প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর ব্রিটিশরাজ বিরােধী অভ্যুত্থান

 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর ব্রিটিশরাজ বিরােধী অভ্যুত্থান

 

ব্রিটিশরাজ বিরােধী অভ্যুত্থান

প্রতিরোধ-ও-বিদ্রোহ-প্রশ্ন-উত্তর-ব্রিটিশরাজ-বিরােধী-অভ্যুত্থান

 

 ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ |

 

– সূচনা ঃ ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের প্রথম শতকে একাধিক প্রতিবাদ, প্রতিরােধ সংগ্রাম ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই প্রতিরােধ সংগ্রামে কৃষক, কারিগর, উপজাতি, ক্ষমতাচ্যুত শাসক ও জমিদার প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে। এই সংগ্রামের কারণ ছিল ঔপনিবেশিক শােষণ ও শাসন। ব্রিটিশ কোম্পানির লক্ষ্য ছিল ভারতের সম্পদ শােষণ করে। ইংল্যান্ডের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। ব্রিটেনের শিল্প বাণিজ্যের দাপটে দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে পড়ে। ফলে শিল্পে নিযুক্ত কারিগররা কর্মচ্যুত হয়ে কৃষিতে ভিড় করে এবং কৃষি অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কোম্পানির আরােপিত ভূমিরাজস্বের চাপে কৃষি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ফলস্বরূপ কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ দেখা দেয়।

উপজাতি বিদ্রোহের কারণ:

কারণ ঃ ভারতে কোম্পানির শাসন ও শােষণের বিরুদ্ধে কৃষক ও উপজাতিদের গণ-অভ্যুত্থানের পিছনে নানা কারণ রয়েছে।

 

(১) ভূমি-রাজস্ব নীতি : একচেটিয়া বাণিজ্য অধিকার ও দেওয়ানি ক্ষমতা অর্জন করে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানি নতুন ভূমি-রাজস্ব নীতি প্রয়ােগ করে কৃষকদের দুদর্শার দিকে ঠেলে দেয়। চিরস্থায়ী ব্যবস্থায় জমিদার, ইজারাদার ও পাওনাদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত মাত্রায় ধার্য কর কোম্পানি আদায় করতে থাকে। এছাড়া জমিদার ও ইজারাদাররা অতিরিক্ত রাজস্ব ভার চাপিয়ে দেয় অসহায় কৃষকদের উপর। এর ফলে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে এবং প্রতিরােধ আন্দোলনে যুক্ত হয়। জমিদারদের বংশানুক্রমিকভাবে জমির উপর অধিকার

 

(২) রাজস্বের উচ্চহার : চিরস্থায়ী ব্যবস্থায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিরস্থায়ী ও রায়তওয়ারী ব্যবস্থায় কৃষকদের জমির উপর কোনাে অধিকার ছিল না। একদিকে রাজস্বের উচ্চহার, অপরদিকে জমি থেকে যেকোনাে সময় উচ্ছেদের ভয় কৃষকদের জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়।

 

(৩) মহাজনদের শােষণ : কোম্পানির আমলে ক্রমবর্ধমান ভূমিরাজস্বের চাপে কৃষকশ্রেণি চরম দারিদ্র্যোর নাগপাশে আবদ্ধ হয়। দারিদ্র্য ও খাদ্যাভাবে কৃষকরা বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছে ঋণে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহাজনরা কৃষকের জমি ও বসতবাড়ী বন্ধক রেখে টাকা ধার দিত। টাকা পরিশােধ করতে না পারলে মহাজনরা কৃষককে জমি থেকে ইছদ করত। অনেক ক্ষেত্রে কৃষকরা জমিদার ও মহাজনের কাছে আজীবন সপরিবারে বাস করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হত।

 

(৪)  ভুঁইফোড় জমিদারের শােষণ : চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর বহু জমিদার সময়মত নির্ধারিত রাজস্ব সরকারকে না দিতে পারায়, তারা জমিদারী চ্যুত হয়েছিল। এই স্থানে ভূঁইফোড় পুঁজিপতি কিছু ব্যক্তি উচ্চহারে জমিদারী নিলামে কিনে নিত। তারা কৃষক ও কৃষি স্বার্থ অপেক্ষা অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষকদের উপর জোর জুলুম করে অতিরিক্ত কর আদায় করত। অনেক ক্ষেত্রে জমিদাররা শহরে থেকে জমিদারী চালাতেন নায়েব গােমস্তাদের মাধ্যমে। জমিদারের অনুপস্থিতিতে লােভী নায়েব গােমস্তারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করত তাদের বেগার খাটাত। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা প্রতিরােধ আন্দোলনে সামিল হয়। 

 

(৫) শিল্পভিত্তিক কৃষি ফসল চাষে প্রভাব ও কোম্পানির আমলে শিল্পে কাঁচামালের যােগাকে | জন্য খাদ্যশস্য চাষের পরিবর্তে শিল্পে কারখানায় ব্যবহারের উপযােগী অর্থকরী ফসল হিসাবে। পাট, চা, রবার, তুলা, নীল প্রভৃতি চাষ করতে ইংরেজ কোম্পানি ও বণিক কৃষকদের বাধ্য করত। | ব্যবসায়ী শ্রেণির উৎপীড়নে জমিদারি হারিয়ে জমিদাররা কৃষক স্বার্থে এই বিদ্রোহে সামিল এই অবস্থায় খাদ্যের অভাবে কৃষক ও গ্রামের সাধারণ মানুষ অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটা | গ্রামে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।

 

(৬) উপজাতি অসন্তোষ : উপজাতিদের ব্রিটিশ বিরােধী বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ | উপজাতিরা স্বভাবতই শান্ত, নিরীহ, পরিশ্রমী ছিল। তারা অরণ্য অধ্যুষিত অঞ্চলের জমি চ যােগ করে বসবাস করত। কোম্পানির শাসনে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় উপজাতি অসুদি অরণ্য অঞ্চলগুলি আনা হলে এই অঞ্চলে জমিদার মহাজনের আবির্ভাব ঘটে। এর ফলে জমির ও মহাজনরা স্বভাব স্বাধীন উপজাতিদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে থাকে এবং তাদের শােষণ ও উৎপীড়ন করতে থাকে। উপজাতিদের নিজস্ব নিয়মকানুনকে অগ্রাহ্য করে ব্রিটিশ প্রশাসনের নিয়মকানুন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দারােগা-পুলিশের জুলুম বৃদ্ধি পায়। এই সময় নিরীহ উপজাতিরা ইংরেজের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

 

ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও জমিদার – মহাজনের শােষণের বিরুদ্ধে প্রথমদিকে যে বিদ্রোহগুলি। হয়েছিল; তা হল

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

(১) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ঃ ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই বিদ্রোহ চলেছিল। বাংলা দেশের বগুড়া, মালদা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, কুচবিহার প্রভৃতি জেলায় এই বিদ্রোহ বিস্তার লাভ করে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময়কালে দুর্ভিক্ষে-অনাহারে বহুলােক মারা যায়। কৃষকরা ভূমি রাজধ | দিতে অক্ষম হয়ে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। এদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে সন্ন্যাসী-ফকিরেরা | সন্ন্যাসী-ফকিরদের নেতৃত্বে ভূমিহারা কৃষক, কারিগর, কর্মচ্যুত সৈন্যরা একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ করে। এদের লক্ষ্য ছিল জমিদারের কাছারি, মহাজনের আড়ৎ, সরকারী রাজস্ব দপ্তর ও শস্যাগর লুঠ করা। ভবানী পাঠক ও মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী প্রভৃতি এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। কৃষকেরা এই নেতাদের ডাকে ঔপনিবেশিক সরকারের উচ্ছেদের জন্য অস্ত্র ধরে। ” ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দের পরে নেতৃত্বের অভাবে এই বিদ্রোহ স্তিমিত হয়ে পড়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাটে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের চিত্র ফুটে উঠেছে।

চূয়াড় বিদ্রোহ

চূয়াড় বিদ্রোহ : পূর্বভারতে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঘাটশিলা প্রভৃতি জেলার “জঙ্গলমহল নামে বনাঞ্চলে বসবাসকারী চূয়াড় আদিবাসীরা চাষ আবাদ ও পশু শিকারের সঙ্গে স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সেনার কাজ করতাে। বেতনের বদলে তারা নিষ্কর জমি ভোগ করত। এই জমি “পাইকন” জমি নামে পরিচিত ছিল। কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের উপর চড়া হারে ভূমি রাজস্ব ধার্য করে। জমিদারদের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেবার ক্ষমতা ছিল না। তাই তারা বিদ্রোহ ঘােষণা করে। এদের সঙ্গে। । এই গণ বিদ্রোহে যােগ দেয়। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ১৭৬৯ খ্রিঃ থেকে ১৭৯৯ খ্রিঃ পর্যন্ত। বিদ্রোহ চলেছিল। রাজা জগন্নাথ সিংহ, শ্যামরঞ্জন, দুজন সিংহ প্রভৃতি জমিদারের নেতৃত্বে এই। বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইংরেজ সরকার নির্মম অত্যাচার করে এই বিদ্রোহ দমন করে। 

 

রংপুর বিদ্রোহের কারণ

 

সূচনা: সন্ন্যাসী বিদ্রোহ চলাকালে রংপুরে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এর শাসন কালে ইজারাদার দেবী সিংহের শাসনের ও পীড়নের বিরুদ্ধে রংপুর। ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কৃষকরা বিদ্রোহ করে। তিনি পুণিয়ার কৃষকদের ওপর জোর জুলুম করে। অতিরিক্ত চড়া হারে রাজস্ব আদায় করতে থাকেন। তার দুর্নীতি সীমা ছাড়ালে হেস্টিংস তাঁকে বরখাস্ত করেন।

 

দেবীসিংহের অত্যাচার :১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুরের জমিদারের মৃত্যু হলে তার নাবালক পরে দেখাশােনার জন্য দেবী সিংহকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব দেন। দেবী সিংহ এখানেও উচ্চহারে জনা আদায় করতে থাকে। তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কালেক্টরের কাছে কৃষকরা বারবার বদন জানালেও তা নিস্ফল হয়। ফলে কৃষকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়।

 

| o বিদ্রোহের সূচনা ঃ ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ই জানুয়ারি রংপুরের তেপা গ্রামে কৃষকরা সমবেত হয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। কাজির হাট, ডিমলা, ফতেপুর, লাখাই, কালিকা অঞ্চলের কৃষকরা সমবেত হয়ে পৃথক সরকার গঠন করে। বিদ্রোহীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জেলখানা আক্রমণ করে আটক কৃষকদের মুক্ত করেন। বিদ্রোহীরা দিরজিনারায়ণ নামে একজনকে নেতা এবং নুরুলউদ্দিনকে নবাব বলে ভিত খরচা নামক চাদা কৃষকদের উপর ধার্য করেন। বিদ্রোহ দ্রুত রংপুর, দিনাজপুর, কুচবিহার ঘােষণা করে দেবী সিংহকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। বিদ্রোহের ব্যয় নির্বাহের জন্য দিরজিনারায়ণ প্রতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার কৃষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেবী সিংহের বাড়ি আক্রমণ করে ধ্বংস করে। বিদ্রোহী কৃষকরা সরকারী বাড়িতে অগ্নি সংযােগ ও কোষাগার লুঠ করে।

 

• বিদ্রোহ দমন ঃ এই পরিস্থিতিতে সরকারের সেনাবাহিনী ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে বিদ্রোহ দমন করে। নন্দরাম ও সুফাদিলকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। সেনা ও পুলিশের আক্রমণে বহু কৃষক প্রাণ হারান। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতি পর্যালােচনার জন্য ব্রিটিশ সরকার এক তদন্ত কমিটি গঠন করে, দেবী সিংহকে দোষী সাব্যস্ত করে।

 

গুরুত্ব : রংপুরের বিদ্রোহ জাতি ধর্মভেদহীন বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন কৃষকরা। জমিদার ও ইজারাদারের শােষণের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ শ্রেণি সংগ্রামের রূপ নিয়েছিল। এই বিদ্রোহ ইজারাদার প্রথার কুফলের দিক গুলি স্পষ্ট করে দেয়।

 

কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রিঃ) |

 

ক্ষোভের কারণ : ইংরেজ শাসনকালে উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে কোল বিদ্রোহ এক Fত্বপূর্ণ ঘটনা। ছােট নাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ হয়েছিল। পূর্বে রাজা বা মুসলিম শাসকরা তাদের উপর সরাসরি কর্তৃত্ব স্থাপন করেনি। উপজাতিরা। স্বভাব স্বাধীন। কোল জাতি সিংভূম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অরণ্য পরিষ্কার করে চাষ-আবাদ করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানি ছােটনাগপুরের অঞ্চলের শাসনের দায়িত গ্রহণ করে। কোম্পানির দেওয়ান মাধব সিং এই শান্তিপ্রিয় উপজাতিদের উপর চড়া হারে রাজত্ব আরােপ করে। রাজস্ব আদায়ের জন্য হিন্দু-মুসলমান ইজারাদারের উদ্ভব হয়। এই সঙ্গে মহাজন ও ব্যবসায়ীরা এখানে উপস্থিত হয়। উচ্চহারে রাজস্বের চাপে মহাজনদের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক উপজাতি জমি থেকে উৎখাত হয়। ইজারাদাররা জোর করে উপজাতিদের আফিঙ চান করতে বাধ্য করে। তা না হলে তাদের ধরে এনে আটক করে রাখত। ইজারাদার ও মহাজনদের শােষণের ফলে আদিবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ সঞ্চিত হয়ে কোল বিদ্রোহের রূপ নেয়।

 

বিদ্রোহ : ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সম্বলপুরের আদিবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ছােটনাগপুরের মুন্ডা, ওঁরাও, হাে উপজাতি ইজারাদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ রাঁচি, হাজারিবাগ, সিংভূম, মানভূম অঞলে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা কোম্পানির কাছারি, পুলিশ থানা, মহাজন, জোতদার প্রভৃতির ঘরবাড়ি আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা, বুদ্ধ ভগত প্রভৃতি।

 

• বিদ্রোহ দমন: ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য বিশাল সেনাবাহিনীর সাহায্যে কোল বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দু’বছর ধরে বিদ্রোহী কোলরা প্রতিরােধ চালিয়ে যায়। বহু উপজাতিকে হত্যা করে নারী শিশুকে বন্দী করে সরকার কোল বিদ্রোহ দমন করে (১৮৩৩ খ্রিঃ)।

 

গুরুত্ব : কোল বিদ্রোহ কৃষি জমির উপর কোলদের স্বত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য সংঘটিত হয়েছিল। কোলবিদ্রোহ ব্যর্থ হলে ছােটনাগপুর অঞ্চলে পরবর্তী কালে ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেলী নামে এক নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধির উপর এই অঞ্চলের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। কিন্তু উপজাতিদের সমস্যার প্রকৃত সমাধান হয়নি। 

 

সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬ খ্রিঃ) |

 

মহাজনী শােষণ : সাঁওতালরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী, শান্তিপ্রিয়, সরল প্রকৃতির এক কৃষিজীবি আদিবাসী সম্প্রদায়। সাঁওতালরা বাঁকুড়া, বীরভূম, মানভূম, মেদিনীপুর, ছােটনাগপুর অঞ্চলের গভীর অরণ্যে বসবাস করত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এই অঞ্চলগুলিতে প্রবর্তিত হলে কোম্পানী, জমিদার ও কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ের জন্য অত্যাচার চালাতে থাকে। এই অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য সাঁওতালরা এই অঞ্চল ত্যাগ করে রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চলে চলে যায় এবং বন জঙ্গল পরিস্কার করে তারা সেখানে বসবাস ও চাষ আবাদ করতে থাকে। তারা এই অঞ্চলের নাম দেয়। দামিন-ই-কোহ। পরবর্তীকালে এই অঞল সাঁওতাল পরগণা নামে পরিচিত হয়। এই অঞ্চলেও তারা জমিদার ও সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি। জমিদারের দাবি মেটাতে গিয়ে বহু সাঁওতাল সর্বস্বান্ত হয়। ১৮৫৩ ও ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অনাবৃষ্টিতে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় তারা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এই সুযােগে মহাজনরা শােষণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মহাজনরা টাকা, চাল ধার দিয়ে সাঁওতালদের ঋণের জালে আবদ্ধকরে সারাজীবনের জন্য দাসত্ব করতে বাধ্য করে। তাদের বিনা মজুরিতে কাজ করতে হত। এর নাম ছিল কামিয়াত। ঋণ শােধ করতে না পারলে মহাজনরা সাঁওতালদের জমি কেড়ে নিতো।

 

জমিদারি শােষণ : সাঁওতাল পরগণায় কোম্পানি চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন করায় জমিদাররা খেয়ালখুশিমতাে সাঁওতালদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে থাকে। নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে অর্থ ও অন্যান্য ভােগ্যবস্তু আদায় করত। জমিদারদের সমর্থনে অ-উপজাতি ব্যবসায়ী, মহাজন ইত্যাদি নানা মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করে সাঁওতালদের অর্থনৈতিক শােষণ করত। ব্যবসায়ীরা কম ওজনের বাটখারায় তাদের কাছে মালপত্র বিক্রী করত।

 

ধর্মান্তর করা : সাঁওতালদের বিশ্বাস অনুসারে প্রাকৃতিক দেবদেবীকে তারা পূজা করত। খ্রিষ্টান মিশনারীরা তাদের অনেককে নানা প্রলােভনে ধর্মান্তরিত করত। ধর্মপ্রাণ সাঁওতালরা খ্রিষ্টানদের অনাচারে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়।

 

সরকারি কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার : সরকারি প্রশাসন ও বিচার বিভাগ জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কাজে সাহায্য করত। সরকারি কর্মচারী ও পুলিশ জমিদার-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাঁওতালদের উপর অত্যাচার করত। ইউরােপীয় কর্মচারীরা কমমূল্যে বা বিনামূল্যে সরলমতি সাঁওতালদের ফসল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি কিনে নিতে থাকে। অল্প পারিশ্রমিকে রেল স্থাপনের কাজে তাদের নিয়ােগ করা হয়। এমনকি সাঁওতাল নারীদের সম্মান নষ্ট করা হত। এই সব অত্যাচারের প্রতিবাদে সিধু ও কানু নামে দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ শে জুন ভাগনা ডিহির মাঠে প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল সমবেত হয়ে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘােষণা করে। 

 এরপর সাঁওতালরা ৭ই জুলাই বিদ্রোহ ঘােষণা করে এবং কলকাতার পথে পদ যাত্রা শুরু করে। সিধু ও কানু ছাড়া চাদ, ভৈরব, বীর সিং, কালাে প্রামাণিক, ডােমন মাঝি এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। বিদ্রোহীদের সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছায়। বিদ্রোহীরা যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ডাকঘর, থানা, ইউরােপীয় বাংলাে, রেলস্টেশন ও জমিদারদের গৃহ তারা আক্রমণ করে। ভাগলপুর থেকে মুঙ্গের পর্যন্ত অঞ্চলে সিধু ব্রিটিশ শাসনের কার্যত অবসান ঘটায়। বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের কিছু অঞলে এই বিদ্রোহ প্রসারিত হয়। মহাজন ও ব্যবসায়ীরা প্রাণ ভয়ে সাঁওতাল পরগণা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সরকার বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য একদল ইংরেজ সেনা পাঠায়। কিন্তু তারা পরাজিত হয়।

 

বিদ্রোহ দমন : সাঁওতালদের বিদ্রোহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা নীলকর সাহেব, ইউরােপীয় কর্মচারী, পুলিশ কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করে। অবশেষে সরকার বিদ্রোহ দমনের জন্য সামরিক বাহিনীকে ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসে প্রেরণ করে। সাঁওতালরা ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণভাবে প্রতিরােধ করেও ব্যর্থ হয়। চাদ ও ভৈরব যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়। সিধুকে বন্দী করে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং কানুকে ফাসী দেওয়া হয়। ইংরেজ বাহিনী নৃশংস হত্যালীলার দ্বারা এই বিদ্রোহ দমন করে (ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৬ খ্রিঃ)।

 

 

গুরুত্ব : সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদী আন্দোলন। সাঁওতাল ছাড়া এই বিদ্রোহে তাতী, কামার, কুমাের, মুচি প্রভৃতি শ্রেণির মানুষ যুক্ত হয়েছিল। সাধারণ দা, কাটারি, তীরধনুক, বর্শা প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে বিদ্রোহীরা যুদ্ধ করেছিল। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ এই বিদ্রোহকে দরিদ্র মানুষের মুক্তি যুদ্ধ বলেছেন। বিদ্রোহী নেতা নিজেকে রাজা ঘােষণা করে খাজনা আদায় করে ব্রিটিশ শক্তি কে অস্বীকার করেছিল। এই বিদ্রোহ ছিল অন্যায় ও শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সরকার সাঁওতালদের সুশাসনের জন্যে ভাগলপুরে ও বীরভূম জেলার কিছু অংশ নিয়ে সাঁওতাল পরগনা নামক অঞ্চল গঠন করেন। 

ভীল বিদ্রোহ

০ ভীল বিদ্রোহ : পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের মতাে পশ্চিম ভারতেও ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। অন্যান্য উপজাতির মতাে ভীল উপজাতিরও নিজস্ব জীবন ধারা ছিল। মােগল আমলে বা মারাঠা আমলেও তা অব্যাহত ছিল। মারাঠা সাম্রাজ্যের অবসানের পর এই অঞ্চলে কোম্পানি রাজ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৮১৮ খ্রিঃ)। এযাবৎ কালের চিরাচরিত অধিকার বিঘ্নিত হলে এবং কোম্পানির শােষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে ভীল উপজাতিরা বিদ্রোহ করে। প্রথমে খান্দেশ অঞ্চলে এই বিদ্রোহ শুরু হয় (১৮১৯ খ্রিঃ) পরে তা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কোম্পানি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ভীল বিদ্রোহ দমন করে। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে আবার ভীল’রা বিদ্রোহ করলে কোম্পানি আরও বর্বরতার সঙ্গে তা দমন করে। তার পরেও ভীল’রা কোম্পানির বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহ করে।

কোলহি বিদ্রোহ

কোলহি বিদ্রোহ : ভারতের পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার পাদদেশে, কচ্ছ, আহম্মদ নগর ও কোলহাপুর অঞ্চলে বসবাস কারী একটি উপজাতি সম্প্রদায় হল কোলহি। কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান পেশা। সাথে সাথে জঙ্গল, পাহাড় প্রভৃতির উপর চিরাচরিত অধিকারও তারা ভােগ করত। মারাঠা রাজত্বে তারা কিছু সুযােগ সুবিধা ভােগ করত কিন্তু কোম্পানি রাজ প্রতিষ্ঠিত হলে কোলহিদের স্বাভাবিক জীবন ধারা ব্যাহত হয়। বেকারত্ব দেখা দেয়। ফলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

 

এই অবস্থায় সরকার স্থানীয় দূর্গ ভাঙ্গার আদেশ দিলে অসন্তুষ্ট কোলহিরা সাতারার রামেসিস উপজাতিদের সফল বিদ্রোহের দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হয়ে রামজি ভাংগ্রিয়ার নেতৃত্বে কোলহিরা- বিদ্রোহ করে (১৮২৮ খ্রিঃ)। কোম্পানির সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করলেও রঘু ভাংগ্রিয়া ও বাপু ভাংগ্রিয়ার নেতৃত্বে কোলহি’র আবার বিদ্রোহ করে (১৮৪৪খ্রিঃ)। আগের তুলনায় তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বেশি হলেও কোম্পানীর সেনাবাহিনী তা দমন করে। এভাবে কোলহি বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

 

ফরাজি আন্দোলন :

 

বাংলায় কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে ফরাজি আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাংলার কৃষিজীবী মানুষরা ছিল এই আন্দোলনের মূল শক্তি। এই আন্দোলন মুসলিম ধর্মীয় সংস্কার নিয়ে

শুরু হলেও অর্থনৈতিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য। ফরাজি আন্দোপ্রধানত পূর্ববঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল।

 

হাজি শরিয়ৎ উল্লাহের আদর্শ

 

দুদুমিঞা : ফরাজ কথা আরবী ভাষার ফরাইজ থেকে এসেছে। এই কথার অর্থ বাধ্যতামূল কর্তব্য। ফরাজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য হল ইসলাম ধর্মের সংস্কার ও কোরাণ নির্দেশিত অবশ্য পালন কর্তব্য। এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরিয়ৎ উল্লাহ ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপ জেলায় বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮ বছর বয়সে মক্কায় হজ করতে যান। সেখানর ওয়াহাবি নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হন। প্রায় কুড়ি বছর ধরে কায়রো ও মক্কায় অধ্যয়ন করে দেশে ফিরে এসে তিনি ইসলাম ধর্ম সংস্কারে ব্রতী হন। তিনি ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার ও শ্রেণি বিভেদে নিন্দা করেন। তিনি বিদেশি ও বিধর্মী ইংরেজদের বিরােধী ছিলেন এবং তাদের বিতাড়িত করা কর্তব বলে মুসলিমদের আহ্বান করেন। তিনি জমিদার, মহাজন, নীলকরদের শােষণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তােলেন। বহু কৃষক ও নিম্নশ্রেণির মুসলমানরা তার বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়েছিল। বরিশাল, ঢাকা ময়মনসিংহ, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় লক্ষ লক্ষ মুসলমান তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় জমিদাররা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। তার সৃষ্ট আন্দোলনকে ফরাজি আন্দোলন বলা হয়। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ৎ উল্লাহ মারা গেলে তার পুত্র মহম্মদ মহসীন বা দুদু মিঞা ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলন থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেন। তিনি ঘােষণা করেন মানুষের জন্যই আল্লা জমি সৃষ্টিকরেছেন তাই আল্লার জমির উপর কর ধার্য করার অধিকার কারাে নেই। দুদু মিঞা জমিদারদের খাজনা না দিতে, নীলকর সাহেবদের জন্য নীল চাষ না করতে এবং ইংরেজদের শাসন না মানতে বলেছেন। তার আহ্বানে শুধু মুসলমানরাই নয় হিন্দু গরীব চাষী, কামার, কুমাের, তাঁতী, জেলে প্রভৃতি শ্রেণির মানুষ সাড়া দিয়ে তার আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে দরিদ্র কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল এবং জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছিল।

 

সংগঠন : দক্ষ সংগঠক হিসাবে দুদু মিঞা বাংলা দেশে তার প্রভাবিত অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে বা হক্কায় বিভক্ত করেন। প্রতিহক্কায় ৩০০ থেকে ৫০০ পরিবার থাকত। প্রত্যেক হক্কায় একজন খলিফা বা ওস্তাদ দায়িত্বে থাকতেন। সবার উপরে ছিলেন দুদু মিঞা। ফরাজি অনুগামীদের সাকরেদ বলা হত। খলিফার কাজ ছিল অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরােধ গড়ে তােলা।

 

 পঞ্চায়েত ব্যবস্থা : দুদু মিঞা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য পায়েত শাসন প্রবর্তন করেন। অঞ্চলের. বিরােধ মীমাংসা করত পঞ্চায়েত। ফরাজিরা একে অপরকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহায্য করার অঙ্গীকার বন্ধ ছিল। তিনি সুদক্ষ গুপ্তচর বাহিনী ও দুধর্ষ লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তােলেন। গুপ্তচররা বিভিন্ন অঞ্চলের অত্যাচারের খবর সংগ্রহ করত এবং এই খবরের ভিত্তিতে প্রতিরােধ ব্যবস্থা গড়ে উঠত। নীলকুঠি, জমিদারের কাছারিবাড়ি প্রভৃতি লুঠতরাজ করে তিনি তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন।

 

আন্দোলনের প্রসার : দুদু মিঞার আন্দোলন বাংলার ছয়ভাগের একভাগ অঞলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাখরগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশােহর ও ২৪ পরগণার ব্যাপক অঞলে এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করেছিল। জমিদার, মহাজনরা দুদু মিঞার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়। তারা দুদু মিঞার বিরুদ্ধে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে লুণ্ঠনের এবং ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে হত্যার অভিযােগ দায়ের করে। ১৮৪৪ থেকে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাকে চারবার গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে তাকে মুক্তি দিতে হয়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের পর তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে তার উপর অত্যাচারে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হয়।

 

দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তার পুত্র আবদুল গফুর (নােয়ামিঞা) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় ফরাজি আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস পায়। তিনি ধর্মীয় কর্মসূচির উপর গুরুত্ব দিতে থাকেন। অবশেষে ওয়াহাবি আন্দোলনের সঙ্গে এই আন্দোলন মিশে যায়। 

 

ওয়াহাবি আন্দোলন :

 

ফরাজি আন্দোলন চলাকালে অপর একটি ইসলাম ধর্মীয় আবরণে ভারতব্যাপী ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন হয়েছিল, তার নাম ওয়াহাবি আন্দোলন। ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল আরবদেশে। আরবদেশের আবদুল ওয়াহাব নামে এক ব্যক্তি হজরত মহম্মদের প্রচারিত ধর্মীয় অনুশাসন থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করে এর প্রতিবিধানের জন্য সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। কোরাণের নির্দেশ অনুসারে ইসলাম ও সমাজকে নতুন ভাবে গড়ে তােলা ছিল তার উদ্দেশ্য। আবদুল ওয়াহাবের এই আন্দোলনকে ওয়াহাবি আন্দোলন বলে।

 

সৈয়দ আহমদের মতবাদ ঃ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তন করেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলীর অধিবাসী সৈয়দ আহমদ (১৭৮৬-১৮৩১)। তিনি মক্কায় হজ করতে গিয়ে আব্দুল ওয়াহাবের সংস্পর্শে এসে ওয়াহাবি আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে এসে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন। তার প্রচারিত ধর্মমতে আকৃষ্ট হয়ে বহু মুসলমান তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। অনুগামীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক সংগঠন গড়ে তােলেন। তিনি এই আন্দোলন পরিচালনার জন্য চারজন খলিফা নিযুক্ত করেন। তাঁরা সারা দেশে ভ্রমণ করে অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। সৈয়দ আহমদের প্রবর্তিত ওয়াহাবি আন্দোলন শুধু ধর্মীয় আন্দোলন ছিল না। তার আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলনরূপে শুরু হলেও ভারতে এই আন্দোলন ক্রমশ রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। তিনি বলেছেন ভারতে মুসলমানদের দুর্গতির জন্য দায়ী ভারতে বিধর্মী ইংরেজ শাসন। এই জন্য ভারত থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে ভারতকে দার-উল-ইসলামে পরিণত করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

সৈয়দ আহমদ প্রথমে রােহিলাখণ্ডে প্রচার শুরু করেন। তিনি ইংরেজদের প্রধান শত্রু বলে মনে করতেন। তাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য দেশীয় রাজাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর অনুগামীদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন আফগানিস্তানে সীমান্তবর্তী সিতানা নামক স্থানকে তার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেন।

 

১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে বালাকোটের যুদ্ধে সৈয়দ আহমদ নিহত । সৈয়দ আই ওয়াহাবি আন্দোলন মিরাট, বেরিলি, দিল্লি, পাঞ্জাব, বাংলা ও বিহারে বিস্তৃতি লাভ করে। বারবার অভিমান করেও ইংরেজরা ওয়াহাবিদের নির্মূল করতে পারেনি। অবশেষে ‘লালুর’ যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি গারভক ওহাৰি শকি ধ্বংস করেন। 

 

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন:

 

 তিতুমিরের উত্থান : বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ছিলেন মির নিসার আলি। তি৷ তিতুমির নামে খ্যাত। তিনি চব্বিশ পরগণার বাদুড়িয়ার অন্তর্ভুক্ত হায়দরপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মক্কায় হজ করতে গিয়ে আবদুল ওয়াহাবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। বাংলায় ফিরে এসে তিনি ওয়াহাবি আন্দোলন গড়ে তােলেন। তার আন্দোলনের ক্ষেত্র ছিল নদিয়া, ২৪ পরগণা, যশােহর, রাজশাহী, ঢাকা, মালদহ প্রভৃতি স্থানে। তিতুমির মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। বহু হিন্দু-মুসলমান তার আন্দোলনে যােগ দেন। তিনি ইসলাম ধর্ম সংস্কারের সঙ্গে সাধারণ কৃষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শােষণের বিরুদ্ধেও আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। জমিদারদের ধার্য করা অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে তিতুমীর প্রতিবাদ করেন। তার আন্দোলনে জমিদার ও নীলকর সাহেবরা শঙ্কিত হয়। জমিদার ও নীলকরদের সঙ্গে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ইংরেজ সরকারের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়।

 

তিতুমিরের অনুগামীদের দাড়ি রাখতে হত। পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় দাড়ি রাখার জন্য জরিমানা ধার্য করে। তিনি ঘােষণা করেন তিতুমিরকে আশ্রয় দিলে আশ্রয়দাতাকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবেন। তিতুমির এর প্রতিবাদে ৩০০ অনুচর নিয়ে কৃষ্ণদেব রায়ের গৃহ আক্রমণ করেন এবং কিছু ধনী মুসলমানের গৃহ লুঠ করেন। এরপর তিনি বারাসত ও বসিরহাট অঞ্চলে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে নিজেকে বাদশা বলে অভিহিত করেন। তিনি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে মৈনুদ্দিনকে প্রধান মন্ত্রী এবং গােলাম মাসুমকে তার সেনাপতি নিযুক্ত করেন। বিদ্রোহীরা বসিরহাটের অত্যাচারী দারােগা রামরতন চক্রবর্তীকে হত্যা করে, রাজস্ব দপ্তরের নথীপত্র জ্বালিয়ে দেয়, এবং নীলকুঠি আক্রমণ করে। তিতুমির তাঁর অনুগামীদের কাছে ঈশ্বর প্রেরিত ত্রাণকর্তা রূপে চিহ্নিত হন।

 

O বিদ্রোহ দমন ঃ বাদুড়িয়ার নিকট নারকেল বেড়িয়া গ্রামে তিতুমির বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন; টাকি, গােবরডাঙ্গা প্রভৃতি অঞলের জমিদারদের উপর কর দাবি করেন। এই ঘটনা বারাসাত বিদ্রোহ বলে পরিচিত। তিতুমিরের বিদ্রোহ দমনের জন্য জমিদার ও নীলকর সাহেবদের সাহায্যে বারাসাতের ম্যাজিষ্ট্রেট আলেকজান্ডার তিতুমিরের বিরুদ্ধে অভিযান করে পরাজিত হন। অবশেষে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্ক তিতুমিরকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। কামানের আঘাতে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয়। তিতুমির তার অনুগামীসহ বীরের মত যুদ্ধ করে মত্যুবরণ করেন। বন্দী সৈন্যদের অধিকাংশকে কারাদন্ডও অন্যদের ফাঁসি দেওয়া হয়। এই আন্দোলনকে অনেকে ধর্মীয় আন্দোলন বললেও এটি ছিল জমিদার ও ইংরেজ বিরােধী শ্রেণি সংগ্রাম। ঐতিহাসিক বিনয় চৌধুরী মনে করেন এই বিদ্রোহ ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত এক কৃষক বিদ্রোহ। 

 

• দক্ষিণ ভারতে মােপলা বিদ্রোহ : প্রাচীন ও মধ্যযুগে আরবের মুসলমান বণিকরা দক্ষিণ ভারতে মালাবার উপকূলে বসবাস শুরু করেছিল। এদের উত্তর পুরুষ ছিল মােপালা চাষী। এই মােপালা চাষীরা জমিদারদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে উনবিংশ শতাব্দী থেকেই বিক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। তাদের দাবি ছিল – (ক) প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন, (খ) খাজনার হার হ্রাস করা, (গ) জামিদারদের শােষণ বন্ধ করা। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হলে জমিদার বিরােধী আন্দোলন জোরদার হয়। অসহযােগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলন শুরু হলে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মােপলাদের মধ্যে এই আন্দোলনের সপক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন মাধবন নায়ার, গােপাল মেনন, ইয়াকুব হাসান এবং কংগ্রেস ও খিলাফত নেতারা। এর পরেই স্থানীয় কট্টর ধর্মীয় নেতা আলী মুসলিয়ার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং কৃষক আন্দোলনকে সশস্ত্র আন্দোলনে রূপান্তরিত করেন। কয়েক মাসের মধ্যে মালবার উপকূলের বেশ কয়েকটি অঞলে স্বাধীন খিলাফত প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার কঠোর হস্তে মােপালা বিদ্রোহীদের দমন করেন।

 

পলিগার বিদ্রোহ : দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ হয়। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণভারতে মাদ্রাজে ধনী ভূস্বামীরা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষনা করে। এই বিদ্রোহ ক্ৰমে অনন্তপুর, কুড়াপ্পা, ত্রিনিভেলি প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহকে পলিগার বিদ্রোহ বলে। সাধারণ মানুষ এই বিদ্রোহে যােগ দেয়। ইংরেজ কোম্পানি এই বিদ্রোহ দমন করে।

পাইক বিদ্রোহ

। পাইক বিদ্রোহ : দেশীয় রাজা বা জমিদারদের অধীন এলাকায় পাইকরা শান্তি শৃংখলা  রক্ষার কাজ করত। তারা এই কাজের জন্য বিনা খাজনায় জমি ভােগ করত। ইংরেজ কোম্পানি রাজা বা জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করায় পাইকরা জমিহারা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় উড়িষ্যায় । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাধর মহাপাত্রের নেতৃত্বে পাইকরা বিদ্রোহ করে এবং সমগ্র উড়িষ্যায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা সরকারি কাছারি ও পুলিশ থানা আক্রমণ করে। ইংরেজ বাহিনী কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমন করে।

 

পশ্চিম ভারতে ভীল বিদ্রোহ : ভীল উপজাতিরা পশ্চিম ভারতের খান্দেস অঞ্চলের অধিবাসী ছিল। তারা স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করত। ১৮১৮ খ্রিঃ ইংরেজরা খান্দেস দখল করে। ফলে ভীলদের জীবিকা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাই তারা ১৮১৯ খ্রিঃ বিদ্রোহ ঘােষণা করে। ভীল বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন ভাংপ্রিয়া, ভীলরা মাড়ােয়ারী মহাজনদের শােষণের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে। ইংরেজবাহিনী ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ সম্পূর্ণ দমন করেন।

 

নীল বিদ্রোহ

 

• নীল বিদ্রোহ : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে অষ্টাদশ শতকে বস্ত্র শিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লুপ্ত হয়। এই সময় থেকে বহু ইংরেজ ভারতে নীল চাষ করতে শুরু করে। নীলকর সাহেবরা জমি কিনে নিজ এলাকায় চাষীদের কম মজুরী দিয়ে জোর করে নীল চাষ করাতাে। অপরদিকে নীলকররা চাষীদের আগাম টাকা দাদন দিয়ে চাষীদের জমিতে নীল চাষ করাতাে এবং কম দামে উৎপন্ন নীল তাদের কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য করতাে। চাষীরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে তাদের নীলকুঠিতে স্ত্রীপুত্র সহ আটক করে প্রহার করতাে এবং চাষীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিত।

 

এই নির্মম শােষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস ও রফিক মণ্ডলের নেতৃত্বে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে যশােহর ও নদীয়ায় চাষীরা নীল চাষ করতে অস্বীকার করে এবং বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ ক্ৰমে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহি, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা নীলকুঠি পুড়িয়ে দেয় এবং সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নীল চাষীদের উপর অত্যাচারের কাহিনি সমাচার দর্পণ, তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা, হিন্দু প্যাট্রিয়ট প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দীনবন্ধু। মিত্র রচিত নীল দর্পণ নাটকে এই অত্যাচারের কাহিনি ফুটে ওঠে। মধুসূদন দত্ত নীল দর্পন নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। অবশেষে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সরকার নীল কমিশন নিয়ােগ করে। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় নীলচাষ আইন পাশ হওয়ায় চাষীদের উপর অত্যাচার কিছুটা লাঘব হয়। ক্রমে রাসায়নিক নীল আবিষ্কৃত হওয়ায় নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *