বাড়িতে আসেন। পত্রিকাটি দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। তার লেখা ‘সন্ধ্যাতারা’য় মুদ্রিত হয়েছে। এই লেখা হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে, এসব ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে তার মন। এই ঘটনাটিকে অলৌকিক বলে মনে করে সে।

 

প্রশ্ন ) “ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে।”-কোন্ কথা? কথাটি ছড়িয়ে পড়ার ফল কী দাঁড়ায়? 

 

উত্তর : ‘সন্ধ্যাতারা’পত্রিকায় ছেপে বেরােনাে প্রথম দিন’গল্পটির জন্য সবাই যখন তপনের প্রশংসা করতে থাকে তখন ছােটো মেসে মৃদু হেসে তাঁর কারেকশান করে দেওয়ার কথাটা জানিয়ে দেন। এই কথাটাই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে।

 

কথাটা ছড়িয়ে পড়ার পর তপনের প্রতিভাকে কেউ আর বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। ওর বাবা, মেজোকাকু এক্ষেত্রে ছােটোমেসাের কেরামতিকে বড়াে করে দেখেন। চলতে থাকে মেসাের মহত্ত্বের কথাই। তঁার চেষ্টা না থাকলে সন্ধ্যাতারা’-র সম্পাদক নাকি তপনের গল্পটি কড়ে আঙুলেও ছুঁয়ে দেখতেন না। এসব কথা শুনে তপন বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

 

প্রশ্ন ) ‘তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে।’—তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী?

 

উত্তর : উদ্ধৃত বাক্যটি কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *