নিরুদ্দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা Teacj Sanjib

 নিরুদ্দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা Teacj Sanjib

 

নিরুদ্দেশ

 

প্রেমেন্দ্র মিত্র

নিরুদ্দেশ গল্পের উৎস বিষয়বস্তু বড় প্রশ্ন উত্তর ছোট প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

নিরুদ্দেশ গল্পের উৎস

 

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছােটোগল্পের দ্বিতীয় পর্ব হলাে ১৯৩৯ খ্রি.-১৯৭৭ খ্রি.। নিরুদ্দেশ’ গল্পটি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কিংবা তারও আগে লেখা হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ৮ টি ছােটোগল্প নিয়ে সামনে চড়াই’ গল্প সংকলনটি প্রকাশিত হয়। নিরুদ্দেশ গল্পটি সামনে চড়াই’ গল্প সংকলনের ছয় সংখ্যক গল্প। পরে এম সি সরকারের নির্বাচিতা’ (১৯৭৪) ও ওরিয়েন্ট লংম্যানের সমস্ত গল্প (১ম খণ্ড ১৯৮৯) সংকলন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়।

 

নিরুদ্দেশ গল্পের বিষয়বস্তু

 

 

 শীতের দিনের বাদলা বড়াে বিশ্রী। মেঘে ঢাকা আকাশ আর স্লান পৃথিবী মড়ার মতাে অসাড় হয়ে আছে। সােমেশ যেন কেমন হয়ে দুপুরে এসেছে। খবরের কাগজের সাত-সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন গল্পকথক সােমেশের নজরে আনে। সােমেশ তাতেও কোনাে রকম কৌতূহল প্রকাশ করে না। চুপচাপ সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে। বাইরের স্তত্ব অসাড়তা যেন তাদের দু-বন্ধুর মনের ওপর চেপে বসে। ঘরের অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য গল্পকথক নিরুদ্দেশের গল্প ফাঁদেন। ছেলে থিয়েটার দেখে দেরি করে ঘরে ফেরার জন্য বাড়িতে খুব অশান্তি। বাবার কঠোর তিরস্কারের জন্য ছেলে ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ। নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের জন্য মায়ের কান্না, অনাহার, শেষে শয্যাগ্রহণ। নিরুপায় পিতা খবরের কাগজের অফিসে হাজির। কাগজে নিরুদ্দেশের কলমে নিখোঁজ হওয়ার বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করে ঘরে ফিরে দেখেন ছেলে ঘরে হাজির। অবশ্য ছেলে থাকবার জন্য আসেনি। এসেছে চলে যাওয়ার আগে তার কয়েকখানা বই নেওয়ার জন্যে। এবার বাবা নয়, মা তিরস্কারের মাত্রা চড়ায়। বেশিরভাগ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের | ইতিহাস এরকম।

 

 সােমেশ এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল। একবারের জন্যও নড়েচড়ে বসেনি। সিগারেটটা আগেই শেষ হয়েছিল, তাবশেষটুকু ফেলে দিয়ে বলে, বিজ্ঞাপনের পিছনে তাকে সত্যতার ট্র্যাজেডি থাকে। গন্থাকথক অস্বীকার করে না। এমনও হয় নিরুদ্দেশে যা যায়। সে আর ফেরে। না। সােমেশ অবশ্য ফিরে আসার এক ভয়ানক ট্র্যাজেডির কথা জানে। গল্পকথক সােমেশের জানা কাহিনি শুনতে চাইলে সােমেশ বলে, পুরানাে খবরের কাগজের পাতায় একটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। বিজ্ঞাপন না বলে একে ধারাবাহিকভাবে প্রক: একটি করুণ কাহিনি বলা যায়।

   নিরুদ্দিষ্ট ছেলের ফিরে আসা জন্য মায়ের কাতর আর্তনাদ, ব্যাকুলতা, আর হতাশ দীছ মায়ের পরে বাবার এই আবেদন যে, শয্যাগত মায়ের প্রতি ছেলের কর্তব্যবােধ মনে রেখে নিরুদ্দিষ্ট শােভনের অবশ্যই ফিরে আসা উচিত। বিজ্ঞাপনের বিরাম নেই। মা-বাবাকে আর দুঃখ না দিয়ে ফিরে আসার জন্য বাবার করুণ কণ্ঠের কাতর আবেদন অবশেষে তা বন্ধ হয়ে নিরুদ্দেশের যেমন সাধারণ বিজ্ঞাপন হ সেরকম প্রকাশ হতে থাকে। নিরুদ্দিষ্ট ছেলের সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কারও ঘােষিত হয়। ওই সঙ্গে নিরুদ্দিষ্ট ছেলের চেহারা পরিচয়-চিহ্ন ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। ছেলের বয়স ষােলাে-সতেরে। ছিপছিপে দোহারা চেহারা। ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটা বড়াে জজুল চিন্হ।

 

 বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান সেরে সােমেশ থামলে গল্পকথক জানতে চান পরের কাহিনি। সােমেশ তার উত্তরে বলে যে, শােভনকে সে জানত। অভিমান করে সে ঘর ছাড়েনি। যে-কোনাে একটা ছুতােয় ঘর ছাড়ার মতাে মনের ছেলে সে। সে নির্লিপ্ত মনের ও কোমল হৃদয়ের। এ ধরনের ছেলের মন হয় যেন তৈলাক্ত, তাতে দাগ কাটে না, কোথাও ধরাও পড়ে না। সংসারে এদের সংখ্যা খুবই কম। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে থাকলেও তা অনুসরণ করে না। তা গুরুত্ব দেয় না বলে ভুলেও যায়। নিজেকে একটি ছােটো সংসারের আদরের ছেলে বলে ভাবে না। অথচ অবস্থাপন্ন জমিদার বাড়ির ছেলে সে।

 

 শেষ বিজ্ঞাপনে দেখা গেল লেখা আছে যে, মায়ের সঙ্গে শােভনের আর বুঝি দেখা হবে না, তিনি কেবল শােভনেরই নাম করছেন। প্রায় দু-বছর কেটে গেছে, শােভন একদিন হঠাৎ দেশে গিয়ে হাজির। শােভন তাদের প্রাচীন জমিদারির একমাত্র অধিকারী। শােভন বাড়ির ভিতরে ঢুকতে গেলে নায়েবমশাই বাধা দেন। নায়েবমশাই শােভনকে বারবাড়িতে নিয়ে আসেন। বুড়াে খাজাঞিমশাই জানতে চান শােভন কখন এসেছে।

  খাজাঞিমশাই ‘এইমাত্র’ জবাব শােনার পর শােভন জানতে চায় তার মা-বাবা কেমন আছেন। তাঁরা ভালাে আছেন, কিন্তু তাঁদের সঙ্গে শােভনের দেখা হবে না শােভন জানতে চাইল যে, তারা তাকে চিনতে পারছেন কিনা নায়েবমশাই টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ফোটো এনে শােভনকে দেখালেন। শােভন বললে যে, এ তারই ছবি। নায়েবমশাই বললেন, এর আগে দুজন এসেছিল তাদের সঙ্গে ছবির মিল ছিল, জজুলও মিলেছিল। এ নিয়ে হাঙ্গামা করতে নিষেধ আছে নায়েবমশাই বললেন, শােভন যেন চলে যায়। নায়েবমশাই আরও বললেন যে, সাত দিন আগে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে শােভন মারা গেছে।

নিরুদ্দেশ গল্পের সারাংশ

 এসব শুনে শােভন কী করত বলা যায় না। এমন সময় তার বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। শােভন ‘বাবা’ বলে ডাকতে বৃদ্ধ কাঁপা গলায় জানতে চাইলেন কে। নায়েবমশাই জবাব দিলেন, কেউ না। এই নিয়ে তিনবার হলাে। জমিদার কর্মচারীদের বললেন যে, তারা যেন ছেলেটিকে চলে যেতে দেয়। শােভন কখন বারবাড়িতে এসে বসে তার মনে নেই। তার আচ্ছন্নতার ভাব কেটেছে, এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে এক কর্মচারী এসে নায়েবমশাইকে কী যেন বলছেন। 

 শােভন দেখতে পেল নায়েবমশাইয়ের হাতে অনেক টাকার নােট। নায়েবমশাইয়ের গলায় মিনতি, বাড়ির গিন্নি মুমূর্ফ, তিনি ছেলের মৃত্যুর খবর জানেন না। তাঁকে জানানাে হয়নি। তাঁর হারানাে ছেলে হিসেবে শােভনকে একবার দেখা দিতে হবে। এই হলাে জমিদারের অনুরােধ। জমিদার শােভনের হাতে নােটের গােছা গুঁজে দিলেন। |

 

 সােমেশ এরপর নীরব। গল্পকথক বললেন যে, সােমেশের কানের পাশে একটা জডুল আছে। সােমেশের সহাস্য বক্তব্য হলাে, সেজন্যই তাে গল্পটা সহজে বানাতে পারলেন। গল্পকথকের মনে হলাে গল্প বলে সােমেশের হেসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা বিশ্বাসযােগ্য নয়। 

 

নিরুদ্দেশ গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন )মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি। গল্পকথকেৱ এই বিৱক্তির কারণ কী? গল্পকাৱেৱ এই উক্তিতে সােমেশেৱ কী প্রতিক্রিয়া আলােচনা করাে।

 

 

উত্তর :

 

বিৱক্তির কারণ: গল্পকথকের বলা নিরুদ্দেশের

 

বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক কাহিনি শেষ হয়েছে। সােমেশের সিগারেটও ততক্ষণে শেষ হয়েছে। গল্পকথক লক্ষ করেছেন তার বলা কাহিনির এত সােমেশ মনােযােগী হয়নি। এমনকি ওই সময়ের মধ্যে একবারও একটু নড়েচড়ে বসেনি। এটাই হলাে গল্পকথকের বিরক্তির কারণ। যে বিরক্তির প্রকাশ ঘটেছে তাঁর উক্তিতে : ‘মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি।

 

মেশের প্রতিক্রিয়া : গল্পকথকের বিরক্তি প্রকাশের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল সােমেশের মধ্যে তার আচরণে আর বক্তব্যে। সে গল্পকথকের কথার কোনাে উত্তর দিল না। সে হঠাৎ ছড়ানাে শা, যা এতক্ষণ একটু নাড়াচাড়াও করেনি, তা গুটিয়ে নিল। তারপর বসল সােজা হয়ে। বসে সিগারেটের পুড়ে যাওয়ার পরেও যে অংশটুকু ধরা ছিল হাতে, তা ফেলে দিল। তারপর বললে যে, গল্পকথক জানেন না, ওই নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের পিছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজেডি লুকিয়ে থাকে।

  প্রকৃতপক্ষে গল্পকথকের বলা কাহিনি কিন্তু সােমেশ শুনেছে। যাই হােক, গল্পকথক সােমেশের ট্র্যাজেডির কথা স্বীকার করে নিলেন। অবশ্য সেই সঙ্গে বললেন যে, কখনাে-কখনাে যে নিরুদ্দেশে যায় সে আর ফেরে না। সােমেশ ওই কথার জবাবে একটু হাসল। তারপর বলল যে, সে তা বলছে। না। তার বক্তব্য হলাে যে, নিরুদ্দিষ্ট ছেলের ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্র্যাজেডির কথা তার জানা আছে। প্রকৃতপক্ষে সােমেশের প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ এক নিরুদ্দিষ্ট ছেলের ঘরে ফেরার ঘটনাকে ঘিরে ট্র্যাজিক কাহিনির প্রকাশ।

 

প্রশ্ন ) ‘এই বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজিডি থাকে।—সােমেশেৱ উক্তি যে যথাযথ সােমেশেৱ বলা কাহিনি অনুসৱণে আলােচনা করাে। 

 

উপস্থাপনা : গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে গল্পকথক নিরুদ্দেশ বিজ্ঞাপন ও নিরুদ্দিষ্ট ছেলের ঘরে ফেরা সম্পর্কে দুটি উক্তি করেন। সে দুটির মধ্যে প্রথমটি হলাে বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক নিরুদ্দেশ কাহিনি বলার শেষে গল্পকথক মন্তব্য করেন ‘অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই। তই জবাবে সােমেশ বলে যে, সে (গল্পকথক) জানে না, ওই জ্ঞাপনে পিছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজেডি থাকে। তার এই ও রে যথাযথ, সােমেশের বলা কাহিনি আলােচনা করলে তা প্রমাণিত হবে।

 

বার মাধ্যমে যথার্থ প্রমাণ :পুরােনাে খবরের গজের ফাইল নাড়াচাড়া করলে দেখা যাবে অনেক বছর আগে দেশ সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞাপন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল প্রতিদিনকার কাগজে। এটি ঠিক বিজ্ঞাপন নয়, একটি দেশকে ঘিরে নির্দিষ্ট একটি ছেলের মা ও বাবার করুণ আর্তি,

অনুরােধ, হতাশা, দীর্থশাস, হাহাকার ইত্যাদি। যেন একটি সম্পূর্ণ করুণ কাহিনি। সােমেশ বলেছে পুরোনো খবরের কাগজ, যার পাতায় করুণ কাহিনি প্রকাশিত হতো, তাতে কান রাখলে শােনা যাবে মায়ের কাতর আর্তনাদ। 

 ছেলের ফিরে আসার জন্যে মায়ের কাতর অনুরােধ। মাতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতা। ধীরে ধীরে মায়ের কাতর অনুরােধ, হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস মিলিয়ে যেতে লাগল। তারপর শুরু হলাে পিতার গম্ভীর স্বর। স্বর কম্পিত অথচ ধীর ও শান্ত। শােভন ফিরে এসাে। তােমার মা শয্যাগত। তােমার কি এতটুকু কর্তব্যবােধ নেই। এভাবে কাতর অনুনয়, মিনতি একদিন বন্ধ হয়ে বিজ্ঞাপন সাধারণ বিজ্ঞপ্তিতে পরিণত হলাে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের পিছনে যে সত্যকার ট্র্যাজেডি, তা কী মিথ্যে হয়ে যাওয়ার ? নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন নিয়ে সােমেশের যে উক্তি তা কী যথাযথ নয় ?

 

প্রশ্ন ) ‘ফিৱে আসাৱই ভয়ানক একটা ট্র্যাজিডির কথা আমি জানি।”—সােমেশেৱ জানা কাহিনি অনুসরণে নিরুদ্দিষ্ট ছেলে শােভনের বাড়ি ফিরে আসাৱ ভয়ানক ট্র্যাজিক পরিণাম আলােচনা করাে।

 

উত্তর : প্রস্তাবনা : গল্পকথক বলেছেন, কখনাে-কখনাে সত্যিই যে যায় সে আর ফেরে না। গল্পকথকের কথা সােমেশ অস্বীকার করে না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আর তা হলাে নিরুদ্দিষ্ট ছেলের ঘরে ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্র্যাজেডির কথা সােমেশ জানে।

 

নিরুদ্দেশেৱ কারণ ও ঘরে ফেরার জন্য ব্যাকুলতা : নিরুদ্দিষ্ট ছেলে হলাে এক পুরােনাে জমিদার পরিবারের সন্তান শােভন। ওই পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারীও শােভনই। নির্লিপ্ত ও উদাসী মনের ষােলাে-সতেরাে বছরের ছেলেটি অভিমানে নয়, স্বভাবগত কারণে সামান্য ছুতােয় বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। দীর্ঘ দু-বছর ধরে বাড়ি ফেরার জন্য তার মা-বাবার পক্ষ থেকে ধারাবাহিক বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতে থাকে। যেদিন বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ হয় শােভন সেদিন উদাসীন ভাব কাটিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বিচলিত হয়ে ওঠে। দু-বছরের স্বাধীন জীবনের দুঃখকষ্ট তার দেহ ও মনের ওপর ছাপ ফেলে এবং তার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটে।

 

ঘৱে ৱােৱ ট্র্যাজিক বা মর্ম অদ পরিণাম শােভন দেশে ফিরে সােজাসুজি বাড়িতে ঢুকতে গেলে প্রথম বাধা পায় তাদের পুরােনাে নায়েবমশাইয়ের কাছে। ওই চতুর লােকটি শােভনকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে কায়দা করে বারবাড়িতে নিয়ে যায়। শোভন সেখানে পরিচিত মানুষ হিসেবে দেখে বুড়াে জাণিমশাইকে। সে লক্ষ করে, সবার অবিশ্বাসী দৃষ্টি তার ওপরে।

  সে ফের বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য কঠোর হয়ে বাধা দেন। শােভন তখন জানতে চায় নায়েবমশাইরা তাকে চিনতে পেরেছেন কিনা। নায়েবমশাই তখন তার হাতে একখান ফোটো ধরিয়ে দেন, যা শােভনের নিজের। বৃদ্ধ পিতাকে দেখে শােভন খুব কষ্ট ও দুঃখ পায়। পিতার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পথে বাধা হয় নায়েবমশাই। নায়েবমশাই শুনিয়ে দেন এর আগে আরও দুজন এসেছিল নিরুদ্দিষ্ট ছেলের পরিচয় দিয়ে। তা ছাড়া সাতদিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে শােভন মারা গেছে বলে নায়েবমশাই এ কথা শােনান। পরিশেষে মুমূর্ষ গৃহিণীর কাছে নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের পরিচয় দেওয়ার জমিদারের মিনতির কথা শােনান নায়েবমশাই এবং শােভনের হাতে নােটের

উদ্যোগী হতেই নায়েবমশাই তাড়া খুঁজে দেন। এর থেকে ট্র্যাজিক বা মর্মন্তুদ পরিণাম আর কী হতে পারে ।

 

প্রশ্ন ) প্রেমেন্দ্র মিত্র ৱচিত ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে ঘকে অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য গল্পকথক নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক যে কাহিনির সূচনা করেন, সেই কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।

 

অথবা, অধিকাংশ নিরুদ্দেশেৱ বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই-যে প্রসঙ্গে এই মন্তব্য তা আলােচনা করে মন্তব্য য়ে যথাযথ প্রমাণ করাে।

 

উত্তর: সংক্ষিপ্ত কাহিনি : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘নিরুদ্দেশ গল্পে ঘরের অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য গল্পকথক নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক একটি কাহিনি ফেঁদে বসেন। গল্পের নিরুদ্দেশের ঘটনাটি অনুমানভিত্তিক ও কাল্পনিক। ছেলেটি থিয়েটার দেখে বাড়ি ফিরতে রাত করায় বাবা তিরস্কার করেন। শেষপর্যন্ত রাগের বশে বলে ফেলেন, এমন ছেলের আমার দরকার নেই—বেরিয়ে যা। ছেলে বাপের আদেশটি মান্য করে বাড়ি থেকে চলে যায়। বাবার ধারণা ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেলেও কোথাও ঠাই না পেয়ে ঘরে ফিরে আসবে সুড়সুড় করে। কিন্তু অভিমানী ছেলে বাড়ি ফেরে না। ছেলের মা দুঃখে-শােকে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে বিছানা কামড়ে পড়ে থাকেন। ছেলের বাবা দেখেন সংসারে ঘাের অশান্তি। মনে মনে ভাবেন এ অশান্তির চেয়ে বনবাস জীবন অনেক সুখের। কিন্তু ছেলের বাবা খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য সােজা খবরের কাগজের অফিসে গিয়ে ওঠেন। অফিসে কোথায় কী করতে হয় তাঁর জানা নেই। একটা অফিস ঘরে ঢুকে এক নিরীহ চেহারার ভদ্রলােককে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যাপারে বলেন বটে, কিন্তু সহযােগিতা পান না। তবে তার পাশের এক ভদ্রলােক সহানুভূতির স্বরে কীসের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি জানতে চান। টেবিলের অপর প্রান্তের আর-এক ভদ্রলােক বলেন যে, তিনি ২ বুঝতে পেরেছেন নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। তিনি দয়াপরবশ হয়ে সব লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বাবা আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ফেরেন। ই কিন্তু বিজ্ঞাপন বের হওয়ার আগেই ছেলে ঘরে ফিরে আসে। অবশ্য ঘরে থাকবার জন্য নয়, তার গােটাকতক বই নেওয়ার জন্য। শুনে রুষ্ট মা ছেলেকে প্রচণ্ড ভৎর্সনা করেন, বাবা এবার শান্ত থাকেন। গল্পকথক মন্তব্য করেন ‘অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই। ওপরের কাহিনির পর্যালােচনা থেকে দেখা গেল মন্তব্যটি যথাযথ ।

 

প্ৰশ্ন ) গল্পকাৱ প্রেমেন্দ্র মিত্র ৱচিত ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে চিত্রিত প্রাকৃতিক পরিবেশ গল্পকে কতখানি প্রভাবিত করেছে আলােচনা করাে।

 

প্রাকৃতিক পরিবেশ : গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্র ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের শুরুতে প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি চমৎকার ছবি এঁকেছেন। শীতের দিন। অকালের বাদলা। বৃষ্টি তখনও পড়েনি। তবে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ছায়া ভরদুপুরেও পৃথিবীকে ম্লান করেছে। তাতে মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন মৃতের মতাে অসাড় হয়ে আছে। এমনই এক ভারী বিশ্রী দিন।

 

পরিবেশের প্রভাব : এর প্রভাব এসে পড়েছে ‘নিরুদ্দেশ গল্পে। এমন একটা বিশ্রী দুপুর কাটানাে গল্পকথকের কাছে দুঃসহ হতাে যদি তাঁর বন্ধু সােমেশ না এসে পড়ত। সােমেশও যেন অন্য দিনের মতাে মন ও মেজাজে নেই। যেন কেমন’। তাও কী বিশ্রী শীতের দুপুরের প্রভাব ?

 

প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রভাব : এরপর এসে গেল খবরের কাগজের সাত-সাতটা নিরুদ্দেশ বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ গল্পকথকের উদ্যোগে। কিন্তু সােমেশ নির্বিকার, কৌতূহলহীন। ঘরে ভয়ংকর স্তব্ধতার অস্বস্তিকর পরিবেশ। গল্পকথক অনুভব করছেন বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশের অসাড়তা যেন তাদের মনের ওপর চেপে বসেছে। গল্পকথক এও বুঝেছেন ওই অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য কিছু একটা করা দরকার। তাতেই ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের সূচনা। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সরাসরি প্রভাব না থাকলেও পরােক্ষ প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।

 

অশ্রুসজল পৱিণতির সঙ্গে বাইৱেৱ বৃষ্টিৱ সাযুজ্য : গল্পকথকের নিরুদ্দেশ কাহিনি একসময় শেষ হয়ে যায়। সােমেশ মূল নিরুদ্দেশ কাহিনি শুরু করে এভাবে ‘শােনাে বলছি। ঠিক তখনই আবার বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ গল্পের সূচনা অংশে জায়গা করে নেয়। বাইরে ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাচের শার্সির ভিতর দিয়ে বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। আর গল্পকথকদের মনে হচ্ছে তাঁরা যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এই পরিবেশেই তাে নিরুদ্দিষ্ট শােভনের ভয়ংকরতম ট্র্যাজিক পরিণতির অভিজ্ঞতা প্রকাশের প্রকৃষ্ট সময়। শােভন আর সােমেশ পৃথক নাম হলেও একই ব্যক্তি, শােভনের ট্র্যাজিক পরিণতির অভিজ্ঞতা সােমেশের জীবনের কঠিনতম অভিজ্ঞতা। তাই শােভন-কাহিনির অশ্রুসজল সমাপ্তির সঙ্গে আমরা দেখি বাইরের প্রকৃতি বর্ষণমুখর। ঘরের বাইরে বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কোনাে শব্দ নেই।

 

নিরুদ্দেশ গল্পের প্রশ্নোত্তর

 

প্রশ্ন ) প্রখ্যাত গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্প অবলম্বনে শােভন চৱিত্রটি আলােচনা করাে ।

 

উত্তর : সন্তান, বয়স, দেহের গঠন, পরিচয়-চিহ্ন। প্রখ্যাত গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের প্রধান চরিত্র শােভন। সে জমিদার পুত্র। বিশাল জমিদারির একমাত্র উত্তরাধিকারী। বয়স ষােলাে-সতেরাে। দোহারা চেহারা, ছিপছিপে গড়ন। ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটি বড়াে জডুল। এই তার পরিচয়-চিহ্ন।

 

নিরুদ্দেশেৱ কারণ, মানসিক গঠন, স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য : নিরুদ্দিষ্ট শােভন আর পাঁচটা নিরুদ্দিষ্ট ছেলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। নিরুদ্দেশের কারণ, মানসিক গঠন, স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানা বিষয়ে শােভন একেবারে স্বতন্ত্র। সে অভিমানে বাড়ি ছাড়েনি। সামান্য ছুতােয় অতি সহজে সে নিরুদ্দেশ হয়েছে। জন্মসূত্রে সে নির্লিপ্ত মনের ছেলে। সে কঠোর হৃদয়হীন নয়। তার মন যেন। তৈলাক্ত। যা পিচ্ছিল ও যার ওপরে সহজে রেখাপাত হয় না। সে কাগজের বিজ্ঞাপন হয়তাে দেখেছে। তবে তা অনুসরণ করেনি। দেখলেও তার স্বভাবগত ভােলা মনের জন্য ভুলেছে। বাড়ির বাইরে থাকার জন্য দুঃখকষ্ট-অসুবিধার মধ্যেও সে পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। ছোটো সংসারে আদরের দুলাল হয়ে সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকা। তার স্বভাববিরুদ্ধ। 

 

মা-বাবার প্রতি মমত্ববােধ। মজার ব্যাপার, মা-বাবার পক্ষ থেকে খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন যেদিন বন্ধ হয়েছে সেদিনই তার উদাসীন নন বাড়ির জন্য বিচলিত হয়েছে। সে দেশে ফিরেছে। মা-বাবার জন্য উদবিগ্ন হয়ে সােজাসুজি বাড়িতে ঢুকতে তার গৃহপ্রবেশে সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছে তাদের পুরােনাে নায়েব। মা-বাবার শারীরিক ব্যাপার নিয়ে তার উদবিগ্ন হয়ে ওঠা মা-বাবার প্রতি তার মমত্ববােধের পরিচয়। ঝড়ে ভাঙা গাছের মতো তার পিতার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে সে দুঃখে কাতর হয়েছে তার মুখের বেদনাময় তার বুকে ছুরির ফলার মতো হয়েছে।

 

 

 সংযমী স্বভাব, ট্র্যাজিক পরিণামের শিকার: ব্যবহার তাকে উত্যক্ত করেছে। তাতে সে মর্মাহত হয়েছে। অসহ বােধ করে মাথার চুল মুঠো করে ধরেছে। কিন্তু কোনো সম. সে সংযম হারায়নি। উত্তেজিত হয়ে অশােভনীয় কিছু করে, তার ঘরে ফেরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সে ভয়ানক ট্র্যাজিক পরিণত শিকার হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) গল্পকাৱ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্প অবলম্বনে নায়েব চরিত্রটি আলােচনা করাে।

 

প্রভাব ও প্রতিপত্তি, স্বার্থন্বেষী ও চতু মমত্বহীন ও নির্দয়, অনুচিত কাজ ও অভিযােগ : প্রখ্য গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের নায়েবমশাই এক, অন্যতম চরিত্র। তিনি শােভনদের জমিদার পরিবারের পুরােনাে। কর্মচারী। জমিদার সেরেস্তার কর্মচারীদের মধ্যে প্রধান। জমিদার। পরিবারের ওপর তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি অনেক বেশি। তার মতামত ও সিদ্ধান্ত অনেকক্ষেত্রে শেষ মতামত ও সিদ্ধান্ত। হিসেবে কার্যকরী হয়। কাজেই জমিদারের নায়েব বলে তাঁর ব্যক্তিত্বের একটা স্থান আছে। সেজন্য নায়েব পদের কর্মচারী। অনেকক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী হতেন এমন দৃষ্টান্ত প্রায়ই দেখা যেত। নায়েব শ্রেণির কর্মচারীরা হতেন কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ও চতুর প্রকৃতির লােক। যদিও ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের নায়েবমশাইকে তেমন স্বার্থান্বেষীভাবে চিত্রিত করা হয়নি। তবে তিনি জমিদারপুত্র । নিরুদ্দিষ্ট শােভনের বাড়ি ফেরার সবচেয়ে বড়াে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর মমত্বহীন নির্দয় আচরণ ও চাতুর্য শােভনকে । ক্ষুব্ধ করেছে। একবার তাে খুবই অসহ্য বােধ করেছে শােভন। নিরুপায় হয়ে নিজের চুলের মুঠি ধরে সামলে নিয়েছে নিজেকে শােভনের পৌছানাের আগে আরও দুজন শােভন পরিচয় দিয়ে হয়তাে প্রতারিত করতে এসেছিল। পুরস্কার পাওয়ার লােভে কেউ বা কারা শােভনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে একাসনে শােভনকে বসিয়ে বিচার করা নায়েবের মতে তীক্ষবুদ্ধির মানুষের অনুচিত কাজ হয়েছে। শােভন যখনই বাড়ি ভিতরে যেতে চেয়েছে কিংবা তার বাবার কাছাকাছি হয়ে পরিচণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তখনই তাকে ইচ্ছা করে বাধা দিয়েছেন নায়েবমশাই নিজেই। অথচ জমিদার মশাইয়ের পাঠানাে টাকা ও মিনতির কথা শােভনকে বলা হয়েছে, হারানাে ছেলের সঙ্গে তার সত্যি সাদৃশ্য আছে। সত্যি সাদৃশ্য থাকলে, তাহলে শােভনকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া |হলাে না কেন ? এই প্রশ্ন অভিযোগের আঙুল হয়ে নায়েবমশাযের দিকেইকে উত্থিত হয় ।নাযেবমশাই এই সত্যতা জেনেও শোভনকে তার নিজের বাড়িতে স্থান পেতে দিলেন না নিজের স্বার্থে, না অন্য কারো স্বার্থে।

 

নিরুদ্দেশ গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) বাবাকে দেখে শােভনের কী মনে হয়েছে? ‘বাবা’ বলে ডাকায় শোভনের কী অভিজ্ঞতা হলাে ?

 

উত্তর : বাড়ি থেকে বাবাকে বেরােতে দেখে শােভনের মনে হলাে, যেন প্রচণ্ড ঝড়ে ভাঙা একটি বিধ্বস্ত গাছ। মানুষের সঙ্গে ঝড়ে ভাঙা গাছের এমন মিল থাকতে পারে না, সাহিত্যে অনেক উপমা সে পড়েছে, কখনও তার মনে হয়নি। তাঁর শরীর ও মনের ওপর দিয়ে একটা ভয়ংকর দুর্ঘটনার ঝড় বয়ে গেছে সেটা তাঁর চলার গতি দেখলে স্পষ্ট বােঝা যায়।

 

শােভন বাবার সামনে হাজির হয়ে বাবা বলে ডাকতেই তার অভিজ্ঞতা হলাে। তাঁর থমকে দাঁড়ানাে মুখে বেদনাময় বিমূঢ়তার করুণ ছবি। যে ছবি শােভনের বুকে ছুরির ফলার মতাে বিদ্ধ হলাে।

 

প্রশ্ন ) ‘নায়েবমশাই-এর হাতে অনেকগুলাে টাকার নােট। কণ্ঠস্বরে তাৱ মিনতি’-কী মিনতি ? 

 

উত্তর; কণ্ঠস্বরে এই মিনতি ছিল যে, শােভনকে একটা কাজ করতে হবে। জমিদার গৃহিণী মুমূর্য। তিনি ছেলের মৃত্যুসংবাদ শােনেননি। তাঁকে কিছু জানানাে হয়নি। তিনি এখনও ছেলেকে দেখবার আশায় আছেন। সেজন্য তিনি মরেও শান্তি পাচ্ছেন না। তাঁর হারানাে ছেলের সঙ্গে শােভনের অনেক মিল আছে। মৃত্যুপথযাত্রীর সঙ্গে সন্তানের শেষ সাক্ষাতের সান্ত্বনাটুকু দেখার জন্য জমিদারবাবু বিশেষ মিনতি জানিয়েছেন।

 

প্রশ্ন ) ‘তাৱ হাসিটাই বিশ্বাস করতে গল্প কথকের প্রবৃত্তি হলাে না কেন? 

 

উত্তর; নায়েবমশাই নােটের তাড়াটা শােভনের হাতে খুঁজে দিলেন। এই বলেই সােমেশ চুপ করে গেল। বাইরের বৃষ্টির শব্দ ছাড়া ঘরে শব্দ নেই, নিস্তব্ধ। স্তব্ধতা ভাঙল গল্পকথকের কণ্ঠস্বরে ‘সােমেশ, তােমার কানের কাছে একটা জডুল আছে। সােমেশ হাসিয়া বলিল,-“সেই জন্যই গল্প বানানাে সহজ হলাে। সােমেশের ওই হাসি, যা দিয়ে সােমেশ জড়ল সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরকে উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে, গল্পকথকের তা বিশ্বাসযােগ্য হয়নি। তার সহজ অর্থ শােভন ও সােমেশ এক নামের না হলেও তারা একই ব্যক্তি, যার পরিচয়( চিহ্ন জডুল এবং বানানাে গল্প শােভনের জীবনের ভয়ংকর সত্য ট্র্যাজেডি।

প্রশ্নঃ) বিজ্ঞাপন বদলে গিয়ে হলাে সাধারণ একটি বিজ্ঞপ্তি মাত্র।–বিজ্ঞপ্তিৱ বক্তব্য কী হলাে লেখাে। –

উত্তর : বিজ্ঞাপন বদলে গিয়ে হলাে বিজ্ঞপ্তি এবং তাতে নিরুদ্দিষ্ট ছেলের চেহারা, বয়স ও পরিচয়-চিহ্নের কথা। চেহারা দোহারা ছিপছিপে। বয়স ষােলাে-সতেরাে। পরিচয়- হলাে ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটা বড়াে জডুল। এক বছর হলাে তার কোনাে সন্ধান নেই। সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে। পরে পরে বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের পরিমাণ বাড়তে লাগল। শেষ অবধি বলা হলাে জীবিত বা মৃত এটুকু জানাতে পারলেও পুরস্কৃত করা হবে।

 

প্রশ্ন ) শােভন বাড়ি ছেড়ে ছিল কেন? তার মনের গঠন কেমন ছিল? 

 

উত্তর : শােভন কোনাে ভয়ংকর অভিমানের বশে বাড়ি ছেড়ে এসেছিল তা নয়। বাড়ি ছাড়া তার কাছে খুব সহজ ব্যাপার ছিল। কোনাে ছুতাে বা যা হােক কিছু হলেই সে অক্লেশে বাড়ি ছাড়ত।

শােভনের মনের গঠন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এ ধরনের মনের গঠন প্রকৃতির মানুষ খুব অল্প। এরা জন্ম থেকেই নির্লিপ্ত মনের মানুষ হয়। এরা কঠিন হৃদয় বা কঠিন মনের মানুষ নয়। এদের মন যেন তৈলাক্ত। সেরকমই হড়হড়ে বা পিচ্ছিল। ফলে কোথাও ধরে রাখা যায় না। কোনাে কিছু তাদের মনে রেখাপাত করতেও পারে না।

প্রশ্ন ) শেষ বিজ্ঞাপনে কী লেখা ছিল? শােভন কীৱকম পরিবাৱেৱ ছেলে ছিল? 

