Geography Class ix

ভারতের জনবসতির ঘনত্বের ও জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ গুলি কি কি

 ভারতের জনবসতির ঘনত্বের ও জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ গুলি কি কি

ভারতের-জনবসতির-ঘনত্বের-ও-জনসংখ্যা-বন্টনের-তারতম্যের-কারণ-গুলি-কি-কি

 

 

ভারতের জনবসতির ঘনত্বের তারতম্যের কারণ :

 

উত্তরঃ

   ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ । কিন্তু এদেশের সর্বত্র জনসংখ্যা সমানভাবে বিস্তার লাভ করেনি । রাজধানী দিল্লিতে যেখানে প্ৰতি বর্গ কিমিতে ৯২৪৯ জন লোক বাস করে, সেখানে অরুণাচল প্রদেশে মাত্র ১০ জন লোক বাস করে কিছু প্রাকৃতিক এবং কিছু অপ্রাকৃতিক কারনে জন্য ।

 

ভারতের বিভিন্ন অংশে জনবসতির ঘনত্বের যে তারতম্য লক্ষ করা যায় সেগুলি হল:–

 

প্রাকৃতিক কারণ: —

 (১) ভূপ্রকৃতি :

         বন্ধুর পর্বত ও মালভুমির চেয়ে সমতল ভুমিতেই সাধারণত জনবসারিত ঘনত্ব বেশি হয় । কারণ, কৃষিপ্রধান দেশে ভারতের সম্ভুমিতেই চাষাবাদ সুবিধাজনক । তাই ভূপ্রকৃতি যুক্ত অঞ্চলগুলিতে কৃষিকাজ, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য, পরিবহন ইত্যাদির ব্যাপক উন্নতি ঘটার ফলে এই অঞ্চলগুলিতে লোকসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি । 

   কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে বা মালভুমি অঞ্চলগুলির বন্ধুর ভূপ্রকৃতির জন্য এখানে কৃষিকাজ, শিল্প, পরিবহন, ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করেনি । এই কারনে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণাত্য মালভুমি অঞ্চল অপেক্ষা সিন্ধু গঙ্গা সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে জনঘন্ত্ব অনেক বেশি ।

 

(২) নদনদী: —

       নদনদীর সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহন, জলসেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ এবং পানীয় জল সরবরাহ সম্ভব হয় । সেই জন্যই উত্তর ভারতের সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, কৃষ্ণ৷,কাবেরী, গোদাবরী ইত্যাদি নদী উপত্যকা গুলিতে এই কারণেই ঘনবসতি গড়ে উঠেছে ।

 

(৩) মাটি: —-

       যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সেখানে স্বভাবিকভাবেই কর্ষিকার্যের সুবিধা থাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি হয় । এই কারণেই গাঙ্গেয় সামভূমির পলিগঠিত অঞ্চলে এবং বদ্বীপ অঞ্চলে উর্বর পলিমাটির জন্য ঘনবসতি গড়ে উঠেছে । 

 

(৪) জলবায়ু: —

       যে সব অঞ্চলে জলবায়ু চরম প্রকৃতির সেখানে স্বভাবিকভাবেই নাতিশীতোষ্ণ বা সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চল অপেক্ষা কম লোক বাস করে । যেমন–অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু বা গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের সমভাবাপন্ন জলবায়ুতে জনসংখ্যার যে ঘনত্ব লক্ষ করা যায় তুলনামূলক ভাবে মরু অঞ্চলের বা গুজরাতের কচ্ছ অঞ্চলে চরম প্রকৃতির জলবায়ুতে সেই ঘনত্ব অনেক কম ।

    

(৫) প্রাকৃতিক সম্পদ: —

      যে সব অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, শক্তি সম্পদ ইত্যাদি পাওয়া যায় সেইসব অঞ্চলে এই সব সম্পদ সংগ্রহের জন্য স্বভাবিকভাবেই লোকসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে । যেমন —- ঝাড়খন্ড অঞ্চলে কয়লা সম্পদকে কেন্দ্র করে সেখানকার জনবসতি বিস্তার লাভ করেছে ।

 

ভারতের জনবসতির ঘনত্বের অপ্রাকৃতিক কারন: —

 

(১) শিল্প ও বাণিজ্য: —

       ভারতের যে সব অঞ্চলে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটেছে সেখানে জনসংখ্যার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে । সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড ইত্যাদি রাজ্যে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ।

 

(২) পরিবহন ব্যবস্থা:-

       উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে  সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ ইত্যাদির মাধ্যমে যাতায়াতের সুবিধা আছে । ভারতের প্রধান প্রধান রেলজংশন, বন্দর ও সড়কপথের মিলনস্থলে  জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি ।

   দিল্লি, শিলিগুড়ি, কলকাতা, খড়্গপুর, মুম্বাই ইত্যাদি শহরগুলিতে জন ঘনত্ব বেশি । আবার মাদ্যপ্রদেশে বা উড়িষ্যার অনেক জায়গা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে একেবারে জনবীরল ।

 

(৩) ঐতিহাসিক কারণ: –

       দিল্লি, আগ্রা, জয়পুর, পাটনা, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থানগুলি স্বভাবিকভাবেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করায় ঘনবসতি লক্ষ করা যায় ।

 

(৪) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: —

       স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকে এদেশে কৃষি, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ -এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । ফলে পরিকল্পিত শরগুলিতে লোকসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ।

 

(৫) শিক্ষা ও সংস্কৃতি: —

       আলীগড়, শান্তিনিকেতন ইত্যাদি সহরগুলি শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠেছে ফলে ঘনবসতিপূর্ণ হয়েছে ।

 

(৬) পর্যটন কেন্দ্র: —

       সিমলা, দার্জিলিং, মুসৌরি, পুরী, দিঘা প্রভৃতি স্থানে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠায় সেখানে জনঘন্ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ।

 

(৭) ধর্মীয় স্থান ও স্বাস্থ্যকর স্থান:—

        পুরী, বারাণসী, মথুরা, হরিদ্বার প্রভৃতি স্থানগুলি ধর্মীয় কারণে ঘনবসতিপূর্ণ ।  আবার পুরী, মধুপুর ইত্যাদি অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার জন্য জনঘন্ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ

উত্তরঃ

  ভারতের জনসংখ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অসম বন্টন। এর কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল —

 

 (১) ভূপ্রকৃতি :

 

    ভূমির উচ্চতা, ঢাল, বন্ধুরতা, জলমগ্ন জলাভূমি প্রভৃতি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে জনবসতি গড়ে ওঠে। সিন্ধু, গঙ্গা ও উপকূলীয় সমভূমি কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্পে উন্নত। তাই জনসংখ্যা খুব বেশি।

   কয়েকটি বিশেষ বিশেষ স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটন শিল্প উন্নত হওয়ার কারণে জনসংখ্যা বেশি। মালভুমির কয়েকটি স্থানে খনিজ সম্পদের উপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে উঠেছে আর এই শিল্পকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে জনবসতি গড়ে উঠেছে।

 

(২) নদনদী :

 

    ভারতে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, কৃষ্ণ৷, কাবেরী প্রভৃতি নদী অববাহিকা উর্বর হওয়ার জনসংখ্যা বেশি। প্রত্যক্ষ ভাবে নদীর মাধ্যমে জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। নদী যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হওয়ায় নদী উপত্যকায় শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

 

(৩) জলবায়ু :

 

    জনসংখ্যার স্থানীয় বণ্টন জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি রাজ্যগুলোতে জলবায়ু  স্যাঁতস্যাঁতে বলে জনসংখ্যা কম। আবার উচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অত্যাধিক শৈত্য এবং থর মরু অঞ্চলে অত্যধিক গরম ও স্বল্প বৃষ্টির কারণে স্থানগুলি জনবিরল। বৃষ্টিপাতের বণ্টন জনসংখ্যা বন্টনের ওপর প্রভাব ফেলে।

 

(৪) মৃত্তিকা :

 

    উর্বর লালমাটি, কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও পলিমাটি চাষ-আবাদের উপযোগী। এসব মাটিতে ধান, গম, পাট, তুলা, আখ প্রভৃতি ফসল প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হয়। ভারতের প্রধান নদী অব অববাহিকা অঞ্চলগুলিতে এই ধরণের উর্বর মাটির প্রাধান্য থাকায় এসব অঞ্চলে কৃষিজীবী মানুষের আধিক্য  দেখা যায়।

 

(৫) জলাশয় ও ভৌমজল :

 

     জলনিকাশি ব্যবস্থা, ভৌমজলের গভীরতা ও প্রাপ্তি, জলাভূমির অবস্থান প্রভৃতি গ্রামীন জনসংখ্যাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। থর মরুভূমির জনবণ্টন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জলের উৎসের উপর নির্ভরশীল। বন্যা প্রবন অঞ্চল গুলিতে,যেখানে জলনিকাশি ব্যবস্থা উন্নত, সেখানে প্রচুর মানুষ বসবাস করে।

 

(৬) খনিজ সম্পদ :

 

     খনিজ উত্তোলক অঞ্চলে কাজের সুযোগের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে, ফলে ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠে। ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল ভারতের খনিজ ভান্ডার হওয়ায় এখানে বহু মানুষের বসবাস করে।

 

(৭) শিল্প :

 

    শিল্পের উন্নতিতে কাজের সুযোগ বাড়ে। তাই শিল্পাঞ্চল গুলিতে জনসংখ্যা অত্যাধিক বেশি হয়। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর উভয়তীর, হলদিয়া, দুর্গাপুর, মুম্বাই, পুনে, গুজরাট এই কারণেই অতি-জনাকীর্ন।

 

(৮) কৃষি ও পশুপালন :

 

    ভারতে গ্রামীণ জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে। উর্বর মৃত্তিকা ও সমতল ভুমিভাগের কারণে গঙ্গা সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমিতে জনাধিক্য দেখা যায়। সমভূমিতে যেখানে জলসেচ ব্যাবস্থা উন্নত, সেখানে নিবিড় পদ্ধতিতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদন হয় বলে ঘন জনবণ্টন দেখা যায়।

 

    এছাড়া উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নগরায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রভৃতি জনসংখ্যার বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা গুলি:-

 

  ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা গুলি হল—

    ১) চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না।

    ২) অর্থনৈতিক উন্নতি হ্রাস পায়।

    ৩) বেকারত্ব বাড়ে।

    ৪) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।

   ৫) জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ ক্রমশ বাড়ে।

   ৬) নির্ভরশীল জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

   ৭) মাথা পিছু উৎপাদন হ্রাস পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *