ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর teacj sanjib
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর teacj sanjib
ইতিহাসের ধারণা এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর গুলি আলোচনা করা হয়েছে।
ইতিহাসের ধারণা
প্রশ্নঃ) নারী-ইতিহাসের চর্চার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
অথবা, নারী-ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখাে।
: উত্তর ভূমিকা : প্রচলিত ইতিহাসে নারীর ভূমিকা বা অধিকারের যথাযথ মূল্যায়নের প্রয়ােজনে নারীর গুরুত্বকে তুলে ধরার ইতিহাসচর্চাই হল নারী-ইতিহাস।
বৈশিষ্ট্যসমূহ : নারী ইতিহাসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
১। পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশােধন : সভ্যতার ইতিহাসে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যুদ্ধ, প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে পুরুষদের ভূমিকাকে বা অবদানকে বেশি করে চিহ্নিত করেছে আর নারীরা উপেক্ষিত হয়েছে। তাই উপেক্ষিত নারীদের ইতিহাস উদ্ধারের কাজ হল এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।
২। অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠা : এই ইতিহাসচর্চার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নারীর অধিকার এবং নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম লেখালেখি করেন ইংল্যান্ডের মেরি ওলস্টনস্ক্রাফ্ট এবং পরবর্তীকালে ফ্রান্সের সিমােন দ্য বােভােয়ার।
৩। নারীর অংশগ্রহণ : নারী-ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে নারীর অংশগ্রহণ।
৪। সভ্যতার অগ্রগতির মাপকাঠি : কোনাে দেশের সভ্যতা ও সমাজে নারীর অবস্থান ও মর্যাদার ওপর সেই সভ্যতার উৎক নির্ভর করে বলে নারী-ইতিহাসচর্চা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
উপসংহার : উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, নারী-ইতিহাসচর্চা হল এক ধরনের সংশােধনবাদী ইতিহাসচর্চা তবে এই ইতিহাসচর্চার ফলে ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনাও রয়েছে।
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি
প্রশ্ন।। বঙ্গদর্শন’ নামক সাময়িকপত্র থেকে কীভাবে ভারতের ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়?
অথবা, ঐতিহাসিক উপাদানরূপে বঙ্গদর্শন পত্রিকার মূল্যায়ন করাে।
উত্তর) ভূমিকা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’-এ সাহিত্য রচনার পাশাপাশি ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান ও কৃষিতত্ত্ব আলােচনা, গ্রন্থ আলােচনা ও বাঙালির জীবনচর্চাও প্রকাশিত হত। তাই ‘বঙ্গদর্শন’ থেকে প্রাপ্ত উপাদানকে ভারত ইতিহাসের উপাদান রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন—
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ওপর আধুনিক বঙ্গসমাজ নির্মিত হয়েছে। বঙ্গদর্শন’-এর এরূপ মতামত ও আলােচনা ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ আলােচনাকালে উপাদানরূপে ব্যবহার করা যায়।
| স্বার্থ সংঘাত : বঙ্গদর্শন’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ শাসনকালে ইংরেজি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এঁরা স্বার্থ সম্পর্কে উদাসীন থাকায় কৃষক শ্রেণির সঙ্গে শিক্ষিত মানুষের সামাজিক সংঘাত শুরু হয়।
কৃষক স্বার্থ সংরক্ষণ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমিদারি প্রথার কারণে কৃষক-স্বার্থ নষ্ট হলে বঙ্গদর্শন’-এ কৃষক স্বার্থ সংরক্ষণের কথা প্রচার করা হয়। স্বাভাবিক কারণেই বঙ্গদেশের কৃষক অসন্তোষের ব্যাখ্যাকালে বঙ্গদর্শন’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
মূল্যায়ন : অনেকে বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত লেখার মধ্যে স্ববিরােধিতা দেখেছেন। কিন্তু এই বক্তব্য অমূলক। বঙ্কিমচন্দ্র প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানচর্চায় পারদর্শী ছিলেন। তার পত্রিকা বাংলায় মানসিক জাগরণ সৃষ্টি করে।
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণী বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন )আধুনিক ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি আলােচনা করাে।
: উত্তর) ভূমিকা : ভারতে দেশজ খেলাধুলার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল শতর, পাশা, বাঘবন্দি, হাডুডু, কুস্তি, গেণ্ডুয়া, গুলতি খেলা।
খেলাধুলার গতিপ্রকৃতি : আধুনিক ভারতে দেশজ খেলার পাশাপাশি বিদেশি খেলার আগমন ঘটে, যেমন
১) ক্রিকেট : ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সূত্র ধরেই ভারতে ক্রিকেট খেলার সূচনা হলেও তা ভারতস্থ ইংরেজ সামরিক বাহিনী ও শ্বেতাঙ্গদের ক্লাব বা জিমখানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
পরবর্তীকালে–
দ্বিতীয়ত, ভারতে হিন্দু, পারসি, মুসলিম ও খ্রিস্টান দলের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলানাে হত।
হকি : ভারতে মূলত ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর হাত ধরেই হকি খেলার প্রসার ঘটে এবং কলকাতায় ভারতের প্রথম হকি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় (১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দ)। বিশ শতকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক গেমসে ভারত প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলায় হল্যান্ডের কাছে ভারত ৩-০ গােলে পরাজিত হয়। ধ্যানচঁাদ ছিলেন ভারতের একজন বিখ্যাত হকি খেলােয়াড়।
ফুটবল : ইংরেজদের হাত ধরে ভারতে ফুটবল খেলার সূচনা হলেও নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের জনক। পরবর্তীকালে ‘মােহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৮৮৯ খ্রি.) এবং ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে আই এফ এ শিল্ড প্রতিযােগিতায় ইংরেজদের ইস্ট ইয়র্ক ক্লাবকে হারিয়ে দেয়।
ইতিহাসচর্চা : ১৯৭০-এর দশকে ইউরােপে খেলাধুলার ইতিহাস সম্পর্কে চর্চা শুরু হলেও ভারতে তা শুরু হয় ১৯৮০-র দশকে এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য গবেষকরা হলেন সৌমেনচন্দ্র মিত্র, আশীষ নন্দী, বােরিয়া মজুমদার, রামচন্দ্র গুহ, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উপসংহার : ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসে টেনিস, পােললা, গলফ, রাগবি, বাস্কেটবল খেলারও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা ছিল। ভারতীয়দের কাছে আধুনিক খেলাধুলা অবসরবিনােদন ও পৌরুষ প্রকাশের মাধ্যম হলেও তা ছিল পরাধীন ভারতে জাতীয়তাবাদ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম।
প্রশ্ন )*আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘জীবনস্মৃতি’র গুরুত্ব বিশ্লেষণ করাে।
অথবা, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি’ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর
ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘জীবনস্মৃতি’ নামক আত্মজীবনীটি একটু ভিন্ন ধরনের, কারণ এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ তার আত্মগঠনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। তাই আধুনিক ভারতের ব্যক্তি-ইতিহাস রচনার উপাদানরূপে এই গ্রন্থটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনস্মৃতির গুরুত্ব’: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘জীবনস্মৃতি’র গুরুত্বগুলি হল—
বাল্যকথা : এই গ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছােটোবেলার ‘শিক্ষারম্ভ’, ওরিয়েন্টাল সেমিনারির শিক্ষাব্যবস্থা এবং নর্মাল স্কুল ও সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
ধর্মীয় পরিবেশ : রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ নেতা; রবীন্দ্রনাথ ব্রাত্মধর্মে দীক্ষিত হন। তার এই রচনার মাধ্যমে গায়ত্ৰীমন্ত্র ও ব্রিসংগীত’-এর কথা এবং ব্রাত্মধর্মের আত্মসমালােচনাও জানা যায়।
স্বাদেশিকতা : রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই স্মৃতিকথায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে এবং রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে পরিচালিত একটি স্বাদেশিকতা সভার কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি ঠাকুরবাড়ির সাহায্যে নবগােপাল মিত্রের ‘ হিন্দুমেলা’র প্রতিষ্ঠা :
হয়েছিল বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
উপসংহার : জীবনস্মৃতি ছিল উনিশ শতকের শেষ তিরিশ বছরের বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির এক অনবদ্য ভাষ্য।
ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন।। ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা কী?
উত্তর ভূমিকা : ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের জন্য সাধারণ মহাফেজখানা, গ্রন্থাগার বা বিভাগীয় দপ্তর প্রভৃতি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি আজকাল ইনটারনেট (www) থেকেও ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
তথ্যের সহজলভ্যতা : দেশবিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার ও মহাফেজখানা, মিউজিয়াম প্রভৃতির সংগৃহীত নথিপত্র ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ইনটারনেট-এ আপলােড-এর ফলে সহজেই তথ্য পাওয়া যায়।
এ সময় ও খরচ হ্রাস : ইতিপূর্বে তথ্য সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা বিদেশে যেতে হত। কিন্তু এখন ঘরে বসে ইনটারনেটের মাধ্যমে তা খুব অল্প সময়ে ও অল্প খরচে পাওয়ার ফলে সময়ের অপচয় কমে ও গবেষণা খরচ হ্রাস পায়।
ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধা :
ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন— সত্যাসত্যের অনিশ্চয়তা : চাক্ষুষ নথিপত্র ঘেঁটে বা আকর গ্রন্থ পাঠ করে ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের সত্যতা সম্পর্কে যতটা নিশ্চিত হওয়া যায়ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে তা সম্ভব নয়। তথ্য সূত্রের অভাব : ইনটারনেট থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্যসূত্র তেমন না থাকার ফলে তথ্যের বিশ্বাসযােগ্যতাও থাকে না। আবার অনেক সময় ইনটারনেট-এ তথ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে; ফলে গবেষণার কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
উপসংহার : কোনাে একটি বিষয়ে অল্প সময়ে ইনটারনেট-এ চটজলদি প্রচুর পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া গেলেও পরে আকর গ্রন্থ বা নথিপত্র থেকে তথ্যগুলি মিলিয়ে নেওয়া উচিত। এর ফলে ইতিহাস বিকৃতি ঘটে না।
ইতিহাসের ধারণা প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নঃ। ব্রিটিশ ‘সােমপ্রকাশ’ সংবাদপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়?
ব্রিটিশ সরকার ‘সােমপ্রকাশ’ সংবাদপত্রের প্রকাশ বদ করে দেয়, কারণ—
প্রথমত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিকল্পনায় প্রকাশিত ‘সােমপ্রকাশ’ নামক সংবাদপত্র (যদিও প্রথমদিকে এটি ছিল। সাময়িকপত্র) ছিল নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশক।
দ্বিতীয়ত, এই পত্রিকায় সেই সময়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচারবিভাগ ও সামাজিক বিষয়ে নির্ভীক আলােচনা থাকত।
প্রশ্ন । ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী?
উত্তর) ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্বগুলি হলপ্রথমত, সংবাদপত্র কীভাবে জনমত গঠনে সাহায্য করে তা জানা যায়;
দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের জনবিরােধী নীতির সমালােচনার বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে;
তৃতীয়ত, উনিশ শতক ও বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদের উদ্ভব, প্রচার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা জানা যায়;
চতুর্থত, উনিশ শতকে এদেশের সমাজ ও ধর্মের ক্ষেত্রে যে-সমস্ত কুসংস্কার ছিল তার বিরুদ্ধে সমাজ সংস্কারক ও ধর্ম সংস্কারকরা কীভাবে সােচ্চার হয়েছিলেন তা জানা যায়।
দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, সতীদাহপ্রথার বিরােধিতায় দিগদর্শন, নীলবিদ্রোহের সপক্ষে জনমত গঠনে হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ব্রিটিশ সরকারের জনবিরােধী নীতির সমালােচনার ক্ষেত্রে ‘সােমপ্রকাশ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বয়কট আন্দোলন প্রসারে সন্ধ্যা পত্রিকার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
প্রশ্নঃ। সরকারি নথিপত্র ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বনের কারণ কী?
উ) সরকারি নথিপত্র ব্যবহারকালে সতর্কতা অবলম্বনের। কারণগুলি হল—
প্রথমত, এগুলি মূলত সাম্রাজ্যবাদী ও প্রশাসকের দৃষ্টিভঙ্গিতে। রচিত হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ঘটনার সঠিক ভাষ্য পাওয়া। যায় না।
দ্বিতীয়ত, সরকারি রিপাের্ট একপেশে হওয়ায় সমসাময়িক সাহিত্য, সংবাদপত্র প্রভৃতি থেকে সত্য যাচাই করে নেওয়া। প্রয়ােজন।
প্রশ্ন।। *আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কী?
উত্তর) আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা হল ব্যক্তির জীবন ও স্মৃতিমূলক সাহিত্য। ব্যাখ্যা করে বলা যায়—
প্রথমত, এখানে লেখক তার জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সমসাময়িক দেশকালের স্মৃতি রােমন্থন করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয়ত, এ প্রসঙ্গে বিপিনচন্দ্র পালের সত্তর বছর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি’ও সরলাদেবী চৌধুরানির জীবনের ঝরাপাতা নামক আত্মজীবনীর কথা বলা যায়।
(প্রশ্নঃ)সামরিক ইতিহাস বলতে কী বােঝায়?
উত্তর) প্রাচীনকাল থেকে সংঘর্ষের মাধ্যমে ইতিহাসের গতি বয়ে চলেছে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধাস্ত্রের বিবর্তন, সামরিক বাহিনীর প্রকৃতি ও সমরকুশলতা, যুদ্ধের প্রকৃতি ও প্রভাবকে তুলে ধরা হল সামরিক ইতিহাস। এই প্রসঙ্গে-
প্রথমত, পেলােপনেসীয় যুদ্ধ, রামায়ণ ও মহাভারতের যুদ্ধসহ প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডা যুদ্ধের এই ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই ইতিহাসের গবেষকরা হলেন—শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন, রিচাড কন, যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন, এ জে পি টেলর, বিবেকানন্দ মুখােপাধ্যায়, কৌশিক রায়।
প্রশ্নঃ) পরিবেশের ইতিহাস কী?
উত্তর। পরিবেশের অর্থাৎ, প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানবসমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসই হল পরিবেশের ইতিহাস। এই ইতিহাসের বিভিন্ন দিকগুলি হল—
প্রথমত, সুপ্রাচীন কালে মানুষের আবির্ভাব হয়। পশুশিকারি জীবন থেকে আধুনিক মানবসভ্যতার উত্তরণের পিছনে পরিবেশের ভূমিকা ও অবদানকে চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের মূল বৈশিষ্ট্য।
দ্বিতীয়ত, ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সংক্রান্ত আলােচনা থেকেই পরিবেশের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে; এই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন—র্যাচেল কারসন, ডেভিড আরনল্ড, রামচন্দ্র গুহ, মাধব গ্যাডগিল, রিচার্ড গ্রোভ, স্যামুয়েল পি হাইজ, অ্যান্ড্রু সি ইসেনবার্গ, আলফ্রেড ডব্লিউ কুস।
ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়
প্রশ্ন )*পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?
উত্তর) পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্বগুলি হল—
প্রথমত, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা করা।
দ্বিতীয়ত, পরিবেশ সংকট ও তার প্রকৃতি, পরিবেশ বিপর্যয় ও তার ভয়াবহতা, বাসস্থানের সুস্বাস্থ্য, অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও তার প্রয়ােগের ব্যবস্থা করা।
প্রশ্ন * আধুনিক ভারত ইতিহাসচর্চার প্রধান উপাদানগুলি কী কী?
– উঃ আধুনিক ভারত ইতিহাসচর্চার প্রধান উপাদানগুলি হল
প্রথমত, সরকারি নথিপত্র অর্থাৎ, পুলিশ, গােয়েন্দা, সরকারি অফিসার বা আধিকারিকদের প্রতিবেদন, বিবরণ, চিঠিপত্র; এগুলি হল ইতিহাসচর্চায় প্রাথমিক উপাদান বা সূত্র।
দ্বিতীয়ত, গৌণ উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, চিঠিপত্র, সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র ।
তৃতীয়ত, ফোটোগ্রাফি, মুখের কথা, চলচ্চিত্র, মানচিত্র, রেফারেন্স বই, দৃশ্যশিল্প ও ব্যক্তিগত ডায়েরিও ভারত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
প্রশ্ন। মহাফেজখানা কী?
উত্তর) সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণকেন্দ্র মহাফেজখানা বা লেখ্যাগার বা আর্কাইভস নামে পরিচিত। এখানে সাধারণ ও গােপন নথিপত্র (পুলিশ, গােয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের) থাকে। স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকারের নথি সংরক্ষণাগার রূপে দিল্লিতে গড়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় মহাফেজখানা এবং রাজ্যস্তরে রাজ্য-মহাফেজখানা। ভারতের স্বদেশি আন্দোলন, অসহযােগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়াে আন্দোলন সহ বিভিন্ন আন্দোলনের প্রাথমিক উপাদান মহাফেজখানায় রয়েছে।
প্রশ্নঃ* আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে?
অথবা, স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?
* উওর) আধুনিক ইতিহাসচর্চার উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন ব্যক্তির আত্মজীবনী, কারণ—
প্রথমত, এ ধরনের রচনায় সমাজের নানান স্তরের মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ থাকে, যেগুলি তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এই ঘটনাগুলির মাধ্যমে সমকালের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ধরা থাকে।
দ্বিতীয়ত, এগুলি থেকে সেই সময়কার সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে নানান তথ্য ও ধারণা পাওয়া যায় এবং এ কারণেই এগুলি পরােক্ষ বিষয় নয় তা প্রত্যক্ষ বিষয়। তৃতীয়ত, তবে আত্মজীবনী মানেই ইতিহাসের উপাদান নয়, কারণ এগুলিতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন পড়ে যা ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি ছোট প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ। *সােমপ্রকাশ’ পত্রিকা কবে প্রকাশিত হয়?
উত্তর) সােমপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
(প্রশ্নঃ) জীবনের ঝরাপাতা কী ধরনের সাহিত্য ?
উত্তর) জীবনের ঝরাপাতা আত্মজীবনীমূলক সাহিত্য।
প্রশ্নঃ সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কী ?
উত্তর) সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনীর নাম ‘জীবনের ঝরাপাতা’।
(প্রশ্নঃ) জীবনের ঝরাপাতা’ কবে কোথায় প্রকাশিত হত?
উত্তর) ১৯৫৪-৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘জীবনের ঝরাপাতা’ প্রকাশিত হত।
(প্রশ্নঃ) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম পত্রিকার নাম কী ?
উত্তর) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম পত্রিকার নাম ‘দিগদর্শন’।
প্রশ্নঃ।। জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধির পরিচয় কী?
উত্তর) জওহরলাল নেহরু ছিলেন স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধি ছিলেন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্নঃ * ‘দিগদর্শন’-এর সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর) দিগদর্শন’-এর সম্পাদক ছিলেন জে. মার্শম্যান।
প্রশ্নঃ ।। সমাচার দর্পণ” কবে প্রকাশিত হয়?
উত্তর) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে সমাচার দর্পণ’ প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ। সমাচার চন্দ্রিকা কে প্রকাশ করেন ?
উত্তর) সমাচার চন্দ্রিকা’ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ করেন
(প্রশ্নঃ) উনিশ শতকের প্রথম সারির দুটি বাংলা সংবাদপত্রের নাম লেখাে।
উত্তর) উনিশ শতকের প্রথম সারির দুটি বাংলা সংবাদপত্রের নাম হল সংবাদ প্রভাকর’ এবং ‘সােমপ্রকাশ।
প্রশ্নঃ। উনিশ শতকের প্রথম সারির কয়েকটি বাংলা সাময়িকপত্রের নাম লেখো।
উত্তর) উনিশ শতকের প্রথম সারির কয়েকটি বাংলা সাময়িকপত্র হল ‘বঙ্গদর্শন’, ‘ভারতী’ ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ । বঙ্গদর্শন ‘ পত্রিকা প্রথম কবে প্রকাশিত হয়?
উত্তর) ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশিত হয় ১২ এপ্রিল, ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্নঃ। বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর) বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র প্রবর্তন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি 2023
প্রশ্নঃ) ভারতের জাতীয় মহাফেজখানা কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর) ভারতের জাতীয় মহাফেজখানা দিল্লিতে অবস্থিত।
(প্রশ্নঃ) গােপন নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযােগ্য দিকগুলি কী কী?
উত্তর) গােপন নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল পুলিশ, গােয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের নথিপত্র।
(প্রশ্নঃ) সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদনের একটির উদাহরণ লেখাে।
উত্তর) টমাস ব্যাবিংটন মেকলের। প্রতিবেদন সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদনগুলির মধ্যে অন্যতম।
(প্রশ্নঃ) সরকারি নথিপত্রের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য বিবরণের উদাহরণ লেখাে।
উত্তর) সরকারি নথিপত্রের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য বিবরণ হল ‘নীল কমিশনের বিবরণ।
প্রশ্নঃ। সত্তর বৎসর’ নামে আত্মজীবনীটি কার লেখা?
উত্তর) সত্তর বৎসর’ নামক আত্মজীবনীটি বিপিনচন্দ্র পালের লেখা।
প্রশ্নঃ) জীবনস্মৃতি’ কার আত্মজীবনী? *
উত্তর ‘জীবনস্মৃতি’ নামক আত্মজীবনী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।
প্রশ্নঃ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম জীবন স্মৃতি।
প্রশ্নঃ।। বর্তমান কলকাতার দুটি ব্রিটিশ স্থাপত্যের নাম লেখাে।
উঃ। বর্তমান কলকাতার দুটি ব্রিটিশ স্থাপত্য হল রাইটার্স বিল্ডিং এবং জাতীয় গ্রন্থাগার।
প্রশ্নঃ।। ব্রিটিশ মিউজিয়াম কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইতিহাসের ধারণা দশম শ্রেণি ছোট প্রশ্ন
প্রশ্নঃ। ভারতীয় জাদুঘর কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্নঃ।। পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতি গ্রন্থের লেখক কে?
উঃ বিনয় ঘােষ এই গ্রন্থের লেখক।
প্রশ্নঃ।। *ভারতের প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস কোনটি?
উঃ। কলহনের ‘ রাজতরঙ্গিণী’ ভারতের প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস।
‘আলম আরা’ ছবিটি কবে তৈরি হয় ?
উত্তর) ‘আলম আরা’ ছবিটি তৈরি হয় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে। ৪৯ ভারতে কে, কবে ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন ?
উত্তর) ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে দাদাসাহেব ফালকে ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
প্রশ্নঃ।। বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারার প্রথম ছবি কোটি? কে, কবে এই ছবি নির্মাণ করেন ?
উত্তর) বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারার প্রথম ছবি ছিল ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সত্যজিৎ রায় নির্মিত পথের পাঁচালী।
প্রশ্নঃ। পথের পাঁচালী ছবিটির পরিচালক কে?
উত্তর) পথের পাঁচালী ছবিটির পরিচালক হলেন সত্যজিৎ রায়।
প্রশ্নঃ) সত্যজিৎ রায় বাদে বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন নতুন ধারার চলচ্চিত্রকারের নাম লেখাে।
উত্তর) সত্যজিৎ রায় বাদে বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন নতুন ধারার চলচ্চিত্রকার হলেন মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক।
প্রশ্নঃ।। বাংলা চলচ্চিত্রের জনক কাকে বলা হয় ?
উত্তর) বাংলা চলচ্চিত্রের জনক’ বলা হয় হীরালাল সেনকে।
প্রশ্নঃ। রয়্যাল বায়ােস্কোপ কোম্পানি (১৮৯৮ খ্রিঃ) কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর) রয়্যাল বায়ােস্কোপ কোম্পানি (১৮৯৮ খ্রিঃ) প্রতিষ্ঠা করেন হীরালাল সেন।