উত্তর : শেষ বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ‘শােভন, তােমার মার সঙ্গে আর তােমার বুঝি দেখা হলাে না। তিনি শুধু তােমারই নাম করছেন এখনো।

শোভনের প্রকৃতির খানিকটা পরিচয় পাওয়া যায় তার সূত্র থেকে। সে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নয়। সম্পন্ন পরিবারের ছেলে বললেও সঠিক বলা হবে না। সে জমিদার বাড়ির ছেলে। তাও প্রাচীন জমিদার পরিবার। যে পরিবার অনেক দুর্দিনের ভিতর দিয়েও নিজেদের ক্ষমতাকে বিশেষ ক্ষয় করে ফেলেনি। ওরকম জমিদার পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী হলো শোভন।

 

প্রশ্ন ) ‘আসুন, বারবাড়িতে একটু বিশ্রাম ‘। করুন।নায়েবমশাই এ কথা বলার আগে শােভনের সঙ্গে নায়েবমশাইয়ের কথােপকথন লেখো ।

 

 উত্তর : দেশে পৌঁছে শােভন সােজাসুজি বাড়ি ঢুকেছিল। তাদের পুরােনাে নায়েবমশাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে প্রথমে বাধা দিয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, শােভন কাকে চায়। শোভন হেসে বলেছিল যে, সে কাউকে চায় না, বাড়িতে যেতে চায় নায়েবমশাই তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শােভনকে দেখে নিয়ে স্মিতহাসে বলেছিলেন যে, অত তাড়াতাড়ি ভিতরে যাবেন না। শোভন যেন বারবাড়িতে এসে একটু বিশ্রাম করে নেন।

 

প্রশ্ন ) ‘অাপনি অমাৱ সঞ্জো অসু ন || -বক্তা কোথায় এলেন? সেখানে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী দেখলেন?

 

উত্তর : উধৃত উক্তির বক্তা নায়েবমশাই বারবাড়িতে এলেন।

 

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হলেন বাড়ি-ফেরা নিরুদ্দিষ্ট ছেলে শােভন। সে। বিমূঢ় অবস্থায় নায়েবমশাইকে অনুসরণ করে বারবাড়িতে এসে দেখল, সেখানে কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তাদের পুরানাে সরকার নেই। সেখানে বসে খাতা লিখছে দুটি নতুন লােক। বুড়াে খাজাঞিমশাই তার পরিচিত পুরােনাে লােক। তাঁকে দেখে শােভন  যেন আশ্বস্ত হলাে।

 

প্রশ্ন ) নায়েবমশাই টেবিলের ড্রয়ার থেকে কী আনলেন? তা দেখে শােভনের কী প্রতিক্রিয়া হলাে?

 

উত্তর : নায়েবমশাই পাশের ঘরের টেবিলের ড্রয়ারের ভিতর থেকে একটা ফোটো আনলেন।

 

নায়েবমশাই ফোটোটি শােভনের হাতে দিলেন। শােভনেরই ফোটো। সাধারণভাবে তােলা। এখন আবছা হয়ে এসেছে। একে চেনেন কিনা জিজ্ঞেস করায় শােভন বললে, তারই ফোটো। তবে তার দেখার দরকার নেই। নায়েবমশাইরা তার চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। যাই হােক, ফোটো দেখিয়ে তার সঙ্গে এই ব্যবহার তার অসহ্য লাগল। সে নিজের মাথার চুল মুঠো করে ধরে বসে পড়ল।

 

প্ৰশ্ন)  খবরের কাগজে সাত-সাতটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের উল্লেখে সােমেশকে কী কৱতে দেখা গল? 

 

উত্তর: গল্পকথকের কাছে একদিনের খবরের কাগজে সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন প্রকাশ আশ্চর্য ব্যাপার। তিনি বিস্ময়কর মনে করলেও সােমেশ কিন্তু তাতে কোনােরকম কৌতূহল প্রকাশ করল না। উদাসীন হয়ে বসে নীরবে সিগারেটে টান  দিয়ে কেবলই ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। ঘর নিস্তব্ধ। সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী কেবল আস্তে আস্তে পাক খেতে খেতে ওপরে উঠতে লাগল। আর সমস্তই নিস্তব্ধ।

 

প্রশ্ন ) ঘৱেৱ অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য গল্পকথক কী করলেন? 

 

উত্তর: ঘরের অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গল্পকথক ভাবলেন কিছু একটা করতে হবে। তিনি সেই উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনগুলিকে দেখলে তার হাসি পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা প্রায় জানা। ছেলে হয়তাে থিয়েটার দেখে রাত করে বাড়ি ফিরল। তাতে বাবা বকাঝকা করলেন। ছেলে অভিমানে ঘর ছাড়ল। গল্পকথক এই বলে নিরুদ্দেশের এক কাহিনি শুরু করলেন।

 

প্রশ্ন ) ‘না আর থাকতে দিলে না ।”—এ তিক্ত অভিজ্ঞতা কার? তাঁৱ এ অভিজ্ঞতা হলাে কীভাবে?

 

উত্তর; এ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিরুদ্দিষ্ট ছেলের বাবার।

 

তিনি সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফিরে দেখেন অবস্থা গুরুতর ছেলে ঘরে ফেরেনি। ছেলের মা শােকে শয্যাশায়ী। বিছানা ছেড়ে আর উঠবেন না বলে হয়তাে পণ করেছেন। পরের দিন ভয়ানক কাণ্ড। ছেলের মা ছেলে চলে যাওয়ায় রাত থেকে দাঁতে রুটি কাটেননি। সেদিনও বিছানা থেকে উঠবেন বলে মনে হয় না। রাত্রিতে বাবার চোখেও ঘুম নামে না। তিনি কোন্ মুখে সে কথা প্রকাশ করবেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সংসার জীবনের ওপর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে।

নিরুদ্দেশ গল্পের প্ৰশ্ন

প্রশ্ন )‘এবাৱ মা-ৱ কুদ্ধস্বর শােনা যায়,’—কী পরিস্থিতিতে মায়ের এই কুদ্ধস্বৱ? এবার’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ কী? 

 

উত্তর : খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেরােনাের আগেই নিরুদ্দিষ্ট ছেলে ঘরে ফিরে এল। সে অনুতপ্ত হয়ে ঘরে ফিরেছে তা নয়। সে বাড়িতে থাকতে আসেনি। তার গােটাকতক বই নিয়ে যেতে এসেছে। ও কথা শােনার পর মা আর রাগ সংবরণ করতে পারেননি। ওই পরিস্থিতি তাঁকে ছেলের প্রতি রুষ্ট করে।

 

‘এবার’ শব্দটি লেখক ব্যবহার করেছেন। তার কারণ বাবা সেবার রুষ্ট হয়েছিলেন ছেলের ওপর। এবার কিন্তু বাবা শান্ত, মা রুষ্ট। তাই এবার’ শব্দটির ব্যবহার।

 

প্রশ্ন ) এবাৱ মা ছেলেকে কী বলে তিৱস্কার করলেন?

 

উত্তর ; মা এ কথা বলে ছেলেকে তিরস্কার করলেন। সে (ছেলে) বাড়ি ছেড়ে যাবে বই-কি। সেরকমই কুলাঙ্গার হয়েছে সে। কোনাে ছেলে যেন বাবার বকুনি খায় না। ছেলে যেন একেবারে পির হয়েছে। ছেলে কি জানে তার বাবা কাল সারারাত দু-চোখের পাতা এক করেনি ছেলের কথা ভেবে। ছেলে গিয়ে যেন দেখে আসে তার চিন্তায় মানুষটার চেহারা কী হয়েছে। অথচ ছেলে নাকি তেজ দেখিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

 

প্রশ্ন ) ‘শােনাে বলছি। বলে কে কাহিনি শুরু করতে চাইল? তখন বাইৱেৱ প্রকৃতি ও ঘৱেৱ ভিতরের অবস্থা কেমন ছিল?

 

উত্তর : ‘শােনাে বলছি’ বলে কাহিনি শুরু করতে চাইল সােমেশ।

 

বাইরে ততক্ষণে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শীতের অকালবর্ষণ । জানালার কাচের শার্সি বন্ধ। ঘরের ভিতর থেকে বাইরের রাস্তাঘাট ঝাপসা দেখা যাচ্ছে বৃষ্টির ধারায়। বাইরের বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি যেন পরিচিত বাস্তব নয়। কাল্পনিক অবাস্তব। সেরকম দৃশ্যমান। আর ঘরের মানুষ যেন সমস্ত পৃথিবী থেকে পৃথক হয়ে, বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে।

 

প্রশ্ন ) সে বিজ্ঞাপন নয়, সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস। -কী প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? বিজ্ঞাপন না বলে সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস বলা হয়েছে কেন?

 

উত্তর : পুরােনাে খবরের কাগজের ফাইল ওলটালে দেখা যাবে বহু বছর আগে সংবাদপত্রের পাতায়। দিনের পর দিন একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আলােচ্য উদ্ধৃতি।

 

‘ বিজ্ঞাপন নয়, সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস’ বলার কারণ বিজ্ঞাপনটি দিনের পর দিন প্রকাশিত হয়েছে একটি করুণ কাহিনির মতাে ধারাবাহিকভাবে। প্রথমত, নিরুদ্দিষ্ট ছেলের জন্য মায়ের কাতর আর্তি। ছেলের ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল অনুরােধ। মিনতি। ব্যর্থ হওয়ার কারণে হতাশা দীর্ঘশ্বাস । দ্বিতীয়ত পিতার প্রথম গম্ভীর স্বর। তারপর কাতর, ক্লান্ত দুর্বল । যেন এক ইতিহাস।

 

নিরুদ্দেশ গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) ‘মাৱ কি কিছু হয়েছে ? বাবা কেমন আছেন?’—শোভন এ কথা জিজ্ঞেস করায় চারধারে কী দেখল ও কী জবাব পেল?

 

উত্তর : শোভনের প্রশ্ন শুনে চারধারের সব দৃষ্টি তার ওপর পড়ল এবং শুনল মা-বাবা ভালাে আছেন, কিন্তু দেখা হবে না।

 

প্রশ্ন ) শােভন বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য উঠতেই নায়েবমশাই কী বলে বাধা দিলেন?

 

উত্তর: শােভন উঠতেই নায়েবমশাই দরজার কাছে গিয়ে বললেন যে, মিছিমিছি কেলেঙ্কারী করে কিছু ফল হবে না।

 

প্রশ্ন ) ফোটো দেখে শােভন কী বলল?

 

: উত্তর : ফোটো দেখে শােভন বলল যে, এ তার ফোটো, তারা যেন ভালাে করে মিলিয়ে দেখে ।

 

প্রশ্ন )শাভন সকলের দৃষ্টিতে অবিশ্বাস দেখে কাতরভাবে কী বলল ?

 

উত্তর : শােভন কাতরভাবে বলল যে, তাদের অবিশ্বাস সত্ত্বেও একবার শুধু মা-বাবার সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হােক।

 

প্রশ্নঃ  নায়েবমশাইয়ের মুখে শােভন সাতদিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে কথাটা শুনে শােভন না হেসে পারল না কেন? 

 

উত্তর : শােভন স্বশরীরে হাজির, অথচ শােভনের মৃত্যুর খবর পরিবেশনে নায়েবমশাইয়ের হতাশ কণ্ঠস্বর ও হাতের ভঙ্গি দেখে শোভন না হেসে পারল না।

 

প্রশ্ন ) শােভনের বৃদ্ধ পিতা ‘কে’ বলে জিজ্ঞেস কৱতে নায়েবমশাই কী কৱলেন?

 

উত্তর : শােভনের কাঁধে দৃঢ়ভাবে হাত রেখে নায়েব বললেন—না, কেউ না।

 

প্রশ্ন ) ‘ শােভনকে একটা কাজ কৱতে হবে, কাজটা কী?

 

উত্তর : কাজটা হলাে শােভনকে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ে হারানাে ছেলে হয়ে একবার দেখা দিতে হবে, যাতে তিনি মরেও শান্তি পান।

 

প্রশ্ন )সোমেশেৱ কানের কাছে একটা জড়ন আছে গল্পকথকেৱ এই কথা শুনে সােমেশ কী করল ও কী বলল?

 

উত্তর ; গল্পকথকের কথা শুনে সােমেশ হেসে বলন যে, সেইজন্যেই গল্প বানানাে তার পক্ষে সহজ হলাে।

 

প্রশ্ন )মা তার ছেলেকে কোথা থেকে টাকা বার করে দিয়েছিল?

 

উত্তর : মা তার ছেলেকে নিজের পুঁজি থেকে টাকা বার করে দিয়েছিল।

 

প্রশ্ন ) বাবা আমাকে চিনতে পারছ?’– শােভনের এ কথা শুনে বৃদ্ধ পিতা কী করলেন?

 

উত্তর : শোভনের এ কথা শুনে বৃদ্ধ স্থলিত পায়ে এক পা এগিয়ে আবার থেমে গেলেন।

 

প্রশ্নঃ সোমেশ এর বলা গল্পটির মূল কথাটি কি ছিল

 

উত্তর : সােমেশের বলা গল্পটির মূল কথাটি হলাে একটি ছেলে। ফিরে আসার ভয়ংকর ট্র্যাজেডি।

 

প্রশ্ন ) লেখকের বাড়িতে কে এসেছিল ?

 

উত্তর: লেখকের বাড়িতে সােমেশ এসেছিল।

 

প্রশ্ন ) বাইৱেৱ পরিবেশ গল্পকথক ও সামেশের মনের ওপর কেমন প্রভাব রেখেছে ?

 

উত্তর : ঘরের নিশ্চল ঔদ্ধতায় বাইরের মেঘলা দিনের অসাড়তা গল্পকথক ও সােমেশের মনের ওপর যেন চেপে বসেছে।

 

প্রশ্ন ) অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভাঙার জন্য গল্পকথক কী করলেন?

 

উত্তর : অস্বস্তিকর শুষ্কতা ভাঙার জন্য গল্পকথক নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনকে লক্ষ্য করে একটি গল্প ফেঁদে বসলেন।

 

প্রশ্ন ) গল্পের নির্বুদ্দিষ্ট তরুণ যুবকটি কী কারণে বাবার কাছে বকা (খল?

 

উত্তর : গল্পের নিরুদ্দিষ্ট তরুণ যুবকটি থিয়েটার দেখে বাড়ি ফিরল রাত করে, সেই অপরাধে বাবার কাছে বকা খেল।

 

প্রশ্ন ) ছেলেকে বকা খেতে দেখেও মা চুপ করে থাকলেন কেন?

 

উত্তর : ছেলের চাপাচাপিতে মা লুকোনাে পুঁজি ভেঙে ছেলেকে থিয়েটার দেখার টাকা দিয়েছিলেন, সেজন্য মা চুপ করে থাকলেন।

 

প্রশ্নঃ গৃহিণীকে ধমক দিয়ে বাড়ির কর্তা কী করলেন? 

 

উত্তর: বাড়ির কর্তা মিছিমিছি প্যানপ্যান করতে নিষেধ করে অমন ছেলে যাওয়াই ভালাে বলে মন্তব্য করলেন।

 

প্রশ্ন)  বাবা অফিস থেকে ফিৱে কী দেখলেন?

 

উত্তর; বাবা অফিস থেকে ফিরে দেখলেন, অবস্থা বেশ গুরুতর। কারণ ছেলে বাড়ি না ফেরায় তার মা শয্যাগত।

 

প্রশ্ন-) মায়ের ওপর মারমুখী বাবার কী অভিযােগ?

 

উত্তর : বাবার এই অভিযােগ যে, মায়ের আঙ্কারাতেই ছেলে উচ্ছন্নে গেছে এবং এভাবে মা ছেলের মাথা খেয়েছে।

 

প্রশ্নঃ ‘পৱেৱ দিন ভয়ানক কাণ্ড।–কাণ্ডটা কী? 

 

উত্তর : কাণ্ডটা হলাে যে, মা রাত থেকে দাঁতে রুটি কাটেননি এক বিছানা ত্যাগ করবেন বলে মনে হয় না।

 

প্রশ্ন ) বাবা আৱও বিমূঢ়ভাবে কী বললেন?

 

উত্তর: বাবা বললেন যে, ঠিক বিজ্ঞাপন নয়, ছেলে বাড়ি । চলে গেছে……কথা শেষ হয় না।

 

প্রশ্ন ) ভদ্রলােক দয়াপরবশ হয়ে কী বললেন

 

উত্তর : ভদ্রলােক দয়াপরবশ হয়ে বললেন যে, তাঁরা লিখে নেবেন, তিনি যেন শুধু নামটামগুলি দিয়ে যান।

 

প্রশ্ন ) অণুসজল বিজ্ঞাপন রেৱােবার আগে বস কী দেখলেন?

 

উত্তর : অশ্রুসজল বিজ্ঞাপন বেরােবার আগে বাবা দেখলেন তা ঘরে এসে হাজির হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ঘরে ফিরে আসা ছেলেৱ মতিগতি কী?

 

উত্তর: ছেলে অনুতপ্ত হয়ে বাড়ি ফেরেনি ও বাড়িতে থাকতে আসেনি, এসেছে গােটাকতক বই নিতে।

 

প্রশ্নঃ ছেলেকে তিরস্কার করা প্রসঙ্গে বাবার কী দশা হয়েছে বলে মা জানালেন? 

 

উত্তর : মা জানালেন যে, ছেলে যেন দেখে আসে রাতে দু-চোখের পাতা এক করতে না পেরে বাবার কী দল হয়েছে।

 

নিরুদ্দেশ গল্প নবম শ্রেণী ছোট প্রশ্নোত্তর

 

 

প্রশ্ন ) স্বামীকে ধমক দিয়ে মা কী বললেন ছেলের চলে যাওয়ার ব্যাপারে?

 

উত্তর : মা বললেন যে, সামান্য বকুনি খেয়ে ছেলে বাড়ি যেতে চলে যাবে এত বড়াে আস্পর্ধা।

 

প্রশ্ন ) ‘মিছিমিছিই আমি একলা বকে মরছি। —গল্পকথকের এ কথার উত্তর না দিয়ে সােমেশ কী করল?

 

উত্তর : সােমেশ হঠাৎ ছড়ানাে পা গুটিয়ে নিয়ে সােজা হয় বসে সিগারেটের শেষ অংশটুকু ফেলে দিল।

 

প্রশ্ন ) নিরুদ্দিষ্ট ছেলেৱ ফিরে আসার ব্যাপারে সােমেশ কী বলল?

 

উত্তর : সােমেশ বলল যে, নিরুদ্দিষ্ট এক ছেলের ফিরে এল ভয়ানক একটা ট্র্যাজেডির কথা সে জানে।

 

প্রশ্ন ) বাইৱেৱ বৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে গল্পকথকদের | কী মনে হতে লাগল?

 

উত্তর : গল্পকথকদের মনে হতে লাগল যে, তারা যেন । পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।

 

প্রশ্ন ) বাবা এতক্ষণে যেন কূল পেয়ে কী বললেন

উত্তর : বাবা বললেন যে, ছেলেটির মা বড়ো কান্নাকাটি করছে, তাই বাড়িতে ফিরে আসার অনুরোধ জানানাে হচ্ছে।

 

প্রশ্ন ) শােভনেৱ মন কেমন ছিল?

 

উত্তর : শােভনের মন ছিল তৈলাক্ত, ফলে পিচ্ছিল হওয়ায় কোথাও ধরা পড়া ও মনে কিছু দাগ পড়া ছিল অসম্ভব।

 

প্রশ্ন ) বাড়ির বাইরে থাকায় শােভন কীভাবে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল?

 

উত্তর : শােভন বাড়ির বাইরে থাকায় দুঃখ-অসুবিধার মধ্যে হয়রান হয়ে পড়ত ঠিকই, কিন্তু তার ভিতরেও পেত মুক্তির স্বাদ। 

 

প্রশ্ন ) শােভন নিজেকে কী ভাবতে পাৱেনি?

 

উত্তর : শােভন নিজেকে একটি ছােটো সংসারের আদরের ছেলে হিসেবে ভাবতে পারেনি।

 

প্রশ্ন ) খবরের কাগজে যেদিন বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেল সেদিন শােভনের মনের অবস্থা কী হলাে?

 

উত্তর খবরের কাগজে যেদিন বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেল সেদিন শােভনের উদাসীন মনও বিচলিত হয়ে উঠল।

 

প্রশ্ন )শােভন কীৱকম পরিবারের ছেলে?

 

উত্তর: শােভন মধ্যবিত্ত ঘরের নয়, সম্পন্ন বাড়িরও নয়, এক প্রাচীন জমিদার পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী।

 

প্রশ্ন ) দু-বছৱেৱ নিরুদ্দিষ্ট জীবনে শােভন কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

 

উত্তর : দু-বছরের নিরুদ্দিষ্ট স্বাধীন জীবনের দুঃখকষ্ট গায়ে মাখলেও তা শােভনের দেহের ও মনের অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

 

প্রশ্ন ) শােভন বাড়ি ঢােকার পথে কীভাবে বাধা পেল?

 

উত্তর : শােভন দেশে এসে সােজাসুজি বাড়ি ঢােকার পথে প্রথম বাধা পেল বাড়ির পুরােনাে নায়েবমশাইয়ের কাছে।

 

প্রশ্ন ) শােভন কীৱকম মনের অবস্থায় বাৱবাড়িতে। গিয়ে উঠল?

 

উত্তর : শোভন রীতিমতাে বিমূঢ় অবস্থায় নায়েবমশাইকে অনুসরণ করে বারবাড়িতে গিয়ে উঠল।

 

প্রশ্নঃ বাৱবাড়িতে কাকে দেখে শােভন আশ্বস্ত হলাে?

 

উত্তর: বারবাড়িতে তার পরিচিত বৃদ্ধ খাজাঞ্চিকে দেখে শােভন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *