History

ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের রাজনৈতিক,সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণ দাও | A description of the political, social, economic and religious condition of the Aryans in the Rigvedic period in Bengali

 

ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের রাজনৈতিক,সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণ দাও | A description of the political, social, economic and religious condition of the Aryans in the Rigvedic period in Bengali

ঋগ্বেদের-যুগে-আর্যদের-রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-ও-ধর্মীয়-অবস্থার-বিবরণ

 ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের রাজনৈতিক,সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা

 

 উত্তর। খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক দুই সহস্র বৎসর পূর্বে আর্যগণ ভারতবর্ষে আগমন করিয়া ধীরে ধীরে তাহাদের বসতি বিস্তার করিয়াছিল । তাহারা পূর্বে যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করিয়া ভারতের   নদীবিধৌত উর্বর ভূমিতে, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করিয়া এই নূতন সভ্যতা গড়িয়া তুলিল। ভারতের ইতিহাসে এই আর্য সভ্যতার গুরুত্ব যথেষ্ট। সাহিত্যে ও ধর্মে, সমাজনীতি ও রাজনীতিতে প্রায় সমস্ত বিষয়েই তাহারা ভারতীয় সভ্যতার ভিত্তি রচনা করিয়াছিল ।

 

(১) আর্য-সাহিত্য : আর্য সভ্যতা সম্বন্ধে যে সব তথ্যাদি পাওয়া গিয়াছে তাহার একমাত্র ও মূলভিত্তি বৈদিক সাহিত্য। আর্যদের প্রাচীনতম সাহিত্য হইল ‘বেদ।

‘বিদ’ শব্দের অর্থ জ্ঞান, সুতরাং ‘বেদ’-এর অর্থ জ্ঞানের আধার। এই বেদ হইতেই আর্য সভ্যতার যুগকে বৈদিক যুগ বলা হইয়া থাকে।

 (ক) ভগবানের নিকট হইতে শুতবাণী বলিয়া বেদের আর এক নাম ‘শ্রুতি’। বেদ চারি ভাগে বিভক্ত—ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব। ইহাদের মধ্যে ঋগ্বেদই বেদের চারিটি ভাগ প্রথম রচিত হইয়াছে—ইহাতে এক হাজারেরও বেশী স্তোত্র রহিয়াছে। প্রকৃতির বর্ণনা ও প্রাকৃতিক দেব-দেবীর স্তুতিগানই বেদের বিষয়বস্তু।

 (খ) প্রত্যেকটি বেদ আবার চারিখণ্ডে বিভক্ত—সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ । সংহিতা পদ্যে লিখিত, ইহার অধিকাংশ স্তোত্র, মন্ত্র দেবতাদের স্তুতিগান । ব্রাহ্মণভাগে  যাগ-যজ্ঞের বিধি বর্ণিত আছে, ইহা প্রধানত গদ্যে রচিত । ও উপনিষদ পরবর্তীকালে আরণ্যক ও উপনিষদ এই দুই অংশ রচিত হয়, এই দুইটি হইল বেদের দার্শনিক বিভাগ।

(গ) বিশুদ্ধভাবে বেদপাঠের প্রয়ােজনে ও বৈদিক যাগ-যজ্ঞের সংক্ষিপ্তসার করিবার জন্য পরবর্তীকালে ছয়টি বেদাঙ্গ ও ছয়টি দর্শন রচিত হয়। বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শন একত্রে সূত্র-সাহিত্য নামে অভিহিত হইয়া থাকে,—শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ  ও কল্প। এইগুলির মধ্যে কল্প’ সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য এবং শ্রোতসূত্র, গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র ও শুল্কসূত্র এই চারি ভাগে বিভক্ত। হিন্দুর পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মনৈতিক রীতিনীতি ইহাতে আলােচিত হইয়াছে । 

 

(ঘ) বৈদিক যুগের দর্শন সাহিত্য ছয়টি ভাগে বিভক্ত—সাংখ্য, যােগ, ন্যায়, বৈশেশিক, পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা বা বেদান্ত । কপিল, পতঞ্জলি, গৌতম, কণাদ, জৈমিন এবং ব্যাস যথাক্রমে এই ষড়দর্শনের রচিয়তা ।

 

 (২) ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের ধর্মজীবন : 

গ্রামকে কেন্দ্র করিয়া আর্য সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়াছিল ; এবং তপােবনে বসিয়া আর্য ঋষিরা নানা জ্ঞানের সন্ধানলাভ করিয়াছিল। তাই তাহাদের ধর্মের  ক্ষেত্রেও প্রকৃতির প্রভাব যথেষ্ট দেখা দিয়াছিল। আর্যগণ প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে দেব-দেবীরূপে কল্পনা ও উপাসনা করিত। আলাের  উৎস সূর্য, আকাশের দেবতা দ্যৌঃ, জলের দেবতা বরুণ, বায়ুর দেবতা মরুৎ উমা, পৃথিবী, সরস্বতী, অগ্নি প্রভৃতি ছিল তাহাদের উপাস্য দেব-দেবী। 

 বৈদিক সাহিত্যে দেব-দেবীর সংখ্যা অগণিত। দেবতাদের বাসস্থান অনুসারে তিনটি শ্রেণীবিন্যাস প্রচলিত ছিল—যেমন, আকাশের দেবতা (মিত্র ও বরুণ, বায়ুর দেবতা (ইন্দ্র ও মরুৎ) ও পৃথিবীর দেবতা (অগ্নি ও সােম) । ঋক বেদের যুগে দেব-দেবীদের মধ্যে ইন্দ্র ও অগ্নির বিশিষ্ট স্থান পরিলক্ষিত হয়। ডঃ আর. এস. শর্মা মনে করেন, বৈদিকযুগের প্রারম্ভিক পর্যায়ে আর্যরা যুদ্ধবিদ্যায় বেশী মাত্রায় লিপ্ত থাকায় তাহারা ইন্দ্রকে শীর্ষস্থানীয় দেবতারূপে গণ্য করিত ; ইহা ভিন্ন বসতি স্থাপনের জন্য বন-জঙ্গল দহন করার প্রয়ােজনীয়তা থাকায় দেবতাকুলের মধ্যে অগ্নির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।

 

আর্যগণ প্রথমদিকে বহু দেব-দেবীর উপাসনা করিলেও মূর্তি রচনা করিয়া পূজার পদ্ধতি তাহাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। কোন মন্দিরেরও উল্লেখ আর্য-সাহিত্যে পাওয়া যায় না । দেবতাদের উপাসনার জন্য যজ্ঞের আয়ােজন করা হইত। বেদীর উপর হােমাগ্নি জ্বালিয়া স্তবস্তুতির পর মন্ত্রপাঠের সঙ্গে সঙ্গে ঘৃত, দুগ্ধ, ব, মধু প্রভৃতি আহুতি দেওয়া হইত । ঋগ্বেদের যুগে যাগ-যজ্ঞানুষ্ঠান অতি সাধারণ ছিল। পরবর্তী বৈদিক যুগে অনার্যদের সহিত মিশ্রণের ফলে আর্যদের ধর্মাচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। পশুবলি, মূর্তিপূজা অনার্যদের ধর্মাচার হইতেই আর্যসমাজে প্রবেশ পশুবলি ও মূর্তিপূজা করে। তাহা ছাড়া, ক্রমে বৈদিক যাগ-যজ্ঞ ও মাদি এত দীর্ঘ এবং জটিল হইয়া পড়ে যে পূজা ও যজ্ঞাদির জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়ােজন পুরোহিত হয় এবং পুরােহিত সমাজের উৎপত্তি হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য, পবর্তী বৈদিকযুগে সমাজব্যবস্থায় বর্ণাশ্রম-প্রথার প্রসার ঘটায় ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সামাজিক শ্রেণী বিন্যাসের প্রতিফলন পড়িয়াছিল। বিভিন্ন বর্ণ নিজ নিজ স্বতন্ত্র দেব-দেবীর উপাসনা করিতে শুরু করে এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণশ্রেণীর আধিপত্য সূচিত হয়। অন্যদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শূদ্রগণ অপাংক্তেয় হইয়া পড়িল। এই ভাবে ধর্ম বিভেদনীতি দ্বারা কলুষিত হইয়া বারে প্রথা উঠিল।

 

(৩) ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের সামাজিক অবস্থা ঃ

 (১) পরিবারকে কেন্দ্র করিয়া আর্যসমাজ গড়িয়া উঠিয়াছিল, আর এক একটি পরিবারের সর্বময় কর্তা ছিলেন পিতা। অর্থাৎ সমাজ ছিল পিতৃকেন্দ্রিক। বৈদিক সমাজে নারীর স্থানও ছিল উচ্চে। তাহারা ছিলেন পুরুষের সহধর্মিণী ও সহকর্মিণী। নারীদের ক্ষেত্রে একাধিক পতি গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। গৃহস্থালীর ক্ষেত্রে নারীরাই ছিলেন সর্বময় কৰ্জী । তবে অন্তঃপুরের বাহিরেও তাহাদের কাজের পরিধি প্রসারিত ছিল । তাহাদের শিক্ষালাভেরও সুযােগ ছিল এবং ঋগ্বেদের পরবর্তী যুগে বিশ্ববারা, ঘােষা, অপালা প্রমুখ মহিলা বিভিন্ন শাস্ত্রে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করিয়াছিলেন। ঋগ্বেদের পরবর্তী যুগে নারীদের অধিকার কিছুটা খর্ব হইয়া বায় ; কিন্তু তহ্য সত্ত্বেও গার্গী ও মৈত্রেয়ী দর্শনশাস্ত্রে যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করিয়াছিলেন । :

 

(৩) আর্যগণ যখন প্রথমে এদেশে প্রবেশ করে তখন তাহাদের মধ্যে কোন শ্রেণীভেদ ছিল । কৃষ্ণকায় আদিম অধিবাসীগণকে পরাজিত করিবার পর বিজয়ী ও বিজিত এই দুই শ্রেণীর  উদ্ভব হইল, যেমন দেহের বর্ণের পার্থক্যের ভিত্তিতে দুইটি শ্রেণীর সৃষ্টি হইল । কিন্তু ক্রমে সমাজজীবন জটিল হইয়া উঠিলে গুণ, কর্ম ও দুইটি শ্রেণী বৃত্তি অনুসারে সমাজ চারিটি শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়া পড়িল।  যাগ-যজ্ঞ ও শাস্ত্র পাঠে যাহারা নিয়ােজিত ছিলেন তাঁহাদের বলা হইত চারিটি শ্রেণীর উদ্ভব ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ, দেশ শাসনের কাজে যুক্ত ছিলেন ক্ষত্রীয়গণ, কৃষি ও ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র পশুপালনের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা বৈশ্য নামে পরিচিত হইলেন। আর এই তিন শ্রেণীর সেবায় যাহারা নিযুক্ত তাহারা হইলেন শূদ্র। ঐতিহাসিকদের ধারণা বৈদিকযুগের প্রথম দিকে সমাজব্যবস্থায় বর্ণগত বৈষম্য থাকিলেও শ্রেণীগত বৈষম্যের পরিচয় পাওয়া যায় না। কিন্তু বৈদিক যুগের শেষভাগে বর্ণপ্রথায় শ্রেণীবৈষম্য দেখা যায় এবং এই ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক হইয়া উঠে।

 

(৪) আর্যজীবন চারিটি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম আশ্রম বা পর্যায়ের নাম ব্রহ্মচর্য । এই সময়ে প্রত্যেক পুরুষকে প্রথম জীবনে গুরুগৃহে থাকিয়া অধ্যয়ন করিতে হইত। ব্রহ্মচর্য পর্যায় শেষ হইলে স্বগৃহে ফিরিয়া আসিয়া ‘গার্হস্থ্য আশ্রমে , প্রবেশ করিতে হইত। অতঃপর প্রৌঢ় অবস্থায় বার্ণপ্রস্থ অবলম্বন বাণপ্রস্থ,  করিতে হইত। সর্বশেষে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করিয়া সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর ন্যায় জপতপে জীবন-যাপন করিতে হইত।

 

৫) সাধারণভাবে আর্যগণের প্রধান খাদ্য ছিল গম ও বার্লি । উৎসব অনুষ্ঠানে মাংসের আয়ােজন হইত এবং সােমরস ও সুরাপান চলিত । নৃত্য-গীত, মৃগয়া, রথ-চালনা, পাশা খেলা প্রভৃতি আমােদ-প্রমােদের অঙ্গ ছিল । 

 

(৪) ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবন :

 (১) যাযাবর আর্যরা ভারতে আসিয়া স্থিতিশীল হয়, এবং কৃষিকার্য ও পশুপালন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিতে শুরু করে। কৃষিকার্যে জলসেচ ও সার দেওয়ার প্রয়ােজনীয়তাও তাহারা শিখিয়াছিল।

 

(২) গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরুই প্রধান। ষাড়ের সাহায্যে জমি ঢাষ করা হইত। যমুনা উপত্যকা গাভীর দুগ্ধের জন্য এবং গান্ধার অঞ্চল পশমের জন্য  বিখ্যাত ছিল। প্রত্যেক গ্রামেই একটি করিয়া সাধারণ গােচারণ-ভূমি অর্থনীতি ও শিল্পোৎপাদন থাকিত।

 (৩) বৈদিক যুগে গ্রামই ছিল আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনের ভিত্তি ; নগরের উল্লেখ বিশেষ পাওয়া যায় না।

 

.(৪) বৈদিক আর্যগণ প্রধানত কৃষিজীবী ও পশুপালক হইলেও তাহারা নানা ধরণের শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করিত। বস্ত্র-শিল্প, মৃৎ-শিল্প, চারুশিল্প, ধাতু-শিল্প প্রভৃতি ব্যবসা বাণিজ্যবৈদিক যুগের গ্রাম্য-অর্থনীতির অঙ্গ ছিল।

 (৫) ব্যবসা বাণিজ্য যে বৈদিক যুগে ছিল না এমন নয়, অবশ্য ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা অনার্যদের হাতেই ছিল। ভারতের অভ্যন্তরে ছাড়া, বহির্দেশ আসিরিয়া এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশের সহিত তাহাদের বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিল বলিয়া অনেকে মনে   করেন, কিন্তু Cambridge Historyর লেখক তাহা মনে করেন না। 

 

(৬) প্রথম দিকে বিনিময় দ্বারাই বেশির ভাগ ব্যবসা চলিত, পরে গরু ও ‘নিষ্ক’ নামক এক প্রকার মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হইত ।

 

(৭) নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলিত, সমুদ্রপথে ব্যবসা চলিত কিনা সে বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত নহেন। স্থলভাগে রথ ও গরুর গাড়ীর ব্যবহার ছিল।

 

(৮) ‘বলি’ নামে ভূমিকর এবং শুল্ক’ নামে বাণিজ্যকর রাজশক্তি গ্রহণ করিত।

 

 (৯) কর ব্যবস্থা; পােশাক-পরিচ্ছদ আর্যরা তাহাদের পােশাক-পরিচ্ছদ তুলা ও পশম হইতে তৈয়ারি করিত । তামা ও লােহার ব্যবহার জানা ছিল । স্বর্ণ অলঙ্কার তৈয়ারীর জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হইত।

 

(৫)ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থা : 

(ক) আর্যসমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ছিল পিতৃকেন্দ্রিক পরিবার। কয়েকটি পরিবার লইয়া একটি গ্রাম এবং কয়েকটি গ্রাম লইয়া একটি বিশ’ বা ‘জন’ গঠিত হইত । গ্রামের শাসনকার্য যিনি পরিচালনা করিতেন তাহাকে ‘গ্রামণী এবং ‘বিশ’-এর সর্বোচ্চ শাসককে বলা হইত ‘বিশপতি’ বা ‘রাজন’। (খ) রাজা রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী  হইলেও, বৈদিক যুগের প্রথম দিকে তাহারা কখনও স্বেচ্ছাচারী হইয়া উঠিতে পারিত না ; বয়ােবৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ এবং জনসাধারণের মতামত লইয়া তাহাকে শাসনকার্য পরিচালনা করিতে হইত । বয়ােবৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত ‘সভা’ এবং জনসাধারণের প্রতিনিধিমূলক ‘সমিতি’ রাজক্ষমতা খানিকটা নিয়ন্ত্রিত করিত। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার সভাকে স্থানীয় ও সমিতিকে কেন্দ্রীয় পরিষদরূপে মতামত রাজার ক্ষমতা ; ব্যক্ত করিয়াছেন। ডঃ এ এস আলটেকার মনে করেন প্রথমদিকে সভা ও সমিতি সমিতির হাতে সীমাহীন ক্ষমতা ছিল এবং ইহার সিদ্ধান্ত অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করিতে হইত।

 (গ) রাজপদ সাধারণত বংশানুক্রমিক হইলেও প্রয়ােজন মত তাহা নির্বাচিতও হইত । 

(ঘ) রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল জাতির  ধনপ্রাণ রক্ষা করা, যুদ্ধ পরিচালনা করা, বিচার করা, ধর্ম রক্ষা করা প্রভৃতি। শাসনকার্যে তিনি পুরােহিত, সেনানী প্রভৃতি রাজকর্মচারীদের সাহায্য লইতেন। 

(ঙ) বৈদিক যুগে আর্যদের মধ্যে প্রধানত রাজতন্ত্রের প্রচলন থাকিলেও, স্থানে স্থানে ‘গণ’ অর্থাৎ প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাও চালু ছিল। 

(চ) বৈদিক যুগে রাজার কোন স্থায়ী সৈন্যবাহিনী ছিল , যুদ্ধের সময় প্রধানগণের সাহায্যে সৈন্যবাহিনী সংগ্রহ করা হইত ।  আর্যগণের বিভিন্ন গােষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লাগিয়াই থাকিত।  অনার্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই তাহারা যুদ্ধ চালাইত। রথারােহী ও পদাতিকদের লইয়া সৈন্যবাহিনী গঠিত হইত ; যুদ্ধে অশ্ব ব্যবহার প্রচলিত ছিল ; তীর, তালােয়ার, বর্শা, কুঠার প্রভৃতি ছিল সে সময়ের যুদ্ধাস্ত্র। 

(ছ) ঋগ্বেদের পরবর্তী যুগে রাজতন্ত্র কতকটা স্বৈরতন্ত্র হইয়া উঠিয়াছিল রাজগণ নিকটবর্তী দুর্বল রাজ্যগুলি  জয় করিয়া এবং অশ্বমেধ, রাজসূয় প্রভৃতি যজ্ঞ করিয়া একরাট’ বা সম্রাট বলিয়া নিজেদের ঘােষণা করিতেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘সভা’ ও ‘সমিতির ক্ষমতাও হ্রাস করা হইত। কালক্রমে সমিতির অস্তিত্ব লােপ পায়। তবে সভার অস্তিত্ব বজায় থাকে উহা অভিজাত সম্প্রদায়ের পরিষদে পরিণত হয়। 

 

(৬) সুতরাং দেখা যাইতেছে বৈদিক যুগের আর্যগণ সভ্যতার এক উচ্চস্তরে উপনীত হইয়াছিল। ঋক-সংহিতা আর্যদের কবিত্বশক্তির চরম প্রকাশ সন্দেহ নাই। স্থাপত্য-শিল্পে, চিকিৎসাশাস্ত্রে, জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতি ক্ষেত্রেই আর্যদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ যথেষ্ট বিকাশ হইয়াছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *