প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা, ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ ও তার প্রতিকার
প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা, ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ ও তার প্রতিকার
প্রবন্ধ রচনা-Teacj Sanjib
প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা, ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ ও তার প্রতিকার
বিজ্ঞান বিষয়ক
১. প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা
ভূমিকা : পরিবেশ আমাদের পালয়িত্রী জননী। আমরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পরিবেশ আমাদের বুকে ধারণ করে জল, হাওয়া ও আলাের অকৃপণ দানে আমাদের পালন করে মায়ের মতাে। তার প্রাণবায়ু আমরা বুক ভরে নিই। তৃয়া মেটাই তার জলধারায়। তার আলাের বন্যায় পূতস্নান করে ক্রমে পরিচিত হই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে। এভাবে তার অকুণ্ঠ সাহচর্যে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের যােগসূত্র হয় অটুট।
অকৃতজ্ঞতা ও অপরিণামদর্শিতা :
অথচ দুঃখের বিষয়, আমরা অনেকেই অকৃতজ্ঞের মতাে পরিবেশের ওপর করাঘাত হানি অপরিণামদর্শী হয়ে ও অবিবেচনাপ্রসূত নানা অপকর্ম করে। আবর্জনা আর বর্জ্যপদার্থের দ্বারা জলকে করি দূষিত, দাহ্য জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারে বাতাসকে করি প্রাণঘাতী, ঘরের চার দেয়াল ও গলিঘিঞ্জির মধ্যে মাথা গুঁজে থাকা নাগরিক জীবনে আলাের স্বচ্ছন্দ বিহারের যাত্রাপথকে করি অবরুদ্ধ। এভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের দূরত্ব গড়ে ওঠে। আমরা ওই পালয়িত্রী জননীর অপরিহার্যতাই ভুলে যাই।
* পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব: প্রবন্ধ রচনা
এভাবে আমাদের অপরিণামদর্শিতায় প্রকৃতি ও পরিবেশ বড়ােই অসুস্থ, দূষণভারে জর্জরিত। পৃথিবী ও মানবজাতির কল্যাণকামী জ্ঞানীগুণী ও বৈজ্ঞানিকেরা তাই প্রকৃতি ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিগত শতাব্দীর কয়েক দশক থেকেই। তাঁদের পরামর্শ হলাে প্রকৃতি ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার দায়দায়িত্ব নিতে হবে মানুষকেই। সেজন্য সর্বাগ্রে দরকার শিক্ষা। শিক্ষাই দেবে জ্ঞানচক্ষু খুলে। শিক্ষাই জাগাবে সচেতনতার বােধ ও উপলব্ধি। এভাবে তাতে সার্বিক জ্ঞান ও চেতনার সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি মমত্ব ও ভালােবাসা, তার প্রতি ২ জ্ঞতাবােধ, তাকে সুস্থ ও দূষণমুক্ত রাখার পরিকল্পনা ও কর্মধারা। কাজেই শিশু থেকে বয়স্ক শিক্ষার্থী, সবার প্রয়ােজন পরিবেশ পাঠ।
: * শিশুশিক্ষার্থী ও অষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ পাঠক্রম :
আশার কথা, আমাদের শিক্ষাদপ্তর সম্প্রতি পরিবেশ পাঠের সেই প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে সব বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য পরিবেশ পাঠের একটি সুচিন্তিত পাঠক্রম স্কুল পর্যায় থেকে কলেজ স্তর, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চালু করেছেন। প্রকৃতি পরিচয়ের মাধ্যমে প্রকৃতি ও সমাজের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে শিশুশিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। পরিবেশ কী, এই বােধ ও উপলব্ধি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জাগিয়ে তােলার উপযােগী পাঠক্রম প্রণীত হয়েছে। ওই প্রসঙ্গে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্ভরতা, জল-বাতাস-মাটি সূর্যালােক প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও অতিব্যবহার, আবর্জনার উৎস ও আবর্জনাকীভাবে দূষণ সৃষ্টি করে, আবর্জনার রূপান্তর ও পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি শিখতে ও জানতে পারছে ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ পাঠকুম :
সপ্তম শ্রেণিতে এসে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি উপাদান কীভাবে দূষিত হচ্ছে তা আরও বিস্তৃতভাবে অধীত পাঠের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করে। সেইসঙ্গে মানুষ ও পরিবেশের সম্পর্কের দিকটি সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালােচনার বােধ জাগিয়ে তােলা হয় শিক্ষার্থীর মধ্যে। প্রকৃতির ভারসাম্যের সপক্ষে বাস্তুতন্ত্রের জ্ঞান ও বােধের জগতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের উপনীত করার ব্যবস্থা রয়েছে পরিবেশ পাঠের মধ্যে। ওইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা কীভাবে বাস্তুতন্ত্রের ওপর আঘাত হানছে, তা জানছে শিক্ষার্থীরা। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ছে বাস্তুতন্ত্র নিয়ে আরও বিস্তৃত পাঠ, তা ছাড়া জানছে পরিবেশ বিষয়ক মূল্যবোেধ ও ন্যায়নীতি, বিশ্ব পরিবেশ পরিচিতি, উন্নততর পরিবেশরক্ষার ব্যবস্থাদি। এ ছাড়া প্রতি ক্লাসের পড়ুয়ারা হাতেকলমে পরিবেশ পাঠের তালিম পাচ্ছে। যা শুধু পুথিগত বিদ্যা নয়, বাস্তবের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যােগ ও বাস্তব জ্ঞানার্জনের সহায়ক।
উপসংহার : কাজেই শিক্ষার্থীদের পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা ও উপযােগিতা নিয়ে কোনাে প্রশ্নের অবকাশ নেই। শিক্ষা থেকে গড়ে ওঠা সচেতনতা যে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার।
2 প্রবন্ধ রচনা ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন
রচনা-সংকেত : ভূমিকা—ইনটারনেট কী-কীভাবে এল— কীভাবে কাজ করে—আধুনিক জীবনে অবদান—উপসংহার । –
ভূমিকা : শিক্ষা-সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পা ফেলে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার গণমাধ্যমে এনেছে অকল্পনীয় বিপ্লব। ফলে আমরা পেয়েছি খবরের কাগজ, বেতার, দূরদর্শনের পরে ইনটারনেটের মতাে সর্বাধুনিক গণমাধ্যম। মাকড়সার জালের মতাে ছড়িয়ে দেওয়া ইনটারনেটের রহস্যময় যােগসূত্র। ইনটারনেট এমনই এক রহস্যময় জাদু।
ইনটারনেট কী:
ইনটারনেট হলাে এমন এক নেটওয়ার্ক, যা পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকা কম্পিউটারগুলির মধ্যে সংযােগ রক্ষা করে তথ্যের আদানপ্রদানে সাহায্য করে। পৃথিবীব্যাপী মাকড়সার জালের মতাে কম্পিউটার সংযােগের জন্য বলা হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা ডব্লু ডরু ডব্লু। সেজন্য ঠিকানা লেখার জন্য কম্পিউটারের পর্দায় তিনটি ডরু টাইপ করতে হয়। ইনটারনেটের ঠিকানার :
পারিভাষিক নাম ওয়েব অ্যাড্রেস। ঠিকানা লিখলে যে সাইট খুলে । যায়, পরিভাষায় তার নাম ওয়েব সাইট।
কুশশার মতাে সমাজ-সংসার থেকে ছিটকে পড়া দুর্ভাগ্যের বলি হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইন্টারনেট কিভাবে এল :
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ। ‘গ্যালাকটিক নেটওয়ার্ক কনসেপ্টের ধারণা প্রথম আসে অধ্যাপক জে সি আর লিকলাইডারের মাথায়। তাঁর চিন্তার ফসল বাস্তবে ফলবতী হতে সময় লাগে প্রায় দশ বছর। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ইনটারনেটের সূচনা হয় আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সংযােগস্থাপনের মাধ্যমে। জনসাধারণের মধ্যে ইনটারনেটের প্রসার ঘটতে সময় লাগে আরও বছর আষ্টেক।
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে :
পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে আর-এক প্রান্তের কম্পিউটারে তথ্য হােক, ছবি হােক, ভিডিও হােক বা মাল্টিমিডিয়া হােক পৌঁছিয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে যে কাজ করে, সে হলাে স্যাটেলাইট। হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রােটোকলের কাজ হলাে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা। তথ্য পাঠানাের প্রথম কাজ হলাে কম্পিউটার সফটওয়্যারে কম্পােজ করা, যে সফটওয়্যারের নাম ওয়েব ব্রাউজার। কম্পােজ করার পরে যে ঠিকানায় পাঠানাে হবে, তা টাইপ করতে হয় কম্পিউটারের পর্দায়। মনে রাখতে হবে প্রত্যেক ওয়েব সাইটের নিজস্ব ঠিকানা বা আই পি অ্যাড্রেস আছে। কাজেই যে ঠিকানায় পাঠানাের জন্য কম্পােজ করা হয়েছে, তা মােডেমের মাধ্যমে প্রথমে যায় ইনটারনেট সংযােগকারী মাস্টার কম্পিউটারের কাছে। মাস্টার কম্পিউটার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় যেখানে পাঠানাে হচ্ছে, সেখানকার সার্ভারের কাছে। সে গ্রহণ করে আই পি অ্যাড্রেস যাচাই করে সঠিক গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়।
আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের অবদান : প্রবন্ধ রচনা
আধুনিক জীবনে ইনটারনেটের বহু ব্যাপ্ত অবদান অকল্পনীয়। ইনটারনেটের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে আর-এক কম্পিউটারে চিঠিপত্রের আদানপ্রদান হলাে ই-মেল। কোনাে পােস্টাল বা কুরিয়ার সার্ভিস অত দ্রুত চিঠিপত্রের লেনদেন করতে পারে । ইনটারনেটের প্রয়ােজনীয়তা ও কদর বেশি ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিক, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের কাছে। এঁদের জ্ঞাতব্য প্রতিটা বিষয়ের জন্য ইনটারনেটে পৃথক পৃথক সাইট আছে, বিভিন্ন সংবা সাইটগুলি খােলে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, সর্বাধুনিক নতুন নতুন তথ্য সংযােজন করে। চাইলেই ইনটারনেটের মাধ্যমে যে-কোনাে সময়ে তথ্য পাওয়া যায়। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে ইনটারনেটের অশেষ অবদান। প্রতিটি সংবাদসংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। খুললেই তাজা খবর হাতে আসে।
উপসংহার : জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত বিজ্ঞান ও সম্পৃক্ত। গােটা দুনিয়া এখন মাকড়সার জালের বাঁধনে বাঁধা এবং ছোট ইউনিটের মুঠোয়, তা থেকে নির্বাসিত হয়ে থাকা রবিনসন রুশোর মতো সমাজ সংসার থেকে ছিটকে পড়া দুর্ভাগ্যের বলি হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ইনটারনেট অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
3 প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ ও তার প্রতিকার
৮) রচনা-সংকেত : ভূমিকা—মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান ধ্বংসকারী আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কার—পরমাণু বােমার বীভৎস ধ্বংসলীলা।
. ভুমিকা : বিজ্ঞান আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, যানবাহন, শিক্ষা সংস্কৃতি—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর অবদান অতুলনীয়। কল্যাণদাত্রী বিজ্ঞানের এই বিপুল দান সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পারমাণবিক বােমার বীভৎস ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের সন্ত্রস্ত ও সন্দিগ্ধ চিত্তে একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বারবার—‘বিজ্ঞান অভিশাপ, না আশীর্বাদ ?
মানব কল্যাণ বিজ্ঞানের অবদান :
মানুষের সুখস্বাচ্ছন্দ্যসমৃদ্ধিসাধনে, তার বৃহত্তর কল্যাণকর্মে অতন্দ্র ও নিরলস সেবায় তুলনাহীন নজির রেখেছে বিজ্ঞান। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানসৃষ্ট যন্ত্রের কৃপায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব। শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্রদানবের আসুরিক শক্তিতে গড়ে উঠেছে অতুল বৈভব। সংক্রামক ২ শিক্ষাপদ্ধতির অবসান হয়ে বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবমুখী শিক্ষার ব্যাধির হয়েছে নিরাময়। শিক্ষাক্ষেত্রে গ্রন্থকেন্দ্রিক নীরস কৃত্রিম দ্বার হয়েছে উঘাটিত। বৈদ্যুতিক শক্তি বা পারমাণবিক শক্তি চালিত যানবাহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা জীবনকে করেছে গতিময়। বেতার ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্যকে করেছে পরিদৃশ্যমান। বিজ্ঞানের এরকম কল্যাণকর কার্যকারিতা দেখলে, স্বাভাবিকভাবে মনে হয়, এত বড়ড়া আশীর্বাদ মানবজীবনে আর নেই।
ধ্বংসকারী আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কার : যুদ্ধোন্মত্ত পৃথিবীর দিকে চোখ ফেরালে ওপরের মনােভাবের বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকে না। পরমাণুবিজ্ঞান মানুষের হাতে দিয়েছে অসীম শক্তি। বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বােমা তার পরিচয়। কথিত আছে, বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়েছে, তার সমষ্টিগত শক্তি একটি সর্বাধুনিক পরমাণু বােমার শক্তির তুলনায় নগণ্য। পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা পৃথিবীতে এখন আধ ডজন। তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে সংগৃহীত আছে শত সহস্র পরমাণু অস্ত্র। কোনাে দুর্বল মুহূর্তে তার প্রয়ােগ হলে বিশাল মানবগােষ্ঠীর জীবন্ত কবর রচিত হবে। তাদের দীর্ঘদিনের শ্রম ও সাধনালব্ধ সভ্যতা-সংস্কৃতির ঘটবে অবলুপ্তি। –
পরমাণুবােমার বীভৎ :
দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে হিরােশিমা-নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্তপরমাণু বােমার বিস্ফোরণের কঠিন অভিজ্ঞতা আজও মানুষকে করে সন্ত্রস্ত ও ভয়চকিত।
হিরােশিমায় নিক্ষিপ্ত পরমাণু বােমার ক্ষমতা ছিল কুড়ি হাজার টন টি এন টি-এর সমান। তার বিস্ফোরণে মারা যায় ৭৮ হাজার নারী-পুরুষ। আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪ হাজার। কয়েক হাজার নরনারী হয় নিখোঁজ। নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বােমায় মৃত ও আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ২৭ হাজার ও ৪১ হাজার। তাতেও নিখোঁজ হয় বহু নারী-পুরুষ। ওইসব বােমার ওজন ছিল কিলােটনের ওজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে মেগাটন ওজনের সীমায় হয়েছে উন্নীত।
উপসংহার : বিজ্ঞান মানুষের হাতিয়ার। হাতিয়ার দিয়ে সৎ বা অসৎ যে-কোনাে কাজই করা যায়। আসলে প্রয়ােগকর্তার মনােভাবের ওপর নির্ভর করে। সবার আগে দরকার মানুষের মনােভাবের পরিবর্তন। তার লােভ, হিংসা, জিঘাংসা-বৃত্তি সংযত হলে, তার শুভবুদ্ধির উদয় হলে, পারস্পরিক সৌহার্দ্যবােধ জাগলে বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগের অবসান হবে। কল্যাণকর বিজ্ঞানের কৃপায় মানুষ হবে অমরত্বের অধিকারী—পৃথিবীর বুকে রচিত হবে মনুষ্যসৃষ্ট সাধের স্বর্গ।