বাংলা প্রবন্ধ রচনা করোনা ভাইরাস-পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
বাংলা প্রবন্ধ রচনা করোনা ভাইরাস-পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
বাংলা রচনা করোনা মহামারী
নয়া করােনা ভাইরাস
ভূমিকা : মানুষের কোনাে কোনাে রােগ নিজেকে পালটে ফের আসে। করােনা ভাইরাস সেই ধরনের এক ব্যাধি। সার্স রােগের মধ্যে এক চেহারায় এক রূপে ছিল। মার্স রােগে আর-একটু পালটে এলাে। আরও পালটে নতুন রূপে ও নতুন চেহারায় এলাে করােনা ভাইরাস। করােনা ভাইরাস ঘটিত মারাত্মক অসুখ। যেমন সংক্রামণ তেমনি মারণ প্রকৃতির। অসাবধান ও অসতর্ক হলে রােগীর প্রাণ নেয় কেড়ে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু করােনার নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। করােনার ‘কো’, ভাইরাসের ‘ভি’, ডিজিজের ‘ডি’, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে রােগের শুরু বলে ১৯’-এভাবে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে করােনা ভাইরাস রােগের শুরুকে স্মরণে রেখে নাম হয় কোভিড-১৯।
অতিমারী বা বিশ্বমারি : চিনের উহান প্রদেশে নয়া করােনা ভাইরাস রােগের সূচনা হয় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। এক মাসের মধ্যে উহান থেকে রােগটি ছড়িয়ে পড়ে চিনের অন্যান্য প্রদেশে। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ফ্রেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে করােনা ছড়িয়ে যায় বিশ্বের ১৬২টি রাষ্ট্রে। লক্ষ লক্ষ মানুষ করােনায় আক্রান্ত হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাহু ঘােষণা করে শুধু মহামারি নয়, অতিমারি বা বিশ্বমারি। এপিডেমিক নয়, প্যানএপিডেমিক।
নয়া করােনা ভাইরাসের উৎস : সার্স, মার্স, জিকা ও করােনা ভাইরাসের উৎস হল স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। বাদুড় থেকে
অন্য প্রাণীর শরীরে বিবর্তিত হয়ে মানুষের শরীরে এসেছে। বাদুড়ের শরীর থেকে করােনা ভাইরাস প্যাঙ্গোলিনের শরীরে এসে বাসা বাঁধে। চিনের উহান প্রদেশের হুয়ানান সি-ফুড মার্কেটে যারা ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে প্যাঙ্গোলিনেরমাংস কেনে, তারা নয়াকরােনা ২ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে করােনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে উহানে। করােনার মহামারি শুরু হয়।
প্রবন্ধ রচনা করোনা ভাইরাস
রােগের লক্ষণ : করােনার প্রকাশ হয় জ্বর দিয়ে। জুরের সঙ্গে সর্দি-কাশিও হতে পারে। কয়েক দিন পর থেকে প্রবল শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট রােগীকে পীড়িত করে। ক্ষেত্রবিশেষে অক্সিজেনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা যায়। কোনাে কোনাে রােগীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। যথা সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাদি না হলে রােগী মারা যেতেও পারে।
লকডাউন : করােনার সংক্রমণ যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে না পড়ে তার সাবধানতা ও সতর্কতার জন্য সংক্রামিত অঞলে বা সারা দেশে সরকারিভাবে লকডাউন ঘােষণা করা হয়। ভারতে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চের ২৫ তারিখ থেকে দফায় দফায় লকডাউন চলতে থাকে এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত।লকডাউনের ২ ফলে মানুষ সপরিবারে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজ ও সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সব যানবাহন, বাজার-হাট, কলকারখানা বন্ধ থাকে। সভাসমিতি, সমাবেশ প্রভৃতি নিষিদ্ধ হয়। সব ধর্মপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকে। লকডাউনের দৌলতে মানুষ করােনা সংক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন হয়। করােনা আক্রান্তের নিরিখে প্রতি থানা, মহকুমা বা জেলাকে রেড, অরেঞ্জ, গ্রিন জোন বা অঞ্চলে – ভাগ করা হয়। করােনা আক্রান্তের ভাগ বেশি হলে রেড, আক্রান্তের ভাগ কম হলে অরেঞ্জ, আক্রান্তের ভাগ না থাকলে গ্রিন। এভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়। জুন মাসের শুরু থেকে গ্রিন জোনের লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। রেড জোনকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে ঘােষণা করা হয়। সেখানে লকডাউন চলে। অন্যান্য জোনগুলিতে ধীরে ধীরে হাট-বাজার খােলা হয়। ক্ৰমে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে পরে কলকাতা শহরে মেট্রো চলাচলের ব্যবস্থা হয়।
প্রবন্ধ রচনা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে
করােনা প্রতিরােধের জন্য কী কী করণীয় : বাড়ির বাইরে যেতে হলে মুখে মাস্ক পরা অপরিহার্য। চোখে, মুখে, নাকে হাত দেওয়া নিষিদ্ধ। মাঝে মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধােয়া আবশ্যক। পরস্পর পরস্পরের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই সতর্কতা ও সাবধানতা অনুসরণ অব্যশই কাম্য।
উপসংহার : প্রতিষেধক বা টিকাই পারে করােনা ভাইরাসের মতাে সংক্রামক ব্যাধিকে জব্দ করতে। ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক পৃথিবী থেকে নির্মূল করেছে গুটিবসন্ত, পােলিয়াের মতাে সংক্রামক ব্যাধিকে। আশার কথা ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশই প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় কোমর বেঁধে লেগেছিল এবং সফলও হয়েছে।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়া, চিন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র গবেষণায় অনেকখানি অগ্রণী হয়েছে। তাদের গবেষণালব্ধ প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়ার পরে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে প্রতিষেধক প্রয়ােগ শুরু করে। 2022 এ ফ্রেব্রুয়ারিতে টিকা দান প্রায় সম্পন্ন।
বাংলা প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার।
ভূমিকা
পরিবেশ দূষণ আধুনিক বিশ্বের এক অগ্নিগর্ভ বিষয়। যন্ত্র সভ্যতার বিষবাষ্পে দিশাহারা মানুষের এখন একটাই প্রার্থনা—বাঁচো এবং বাঁচাও। একসময় মানুষ সবুজ পৃথিবী মায়ের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করেছে। কিন্তু আজ সেই পরিবেশ দূষণের অক্টোপাশে বদি। এই সুন্দর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তিনভাবে (১) প্রাকৃতিক দূষণ ; (২) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ ; (৩) মানসিক দূষণ। আগামী দিনে মানুষকে পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, মানুষকে বাঁচতে হলে এই পরিবেশ দূষণ প্রতিকারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
* পরিবেশ দূষণের ইতিহাস :
আদিম মানুষ অতীতে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলত বলে সেদিনের পরিবেশ তাদের কাছে ছিল বসবাসের উপযুক্ত। অনুর্বর মাটিকে উর্বর করে তাতে তারা ফলিয়েছে সােনার ফসল। নদী কিংবা ঝরনার জল মানুষ অনায়াসে পান করেছে। সেদিন প্রকৃতির বাতাসও ছিল পবিত্র। কিন্তু যেদিন মানুষ পাথরে পাথরে ঘষা লাগিয়ে আগুন জ্বালাতে শিখেছে সেদিন থেকে পরিবেশে দূষণের জয়যাত্রা।
পরিবেশের উপর এভাবে মানুষ যতই অত্যাচার করতে থাকল, ততই দূষণ-যাত্রার পথ শক্ত হতে থাকল। উকিার সূত্রে সেই পাপের ভাগীদার আজ আধুনিক মানুষ। কোন বিজ্ঞানে তারা যতই উন্নতি হচ্ছে ততই বাড়ছে দূষণের অভিশাপ। বর্তমানে এই পাবেশ ভাবনা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে এক গভীর ভাবনার বিষয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণ : প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণগুলি হল- (ক) জনসংখ্যা বৃদ্ধি। প্রয়োজনের তাগিদে জল, মাটি, বানুর উপর পড়ছে প্রচণ্ড চাহিদার চাপ। ফলে অরণ্যসম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ হতে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন।
(খ) বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা। প্রতিদিন কারখানার বর্জ পদার্থ, গৃহস্থের বাড়ির আবর্জনা, কীটনাশক, রাসায়নিক পদার্থ—নদীবক্ষে ও দীঘিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই জল বাহিত দূষিত পদার্থ আমাদের শরীরে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নিয়মিত প্রবেশ করে চলেছে।
(গ) কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, উনুনের ধোঁয়া, তৈলচালিত যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া—পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।
(ঘ) বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকা সালফার, নাইট্রোজেন, ফ্লুরােকার্বন, CO., কার্বন মনােক্সাইড, পারমাণবিক বিস্ফোরণ বায়ুমণ্ডলকে ভয়ংকরভাবে দূষিত করে চলেছে।
* সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ : বিশ্বের সবদেশে গ্রাম ও শহরের অধিবাসীদের মধ্যে জীবনযাত্রার পার্থক্য সুস্পষ্ট। গ্রামীণ সমাজ আজও সুখে-দুঃখে, উৎসবে-আনন্দে মানুষে মানুষে প্রীতি ও সৌহার্দের সম্পর্ক থাকলেও সেখানে আন্তরিকতার দিক ক্রমাগত লােপ পাচ্ছে। শহরের বুকে মানুষ ইঁদুরদৌড় দৌড়ােতে দৌড়ােতে একাকী ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে ক্রমাগত। সমাজে ধনী-দরিদ্রের পাল্লা আজও মানুষকে দুঃসম্পর্কের চরম সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক জগতে প্রবেশ করেছে অপসংস্কৃতি। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ হারিয়েছে মূল্যবােধ। রুচিহীন আমােদ-প্রমােদ, অশ্লীল সাহিত্য, অশালীন ছায়াছবি আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশকে সম্পূর্ণ গ্রাস করতে চলেছে। দলীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের বিবেকহীনতা আজকের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করে তুলছে। বর্তমানের পবিত্র শিক্ষায়তনগুলি পর্যবসিত হচ্ছে রাজনৈতিক দলের আখড়ায়। সাংস্কৃতিক পরিবেশে এই দূষণের কারণে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়ছে দিনে দিনে।
* মানসিক দূষণ : বর্তমান সমাজে মানসিক দূষণ পরিবেশ গঠনের আর এক অন্তরায়। বর্তমান প্রজন্মের শিশু পায়না বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ। তারা পায় না স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠার মতাে প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় অপরাধবােধ। এ থেকে তারা নির্জনতার দিকে অগ্রসর হয় এবং মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যুবসম্প্রদায় সমাজের গড্ডলিকা স্রোতে গা ভাসিয়ে সর্বনাশের পথ ধরে এগিয়ে। চলে। না পাওয়ার বেদনা, হতাশার বেদনা তাদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তােলে। বাড়ির বড়ােরা এমনকি বৃদ্ধবৃদ্ধারা একান্ত আপনজন খুঁজে পায় না কথা বলার জন্য। সমাজে কেউ কারও ভালাে দেখতে পায় না। প্রত্যেকেই প্রায় মানসিকভাবে অস্বস্তিবােধ করে প্রতিযােগিতায় মেতে ওঠে এবং পরিণামে সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখে।
* পরিবেশ রক্ষার উপায় : (১) প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপযুক্তভাবে গড়ে তােলার স্বপ্নে পরিবেশপ্রেমিক সচেতন মানুষকে নতুন চেতনালােকের জোয়ারে জেগে উঠতে হবে। (২) পরিবারের আদর্শ, রুচিবােধ, মানসিকতার উর্ধ্বে, মনের বিকাশের দিকে প্রত্যেককে নজর দিতে হবে। (৩) উপযুক্ত বিদ্যালয়ে শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। (৪) যুবসমাজকে অপসংস্কৃতির পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। (5) সমাজে শিশুপাঠ্য লাইব্রেরি ও পূর্ণাঙ্গ পাঠাগার প্রকল্প বেশি করে গড়ে তুলতে হবে। (৬) নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা, সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে প্রত্যেককে সচেতন করতে হবে। (৭) উপযুক্ত দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।
* উপসংহার : জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে ও পরিবেশকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে মৃত্যুর কালাে মেঘ। সুস্থ পরিবেশ দেয় সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি। তাই প্রকৃতি, পরিবার, শিক্ষাক্ষেত্র এমনকি সমাজ— সর্বত্রই পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা দরকার। এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে তুলতে শুধু কবি শিল্পীরা কেন আমাদের সকলকেই পরিবেশ রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে।
বাংলা প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ দূষণ
॥ পরিবেশ দূষণ ॥
* ভূমিকা : পরিবেশ বলতে বুঝি মানুষের চারপাশের বিভিন্ন ভৌত উপাদানগুলিকে নিয়ে এক সময়। আলাে বাতাস জল মৃত্তিকা এগুলি নিয়েই মানুষের পরিবেশ। পরিবেশের মধ্যদিয়েই নবজীবন বিকশিত হয়। সুস্থ পরিবেশ সুস্থ জীবন দান করে। এই পরিবেশের হৈত সত একদিকে পার্থিব পরিবেশ, অন্যদিকে অপ্রাকৃতিক পরিবেশ। পার্থিব পরিবেশের মধ্যে ল-স্থল-আকাশ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। আর অপ্রাকৃতিক পরিবেশ নিতান্ত মনুষ্যসৃষ্ট। মানবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা আসলে কার্যত পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখেই। কিন্তু আজ বিশ্বজুড়ে পরিবেশের সঙ্গে ভুল বােঝাবুঝির জেরে মানুষ নিজেকে বিব্রত করে নেই৷ এই বিভ্রান্তি বা পরিণত্রি কারণ মানুষ নিজেই। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে চলবে। সেটাই রীতি। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে সেটি খাটে না। মানুষ প্রকৃতির কাছে বাস্তবিক বাধ্য ও বন্ধ। স্বার্থসাধন ও লােভানলে মানুষ যখন প্রকৃতিকে হত্যা করতে উদ্যত হল, সেনি প্রকৃতির ভয়াবহ রুদ্রমূর্তি অতর্কিতে হানা দিল। মানুষ বুঝল প্রকৃতিকে হত্যা আসলে আহতরই সমতুল। প্রকৃতির পরিহাসে মানুষ বিপর্যস্ত।
পরিবেশ দূষণের উদ্ভব : পরিবেশ জীবন সুরক্ষার সর্বাপেক্ষা সহায়ক। কিন্তু সেই সহযোগে ব্যাঘাত ঘটলে জীবনযাপনের অনুকূল পরিস্থিতির অভাব ঘটে। এই অভাববােধই দূষণ শব্দ কে প্রতিফলিত করে। আদিম মানব জীবন ধীরে ধীরে হাজার হাজার বছরের তপস্যা, প্রগতির পথে পথিক হয়েছে। কিন্তু বেখেয়ালে সে তার পরিবেশকে ধ্বংস করেছে নিত্যদিন। প্রগরি সঙ্গে নিজের পরিবেশকে ধরে রাখতে সে পারেনি। আজ যখন সম্বিত কিন্তু এলাে, তখন অনেকখানি সময় নষ্ট হয়ে গেছে। শিল্পায়ন নামক এক অতি প্রগতিশীল বিজ্ঞান ভবনােও এই দূষণের জন্য দায়ী। পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ মনে করেছেন শিল্পায়নের তোমার জলবায়ু মৃত্তিকার উপর দূষণজনিত প্রভাব পড়েছে। আমরা, এখন আলােচনা সব যে, কিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
* মৃত্তিকা দূষণ : মানুষের বাস্তবিকই মাটিই জীবন। তার জীবনের ভিত্তিভূমি মৃত্তিকা। এদের থেকে আরও ঘনিষ্ঠ উদ্ভিদ। মানুষ এই দুয়ের উপরই নির্ভরশীল। আর তার লেভেল পুড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ সুরক্ষার যাবতীয় নথি-দলিল-দস্তাবেজ। অধিক ফলন লানের লােভে নুৰ মৃত্তিকার উপর বারবার রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছে। কেবলমাত্র সর নর, নানাবিধ বিষাক্ত কীটনাশকও। কৃত্রিম উপায়ে মৃত্তিকাকে উর্বর করে তােলার প্রচেষ্টায় সকল মানুষ কত মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তিকেই হত্যা করেছে। অন্যদিকে মৃত্তিকার হয় দ্রুত ও অনিবার্য করে তুলেছে বৃক্ষ ছেদনের দ্বারা । উদ্ভিদ মাটি কে ধরে রাখে । ফলে সেই উদ্ভিদ নির্মূল করার জন্য মৃত্তিকার অপচয় স্বাভাবিক।
* জলবায়ু ও শব্দদূষণ : জলের অপর নাম জীবন । জীবন জীবন ধারণের প্রধান শব্দটিকে ও মানুষ দূষিত করছে ক্রমাগত; কলকারখানার নানাবিধ আবর্জনা যুক্ত জল, পয়ঃপ্রণালীর জল, নদীর জলকে দূষিত করছে। মাটি ছুঁয়ে সে জল আবার মৃত্তিকার জলকে দূষিত করছে। কলের ধূয়া, যানবাহনের ধুঁয়া বিষাক্ত করে তুলেছে বাতাসকে। পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় হ্রাস পেতে চলেছে অক্সিজেনের শতকরা মাত্রা। পরমাণবিক বােমার ব্যবহার-পরীক্ষায় বাতাসমণ্ডল ক্রমে সংকটাপন্ন । পৃথিবীর উপরতলার ওজোন স্তরে এই দূষণ প্রতিক্রিয়াশীল। জলবায়ুর সঙ্গে এ ভাবে দূষিত হচ্ছে শব্দ। কলে , যানবাহনের লাগামহীন শব্দ তাড়না বিব্রত করছে যাত্রীকে বর্তমান বিশ্নে অর একটি নতুন দূষণ—দৃশ্য দূষণ। বিভিন্ন রং, অশ্লীল বিজ্ঞাপন ননিৰ মনকে বিভ্রান্ত করে বশে করে শিশু মনের বিকাশের ক্ষেত্রে এটি অন্তরায় হিসেবে দেখা দেয়
* পরিবেশ দূষণের পরিণতি বা ফলাফল: পরিবেশ দূষণের পরিণতি হবে অতীত সময়ে মানুষ আত্ম-সুরক্ষার জন্য পরিবেশকে দৃনিত করেছে। আজ সঙ্গিত করে পেতে সে দেখেছে সমূহ সর্বনাশ তার সামনে। বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অরণ্য দানের ফলে বাম শুলের সেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বহু দুর্লভ বনজ-ঔষধি-পশু-পাখি ধ্বংস হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে জেগে উঠেছে নতুন নতুন দুরারােগ্য ব্যাধি ওজোন গ্যাস-এর সমতা লােপ পাচ্ছে। আজ মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসরােগ, করাে, রাত্রে ইত্যাদি। দৃশ্য দূষণের ফলে শিশুমন বিভ্রান্ত হচ্ছে।
* প্রতিকারের উপায়
বিলম্বে হলেও নানু সচেতন হয়েছে আজ পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে। পরিবেশ দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে আজ সারা বিশ্বে। সুখ বনের জন্য পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা আবশ্যকতা মানুষ উপলদ্ধি করতে পেরেছে বৃক্ষনিধনের পরিবর্তে আজ বৃক্ষরােপণ পর্ব সূচিত হয়েছে। লােকালয়ের পাশে যথেচ্ছভাবে কলকারখানা স্থাপন করা উচিত নয়। নজর দেওয়া দরকার কলের ধোঁয়াকে বিকল্প উপায়ে কতি করে তােলায়। মানুষকে রক্ষা করতে হবে কার্বন-মনােঅক্সাইড (CO) থেকে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের নিয়ন্ত্রণহীন প্ৰীক্ষা বব করা দরকর। যান্ত্রিক কোলাহল লাউডস্পিকর ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পৃথিবীতে বহু প্রাণী লুপ্ত হওয়ার পথে। অনেকগুলি লুপ্ত হয়ে গেছে উদ্ভিদেরও তাই দশা। তবু যারা বা যেগুলি আছে তাদের সুরক্ষার দায় এই প্রজনের। নিজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য পরিবেশকে রক্ষা করাই প্রাথমিক ও প্রধান শর্ত নতুন অভয়রণ্য, মৃত্তিকা সংরক্ষণ, বন সংরক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব।
* উপসংহার : প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সখ্যতায় মানুষেরই আখেরে লাভ। কিন্তু যেদিন সেই সখ্যতায় দোষ দেখা দিল সেদিন মানবিক পরিবেশটিও দৃর্ষিত হতে লাগল মানুষের লােভ ও হিংসা উন্নতির কাজকে বাধা দিয়েছে। পৃথিবীর একদিকে যেমন বিপুল সমারােহ, অন্যদিকে তেমনি দারিদ্র্য। এই অসম বিকাশ মনের পরিবেশকে অসুস্থ করে।
ফলে আজকের সচেতন মানুষের নতুন লড়াইয়ের মুখােমুখি হওয়ার পালা। ঘরে বাইরে সর্বত্রই তার নতুন যুদ্ধ। একদিকে পরিবেশকে তার ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতে হবে, অন্যদিকে মানবিক পরিবেশের এই অসাম্য, বৈষম্যকেও দূর করতে হবে। এই দ্বৈত সংগ্রাম যদি জয়ী হয় তবেই অধুনা পৃথিবীর একালের সভ্যতার সংকট থেকে মানুষ মুক্তিলাভ করবে। মানুষ পারলে সব পারে। কেননা মানুষ প্রকৃত্রিই আত্মজ।