Political science

বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো।

 বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো।

এখানে বিকেন্দ্রীকরণ কি এবং বিকেন্দীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করা হয়েছে।

বিকেন্দ্রীকরণ-কি-বিকেন্দ্রীকরণের-সুবিধা-ও-অসুবিধা-গুলি-আলোচনা-করো

 

বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization)

 

একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতির আকাঙ্ক্ষার ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে-কেন্দ্রীকরণ (centralization) ঘটে, তার সঙ্গে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত গণতন্ত্রের সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য্যের দাবির সামঞ্জস্য রক্ষা করাই হোল বিকেন্দ্রীকরণের প্রবণতা আধুনিক সরকারের অন্যতম প্রধান সমস্যা। সাধারণভাবে প্রশাসকরা সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে হলেও জনসাধারণ স্থানীয় বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের হাতে গ্রহণ করতে আগ্রহী। পরস্পর-বিরোধী এই দু’টি প্রবণতার মধ্যে সরকার কোন্‌টিকে যথাযথ মর্যাদা দেবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যথেষ্ট কঠিন। তবে বিংশ শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে গৃহীত কেন্দ্রীকরণ নীতিটি আজকের দিনে অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষতঃ, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে উন্নয়নের কৌশল হিসেবে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনাকে কেবল গ্রহণ করাই হয়নি, সেইসঙ্গে তাকে কার্যকর করার জন্য ঐকান্তিকভাবে প্রয়াস চালানো হচ্ছে। ভারতের দিকে তাকালেই এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়।

 

বিকেন্দ্রীকরণের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ (Definition and Different Forms) : 

 

কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণের অর্থ–

 

বিকেন্দ্রীকরণ হোল কেন্দ্রীকরণের বিপরীত ধারণা। সর্বোচ্চ স্তরে যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত হওয়াকে কেন্দ্রীকরণ বলা হয়। এল. ডি. হোয়াইটের মতে, সরকারের নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হস্তান্তরের অগ্রগতিকে কেন্দ্রীকরণ বলা হয়। অত্যধিক কেন্দ্রীকরণ নীতির বিরুদ্ধ-প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছে। কোন একটি বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে কেন্দ্রীভূত না রেখে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত ঐ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়াকে পরিচালন-বিজ্ঞানে বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থিত প্রশাসনিক একক বা ইউনিটগুলি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার রূপায়ণের ব্যবস্থা করতে পারে।

 

বিকেন্দ্রীকরণের শ্রেণীবিভাজন:

 

  বিকেন্দ্রীকরণ দু’ধরনের হতে পারে, যথা—[i] রাজনৈতিক (political) এবং [ii] প্রশাসনিক (administrative)। সরকারের নতুন স্তরসমূহের প্রতিষ্ঠাই হোল রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ। ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বয়ংশাসিত রাজ্যসমূহের এবং প্রতিটি রাজ্যের মধ্যে পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠা রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এরূপ বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে নিম্নতন স্তর পর্যন্ত এমনভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে ক’রে প্রশাসনের সঙ্গে জনসাধারণের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠতে পারে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলতে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তরে স্বাধীন প্রশাসনিক সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন ক’রে তাদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদানকে বোঝায়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ দু’ধরনের হতে পারে, যথা—[i] উল্লম্বী ও ভৌগোলিক এবং [ii] আনুভূমিক ও কার্যগত। যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ‘এলাকা-প্রশাসন’ (area administration) গঠন ক’রে তাদের হাতে নিজেদের প্রশাসন মোটামুটি স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা অর্পণ করে, তখন তাকে উল্লম্বী ও ভৌগোলিক প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। ভারতের জেলা (district) ও বিভাগ (division)-এর প্রশাসন হোল ‘এলাকা প্রশাসনে’র উদাহরণ। এগুলি ছাড়াও ভারতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য-স্তরে অনেকগুলি প্রশাসনিক এলাকা রয়েছে। এগুলি সার্কেল, অঞ্চল (zone) প্রভৃতি নামে পরিচিত। এগুলির প্রত্যেকটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী যে কর্তৃপক্ষ থাকে, তা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকারী। ভৌগোলিক বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে সদর দপ্তরের সঙ্গে অসংখ্য শাখা এজেন্সী (field agencies)-র সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সময় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার, কার্যগত বিকেন্দ্রীকরণ বলতে প্রযুক্তিগত বা পেশাদার সংস্থা (professional bodies) কিংবা বিশেষজ্ঞদের হাতে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদানকে বোঝায়। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পর্যদ (All India Medical Council), বার অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (University Grants Commission), কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পর্ষদ (Central Social Welfare Board) প্রভৃতি হোল কার্যগতভাবে বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এগুলিকে আনুভূমিক প্রকৃতিবিশিষ্ট বলা হয়। কারণ, নিজ নিজ ক্ষেত্রে এরা প্রায় অভিন্ন মর্যাদার অধিকারী।

 

বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা:

 

বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা ( Advantages and Disadvantages) সুবিধা ঃ

 

 বিকেন্দ্রীকরণের কতকগুলি সুবিধা বা গুণ রয়েছে। এগুলি হোল ও

 

অতিরিক্ত দায়িত্ব ও কার্যাবলী থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিষ্কৃতিদান–

 

[১] আধুনিক রাষ্ট্রের আকৃতি যেমন বিরাট, তেমনি তার সমস্যাও বিপুল। কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সর্বপ্রকার সমস্যার প্রতি সমানভাবে দৃষ্টিপাত করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া,  বিপুল পরিমাণ সমস্যা সমাধানের জন্য যে-জ্ঞান, কর্মতৎপরতা ও সময়ের প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় সরকারের তা থাকে না। এক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও কার্যাবলীর বোঝা থেকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নিষ্কৃতি পাবে। তাছাড়া, বিকেন্দ্রীকরণের ফলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক সরকারগুলি জনগণের স্থানীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান অতি সহজেই করতে পারে। কারণ, এক্ষেত্রে নিজেদের সমস্যার সমাধানের কাজে স্থানীয় জনসাধারণই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে প্রশাসনের তৃণমূল ইউনিট বা এককগুলির মাধ্যমে কার্যতঃ কেন্দ্রীয় সরকারের মান-মর্যাদাই বৃদ্ধি পায়। তাই কেউ কেউ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বিকেন্দ্রীকরণ কেন্দ্রকে সন্ন্যাসরোগের হাত থেকে এবং স্থানীয় বা আঞ্চলিক সরকারগুলিকে রক্তাল্পতার বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

 

জনগণের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও চেতনার বৃদ্ধিসাধন-

 

‘ [২] ক্ষমতা-বিকেন্দ্রীকরণের ফলে জনসাধারণ প্রশাসন পরিচালনার কার্যে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার ফলে তাদের মধ্যে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও নাগরিক চেতনা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এরূপ অভিজ্ঞতা ও চেতনা একদিকে যেমন নাগরিকদের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের উপযুক্ত ক’রে গড়ে তোলে, অন্যদিকে তেমনি তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে গণতন্ত্র তত্ত্বকথার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। 

 

[৩] কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশাসন পরিচালিত হলে সরকারের পক্ষে যাবতীয় বিষয়ে মনঃসংযোগ করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সব বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় তাঁরা বিশেষভাবে আমলা-নির্ভর হয়ে পড়েন। তাই সরকারী কাজে :দীর্ঘসূত্রতা ও ‘লালফিতের বাঁধন’ (red-tapism) সরকারী প্রশাসনকে কার্যতঃ গতিহীন ক’রে তোলে। ফলে জনগণের কাছে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। কিন্তু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হলে আঞ্চলিক বা স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে যেমন কাজ করতে পারে, তেমনি দীর্ঘসূত্রতা ও লালফিতের বাঁধনের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। এইভাবে প্রশাসনের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

 

[৪] ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে ঊর্ধ্বতন প্রশাসকের অধীনে থেকে অধস্তন প্রশাসকদের কাজ করতে হয়। প্রশাসন পরিচালনার ব্যাপারে তাঁদের মতামতের কোন মূল্যই থাকে না। ফলে তাঁদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। তাই তাঁরা আন্তরিকভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারেন না। কিন্তু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ফলে ঐসব অধস্তন প্রশাসক প্রশাসন পরিচালনার প্রশাসনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ পান। ফলে তাঁদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হয়। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করার জন্য ঐকান্তিকভাবে, প্রচেষ্টা চালান। তাছাড়া, যে কোন দায় দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁরা সদাসর্বদাই প্রস্তুত থাকেন। এর ফলে প্রশাসনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়।

 

উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ-

 

[৫] কেন্দ্রীয়ভাবে শাসনকার্য পরিচালিত হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কোন সুযোগ থাকে না। কারণ, এরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল সমগ্র সমাজের ওপরেই পড়ে। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যে-কোন প্রশাসনিক বিষয়ে  আঞ্চলিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়। যে-কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপ না ক’রে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। বলা বাহুল্য, স্থানীয়ভাবে শাসনকার্য পরিচালনা-সংক্রান্ত কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হলে সমগ্র দেশে তা চালু করা সম্ভব হয়। এইভাবে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটে।

 

সুষ্ঠু, সাবলীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের প্রতিষ্ঠা-

 

[৬] বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যেসব স্থানীয় বা আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, সেগুলি প্রধানতঃ জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় বলে জনসাধারণের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। জনসাধারণ নিজেরাই প্রতিনিধিদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ ক’রে বলে অতি সহজেই প্রতিনিধিদের যোগ্যতা বিচার করতে পারে। কোন প্রতিনিধি জনস্বার্থ-বিরোধী কাজ করলে কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠলে জনসাধারণের তীব্র অসন্তোষ ও সমালোচনা তাঁদের আত্ম-সংশোধনের পথে অগ্রসর হতে অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। এইভাবে জনসাধারণের সদা-সতর্ক দৃষ্টি সুষ্ঠু, সাবলীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থার জন্ম দেয়। 

 

দেশের সামগ্রিক উন্নতি সাধন-

 

[৭] ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে উন্নয়নের ধারা শ্লথ হয়ে পড়ে। কারণ, উন্নয়নের ব্যাপারে কোনরূপ প্রতিযোগিতা থাকে না। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যেসব আঞ্চলিক বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের মধ্যে উন্নয়নের ব্যাপারে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। এরূপ প্রতিযোগিতার ফলে কেবল সংশ্লিষ্ট অঞ্চল বা এলাকারই উন্নতি ঘটে না, সেইসঙ্গে সমগ্র দেশের উন্নতি সাধিত হয়। 

 

জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সহায়ক-

 

[৮] ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের পৃথক পৃথক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে যথাযথভাবে নজর দেওয়া  সম্ভব হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের অসম বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। যেসব অঞ্চল বৈষম্যের শিকার হয়, সেখানে আঞ্চলিকতাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রভৃতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এইভাবে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয়। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মসূচী প্রণয়ন করে। তাই আঞ্চলিকতাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ চরম আকার ধারণ করতে পারে না এদিক থেকে বিচার করে বিকেন্দ্রীকরণকে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সহায়ক বলে চিহ্নিত করা ।

 

ন্যায়-নীতিবোধের অনুপন্থী হয়-

 

[৯] ন্যায়নীতিবোধের দিক থেকেও বিকেন্দ্রীকরণের নীতিটি বিশেষভাবে সমর্থনযোগ্য। কারণ, যারা স্থানীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাদেরই উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয়ভার বহন করা

উচিত। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার কিংবা প্রশাসন পরিচালিত হলে সব অঞ্চলের মানুষকেই ঐ ব্যয়ভার সমানভাবে বহন করতে হয়। কিন্তু উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ… করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার অনেক সময় পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কৃত্রিম বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এরূপ বৈষম্য ন্যায়-নীতিবোধের পরিপন্থী। বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলে এই ধরনের অসাম্য-বৈষম্যের অবসান ঘটে। 

 

বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধা : 

 

বিকেন্দ্রীকরণের যেমন কতকগুলি সুবিধা আছে, তেমনি তার কিছু কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হোল ঃ

 

বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা:

 

[১] কেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থায় প্রশাসন তথা সরকারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যতটা সুদৃঢ়ভাবে সমন্বয় ও সংহতি সাধন সম্ভব ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলে তার একান্ত অভাব লক্ষ্য করা যায়। শৃঙ্খলার অভাবে প্রশাসনিক কিংবা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। 

 

অবাস্তব ও অকাম্য 

 

[২] সরকারী কর্মচারী নিয়োগ, বাজেট প্রণয়ন, কর আদার, হিসাবরক্ষা, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচী গ্রহণ প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ বাস্তবে যেমন সম্ভব নয়, তেমনি কাম্যও নয়। কারণ, এইসব বিষয়ের  সঙ্গে দেশের সার্বিক স্বার্থ জড়িত থাকে।

 

পরিচালন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা-

 

[৩](সাম্প্রতিককালে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি, আধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা  বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।) এই ক্ষেত্রগুলিকে আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের হাতে কোনমতেই ছেড়ে দেওয়া যায় না। কারণ, দেশের সামগ্রিক স্বার্থ এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এইসব বিষয় যথাযথভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা ও দক্ষতা বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থাগুলির আদৌ নেই।

 

অকাম্য ব্যবস্থা-

 

[৪] প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে নৈপুণ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যয়-হ্রাসের স্বার্থে অনেকে কেন্দ্রীকরণের সপক্ষে জোরাল যুক্তি তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, প্রশাসনিক ব্যাপারে  অনভিজ্ঞ জনগণের হাতে প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করার অর্থই হোল প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করা। আবার, অনভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থাগুলির হাতে নিজেদের বাজেট প্রণয়ন কিংবা বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা প্রদান করার অর্থই হোল ব্যয় সঙ্কোচনের পরিবর্তে ব্যয়াধিক্য ঘটানো। এদিক থেকে বিচার ক’রে বিকেন্দ্রীকরণকে অকাম্য ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

 

প্রতিশ্রুতি পূরণ অসম্ভব-

 

[৫] নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলি সমগ্র দেশের জন্য কতকগুলি সাধারণ ও অভিন্ন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দান করে। উদাহরণ হিসেবে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা  যায়। বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থা বর্তমান থাকলে তাদের প্রদত্ত এইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপায়িত করা অসম্ভব। সেজন্য কেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন।

 

জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী–

 

[৬] বিকেন্দ্রীকরণ আঞ্চলিক বা স্থানীয় সমস্যাবলীর সমাধান ও আঞ্চলিক স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়কে জাতীয় সমস্যার ও জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এর ফলে একদিকে যেমন জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষিত হয়, অন্যদিকে তেমনি জনসাধারণের মধ্যে প্রাদেশিকতা বা আঞ্চলিকতার মনোভাব বৃদ্ধি করে। অনেক সময় এরূপ মনোভাব বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতির জন্ম দেয়। তাই বিকেন্দ্রীকরণকে অনেকে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করেন। 

 

আপৎকালীন অবস্থার অনুপযোগী-

 

[৭] দেশের আপৎকালীন অবস্থার পক্ষে বিকেন্দ্রীকরণ অনুপযোগী বলে বিবেচিত হয়। কারণ, ক্ষমতা সমগ্র দেশের অসংখ্য আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের হাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ফলে এরূপ অবস্থার দ্রুত মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন সরকারের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ ক্ষেত্রে কেবল কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম। 

 

আর্থিক ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা-

 

[৮] আর্থিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ছাড়া কোন সরকার রাজনৈতিক দিক থেকে সাফল্য লাভ করতে পারে না। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণের ফলে প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারগুলি কখনই আর্থিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের হাতে যতই ক্ষমতা অর্পণ করা হোক না কেন, কার্যক্ষেত্রে সেগুলি অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। 

 

অদক্ষ সরকার–

 

[৯] অনেক সময় আঞ্চলিক বা স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ কর্মীর বিশেষ অভাব লক্ষ্য করা যায়। তার ফলে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঐসব সরকারের হাতে যেসব অদক্ষ সরকার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়, সেগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় না। ফলে জনসাধারণের কাছে ঐসব সরকারের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। কিন্তু কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অভাব ঘটে না। তাই ঐ ধরনের সরকারকে বিকেন্দ্রীকৃত সরকার অপেক্ষা অনেক বেশি দক্ষ ও কাম্য সরকার বলে মনে করা হয়।

 

বিকেন্দ্রীকরণের সাফল্যের শর্তাবলী:

 

  বিকেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আজকের দিনে জনস্বার্থ রক্ষা, প্রশাসনিক উন্নতি, গণতন্ত্রের বাস্তব রূপায়ণ প্রভৃতি কারণে প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিকেন্দ্রীকরণের নীতিটি অনুসৃত হতে দেখা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, বিকেন্দ্রীকরণ আধুনিক প্রশাসনের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। তবে সেই সঙ্গে একথাও সত্য যে নিয়ন্ত্রণহীন বিকেন্দ্রীকরণ প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। তাই উপযুক্ত রক্ষাকবচ (safeguards)-সহ বিকেন্দ্রীকরণকে কার্যকর করা প্রয়োজন। জে. সি. চার্লস (J. C. Charles)-কে অনুসরণ ক’রে বিকেন্দ্রীকরণের সাফল্যের জন্য কতকগুলি শর্ত বা রক্ষাকবচের উল্লেখ করা যেতে পারে। বিকেন্দ্রীকরণের পূর্বে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে যেসব বিষয়ে যথোচিত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে, সেগুলি হোল ঃ [i] কেবল একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা বা এজেন্সীর কাছে স্থানীয় আধিকারিকবৃন্দ রিপোর্ট পাঠাতে বাধ্য থাকবেন। [ii] উভয় ধরনের কর্তৃপক্ষের কার্যগত পরিধির সীমানা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। [iii] বিভিন্ন স্থানীয় সংস্থার কার্যপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে সমরূপতা ও একটি সাধারণ মান (a common standard) বজায় রাখতে হবে। [iv] যে-কোন সম্ভাব্য স্থানীয় পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয় এজেন্সীগুলি যথেষ্ট পরিমাণে নমনীয়, ভৌত ও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো (sufficiently flexible, physical and psychological structure) থাকা প্রয়োজন। [v] স্থানীয় বা আঞ্চলিক সরকারগুলি সাধারণ নীতি-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে না। [vi] ঊর্ধ্বতন সরকারের কাছে আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। [vii] সরকারের নিম্নতন সংস্থা যাতে কেন্দ্রের কাছে সরাসরি সুপারিশ প্রদান করতে পারে, তার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন এবং [viii] যে-কোন সময় কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারগুলির কাজকর্ম পরিদর্শন করতে পারবে। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এই ৮টি বিষয় যথাযথভাবে কার্যকর করার পরেই কেবল বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

 

বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ:

 

পরিশেষে একথা বলা যেতে পারে যে, কেন্দ্রীকরণ কিংবা বিকেন্দ্রীকরণের কোনটিই পূর্বনির্ধারিত এমন কোন নীতি নয়, যেটিকে সর্বক্ষেত্রে ও সর্বসময়ে সমানভাবে প্রয়োগ করা যায়। জেমস ফেসলার (James Fesler)এর মতে, কেন্দ্রীভূত অথবা বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চার ধরনের উপাদানের অবস্থিতি প্রয়োজন। এগুলি হোল ঃ [i] দায়িত্বশীলতার উপাদান ; [ii] প্রশাসনিক উপাদান ; [iii] কার্যগত উপাদান এবং [iv] বাহ্যিক উপাদান। সাধারণভাবে একথা বলা হয় যে, কর্তৃত্ব ও দায়িত্বশীলতা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে। তাই যে-কোন কার্যের জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল থাকতে হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অধস্তন কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা প্রদান করতে চান না। তাই বিকেন্দ্রীকরণের পূর্ব-শর্ত হিসেবে অনেকে প্রতিটি স্তরের সরকারকে তার সম্পাদিত কার্যাবলীর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বশীল থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আবার, প্রশাসনিক উপাদানগুলির মধ্যে সংস্থার বয়স, তার অনুসৃত নীতি ও পদ্ধতিসমূহের স্থায়িত্ব, কর্মচারীদের দক্ষতা প্রভৃতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অধস্তন সংস্থাগুলির মধ্যে এইসব উপাদান বর্তমান থাকলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটতে পারে। তাছাড়া, অধস্তন সংস্থাগুলি কী ধরনের ও কী পরিমাণ কাজ সম্পাদন করছে এবং ঐসব কাজ কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাজের সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা ক’রে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। তবে একটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, প্রতিরক্ষা, পরিকল্পনা, পরিবহন ও যোগাযোগ, মুদ্রাব্যবস্থা প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকবে। বাহ্যিক উপাদানগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হোল রাজনৈতিক দলের চাপ এবং যে-কোন কর্মসূচীতে জনগণের অংশগ্রহণের দাবি। সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলি যদি গণতন্ত্রকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার জোরালো দাবি জানায়, তাহলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সুতরাং ক্ষমতা কেন্দ্রীকৃত অথবা বিকেন্দ্রীকৃত হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *