শিক্ষার সার্কাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা
শিক্ষার সার্কাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা
শিক্ষার সার্কাস
–আইয়াপ্পা পানিকর
শিক্ষা সার্কাস কবিতার বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার বিষয়বস্তু
প্রথাগত শিক্ষা হল এক শ্রেণি থেকে আর এক শ্রেণিতে ওঠার একটি সিঁড়ি মাত্র প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয়, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয়, তৃতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি—এই শিক্ষাব্যবস্থায় সাফল্য মানে শুধুই শ্রেণি পালটে উপরের শ্রেণিতে উঠে যাওয়া। শিক্ষা তাই মানুষকে চেতনাসমৃদ্ধ করে তােলা বা তার মনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটানাের বদলে পরিণত হয় নিছকই এক সার্কাসে৷ তা যেন এক মজাদার খেলা, যা আমাদের শুধুই পরের শ্রেণিতে পৌঁছে যেতে সাহায্য করে। পুথিসর্বস্ব এবং পরের শ্রেণিতে ওঠাকে একমাত্র লক্ষ্য করে পরিচালিত এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে না। ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
অথবা, আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে “শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবির অনাস্থার কারণ কী?
অথবা, বর্তমান জীবনে প্রকৃত শিক্ষার দৈন্য কীভাবে ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তা লেখাে।
অথবা, ভারতবর্ষের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করাে।
উত্তর
রবীন্দ্রনাথ তার শিক্ষার হেরফের রচনায় লিখেছিলেন—“আমরা বাল্য হইতে কৈশাের এবং কৈশাের হইতে যৌবনে প্রবেশ করি কেবল কতকগুলাে কথার বােঝা টানিয়া। সরস্বতীর সাম্রাজ্যে কেবলমাত্র মজুরি করিয়া মরিচ পৃষ্ঠের মেরুদন্ড বাঁকিয়া যায় এবং মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ হয় না।”
আইয়াপ্পা পানির তার শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় শিক্ষাব্যবস্থার এই অন্তঃসারশূন্যতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। আমাদের প্রচলিত পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে উত্তরণের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পায়। এমনকি বৃহত্তর জীবনেও এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। মানুষ তার ব্যক্তিগত সাফল্যের চূড়ান্ত নিরিখ খুঁজে পায় এই পরীক্ষায় সাফল্যের মধ্যেই। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা হল জ্ঞানের সমৃদ্ধি | কিন্তু বিস্ময়কর হল, আমাদের দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞান সম্পূর্ণ সংযােগহীন হয়ে উঠেছে।
শ্রেণিগত উত্তরণ আর পরীক্ষার শৃঙ্খলে বাঁধা এই শিক্ষা যেন শুধুমাত্র সার্কাসের সঙ্গেই তুলনীয়। স্কুল কলেজে প্রদত্ত এই বাঁধাধরা শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাই কখনােই সুশিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযােগ পায় ৷ এই ধরনের শিক্ষায় তাদের মনের কোনােরূপ সন্তোষ বিধান না হওয়ায় কালক্রমে একটি গােটা জাতিরই জীবনীশক্তি হ্রাস পেয়ে যায়। শিক্ষার্থী তথা জাতির এই মানসিক অপমৃত্যু সম্বন্ধে সবাইকে সজাগ করে দিতেই পানিকর এই কবিতাটি রচনা করেছেন।
প্রশ্ন) ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবির যে মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখাে। অথবা, ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কবির যে হতাশা ব্যক্ত হয়েছে, তা লেখাে।
উত্তর
