খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণী
খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণী
খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর
খেয়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খেয়া কবিতার বিষয়বস্তু বড় প্রশ্ন-উত্তর ছোট প্রশ্ন উত্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর আলোচনা করা হয়েছে
বিষয়-সংক্ষেপ
খেয়া কবিতার সারাংশ:
খেয়ানৌকা নদীর স্রোতে এপার থেকে ওপারে বা ওপার থেকে এপারে যাত্রী পারাপার করে। কেউ ঘরে যায়। কেউ ঘর থেকে আসে। নদীর দু-তীরে দুটি গ্রাম। গ্রামের লােকজন পরস্পরের জানাশােনা। খেয়াপার হয়ে তাদের আসাযাওয়া। দুনিয়ায় কত কত দ্বন্দ্ব আর সর্বনাশের ঘটনা নিয়ে নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে। হানাহানির রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে কত রাজার উত্থান আর কত রাজার পতন হচ্ছে। সভ্যতার নতুন নতুন চাহিদা মেটাতে গিয়ে কখনও উঠছে বিষতিক্ত হলাহল, কখনও বা পরম তৃপ্তিদায়ক অমৃত। এখানে প্রবহমান স্রোতধারার দুই তীরের দুখানি নাম-না-জানা গ্রাম একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নদীস্রোতে এপার-ওপারের খেয়ার বিরাম নেই, যাতে কেউ ঘরে যায় তাে কেউ ঘর থেকে আসে।
খেয়া কবিতার উৎস
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতাটি তাঁর “চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা। কবি সম্ভবত পতিসর বা সাজাদপুরে বসে ১৮ চৈত্র সােমবার ১৩০২ বঙ্গাব্দে (৩০ মার্চ ১৮৯৬) কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি ১৪টি চরণ বা পদের কবিতা বা চতুর্দশপদী। কাজেই ‘খেয়া’ কবিতাটি ‘চৈতালি ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন
প্রশ্ন: ) ‘পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,—দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের দৃষ্টান্তস্বরূপ কবি যে ছবি এঁকেছেন তা বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় নদীতীরের গ্রাম্য জীবনের কথা প্রসঙ্গে মানব সভ্যতার নব নব ইতিহাস গড়ার কথা বলেছেন। বহমান মানব
সভ্যতার ধারায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। তাতে বহমান কালপ্রবাহে পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের ঘটনাই না ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে। মানব সভ্যতা যত দিন থাকবে, এই ধরনের ঘটনা ঘটার শেষ থাকবে না, তেমনি ঘটনাকে ঘিরে নতুন নতুন ইতিহাসও সৃষ্টি হয়। মানুষের স্বভাবগত লােভ, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা, প্রবৃত্তি ও মানসিকতা যত দিন থাকবে তত দিন দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কলহ-বিবাদ, যুদ্ধ-হানাহানি এবং এইসব ঘিরে সর্বনাশা ঘটনা ঘটবে। অতীতে ঘটেছে, বর্তমানে ঘটছে। ক্ষমতা ও অর্থের লােভে মানুষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পারস্পরিক অস্ত্রের আঘাতে রক্তের প্রবাহ ছােটে। সংগ্রামে জয়ীর অধিকারে আসে রাজসিংহাসন। তাঁর মাথায় তখন ওঠে সােনার রাজমুকুট। আর পরাজিত প্রতিপক্ষ সব হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়। হানাহানির রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে কত রাজার উত্থান আর কত রাজার পতন হয়েছে।
প্রশ্ন ) ‘খেয়া’ কীসেৱ প্ৰতীক? এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে—’—এ কথাৱ গ্ৰুপকাৰ্থ বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: জীবনপ্রবাহের প্রতীক : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতার খেয়া’ হলাে নদী পারাপারের খেয়ানৌকা। তা জন্মমৃত্যুর মাঝে বহমান অন্তহীন জীবনপ্রবাহের প্রতীক।
উপমান বা বাইৱেৱ অর্থ : ‘খেয়া’ কবিতাটি রূপক কবিতা। এর উপমান বা বাইরের অর্থ হলাে খেয়া প্রবাহিত নদীস্রোতের ওপর ভাসমান নৌকা। খেয়ানৌকা নদী পারাপারের কাজ করে। নদীর দুই তীরের মানুষ খেয়ানৌকায় পারাপার হয়। ওপারের মানুষ আসে এপারে। এপারের মানুষ যায় ওপারে। কেউ ঘর থেকে আসে, কেউ ঘরে ফিরে যায়। দুই তীরের মানুষের মধ্যে জানাশােনা ও পরিচয় আছে। আছে আত্মীয়তা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে মানুষজনের আনাগােনা ও পারাপার। খেয়া দুই তীরের গ্রামের মানুষের যােগাযােগের মাধ্যম, যােগসূত্র বা যােগাযােগের সেতুবন্ধন। খেয়া পারাপার চলে অনন্তকাল।
: উপমেয় বা ভিতৱেৱ অর্থ : রূপকের উপমেয় বা ভিতরের অর্থ, আসলে কবি যা বলতে চান তা হলাে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে বয়ে চলেছে জীবনধারা। এই জীবনধারার শেষ নেই। অন্তহীন এবং চিরকালের শাশ্বত। জন্ম ও মৃত্যু যেন নদীর দুই তীরে গ্রাম্য মানুষের জন্ম ও মৃত্যু। জন্মের মধ্য দিয়ে ঘরে আসা হয়, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘর থেকে বাইরে আসা বা প্রস্থান ঘটে। ওই জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে যে বহমান জীবন, তা জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে যােগসূত্র বা সেতুবন্ধন। এই বন্ধন চিরন্তন। তা হলাে খেয়া। কবি রূপকের মােড়কে জীবনদর্শনের এই তত্ত্বকথাই প্রকাশ করেছেন।
– প্রশ্ন ) ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে/ কেহ যায় ঘৱে, কেহ আসে ঘৱ হতে উদ্ধৃতিটির উৎস ও প্রসঙ্গ নির্দেশ করাে। উদ্ধৃতাংশেৱ তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয় কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত।
প্রসঙ্গ : যারা ওপার থেকে এপারে এসে ঘরে যায়, কিংবা এপারের ঘর থেকে এসে ওপারে যায়, তারা নদী পারাপার করে খেয়ানৌকায়। নদীর দুই তীরের গ্রামের মানুষজনকে এইভাবে পারাপারের কাজ হলাে খেয়ানৌকার। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবসি এইভাবেই মানুষজনের পারাপার চলে। নদীর দুই তীরের গ্রাম মুখােমুখি অবস্থান করে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে এইরকম তাদের পারস্পরিক জানাশােনা, তাদের সখ্য, তাদের সম্প্রীতি। এই আলােচনা প্রসঙ্গে আলােচ্য উদ্ধৃতি।
তাৎপর্য : ‘খেয়া’ একটি রূপক কবিতা। রূপক কবিতা বাইরের অর্থের ভিতর গা ঢেকে থাকে ভিতরের অর্থ। উদ্ধা অংশের বাইরের অর্থ হলাে নদীস্রোতের উভয় পারে মানুষজনকে পারাপার করে খেয়ানৌকা। এই পারাপারে। মাধ্যমে খেয়ানৌকার যাত্রীদের মধ্যে বাইর থেকে এসে কেউ ঘর যায়। কেউ বা ঘর থেকে বাইরে যায়। এই আনাগােনার দৌলবে। নদীস্রোতে খেয়া চলে সবদিন। খেয়া হলাে চিরন্তন। এ তাে গে । বাইরের অর্থ। ভিতরের অর্থ হলাে জন্ম ও মৃত্যু। এই দুইয়ে মাঝে অবস্থান করছে মানুষের জীবনপ্রবাহ নদীর স্রোতপ্রবাহে মতাে। জন্মের মাধ্যমে জীবনের সূচনা, মৃত্যুতে জীবনের শেষ জন্মমৃত্যুর লীলা চিরন্তন, চিরদিনের । এই যে জন্মমৃত্যুর মাধ্য আসা-যাওয়া তা তাে খেয়া পারাপারের আসা-যাওয়া। এর ছে । নেই। বিরাম নেই। অন্তহীন ধারায় বহমান। চিরন্তন।
