নব নব সৃষ্টি গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

 নব নব সৃষ্টি গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

নব নব সৃষ্টি 

সৈয়দ মুজতবা আলী

নব নব সৃষ্টি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

এখানে নব নব সৃষ্টি গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

বিষয়-সংক্ষেপ

নব নব সৃষ্টি গল্পের বিষয়বস্তু

সংস্কৃত স্বনির্ভর ভাষা। কোনাে নতুন ভাব, অনুভূতি বা বস্তুর জন্য নতুন শব্দের দরকার হলে নিজের ভাণ্ডারের শব্দ বা ধাতুর সাহায্যে নতুন শব্দ বানিয়ে নেয়। অন্য ভাষা থেকে ধার করে না। অবশ্য তার অর্থ একটিও বিদেশি শব্দগ্রহণ করেনি তা নয়। শব্দগ্রহণ করলেও তা এতই অল্প যে, উল্লেখ করার মতাে নয়। সেজন্য সংস্কৃতকে বলা হয় স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা। প্রাচীন ভাষা গ্রিক, হিব্রু, আবেস্তা এমনকি আরবিও স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা।

নব-নব-সৃষ্টি-গল্পের-প্রশ্ন-উত্তর-নবম-শ্রেণী-বাংলা

 

 বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা প্রয়ােজনে ও অপ্রয়ােজনে অন্য ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছে ও নিচ্ছে। পাঠান ও মােগল রাজত্বকালে আরবি ও ফারসি শব্দও প্রচুর পরিমাণে নিয়েছে। পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনকালে নিয়েছে ইংরেজি থেকে বা ইংরেজির মাধ্যমে অন্য ভাষা থেকে। নেওয়ার কাজ এখনও চলছে। ইংরেজি বাদ দিয়ে বাংলার মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ফলে ভাষায় বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটছে আরও বেশি করে। হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়াবার চেষ্টা চলছে। লেখক মনে করেন, এ প্রবণতা ভালাে নয়। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কিন্তু অনেক বিদেশি শব্দ বাংলায় ঢুকিয়েছেন। বেনামিতে লেখবার সময় বিদ্যাসাগর আরবি-ফারসি শব্দ চুটিয়ে ব্যবহার করতেন। আরবি-ফারসির বিরুদ্ধে জেহাদ মুখামি বলে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মনে করতেন। হিন্দিতে প্রেমচন্দ্র আরবি-ফারসি শব্দ যথেষ্ট ব্যবহার করেছেন।

  বিষয়বস্তু অনুযায়ী ভাষা ব্যবহার করা হয়। দর্শনের ভাষা আর মােগলাই রেস্তোরার বর্ণনার ভাষা যেমন এক হয় না, তেমনি বসুমতী’-র সম্পাদকীয়র ভাষা আর ‘বাঁকা চোখ’-এর ভাষা এক নয়। বাংলা। ভাষায় আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দের পরিমাণ বেশি। সে তুলনায় পাের্তুগিজ, ফরাসি ও স্প্যানিশ শব্দের সংখ্যা খুব কম। 

 যে ভাষার চর্চা বাঙালির বেশি, তার শব্দ বেশি পরিমাণে বাংলা ভাষায় ঢােকে। একই কারণে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বাংলায় ইংরেজি শব্দের অনুপ্রবেশের কারণও তাই। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের শব্দ ও টেকনিক্যাল শব্দ বেশি করে আসা দরকার। আরবি ও ফারসির চর্চা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে কমে আসছে বলে বাংলায় ভবিষ্যতে আরবি ও ফারসি শব্দের প্রবেশ কমে আসার সম্ভাবনা বেশি।

  বাংলা ভাষায় ঢুকে যাওয়া আরবি ও ফারসি শব্দের ব্যবহার একদিকে যেমন অনেক দিন ধরে চলবে, আর-এক দিকে তেমনি বাংলায় ব্যবহৃত পুরােনাে আরবি ও ফারসি শব্দের নতুন করে ব্যবহার সম্প্রতি শুরু হয়েছে। মক্তব বা মাদ্রাসায় আরবি পড়ানাে হলেও উর্দু সাহিত্যে ও হিন্দি ভাষায় ফারসির ব্যবহার বেশি, আরবি নয়।

  আর্য ইরানি ভাষা ও সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে জন্ম নিয়েছে নবীন ফারসি ভাষা। ভারতে ভাষা সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্য। এই ভাষা সৃষ্টিতে ফারসির ভূমিকা আছে আরবির নেই।

  বাঙালির শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি পদাবলি কীর্তন। এ সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ খাঁটি বাঙালি। কানুরূপে কৃয় আর শ্রীমতী রাধা উভয়ে যেন বাঙালি। ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক আর পদাবলির শ্রীরাধা যেন একই চরিত্র।

  বাঙালি চরিত্রে বিদ্রোহ বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ বিদ্রোহ শুধু বাঙালি হিন্দুর মধ্যে নেই, আছে বাঙালি মুসলমানের মধ্যেও। ধর্ম বদলালে জাতির চরিত্র বদলায় না।

নব নব সৃষ্টি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ) ‘বর্তমান যুগের ইংৱেজি ও বাংলা আত্মনির্ভরশীল নয়।”—‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কীভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন?

উত্তর: প্রাচীন যুগের সংস্কৃত ভাষা তাে বটেই, তা ছাড়া হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা প্রভৃতি সব ভাষাই ছিল আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়। কারণ, আমরা প্রয়ােজনে কিংবা অপ্রয়ােজনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। পাঠান-মােগল শাসন যুগে আমাদের প্রয়ােজনে দেখা দিয়েছিল আইন-আদালত, খাজনাখারিজ ব্যাপারে নতুন নতুন শব্দের। সেজন্য আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে শব্দ নিতে হয়েছিল। তার পরবর্তী ইংরেজ শাসন যুগে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে নিতে হয়েছে কিংবা হচ্ছে অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ।

 ইংরেজির মাধ্যমে প্রচুর ইউরােপীয় শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় ঢুকেছে। আলু, কপি এসব শব্দ আমরা কি রান্নাঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে পারব ? বিলিতি ওষুধ আমরা কে না খাই ? কাজেই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন অনেক ? শব্দ আছে, যা আমাদের জীবনাচরণের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তাকে ত্যাগ করা সম্ভব নয়। কাজেই বর্তমান বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।

প্রশ্ন ) আরবি-ফারসি থেকে ব্যাপকভাবে আৱ নতুন শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকবে না—লেখকেৱ এরকম কথা মনে হয়েছে কেন? ‘অচলিত অনেক আৱবি-ফার্সি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে।”—কী প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন?

উত্তর আরবি-ফাৱসি চর্চা হ্রাস : প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধে বলেছেন যে, আরবি ও ফারসি শব্দ আর ব্যাপকভাবে নতুন করে বাংলা ভাষায় ঢুকবে । কারণ পশ্চিমবাংলায় আরবি চৰ্চা আস্তে আস্তে বিদায়ের পথে। আর পূর্ববাংলায় তরুণ সম্প্রদায় আরবি ও ফারসি ভাষার প্রতি কৌতূহল ক্রমশ হারাচ্ছে। ওই দুই ভাষাতে অদূর ভবিষ্যতে হঠাৎ কোনাে অভূতপূর্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হবে। বাংলা ভাষাকে প্রভাবিত করবে তার সম্ভাবনা নেই।

আলােচ্য উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ : বাংলা ভাষায় যেসব আরবিফারসি শব্দের প্রবেশ ঘটেছে, সেগুলি আরও অনেক দিন ধরে চালু থাকবে। কোনাে কোনাে লেখক নতুন বিদেশি শব্দের সন্ধান ত্যাগ করেছেন। তাঁরা পুরােনাে বাংলা যেমন ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্য’ থেকে কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতােম প্যাচার নকশা পর্যন্ত সময়ের গ্রন্থ থেকে শব্দ নিয়ে সেগুলি লেখার কাজে ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছেন।

 কিছুদিন আগেও এই পরীক্ষানিরীক্ষা খুব কঠিন ছিল। এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে অনেক ছাত্রছাত্রী পুরােনাে বাংলা পড়তে বাধ্য হচ্ছে। তারা এই সকল শব্দের অনেকগুলি অনায়াসে বুঝতে পারছে। ফলে অচলিত অনেক আরবি-ফারসি শব্দ নতুন করে মেয়াদ পাচ্ছে। এই হলাে উদ্ধৃত মন্তব্যের প্রসঙ্গ।

প্রশ্ন ) ‘ফল যদি ভালাে হয় তখন তাৱা না হয়। চেষ্টা করে দেখবেন।”—লেখক সাহিত্যিকদের নিয়ে যা বলেছেন তা সপ্রসঙ্গ আলােচনা করাে। 

উত্তর: প্রসঙ্গ : অসম্ভবকে সম্ভব করবার চেষ্টা হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা করে চলেছেন। তাঁরা অনেকে হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়াবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তাঁদের ফল হয়তাে ‘নব নব সৃষ্টির প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী দেখে যেতে পারবেন না। তবে তিনি মনে করেন তাঁরা অর্থাৎ, তরুণ পাঠকেরা নিশ্চয়ই দেখে যাবেন। এই আলােচনা প্রসঙ্গে লেখকের উদ্ধৃত বক্তব্য।

লেখকের বক্তব্য : লেখকের বক্তব্য হলাে হিন্দি ভাষা থেকে বিদেশি শব্দ বর্জন করার চেষ্টা যদি সফল হয়, তখন হিন্দি ভাষার ওইসকল সাহিত্যিক সেই চেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু ওই চেষ্টা যে না করাই শ্রেয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। যেমন—রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দে আরবি ও ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন, ‘আব্রু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে। কবি কাজী নজরুল ‘ইনকিলাব’, ‘শহিদ’ লেখায়

ব্যবহার করেছেন। বাংলা ভাষায় আরবি ও ফারসি শব্দ প্রয়ােগ। না করাকে ‘আহাম্মুখী’ বলে মনে করতেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়। হিন্দির প্রখ্যাত লেখক প্রেমচন্দ্র রচনায় বিস্তর আরবি ও ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন। বেনামি লেখায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আরবি ও ফারসি শব্দ চুটিয়ে ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন ) বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তাৱ পদাবলি কীর্তনে।—এই মন্তব্যেৱ স্বপক্ষে লেখকের বক্তব্য লেখাে । বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান’– লেখকের অনুসরণে আলােচনা করাে। 

উত্তর : লেখকের বক্তব্য : প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী বৈষব পদাবলি সাহিত্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে। পদাবলি সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ দুই-ই খাঁটি বাঙালি। পদাবলি সাহিত্যের কানু বা কানাই মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণুের খাঁটি বাঙালি রূপ। পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা পদাবলি সাহিত্যে খাঁটি বাঙালি মেয়ে। ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক আর পদাবলির শ্রীরাধা একই চরিত্র।

আলােচনা : প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান। সে রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য যাতেই যখনই সত্য-শিব-সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে, তখনই সে সেটা গ্রহণ করতে চেয়েছে। কেউ তখন তাকে ‘গতানুগতিক পন্থা’ বা ‘প্রাচীন ঐতিহ্য’-এর দোহাই দিয়ে সে চেষ্টায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেই সে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহ উচ্ছঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ করেছে। এই বিদ্রোহের প্রবণতা কিন্তু হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব বাঙালির মধ্যেই বিদ্যমান। ধর্ম পালটালেও জাতিগত চরিত্র থেকেছে অপরিবর্তিত।

নব নব সৃষ্টি গল্পের বড় প্রশ্ন

প্রশ্ন ) সৈয়দ মুজতবা আলীৱ নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে কীভাবে বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকবে? হিন্দি ভাষা থেকে বিদেশি শব্দ তাড়ানাের কী চেষ্টা চলছে এবং তার ফলই বা কী হবে?

উত্তর : বিদেশি শব্দেৱ অনুপ্রবেশ : ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধে প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন যে, বাংলা ভাষায় যথেষ্ট বিদেশি শব্দ জায়গা করে নিয়েছে। তাতে ভালাে কী খারাপ হয়েছে সে প্রশ্ন এখন অবান্তর। শুধু ইংরেজি নেওয়া হয়নি, আমাদের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে একসময় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আজ ইংরেজিকে বাদ দিয়ে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হলেও প্রচুর বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকবে বলে আলী সাহেব মনে করেন। তাঁর কথা হলাে আলু-কপি রান্নাঘর থেকে তাড়ানাে কি সম্ভব ? বিলিতি ওষুধ আমাদের খেতে হয়। আলু-কপির মতাে অনেক বিদেশি শব্দ আমাদের নিত্যব্যবহার্য বস্তুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাদের ত্যাগ করব কী করে? তা ছাড়া নতুন শব্দের আমদানি কি ঠেকানাে যাবে ?

বিদেশি শব্দ তাড়ানাের চেষ্টা ও তার ফলাফল : অনেক হিন্দি সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়ানাের জন্য। ফল ভালাে হবে না বলে লেখক মনে করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বিদেশি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। ওই প্রসঙ্গে হিন্দির বঙ্কিম প্রেমচন্দ্রের লেখায় প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন। 

নব নব সৃষ্টি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ ধর্ম বদলালেই জাতিৱ চরিত্র বদলায়।’-উৎস ও প্রসঙ্গ নির্দেশ করাে। উদ্ধৃতিৱ তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: উৎস ও প্রসঙ্গ : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি প্রখ্যাত প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের শেষে সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালির সর্বশেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি ও বাঙালি চরিত্রের বিদ্রোহ সম্পর্কে আলােচনা করেছেন। বৈষব পদাবলি কীর্তনে খাঁটি বাঙালিয়ানার পরিচয় ফুটে উঠেছে। মহাভারতে শ্রীকৃয়, পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা যথাক্রমে বাঙালি পুরুষ ও বাঙালি নারী হয়ে উঠেছেন বৈষ্ণব পদকর্তাদের কলমে।

 বাঙালি চরিত্রে বিদ্রোহের পরিচয় মিলেছে রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেখানে সত্যশিব-সুন্দরের সন্ধান পেয়ে তা গ্রহণের বিরুদ্ধে বাধা এসেছে, সেখানে সেই বাধার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রকাশ দেখা গেছে। আবার সে বিদ্রোহ উহ্ঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে বাঙালি। এই প্রসঙ্গে লেখক আলােচ্য উদ্ধৃতিতে এসেছেন।

: তাৎপর্য : সত্য-শিব-সুন্দরের সন্ধান পাওয়ার পর তা গ্রহণে কোনােরকম বাধার দোহাই বাঙালি মেনে নেয়নি। তার বিরুদ্ধে বিরােধিতা বা বিদ্রোহ করেছে সে। এই বিদ্রোহী হয়ে ওঠা তার জাতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য কেবল হিন্দুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যেও সমানভাবে বিদ্যমান।

 এটিও বাঙালি জাতীয় চরিত্রের আর-একটি বৈশিষ্ট্য। তা হলাে ধর্ম যেন বাইরের আবরণ। আচ্ছাদনের পরিবর্তন দেহগত কাঠামােকে যেমন পালটায় না, তেমনি ধর্মও জাতিগত চরিত্রকে পালটাতে পারেনি বলেই বাঙালি চরিত্রের বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যটি হিন্দু-মুসলমান এই ধর্মগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অটুট থেকেছে। 

নব নব সৃষ্টি ক্লাস নাইন প্রশ্ন উত্তর

নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ) ‘তখনই সেটা গ্রহণ করতে চেয়েছে । এখানে ‘সেটা’ বলতে কী কথা বলা হয়েছে? যখনই সেটা গ্রহণ করতে চাওয়া হয়েছে তাৱ ফলই বা কী হয়েছে ? 

> উত্তর : ‘সেটা বলতে এ কথা বলতে চাওয়া হয়েছে যে, ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি যখনই যার মধ্যে বাঙালি সত্য শিব ও সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে তখনই সে তা গ্রহণ করেছে। 

গ্রহণ করতে চাওয়ার ফলে এই হয়েছে যে, গতানুগতিক পথা’, ‘প্রাচীন ঐতিহ্য’-এর দোহাই দিয়ে সে প্রচেষ্টায় বাধা দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছে। সে বিদ্রোহ উদ্ধৃঙ্খলতায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হলে তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ হয়েছে।

প্রশ্ন ) ‘ধর্ম বদলালেই জাতিৱ চরিত্র বদলায় না।’-কাৱ লেখা কোন্ ৱচনার অংশবিশেষ? উদ্ধৃতিৱ প্রসঙ্গ নির্দেশ কৱে। 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলীর  লেখা প্রবন্ধ ‘নব নব সৃষ্টির অংশবিশেষ।

বাঙালি হিন্দুর ভিতরেই বিদ্রোহ কেবল সীমাবদ্ধ নয়।

বাঙালির মধ্যে মুসলমান ধর্মের লােকও আছে। তারা হিন্দু থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুর মতাে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও একই বিদ্রোহের প্রবণতা বিদ্যমান। ধর্ম পরিবর্তনের ফলে চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। এই প্রসঙ্গে আলােচ্য উভৃতি।

প্রশ্ন ) ‘ভাটিয়ালিৱ নায়িকা, বাউলেৱ ভক্ত, মুৱশিদিয়াৱ আশিক ও পদাবলিৱ শ্রীরাধা একই চৱিত্ৰ’-ভাটিয়ালি, বাউল, মুরশিদিয়া ও শ্রীরাধার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

; উত্তর;  ভাটিয়ালি : বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে নৌকার মাঝি-মাল্লাদের গান। উল্লেখযােগ্য লােকসংগীত

বাউল : বাউল সম্প্রদায়ের রচিত গান।

মুরশিদিয়া : মুরশিদ হলাে গুরুবাদী মুসলমান সম্প্রদায়। গুরুসাধনার সিদ্ধিদাতা। মুরশিদিয়া হলাে মুরশিদ সম্প্রদায়ের ভাব ও গান। 

শ্রীরাধা : রাধা হলেন কৃষপ্রেমিকা ও গােপবালা। পিতা বৃষভানু, মাতা কলাবতী। স্বামী আয়ন ঘােষ। তিনি ঈশ্বর জ্ঞানে কৃষকে মনপ্রাণ সমর্পণ করেন।

প্রশ্ন ) বাঙালির ইংরেজি চর্চা বন্ধ কৱাৱ সময় এখনও আসেনি’—এ কথা লেখক সৈয়দ মুজতবা বলেছেন কেন?

উত্তর : লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন সংস্কৃতের মতাে ইংরেজি ভাষা চর্চার প্রয়ােজনীয়তা এখনও আছে। দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি জ্ঞানার্জনের জন্য তাে বটেই, তার চেয়ে বেশি দরকার বিজ্ঞান শব্দগ্রহণের জন্য। রেলইঞ্জিন চালানাের জন্য আমাদের বাংলায় কোনাে বই নেই। টেকনিক্যাল শব্দের প্রয়ােজনীয়তা অনেক বেশি। এইজন্য লেখক প্রশ্নোস্তৃত। উক্তিটি করেছেন।

প্রশ্ন ) এই দুই ভাষা থেকে ব্যাপকভাবে আৱ নূতন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে না।’—এই দুই ভাষা’ বলতে কোন্ দুই ভাষার কথা বলা হয়েছে? ব্যাপকভাবে আৱ নূতন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে না’-লেখকেৱ এরকম মনে হওয়ার কারণ কী? 

উত্তর; এই দুই ভাষা বলতে আরবি ও ফারসি ভাষার কথা বলা হয়েছে।

বাংলা ভাষাতে আরবি ও ফারসি ভাষার নতুন শব্দ ব্যাপকভাবে ঢুকছে না। পশ্চিমবাংলা থেকে আরবি ও ফারসি ভাষার চর্চা বিদায় হওয়ার পথে। পূর্ববাংলাতেও ওই দুই ভাষার প্রতি তরুণ সমাজের কৌতূহল অতি ক্ষীণ। তা ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে আরব-ইরানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের হঠাৎ অভূতপূর্ব চর্চা শুরু হয়ে বাংলা ভাষাকে প্রভাবিত করবে তেমন সম্ভাবনা নেই। কাজেই লেখকের প্রশ্নোধৃত কথা মনে হয়েছে।

প্রশ্নঃ ‘অচলিত অনেক আৱবি-ফার্সি শব্দ নূতন মেয়াদ পাবে।‘অচলিত’ ও ‘মেয়াদ’ শব্দের অর্থ কী? আরবি ও ফারসি নতুন মেয়াদ পাবে কেন? 

উত্তর : অচলিত—যার চল নেই। মেয়াদ—নির্দিষ্ট কাল বা সময়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে পুরােনাে বাংলা পড়ানাের ব্যবস্থা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয়ে পুরােনাে বাংলা পড়ছে। তখন গদ্যে অনুপ্রবিষ্ট আরবি ও ফারসি শব্দ তাদের জানতে হচ্ছে। অর্থও বুঝতে হচ্ছে। ফলে এখন অচলিত আরবি ও ফারসি শব্দ চর্চার ফলে নতুন করে সময়সীমা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্নঃ ‘ভাৱতীয় আর্য’ ও ‘ইরানি আর্য’ বলতে কী বােঝাে? ফাৱসিৱ সৌন্দর্যে কারা অভিভূত হলাে ও অভিভূত হওয়ার ফল কী হলাে? 

আর্য জাতির যে শাখা ইরানের অধিবাসী হলাে তারা হলো ইরানি আর্য।

ফারসি সৌন্দর্যে ভারতীয় আর্যরা অভিভূত হলো। অভিভূত হওয়ার ফলে উর্দু সাহিত্যের মূল সুর বাঁধা পড়ল ফারসিতে। হিন্দি গানেতেও প্রভাব পড়ল আরবি নয় ফারসির।

উত্তর: আর্য জাতির যে শাখা ভারতে এসে বসবাস করল তারা হলো ভারতীয় আর্য।

প্রশ্ন ) সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষা সৃষ্টি হয়েছিল। কীভাবে? কে উর্দুকে ফাৱসিৱ তানুকৱণ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলেন? 

 উত্তর : ভাষায় ভাষায় সংঘাত বা সংঘর্ষের ফলে নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়। তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলাে ভারতবর্যে এরকম সংঘর্ষের ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষা।

যশস্বী উর্দু কবি ইকবাল উর্দুকে ফারসির অনুকরণ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলেন।

নব নব সৃষ্টি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ) ‘বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তাৱ পদাবলি কীর্তনে।—পদাবলি কীর্তন কী? প্রবন্ধকাৱ পদাবলিকে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি বলেছেন কেন? 

উত্তর : রাধাকৃম্নের প্রেমলীলা বিষয়ক পদের সমষ্টি হলাে বৈয়ব পদাবলি। বৈব পদাবলিকে কীর্তনের মতাে করে গাওয়া হয়। তা হলাে বৈষব পদাবলি কীর্তন।

পদাবলি সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ দুই-ই খাঁটি বাঙালি। পদাবলি সাহিত্যের কানু বা কানাই মহাভারতের শ্রীকৃন্নের খাঁটি বাঙালি রূপ। পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা পদাবলি সাহিত্যে খাটি বাঙালি মেয়ে। সেজন্য প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী পদাবলিকে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি বলেছেন।

প্রশ্ন ) এ সাহিত্যের প্রাণ – উধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে। 

উত্তর : ‘এ সাহিত্য বলতে প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা বৈষব পদাবলি সাহিত্যের কথা বলেছেন।

বৈষ্ণব সাহিত্যের নায়ক চরিত্র মহাভারত ও ভাগবতের শ্রীকৃষ্ণ। নায়িকা হলেন পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা। রাধাকৃয়ের প্রেমলীলা নিয়ে বৈষব পদকর্তারা বৈষব পদাবলি সাহিত্য রচনা করেছেন। পদাবলি সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ অর্থাৎ, বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ দুই-ই খাঁটি বাঙালি। বাঙালি পদকর্তাদের কলমে শ্রীকৃয় ও শ্রীরাধা হয়েছেন বাঙালি প্রেমিক ও প্রেমিকা। এতে অন্য কোনাে সাহিত্যের প্রভাব নেই।

প্রশ্ন ) এই দুই বিদেশি বসুৱ ন্যায় আমাদের ভাষাতেও বিদেশি শব্দ থেকে যাবে, নূতন আমদানিও বন্ধ করা যাবে না।”—এই দুই বিদেশি বস্তু বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? কী আলােচনা প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন? 

উত্তর; এই বিদেশি বস্তু দুটি হলাে বাঙালির রান্নায় বহুল ব্যবহৃত হয়—আলু ও কপি।

প্রশ্নে উল্লিখিত লেখকের মন্তব্যের প্রসঙ্গ হলাে যে, ভাষায় বিদেশি শব্দ গ্রহণ ভালাে না খারাপ এ প্রশ্ন অবান্তর, কারণ আমরা ভাষায় বিদেশি শব্দ প্রয়ােজনে-অপ্রয়ােজনে নিচ্ছি সজ্ঞানে, আপন মনের খুশিতে। শিক্ষার মাধ্যম রূপে ইংরেজির ব্যবহার বন্ধ হলেও বিভিন্ন ইউরােপীয় শব্দের ভাষায় প্রবেশ বন্ধ করা যাবে না। আমাদের নিত্য ব্যবহারের জিনিস যেমন—আলু, কপি প্রভৃতি, বিলিতি ওযুধ এ সবের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ থেকে যাবে, নতুন আমদানিও হতে থাকবে।

নব নব সৃষ্টি গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন )‘হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা করছেন— -কাৱা কী চেষ্টা কৱছেন? তাদেৱ চেষ্টার বিপরীতে লেখক কী দৃষ্টান্ত খাড়া করেছেন? 