আইয়াপ্পা পানিকর শিক্ষাক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আদর্শের তীব্র বিরােধিতা করেছেন তার বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং লেখায়। তার সেই আদর্শের সুর ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাতে বেশ স্পষ্টভাবে শােনা যায়। আমাদের দেশে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার মূল কথাই ছিল চাকুরে তৈরি করা এবং তার জন্য যে-কোনাে প্রকারেই পরীক্ষায় পাস করা| এর জন্য এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে ওঠাই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। শিক্ষা এইভাবে শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের বদলে যেভাবে শুধুই পরীক্ষা পাসের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তাকেই তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গ করেছেন কবি আইয়াপ্লা পানিকর তার শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায়। যেভাবে সার্কাসে ট্রাপিজের খেলায় একটা দড়ি ছেড়ে আর একটা দড়ি ধরে দক্ষ খেলােয়াড়—ঠিক সেভাবেই এক শ্রেণি থেকে আর-এক শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই শিক্ষার সার্থকতা খোঁজে এদেশের শিক্ষার্থীরা।
তাই শিক্ষা কবির কাছে ‘সার্কাস’ বলে মনে হয়েছে, যার সাহায্যে শুধুই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞানের সংযােগহীনতার কারণে পাণ্ডিত্য, উদ্ভাবনীশক্তি বা ধারণাশক্তি—কোনােটারই যথাযথ বিকাশ ঘটে না| এর ফলে ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী তথা একটি সমগ্র জাতির মানসিক অপমৃত্যু। সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে তাই কবির ‘ধোঁকা’ বলে মনে হয়েছে। এইভাবে গদ্যকবিতার সরলসােজা লেখনভঙ্গির সাহায্যে কবি সমাজসংকটের গভীরে আলাে ফেলতে চেয়েছেন।
প্রশ্নঃ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি শিক্ষাকে কেন সার্কাস’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি আইয়াপ্পা পানিকরের শিক্ষাবিষয়ক ভাবনার একটি কাব্যিক উপস্থাপনা। কবি লক্ষ করেছেন, এদেশে শিক্ষা যেন এক অন্তঃসারশূন্য
ব্যবস্থার অর্থহীন অনুশীলন। যেভাবে সার্কাসে ট্রাপিজের খেলায় একটা গণ ছেড়ে আর একটা দড়ি ধরে দক্ষ খেলােয়াড়, ঠিক সেভাবেই এক শ্রেণি। আর-এক শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই শিক্ষার সার্থকতা খুঁজে পায় শিক্ষার্থীরা। এবার পরীক্ষায় পাস করাটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে জান দ্বারা সমৃদ্ধ করার বদলে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠাই সেখানে প্রধান সহ হিসেবে ধরা হয়। শিক্ষা এখানে ব্যক্তিজীবনের বিকাশের বাহক নয়, ব্যাক আত্মসুখের প্রক্রিয়ামাত্র।
যেভাবে পরীক্ষায় পাসের মাধ্যমে, এক শ্রেণি পরের শ্রেণিতে উত্তরণের মাধ্যমে শিক্ষার সার্থকতা খোঁজার চেষ্টা করা হয় তাকে কবি কিছুতেই মন থেকে মানতে পারেননি| গােটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই এ কাছে তাই সারবত্তাহীন এক মজাদার উপস্থাপনা বলে মনে হয়েছে। রুশে প্রকৃতির থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিলেন—“Go to the nature” | কিন্তু আমাদের যান্ত্রিক শিক্ষাপদ্ধতি শুধুই শিক্ষার্থীকে যন্ত্র বানিয়ে তােলে। শিক্ষার্থী প্রকৃত মানসিক বিকাশ এখানে হয় না। সে কারণেই কবি পানিকর শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন তার শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায়।
প্রশ্নঃ শিক্ষা অর সার্কাস কতখানি তুল্যমূল্য—আলোচনা করাে। অথবা, শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি শিক্ষাকে সার্কাসের সাথে তুলনা করেছেন কেন তা কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর
বিশিষ্ট মালয়ালম্ কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা শিক্ষার সার্কাস’ নামক কবিতায় কবি শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সার্কাস’ হল এমন একটি বিনােদন যেখানে বিভিন্ন কৌশল ও কেরামতি দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়া হয়। সার্কাসে ট্রাপিজের খেলায় কুশলী খেলােয়াড় এক দড়ি থেকে আর-এক দড়িকে অবলম্বন করে শূন্যে ভেসে থাকার অদ্ভুত দক্ষতা দেখায়।
বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাগ্রহণও এইরকমই এক ভেলকি দেখানাের খেলায় পরিণত হয়েছে। শিশু তার প্রথম শিক্ষাগ্রহণের পর থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় করে শ্রেণি পরিবর্তন করে। এই শ্রেণি পরিবর্তনে তার নিজস্ব কোনাে তালি। নেই। এটা তার কাছে কেবল একঘেয়ে একটি বিষয়। নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে, শিক্ষক-অভিভাবকদের চোখ রাঙানির ভয়ে তারা পড়া মুখ করে একের পর এক শ্রেণি পাস করে। কিন্তু এতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব ব্যক্তি বা ‘মনন’-এর কোনাে বিকাশ ঘটে না।
এই শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থী কেবল জানতে শেখে বা জ্ঞান সঞ্চয় করে। কিন্তু তাকে নিজের জীবনের সঙ্গে অঙ্গীভূত করতে শেখে না। তাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের অভাব থাকায় শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ কিছুতেই সেখানে সম্প হয় না। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে তখন কেবল একটা যন্ত্রে পরিণত হয় এবং খুব সহজেই কৃত্রিম ধাঁচে নিজেকে গড়ে তােলে। পরবর্তীকালে সে তার পূবে শিক্ষা ভুলে যায়। এইভাবেই দেশে মেধা ও মননের মূল ঘটে এবং প্রতি মানুষ তার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে যন্ত্রে পরিণত হয়। এ দেশের এবং অগ্রগতি ও উন্নতি বাধা পায়।
শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ “যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়, আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।”— সব শ্রেণি শেষ হয়ে পরের শ্রেণি’-তে যাওয়া বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? অথবা, “যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায় আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।”—পক্তি দুটির ব্যঞ্জনার্থ ব্যাখ্যা করাে।
অথবা, “আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।”—পঙক্তিটির মধ্যে কবির যে ভাবনার প্রতিফলন লক্ষ করা যায় তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর
আইয়াপ্পা পানিকরের ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোধৃত অংশে ‘সব শ্রেণি’ বলতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিসমূহকে বােঝানাে হয়েছে। পরীক্ষায় সাফল্য শিক্ষার্থীকে প্রথম থেকে দ্বিতীয়, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় কিংবা তারও গরে—পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে পৌঁছে দেয়। একসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হয় কিন্তু উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রেও থেকে যায় এই এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তরণ পর্ব। এমনকি এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে মানুষের শিক্ষাবহির্ভূত বা শিক্ষা-পরবর্তী জীবনেও। এভাবেই এক নিরন্তর প্রতিযােগিতার মধ্য দিয়ে পার্থিব সাফল্যের সন্ধান করে মানুষ। জ্ঞান এবং চেতনাহীন মানুষ আত্মসুখের বাসনা চরিতার্থ করার মধ্যেই তখন সাফল্যের পথ খুঁজে যায়।
সব শ্রেণি’ শেষ হয়ে গেলেও ‘পরের শ্রেণি’-তে যাওয়ার কথা বলে কবি আসলে অন্তহীন সাফল্যের পথ-সন্ধানকেই এখানে বােঝাতে চেয়েছেন। তিনি আরও বােঝাতে চেয়েছেন যে, পরীক্ষায় পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া মােটেও এক জিনিস নয়। তাই আমাদের দেশের ছেলেরা শিক্ষাশেষে ‘শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে’। (বই পড়া’—প্রমথ চৌধুরি)। এই কলে ছাঁটা শিক্ষার ফলে কিছুতেই শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ সম্পূর্ণ হতে পারে না, তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি বা গুণ কোনােমতেই প্রকাশিত হতে পারে না।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার প্রশ্ন
প্রশ্ন: “সব শিক্ষা একটি সার্কাস”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। অথবা, শিক্ষা কিভাবে সার্কাস হয়ে উঠতে পারে ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি অবলম্বনে লেখাে। অথবা, “সব শিক্ষা একটি সার্কাস”—শিক্ষার সার্কাস কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের সঙ্গে কীভাবে তুলনীয় আলােচনা করাে।
উত্তর।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় প্রশ্নোধৃত মন্তব্যটির বক্তা কবি আইয়াপ্লা পানিকর স্বয়ং। মানুষের জীবন সবসময়ই শ্রেণিবদ্ধ| সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাহিদা এবং লক্ষ্যপূরণের প্রয়ােজনে নিরন্তর এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার পথ খুঁজে চলে মানুষ। শিক্ষাক্ষেত্রে এর বিপুল অনুশীলন লক্ষ করা যায়। কিন্তু পরীক্ষায় সাফল্যই জীবনে প্রধানতম হয়ে ওঠায় জ্ঞানের অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই শিক্ষার্থীর মন থেকে হারিয়ে যায়। মানুষ দ্রুত যান্ত্রিক এবং আত্মসুখ-সর্বস্ব হয়ে পড়ে। শিক্ষাহীন এই শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি। সার্কাসের ট্রাপিজের খেলায় যেমন খেলােয়াড় একটা দড়ি বা বার থেকে শারীরিক কসরত দেখিয়ে আর-একটিতে চলে যান, শিক্ষার ক্ষেত্রে এক শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পরের শ্রেণিতে যাওয়া তেমনই একটা বাহ্যিক চলনমাত্র।
এর সঙ্গে জ্ঞানার্জনের কোনাে সম্পর্ক নেই। সার্কাসে যেমন কখনাে কখনাে মুহূর্তের বিচ্যুতি মানে নিশ্চিত পতন, প্রচলিত পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাতেও তেমনই একটি পরীক্ষায় সাফল্য না পেলে জীবনই যেন নিরর্থক হয়ে যায়। পাসের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের তথ্যকে গলাধঃকরণ করার চেষ্টা চলে নিরন্তর। জ্ঞানহীন, চেতনাবিমুখ এই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন কবি পানিকর তাই শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রশ্ন:-“জ্ঞান কোথায় গেল”—জ্ঞানের অভাব কবিতায় কীভাবে ধ্বনিত হয়েছে ?
উত্তর
আইয়াপ্পা পানিকরের ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটিতে প্রথাগত শিক্ষার অসারতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। শিক্ষা মানুষের বিকাশের সহায়ক, তাই বিট্যাটিকে ছােটো বয়স থেকেই বিদ্যাশিক্ষায় অভ্যস্ত করে তােলা হয়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা থেকে
শিক্ষাগ্রহণ করে বলে জ্ঞানের সঞ্চয় বা চেতনার উন্মেষ সেখানে প্রকৃত উদ্দেশ্যরূপে বিবেচিত হয় না। তাই সেই প্রায়ােজনিক শিক্ষাকে শিক্ষার্থীরা জীবনের কোনাে কাজেই আর ব্যবহার করতে পারে না। কেবল পরীক্ষায় পাস করে পরের শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই থাকে সার্থকতা। তারা নােট মুখস্থ করে অর্জিত বিদ্যাকে সঞ্চয় করে রাখে তাদের মাথার মধ্যে। এর ফলে কখনােই তাদের জ্ঞানের অর্জন হয় না। তাই কবি বলেছেন যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হল অন্তঃসারশূন্য, জ্ঞানশূন্য এবং তা এক ধরনের প্রতারণা বা ‘ ধোঁকা’ ।
জ্ঞানকে ধোঁকা-দেওয়া, শিক্ষার্থীর মানসিক অপমৃত্যু ঘটানাে এই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি কবির বিদ্রুপবর্ষিত হয়েছে এই কবিতায় | খেলা দেখাবার সময় জাদুকর যেমন আসলটাকে ঢেকে নকলটাকে প্রকাশিত করে তােলে, বর্তমানে সঠিক দিশা হারানাে শিক্ষার পরিস্থিতিও একেবারে সেইরকম।এভাবে চলার ফলে দেশের সভ্যতা হয়ে উঠেছে অন্তঃসারশূন্য যা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে বাধা |
শিক্ষার সার্কাস কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর:
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান
কমবেশি ২০টি শব্দে উত্তর দাও।
১. ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির রচয়িতা আইয়াপ্পা পানিকর।
২. ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় ‘এক-দুই-তিন…চার’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় শিক্ষার একএকটি শ্রেণি বােঝাতে ‘এক-দুই-তিন-চার ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল সংখ্যা মাত্র।
৩, “তুমি যদি এই সবগুলাে শ্রেণি পাস করাে?”—এখানে ‘সবগুলাে শ্রেণি বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় সবগুলাে শ্রেণি’ বলতে বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি শ্রেণিগুলাের কথা বলা হয়েছে।
৪. “তুমি যদি এই সবগুলাে শ্রেণি পাস করাে?”- এ প্রশ্নের উত্তর কী পাওয়া যায়? –
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় বলা হয়েছে সব শ্রেণি পাস করে গেলেও পরের শ্রেণিতে উত্তরণ করা চলতেই থাকে।
(৫. শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় সব শ্রেণির শেষ কোথায়?
উত্তর: আইয়াল্লা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় সব শ্রেণির শেষ হয় প্রথাগত শিক্ষাপদ্ধতির শেষ গন্ডিটি পেরিয়ে গেলে।
৬. “যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়”—তাহলে কী হবে?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় বলা হয়েছে। যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায় তাহলেও পরের শ্রেণিতে উত্তরণ চলতেই থাকবে।
৭. ‘তবু পরের শ্রেণিতে’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় ‘তবু পরের শ্রেণিতে’ বলতে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে কোনাে শিক্ষা, হয়তােবা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
৮, সব শ্রেণি শেষে কবি তবু পরের শ্রেণিতে যেতে চেয়েছেন কেন?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় সব শ্রেণি শেষে কবি তবু পরের শ্রেণিতে যেতে চেয়েছেন, কারণ প্রতিযােগিতায় জেতার জন্য তিনি আরও ডিগ্রি অর্জন করতে চেয়েছেন।
৯. ‘সব শিক্ষা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ রচনায় ‘সব শিক্ষা বলতে লেখাপড়ার সঙ্গে সাংস্কৃতিক শিক্ষা, কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথাও বুঝিয়েছেন কবি। :
[১০. “সব শিক্ষা একটি সাকাস”- কবি কেন এমন মনে করেন?
উত্তর: : প্রথাগত শিক্ষা শুধু এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠাকেই বােঝায় কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারে না বলেই তাকে সার্কাস বলা হয়েছে।
১১. ‘শিক্ষার সার্কাস’ রচনায় ‘সার্কাস’ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ রচনায় ‘সার্কাস’ শব্দটির অর্থ হল একধরনের প্রহসনমূলক খেলা|
শিক্ষার সার্কাস কবিতায় অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১২. “আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই”—কীভাবে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই?
উত্তর: শিক্ষা নামক ‘সার্কাস’-এর সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই।
১৩, “জ্ঞান কোথায় গেল?”—কবি জ্ঞানের প্রসঙ্গ এনেছেন কেন?
উঃ প্রথাগত শিক্ষায় প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া যায় না, এই প্রসঙ্গেই জ্ঞানের পরিণতির সন্ধান করেছেন কবি।
১৪, “জ্ঞান কোথায় গেল”—এই প্রশ্নের উত্তরে কবি কী বলেছেন?
উত্তরঃ জ্ঞান যেখানে গেল, কবির কথায়, সেটা একটা ‘ধোঁকা’ অর্থাৎ প্রথাগত শিক্ষায় জ্ঞানের সন্ধান করতে গিয়ে মানুষ প্রতাড়িত হয়।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার প্রশ্ন
১৫. “সে সেখানে গেছে”–‘সে’ কে?
উত্তর: বিখ্যাত মালায়লম্ কবি আইয়াপ্লা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় ‘সে’ বলতে জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে।
১৬. বর্তমান শিক্ষায় জ্ঞানকে ধোঁকা বলা হয়েছে কেন? অথবা, “সে যেখানে গেছে সেটা ধোঁকা|”—সেটা ধোঁকা কেন?
উঃ বর্তমান শিক্ষায় জ্ঞানকে ধোকা বলা হয়েছে কারণ বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান সঞ্চয় প্রকৃত উদ্দেশ্য না জেনে নিছক ফাকি দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এই জ্ঞান মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটাতে পারে না বলেই তা ‘ধোঁকা।
১৭, পানিকর কোন ভাষার কবি? তার একটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকর মালয়াল ভাষার কবি।
মহারাজা কথাকাল তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ।
১৮, ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি কোন ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত? উত্তর: ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতাটি আইয়াপ্পা পানিকরের Days and Nights নামক ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।
১৯, “ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির অনুবাদকের নাম কী?
উত্তর: বিখ্যাত মালায়ালম্ কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতাটির অনুবাদক উৎপলকুমার বসু।
২০. ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় ব্যবহৃত ‘তুমি’ আর ‘আমি’ কে?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ রচনায় ‘তুমি’ অর্থাৎ কবির প্রতিযােগী এবং ‘আমি’ অর্থাৎ কবির নিজের কথা বলা হয়েছে।
২১. কবি বর্তমান শিক্ষা সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর: আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি বর্তমান শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন যে, বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি কেবল পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবার একটি মাধ্যম বা সিঁড়ি মাত্র।
২২. বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির বিরােধিতা করেছেন এমন এক সাহিত্যিকের নাম লেখাে।
উত্তর: বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির বিরােধিতা করেছেন এমন একজন সাহিত্যিক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২৩. ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি কী ধরনের কবিতা?
উত্তর: বিখ্যাত মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার নামকরণ
নামকরণ যেহেতু যে-কোনাে রচনায় প্রবেশের প্রাথমিক চাবিকাঠি, তাই নামকরণের ক্ষেত্রে সাহিত্যিককে সবসময়েই আলাদা করে যত্নবান হতে হয়। আলােচ্য কবিতার ক্ষেত্রেও তার কোনাে ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় না। মালয়ালম্ কবি আইয়াপ্পা পানিকরের দিন ও রাত্রি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটিতে কবি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অসারতা সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করতে চেয়েছেন। আইয়াপ্লা পানিকরের | ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি কবির শিক্ষা সম্পর্কিত ভাবনার এক কাব্যিক প্রকাশ। আমাদের শিক্ষা হল পরীক্ষায় পাস করার এবং এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার প্রক্রিয়া মাত্র। এই একক লক্ষ্যেই সম্পূর্ণ নিয়ােজিত। থাকে শিক্ষার্থীর জীবন। অথচ এই শিক্ষাই হতে পারত আমাদের জীবনবিকাশের একমাত্র কার্যকরী শক্তি। শিক্ষাব্যবস্থার এই অবনতি, য় লক্ষ্যহীনতা কবির মনে এক তীব্র বেদনার সৃষ্টি করেছে। তার মনে হয়েছে জ্ঞানের সঙ্গে সংযােগহীন এই শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে শিক্ষার্থীর কায় ‘ধোকা মাত্র। যেভাবে সার্কাসে ট্রাপিজের খেলায় একটা দড়ি ছেড়ে দিয়ে আর একটা দড়ি ধরে দক্ষ খেলােয়াড়, ঠিক সেভাবেই এক শ্রেণি থেকে আর-এক শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই শিক্ষার সার্থকতা খোঁজে শিক্ষার্থী। তাৎপর্যেই ‘শিক্ষার সার্কাস’ নামকরণটি সার্থক হয়ে উঠেছে। এ নামকরণের মধ্যে কবির ব্যঙ্গ, ধারালাে শব্দবন্ধ তৈরির দক্ষতা যুক্ত হয় নামকরণটিকে একটি আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
শিক্ষার সার্কাস কবিতার প্রশ্ন