বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার বিষয়বস্তু:
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা
আরশি’ শব্দের অর্থ আয়না| কিন্তু লালন তার গানে ‘আরশিনগর’ বলতে মনকে বুঝিয়েছেন। কারণ, মনের মধ্যেই চারপাশের জগৎ প্রতিফলিত হয়। সেখানে কবি এক পড়শির অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছেন | এই পড়শিই হল বাউলসাধনার ঈশ্বর, যাকে তারা মনের মানুষ বলে মনে করেন। কিন্তু বাউলসাধনায় এই পড়শির সন্ধান পাওয়া বা তঁাকে লাভ করা খুব সহজ নয়। তিনি যেখানে আছেন, তার চারপাশে আছে অতি গভীর জলরাশি। কবি মানুষের জাগতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিষয়বাসনা ইত্যাদিকে এই জলরাশির প্রতীক দ্বারা বােঝাতে চেয়েছেন। সেই পড়শির কাছে যাওয়ার উপযুক্ত কোনাে তরণি বা উপায়ও আবার নেই। তার থেকেও বড়াে কথা, এই পড়শি বা আত্মতত্ত্ব-এর কোনাে স্পষ্ট চেহারা হয় না, কারণ পড়শির হাত-পাকঁধমাথা কিছুই নেই। অর্থাৎ, বাউলদের ঈশ্বর যে নিরাকার এ কথার মধ্য দিয়ে লালন তা-ই বােঝাতে চেয়েছেন। অতএব সেই ‘পড়শি’ শুধুই উপলদ্ধির জগতে অবস্থান করেন। তঁাকে কখনও বােঝা যায়, কখনও বােঝা যায় না। অথচ তঁার সন্ধান পেলেই মানুষের সব জীবনযন্ত্রণার অবসান ঘটত। কিন্তু তার সঙ্গে যে দূরত্ব তা ঘােচার নয়, কবির কথায় সে হল লক্ষ যােজনের দূরত্ব।
বড় প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্নঃ) “ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।”কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। ১ +8
উত্তরঃ
লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় আলােচ্য অংশে ‘গড়শি’ অর্থাৎ ‘মনের মানুষ’-এর কথা বলা হয়েছে।
- আরো পড়ুন বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো আন্তর্জাতিক গল্পের প্রশ্ন উত্তর এবং বিষয়বস্তু ও নামকরণ আলোচনা
কবির ‘মনের মানুষ’ নিরাকার। কিন্তু কখনাে কখনাে বস্তুজগতকে আশ্রয় করেই তার প্রকাশ ঘটে। ক্ষণেক ভাসে নীরে’ কথাটির দ্বারা নিরাকার পরমের কখনাে কখনাে এই সাকাররূপে প্রকাশের কথাই বােঝানাে হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর’ কথাটির দ্বারা ঈশ্বরের যে সহজ নিরাকার সাধারণ অবস্থা তাকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। লালন বাউলসাধক হিসেবে সারাজীবন তঁার ‘মনের মানুষ’-এর সন্ধান করেছেন। তার জন্যই তিনি আত্মানুসন্ধান করেছেন। কিন্তু এই পথে ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া খুব সহজসাধ্য নয়—“এই মানুষে সেই মানুষ আছে।/কত যােগী ঋষি চারযুগ ধরে রে/তারে বেড়াচ্ছে খুঁজে৷” পথের সন্ধান পাওয়া কঠিন হলেও বাউলসাধকের ‘মনের মানুষ’-এর খোঁজ চলতেই থাকে। জাগতিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য, আত্মার শুদ্ধতার জন্য এই সন্ধান| আর এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই কবির কাছে ঈশ্বর নানাভাবে উপলব্ধ হন। মনের মানুষ’কে তিনি কোনােদিনও দেখতে পান না, কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তার সন্ধানের চেষ্টা থেকেই কবির উপলব্ধি হয় যে তার ঈশ্বর নিরাকার হলেও কখনও সাকাররূপেও অর্থাৎ বস্তুজগতকে আশ্রয় করেও তার প্রকাশ ঘটে।
প্রশ্নঃ) “পড়শি যদি আমায় ছুঁত/ আমার যম-যাতনা সকল যেত দূরে।”—পড়শি’ কে? তাকে ছুঁলে কীভাবে ‘যম-যাতনা’ চলে যেত ? ১+8
উত্তর:
লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় ‘পড়শি’ বলতে পরমাত্মা বা ঈশ্বরের কথা বলেছেন। তিনি নিরাকার। আত্মতত্ত্বের সন্ধানের মাধ্যমে এই ‘মনের মানুষ’ বা ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া যায়।
বাউলসাধনার যাবতীয় সন্ধান এই ঈশ্বর বা ‘মনের মানুষ’-কে পাওয়ার জন্য। নিরাকার সেই পরমের সন্ধানেই মানুষ শুদ্ধ হয়। কিন্তু তার সন্ধানও সহজলভ্য নয়। তাকে দেখার ইচ্ছা হয়, কিন্তু পথ পাওয়া যায় না। স্বার্থপরতা আর বিষয়ভাবনা সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়া সীমাহীন পার্থিববাসনা সেই পথের অন্যতম বাধা| আবার এই বিষয়যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথও কিন্তু সেই ‘মনের নানুস’ বা ঈশ্বরের সাধনাই | এই বিষয়বাসনা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই *প্তরের উদ্দেশে আমাদের সাধনাকে পরিচালিত করে|কবি উপলব্ধি করেন এক হারাবার থেকেও ঈশ্বরের সঙ্গে তার লক্ষযােজন দূরত্ব রয়ে গেছে। ফলে ববি রাতে ‘ণে মনের মানুষ’ এর সন্ধানের জন্য বিষয়বাসনা থেকে ব্লার তীব্র আকাসা প্রকাশ করেছেন|প্রকৃতপক্ষে, লালন ফকির আলােচ্য পণ্ডিটিতে আমোল প্রকাশ করে বলেছেন যে, আরশিনগরে থাকা সেই ‘পড়শি’ অর্থাৎ ‘মনের মানুষ’ এর সন্ধান যদি পাওয়া যেত, একমাত্র তা হলো ‘যম-যাতনা’ অর্থাৎ বিষযগৰাপার্থিবদুঃখ-শেকি থেকে মুক্তি পেতেন তিনি।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) “আমার যম-যাতনা যেত দূরে।”—যম-যাতনা’কী? বক্তার ‘যম-যাতনা কীভাবে দূরে যাবে ? অথবা, যম-যাতনা কী? তা কীভাবে দূর হবে কবিতা ২+ ৩ অবলম্বনে লেখাে।
উত্তর
যম-যাতনা বলতে কবি এখানে বিষয়বাসনায় নিমজ্জিত থাকার জীবনযন্ত্রণাকে বুঝিয়েছেন। লালন ফকির তার সাধনার মধ্য দিয়ে মানবমনের অন্তর-আত্মাকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তার মতে প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে মনের মানুষ’ বা ‘অধর মানুষ’-এর অবস্থান। আর যে এই মনের মানুযের সন্ধান পেয়েছে সেই প্রকৃত ঈশ্বরকে লাভ করতে পেরেছে। অহং হিংসা, দ্বেষ, লােভ-লালসা, বিষয়বাসনা ও ‘আমিত্ব’-কে বর্জন করলে তবেই এই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যা মানবজীবনকে মানবতার শীর্যে উন্নীত করে পরম আনন্দ দান করে। তখন কোনাে পার্থিব সুখ-দুঃখই তাকে আর ছুঁতে পারে না। তার আত্মা তখন স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থানে বিরাজ করে।
ঈশ্বর নিরাকার এবং তিনিই পরম, তাই তাকে চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এই ঈশ্বরের বাস মানুষের মনেই আর তাই তিনি প্রতিটি মানুষের একান্ত পড়শি। তবু সাংসারিক বা সামাজিক বন্ধন এবং মােহ তার চোখে এমনই আবরণ করে রাখে যে সে তার নিজের মনের মানুষকেই চিনতে পারে না। লেখক এখানে ‘যমযাতনা’ বলতে মানুষের জীবনে উপস্থিত পার্থিব সাংসারিক জ্বালাযন্ত্রণার | কথা বলেছেন| এই যম যাতনা দূর হতে পারে যদি পার্থিব জগৎকে অর্থাৎ | পার্থিব সুখ-দুঃখও বিষয় যন্ত্রণাকে দূরে ফেলে মানুষ আত্মশুদ্ধিতে মনােনিয়ােগ করতে পারে|তখনই স্বর্গসুখ বা ঈশ্বরসুখ অনুভূত হয়। পরিবেশের যে-কোনাে বাধা ও দুঃখকষ্টকে দূর করে অভিষ্ট লক্ষ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ) “সে আর লালন একখানে রয়/তবু লক্ষ যােজন ফাক রে।”—একখানে থাকার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ
বাড়ির কাছে আরশিনগর’ লালনের এই কবিতার বা বাউল গানের প্রশ্নোধৃত অংশে লালন তঁার আরশিনগরের পড়শির কথা, অর্থাৎ নিরাকার ঈশ্বরের কথা বলেছেন। গানে লালন যে আরশিনগরের ‘পড়শির কথা বলেছেন তা আসলে তার মনের মানুষ’ বা ঈশ্বর, মানুষের মনের মধ্যেই যার অবস্থান। এই ‘মনের মানুষ একদিকে যেমন মানুষের মনের শুদ্ধরূপ হিসেবে অবস্থান করেন, অন্যদিকে আবার তিনিই পরম নিরাকার—“যাঁরে আকাশ পাতাল খোজ এই দেহে তিনি রয়। যেহেতু বাইরের পৃথিবীতে নয়, গরম ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া যায় মনের মধ্যেই, তাই লালন সাধক ও ঈশ্বরের একত্রে থাকার কথা বলেছেন। আসলে বাউলসাধকরা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের দেহই হল এই বিশ্বব্রহ্যান্ডের ক্ষুদ্র রূপ এবং এই দেহ-আধারেই ঈশ্বরের প্রকৃত অধিষ্ঠান। আত্মারূপী ঈশ্বর তাে মানবদেহেই বিরাজ করেন। তাই লালন বলেছেন, তার এবং তার মনের মানুষ’ বা পড়শি আদতে ‘একখানে রয়’। একসঙ্গে থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কখনােই সাক্ষাৎ হয় না। মানুষের বিষয়চেতনা বা লােভ-লালসা প্রায় রিকালই তাদের মধ্যে লক্ষ যোজন দূরত্ব তৈরি করে রাখে।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ) “আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি”বক্তা কাকে দেখতে চান? কীভাবে তাঁর দর্শন পাওয়া যাবে? ১+8
উত্তরঃ
লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় তার মনের মানুষ’ অর্থাৎ ‘পড়শি’-কে দেখতে চেয়েছেন।
কবি একজন বাউলসাধক হিসেবে জানেন ঈশ্বর রয়েছেন মনের ভিতরে। ‘মনের মানুষ হিসেবেই তার উপস্থিতি। কিন্তু বিষয়বাসনায় কাতর মানুষের পক্ষে তার সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ কথা নয়। কোনাে মন্ত্র-তন্ত্র, সাধনপদ্ধতি নয়, শুধু আত্মােপলদ্ধির সাহায্যেই ‘মনের মানুষ’, যাঁকে কবি ‘পড়শি’ বলে উল্লেখ করেছেন তার দেখা পাওয়া যেতে পারে বলে কবি মনে করেছেন। তার সাক্ষাৎ পেলে পার্থিব জীবনের সব দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে কবির মুক্তি ঘটবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়ােজন বিষয়াসক্তিকে সম্পূর্ণ দূর করে শুদ্ধস্বভাবের অধিকারী হওয়া। “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”—এই পানি’ অর্থাৎ বিষয়বাসনাকে অতিক্রম করলেই ‘মনের মানুষ’ বা ‘পড়শি’র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। লােভ-মােহ, কামনা বাসনা আমাদের মনকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে পারলেই চিত্তশুদ্ধি ঘটা সম্ভব। আর চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই মনের ভিতরে থাকা অধর মানুষ’ বা পড়শির দেখা পাওয়া সম্ভব হয়। নিরাকার ঈশ্বর পরমভক্তের শুদ্ধ চেতনার মধ্য দিয়েই তার কাছে ধরা দেন।
প্রশ্ন:) বাড়ির কাছে আরশিনগর’কবিতায় রূপকের আড়ালে কবির যে ধর্ম ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে লেখাে।
লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতা বা বাউল গানটিতে রূপকের মাধ্যমে আত্মতত্ত্বের অনুসন্ধান করেছেন। আরশিনগর’ হল প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে থাকা এক শুদ্ধ মন। প্রত্যেক মানুষের এই যুদ্ধ মনের মধ্যেই অবস্থান করেন আরশিনগরে বাস করা পড়শি। ইনিই হলেন সেই ঈশ্বর বা ‘মনের মানুষ’, যাকে বহু সন্ধানেও পাওয়া সহজ নয়। তাকে পেতে গেলে বস্তুজগতের মােহ থেকে মুক্ত হতে হবে। কিন্তু আমাদের মনের চারপাশে ঘিরে আছে ‘অগাধ পানি’ অর্থাৎ বিষয়বাসনা এবং লােভ-লালসা | এমন কোনাে তরণী’ অর্থাৎ মন্ত্রতন্ত্র, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি নেই যা ‘মনের মানুষ’ বা পড়শির কাছে সাধককে সহজে পৌঁছে দিতে পারে।
লালনের ‘পড়শি নিরাকার—“ও তার হস্ত-পদ স্কন্ধ-মাথা, নাই রে”। তিনি কখনও শূন্যকে আশ্রয় করে থাকেন, কখনও আবার বস্তুজগৎকে আশ্রয় করে তার প্রকাশ ঘটে। তাই আপনারে আপনি চিনিলে’ অর্থাৎ আত্মতত্ত্ব জানলেই শুধু তার দেখা পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু বিষয়বাসনার মােহজালে আটকে থাকা মানুষ কিছুতেই তঁার ‘মনের মানুষ’-এর সাক্ষাৎ পায় না। একত্রে অবস্থান করা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে থাকে লক্ষ যােজন দূরত্ব। ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করতে পারার যে বিষণ্ণতা এই কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তা আসলে আত্মতত্ত্ব সন্ধানী প্রতিটি মানুষেরই পরিচিত বিষণ্ণতা।
প্রশ্নঃ) ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।
উত্তরঃ
বাউলদের ধর্মসাধনা একেবারে দেহকেন্দ্রিক—“যা আছে ব্রম্মান্ডে, তাই আছে দেহভাণ্ডে।” বাউলসাধকরা তাই দেহের মধ্যেই ‘সহজ মানুষ’-এর অস্তিত্বকে স্বীকার করেন। এই সহজ মানুষই হলেন পরমপুরুষ বা ঈশ্বর। লালনের গানে কখনও এই মানবদেহ হয়েছে ‘ঘর’, কখনও আবার ‘খাঁচা’। আলােচ্য গানে মানবমনকে ‘আরশিনগর’রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই আরশিনগরের ‘পড়শিই হল বাউল সাধকের মনের মানুষ’ বা ঈশ্বর। তাঁর সন্ধান আসলে নিজেকে জানার বা আত্মতত্ত্বকে জানার আকুলতা। অথচ মানুষের তীব্র বিষয়বাসনাই তার পরম পড়শির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বা মিলতে দেয় না|
যেহেতু ‘মনের মানুষ’ দেহের ভিতরেই থাকেন, তাই তার আলাদা কোনাে আকার বা অস্তিত্ব নেই—“ও তার হস্ত-পদ স্কন্ধ-মাথা নাইরে”। বিশুদ্ধ মানবাত্মা যেহেতু নিরাকার, তাই তার কোনাে হাত, পা, কঁাধ বা মাথা নেই। বিষয় যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, আত্মশুদ্ধি বা নিজেকে শুদ্ধ রূপে পাওয়ার জন্য এই ‘মনের মানুষ’-এর স্পর্শ বা সান্নিধ্য পাওয়া অত্যন্ত প্রয়ােজন। কিন্তু যেহেতু ‘গ্রাম বেড়িয়ে রয়েছে ‘অগাধ পানি’, তাই ‘মনের মানুষ’ বা ‘অলখ সাঁই’ বা ‘পড়শি হয়তাে চিরকাল অধরাই থেকে যাবেন, কিন্তু তার সন্ধানই হল ‘সাধনা। প্রকৃতপক্ষে এই আত্মানুসন্ধানের বা নিজের ভিতরে ঈশ্বরকে সন্ধানের কাহিনিই হল বাউল সংগীত।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার ছোট প্রশ্ন প্রথম পাঠ:
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
কমবেশি ২০টি শব্দে উত্তর দাও।
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান
১, বাউলসাধনার মূল তত্ব কী?
উঃ বাউলসাধনার মূল তত্ত্ব হল জ্ঞানের পথ বা প্রাতিষ্ঠানিক সাধনার পথ। ত্যাগ করে মনের সাধনায় আত্মদর্শনের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ করা।
২ লালন ফকির কে ছিলেন?
উত্তরঃ লালন ফকির মূলত একজন বাউলসাধক ছিলেন। ধর্ম, বর্ণের উধের্ব। উঠে তিনি মানবাত্মার অনুসন্ধানের কথা বলে গেছেন।
৩, “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”-‘আমি’ ও ‘তারে’ বলতে কাদের।
উঃ এখানে ‘আমি’ বলতে কবি লালন ফকিরকে আর ‘তারে’ বলতে। আরশিনগরে বাস করা ‘পড়শি’-কে বােঝানাে হয়েছে।
৪. কবি একদিনের জন্যও কাকে দেখতে পাননি?
উত্তর: কবি লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় আক্ষেপ করে বলেছেন তিনি একদিনের জন্যও তার পড়শি ‘মনের মানুষকে দেখতে পান নি।
৫. “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”-বক্তা ‘তারে’ একদিনও দেখতে পাননি কেন?
অথবা,“আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”-লালনের আক্ষেপের কারণ কী?
উত্তর: বক্তা তারে’ একদিনও দেখতে পাননি কারণ তঁার সীমাহীন বিষয়বাসনার কোনাে কিনারা নেই। এ ছাড়া তার পরশি নিরাকার তাই বক্তা তাকে দেখতে পাননি।
৬. “বাড়ির কাছে আরশিনগর”—বাড়ি’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: বাড়ির কাছে আরশিনগর’ ‘বাড়ি’ বলতে দেহভাণ্ডকে বােঝানাে হয়েছে।
৭. ‘আরশিনগর’ কাকে বলে?
উত্তর: ‘আরশিনগর’ বলতে কবি মনকে বুঝিয়েছেন।
৮. লালন তাঁর গানে পড়শি’ বলেছেন কাকে? অথবা, “ও এক পড়শি বসত করে”—পড়শি কে?
উত্তর: পড়শি’ শব্দটি প্রতিবেশী’ শব্দের কথ্য রূপ লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় লালন ‘পড়শি’ বলতে অন্তরাত্মাকে বুঝিয়েছেন। যাকে ঈশ্বর কিংবা বাউলদের ভাষায় ‘মনের মানুষ’ বলা যেতে পারে।
৯, “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”—এখানে কোন্ গ্রামের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘ব্যড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় গ্রাম বলতে দেহভাণ্ডের কথা বলা হয়েছে।
১০, আরশিনগরকে বেষ্টন করে থাকা তাগাধ পানি’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ নামক কবিতা বা বাউল গানে আরশিনগরকে বেষ্টন করে থাকা ‘অগাধ পানি বলতে আসলে মানুষের বিষয়ভাবনা ও সাংসারিক আসক্তির কথা বলা হয়েছে।
১১. গ্রাম বেরিয়ে অগাধ পানি– অর্থ বুঝিয়ে দাও
উত্তর: গ্রাম’ কথাটি দেহ ভন্ড এবং অগাধ পানি কথাটি বিষয়-বাসনা অর্থে ব্যবহার করে কবি বলেছেন সীমাহীন বিষয়-বাসনা দেহকে ঘিরে আছে।
১২, “ও তার নাই কিনারা তরণী পারে—’—এ কথার অর্থ কী?
উত্তর: প্রশ্নের মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ হল ‘অগাধ পানি’ রূপ মানুষের সে। বিষয়বাসনা, তার কোনাে সীমা নেই এবং তাকে অতিক্রমের কোনো ‘তরুণী বা অবলম্বন নেই।
১৩, “ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে—’—এখানে তরণী কথাটির আক্ষরিক অর্থ ও রূপকার ও কি কি’ ?
উত্তর: ‘তরণী’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ নৌকা এবং কবিতায় এর রূপক হওয়ার অবলম্বন।
১৪. “ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে—কিনারা থাকার তাৎপর্য কী?
উত্তর: মানুযের বিষয়বাসনা সীমাহীন। তাই এর কোনাে কিনারা নেই ।
১৫. লালনের মনের মানুষ কি ছিল ?বাস্যু
উত্তরঃ লালনের মনের ‘ বাঞ্ছা ছিল আরশিনগর’-এ বাস করা এবং তার পড়শিকে দেখা।
১৬. কবি এই অগাধ পানি পার করতে পারছেন না কেন?
উত্তর: কবি এই অগাধ পানি পার করতে পারছেন না কারণ পার কর মাধ্যম ও পন্থা কবির জানা নেই।
১৭. “আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।”—বকা সে গায়ে যেতে পারছেন না কেন? অথবা, “আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।”—কার, কেন এমন সংশয়?
উত্তর: অগাধ পানি গ্রামকে ঘিরে থাকায় এবং পার হওয়ার জন্য কোনাে নৌকাও না থাকায় বক্তা সে গ্রামে যেতে পারেননি।
১৮. “আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।”—এই গ্রামে গেলে বক্তার কী লাভ হত।
উত্তর: এই গ্রামে গেলে বক্তা তার মনের মানুষ’ বা ‘পড়শির সঙ্গে মিলতে পারতেন।
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার ছোট প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয় পাঠ:
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১
1 “বলব কি সেই পড়ার কথা –পশির কোন কথা কবি বলতে চেয়েছেন? অথবা, ও তার হস্তগ–মাথা নাই রাে!” –অংশটির মধ্য দিয়ে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তর। পশি’র হাত-পা – কাঁধ- মাথা নেই অর্থাৎ তিনি যে নিরাকার একথাই কবি বলতে চেয়েছেন।
২. পড়শিকে দেখতে কেমন?
উত্তর: কবির পড়শি দেখতে নিরাকার, তার হাত, পা, কঁাধ, মাথা কিছুই নেই।
৩. কবির মনের মানুষের হাত-পা-মাথা নেই কেন?
উত্তরঃ কবির মনের মানুষের হাত-পা-মাথা নেই কারণ তিনি নিরাকার এবং অন্তরের অধিবাসী।
৪, “ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর”– এই শূন্য আসলে কী?
উত্তরঃ লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ নামক কবিতার উদ্ধৃতাংশে শূন্য হল বস্তুজগত-নিরপেক্ষ অবস্থা ।
৫. কবিতায় ‘ক্ষণেক’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী?
উত্তর: কবিতায় ‘ক্ষণেক’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঈশ্বরের কোনাে এক স্থানে স্বল্পক্ষণের স্থায়িত্বকে বােঝানাে হয়েছে। ঈশ্বরের বাস এক জায়গায় নয়, কখনও তার অবস্থান শূন্যের ওপর, আবার কখনাে বা নীরে।
৬. “ক্ষণেক ভাসে নীরে।”-নীরে ভাসার কারণ কী?
উত্তর: লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ নামক কবিতা বা বাউলগানে নীরে বা জলে ভাসার তাৎপর্য হল কখনাে কখনাে বস্তুজগতের বিষয়কে অবলম্বন করে নিরাকার ঈশ্বরের আত্মপ্রকাশ ঘটা| :
৭.‘পড়শি’ যে ‘শূন্য’ এবং ‘নীর’-এ থাকে তার অর্থ কী?
উত্তর: পড়শি’ নিরাকার, তাই তিনি শূন্যেও থাকেন, আবার কখনাে কখনাে বাস্তব জগতেও তার অস্তিত্ব দেখা যায়—‘নীর’ সেই অস্তিত্বের প্রতীক।
৮.“পড়শি যদি আমায় ছুঁত”—পড়শি ছুঁলে কী হত?
অথবা, পড়শি কবিকে ছুঁলে কী হতে পারত?
উত্তর: পড়শি’ অর্থাৎ ‘মনের মানুষ’ যদি কবিকে চুঁত বা কবির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটত তাহলে কবির যাবতীয় জীবন-যন্ত্রণার অবসান ঘটত।
৯. “আমার যম-যাতনা যেত দূরে”–‘যম-যাতনা’ শব্দবন্ধটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ নামক কবিতায় ‘যম যাতনা’ শব্দবন্ধটির দ্বারা কবি জীবন-যন্ত্রণাকে বােঝাতে চেয়েছেন।
১০, “যম-যাতনা যেত দূরে’—তা সম্ভব হত কেমন করে?
উত্তরঃ কবির মতে মনের মানুষের সঙ্গে সংযােগের মাধ্যমে যম যাতনা অথাৎ জীবন যন্ত্রণা দূর করা সম্ভব হত। কারণ এই সংযােগ ঘটলেই প্রকৃত আশ্রদশন তথা ঈশ্বরলাভ সম্ভব।
১৩, কাদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফঁাক রয়েছে? ১৪, “তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে”– এই লক্ষ যােজন ফাক’- এর অর্থ কী?
১১. “সে আর লালন একখানে রয়’- এই ‘সে’ কে?
উত্তর: প্রশ্নেধৃত অংশে ‘সে’ হল কবির আত্মদর্শন বা আত্মানুভূতি। একেই বাউল সাধকেরা ‘মনের মানুষ’ বা ঈশ্বর বলতে চেয়েছেন।
১২. “আবার সে আর লালন একখানে রয়’—একখানে বলতে কোন্খানের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘একখানে’ বলতে কবি একই দেহাবয়ব বা শরীরের মধ্যে লালন এবং তার মনের মানুষের বাস করাকে বুঝিয়েছেন।
১৩, কাদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফঁাক রয়েছে?
উত্তর: সহজিয়া সাধক বা বাউল কবি লালন ফকির ও তাঁর পরমাত্মা বা মনের মানুষের মধ্যে লক্ষ যােজন ফঁাক রয়েছে।
১৪, “তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে”– এই লক্ষ যােজন ফাক’- এর অর্থ কী?
উত্তর: এই লক্ষ যােজন ফাক’-এর অর্থ হল বিষয়বাসনার কারণে ঈশ্বর কিংবা মনের মানুষের সঙ্গে কবির সীমাহীন দূরত্ব।
১৫, মনের মানুষের সঙ্গে লালনের কেন লক্ষ যােজন ফঁাক রয়েছে?
উত্তর: সাধক লালন ও তার মনের মানুষ বা পরমাত্মার মধ্যে এই ফঁাক থাকার কারণ হল তার সীমাহীন বিষয়বাসনা ও লােভ-লালসা।
১৬. এই কবিতায় কবি তার কোন্ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: এই কবিতায় কবি লালন তার মনের মানুষকে দর্শন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যাতে তিনি পার্থিব দুঃখ-যন্ত্রণার উর্ধের্ব উঠতে পারেন।
১৭, “যমযাতনা সকল যেত দূরে”—কীভাবে তা সম্ভব? –
উত্তর: লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় বলেছেন, পড়শি যদি তাকে ছুঁয়ে দিত তাহলে তার যমযাতনা সব দূরে যেত।