উত্তর: অধুনা বহু হিন্দি সাহিত্যিক হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দ তাড়াবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।

এই চেষ্টার ফল ভালাে হতে পারে না। বরং বিদেশি শব্দের ব্যবহার ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। এই বক্তব্যের অনুকূলে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় বিভিন্ন সাহিত্যিক বিদেশি শব্দ ব্যবহারের উল্লেখযােগ্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আবু নিয়ে, ইজৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ব্যবহার করেছেন, ‘ইনকিলাব’, ‘শহিদ’ প্রভৃতি বিদেশি শব্দ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বেনামিতে চুটিয়ে বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করাকে ‘আহাম্মুখী বলেছেন। হিন্দি যশস্বী লেখক প্রেমচন্দ্র হিন্দিতে প্রচুর আরবি ও দারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন )  ‘ৱচনাৱ ভাষা তাৱ বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর কৱে।’—উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর ; বিখ্যাত প্রবন্ধ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।

বিষয় অনুয়ায়ী রচনার ভাষা হয়। যে রচনার বিষয় গুরুভার তার ভাষা হয় গুরুগম্ভীর। যার বিষয় হালকা তার ভাষা হয় চটুল । এ সম্পর্কে লেখক দুটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এক ] শংকরদর্শনের ভাষা হবে সংস্কৃতশব্দবহুল সাধুভাষা। আর মােগলাই রেস্তোরার ভাষা হবে ‘হুতােম ঘেষা চলিত। দুই ] ‘বসুমতী’ দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়র ভাষা তৎসম শব্দের প্রাধান্যবিশিষ্ট সাধুভাষা। অপরপক্ষে হাস্যরসাত্মক ‘বাঁকা চোখ রচনার ভাষা চটুল চলিত।

প্রশ্ন । আলাল’, ‘হূতােম’ ও ‘শংকৱদর্শন’-এর পরিচয় দাও। 

উত্তর : আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাস থেকে এসেছে। ‘আলাল’ শব্দ। প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম হলাে ‘টেকচাদ ঠাকুর। তিনি ছদ্মনামে চলিত বাংলায় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসটি লেখেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতােম পঁাচার নকশা’ গদ্যরচনার সংক্ষিপ্ত নাম ‘হুতােম। কলকাতার কথ্য বাংলায় লেখা। ১৮৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়।

শংকরাচার্য বিশ্বের সেরা দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। লেখক তাঁর দর্শনকে বলেছেন শংকরদর্শন। অদ্বৈতবাদ নিয়ে তাঁর দর্শন।

প্রশ্ন ) ‘সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব।—লেখক এ কথা বলেছেন কেন?

উত্তর : নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন আমরা যে ভাষার চর্চা বেশি করি তার শব্দ আমাদের বাংলাতে ঢােকে বেশি। সংস্কৃত বেশি চর্চার ফলে বাংলায় বিস্তর সংস্কৃত এককালে ঢুকেছে। এখনও চর্চা আছে বলে অল্পবিস্তর ঢুকছে। চর্চা যতদিন থাকবে ততদিন তাে ঢুকবেই। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয় থেকে সংস্কৃত তুলে না দেওয়াই শ্রেয়। কারণ বাংলা ভাষাতে এখনও সংস্কৃত শব্দের প্রয়ােজনীয়তা আছে। লেখক সেজন্য বলেছেন যে, সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দেওয়ার অর্থ হলাে বাঙালির অন্যতম খাদ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া।

নব নব সৃষ্টি প্রশ্ন উত্তর mcq

প্রশ্ন ) লেখকের মতে, কোন বিশেষ বিশেষ বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়ােজন বলে মনে হয়?

 

উত্তর : লেখকের মতে, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যাচর্চায় অবশ্যই ইংরেজির প্রয়ােজন।

 

প্রশ্ন ) যেতদিন থাকবে ততদিন আৱও ঢুকবে বলে আশা করতে পারি।”–যতদিন কী থাকার কথা লেখক বলেছেন?

 

উত্তর : যতদিন সংস্কৃত ভাষার চর্চা বাংলাদেশে চলবে ততদিন বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ প্রবেশ করার কথা লেখক বলেছেন।

 

প্রশ্ন) কোন দেবতা বাংলায় খাটি কানুন ধারণ করেছিলেন?

 

উত্তর : মহাভারতের শ্রীকৃয় বাংলায় খাঁটি কানুরূপ ধারণ করেছিলেন।

 

প্রশ্ন ) প্রেমচন্দ্র কোন ভাষা বিস্তৱ ব্যবস্থা করেছেন?

 

উত্তর : প্রেমচন্দ্র হিন্দিতে আরবি-ফারসি ভাষা বিস্তর ব্য করেছেন।

 

প্রশ্ন )  ‘বসমূর্তী-র সম্পাদকীয় লেখাৱ ভায় কীৱকম ছিল?

 

উত্তর : ‘বসুমতী’-র সম্পাদকীয় লেখার ভাষা গাম্ভীর্যপূর্ণ।

 

প্রশ্ন ) হিন্দি গদ্যের ওপর কোন ভাষার প্রভাব পড়ার কথা লেখক বলেছেন?

 

উত্তর : লেখক হিন্দি গদ্যের ওপর ফারসি ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন।

 

প্রশ্ন) বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় কেন?

 

উত্তর : কারণ বাংলা ভাষা প্রয়ােজনে ও অপ্রয়ােজনে ত ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছে ও নিচ্ছে।

 

প্রশ্ন )  কাজি নজরুল ইসলাম কী কী শব্দ বাংলায় ঢুকিয়ে গেছেন?

 

উত্তর : বিখ্যাত কবি কাজি নজরুল ইসলাম ‘ইনকিলাব (ইনক্লাব নয়), এবং ‘শহিদ’ শব্দ বাংলায় ঢুকিয়ে গেছেন।

 

প্রশ্ন ) প্রাচীন যুগের কোন্ কোন্ ভাষাৱ কথা এখানে উল্লেখ আছে?

 

উত্তর : ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধে প্রাচীন যুগের সংস্কৃত, গ্রিক, হিব্রু, আবেস্তা এবং অল্প আরবি ভাষার কথা উল্লেখ আছে। .

 

প্রশ্ন) পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কী মনে করতেন? 

 

উত্তর : পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মনে করতেন যে, আরবিফারসি শব্দের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা ‘আহাম্মুখী। .

 

প্রশ্ন ) কাকে হিন্দিৱ বঙ্কিম বলা হয়েছে এবং তিনি কী করছেন?

 

উত্তর : হিন্দি সাহিত্যিক মুনশি প্রেমচন্দ্রকে হিন্দির বঙ্কিম বলা হয়েছে এবং প্রেমচন্দ্র হিন্দিতে বিস্তর আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন।

 

প্রশ্ন ) বর্তমান যুগেৱ কোন, কোন ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় কেন?

 

উত্তর : বর্তমান যুগের ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়, কারণ অন্য ভাষা থেকে অনেক শব্দ নিয়েছে।

 

প্রশ্ন ) এ স্থলে আৱ-একটি কথা বলে রাখা ভালাে।—কী কথা?

 

উত্তর: এ স্থলে আর-একটি কথাটি হলাে যে, রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে।

 

প্রশ্ন ) মাগলাই ৱেস্তোৱাৱ বর্ণনাৱ ভাষা কেমন হবে বলে লেখক মনে করেন?

 

উত্তর : লেখক মনে করেন যে, মােগলাই রেস্তোরাঁর বর্ণনার ভাষা হবে অনেকখানি কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতােম’ ঘেঁষা ।

 

প্রশ্নঃ কোন্ প্রশ্নটিকে লেখক অবান্তৱ বলেছেন?

 

উত্তর : ভাষার মধ্যে বিদেশি শব্দগ্রহণ করা ভালাে না মন প্রশ্নটিকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী অবান্তর বলেছেন।

 

 

 প্রশ্ন ) খবরের কাগজের সম্পাদকীয়ৱ ভাষা আর ‘বঁকা চোখে হালকা লেখাৱ ভাষা কেমন হবে?

 

উত্তর : খবরের কাগজের সম্পাদকীয়র ভাষা হবে গুরুগম্ভীর বাঁকা চোখে হালকা রচনার ভাষা হবে চটুল।

 

প্রশ্ন ) বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়া বিদেশি শব্দের কোনগুলির সংখ্যা বেশি আৱ কোনগুলির সংখ্যা কম?

 

উত্তর : বাংলা ভাষায় অনুপ্রবিষ্ট বিদেশি শব্দের মধ্যে আরবি ফারসি ও ইংরেজি শব্দের সংখ্যা বেশি, পাের্তুগিজ, ফরাসি স্প্যানিশের সংখ্যা কম।

 

প্রশ্ন ) “সে সম্বন্ধে কারও কোনাে সন্দেহ নেই।” -কোন বিষয়ের কথা বলা হয়েছে?

 

উত্তর : শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে ইংরেজি বাদ দিয়ে বাংলা ব্যবহার করলে প্রচুর পরিমাণে ইউরােপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ . করবে।

 

প্রশ্ন ) এদেশে সংস্কৃতচর্চাৱ ফলে কী হয়েছে?

 

উত্তর : এদেশে সংস্কৃতচর্চার ফলে সংস্কৃত সাহিত্য থেকে বর সংস্কৃত শব্দ দরকার মতাে বাংলায় ঢুকেছে।

 

প্রশ্ন ) স্কুল-কলেজ থেকে আমরা সংস্কৃতচর্চা উঠিয়ে দিতে চাই না কেন?

 

উত্তর : কারণ বাংলায় এখনও বহু সংস্কৃত শব্দের প্রয়ােজন তা ছাড়া সংস্কৃতচর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা প্রধান খাদ্য হারাব।

 

প্রশ্ন ) লেখক বর্তমানে রান্নাঘর থেকে কাদের তাড়ানাে মুশকিল বলেছেন?

 

উত্তর : বর্তমানে লেখক রান্নাঘর থেকে আলু-কপি তাড়ানে মুশকিল বলেছেন, কারণ এ দুটি বাঙালির খাদ্য তালিকায় । প্রয়ােজনীয়। .

 

প্রশ্ন ) ইংৱেজি ভাষার কাছ থেকে আমরা কি চাই?

 

উত্তর : আমরা চাই নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা প্রভৃতি জ্ঞান আর তার চেয়েও বেশি বিজ্ঞানের শব্দ।

 

প্রশ্ন ) “ইংৱেজি চর্চা বন্ধ কৱাৱ সময় এখনও আসেনি।—লেখক এ কথা বলেছেন কেন?

 

উত্তর; কারণ রেলইঞ্জিনের মতাে অনেক বিষয়ের টেকনিক্যাল শব্দের ও ওই বিষয়ক ধারণার প্রয়ােজন আছে।

 

প্রশ্ন ) বাংলা ভাষায় আৱবি-ফারসির নতুন শব্দ আৱ ব্যাপকভাবে ঢুকবে না কেন?

 

উত্তর : কারণ পশ্চিমবাংলায় আরবি-ফারসি চর্চা যাবাে যাবাে করছে, পূর্ববাংলায় তরুণ সম্প্রদায়ের কৌতূহলে ভাটা পড়ছে। 

 

প্রশ্ন ) ‘অচলিত অনেক আৱবি-ফার্সি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে।–কেন?

 

উত্তর : কারণ অধুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে অনেক ছাত্রছাত্রী পুরানাে বাংলা পড়তে বাধ্য হচ্ছে, তাতে আরবি-ফারসির শব্দ বুঝতে পারবে।

 

প্রশ্ন ) “বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন।” -এখানে কোন ভাষার সাহিত্যিকরা কী কৱতে উঠে পড়ে লেগেছেন?

 

উত্তর ; হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দ তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।

 

প্রশ্ন ) ভাৱৰ্তীয় মক্তব-মাদ্রাসায় প্রচুর পরিমাণে আৱবি পড়ানো হলেও ভারতীয় আর্যগণ কীসে অভিভূত হলেন?

 

উত্তর : ভারতীয় আর্যগণ অভিভূত হলেন ফারসি সাহিত্যের সৌন্দর্যে, আরবি সাহিত্যের সৌন্দর্যে নয়। :

 

প্রশ্ন ) উর্দু সাহিত্যের মূল সুৱ কীসের সঙ্গে বাঁধা?

 

উত্তর : উর্দু সাহিত্যের মূল সুর আরবির সঙ্গে নয় ফারসির সঙ্গে বাঁধা, কারণ আরবির চেয়ে ফারসির সাহিত্যসৌন্দর্য অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

 

নব নব সৃষ্টি গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ হিন্দি গদ্যের ওপৱ বাইৱেৱ থেকে কীসেৱ  প্রভাব?

 

উত্তর: হিন্দি গদ্যের ওপর বাইরের থেকে আরবির নয় ফারসির প্রভাব, তার সাহিত্যসৌন্দর্যের জন্য।

 

প্রশ্ন )‘নব নব সৃষ্টি’ গল্পে ব্যবস্তৃত ‘আলাল’ ও ছুতােম’ বলতে কোন দুটি বইয়ের কথা বলা হয়েছে?

 

উঃ লেখক প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলাল’ হলাে আলালের ঘরে দুলাল। অপরপক্ষে লেখ কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতুম পেঁচার নকশা।

 

প্রশ্ন ) কীভাবে ফরাসি ভাষার সৃষ্টি?

 

উত্তর: ইরানে একসময় নবীন ফারসি ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষের ফলে।

 

প্রশ্ন ) সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে কীভাবে?

 

উত্তর : ভারতীয় আর্যভাষা ও আরবি-ফারসি ভাষার সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি ভাষা।

 

প্রশ্ন ) কবি ইকবাল কী কৱেছিলেন?

 

. উত্তর: কবি ইকবাল উর্দুতে নতুন সৃষ্টির চেষ্টা করে ফারসির অনুকরণ থেকে উর্দুকে কিছুটা নিষ্কৃতি দিয়েছিলেন।

 

প্রশ্ন ) ধর্ম বদলালেও বাঙালি জাতিৱ চৱিত্ৰ বদলায় না—লেখক এ কথা কেন বলেছেন?

 

উত্তর : কারণ, হিন্দু ও হিন্দু থেকে যারা মুসলমান হয়েছেন উভয়ের চরিত্রে বিদ্রোহ সমভাবে বিদ্যমান, ধর্ম পরিবর্তনেও জাতীয় চরিত্র অপরিবর্তিত। .

 

প্রশ্নঃ সৈয়দ মুজতবা আলী কোন পত্রিকার সম্পাদকীয় ৰচনাৱ ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলেছেন? 

 

উত্তর : লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বসুমতী’ পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলেছেন। :

 

প্রশ্ন ) লেখকের মতে বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ কৱেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষা অন্যতম?

 

উত্তর : লেখকের মতে, বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তার মধ্যে অন্যতম আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষা।

 

প্রশ্ন ) লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কাদেৱ চরিত্রে , বিদ্রোহ বিদ্যমান বলেছেন?

 

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান বলেছেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *