পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণগুলি লেখাে।
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণগুলি লেখাে।
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণগুলি
এখানে ঋতু পরিবর্তন এর কারণগুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণসমূহ
পৃথিবীর গােলীয় আকৃতি, উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, কক্ষপথের সঙ্গে পৃথিবীর মেরুরেখার 66%° কোণে হেলে থাকা, পরিক্রমণ গতি প্রভৃতি কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মি সমানভাবে পড়ে না। ফলে কোনাে জায়গায় কখনও হয় শীত, কখনও গরম। শীত ও গরমের এই পার্থক্য অনুসারে বছরকে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেকটি ভাগকে বলে ঋতু। আর এই শীত ও গরমের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের নাম ঋতু পরিবর্তন। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে প্রধানত চারটি ঋতু, যথা— গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত পর্যায়ক্রমে এবং চক্রাকার আবর্তিত হয় বলে একে ঋতুচক্র বলে।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে বিভিন্ন ঋতুর আগমন, স্থায়িত্ব ও বৈচিত্রের প্রধান দুটি কারণ হল—1. দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ও 2. সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য।
দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি : পৃথিবী যে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সেটি উপবৃত্তাকার এবং কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর মেরুরেখা 66-1/2° কোণে হেলে অবস্থান করার জন্য দুটি পরিস্থিতি তৈরি হয়—১.পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব সারাবছর ধরে সমান থাকে না এবং ২.পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর উত্তর গােলার্ধ বা দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় 21 মার্চ এবং 23 সেপ্টেম্বর তারিখ দুটিতে সূর্য পৃথিবীর ঠিক মাঝবরাবর অর্থাৎ নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। 21 মার্চ থেকে পৃথিবীর উত্তর গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে বলে পৃথিবীর উত্তর গােলার্ধ এই সময় অধিক সূর্যকিরণ পায় এবং দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। ফলে এই সময় উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গােলার্ধে শীতকাল হয়। অন্যদিকে 23 সেপ্টেম্বরের পর থেকে পৃথিবীর কোণে মেরুরেখার অবস্থান দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকতে থাকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। এই সময় দক্ষিণ গােলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও উত্তর গােলার্ধে শীতকাল অনুভূত হয়। গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যবর্তী সময়ে শরৎকাল এবং শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের মধ্যবর্তী সময়ে বসন্তকালের আগমন ঘটে।
2. সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য: পৃথিবীর অভিগত গােলকাকৃতি এবং কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার 66-1/2° কোণে হেলে অবস্থান—এই দুয়ের জন্য ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র এবং সবসময় সূর্যরশ্মি সমান কোণে পতিত হয় না। সাধারণভাবে পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং নিরক্ষরেখা থেকে যতই মেরুর দিকে অগ্রসর হওয়া যায় সূর্যরশ্মি ততই তির্যকভাবে পতিত হয়। আবার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে 66-1/2° কোণ করে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার ফলে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে পর্যায়ক্রমে ঝুঁকতে থাকে। যেমন—21 জুন সূর্য। কর্কটক্রান্তিরেখায় (23-1/2° উত্তর) লম্বভাবে কিরণ দেয়। ওই দিন সুমেরুতে 23-1/2° কোণে সূর্যরশ্মি পড়ে ও কুমেরুতে সূর্যালােক পৌছােয়-ই না। একইভাবে 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য মকরক্রান্তিরেখায় (23-1/2° দক্ষিণ) লম্বভাবে কিরণ দেয়। ওই দিন কুমেরুতে 23-1/2° কোণে সূর্যরশ্মি পড়ে ও সুমেরুতে সূর্যালােক পৌঁছােয় না। লম্বরশ্মি অল্প বায়ুস্তর ভেদ করে ও অপ্সথানে সীমাবদ্ধ থাকায় ভূপৃষ্ঠ বেশি গরম হয়। কিন্তু তির্যক রশ্মি অধিক বায়ুস্তর ভেদ করে ও অধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় ভূপৃষ্ঠ বেৰি উত্তপ্ত হয় না। এর ফলে লম্বরশ্মির মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া এবং তির্যকরশ্মির মাধ্যমে শীতকালীন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
1. সূর্যকে
পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের উল্লিখিত প্রধান দুটি কারণ ছাড়াও পৃথিবীর 3. আবর্তন গতি, 4. পরিক্রমণ গতি, 5. উপবৃত্তাকার কক্ষপথ প্রভৃতিও ঋতু পরিবর্তনের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
নিশীথ সূর্য ও নিশীথ সূর্যের দেশ
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি ও মেরুরেখার কক্ষতলের সঙ্গে হেলানাে। (661/2°) অবস্থানের জন্য 6 মাস উভয় মেরুতে একটানা দিন বিরাজ করে। এর মধ্যে 21 মার্চ থেকে 23 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই 6 মাস যখন সুমেরুতে একটানা দিন থাকে, তখন নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর (70° উঃ অক্ষাংশ) থেকে গভীর রাতেও দূরে উত্তর মেরুর আকাশে সূর্য দেখা যায়। রাতের আকাশের এই সূর্যকে বলে নিশীথ সূর্য। এজন্য নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দরকে “নিশীথ সূর্যের দেশ বলে।
রবিমার্গ
রবি শব্দের অর্থ সূর্য এবং মার্গ শব্দের অর্থ পথ। যে আপাত বার্ষিক গতিপথে সূর্য পৃথিবীর কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যে সারাবছর ধরে চলাচল করে বলে মনে হয়, সেই পথকেই রবিমার্গ বলে।
দক্ষিণাভিমুখী গতিকে দক্ষিণায়ন বলে। আবার, 22 ডিসেম্বরের পর মকরক্রান্তিরেখা থেকে 21 জুন কর্কটক্রান্তিরেখা পর্যন্ত সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যায়। সূর্যের এই আপাত উত্তরাভিমুখী গতিকে উত্তরায়ণ বলে। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক দক্ষিণায়ন ও উত্তরায়ণের গতিপথকে সামগ্রিকভাবে রবিমার্গ বলে।
● পৃথিবীর অক্ষ (মেরুরেখা) কক্ষতলের সাপেক্ষে 66-1/2° কোণ করে হেলে থাকার ফলাফলগুলি আলােচনা করাে।
পৃথিবীর অক্ষের কক্ষতলের সাপেক্ষে 66-1/2° কোণে হেলে থাকার ফলাফল
পৃথিবীর অক্ষ (মেরুরেখা) তার কক্ষতলের সঙ্গে 66-1/2° কোণ করে হেলে অবস্থান করে আছে। পৃথিবীর এই হেলানাে অবস্থানের প্রধান ফলাফলগুলি হল—
1. দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: পৃথিবীর অক্ষ কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণ করে হেলে থাকার জন্যই 21 মার্চ এবং 23 সেপ্টেম্বর তারিখে সূর্য নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে ওই দুই তারিখে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়। 21 মার্চের পর থেকে সূর্যের দিকে পৃথিবীর উত্তর গােলার্ধ ঝুঁকতে থাকে এবং 21 জুন তারিখে সূর্য ঠিক কর্কটক্রান্তিরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এই সময় উত্তর গােলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বড়াে এবং রাতের দৈর্ঘ্য ছােটো হয়। অন্যদিকে 23 সেপ্টেম্বরের পর থেকে পৃথিবীর দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ে। 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য ঠিক মকরক্রান্তিরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এই সময় দক্ষিণ গােলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বড়াে এবং রাতের দৈর্ঘ্য ছােটো হয়।
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তন
2. ঋতুপরিবর্তন: পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণে হেলে থাকার জন্যই সূর্যের চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর উত্তর গােলার্ধ একবার সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে, আবার দক্ষিণ গােলার্ধ একবার সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যখন উত্তর গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখন উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গােলার্ধে শীতকাল হয়। আবার যখন পৃথিবীর দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখন দক্ষিণ গােলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও উত্তর গােলার্ধে শীতকাল হয়। উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধে গ্রীষ্মকাল থেকে শীতকাল এবং শীতকাল থেকে গ্রীষ্মকাল হওয়ার মাঝে পর্যায়ক্রমে শরৎকাল এবং বসন্তকাল হয়।
3. সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ন: পৃথিবী কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণ করে হেলে থাকা অবস্থায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এজন্য 22 ডিসেম্বরের পর থেকে 21 জুন পর্যন্ত আকাশে সূর্যের উত্তরমুখী আপাত গতি লক্ষ করা যায়। এই সময়কে সূর্যের উত্তরায়ণ বলে। অন্যদিকে 21 জুন থেকে 22 ডিসেম্বর পর্যন্ত আকাশে সূর্যের দক্ষিণমুখী আপাত গতি লক্ষ করা যায়। এই সময়কে সূর্যের দক্ষিণায়ন বলে।
4, পৃথিবীর স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় এবং তাপবলয়ের পরিবর্তন: সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়সমূহ এবং তাপ বলয়সমূহ পর্যায়ক্রমে সামান্য উত্তরদিকে বা দক্ষিণদিকে সরে যায়।
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণগুলি
5. পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের অন্যান্য ফলাফল :
এ ছাড়াও পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞলে সারাবছর মােটামুটি লম্বভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে, মেরু অঞলে বেশ তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে এবং মেরুদ্বয়ে 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত্রি হয়। পৃথিবীর নিজের অক্ষের কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণ কC হেলে থাকার জন্যই এইসব ঘটনা ঘটে থাকে।
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির জন্য আকাশে সূর্যের একটি আপাত বার্ষিক গতি লক্ষ করা যায়। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক গতি উত্তরে | কর্কটক্রান্তিরেখা থেকে দক্ষিণে মকরক্রান্তিরেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন— 21 জুন কর্কটক্রান্তিরেখা থেকে 22 ডিসেম্বর মকরক্রান্তিরেখ পর্যন্ত সূর্য একটু একটু করে দক্ষিণ দিকে সরে যায়। সূর্যের এই আপাত
পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তনের কারণগুলি