খেয়া কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ খেয়াকে ঘিৱে নদীর দুই তীৱেৱ গ্রাম্য জীবন কীভাবে আবর্তিত হয় আলােচনা করাে।
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের খেয়া কবিতায় খেয়াকে ঘিরে নদীর দুই তীরের আবর্তিত গ্রাম্য জীবনের ছবি এঁকেছেন।
আবর্তিত গ্রাম্য জীবন : নদীতীরে গড়ে উঠেছিল। আদিম মানব সভ্যতা। বহমান নদীর দুই তীরে গােষ্ঠী থেকে ভেঙে পরিবারভুক্ত মানুষদের গড়ে ওঠা গ্রাম। গ্রামীণ সভ্যতার বিকাশ হয়েছে নদীর দুই তীরে। নদীর স্রোতধারাকে ঘিরে সেই গ্রাম্য জীবন আবর্তিত হয়ে আসছে সুদূর অতীত থেকে। এই আবর্তন চলবে সুদূর ভবিষ্যতেও। নদী পারাপারের খেয়া আবর্তিত গ্রাম্য জীবনের চিরন্তন যােগাযােগের সেতুবন্ধন যেন। খেয়া তাদের প্রবহমান অনন্ত জীবনধারার প্রতীক। যে জীবনধারা । অবস্থান করছে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে। দুই তীরের মানুষ খেয়ার সাহায্যে এপার, ওপার হয়। কেউ ঘরে যায়, কেউ ঘর থেকে আসে। তাদের আনাগােনায় সকাল থেকে সন্ধ্যা খেয়া পারাপার চলে অবিরাম। খেয়াই তাদের দুই তীরের মানুষের মধ্যে গড়ে আত্মীয়তা। এইভাবেই তাদের জানাশােনা, তাদের পারস্পরিক পরিচয়। প্রকৃতপক্ষে ঘরে যাওয়া হলাে জন্মের প্রতীক, আর ঘর থেকে আসা হলাে মৃত্যুর প্রতীক। আগেই বলেছি জন্মের মাঝে বহমান চিরন্তন জীবনধারা হলাে খেয়া। জীবনের এই অবধারিত সত্যকে ঘিরে নদীর দুই তীরের গ্রাম্যজীবন আবর্তিত হচ্ছে যুগযুগান্তর ব্যাপী।
খেয়া কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা! ‘হলাহল’ ও ‘সুধা’-ৱ অর্থ লেখাে। উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ‘হলাহল’-এর অর্থ বিষ, ‘সুধা’-র অর্থ হলাে অমৃত। মানবসমাজের উন্নত জীবনযাত্রার প্রতীক হলাে সভ্যতা। সভ্যতার .
নিত্যনতুন অসংখ্য চাহিদা হলাে তার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা-তৃষা। এই চাহিদা মেটানাের জন্য সভ্যতাই মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে সংঘাতের অস্ত্র। ফলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। প্রাণহননই তাে হলাে হলাহল তুল্য বিষ। অপরপক্ষে সভ্যতাই যুদ্ধ নয় শান্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করেছে। শিখিয়েছে প্রেম-প্রীতি ও সখ্যের মহান বােধের কথা। এই তাে অমৃত।
প্রশ্ন)‘রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে/ সােনার মুকুট কত ফুটে আৱ টুটে।–সরলার্থ লেখাে।
উত্তর : ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যলােভী মানুষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পারস্পরিক অস্ত্রের আঘাতে রক্তের প্রবাহ। ছছাটে। সংগ্রামে যে জয়ী হয় রাজসিংহাসন আসে তার অধিকারে। তার মাথায় তখন ওঠে রাজার স্বর্ণমুকুট। আর পরাজিত প্রতিপক্ষ সব হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এও হয়ে যায় আর-এক নতুন ইতিহাস।
প্র) ‘সভ্যতাৱ নব নব কত তৃষা ক্ষুধা/উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!’—তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও?
উত্তর: সভ্যতা হলাে মানবসমাজের উন্নত জীবনযাত্রা। কাজেই জীবনযাত্রার উন্নয়নের চাহিদা হলাে সভ্যতার ক্ষুধা-তৃয়া। ক্ষুধা-তৃষার সর্বগ্রাসী চাহিদা মেটাতে গিয়েই কখনও সমুদ্রমন্থনের মতাে উঠেছে বিষতিক্ত হলাহল। কখনও বা সঞ্জীবনী শক্তিদায়ক ও সুখকর পানীয় অমৃত।
প্রশ্ন ) ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে/ কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘৱ হতে ॥—উদ্ধৃতিটিৱ ৰূপকাৰ্থ বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: ‘খেয়া’ একটি রূপক কবিতা। রূপকের মধ্যে নিজেকে ২ আড়াল করে রেখেছে এক অপূর্ব জীবনদর্শন। নদীস্রোত প্রবহমান জীবন। নদীর দুই তীর জন্ম আর মৃত্যু। জন্ম আর মৃত্যুর মাঝের গতিময় জীবনের ঘটনাগুলি নিয়েই জীবনপ্রবাহ। জীবনস্রোতের শুরুতে জন্ম। শেষ হওয়া বা সমাপ্তিতে মৃত্যু। জন্মের মধ্য দিয়ে ঘরে আসা। আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘর থেকে চলে যাওয়া। এই যাওয়া-আসার খেয়া পারাপার তাে চিরদিনের শাশ্বতকালের।
প্রশ্ন ) খেয়েনৌকা পাৱাপাৱ কৱে নদীস্রোতে ;- খেয়া পারাপারের মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিটি বর্ণনা করো
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্যতম কবিতা ‘খেয়া’।
খেয়ানৌকা নদী পারাপারের কাজ নদীর দুই তীরে গ্রামবাংলার দুই নাম-না-জানা গ্রাম। গ্রামের যােগাযােগের সূত্র হলাে নদী পারাপারের শেষ পারস্পরিক আত্মীয়তার ভিত্তিতে গ্রাম্য মানুষের জীবনধারা চলেছে আবহমানকাল ধরে। বহমান নদীর খেয়া পারাপার । আত্মীয়তার যােগসূত্রকে করেছে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। সে পারাপারের মাধ্যমে এই ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ) কেহ যায় ঘৱে, কেহ আসে ঘৱ হতে। এই উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয় কবিতা থেকে নেওয়া। বহমান নদীটির দুই তীরে দুই নাম-জানা গ্রাম। পৃথিবীর আদি জীবনধারাকে যুগযুগান্তর ধরে বহন করছে গ্রামের মানুষ। তাদের জীবনযাত্রা অনাড়ম্বর ও সহজসরল। পারস্পরিক আত্মীয়তার সূত্রে তারা বাঁধা। আর ও আত্মীয়তা রক্ষার কাজ করছে দুই গ্রামের প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা। নদীর শাশ্বতকালের খেয়া। খেয়ার মাধ্যমে কেউ কাজ সেরে ঘরে ফেরে তাে কেউ কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে রওনা হয়। এইভাবে। চিরন্তন জীবনধারা বয়ে চলে।
প্রশ্ন) ‘পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,/নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস—–সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : উধৃত পঙক্তি দুটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া কবিতা থেকে গৃহীত। প্রবহমান জীবনধারার এক অহ | হলাে শুভ ও কল্যাণময়। আর-এক অঙ্গ হলাে দ্বন্দ্ব-কলয়ে কারণে ধ্বংসাত্মক কাজ। বিপুলা পৃথিবীর কোথাও-না- কোথাও | দ্বন্দ্ব-কলহ লেগে আছে। ফলে ঘটছে সর্বনাশ। যে-কোনাে ধ্বংস দুঃখজনক ঘটনা। এইসব নতুন নতুন ঘটনা গড়ছে নতুন নতুন ইতিহাস। প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাসসৃজক। 1
প্রশ্ন ) ‘সােনার মুকুট কত ফুটে আৱ টুটে!উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : রাজতন্ত্রের যুগে রাজাদের মাথায় শােভা পেত সােন! | মুকুট। সােনার মুকুট ছিল রাজশক্তির প্রতীক। রাজশক্তি কায়েমে জন্য, ক্ষমতা দখলের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে মেতে উঠলে| রাজারা। যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের কারণে রাজশক্তির উত্থান-পল | ছিল অবধারিত। উত্থান মানেই রাজক্ষমতা কায়েম । মাথ”? মুকুট চড়িয়ে সিংহাসনে বসা। পতন মানেই ক্ষমতা হারিয়ে সিংহাসনচ্যুত। পরাজিত রাজার সােনার মুকুট ভেঙে পড়া—এ হলাে বহমান মানবজীবন ধারার চিরন্তন ঘটনা।
অতি সংক্ষিপ্ত
খেয়া কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) রক্তপ্রবাহের মাঝে কী ফেনিয়ে ওঠে?
: উত্তর : রক্তপ্রবাহের মাঝে রাজতন্ত্রের প্রতীক সােনার মুকুট ফেনিয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ) সভ্যতার ভিতর থেকে কী কী উঠে আসে?
উত্তর : সভ্যতার ভিতর থেকে উঠে আসে হলাহল ও সুধা।
প্রশ্ন ) খেয়া’ কবিতায় দুটি গ্রাম কো ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে?
উত্তর : ‘খেয়া কবিতায় দু-পারের দুটি গ্রাম জীবন ও মৃত্যুর ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে।
প্রশ্ন ) ‘চিরদিন খেয়া চলে’ বলতে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর। চিরদিন খেয়া চলাচলের মধ্য দিয়ে কবি আবহমানকাল ধরে জীবনপ্রবাহ বয়ে চলাকে বােঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন ) দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের ছায়া কোথায়, কেন পড়ে?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত পৃথিবীর বুকে ছায়া ফেলে। .
প্রশ্ন ) ‘খেয়া’ কবিতায় কোন্ জীবনের কথা ফুটে উঠেছে ?
উত্তর : ‘খেয়া কবিতায় বৃহৎ অখণ্ড জীবনের কথা ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন ) খেয়া’ কবিতায় কোন রুপক অর্থাটি প্রকাশ পয়েছে ?
উত্তর : জন্মের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসা এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘরে চলে যাওয়া—এই রূপকাৰ্থটি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ) পৃথিবীৱ দ্বন্দ্ব সংঘাত কাকে স্পর্শ করতে পারে না?
উত্তর : নিস্তরঙ্গ গ্রাম জীবনকে পৃথিবীর দ্বন্দ্ব-সংঘাত স্পর্শ করতে পারে না।
প্রশ্ন ) ‘খেয়া’ কবিতায় কবির মনে কোন ভাবনা নিহিত আছে?
উত্তর ; দার্শনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খেয়া কবিতায় জন্মমৃত্যুর অনন্ত জাতিময়তার ভাবনা নিহিত আছে।
প্রশ্ন.) ‘খেয়া’ কবিতায় রাষ্ট্রশক্তি সম্পর্কে কবির মনােভাব কেমন?
উত্তর : সভ্যতার গতিকে রাষ্ট্রশক্তির রক্তচক্ষু থামিয়ে দিতে পারে । সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে জীবনমৃত্যুর খেয়া পারাপার চিরকাল চলতে থাকে।
প্রশ্ন ) কীভাবে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে?
উত্তর : পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সর্বনাশকে অতিক্রম করে মানব সভ্যতায় রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।
প্রশ্ন ) চৈতালি’ কাব্যের কবিতাগুলিৱ আজ্জিাক গত বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত শিরােনামহীন এই কবিতাগুলি সনেট বা চতুর্দশপদী জাতীয় কবিতা।
২) নীচের প্রশ্নগুলির প্রতিটির উত্তর কমবেশি পনেরােটি শব্দের মধ্যে লেখাে।
প্রশ্ন ২.১ ‘খেয়ানৌকা পাৱাপাৱ কৱে নদীস্রোতে ; -কার লেখা? কোন কবিতার প্রথম ছত্র?
উত্তর ; বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতার প্রথম ছত্র।
প্রশ্ন ২.২ খেয়াৱ যাত্রীরা কোথায় যায় ও কোথা থেকে আসে?
উত্তর ; নদী পার হয়ে খেয়ার যাত্রীরা কেউ ঘরে যায় কিংবা কেউ বা ঘর থেকে আসে।
খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) খেয়াৱ যাত্রীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবাধি কি করে?
উত্তর : খেয়ার যাত্রীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নদী পারাপারের মাধ্যমে আনাগোনা করে।
প্রশ্ন ) নদীস্রোতে এই খেয়া কত দিনের?
উত্তর: নদীস্রোতে এই খেয়া চিরদিনের, যতদিন মানুষ . থাকবে—থাকবে তার জীবনধারা।
প্রশ্ন ) পৃথিবীতে কীভাবে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে উঠছে ?
উত্তর : পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব ও কত সর্বনাশের ঘটনা ঘটছে এবং সেগুলি নতুন নতুন ইতিহাস গড়ছে।
প্রশ্ন ) কীভাবে কত সােনার মুকুট ফুটছে আর টুটছে?
উত্তর: রাজত্ব অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যে রক্তপ্রবাহ ছুটছে, তাতে কেউ হচ্ছে রাজা, কারও বা টুটছে রাজশক্তি।
প্রশ্ন )এখনে নদী তীৱেৱ দুটি গ্রাম কী করছে?
উত্তর : এখানে নদীর দুই তীরের দুটি গ্রাম পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রশ্ন ) সভ্যতাৱ নৱ নৱ তৃয়া ও ক্ষুধার ফলে কী হচ্ছে ?
উত্তর: সভ্যতার নব নব তৃয়া ও ক্ষুধার ফলে উঠছে হলাহল কিংবা সুধা।
প্রশ্ন ) ‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে-’-কারি এ কথা কেন বলছেন?
উত্তর : যতদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে ততদিন খেয়াও চলবে নদীস্রোতের মতাে।
প্রশ্ন ) ‘কেবা জানে নাম,-কী অর্থে এ কথা ব্যবহার করা হয়েছে ?
উত্তর : নদীর দুই তীরের দুটি গ্রাম একে অপরের নাম না জানলেও তারা চেয়ে থাকে এ ওর দিকে।
প্রশ্ন ) খেয়া বলতে কবি এখানে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : খেয়া বলতে কবি জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যবর্তী জীবনপ্রবাহকে বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন ) কোথায় খেয়ানৌকা পাৱাপাৱ কৱে?
উত্তর : নদীর খেয়াঘাটে খেয়ানৌকা নদীর স্রোতে খেয়া পারাপার করে।
প্রশ্নঃ ‘সােনার মুকুট’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘সােনার মুকুট’ বলতে কবি রাজশক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রনায়কে শিরস্ত্রাণের প্রতীককে বুঝিয়েছেন।