কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী নবম শ্রেণি বাংলা
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী নবম শ্রেণি বাংলা
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা
কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
এখানে কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা বিষয়বস্তু
দেবরাজ ইন্দ্র চার মেঘকে আদেশ করলেন কলিঙ্গদেশে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টির মাধ্যমে তারা যেন ভয়ংকর প্রলয় কাণ্ড ঘটায়। হলােও তাই। আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। অন্ধকারে কেউ নিজের শরীরও দেখতে পাচ্ছে । ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঈশানে মেঘ উড়ছে। উত্তরদিকে মেঘ ডাকছে। কলিঙ্গদেশের আকাশে মেঘ উড়ে এসে উচ্চনাদে গর্জন শুরু করেছে। আসন্ন প্রলয়ের প্রমাদ গণে কলিঙ্গ প্রজারা বিষাদমগ্ন।
আকাশজুড়ে দেবরাজ আদিষ্ট চারি মেঘের সম্মেলন ও বর্ষণ। হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে ঝড় বইছে। কলিঙ্গদেশের মানুষ বিপদ বুঝে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। সবুজ ঘাস, গাছ ও মাঠের শস্য ধুলােয় ঢাকা পড়ছে। ঝড়ে উলটে-পড়া শস্য দেখে প্রজারা মর্মাহত হয়ে চমকে উঠছে। চারি মেঘের বাহক হয়ে আট দিগহস্তী জল বর্ষণ করছে। ব্যাং-এর মতন থেকে থেকে তােক করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাজ পড়ছে। মেঘগর্জনে কারও কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। বৃষ্টির বিরাম নেই। সাতদিন একনাগাড়ে অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের ও বজ্রপাতের আওয়াজ
হুড়হুড় দুড়দুড় ঝনঝন। বৃষ্টির সঙ্গে শিলও পড়ছে ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে বিশালাকার। ঘরের চাল ভেদ করে ঘরের মেঝেতে পড়ছে শিল।
ওই ভয়ংকর দুর্যোগে দিন, রাত্রি, সন্ধ্যা সব যেন একাকার, আলাদা করে বােঝা যাচ্ছে । কলিঙ্গের সকল বাসিন্দা বজ্রবারক জৈমিনি মুনির নাম স্মরণ করছে। অবিরাম বর্ষণে জল ও স্থল বলে আলাদা কোনাে অস্তিত্বই নেই। সব একাকার। গর্ত জলের তলে চলে যাওয়ায় আশ্রয়হীন সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঠে চাষের কাজ বন্ধ। ঘরে জল ঢুকেছে। তা ছাড়া মা চণ্ডীর আদেশ পেয়ে হনুমান মঠ-অট্টালিকা ভেঙে খানখান করছে। চারিদিকে বিশাল পর্বতপ্রমাণ উঁচু ঢেউ উঠেছে। তাতে ডুবে যাওয়া ঘরগুলি দলিত-মথিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহাপ্লাবনের বিপর্যয় নিয়ে ধেয়ে আসছে মা চণ্ডীর আদেশে নদনদী। শ্রীকবিকঙ্কণ গাইছেন অম্বিকামঙ্গল গান।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা প্রশ্ন উত্তর
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) অম্বিকামাল গান শ্রীকবিকঙ্কণ ।।-‘অম্বিকামাল’ এবং তাঁর কবি ‘শ্রীকবিকঙ্কণ’-এর সংক্ষিপ্ত পৱিচয় দাও। কলিঙ্গাদেশে ঝড়-বৃষ্টি অংশে বর্ণিত প্রাকৃতিক দৃশ্যের পৱিচয় দাও।
উত্তর : কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা গ্রন্থটি ‘চণ্ডীমঙ্গল নামে পরিচিত। ‘চণ্ডী’ই হলেন অম্বিকা। সেজন্য কবি কাব্যের মধ্যে একাধিক জায়গায় ‘চণ্ডীমঙ্গল’-কে ‘অম্বিকামঙ্গল’ নামে অভিহিত করেছেন।
‘কবিকঙ্কণ’ উপাধিবিশেষ। আবার কারাে-কারাে মতে পদবি-পরিচায়ক। যাই হােক, নামের বদলে উপাধি অনেক সময় নাম হয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কবি তাঁর কাব্যে ‘মুকুন্দরাম নামের পরিবর্তে ‘শ্ৰীকবিকঙ্কণ’ উপাধিকে নাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
কলিঙ্গদেশের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। মেঘচ্ছায়ায় চারদিকে এমন অন্ধকার নেমেছে যে, কেউ নিজের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান কোণ থেকে উড়ে আসা মেঘে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘনঘন, মেঘ ডাকছে ‘দুর দুর করে। চার প্রকার মেঘের সম্মিলিত বৃষ্টি মুশলধারে নেমেছে। মনে হচ্ছে প্রলয় বুঝি আসন্ন। হুড়হুড় দুড়দুড় করে ঝড় এসে যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ধুলায় ধূসরিত সবুজ গাছপালা, লতা-তৃণ, মাঠের সবুজ ফসল। আট দিকহস্তির জল বর্ষণে বৃষ্টি নেমেছে যেন ‘করি-কর সমান বরিষে জলধারা। সেই সঙ্গে সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গতড়কা বাজ। বৃষ্টিতে পৃথিবী জলময়। মেঘের ঘনঘন গর্জনে কারও কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। দিবাভাগে নেমেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। গর্ত ছেড়ে সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাত দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ চলেছে। ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে ঘরের চাল ভেদ করে শিল পড়ছে মেঝেতে। জলের বুকে উঠেছে পাহাড়প্রমাণ বড়াে বড়াে ঢেউ। ঢেউগুলি উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল। এই হলাে ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র মহাদুর্যোগের প্রাকৃতিক দৃশ্য।
কলিঙ্গদেশের ঝড় বৃষ্টি প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) ঝড়-বৃষ্টির প্রলয়ে বিধ্বস্ত কলিঙ্গোৱ ছবিটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কীভাবে চিত্রিত করেছেন লেখাে।
উত্তর : ঝড়-বৃষ্টির চিত্রিত ছবি ; কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কালকেতু আখ্যানে কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টির প্রলয়ংকর রূপের অসামান্য ছবি এঁকেছেন। কলিঙ্গের আকাশে চার মেঘের মিলিত শক্তির ফলে শুরু হয় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। ঝড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে। ঝড়ের প্রচণ্ড আঘাতে বুঝি ঘর ভেঙে পড়ে এমনই আশঙ্কা গৃহবাসীদের সন্ত্রস্ত করে। ফলে তারা ঘর ছেড়ে ছুটে পালায়। ঝড়ের উখিত ধুলােয় সবুজ ঘাস, গাছ ও মাঠের শস্য ঢাকা পড়ে।
ঝড়ের আঘাতে শস্য উলটে পড়ে। এ ক্ষতিও কম নয়। ঝড় চলতে চলতেই চার মেঘের তুমুল বর্ষণ শুরু হয়। আট দিগহস্তী যেন চার মেঘের জল বর্ষণ করতে থাকে। এ বর্ষণ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম ধারায় চলে। পাল্লা দিয়ে চলে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকানাে। থেমে থেমে বাজ পড়ে কড় কড় করে। মুশলধারে বর্ষণে স্থলভাগ চলে যায় জলের তলে। সর্বত্র জলময়। জলের তলে পথ হারিয়ে যায়। মাঠের শস্য ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। এমনকি সাপের গর্ত জলের তলায় চলে যায়। তারা গৃহহারা হয়ে জলে ভাসতে থাকে। মেঘগর্জনে কণ্ঠস্বর ডুবে যায়। একে অপরের কথা শুনতে পায় না। মেঘের পর্দার আড়ালে সূর্য অদৃশ্য থাকে। দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রি নিজ নিজ সীমারেখার মাঝে চিহ্নিত থাকে না।
মনে হয় তারা তাদের পৃথক অস্তিত্ব হারিয়ে ‘এক দেহে লীন’। শিলাবৃষ্টিও চলতে থাকে। বড়াে বড়াে শিল। চেহারায় ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে। ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ে। চারিদিকের জলে ওঠে পর্বতপ্রমাণ বিশাল বিশাল ঢেউ। ঢেউ ঘরগুলির মাথায় চড়ে চালায় দলন-মলন। কাজেই কলিঙ্গদেশের সর্বত্র ধ্বংস আর ধ্বংস। অপূর্ব দক্ষতায় মুকুন্দরাম ধ্বংসের নিখুঁত ও বাস্তব ছবি তুলে ধরেছেন।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) ‘চাৱি মেঘে বৱিষে মুষলধাৱে জল । চারি মেঘ’ কী কী? দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক আদিষ্ট মেঘেৱা কীভাবে সজ্জিত হয়ে ঝড়, বিদ্যুৎ চমকানাে, বজ্রপাত ও শিলাসহ বর্ষণ করেছে তা সবিস্তারে আলােচনা করাে।
উত্তর: মেঘেৱ নাম : ‘চারি মেঘ’ হলাে আবর্ত, সংবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ। ইংরেজিতে বলা হয় Cumulus, Stratus, Cirrhus, Nimbus 1
মেঘেৱ সজ্জা ও ঝড়ের আগমন : দেবরাজ ইন্দ্র চার মেঘকে আদেশ করেন কলিঙ্গদেশে গিয়ে বর্ষণ করতে। মেঘেরা কলিঙ্গদেশের আকাশে মিলিত হয়ে আকাশ ঢেকে ফেলে। মেঘসজ্জায় অন্ধকার নেমে আসায় কেউ নিজের অঙ্গও দেখতে পায় না। ঈশান কোণে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘ ডাকে। মেঘযাত্রা শুরু হয়। ঝড় হুড়হুড় দুড়দুড় করে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কলিঙ্গবাসী ভয়ে ঘর ছেড়ে ছুটে পালায়। বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড় ।
তারপর শুরু হয় ‘চারি মেঘ’-এর মিলিত ধারার তুমুল বৃষ্টি। ‘করি- -কর সমান বরিষে জলধারা। চারি মেঘের জল আট দিগহস্তী বর্ষণ করতে থাকে। চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ। বিদ্যুৎ চমকায় ঘনঘন। ব্যাং-এর মতন থেকে থেকে তড়াক করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাজ পড়ছে।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা
বর্ষণ ও বজ্রপাত : প্রবল বর্ষণে স্থল ডুবে জলের সঙ্গে একাকার হয়। পথ ডুবে যায়। গর্তও জলের তলে চলে যাওয়ায় আশ্রয়হীন সাপ জলে ভেসে বেড়ায়। দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রির সীমাবদ্ধতা মুছে গিয়ে এক হয়ে যায়। পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। সাত দিন ধরে নিরন্তর বৃষ্টি ঝরে। ঘরগুলি জলে বিনষ্ট হয়। মাঠে চাষের কাজ বন্ধ থাকে। বজ্রপাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী বজবারক ঋষি জৈমিনির নাম স্মরণ করে। শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ে। সেগুলির চেহারা ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে। চারিদিকে পর্বতপ্রমাণ বিশাল বিশাল ঢেউ ওঠে। সেগুলি ঘরের মাথার ওপর চড়ে দলন-মলন করে।
কলিঙ্গদেশের ঝড় বৃষ্টি ক্লাস 9
প্রশ্ন) কলিঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের কারণ ও তার প্রস্তুতি আলােচনা করাে।
উত্তর : ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের কারণ : ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কালজয়ী সৃষ্টি। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। এই কাব্যের কালকেতু উপাখ্যানের প্রধান চরিত্র মা চণ্ডীর স্নেহধন্য কালকেতু। মায়ের কৃপায় প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে কালকেতু গুজরাট নগরী স্থাপন করে মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী। কালকেতুর চেষ্টায় গুজরাট নগরী স্থাপিত হয়। কিন্তু অধিবাসী না
থাকায় তা জনশূন্য। মনের দুঃখে কালকেতু মা চণ্ডীর কাছে প্রার্থনা
করে তার নির্মিত গুজরাট নগরী যাতে লােকে ভরে ওঠে। কালকেতু। জানে মায়ের কৃপা ছাড়া সম্ভব নয়। ভক্তের দুঃখ ও বেদনা মা বােঝেন। মা কালকেতুর মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য চেষ্টা করেন। কলিঙ্গদেশের লােকজন যাতে গুজরাট নগরে আসে, সেজন্য মা কলিঙ্গবাসীদের কাছে আবেদন রাখেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। মা দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে যান। সিদ্ধান্ত হয় ঝড়-বৃষ্টির প্রলয় ঘটাবেন ইন্দ্র। কলিঙ্গের মানুষকে উদ্বাস্তু করে গুজরাট নগরে আসতে বাধ্য করবেন। সেইমতাে ইন্দ্র মেঘেদের আদেশ করেন কলিঙ্গদেশে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয় ঘটাতে। সেজন্য কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি।
: ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের প্রস্তুতি : তারই প্রস্তুতি হিসেবে কলিঙ্গদেশের আকাশে চার ধরনের মেঘের মিলিত সাজসজ্জা। আকাশময় ঘনীভূত মেঘ। মেঘের গাঢ় ছায়ায় অন্ধকার নেমেছে ঘন হয়ে। অন্ধকারে কেউ নিজের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান কোণ থেকে মেঘ উড়তে শুরু করেছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। উচ্চনাদে মেঘগর্জন। হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে ঝড় ধেয়ে আসছে। চার মেঘের মিলিত জলধারা বর্ষণের জন্য দিগহস্তীরা তৈরি। এইভাবে ঝড়-বৃষ্টি-প্রলয়ের প্রস্তুতিপর্ব গড়ে উঠেছে।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) ‘জলে মহী একাকার পথ হইল হারা ।। -কী কারণে কোথাকার পথ হারিয়ে গেছে
উত্তর: বাক্যটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতা থেকে নেওয়া। কবি এখানে চারি মেঘের বৃষ্টিতে কলিঙ্গদেশে কী ঘটেছে সেই ছবি এঁকেছেন।
চার মেঘ বর্ষণের জন্য আকাশে জড়াে হয়েছিল। তাদের মিলিত ২ বর্ষণ তাে সাধারণ বর্ষণ নয়। মুশলধারে প্রবলতম বর্ষণ। সে বর্ষণ ২ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ। সেই বিপুল জলধারায় সব কিছু ডুবে একাকার। থলের চিহ্নমাত্র নেই। জল আর জল। এইভাবে ভয়াবহ প্লাবনে যাতায়াতের পথ গভীর জলের তলে। যেন অস্তিত্বহারা।
প্রশ্ন ) ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল ।-প্রসঙ্গসহ উপমার্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার এই অংশে কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী শিলাবৃষ্টির ছবি এঁকেছেন। মিলিত চার মেঘে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সঙ্গে পড়ছিল শিল। এক-একটি শিলের চেহারা বিশাল। ভাদ্র মাসে তালগাছ থেকে পাকা তাল পড়ে। শিলার চেহারা এক-একটি পাকা তালের মতাে। বড়াে আকারের শিল। ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ছিল।
প্রশ্ন ) ‘প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।—প্রজাদের মন বিষাদগ্রস্ত কেন? পর্যদ নমুনা]
উত্তর : আকাশের ঘনীভূত মেঘের অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে। , এমনকি নিজের অঙ্গও। ঈশান কোণ থেকে উড়তে থাকা মেঘে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘ ডাকছে। আকাশে চার রকমের মেঘ মিলিত হয়ে একসঙ্গে বৃষ্টি শুরু করেছে। মুশলধারে বৃষ্টি। কলিগদেশে শুরু হয়েছে মহাদুর্যোগ। মহাপ্রলয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে। প্রলয় মানে তাে ধ্বংস। ঘরবাড়ি, খেতখামার, বুজিরােজগার সবকিছুই নষ্ট। এমনকি জীবনহানি। এ কথা ভেবে প্রজারা চিন্তিত, উদবিগ্ন ও ব্যাকুল। আর সেজন্য তাদের মন বিষাদগ্রস্ত।
কলিঙ্গদেশের ঝড়-বৃষ্টি
প্রশ্ন ) জলে মাহি কীভাবে একাকার হয়েছে ? ‘পৱিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।-অর্থ বুঝিয়ে দাও?
উত্তর ; চারি মেঘ বর্ষণের জন্য আকাশে জড়াে হয়েছে। তাদের মিলিত বর্ষণ সাধারণ বর্ষণ নয়। যেন মহাপ্রলয়ের মুশলধারে বর্ষণ এবং সে বর্ষণ এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ। সেই বিপুল জলধারায় সবকিছু ডুবে একাকার। স্থলের চিহ্নমাত্র নেই। শুধুই জল আর জল। এভাবে জলে ডুবে মহি একাকার।
আকাশ মেঘে ঢেকে থাকায় আর বিরামহীন বর্ষণে এমনই পরিস্থিতি হয়েছে দিন, সন্ধ্যা ও রাত্রি যেন একাকার। মনে হচ্ছে তাদের সীমাবদ্ধতা যেন নেই।
প্রশ্ন ) মেঘে কৈল অন্ধকাৱ’–মেঘ কীভাবে অন্ধকার করল?
উত্তর : কালকেতু মা চণ্ডীর বরপুত্র। চণ্ডীদেবীর কৃপায় কালকেতু গুজরাট নগরী গড়েছে। কিন্তু তা জনশূন্য। গুজরাট নগরীতে বসবাসের জন্য কলিঙ্গবাসীদের আহ্বান করা হয়। কিন্তু তা মান্য না করায় মা চণ্ডী তাদের ওপর রুষ্ট হন। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের শরণাপন্ন হন। দেবরাজ চণ্ডীর অনুরােধ রক্ষার জন্য চার মেঘদলকে কলিঙ্গদেশে মহাপ্রলয়ের আদেশ দেন। মেঘদল কলিঙ্গের আকাশে হাজির হয়। ঘনীভূত মেঘমালার অন্ধকারে কলিঙ্গদেশে নেমে আসে যেন রাতের অন্ধকার। মেঘ এইভাবে কলিগদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে।
প্রশ্ন ) ‘দুড় দুড় হড় হুড’-কী শব্দ এবং শব্দগুলি কী অর্থ প্রকাশ কৱছে? এই ধৱনেৱ শব্দের প্রভাবে কী ঘটল ?
উত্তর : ‘দুড় দুড়’ ও ‘হুড় হুড়’ ধ্বনি বা আওয়াজ প্রকাশক শব্দ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দ। ‘দুড়’ বা ‘হুড়’ দু-বার করে উচ্চারিত হয়েছে। সেজন্য ‘দুড়দুড়’ বা ‘হুড়হুড়’ শুধু ধ্বন্যাত্মক শব্দ নয়, ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বৈত। এই শব্দজোড়া ধ্বনি বা আওয়াজের প্রাবল্য প্রকাশ করছে।
ধেয়ে-আসা ঝড়-ঝঞ্জায় ও ‘দুড় দুড় হুড় হুড়’ আওয়াজে কলিঙ্গবাসী মহাপ্রলয় ও ঘােরতর প্রলয়ের আশঙ্কায় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালাতে লাগল।
প্রশ্ন ) চণ্ডীৱ আদেশে কলিঙ্গদেশে কারা কীভাবে ধ্বঙ্গ ঘটিয়েছেন?
উত্তর : দেবী মা চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান ও নদনদী কলিঙ্গদেশে প্রলয় বা ধ্বংস ঘটিয়েছেন।
বীর হনুমান পবননন্দন কলিঙ্গদেশে হাজির হন। যত মঠ। মন্দির ছিল সেগুলি ভেঙে খানখান করে ধ্বংস করেন। আর নদনদী বৃষ্টির জলে ফুলে-ফেঁপে প্রবল বন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাহাড়-প্রমাণ বড়াে বড়াে ঢেউয়ে ঘরবাড়ি দলমল করে ধ্বংস করে।
প্রশ্ন ) কলিঙদেশে সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে কেন?
উত্তর : এক সপ্তাহ ধরে বিরামহীন বৃষ্টি হয়েছে মুশলধারে। ওই মহাদুর্যোগে কলিঙ্গদেশে জল-স্থল বলে আলাদা করে কোনাে অস্তিত্ব নেই। জলে সব ডুবে একাকার। সাপেরা গর্তে থাকে। সে-সব জলের তলে। সাপেরাও কলিঙ্গবাসীদের মতাে গৃহহারা, উদ্বাস্তু। কাজেই তারা জলে ভেসে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মহাদুর্যোগ কাউকে রেয়াত করেনি।
প্রশ্ন ) কী পরিস্থিতিতে কলিঙ্গের সকল লােক ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করছে ? স্মরণ কৱাৱ কারণ কী?
উত্তর : দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে চার প্রকার মেঘ কলিঙ্গ দেশের আকাশে জড়াে হয়ে মহাদুর্যোগ শুরু করেছে। শুরু হয়েছে ভয়ানক ঝড় আর মুশলধারে বৃষ্টি। তাদের সঙ্গী হয়েছে। বজ্রের কানফাটানাে গর্জন আর ঘনঘন বজ্রপাত। বজ্রহুংকারের ২ বর্ণনায় কবি বলেছেন, ‘হুড় হুড় দুড় দুড় শুনি ঝন ঝন কিংবা ‘সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গ-তড়কা বাজ৷ এই পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে ভীত কলিঙ্গবাসী স্মরণ করছে ঋষি জৈমিনিকে।
স্মরণ করার কারণ হলাে, ঋষি জৈমিনি বজ্রবারক।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতা সংক্ষিপ্ত ছোট প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) কলিঙ্গদেশে শিলাবৃষ্টিৱ বর্ণনা দাও।
: উত্তর: কলিঙ্গদেশে চার মেঘের মিলিত ধারায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। ‘নিরবধি সাত দিন বৃষ্টি নিরন্তর। শুধু বৃষ্টি নয়, শিলাবৃষ্টিও হচ্ছে। সামান্য হালকা শিল নয়, বেশ বড়ােসড়াে চেহারার। চেহারার বিশালত্ব বােঝানাের জন্য কবি একটি সুন্দর উপমা ব্যবহার করেছেন, ‘ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল। ভাদ্র মাসে পাকা তাল গাছ থেকে পড়ে। সেই পাকা তালের মতাে শিলের বৃহদাকার চেহারা, তা যখন পড়ছে তখন অক্লেশে ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ছে।
প্রশ্ন ) কৱি-কৱ সমান বাৱষে জলধারা। তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ‘করি-কর’ হলাে হাতির গুঁড়। সমান’ অর্থাৎ, মতাে বা তুল্য। চারি মেঘের মিলিত ব্যর্ণধারা প্রবলতম। ওই প্রবলতম বর্ষণধারা হাতির শুড় তুল্য। একটি সুন্দর উপমা। দিগহস্তীরা জল বর্ষণ করছে। কবির স্বাভাবিকভাবে মনে হয়েছে, বর্ষিত জলধারা তাদের খুঁড়ের তুল্য প্রবলতম চেহারার।
প্রশ্ন ) দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনাৱ ৷ -কেউ অঙা দেখতে পাচ্ছে না কেন?
পুষ্কর ও উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিতে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম ঘনীভূত মেঘছায়ার গাঢ়ত্বের কথা বােঝাতে চেয়েছেন। কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি আসন্ন। তার আকাশে চার মেঘ আবর্ত, সংবর্ত, দ্রোণ মিলিত হয়েছে। তাদের ঘনীভূত ছায়ায় অন্ধকার খুবই গাঢ়। ফলে কলিঙ্গ দেশবাসীর কেউ নিজের শরীরের অঙ্গ নিজে দেখতে পাচ্ছে না। সেখানে ঝড়-বৃষ্টির প্রলয় ঘটতে চলেছে। এই অবস্থা তারই পূর্বাভাস।
প্রশ্ন) এই ঈশানে উডিল মেঘ সঘনে চিকুৱ। উদ্ধৃতাংশটি ব্যাখ্যা করো।
. উত্তর : উদ্ধৃতিটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের কালকেতু আখ্যানের অংশবিশেষ ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র অন্তর্গত। দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে চারি মেঘ আবর্ত, সংবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ কলিঙ্গের আকাশে একত্র হয়েছে। ফলে আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। ঘনীভূত মেঘের ছায়ায় গাঢ় অন্ধকার নেমেছে কলিঙ্গে। এই অবস্থায় আকাশের উত্তর-পূর্ব কোণ, নাম ঈশান, সেখানে মেঘ উড়ে গিয়ে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিছু পরেই ঝড়-বৃষ্টির ভয়ংকর প্রলয়কাণ্ড শুরু হবে। এ তার পূর্বাভাস।
প্রশ্নঃ ‘নিমিষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মণ্ডল। গগনমণ্ডলে মেঘ জোড় হয়ে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি করল?
: উত্তর: বাক্যটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতা থেকে নেওয়া। কবি এখানে কলিঙ্গদেশের আকাশে চার মেঘের মিলিত শক্তির কথা বলেছেন। দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে চার মেঘ জোড় হয়েছে। তাতে ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘন ঘন মেঘ ডাকছে। মেঘছায়ার অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গেছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ভয়ংকর মেঘ ডাকছে। ঝড়-বৃষ্টি এল বলে। শিগগির ধ্বংসকাণ্ড শুরু হবে। প্রলয়-পরিস্থিতির সব আয়ােজন যেন তৈরি।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) মুকুন্দৱাম চক্রবর্তীৱ লেখা ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি আৱ কী কী নামে পরিচিত?
উত্তর : মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি অভয়ামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল, শ্রীকবিকঙ্কন গান, কবিকঙ্কণ চণ্ডী প্রভৃতি নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ) ‘কলিঙ্গাদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ রচনাংশেৱ আগের ও পৱেৱ অংশের নাম কী?
উত্তর : কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ রচনাংশের আগের অংশের নাম ‘মেঘগণের প্রতি ইন্দ্রের আদেশ’ ও পরের অংশের নাম ‘নদনদীগণের কলিঙ্গদেশে যাত্রা।
প্রশ্ন ) ‘নিৱবধি সাত দিন বৃষ্টি নিৱন্তর। ‘নিৱবধি’ ও ‘নিৱন্তর’ শব্দেৱ দুটি করে সমার্থক শব্দ লেখাে।
উত্তর : ‘নিরবধি’ ও ‘নিরন্তর’ শব্দের দুটি করে সমার্থক শব্দ হলাে : নিরবধি—সীমাহীন, অনন্ত। নিরন্তর—অবিরাম, বিরামহীন।
প্রশ্ন ) ‘আছুক শস্যের কার্য হেজ্যা গেল ঘৱ ৷৷ —“আছুক’ ও ‘হেজ্যা’ শব্দের অর্থ লেখাে।
উত্তর: আছুক—থাকুক (কাব্যে ব্যবহৃত প্রাচীন শব্দ), হেজা জলে ডুবে নষ্ট হওয়া।
প্রশ্ন ) ‘মেঝাতে পড়য়ে শিল বিদাৱিয়া চাল। ‘পড়য়ে’ ও ‘বিদাৱিয়া’ কাবপ্রয়ােগ শব্দেৱ গদ্যরূপ কী? ‘চাল’ শব্দের একাধিক অর্থ লেখাে।
উত্তর: বিদারিয়া-বিদীর্ণ করে। পড়য়ে—পতিত হয়/পড়ে। চাল-চাউল (ধানের খােসাযুক্ত দানা), ঘরের ছাউনি।
প্রশ্ন ) শিলাবৃষ্টিৱ শিল’-কে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: শিলাবৃষ্টির শিলকে কবি মুকুন্দরাম ভাদ্র মাসে পড়া পাকা তালের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কলিঙ্গ দেশে ঝড়-বৃষ্টি
প্রশ্ন : ‘চণ্ডীৱ আদেশ পান বীৱ হনুমান।’-বীৱ হনুমান কে?
উত্তর: বীর হনুমান হলেন রামায়ণের রামভক্ত, পিতা পবনদেব ও মাতা কেশরীর পুত্র, শাস্ত্র-ব্যাকরণ-ছন্দ বিশারদ, অমিত শক্তিধর।
প্রশ্ন ) কত দিন কেউ কী দেখতে পায়নি?
উত্তর : প্রায় সাত দিন কেউ সূর্যের আলাে দেখতে পায়নি। কারণ সম্পূর্ণ আকাশ ছিল মেঘে আবৃত।
প্রশ্ন ) চাৱি মেঘের জল কীভাবে দেওয়া হচ্ছে?
উত্তর : পুরাণ মতে মেঘের জল দিগহস্তী বর্ষণ করে বলে চারি মেঘের জল বর্ষণ করছে আট দিগহস্তী।
প্রশ্ন ) কলিভোৱ প্রজাদেৱ চমকিত হওয়ার কারণ কী ছিল। ?
উত্তর : প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে মাঠের শস্য উপড়ে পড়ে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কায় প্রজারা চমকিত হয়েছিল।
প্রশ্ন) মেঘ থেকে কীভাবে বাজ পড়ছে?
: উত্তর : মেঘে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর বাজ পড়ছে হুড়হুড় দুড়দুড় ঝনঝন আওয়াজে।
প্রশ্ন) কেউ কারাের কথা শুনতে পাচ্ছে না কেন ?
উত্তর : ঘনঘন বাজ পড়ার কারণে চারি মেঘের এমনই গর্জন হচ্ছে যে, কেউ কারাের কথা শুনতে পাচ্ছে না।
প্রশ্ন ) কোন্ বিপাকে কলিঙ্গাবাসীৱা পালাল?
উত্তর : মুশলধারে বৃষ্টিপাত এবং ভয়ংকর ঝড়ের ফলে তাদের বিপদের কথা ভেবে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালাল।
প্রশ্ন) দিন-সন্ধ্যা-রাত্রি আলাদা আলাদা মনে হচ্ছে না কেন?
উত্তর : তুমুল ঝড়-বৃষ্টিতে দিনের আলাে নিভে যাওয়ায় সন্ধ্যা, দিন ও রাত্রি একাকার, যেন আলাদা অস্তিত্ব নেই।
প্রশ্ন ) গর্ত ছেড়ে জলে ভেসে বেড়ায় কারা?
উত্তর : একটানা সাত দিন মুশলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে কলিঙ্গদেশ জলে একাকার হওয়ায় সাপ গর্ত ছেড়ে জলে ভেসে বেড়ায়।
প্রশ্ন) ঘরগুলি দলমল কৱাৱ কারণ কী?
উত্তর : পর্বতের সমান ঢেউয়ের ফলে কলিঙ্গদেশের ঘরবাড়িগুলি জলে টলমল করছিল।
প্রশ্ন ) কলিঙ্গোৱ লােকেৱা জৈমিনিকে স্মরণ করছে কেন?
উত্তর: কলিঙ্গের লােকেরা জৈমিনি মুনির নাম স্মরণ করছে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কারণ জৈমিনি বজ্রবারক
প্রশ্ন ) সূর্যকিরণ কেউ দেখতে পাচ্ছে না কেন ?
উত্তর : আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছাদিত হওয়ায় সূর্য ঢাকা পড়েছে বলে কলিঙ্গের কেউই সূর্যকিরণ দেখতে পাচ্ছে না।
প্রশ্ন ) কলিজাদেশে চাষের কাজ বন্ধ কেন?
উত্তর ; সাত দিন বিরামহীন বৃষ্টি হওয়ায় চাষের মাঠ জলের তলে, ঘরও জলে ডুবেছে, তাই চাষের কাজ হচ্ছে না।
প্রশ্ন) ঘরের মেঝেতে পড়া শিলকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?
উত্তর : ঘরের মেঝেতে পড়া শিল এত বড়াে যে, ভাদ্র মাসের পাকা তালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ) বীর হনুমানকে চণ্ডী কলিঙ্গদেশে পাঠিয়েছেন কেন?
: উত্তর ; পবনপুত্র বীর হনুমানকে মা চণ্ডী কলিঙ্গদেশে পাঠিয়েছেন মঠ ও অট্টালিকাগুলি ভেঙে খান খান করতে।
প্রশ্ন) চারিদিকেৱ জলে ওঠা বিশাল ঢেউগুলি কী করছে ?
উত্তর; চারিদিকের জলে ওঠা পাহাড়প্রমাণ উঁচু বিশাল ঢেউ ঘরগুলির ওপর চড়ে ঘরগুলি তছনছ করছে। :
প্রশ্ন ) সবশেষে চন্ডী কাদেৱ আদেশ করেছেন ও কীজন্য তা অনুমান করাে।
উত্তর : অনুমান করা যায়, মা চণ্ডী নদনদীদের কলিগের দিকে ধাবিত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন মহাপ্লাবন সৃষ্টি করতে ।
প্রশ্ন ) জৈামানকে স্মরণ করে কারা?
উত্তর : কলিঙ্গদেশের সব মানুষ বাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জৈমিনিকে স্মরণ করে।
প্রশ্ন ) ‘বড়’, ‘ চিকুৱ’, ‘কৱি-কৱ’ ও ‘ভুজঙ্গা’ শব্দের অর্থ কী?
উতর; প্রশ্নের চারটি শব্দের অর্থ হলাে : রড় ছুটে পালানাে। চিকুর—বিদ্যুৎ। করি-কর—হাতির শুড়। ভুজঙ্গ—সাপ।
প্রশ্ন ) কৈল’, ‘বাৱষ’, ‘সােঙৱ’, ‘ভঙ্গি’-এই কাবিপ্রয়ােগ শব্দগুলিৱ গদ্যরূপ লেখাে।
উত্তর : প্রশ্নের কবিপ্রয়ােগ শব্দগুলির গদ্যরূপ হলাে :
কৈল-করল (< করিল), বরিযে-বর্ষণ করে। সােঙরে—স্মরণ করে। ভাঙ্গিভাঙ্গে (< ভাঙ্গিয়া)।
প্রশ্ন ) জৈমিনি কে?
উত্তর ; জৈমিনি ঋষি। তাঁর রচিত ভারতসংহিতা জৈমিনি ভারত নামে পরিচিত, পাঁচজন বজ্রবারক ঋষির একজন।
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন) ‘শ্রীকবিকঙ্কণ’ কী ও কার নামের সঙ্গে যুক্ত?
উত্তর: ‘শ্রীকবিকঙ্কণ’ উপাধিবিশেষ। অভয়ামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর নামের সঙ্গে যুক্ত।
প্রশ্ন ) ‘অম্বিকামাল গান শ্রীকবিকঙ্কণ – অম্বিকা কে? এখানে ‘মঙ্গল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : অম্বিকা হলেন শিবের স্ত্রী আদ্যাশক্তি ভগবতী চণ্ডী এখানে ‘মঙ্গল’ শব্দের অর্থ বিজয়গাথা বা মাহাত্ম কীর্তন।
প্রশ্ন) ‘চণ্ডীৱ আদেশে ধায়’—চণ্ডীৱ পৱিচয় কী?
উত্তর : চণ্ডীর পরিচয় হলাে তিনি শিবের স্ত্রী মহামায়া বা দুর্গা, মঙ্গলকাব্যে দেবী চণ্ডীরূপে বর্ণিত। :
প্রশ্ন ) কে মুষলধাৱে জল বর্ষণ করছে?
উত্তর : মুশলধারে চারি মেঘ জল বর্ষণ করছে।
প্রশ্ন ) কোন্ গানে কবিকঙ্কণ গেয়েছেন?
উত্তর : অম্বিকামঙ্গল গানে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী আলােচ্য কবিতার গান গেয়েছেন।
প্রশ্ন ) ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটির মূল ব্ৰচনাৱ নাম ও কবির নাম উল্লেখ কৱাে।
উত্তর : ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ বা ‘অভয়ামঙ্গল কাব্য থেকে নেওয়া।
প্রশ্ন ) ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটি কোন্ ছন্দে লেখা ও কী জাতীয় রচনা?
উত্তর : কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কাব্যাংশটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বা ১ পয়ার ছন্দে লেখা পাঁচালি জাতীয় রচনা। :
প্রশ্ন) কবি মুকুন্দৱাম চক্রবর্তী কোন সময়ের কবি?
উত্তর : কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী পঞ্চদশ-যােড়শ শতাব্দীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার কবি।