ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
ধীবর বৃত্তান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
ধীবর বৃত্তান্ত
— কালিদাস
ধীবর বৃত্তান্ত সারাংশ
ধীবর বৃত্তান্ত নাটক: মঞ্চে দেখা গেল নগররক্ষায় নিযুক্ত রাজশ্যালক এবং তাঁর পিছনে দুজন রক্ষী হাতবাঁধা অবস্থায় এক পুরুষকে নিয়ে প্রবেশ করছে। দুই রক্ষী বন্দি পুরুষকে ধমক দিয়ে জানতে চাইছে রাজার নাম খােদাই করা মণিখচিত আংটিটি সে কোথায় পেয়েছে। জবাবে পুরুষটি তাদের শান্ত হতে বলছে এই কারণে যে, সে আংটিটি চুরি করেনি। প্রথম রক্ষী সূচক তাকে ব্যঙ্গ করে বলছে তাহলে রাজা কি তাকে সব্রাহ্ণ ভেবে আংটিটি দান করেছেন। পুরুষটি তখন জেলে বলে নিজের পরিচয় দিয়ে কোথায় থাকে তা উল্লেখ করে। তাকে বাটপাড় বলে দ্বিতীয় রক্ষক জানুক ভৎর্সনা করলে রাজশ্যালক লােকটিকে বিনা বাধায় ঘটনাটির পূর্বাপর বর্ণনা করতে বলেন। তাতে দুই রক্ষী সম্মতি জানায়।
: লােকটি বলতে থাকে জাল, বড়শি ইত্যাদি মাছ ধরার যন্ত্রপাতি নিয়ে মাছ ধরা হলাে তার বৃত্তি। এভাবে সে সংসার চালায়। সে মনে করে, যে বৃত্তি নিয়ে সে জন্মেছে তা ত্যাগ করা উচিত কাজ নয়। তার বিশ্বাস বেদজ্ঞ ব্রাক্ষ্মণ স্বভাবে দয়ালু হলেও যজ্ঞের পশুবলি দেওয়ার সময় তিনি নিষ্ঠুর হন। এ হলাে মানুষের বৃত্তিগত বৈশিষ্ট্য। রাজশ্যালকের কৌতূহল মেটানাের জন্য ধীবর লােকটি বলতে থাকে—নদী থেকে ধরা এক রুই মাছকে টুকরাে টুকরাে করে কাটার সময় সে মাছের পেটের ভিতর মণিমুক্তোয় ঝলমল করা আংটিটি পায়। ওই আংটিটি বিক্রি করার জন্য সে যখন লােককে দেখায়, তখনই তাকে রাজশ্যালক ও রক্ষীরা ধরেছেন। এই হলাে আংটি পাওয়ার ঘটনা। তাঁরা এবার তাকে মারতে হয় মারবেন, নতুবা ছেড়ে দেওয়ার যােগ্য মনে হলে ছেড়ে দেবেন।
: রাজশ্যালক জেলে লােকটির গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ পেয়ে নিশ্চিত হলেন যে লােকটা গােসাপ-খাওয়া জেলে। লােকটা ঠিক বলছে কিনা তা যাচাই করার জন্য তাকে রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলাে। রক্ষী দুজন ধীবরকে নিয়ে রাজবাড়ির সদর দরজায় অপেক্ষা করতে লাগল। রাজশ্যালক গেলেন রাজবাড়ির ভিতরে। রাজামশায়কে আংটি পাওয়ার ঘটনা নিবেদন করে লােকটির ব্যাপারে কী করা হবে সেই রাজাজ্ঞা নিয়ে তিনি ফিরে আসবেন।
এই অবসরে দুই রক্ষী সূচক ও জানুক ধীবরের শাস্তির ব্যাপারে অনুমানভিত্তিক নানা কথা বলতে থাকে। অবশেষে রাজশ্যালককে আসতে দেখে দ্বিতীয় রক্ষী শােনায় ধীবরকে হয় শকুন দিয়ে নয়তাে কুকুর দিয়ে খাওয়ানাে হবে। কিন্তু রাজশ্যালক এসে ঘােষণা করেন রাজাজ্ঞার কথা। জেলের সব কথা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার হুকুম হয়েছে। জেলের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হলাে। জেলে জানতে চাইল, তাকে ছেড়ে দেওয়া হলাে ঠিকই, কিন্তু তার সংসার চলবে কীভাবে। রাজশ্যালক তখন রাজামশায়-প্রদত্ত পুরস্কারের কথা জানালেন। তা আংটির দামের সমপরিমাণ অর্থ। তাকে অর্থ দেওয়া হলাে।
দ্বিতীয় রক্ষী জানুকের ধারণা আংটিটি রাজামশায়ের খুব প্রিয় বলেই পুরস্কারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু রাজশ্যালক আংটিটি রাজার হাতে দেওয়ার সময় লক্ষ করেছেন আংটিটি দেখে রাজামশায়ের কোনাে প্রিয়জনের বিস্মৃত কথা মনে পড়েছে। তিনি মুহূর্তের জন্য বিহ্বলভাবে তাকিয়ে থেকেছেন।
: ধীবর তার প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক রক্ষীদের ফুল কেনার দাম বাবদ দিতে চায়। রাজশ্যালক কিন্তু অর্থপ্রাপ্তির চিন্তায় নেই। তিনি ধীবরকে তার সত্যবাদিতা ও সততার জন্য বিশিষ্ট প্রিয় বন্ধু হিসেবে পেতে প্রত্যাশী।
ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ) ‘সেই আংটি দেখে মহারাজের কোনাে প্রিয়জনের কথা মনে পড়েছে। স্বভাবত গম্ভীৱ প্রকৃতির হলেও মুহূর্তের জন্য রাজা বিহুলভাবে চেয়ে রইলেন। -কার উক্তি? প্রসঙ্গ উল্লেখসহ উধৃতাংশের তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : উদ্ধৃতিটি রাজশ্যালকের উক্তি।
তাৎপর্য : ধীবর সততা ও সত্যবাদিতার জন্য প্রচুর অর্থ পুরস্কার পেয়েছে। প্রথম রক্ষী সূচক কিন্তু পুরস্কার পাওয়ার এই কারণ বুঝতেই পারেনি। সে ভেবেছে রাজামশায়ের কাছে আংটিটা খুব প্রিয়। সেজন্য তিনি খুশি হয়ে অত টাকা ধীবরকে দিয়েছেন। হারানাে দামি আংটিটা পাওয়ায় তাঁর খুব আনন্দ হয়েছে। রাজার শ্যালক কিন্তু প্রথম রক্ষীর কথা সমর্থন করেন না। কারণ তিনি স্বচক্ষে আংটি পাওয়ার পরে রাজামশায়ের প্রতিক্রিয়া দেখে এসেছেন। রাজশ্যালক বলেন যে, আংটিটায় শুধুমাত্র দামি মণিমুক্তা বসানাে আছে বলেই রাজামশায়ের কাছে মূল্যবান নয়। রাজামশায়কে দেখে রাজশ্যালকের তাই মনে হয়েছে। তিনি লক্ষ করেছেন, আংটিটা দেখে কোনাে প্রিয়জনের কথা রাজামশায়ের মনে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাই। এই আংটিটি তপােবনের আশ্রম থেকে বিদায়ের সময় তাঁর স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ শকুন্তলার আঙুলে পরিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। শকুন্তলার কাছে এটি ছিল রাজনিদর্শন, অভিজ্ঞান তথা স্মারকচিহ্ন। আংটি দেখে দুর্বাসার অভিশাপের প্রভাব দূর হয়ে যায়। রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে স্মরণ করতে পারেন। রাজশ্যালক এ কথা জানবেন কী করে? তা ছাড়া রাজা গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু রাজশ্যালক লক্ষ করেন, রাজা আংটি দেখার পর মুহূর্তের জন্য হলেও কেমন যেন অভিভূত হওয়ার ভালে তাকিয়ে থাকলেন। ওই অভিভূত বা মুগ্ধতার ভাব কাকে ঘিরে রাজশ্যালকের তাও অজানা।
ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
প্রশ্ন:) মহাৱাজ দুমন্ত প্রেরিত ধীবৱেৱ পারিতােষিক কত? ধীবৱেৱ অর্থপ্রাপ্তিকে দুই ব্ৰক্ষী কীভাবে নেন ও রাজশ্যালকই বা বিষয়টি কীভাবে গ্রহণ কৱেন?। ১+৪}
উত্তর: মহারাজ দুষ্মন্ত প্রেরিত ধীবরের পারিতােষিকের পরিমাণ আংটির সমমূল্য অর্থ।
দুই ব্ৰক্ষী ও রাজশ্যালকের প্রতিক্রিয়া :
অর্থপ্রাপ্তিকে দুই রক্ষী সহজ মনে মেনে নিতে পারেননি। টাকা পেয়ে ধীবর সবিনয়ে বলেছে সে অনুগৃহীত। তাতে প্রথম রক্ষী সূচকের প্রতিক্রিয়া, এ কি যা-তা অনুগ্রহ! এ যে শূল থেকে নামিয়ে একেবারে হাতির পিঠে চড়িয়ে দেওয়া হলাে ? মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে মানুষটাকে শূলে বসানাের কথা, তাকে কিনা রাজামশায় অনুগ্রহ করে শূল থেকে নামিয়ে সম্মানীয় রাজঅতিথির মতাে হাতির পিঠে চড়িয়ে দিলেন পুরস্কারের সম্মান দিয়ে।
রাজা অমান্য করা রাজরক্ষীর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তার ভিতরের অসন্তোষ তাঁর কথার মধ্যে প্রকাশিত। দ্বিতীয় রক্ষী জানুকের প্রতিক্রিয়া হলাে, যে পরিমাণ পারিতােষিক দেখছি—তাতেই বােঝা যাচ্ছে সেই আংটিটা রাজার (খুব) প্রিয় ছিল। এই কথাতে দ্বিতীয় রক্ষীর সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশিত না হলেও রাজামশায়ের পারিতােষিক দানের মধ্যে অনুগ্রহের কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা আছে। আংটির সমমূল্যের অর্থদান রাজামশায়ের অতিপ্রিয় জিনিস ফিরে পাওয়ার আনন্দ-উচ্ছাসের প্রকাশ। তাতেই ধীবরের প্রতি তাঁর ওই অপ্রত্যাশিত অনুগ্রহ। নইলে হয়তাে সুবিচারই হতাে ধীবরের শাস্তির ব্যাপারে।
রক্ষীরা যে ধীবরের পারিতােষিক পাওয়াতে ঈর্ষান্বিত তার প্রকাশ ঘটে দ্বিতীয় রক্ষী জানুকের উক্তি ও আচরণে। রাজশ্যালককে উদ্দেশ্য করে দ্বিতীয় রক্ষী জানুক প্রথম রক্ষী সূচকের কথার সূত্রে বলে, তার চেয়ে বল—এই জেলের সেবা করলেন। অর্থাৎ, রাজশ্যালক রাজার আংটি রাজার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে রাজার সেবা করেননি, করেছেন ধীবরের দৃষ্টিতে দেখেছেন। তাঁর এই আচরণে শুধু তাঁর নয় দুই সেবা। এ কথা বলেই জানুক ক্ষান্ত হননি। জেলেকে হিংসাভরা দৃষ্টিতে দেখেছেন। তাঁর এই আচরণে শুধু তাঁর নয় দুই রক্ষীরই একইসঙ্গে হতাশা ও ঈর্ষান্বিত মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে। রাজশ্যালক কিন্তু ধীবরের সততা ও সত্যবাদিতা গুণে মুগ্ধ হয়ে উদার চিত্তে ও সাগ্রহে তাকে তার একজন বিশিষ্ট প্রিয় বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ধীবর বৃত্তান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ) সততা ও সত্যবাদিতা শেষাবধি জয়ী হয়েছে-‘ধীবৱ-বৃত্তান্ত’ নাট্যকাহিনি অবলম্বনে আলােচনা করাে। [৫]
উত্তর : মানবিক গুণ : সততা, সত্যবাদিতা এগুলি মানবিক মহৎ গুণ। এইসব গুণের বিকাশ উচ্চবর্ণীয়, অভিজাত, শিক্ষিত ও সমাজে গণ্যমান্য মানুষের মধ্যে হয়, নিম্নবর্ণীয় ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে হয় না, তা নয়। উচ্চ-নীচ, অভিজাত- অনভিজাত, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কিংবা সমাজে গণ্যমান্য বলে খ্যাতঅখ্যাত নির্বিশেষে যে-কোনাে মানুষের মধ্যে বিকশিত হতে পারে, যার মধ্যে মানবিক বােধ আছে, মানবিক গুণের উপাদান আছে। এরকম একটি চরিত্র হলাে ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশের মূল চরিত্র ধীবর।
মানবিক গুণেৱ প্রকাশ : ধীবরের বাড়ি শক্রাবতারে। জাতিতে জেলে। জাল, বড়শি ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরা তার জীবিকা। তার জালে ধরা রুইমাছের পেট থেকে সে মহারাজ দুষ্মন্তের নাম খােদাই করা মণিমুক্তোখচিত মূল্যবান আংটি পায়। আংটি বিক্রি করার জন্য নগরের মধ্যে লােককে দেখানাের সময় রাজরক্ষীদের হাতে বন্দি হয়। তারা তাকে চোর ঠাউরে পীড়ন-তাড়ন শুরু করে। নগররক্ষক রাজশ্যালকের কৃপায় ধীবর নিজের পরিচয় ও আংটি পাওয়ার বৃত্তান্ত, যা প্রকৃত ঘটনা, তা অকপটে প্রকাশ করে। এর মধ্যে তার সৎ প্রকৃতি ও সত্যবাদিতা গুণের পরিচয়।
প্রশ্ন-) ‘এখন থেকে তুমি আমার একজন বিশিষ্ট প্রিয় বন্ধু হলে।’-কাৱা পৱম্পৱেৱ বন্ধু হয়েছে? এমন বন্ধুত্বের কারণ কী?
উত্তর; ধীবর ও রাজশ্যালক পরস্পরের বন্ধু হয়েছে।
ধীবরের বৃত্তি আমাদের অনুদার দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট বলে মনে হয়। তাদের বৃত্তিকে আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। ধীবরের বৃত্তির কথা শুনে রাজশ্যালক ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলেছিলেন, ‘তা তাের জীবিকা বেশ পবিত্র বলতে হয় দেখছি। কিন্তু ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যদৃশ্যের ধীবরটি নিকৃষ্ট পেশার মানুষ হয়েও চরিত্র-গুণে মহৎ ও অনেক বড়াে মাপের মানুষ। সে সহজ সরল, চতুর ও ধান্দাবাজ নয়, লােভী নয়, স্পষ্ট সত্যবাদী মানুষ। রাজ-আংটি পাওয়া নিয়ে সে সত্য ঘটনা বলেছে অকপটচিত্তে। তাতে কোনােরকম চাতুর্য নেই। ব্যক্তিই ধীবর সম্পর্কে নাকউঁচু মনােভাব দেখিয়েছিলেন, ‘এর গা তার এসব মহৎ চরিত্র গুণে মুগ্ধ হয়েছেন রাজশ্যালক। অথচ এই থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছে। এ অবশ্যই গােসাপ-খাওয়া জেলে হবে। তা ছাড়া তাকে চোর বলতে তিনি কুণ্ঠিত হননি তিনি রক্ষীদের বলেছিলেন, ‘সদর দরজায় সাবধানে এই চোরকে নিয়ে অপেক্ষা কর। যাই হােক, ধীবরের চরিত্র-গুণে মুগ্ধ রাজশ্যালক ধীবরকে বন্ধু বলে বরণ করে নিলেন শেষ অবধি। অবশ্য মনে রাখতে হবে, গুণীর গুণ গ্রহণের উপযােগী উদারচিত্তের তিনি অধিকারী ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে।
প্রশ্নঃ) ‘সখীৱা মনে করলেন সেই আংটিই হবে ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন।—সখীৱা কারা? সেই আংটি বলতে কোন্ আংটি? ‘ভবিষ্যতের স্মাৱকচিহ্ন’ হবে সখীৱা এ কথা ভাবলেন কেন?
উত্তর: সখীরা হলেন মহর্ষি কম্বের পালিতা কন্যা শকুন্তলার দুই প্রিয় সখী অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা।
সেই আংটি হলাে তপােবন থেকে বিদায়কালে মহারাজ দুষ্মন্ত শকুন্তলার আঙুলে যে আংটি পরিয়ে গিয়েছিলেন সেই আংটি।
ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন : অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা জানেন ঋষি দুর্বাসার অভিশাপের কথা। ঋষির অভিশাপ অভ্রান্ত । সেজন্য সখীরা শকুন্তলার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই শঙ্কিত হয়েছিলেন। বিশেষত প্রিয়ংবদা অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য দুর্বাসাকে অনুনয় করেন। দুর্বাসা কিছুটা প্রসন্ন হয়ে অভিশাপ খণ্ডনের উপায় বাতলেছিলেন। বলেছিলেন যে, মহারাজের দেওয়া কোনাে নিদর্শন দেখাতে পারলে তা স্মারকচিহ্নের কাজ করবে। স্মারকচিহ্ন অভিশাপের প্রভাব থেকে মহারাজকে মুক্ত করবে। তিনি শকুন্তলাকে চিনতে পেরে যথাযােগ্য মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করবেন। কাজেই শকুন্তলা ও মহারাজ দুষ্মন্তের ভবিষ্যৎ জীবনে ওই অঙ্গরীয় বিশেষ ভূমিকা নেবে। সেই কারণে সখীরা শকুন্তলাকে মহারাজ দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটি ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন বলে মনে করেছেন।
প্রশ্নঃ) মহাকবি কালিদাসের লেখা ধীবর, বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশ অবলম্বনে ধীবর চরিত্র আলােচনা কৱা। [৫]
উত্তর :
ধীবরের পরিচয় ও বৃত্তি : মহাকবি কালিদাসের লেখা ‘অভিজ্ঞানশকুন্তল’ নাটকের অংশবিশেষ হলো ‘ধীবরবৃত্তান্ত’। এই নাট্যকাহিনির নামভূমিকায় ধীবর। এই কাহিনির প্রধান চরিত্র ধীবর। অভিনয় মঞ্চে তাকে প্রথম দেখা যায় হাতবাঁধা কয়েদি হিসেবে। রাজরক্ষীদের হাতে সে বন্দি। তার । বিরুদ্ধে মহারাজ দুষ্মন্তের নাম খােদাই করা মণিমুক্তাখচিত মূল্যবান আংটি চুরির অভিযােগ। ধীবর তার পরিচয় দেয়—সে জেলে। তার নিবাস শুক্রাবতারে। জাল, বড়শি ইত্যাদি নিয়ে মাছ ধরা তার বৃত্তি।
আংটি পাওয়ার বৃত্তান্ত : সে চুরি করার মতাে অসৎ কাজ করেনি। সে কীভাবে রাজ-আংটি পেয়েছে তা রক্ষী ও নগররক্ষক তথা রাজশ্যালককে জানায়। একদিন তার ধরা একটা রুই মাছকে সে টুকরাে টুকরাে করে কাটছিল। তখন তার পেটের ভিতর মণিমুক্তাখচিত আংটিটি পায়। পরে সেই আংটি বিক্রি করবার জন্য লােককে দেখাচ্ছিল। তখন রক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে। এভাবেই সে আংটিটি পেয়েছে বলে ঘটনার কথা জানায়।
অপরাধী গণ্য হলে শাস্তি নিতে প্রস্তুত : ধীবরের বক্তব্য পরিষ্কার। এভাবে আংটি পাওয়াতে তার অপরাধ হয়ে থাকলে যা শাস্তি প্রাপ্য তা সে গ্রহণ করবে। আর বিবেচনায় নির্দোষ মনে হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হােক। এখন মারতে হয় মারুন, ছেড়ে দিতে হয় ছেড়ে দিন।
যােগ্য পুরস্কার : ধীবরের বক্তব্য যে সত্য রাজশ্যালক আংটিটি নিয়ে রাজার কাছে যেতে তা প্রমাণিত হয়েছে। তখন রাজাজ্ঞায় ধীবর মুক্ত হয়েছে। রাজা খুশি হয়ে তাকে আংটির সমপরিমাণ মূল্যের অর্থ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এ হলাে ধীবরের সততা ও সত্যবাদিতার পুরস্কার। যেজন্য রাজশ্যালকও তাকে প্রিয় বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এও কম পুরস্কার নয়।
আরও বৈশিষ্ট্য : ধীবর চরিত্রের আরও দুটি বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। এক 0 ধীবরের বৃত্তি নিয়ে রাজশ্যালকের বাঁকা কথার জবাবে ব্রাক্ষ্মণের বৃত্তির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ। দুই ] তার পারিতােষিকের অর্ধেক রক্ষীদের ফুলের দাম হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে তাদের জঘন্য মনােভাবের প্রতি কটাক্ষ হানা।
ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের ছোট প্রশ্ন ও উত্তর:
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ) ‘আমার হাত দুটো (এখনই) নিশপিশ করছে।–“নিশপিশ’ শব্দের অর্থ কী? কী কারণে কার হাত নিশপিশ করছে?
উত্তরঃ : ‘নিশপিশ’ শব্দের অর্থ ‘অস্থিরতা বা চঞ্চলতার ভাব।
প্রথম ও দ্বিতীয় রক্ষী নিশ্চিত যে, রাজ আদেশে বন্দি ধীবরের মৃত্যুদণ্ড। রাজ-আংটি চুরি তাে সামান্য অপরাধ নয়। ভয়ংকর অপরাধের শাস্তি অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে অপরাধীকে ফুলের মালা পরানাে হয়। প্রথম রক্ষীর কথা হলাে অপরাধী জেলের গলায় পরাবার জন্য ফুলের মালা গাঁথতে তার হাত এখন থেকে অস্থির হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন) রাজশ্যালক যখন মহারাজের হুকুমনামা হাতে নিয়ে আসছেন, তখন দ্বিতীয় ব্রহ্মী ধীবরকে লক্ষ্য কৱে কী বলে ও কেন?
উত্তর : মহারাজ দুষ্মন্তের শ্যালক মহারাজের হুকুমনামা নিয়ে রাজালয় থেকে বার হয়ে আসেন। দ্বিতীয় রক্ষী দেখতে পেয়ে বন্দি ধীবরকে উদ্দেশ করে বলে যে, তাকে হয় শকুনি নয়তাে কুকুর দিয়ে খাওয়ানাে হবে। কারণ ধীবরের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত। শূলে বসিয়ে তার মৃত্যুর পর তার লাশটা শকুনি কিংবা কুকুর ছিড়ে ছিড়ে খাবে। এমনি নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক শাস্তি হবে তার।
প্রশ্ন ) সদ্যমুক্ত ধীবৱ ৱাজশ্যালককে কী বলে সম্বােধন করে প্রণাম করল? তার আবেদনের প্রত্যুত্তরে কী পেল সে?
উত্তর : সদ্যমুক্ত ধীবর রাজশ্যালককে ‘প্রভু সম্বােধন করে প্রণাম করল।
সবিনয়ে ধীবরের আবেদন হলাে তার সংসার কীভাবে চলবে দয়া করে তা যেন রাজশ্যালক বিবেচনা করেন। তার আবেদনের জবাবে ধীবর রাজশ্যালকের হাত থেকে পেল রাজার দেওয়া রাজ-আংটির সমপরিমাণ মূল্যের অর্থ, যা রাজা খুশি হয়ে দিয়েছেন।
প্রশ্ন ) এ যে শূল থেকে নামিয়ে একেবারে হাতির পিঠে চড়িয়ে দেওয়া হলাে।’—উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।
এটি রাক্ষী সূচকের উক্তি। আংটিটির জন্য ধীবরের শাস্তি হলো না। তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো আংটির সমান মূল্যের অর্থ দিয়ে। রক্ষীদের কাছে এ ঘটনা শুধু বিস্ময়কর নয়, অপ্রত্যাশিত। সূচক মনে করে দাবরের প্রাপ্ত পুরস্কার যেন শূলদণ্ডের নিশ্চিত মৃত্যু থেকে নামিয়ে এনে গণ্যমান্য ব্যক্তির মতাে রাজরাজড়ার মতাে হাতির পিঠে সসম্মানে চড়িয়ে দেওয়া। এ পুরস্কার তাে সাধারণ সামান্য পুরস্কার নয়। সত্যবাদিতা ও সততার পুরস্কার।
প্রশ্ন ) ‘তাতেই বোঝা যাচেছ এই আংটিটা রাজার (খুব) প্রিয় ছিল।—কী কারণে বক্তার এ কথা মনে হয়েছে ?
উত্তর : এই উক্তির বা দ্বিতীয় রক্ষী জানুক। ধীবরকে দেওয়া মহারাজ দুষ্মন্তের পুরস্কারের অর্থের বিপুল পরিমাণ দেখে দ্বিতীয় রক্ষীর মনে হয়েছে মহারাজের ফিরে পাওয়া আংটিটি খুবই প্রিয় সম্পদ। অতিপ্রিয় সম্পদ ফিরে পেলে প্রত্যেক মানুষই অত্যন্ত খুশি হয়। মহারাজও একইভাবে খুশি হয়েছেন বলে ধীবরকে এভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দ্বিতীয় রক্ষীর এ অনুমান সম্পূর্ণ সত্য।
প্রশ্ন ) ‘মুহূর্তের জন্য রাজা বিহুলভাবে চেয়ে রইলেন।’-বাজাৱ বিহুলভাবে চেয়ে থাকার পিছনে কী কাৱণ বলে রাজশ্যালকের মনে হয়েছে ?
উত্তর : রাজশ্যালকের মনে হয়েছে, ফিরে পাওয়া মণিমুক্তাখচিত আংটিটা রাজার কাছে তত মূল্যবান নয়। বরং মনে হয়েছে আংটি দেখে রাজার মনে পড়েছে কোনাে প্রিয়জনের কথা। হয়তাে তাঁর কথা তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। মহারাজ স্বভাবত গম্ভীর প্রকৃতির। আংটি দেখে তাঁর গাম্ভীর্য চলে গিয়ে তিনি কেমন যেন বিহুল হয়ে থাকলেন। প্রকৃতপক্ষে দুর্বাসার অভিশাপ কেটে গিয়ে শকুন্তলার স্মৃতি ফিরে পাওয়া।
প্রশ্ন ) ‘সেই আংটিটা বাজার খুব প্রিয় ছিল। -নাট্যাংশেৱ কোন্ ঘটনা প্রমাণ কৱে ‘আংটিটা রাজার খুব প্রিয় ছিল?
উত্তর ; আংটি পাওয়ার ব্যাপারে ধীবর যে কথা বলেছে তা সব সত্যি কিনা রাজশ্যালক রাজালয়ে গিয়েছিলেন যাচাই করতে। রাজামশাইয়ের কাছে ধীবরের কথা সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাজামশাই আংটি ফিরে পেয়ে এত খুশি হয়েছেন যে, আংটির মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ ধীবরকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ধীবরকে পারিতােষিকস্বরূপ দেওয়া থেকে বােঝা যাচ্ছে আংটিটা রাজার খুব প্রিয় ছিল।
ধীবর বৃত্তান্ত প্রশ্ন ও উত্তর বড়
প্রশ্ন) ‘সেই আংটিই হবে ভবিষ্যতের স্বাৱকচিহ্ন।–“শয়াৱকচিহ্ন’ শব্দের অর্থ কী? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ স্মারকচিহ্ন’ শব্দের অর্থ হলাে স্মরণীয় নিদর্শন।
শকুন্তলার দুই অতি প্রিয় সখী অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা। তাঁদের অনুরােধে দুর্বাসার রাগ পড়ে শান্ত হলো। তিনি তখন অভিশাপের প্রভাব দূর হওয়ার উপায় বলেন। উপায় হলো শকুলার স্বামী দুস্তকে তাঁর দেওয়া কোনাে নিদর্শন দেখানাে। তাহলে তিনি চিনতে পারবেন। মহারাজ দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার সময় শকুন্তলাকে নিজের হাতের আংটি পরিয়ে গেছেন। সখীরা ভাবলেন ওই আংটি শকুন্তলাকে চিনতে পারার ভবিষ্যৎ নিদর্শন হবে। ওটা হবে তাঁদের ভাবী মিলনের স্মরণীয় নিদর্শন।
প্রশ্নঃ) মহর্ষি কন্তু কখন ও কী কারণে পতিগৃহে পাঠানাের আয়ােজন করলেন?
উত্তর : মহর্ষি কম্ব তপােবনে ফিরে এলেন। দৈববাণীতে জানতে পারলেন শকুন্তলা-দুষ্মন্তের বিয়ের কথা। বিয়ে হয়ে যাওয়া কন্যাকে তাঁর স্বামীর কাছে রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া যথার্থ কাজ বলে মহর্ষি কম্বের মনে হলাে। তিনি মেয়েকে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার আয়ােজন করলেন। শকুন্তলার সঙ্গে পাঠালেন দুই শিষ্য ও বােন গৌতমীকে।
প্রশ্নঃ)তিনি শকুন্তলাকে চিনতেও পারলেন না। —তিনি কে? চিনতে না পারার কারণ কী?
উত্তর : তিনি হলেন শকুন্তলার স্বামী মহারাজ দুষ্মন্ত ।
ক্ষুব্ধ ঋষি দুর্বাসার অভিশাপ ছিল শকুন্তলা যার চিন্তায় মগ্ন সে তাকে চিনতে পারবে না। শকুন্তলা তাঁর স্বামী দুষ্মন্তের চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, কাজেই মহারাজ দুষ্মন্ত দুর্বাসার শাপের প্রভাবে শকুন্তলাকে চিনতে পারবেন না। শকুন্তলা রাজসভায় দুষ্মন্তের মুখােমুখি হলেন, তা সত্ত্বেও রাজা স্ত্রীকে চিনতে পারলেন না। শাপ খণ্ডনের উপায় হিসেবে স্মারকচিহ্ন দেখাবার আংটিটি শকুন্তলা দুর্ভাগ্যবশত হারিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারলেন না। চিনতে না পারার কারণ এই।
প্রশ্নঃ) মহাৱাজ দুষ্মন্তের দেওয়া আংটি শকুন্তলা কীভাবে হাৱিয়ে ফেলেন?
উত্তর : মহারাজ দুষ্মন্ত তপােবন থেকে বিদায় নেওয়ার সময় নিজের আঙুলের আংটি খুলে শকুন্তলার আঙুলে পরিয়ে দিয়েছিলেন। আংটিটি ছিল রাজা দুষ্মন্তের স্মারকচিহ্ন। স্বামীর ঘরে যাওয়ার সময় রাস্তায় শচীতীর্থে স্নানের পর অঞ্জলি দেওয়ার সময় আংটিটি আঙুল থেকে খুলে জলে পড়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত শকুন্তলা এইভাবে মহারাজ দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটি হারিয়ে ফেলেন।
প্রশ্নঃ) শকুন্তলা কী কারণে ব্রাজসভায় অপমানিত হলেন?
উত্তর : শকুন্তলার আশা ও দৃঢ় বিশ্বাস রাজসভায় মহারাজ দুষ্মন্তের মুখােমুখি হলে তিনি অবশ্যই চিনতে পারবেন। সাদরে পতিগৃহে তাঁকে চিনতে পারলেন না। স্ত্রীর পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও শকুন্তলা তাঁর স্থান হবে। কিন্তু দুর্বাসার অভিশাপের প্রভাবে স্বামী দুষ্মন্ত ব্যর্থ হলেন। কারণ অভিশাপ খণ্ডনের স্মারকচিহ্ন মহারাজের দেওয়া আংটিটি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তার পরিচয় দেওয়া মিথ্যা প্রতিপন্ন হওয়ায় তিনি অপমানিত হলেন।
প্রশ্ন ) শকুন্তলার হারানাে আংটি কে কীভাবে পেল?
উত্তর : শকুন্তলার হাত থেকে জলে পড়ে যাওয়া আংটি এক রুই মাছ গিলে ফেলে। এক জেলের জালে ধরা পড়ে ওই মাছ। মাছটা টুকরাে টুকরাে করে কাটার সময় তার পেটের মধ্যে মণিমুক্তোয় ঝলমলে আংটিটা দেখতে পায় জেলে। শকুন্তলার হারানাে আংটি এইভাবে জেলের হস্তগত হয়।
প্রশ্ন ) সংকলিত নাট্যাংশটি কোন মূল নাটকের অংশ? নাট্যাংশের শুরুতে মঞ্চে কী দেখা গল?
উত্তর : সংকলিত ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশটি মহাকবি ও নাট্যকার কালিদাসের লেখা ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের অংশ।
‘ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশের শুরুতে মঞ্চে দেখা গেল নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজশ্যালকের প্রবেশ। তাঁর পিছনে দু-হাত বাঁধা অবস্থায় এক পুরুষ। পুরুষকে ধরে নিয়ে দুই রক্ষী হাজির।
প্রশ্ন ) ‘আপনাৱা শান্ত হন। আমি এৱকম কাজ কৱিনি।—“আপনাৱা’ কারা? বক্তা তাদের শান্ত হতে বলছে। কেন? এরকম কাজ’ কী কাজ?
উত্তর : ‘আপনারা’ হলাে দুই রক্ষী।
রক্ষীদের কঠিন তাড়নায় ভয় পেয়ে বন্দি পুরুষ ধীবর তাদের আর তাড়না না করে শান্ত হতে অনুরােধ করছে।
‘এরকম কাজ’ বলতে বন্দি ধীবর চুরি করার মতাে হীন ও নীচ কাজের কথা বলেছে।
ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের পাঠ্যাংশের ব্যাকরন:
ধ্বনি ও ধ্বনি পরিবর্তন
১/ ফুলক্ষির মালিরে ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন করাে ।
• প্রশ্ন ১, ১। রাজা দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে গেছেন।
উ: ফিরে = ফিরিয়া > ফিইর্যা > ফিরে ; অভিশ্রুতি।
প্রশ্ন ১.২। আপনারা শান্ত হন।
উ: হন = হউন > হন ; স্বরলােপ ;
» প্রশ্ন ১.৩। এ সংবাদ শুনে খুব খুশি হবেন ।
উ: শুনে = শুনিয়া >শুইন্যা >শুনে ; অভিশ্রুতি।
প্রশ্ন ১.৪। একটা ব্রুই মাছ যখন আমি খণ্ড খণ্ড ক কাটলাম।
উ: মাছ = মৎস্য > মচ্ছ > মাছ ; স্বরের দীর্ঘভবন
৩। খুলকার থলির সন্ধিবিচ্ছেদ ইকো
• প্রশ্ন ২.৫। ঝলমলে এই আংটিটা দেখতে পেলাম। উঃ আংটি = অশুষ্ঠিকা > অশ্রুটটিআ > আঙটি আংটি ; অল্পপ্রাণীভবন।
ওরিও কিছু প্রস্তুভিত্তিক পরিবভ করা খুলিয়া > খুলে ; অভিশ্রুতি।
বাঁধিয়া > বেধে ; নাসিকীভবন। • চেয়ে = চাহিয়া > চেয়ে ; অভিশ্রুতি।
তাঁহার > তার ; ‘হ’ লােপ। যার = যাহার > যার ; হ’ লােপ। • করে = করিয়া > কইর্যা > করে ; অভিশ্রুতি।
• বিয়ে = বিয়া বিয়ে স্বরসংগতি। ৮ জেলে = জালিয়া > জাইল্যা > জেলে ; অভিশ্রুতি।
• আজ = অদ্য > অজ্জ > আজ ; স্বরাগম। • বাঁধন = বন্ধন > বাঁধন ; নাসিকীভবন । হাত = হস্ত > হথ > হাত ; স্বরের দীর্ঘীভবন। সব =সর্ব > সব্ব > সব ; অক্ষুন্ন/অপরিবর্তিত স্বরধ্বনি।
ধরে = ধরিয়া > ধইর্যা > ধরে ; অভিশ্রুতি। দেখতে = দেখিতে > দেখতে ; ‘ই’ স্বরধ্বনি লােপ। বড়শি = বড়িশী > বড়শি ; ‘ই লােপ, লঘুস্বরীভবন। যা = যাহা > যা ; ‘হ’ লােপ। নিয়ে = নিয়া > নিয়ে ; স্বরসংগতি। ? দেখে = দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে ; অভিশ্রুতি। * ছেড়ে = ছাড়িয়া > ছাইড়া > ছেড়ে ; অভিশ্রুতি। রুই = রােহিত > রােহিঅ > রুই ; ‘হ লােপ। ৮ পেট = পোেট্ট (পালি) > পেট ; ‘ট লােপ। 3 ; : = > ; – :
। তাঁর
প্রশ্ন ৩.১। তাঁর অনুপস্থিতিতে শকুন্তলাকে….
উ: অনুপস্থিতি = অন + উপস্থিতি।
» প্রশ্ন ৩.২। শেষ পর্যন্ত সর্থী প্রিয়ংবদাৱ অনুরােধে….
উ: পর্যন্ত = পরি + অন্ত।
প্রশ্ন ৩.৩। শুনুন মহাশয়, এরকম বলবেন না।
উ: মহাশয়= মহা + আশয়।
প্রশ্ন ৩.৪। মহর্ষি কপ্ত তীর্থ থেকে ফিৱে শকুন্তলাকে পতিগৃহে পাঠানাের আয়ােজন করলেন।
উ: মহর্ষি = মহা + ঋষি।
: ;
প্রশ্ন ৩.৫। একে পূর্বাপর সব বলতে দাও। উ: পূর্বাপর = পূর্ব + অপর।
শব্দ গঠন ও শব্দভাণ্ডার
ফুলার শব্দমূলির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করাে ।
উ: : ৬ নিদর্শন নি Vদৃশ + অন ।
প্রশ্ন ১.১। কোনাে নিদর্শন দেখাতে পারলে তবে শাপের প্রভাব দূৱ হবে।
প্রভাব =প্র + ভূ + অ
• প্রশ্ন ১.২। অঞ্জলি দেওয়ার সময় হাত থেকে খুলে পড়ে গেছে শকুন্তলাৱ হাতের আংটি।
উ: অঞ্জলি—Vঅঞ্জ + অলি ।
আরও কিছু সন্ধিবিচ্ছেদের উদাহরণ
নির্দয় = নিঃ + দয়। সংবাদ = সম্ + বাদ।
পবিত্র = পাে + ইত্র। দৃষ্টি = দৃশ্য+ তি। অর্ধেক = অর্ধ + এক। তপােবন। = তপঃ+ বন। অপেক্ষা = অপ + ঈক্ষা। সংসার = সম্ + সার।
চিন্তা = চিম + তা। দুর্বাসা = দুঃ + বাসা।
শান্ত : শাম্ + ত। বৃত্তান্ত = বৃত্ত + অন্ত।
সাবধানে = স + অবধানে। অপেক্ষা = অপ + ঈক্ষা। শাবতার শক্র + অবতার। বেদজ্ঞ =বেদ্ + অজ্ঞ। অনুসন্ধান = অনু-সম্ +ধান। তপােবন = তবঃ + বন।
১.৩ দুই রক্ষীর প্রবেশ।
উ: প্রবেশ—প্র +বি + অ।
। প্রশ্ন ১.৪। যে বৃত্তি নিয়ে যে মানুষ জন্মেছে।
উ: বৃত্তি—বৃৎ + তি।
প্রশ্ন ১.৫। সেই বৃত্তি নিন্দনীয় হলেও তা পৱিত্যাগ করা উচিত নয়।
উ: নিন্দনীয়—নিদ্ + অনীয়।
। আরও কিছু শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করাে ।
উ: ৬ প্রবেশ—প্র +বি + অ।
প্রভাব =প্র + ভূ + অ। সমীপ = সম্ + অ > ঈপ + অ। * জিজ্ঞাসা =Vজ্ঞা + সন্ + অ + আ। উপায় =উপ+ ই + অ। চিন্তা চিত্ + অ + আ। তীর্থ =vতৃ + ঈ + থ। উপস্থিত = +