চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু, বড় প্রশ্ন উত্তর, এবং ছোট প্রশ্ন উত্তর, নবম শ্রেণি বাংলা।
চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু, বড় প্রশ্ন উত্তর, এবং ছোট প্রশ্ন উত্তর, নবম শ্রেণি বাংলা।
চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর
চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু
সারকুলার রােডের সমাধিক্ষেত্র। গল্পকথক নরেশ সেখান থেকে চন্দ্রনাথের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরল। তার অনেক কথাই মনে পড়ছে। চন্দ্রনাথ নরেশের দীর্ঘ জীবন-ইতিহাসের পৃষ্ঠায় রাত্রির মধ্য আকাশের কালপুরুষের মতাে দীপ্তিমান হয়ে আছে। দৃপ্ত ভঙ্গিতে চন্দ্রনাথ আপনার কক্ষপথে চলমান।
চন্দ্রনাথ, হীরু আর গল্পকথক নরেশ তিন সহপাঠী। আর-একজনের কথা নরেশের মনে পড়ে চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবু। তিন সহপাঠী একটি ক্ষুদ্র গ্রামে এসে কীভাবে মিলিত হয়েছিল সে ঘটনা বিস্ময়কর।
- আরো পড়ুন ইলিয়াস গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণী বাংলা
- ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা
ঘরে আলো জ্বলছে। আয়নার সামনে নরেশ বসে আছে। নিজের চিন্তাকুল প্রতিবিম্ব দেখে দেয়ালের আয়নায়। সেই অলীক ছায়া নরেশের স্মৃতিচারণে বাধা দিয়ে তাকে যেন আকর্ষণ করছে। নরেশ আলাে নিভিয়ে দেওয়ায় ঘর অন্ধকারে ডুবে যায়। অতীত অন্ধকারের মধ্যে নরেশ চন্দ্রনাথকে খোজায় কিশাের চন্দ্রনাথ নরেশের স্মৃতিচারণে হাজির হয়। তার মুখের আকৃতি অসাধারণ। প্রথমেই নজরে আসে তার মােটা নাক। যার প্রান্ত সামান্য চাঞ্চল্যে স্ফীত হয়ে ওঠে। চওড়া কপাল, বড়াে বড়াে চোখ। কপালের মাঝখানে শিরায় গড়া এক ত্রিশূল চিহ্ন। যা সামান্য উত্তেজনায় মােটা হয়ে ফুলে ওঠে।
নরেশের এ ছাড়া মনে পড়ে স্কুলের হেডমাস্টার মশাইকে। বাের্ডিং-এর সামনে চেয়ার-বেঞ্চে বসে হুঁকা হাতে চিন্তান্বিত। চন্দ্রনাথ কী বলে নরেশকে তা রেজাল্ট কী হবে তা নিয়ে কাগজে হিসাব কয়ছে। সেই হিসাবে চন্দ্রনাথ দেখেছে সে যদি সাড়ে পাঁচশোর বেশি পায়, তাহলে অমিয় ও শ্যামা দুজনে ফেল করবে। চন্দ্রনাথ তার কম পেলে দশটা ছেলে ফেল করবে, নরেশ থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মে এরকম ফলই দাঁড়ায়।
নরেশ যেজন্য এসেছিল তা জানাবে ভাবছিল, কিন্তু বাধা পড়ে চন্দ্রনাথের দাদার উপস্থিতিতে। তাঁর হাতে একখানা চিঠি। চিঠিখানা চন্দ্রনাথকে দেওয়া হলে তাতে চোখ বুলিয়ে বললে যে, সে সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করেছে। এটা তার মর্যাদার অবমাননা। স্কুল সেক্রেটারির ভাইপাে তার সাহায্য নিয়ে ফার্স্ট হয়েছে। তা ছাড়া স্কুলের শিক্ষক যিনি তিনিই তার প্রাইভেট টিউটর, তাই পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বলে দিয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ দাদার অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করায় দু-ভাই পৃথক হয়ে যায়। |
চন্দ্রনাথ গল্প
নরেশ বাের্ডিং-এ এসে হেডমাস্টার মশাইকে খবরটা জানায়। মাস্টারমশাই চন্দ্রনাথের কাছে যেতে চাইলে নরেশ নিষেধ করে। দিন দুই পরে নরেশ চন্দ্রনাথের সঙ্গে ফের দেখা করে। চন্দ্রনাথ তাকে জানায় যে, হীরু এসেছিল। তার কাকা নাকি চন্দ্রনাথকে স্পেশাল প্রাইজ দিতে চান। চন্দ্রনাথ সে প্রস্তাবও অপমানজনক ভেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার অভিমত হলাে, গুরুদক্ষিণার যুগ শেষ। স্কুলের সঙ্গে তার আর কোনাে সম্পর্ক নেই।
তারপর নরেশ মামার বাড়ি চলে যায়। সেখানে থাকতেই হীরুর চিঠিতে পরীক্ষার ফল জানতে পারে। চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে ফলে গেছে। দশটা ছেলে ফেল করেছে, নরেশ থার্ড ডিভিশনে, চন্দ্রনাথ পেয়েছে সাড়ে পাঁচশাের নীচে পাঁচিশাে পচিশ নম্বর। হীরু চন্দ্রনাথের অনুমানের ব্যতিক্রম। সে কলারশিপ পাবে।
চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর
নরেশ মামার বাড়ি থেকে ফিরে হীরু স্কলারশিপ পাবে, সে উপলক্ষ্যে প্রীতিভােজের নিমন্ত্রণ পায়। চন্দ্রনাথের বাড়ি গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ, কেউ নেই। হীরুর বাড়ি গেলে সেখানে নরেশ জানতে পারে চন্দ্রনাথ আজই দুপুরে চলে গেছে। মাস্টার নরেশকে সাহিত্যচর্চা একটু কমাতে বলেন, তবে একেবারে বন্ধ করতে নয়। হীরু তখন বলে কাগজে নরেশের লেখা বেরিয়েছে। মাস্টারমশাই নরেশের লেখা পড়তে চান। হীরু জানায় চন্দ্রনাথ একখানা চিঠি দিয়ে গেছে। তাতে লিখেছে, উৎসব না করলে পারত, স্কলারশিপ এমন কিছু বড়াে নয়। চন্দ্রনাথ কোথায় গেছে হীরু জানতে চাইলে নরেশ বলে যে, সে জানে না। কি, নরেশের কল্পনায় কিশাের চন্দ্রনাথ যেন কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোটলা বেঁধে রাতের জনহীন পথে একা চলেছে। তার সঙ্গী হয়েছে চলমান কালপুরুষ নক্ষত্র।
চন্দ্রনাথ গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর :
প্রশ্ন- ‘দুর্দান্ত চন্দ্রনাথেৱ আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে।”—চন্দ্রনাথেৱ দেওয়া আঘাতটা কী? আঘাত দেওয়ার কারণই বা কী? আঘাত দেওয়ার পরিণামে কী ফল চন্দ্রনাথকে ভােগ করতে হয়েছিল? (২+২+১]
উত্তর: ‘ চন্দ্রনাথ’ গল্পাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয়ের লেখা। চন্দ্রনাথ মেধাবী ছাত্র। স্কুলে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনাে প্রশ্নের অবকাশ নেই। সে প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে। কেবল এবারের পরীক্ষায় সে হয়েছে দ্বিতীয়। হীরু হয়েছে প্রথম। চন্দ্রনাথ তার দ্বিতীয় হওয়াকে মেনে নিতে পারেনি। সে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর পুরস্কার নেবে না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের কাছে প্রত্যাখ্যানের চিঠি পাঠায়। এই প্রত্যাগতই হলো চন্দ্রনাথের দেওয়া আঘাত।
আঘাত দেওয়ার কারণ হিসেবে চন্দ্রনাথ কয়েকটি ঘটনাকে প্রাধান্য দিয়েছিল। ঘটনাগুলি হলাে—এক, হীরু হলাে স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপাে। সেই সুবাদে পরীক্ষার ফলের ওপর প্রভাব পড়েছে বলে চন্দ্রনাথের ধারণা। দুই, স্কুলের জনৈক শিক্ষক হীরুর গৃহশিক্ষক। চন্দ্রনাথ মনে করে তিনি পরীক্ষার আগে হীরুকে প্রশ্নপত্র দেখিয়েছেন। তিন, চন্দ্রনাথের বিশ্বাস পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। চার, হীরু অঙ্কের পরীক্ষায় চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক টুকে নিয়েছে। এইসব ঘটনার প্রতিবাদে চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয়কে চিঠি লিখে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের পরিণামে চন্দ্রনাথকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। তার দাদা নিশানাথ প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারটা প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। তিনি ভাইকে চিঠি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। কিন্তু দাদার নির্দেশ চন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে অমান্য করে। ফলে দুভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়। দুজনে পৃথক হয়ে যায়।
প্রঃ- ‘একে তুমি ডিগনিটি বল? তােমার অক্ষমতার অপরাধ!’-বক্তা কে? কী প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন? বক্তা এ কথার দ্বারা কী বােঝাতে চেয়েছেন? .
উত্তর;
বক্তা হলেন চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ।
চন্দ্রনাথ স্কুলের এই পরীক্ষা ছাড়া প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়েছে। প্রতি বছর প্রথম পুরস্কার পেয়ে এসেছে। এবারের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ায় স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। শুধু তাই নয়, প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে চিঠি লিখে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে। চন্দ্রনাথের দাদা সেকথা জানতে পারায় ভাইয়ের কাছে কারণ জানতে চান। তার প্রত্যুত্তরে চন্দ্রনাথ বলে, দ্বিতীয় পুরস্কার নেওয়া তার কাছে ‘বিনিথ মাই ডিগনিটি’ । চন্দ্রনাথের এই আচরণ নিশানাথ সমর্থন করতে পারেননি। তিনি প্রতিবাদ হিসেবে প্রশ্নোধৃত মন্তব্য করেন।
চন্দ্রনাথের এ হেন প্রত্যাখ্যান নিশানাথের ভাবনাচিন্তার বিরুদ্ধ কাজ। পরীক্ষার ফল অঙ্গীকার করা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করা, স্কুলের প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে প্রত্যাখ্যানের চিঠি লিখে অসম্মান করা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তা ছাড়া চন্দ্রনাথের আচার-আচরণ স্কুল পরিচালন ব্যবস্থাকে অসম্মানিত করেছে। এইসব কারণে নিশানাথ ভাইয়ের ওপর অসষ্ট ও বেশ রুষ্ট। তাই তিনি জানিয়েছেন, এটা তার ডিগনিটির প্রশ্ন নয়, পরীক্ষার ফলকে মেনে নিতে না পারা অক্ষমতার অপরাধ ।
প্রশ্ন -) উৎসবের বিপুল সমারােহ সেখানে কী ‘ উপলক্ষ্যে উৎসব? উৎসবের বর্ণনা প্রসঙ্গ্যে চন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়ার পরিচয় দাও।
উত্তর : হীরুর বাড়িতে উৎসবের বিপুল সমারােহের উপলক্ষ্য হলাে হীরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রথম হয়ে লারশিপ পেয়েছে। হীরুর অত বড়াে সাফল্যের সম্মানে প্রীতিভােজের বিশাল আয়ােজন।
হীরু ধনী পরিবারের সন্তান। বহু অর্থ ব্যয় করে হীরুর বাড়ি অতি মনােরম করে সাজানাে হয়েছে। শুধু টাকাই খরচ না হয়নি, শৌখিনতার প্রকাশ রয়েছে সাজসজ্জার প্রতিক্ষেত্রে বাড়ির পাশের আমের বাগান চিনা লণ্ঠন ও রঙিন কাগজের সজ্জায় সুদৃশ্য হয়ে সেজে উঠেছে। বহু বছর পরেও গল্পের কথক নরেশের স্মৃতিতে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। অবশ্য ওই সুসজ্জার কৃতিত্ব হীরুর কাকার। প্রীতিভােজের অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ও সম্মানীয় অনেকেই আমন্ত্রিত ছিলেন। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী, যেমন—দুজন ডেপুটি ডিএসপি, সাব-রেজিস্টার, থানার দারােগা, তা ছাড়া গ্রামের ব্রাহ্ণ, কায়স্থ উচ্চবর্ণীয় মানুষজন ইত্যাদি।
হীরুর বাড়ির উৎসবে চন্দ্রনাথ আদৌ খুশি ছিল না। তার মনের অসন্তোষ ও বিরূপতা হীরুকে লেখা চিঠিতে কোনােরকম রাখঢ়াক রেখে প্রকাশ করেছিল। স্কলারশিপ পাওয়া এমন কিছু বড়াে সাফল্য নয় যার জন্য উৎসবের আয়ােজন। উৎসবে হীরুর আমন্ত্রণ পেয়েও উৎসবে যােগ না দিয়ে উৎসবের দিন দুপুরে সে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। অবশ্য হীরুকে একটা চিঠি লিখে গিয়েছিল। সেই ছিল চন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া।
চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন — হীৰু স্কলাৱশিপ পাবে, সেই উপলক্ষ্যে আয়ােজিত প্রীতিভােজ ও ওই প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলির বিবৱণ দাও।
উত্তর :
প্রীতিভােজ : হীরু স্কলারশিপ পাবে, সেই উপলক্ষ্যে প্রীতিভােজের আয়ােজন। হীরুর কাকা শৌখিন ধনী সন্তান। তাঁর উদ্যোগেই প্রীতিভােজের ব্যবস্থা। তিনি সেদিন নিজে বাড়ির পাশে আমবাগানটিকে সাজিয়ে ছিলেন। চিনা লণ্ঠন ও রঙিন কাগজের মালায় নিপুণ বিন্যাসে বাগানটিকে সুন্দর করে সাজানাে হয়েছিল। সন্ধ্যায় সেই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ নরেশ। সে সেই দৃশ্য কখনও ভুলতে পারেনি। প্রীতিভােজে বহু বিশিষ্ট অতিথির সমাবেশ হয়েছিল। এসেছিলেন জনদুয়েক ডেপুটি, ডি এস পি, স্থানীয় সাব-রেজিস্টার, থানার দারােগা, তা ছাড়া গ্রামের ব্রাক্ষ্মণ কায়স্থ অনেকে।
ঘটনাবলি : নরেশ প্রীতিভােজে হাজির হতে হীরু তাকে পরম সমাদর করে বসিয়েছিল। অনেক কথার মধ্যে হীরু শুনিয়েছিল তার কাকা নাকি বলেছে বিলেতে আই সি এস পড়ার জন্য তৈরি হতে। হীরুর নিজেরও বিলেত যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তার বড় সাধ হলাে বিলেত যাওয়া। নরেশের চন্দ্রনাথের কথা মনে পড়লেও সে তা বলতে পারেনি। হীরু প্রসঙ্গত বলেছিল যে, সে সেদিনই চলে গেছে দুপুরে। হিরু তাকে নিমন্ত্রণ করেছিল তবু সে চলে গেছে। একটা দিন অপেক্ষা করে যেতে পারত। এমন সময় হেডমাস্টার মশাই আসেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি নরেশের কাছে জানতে চান চন্দ্রনাথ কোথায় গেছে সে তা জানে কিনা।
চন্দ্রনাথ চিঠিপত্রও দেয় কিনা। নরেশ উত্তরে বলে যে, কাউকে সে কিছু বলে যায়নি। লাঠির ওপর ভর দিয়ে মাস্টারমশাই কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নীরবেই চলে যান। এরপর হীরু বলে যে, চন্দ্রনাথ তাকে একখানা চিঠি দিয়ে গেছে। হীরু নরেশকে চিঠিখানা পড়ার জন্য দেয়। সে হীরুর প্রীতিভােজে থাকতে না পারার জন্য মার্জনা চেয়েছে। তার সফলতায় আনন্দ প্রকাশ করেছে। তার অভিমত, উৎসবটা হীরু না করলেই পারত। স্কলারশিপ এমন কী বড়াে জিনিস। চিঠিটি পড়ে নরেশ ফিরিয়ে দেয় হীরুর হাতে। হীরুর প্রশ্ন হলাে চন্দ্রনাথ কোথায় গেল ? করবেই বা কী ? নরেশের উত্তর, সে জানে না।
প্রশ্ন – প্রথিতযশা কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ কাহিনি অবলম্বনে চন্দ্রনাথ চৱিত্ৰ আলােচনা করাে।
উত্তর :
মুখাকৃতি : সুখ্যাত কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ কাহিনির প্রধান চরিত্র হলাে চন্দ্রনাথ। তখন সে কিশাের, স্কুলের ছাত্র। তার দীর্ঘ আকৃতি, সুস্থ সবল দেহ, চোখের নির্ভীক দৃষ্টি। তার মুখাকৃতি অসাধারণ। তার দিকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়ে তার মােটা নাক। সামান্য উত্তেজনাতে তার নাকের প্রান্ত ফুলে ওঠে। বড়াে বড়াে চোখ। চওড়া কপাল। কপালের মাঝখানে শিরায় রচিত ত্রিশূলচিহ্ন। উত্তেজনায় রক্তের চাপ বাড়লেই কপালের ত্রিশূল-চিহ্ন মােটা হয়ে ফুলে ওঠে।
বুদ্ধিদীপ্তি, বিরামহীন চলা : চন্দ্রনাথ গভীর রাত্রির মধ্য আকাশের বিচরণকারী কালপুরুষ নক্ষত্র যেন। দীপ্তির পরিধিতে কালপুরুষ যেমন প্রদীপ্ত ও নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে প্রধান, স্কুল জীবনে চন্দ্রনাথ তেমনি বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল, ছাত্রমহলে সেরা বা প্রধান হিসেবে পরিচিত। কালপুরুষের ভীমকায় খঙ্গধারী আকৃতির সঙ্গে চন্দ্রনাথের মিল। চন্দ্রনাথ কালপুরুষের মতাে দৃপ্ত ভঙ্গিতে আপনার জীবন পথে চলমান। কালপুরুষের মতাে তার চলার বিরাম নেই। বিশ্রাম নেই। যা নিজের হস্তগত করার অভিপ্রায় আছে, উন্মত্ত গতিতে ছুটে চলা তার প্রকৃতি।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও পুরস্কার প্রত্যাখ্যান : ছাত্র হিসেবে তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতেই হয়। সে স্কুল জীবনে প্রতি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। দ্বিতীয় স্থান তার জন্য ছিল না। স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান থেকে ছিটকে যায়। সে জানে সেজন্য কী অন্যায় করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। স্কুল সেক্রেটারির ভাইপাে হীরুকে প্রথম করার জন্য তার স্কুলের জনৈক শিক্ষক যিনি হীরুর প্রাইভেট শিক্ষক, তিনি হীরুর কাছে প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছেন। পরীক্ষার খাতা দেখায় পক্ষপাতিত্ব করেছেন, শুধু তিনি নন, আরও দু-একজন। অঙ্কের পরীক্ষায় হীরু চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটি অঙ্ক টুকেছে। চন্দ্রনাথ এসব জানে বলেই স্কুলের প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিবাদস্বরূপ হেডমাস্টার মশাইকে চিঠি লিখে। সে সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে। তর্কবিতর্কে অনড় থেকে দাদার সঙ্গে পৃথক হওয়াকে মেনে নিয়েছে। গৃহত্যাগী হতেও কুণ্ঠিত হয়নি।
চন্দ্রনাথ গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর
নীচের প্রশ্নগুলির প্রতিটির উত্তর কমবেশি পনেরােটি শব্দের মধ্যে লেখাে :
প্রশ্ন – গল্পকথক নৱেশ কোথা থেকে বার হয়ে চন্দ্রনাথের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছিল?
উত্তর : গল্পকথক নরেশ সারকুলার রােডের সমাধিক্ষেত্র থেকে বার হয়ে চন্দ্রনাথের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছিল।
প্রশ্ন নৱেশেৱ দীর্ঘ জীবন-ইতিহাসের কয়েকটি পৃষ্ঠায় চন্দ্রনাথ কীভাবে প্রদীপ্ত ও প্রধান হয়ে আছে?
উত্তর : চন্দ্রনাথ গভীর রাত্রির মধ্য আকাশে বিচরণকারী কালপুরুষ নক্ষত্রের মতাে দীপ্তিতে, পরিধিতে প্রদীপ্ত ও প্রধান হয়ে আছে।
প্রশ্ন – কালপুরুষ নক্ষত্রটির সঙ্গে চন্দ্রনাথের কোন দিক থেকে সাদৃশ্য আছে?
উত্তর : কালপুরুষ নক্ষত্রটির খধারী ভীমকায় আকৃতির সঙ্গে চন্দ্রনাথের আকৃতির যেন একটা সাদৃশ্য আছে।
প্রশ্ন – নৱেশেৱ তিন সহপাঠীসহ আৱ কার কথা মনে পড়েছিল?
উত্তর: তিন সহপাঠী চন্দ্রনাথ, হীরু ও সে নিজে ছাড়াও আরএকজন চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবুর কথা নরেশের মনে পড়েছিল।
প্রশ্ন- ঘরেৱ কীৱকম পরিবেশে নৱেশ কাদেৱ কথা ডাবছিল?
উত্তরঃ ঘরের টেবিল ল্যাম্পের অকম্পিত প্রদীপ্ত আলােয় আলােকিত কক্ষে নরেশ একা বসে চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথের ) কথা ভাবছিল।
প্রশ্নঃ- নৱেশেৱ সামনে কী ছিল এবং তাতে কী কেমন করে তার দিকে চেয়ে বসেছিল?
উত্তরঃ: নরেশের সামনের দেয়ালে টাঙানাে আয়নায় তারই প্রতিবিম্ব তার দিকে চিন্তাকুল নেত্রে তাকিয়ে বসেছিল।
প্রশ্ন – ঘৱেৱ কী পরিবেশে অতীতকে কীরূপে দেখল নৱেশ?
উত্তরঃ: ঘরের আলাে নিভিয়ে দেওয়া প্রগাঢ় অন্ধকারের মধ্যে নরেশ অতীতকে দেখল অন্ধকার রূপেই।
প্রশ্ন- আলােকিত বর্তমান কীভাবে অতীতে অপ্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে?
উত্তর : বর্তমান যেন আলােকিত দিবস, তার অবসান হয় অতীতের অন্ধকার সমুদ্রে ডুব দিয়ে অপ্রত্যক্ষ হয়ে ওঠায়।
প্রশ্ন – কিশােৱ চন্দ্রনাথের আকৃতি, দেহ ও চোখের দৃষ্টি কেমন ছিল?
উঃ: কিশাের চন্দ্রনাথের আকৃতি ছিল দীর্ঘ, দেহ ছিল সবল ও সুস্থ এবং চোখের দৃষ্টি ছিল নির্ভীক।
প্রশ্ন – চন্দ্রনাথের নাকখানা কেমন ছিল?
উত্তর : চন্দ্রনাথের নাকখানা ছিল অদ্ভুত মােটা, সামান্যমাত্র চাঞ্চল্যেই তার নাকের প্রান্ত স্ফীত হয়ে উঠত।
প্রশ্ন – চন্দ্রনাথের চোখ, কপাল ও ললাটের মধ্যভাগেৱ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উঃ: চন্দ্রনাথের বড়াে বড়াে চোখ, চওড়া কপাল, কপালের মধ্যভাগে শিরায় রচিত এক ত্রিশূল-চিহ্ন ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন;- নৱেশেৱ স্মৃতিচারণে চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথ ছাড়া আর কাকে মনে পড়েছিল?
উত্তর : স্মৃতিচারণে নরেশের মনে পড়েছিল চন্দ্রনাথ, হীরু ও নিশানাথ ছাড়া হেডমাস্টার মশাইকে।
প্রশ্নঃ-চন্দ্রনাথের দুর্দান্ত আঘাতে স্কুল কী হয়ে উঠেছে?
উত্তর: স্কুলের কৃতী ছাত্র চন্দ্রনাথের দুর্দান্ত আঘাতে সমস্ত স্কুল। চঞ্চল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন – সব স্কুল চল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কেন?
উত্তর : কারণ পুরস্কার বিতরণীতে চন্দ্রনাথ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সেকেন্ড প্রাইজ গ্রহণ করতে সে অনিচ্ছুক।
প্রশ্ন – নৱেশ চন্দ্রনাথের ঘরে গিয়ে চন্দ্রনাথকে কী করতে দেখল?
উত্তর : নরেশ চন্দ্রনাথের ঘরে গিয়ে চন্দ্রনাথকে অল্প আলােয় বসে আপন মনে কী যেন লিখতে দেখল।
প্রশ্ন – দাদার দেওয়া পত্রখানির ওপর চোখ বুলিয়ে চন্দ্রনাথ কী বলল?
উত্তর : দাদার দেওয়া পত্রখানি পড়ে চন্দ্রনাথ অকপটে ও সাহসের সঙ্গে বলল যে, সে প্রাইজ রিফিউজ করেছে।
প্রশ্ন – নৱেশ খবর দেওয়ার জন্য বাের্ডিং-এ এসে হেডমাস্টার মশাইকে কেমন অবস্থায় দেখল?
উত্তর : নরেশ হেডমাস্টার মশাইকে দেখল, তিনি তখনও তেমনই চিন্তাকুল চোখে বসে আছেন।
প্রশ্ন – হেডমাস্টার মশাই চন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠাতে চন্দ্রনাথ গিয়ে কী বলেছিল?
উত্তর : চন্দ্রনাথ হেডমাস্টার মশাইকে বলেছিল যে, গুরুদক্ষিণার যুগ চলে গেছে এবং স্কুলের সঙ্গে তার দেনাপাওনা মিটে গেছে।
প্রশ্ন – নৱেশকে চিঠি দিয়ে হীরু পরীক্ষার কী ফল জানিয়েছিল?
উত্তর : হীরু পরীক্ষার ফল চিঠিতে জানিয়েছিল যে, দশজন ফেলসহ নরেশের থার্ড ডিভিশনে পাস, চন্দ্রনাথ পাঁচশাে পঁচিশের নীচে, আর হীরুর স্কলারশিপ প্রাপ্তি হয়েছে।
প্রশ্ন – নৱেশ মামার বাড়ি থেকে ফিৱে হীৱৱ কাছ থেকে কী পেল?
উত্তরঃ : নরেশ মামার বাড়ি থেকে ফিরে হীরুর কাছ থেকে পেল তার স্কলারশিপ পাওয়া উপলক্ষ্যে প্রীতিভােজের আমন্ত্রণ।
প্রশ্ন – নৱেশ মামার বাড়ি থেকে ফিৱে চন্দ্রনাথের বাড়িতে গিয়ে কী দেখল?
উত্তর : নরেশ চন্দ্রনাথের বাড়িতে গিয়ে দেখল বাড়িখানা খাখা করছে, কেউ কোথাও নেই, দুয়ার বন্ধ, দরজায় তালা।
চন্দ্রনাথ নবম শ্রেণীর প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন – নৱেশ সন্ধ্যায় হীৱ বাড়ি গিয়ে উৎসবের কী সমারােহ দেখল?
উত্তর : নরেশ হীরুর বাড়ি গিয়ে দেখল উৎসবের সমারােহ হিসেবে পাশের আমবাগান চিনা লন্ঠন ও কাগজের মালায় সাজানাে।
প্রশ্ন- নৱেশ হীরুকে কেমন দেখেছিল?
উত্তর : নরেশ দেখেছিল হীরুর লাবণ্যময় দেহ, আয়ত কোমল চোখে মােহময় ও শুকতারার দীপ্তির মতাে কোমল স্নিগ্ধ দৃষ্টি।
প্রশ্ন – হেডমাস্টার মশাই নৱেশেৱ সাহিত্যচর্চা। সম্পর্কে কী বলেছিলেন?
উত্তর : নরেশের সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে হেডমাস্টার মশাই | বলেছিলেন যে, পড়ার সময় সাহিত্যচর্চা একেবারে না ছেড়ে একটু। কম করতে।
প্রশ্নঃ – হীরু চন্দ্রনাথের চিঠিখানা রেখে দিল কেন?
উত্তর : হীরু চন্দ্রনাথের চিঠিখানা রেখে দিল কারণ চিঠি তার কাছে চন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন ছিল।
প্রশ্নঃ- নৱেশ কিশােৱ চন্দ্রনাথকে নিয়ে কী কল্পনা কৱল?
উত্তর : কল্পনা করল যে, কিশাের চন্দ্রনাথ কাঁধে লাঠির প্রয়ে পোঁটলা বেঁধে রাত্রির জনহীন পথে একা চলেছে।