ছন্দে শুধু কান রাখো প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী বাংলা
ছন্দে শুধু কান রাখো প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী বাংলা
ছন্দে শুধু কান রাখো
অজিত দত্ত
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার উৎস:
‘ছন্দে শুধু কান রাখো’–একটি কিশোরমনস্ক কবিতা, যেটি কবি অজিত দত্তের ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক কবিতা-সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার বিষয়বস্তু:
বিষয়সংক্ষেপ
আলোচ্য ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন ছন্দ হল একপ্রকার পদ্যবন্ধ। ছন্দের উপর ভর দিয়ে কবিতা যেমন এগিয়ে চলে, তেমনি এই মহাবিশ্বের সব কিছুই এক ছন্দময়তার বন্ধনে বাঁধা।
অতএব বিশ্বময় ছড়ানো এক ছন্দস্পন্দন সঠিকভাবে অনুভব করতে গেলে, মন্দ কথায় কান দেওয়া চলবে না এবং ছন্দে কান রেখে চলতে হবে। দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে গিয়ে মনকে সজাগ করে না তুললে, ছন্দকে যথার্থ শোনা যায় না।
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার সারাংশ:
অথচ বিশ্বপ্রকৃতির অজস্র উপাদানে ছড়িয়ে রয়েছে ছন্দ। ঝড়বাদল, জোছনা, দিনের পাখির কলতান কিংবা ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে ছন্দ থাকে টইটুম্বুর হয়ে। নদীর স্রোতের অসাধারণ কলরোলের ছন্দবদ্ধতা মনের মাঝে শুনতে পেলে দেখা যায়, এ যেন ছড়ার ছন্দ, যা কেউ কোথাও লেখেনি।
মোটরের চাকাতেও ছন্দ বেজে উঠতে দেখা যায়। রেলগাড়ির চলাচলেও রয়েছে ছন্দের অনন্য উপস্থিতি জলের উপরেও ছন্দ-তাল বজায় রেখে নৌকো-জাহাজকে পারাপার করতে দেখা যায়।
ছন্দে চলার বড়ো উদাহরণ বুঝি ঘড়ির কাঁটা, যাতে বাঁধা পড়ে আছে রাত ও দিন। অতএব কান পেতে যা শুনতে পাওয়া যাবে, তার কিছুই ছন্দহীন নয়। এইসব ছন্দ যারা কান পেতে ও মন দিয়ে শুনবে, তারাই যথার্থভাবে ভুবনটাকে ছন্দ-সুরের সংকেতে চিনতে পারবে।
আর বিশ্বপ্রকৃতির এই ছড়ানো ছন্দকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারলেই উপলব্ধি করা যাবে জীবনের আনন্দ তখন জীবন হয়ে উঠবে ‘পদ্যময়’। কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দের অনুভূতি গ্রহণ না করলে ছন্দবদ্ধ পদ্য লেখা সহজ হবে না।
নামকরণ:
নামকরণই সাহিত্যের এমন একটি বিষয়, যা যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন-না পাঠককুল ওই সাহিত্যের শৈলীতে প্রবেশের পূর্বে নামকরণ বা শিরোনাম দেখেই পাঠে প্রথম উৎসাহিত হন। অতএব দেখা যায় সাহিত্যকারেরা নামকরণটিকে বিষয়ানুগ ও যুক্তিগ্রাহ্য করে তোলার চেষ্টা করেন। তাই নামকরণ হয়ে ওঠে সাহিত্যের এক মৌলিক উপাদান।
কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ এই কিশোরমনস্ক কবিতাটিতেও দেখা যায় নামকরণের প্রতি কবির ভাবনা যথেষ্ট নিজস্বতা পেয়েছে। কবিতার সূচনায় কবি মন্দ কথায় কান না দিয়ে কেবল ছন্দে কান রাখতে বলেন, কারণ তাঁর গভীর বিশ্বাস দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে মনকে একাত্ম করতে না পারলে জগত্ময় ছড়িয়ে থাকা ছন্দকে যথার্থ অনুভব করা যায় না।
বিশ্বময় ছন্দের সুন্দর প্রকাশকে যথার্থ অনুভব করার প্রেরণা দিতেই কবি কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দ শোনার পরামর্শ দেন। দেখিয়ে দেন ঝড়বাদলে, দিনের পাখির ডাকে, ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে—সর্বত্রই প্রকৃতির নানা প্রসঙ্গে ছন্দ যেন নিজস্ব মাত্রা নিয়ে উপস্থিত। নদীর স্রোতে
মাটির উপর মোটর চাকার, রেলের উপর রেলগাড়ির চলার, জলের উপর নৌকো-জাহাজের পাড়ি জমানোর ছন্দকে কবি কান পেতে শুনতে বলেন।
ছন্দে চলা ঘড়ির কাঁটা যেমন দিনরাত্রিকে বেঁধে রেখেছে, তেমনি এ জগতের ‘কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।’ অতএব সব কিছুর মধ্যে ছন্দের আশ্চর্য প্রকাশ। যারা ‘কান পেতে আর মনে পেতে’ শুনবে, তারাই ‘ছন্দ সুরের সংকেত’ ভুবনটাকে যথার্থ চিনবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
কবিতাশেষে কবি এ কথা জানাতে ভোলেননি, ছন্দকে সঠিক অনুভব করতে পারলে মনে আসবে মজা, যা জীবনকে করে তুলবে পদ্যময়। আবার ছন্দ না থাকলে কবিতা লেখাও যে কঠিন হয়ে পড়বে, এ কথাও কবি উল্লেখ করেছেন।
অতএব দেখা যাচ্ছে, কবি তাঁর কবিতায় প্রকৃতির ছন্দে কান রাখার বিশেষ প্রয়োজনীয়তাকে সর্বাধিক মূল্য দিয়েছেন। এই কান রাখার আসল উদ্দেশ্য জীবনের আনন্দকে সত্যিকারের অনুভব করা। সুতরাং কবিতার শিরোনামে উঠে আসা ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ চমকপ্রদ, অর্থময়, ব্যঞ্জনাধর্মী হওয়ায় তা সার্থক হয়েছে।
ছন্দে শুধু কান রাখো অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর:
একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর
দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর লেখো
প্রশ্নঃ. ছন্দ আছে—এমন চারটি প্রাকৃতিক বিষয় বা ঘটনার নাম লেখা?
উক্ত প্রকৃতির সকল ক্রিয়াকলাপেই ছন্দ আছে। এমন চারটি দৃষ্টান্ত হল—ঝড় বাদল, চাঁদের জোছনা, নদীর স্রোত ও রাত্রি-দিন।
প্রশ্নঃ. যানবাহনের উপর ছন্দ কেমন প্রভাব ফ্যালে?
উত্তর যানবাহনকে ছন্দ মেনেই চলতে হয়। মোটরের চাকায় ছন্দ ধ্বনিত হয়, রেলগাড়িও চলে ছন্দের জাদুতে। জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে নদী বা সাগরে নৌকো বা জাহাজ পাড়ি দেয়। এভাবেই যানবাহনের উপর ছন্দ প্রভাব ফ্যালে।
প্রশ্নঃ ‘চিনবে তারা ভুবনটাকে’—ভুবনটাকে চেনার তাৎপর্য কী?
উত্তর প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বিশাল ভুবনকে চেনার কবি নির্দেশিত অর্থ হল; তার ভাব, চলাচল, ছন্দময়তা ও সৌন্দর্যকে নানাভাবে উপলব্ধি করা। কবি বলতে চেয়েছেন মন ও কান পেতে প্রকৃতির ছন্দ অনুভব করতে পারলেই ভুবনকে চেনা সহজ হবে।
কমবেশি ছ-টি বাক্যে উত্তর লেখো
ৰোধমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ । ছন্দ আছে জোছনাতে,’—উদ্ধৃতাংশটি কার লেখা কোন্ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে? জোছনাতে কীভাবে ছন্দ আছে?
উত্তর কবি অজিত দত্তের লেখা ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
চাঁদের যে মিষ্টি আলো রাতের পৃথিবীকে সৌন্দর্যময়ী করে তোলে তাকেই আমরা জোছনা বলে থাকি। এই সুমধুর জোছনা আমাদের মনে আনন্দের প্রকাশ ঘটায়; আমরা আবেগে মত্ত হয়ে পড়ি জোছনার মাধুর্যে। জোছনার প্রভাবে যেহেতু আমরা প্রভাবিত হই, তাই বলা যায় জোছনারও নিজস্ব ছন্দ আছে, নাহলে তা এমনভাবে মানুষকে মত্ত করতে পারত না।
প্রশ্নঃ নদীর স্রোতের ছন্দ যদি/মনের মাঝে শুনতে পাও…’—নদীর স্রোতের ছন্দ কীভাবে মনের মাঝে শুনতে পাওয়া যায়?
উত্তরা কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। নদী আপন বেগে বয়ে চলে সাগরের উদ্দেশে। নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌকো চলে, মাঝি গান গায়। নদীর স্রোতের কলতান আমাদের মনে আনন্দের সঞ্চার করে। অনুভবের মাধ্যমে স্রোতের ছন্দ বা স্রোতের গান শুনতে পেলে বোঝা যাবে যে, তার মতো মধুর সুর আর কিছুতেই থাকতে পারে না। স্রোতের মাঝে যে ছন্দ আছে, তাই যেন সুন্দর কবিতা।
প্রশ্নঃ। ‘জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/ নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি।’—’জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে নৌকো-জাহাজ’ কীভাবে পাড়ি দেয় ?
উত্তরা কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতি ছন্দময়, অর্থাৎ প্রকৃতির সকল কাজের মধ্যেই রয়েছে ছন্দ। ছন্দ ছাড়া জীবন অতিবাহিত হতে পারে না। নদী বা সাগরের তীরে বসলে দেখা যায় ঢেউ এসে পাড়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আছড়ে পড়ছে। সেই ধ্বনি ছন্দময়, তা রসিক মানুষের মনে সুরের জাগরণ ঘটায়।
নৌকো বা জাহাজ ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে দূরে যাত্রা করে, সেক্ষেত্রেও ছন্দের চেতনা মনের মধ্যে প্রভাব ফ্যালে। মন দিয়ে অনুভব করতে না পারলে ছন্দকে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
প্রশ্নঃ। ‘কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।’—উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা লেখো।
উত্তরা কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতি ছন্দময়, প্রকৃতির সব কাজেই রয়েছে ছন্দ। ঝড়বাদল, জোছনা, পাখির কাকলি, ঝিঁঝির ডাক, নদীর কলতান, মোটর বা রেলগাড়ির চাকা, জলের স্রোত— সবেতেই ছন্দ বিরাজ করে। জীবনে ছন্দ থাকলে জীবন পদ্যের মতো সুন্দর ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। ভুবনটাই চলছে ছন্দ-সুরের সংকেতে। অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতিতে কোনো কিছুই ছন্দহীন নয়।
প্রশ্নঃ। ‘জীবন হবে পদ্যময়,’—জীবন কখন পদ্যময় হবে?
উত্তর কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। জীবন ও জগৎ ছন্দময়। সর্বত্রই ছন্দ বিরাজমান। বস্তুজগতের ছন্দ যদি জীবনের প্রতিটি কাজে অনুভব করা যায় তবে জীবন হয়ে ওঠে সহজ ও সুন্দর। কবিতা বা পদ্য হল মধুর।
জীবনে আনন্দ আসলে মধুর কবিতা লেখা সহজ হয়ে ওঠে। তাই মন দিয়ে কান পেতে প্রকৃতির সকল উপাদান থেকে ছন্দের স্বাদ অনুভব করতে হবে। এইভাবে জীবনে ছন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারলে জীবনে মজা অর্থাৎ আনন্দ আসবে। আর আনন্দের আগমনেই জীবন পদ্যময় হয়ে উঠবে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো
প্রশ্নঃ। ছন্দ মানবজীবনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরা কবি অজিত দত্ত ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ নামক কবিতায় বলতে চেয়েছেন যে, প্রকৃতির সকল প্রকারের কর্মকাণ্ডেই ছন্দ রয়েছে। এই ছন্দ যেমন জড়জগতে প্রভাব ফ্যালে তেমনই মানবজীবনেও ছন্দের প্রভাব বর্তমান।
প্রকৃতি ছন্দময়, আর প্রকৃতির বুকেই মানুষ পরিপুষ্টি লাভ করে, ফলে মানুষের জীবনেও ছন্দের প্রভাব পড়তে বাধ্য। মানুষ যদি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে রেখে প্রকৃতির ছন্দকে অনুধাবন করতে পারে, তবে মানুষের জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময় ও পদ্যের মতোই লালিত্যময়।
অর্থাৎ ছন্দ মনের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে, মনকে করে তোলে প্রাণময় ও গতিপ্রবণ। প্রকৃতির ছন্দ মানবমনে ধরা পড়লে জীবন হয়ে ওঠে সরস ও পদ্যময়। মানুষের মনকে সৃষ্টিশীল করে তোলে ছন্দ এবং মনের চেতনাশক্তির জাগরণ ঘটাতেও সাহায্য করে প্রকৃতির ছন্দ। এভাবে মানুষের জীবনে ছন্দ প্রভাব ফ্যালে।
প্রশ্নঃ। ‘কান পেতে যা শুনতে পাবে / কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।’—কান পেতে শোনার ব্যাপারটি কী? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কান পাততে বলা হয়েছে বিশ্বচরাচরে। কান হল শ্রবণেন্দ্রিয়, যা দিয়ে আমরা শুনে থাকি। কবি এই শোনার ক্ষেত্রে একমুখী হওয়ার কথা বলেছেন। আর শোনার ব্যাপারটি হল জগত্ময় ছড়িয়ে থাকা নানা বিষয়ের ছন্দ।
পৃথিবীর সর্বত্রই ছন্দ রয়েছে; ছন্দ রয়েছে ঝড়-বাদলে, ছন্দ রয়েছে চাঁদের জোছনায়; এমনকি দিনের বেলায় যে পাখির কাকলি বা গভীর রাতে যে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যায়, তার মধ্যেও ছন্দের অবস্থান রয়েছে। নদীর স্রোতের ছন্দ অনুভব করতে পারলে বোঝা যাবে যে, তার মতো কবিতা আর হতেই পারে না।
ছন্দের প্রভাবে মোটর বা রেলগাড়ি চলমান হয়, আবার নৌকো বা জাহাজ সাগর পাড়ি দেয় জলের ছন্দেই; পৃথিবীতে দিনরাত্রি হয় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে—এখানেও সময় বাঁধা পড়েছে ঘড়ির কাঁটার ছন্দে। এই ছন্দ অনুভব করার ক্ষমতা না থাকলে কোনো কিছু থেকেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ কান পেতে শুনলে আমরা বুঝতে পারব যে পৃথিবী ছন্দময়, সব কিছুতেই রয়েছে ছন্দের অবস্থান, ছন্দহীন জীবন সুন্দর হতে পারে না। এই কারণেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
৩ কান না দিলে ছন্দে জেনো / পদ্য লেখা সহজ নয়।’—ছন্দ বলতে কী বোঝো? কবির প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘ছন্দ’ বলতে সুমিত শব্দের কাব্যময় প্রকাশকে বোঝানো হয়, যা কানের মাধ্যমে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে।
পৃথিবী ছন্দময়, অর্থাৎ প্রকৃতির সকল কর্মকাণ্ডেই রয়েছে ছন্দের ছোঁয়া। ছন্দ না থাকলে জীবনটা আনন্দহীন অর্থাৎ গদ্যময় হয়ে উঠবে। কবিতা বা পদ্য সাহিত্যের এক কোমল অংশ। বলা যায় মনের কোমল ও সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ ঘটে কবিতায়।
মনে যদি আনন্দ না থাকে অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে যদি ছন্দের অনুভূতি আমাদের দেহে-মনে সঞ্চারিত না হয়, তবে জীবন সুন্দর হয় না, মন হয়ে ওঠে কঠিন বা গদ্যের মতোই লালিত্যহীন। যারা কান পেতে আর মন দিয়ে সকল ছন্দকে শুনতে পারবে, তারাই ছন্দের সুর-সংকেত অনুভব করতে পারবে, নাহলে ছন্দ অধরাই থেকে যাবে।
গভীর মনোযোগের মাধ্যমে ছন্দকে গ্রহণ করতে পারলে তা থেকে আনন্দ পাওয়া যাবে, তবেই জীবন হবে পদ্যময়। আর কান না দিলে অর্থাৎ ছন্দকে যদি অনুভূতির জগতে না আনা যায়, তবে পদ্যের মতো লালিত্যময়, কোমল, সুন্দর জিনিস রচনা করা যাবে না বলে কবি মনে করেছেন। তাই তিনি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
প্রশ্নঃ। ‘চিনবে তারা ভুবনটাকে’—’ভুবন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ‘তারা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে?
উত্তর ‘ভুবন’ বলতে বিশ্বপ্রকৃতি অর্থাৎ মহাবিশ্বকে বোঝানো হয়েছে।
‘তারা’ বলতে বোঝানো হয়েছে তাদের, যারা কান পেতে ও মন দিয়ে পৃথিবীর সকল ঘটনার মধ্য থেকেই ছন্দ শুনতে পায়
প্রকৃতির ছন্দকে মানুষ বুঝতে পারে না। এই ছন্দ অনুভব করার জন্য এই বিশ্বপ্রকৃতি হল ছন্দময়, প্রকৃতির সব কিছুই চলে ছন্দের মাধ্যমে। পাখির কাকলি, ঝিঁঝির ডাক, নদীর স্রোত, গাড়ি বা জলযানের এগিয়ে চলা সবেতেই বিরাজ করছে ছন্দ। তবে এই ছন্দ ধরতে হবে, অর্থাৎ অনুভূতির মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করতে হবে।
এর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল আত্মোপলব্ধি; এই বোধ না থাকলে দরকার মন্দ কথায় কান না দেওয়া, আর মনের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব না রাখা। যারা এমন কাজ করতে পারবে, তারাই প্রকৃতির ছন্দ অনুভব করতে পারবে ছন্দকে মনের মধ্যে গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা ছন্দের সংকেত বুঝতে পারবে এবং এভাবেই তারা ভুবন বা জগৎকে চিনবে। ।
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর:
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তর নির্বাচন করো
উত্তর
1.ছন্দ শুনতে হলে ভুলতে হবে (ধন্ধ/দ্বন্দ্ব/অঙ্গ)।উঃদ্বন্দ্ব
2.দিনদুপুরে পাখির ডাকের মতো ঘোর রাতে শোনা যায় (ঝিঁঝির/ফুলের/স্রোতের) ডাক।
উঃ● ঝিঁঝির।
3.জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে পাড়ি দেয় (মোটর/রেলগাড়ি/নৌকো জাহাজ)।
উঃনৌকো জাহাজ।
4. ছন্দে চলা ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা (ঝড়-বাদল/রাত্রি-দিন/ নৌকো জাহাজ)।
উঃ রাত্রি-দিন
5 . কান পেতে শুনলে দেখা যাবে কিচ্ছুটি নয় (ছন্দহীন/স্পন্দহীন/বন্ধহীন)।
উঃছন্দহীন
6. কান ও মন পেতে যারা ছন্দ শুনবে তারা চিনবে (আকাশটাকে/বাতাসটাকে/ ভুবনটাকে)
উঃভুবনটাকে
7. মনের মাঝে মজা জমলে জীবন হবে (গদ্যময়/গল্পময়/পদ্যময়)।
উঃপদ্যময়
8. ছন্দে যথার্থ কান না দিলে লেখা সহজ নয় (গল্প/পদ্য/গান)।
উঃপদ্য
শূন্যস্থান পূরণ করো
১.মন্দ কথায়— দিয়ো না/ ছন্দে শুধু–রাখো। উঃ মন/কান
২.ছন্দ আছে—/ ছন্দ আছে–
উঃঝড়-বাদলে/জোছনাতে।
৩.দেখবে তখন তেমন—/কেউ আর কোথাও।
উঃছড়া/লেখেনি।
৪.—ছন্দে তাল মিলিয়ে / নৌকো—দেয় পাড়ি।
উঃজলের/জাহাজ।
৫.ছন্দ্বে চলে– কাঁটা / ছন্দে বাঁধা—
উঃঘড়ির/রাত্রি-দিন।
৬ চিনবে তারা–/—সুরের সংকেতে।
উঃভুবনটাকে/ছন্দ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১.‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতাটির কবি ও মূল কাব্যের নাম লেখো।
উত্তর
● ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতাটির কবি অজিত দত্ত এবং কাব্যগ্রন্থ ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলন গ্রন্থ।
২.ছন্দে ‘কান রাখো’ বলতে কৰি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ ছন্দে কান রাখো বলতে কবি কর্ণপাত করা বা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে চাওয়াকে বুঝিয়েছেন।
৩.ছন্দ শুনতে হলে কী করা উচিত?
উঃ দ্বন্দ্ব ভুলে মন দেওয়া উচিত।
৪.ঝিঁঝি কখন ডাকে?
উঃ ঘোর রাতে ঝিঁঝি ডাকে।
৫.‘কেউ লেখেনি আর কোথাও।’—কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে?
উঃ ঝড়বাদল, জোছনা, দিনদুপুরে পাখির ডাক, ঝিঁঝির ডাক এবং নদীর স্রোতের মধ্যে নিহিত ছন্দময় কবিতা লেখার কথা বলা হয়েছেছ।
৬. ‘জলের ছন্দ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উঃ। ‘জলের ছন্দ’ বলতে জলধারার তরঙ্গময়তা ও ছন্দবদ্ধতাকে বোঝানো হয়েছে।
৭.জলের ছন্দে কী চলে?
উঃ। জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে নৌকো এবং জাহাজ চলে।
৮.ঘড়ির কাঁটার ছন্দে কী বাঁধা পড়ে?
উঃ।ঘড়ির কাঁটার ছন্দে দিনরাত্রি বাঁধা পড়ে।
৯. সকল ছন্দ কীভাবে শোনা যায়?
উঃ। কান পেতে আর মন পেতে শুনলে সকল ছন্দ শোনা যায়।
১০.ছন্দ-সুরের সংকেতে কাকে চেনা যায়?
উঃ। ছন্দ-সুরের সংকেতে ভুবনটাকে চেনা যায়।
১১.জীবন কখন পদ্যময় হবে?
উঃ। মনের মধ্যে মজা জমা হলে জীবন পদ্যময় হবে।
১২.লেখা কখন সহজ হবে না?
উঃ। ছন্দে কান না দিলে পদ্য লেখা সহজ হবে না।