পূর্ব ভারতের তাপবিদ্যুৎ শক্তি কেন্দ্র গুলির এক দেশী ভবনের কারণ |
পূর্ব ভারতের তাপবিদ্যুৎ শক্তি কেন্দ্র গুলির এক দেশী ভবনের কারণ |
পূর্ব ভারতের তাপবিদ্যুৎ শক্তি কেন্দ্র গুলির এক দেশী ভবনের কারণ | উত্তর ভারত অপেক্ষা দক্ষিণ ভারতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা ও অসুবিধা | জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগলিক পরিবেশ |
■ ভারতে তাপবিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির পরিচয় দাও। পূর্ব ভারতে তাপবিদ্যুৎ শক্তিকেন্দ্রগুলির একদেশীভবনের কারণগুলি লেখাে।
● ভারতে তাপ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র সমূহ
ভাৱতে শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ ভারতে কয়লার বিশেষ অভাব না থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে প্রধানত কয়লানির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তােলা হয়েছে। অঞ্চল অনু ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি উল্লেখ করা হল—
1, পূর্ব ভারতের উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ: দুর্গাপুর, ফারাক্কা, ব্যান্ডেল, বজবজ, সাঁওতালডি, মেজিয়া, বক্রেশ্বর এবং কোলাঘাট (পশ্চিমবঙ্গ); বােকাতে পাত্রা, চন্দ্রপুরা ও তেনুঘাট (ঝাড়খণ্ড); তালচের, ইব উপত্যকা, আগুল ও রাউরকেলা (ওডিশা); কাহালগাঁও, মুজফফরপুর ও বারাউনি (বিহার । প্রভৃতি।
2. উত্তর-পূর্ব ভারতের উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ: বঙ্গাইগাঁও, কাঠালগুড়ি ও নামরূপ (অসম) প্রভৃতি। 3. উত্তর ভারতের উৎপাদন কেন্দ্র সমূহ: সিংগ্রাউলি, আনপারা, ওবরা ও হরদগঞ্জ উত্তরপ্রদেশ); পানিপথ, গুরু হরগােবিন্দ ও গুরু নানক সে (পাঞ্জাব); বদরপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ (দিল্লি), তাউ দেবী লাল ও ফরিদাবাদ (হরিয়ানা)প্রভৃতি।
4. মধ্য-পশ্চিম ভারতের উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ: কোরবা (ছত্তিশগড়); সাতপুরা, বিন্ধ্যাচল ও অমরকণ্টক (মধ্যপ্রদেশ); চন্দ্রপুর, টুঙ্গে, কোরানি ও নাসিক, ভুসাওয়াল, পারলি (মহারাষ্ট্র); ওয়ানাকবােরি, গান্ধিনগর, উকাই, ধুভাৱান ও সবরমতী (গুজরাত); সুরতগড়, কোটা ও আনত (রাজস্থান) প্রভৃতি।
5. দক্ষিণ ভারতের উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ: নেয়েভেলি, মেত্ত্বর ও তুতিকোরিন (তামিলনাড়); রায়চূড় (কর্ণাটক); রামাগুন্ডাম, বিজয়ওয়াড়া ও কোথাগুডেম (তেলেঙ্গানা-সহ অর্ধপ্রদেশ) প্রভৃতি।
● পূর্ব ভারতে তাপবিদ্যুৎ শক্তিকেন্দ্রগুলির একদেশীভবনের কারণ
বিভিন্ন কারণের জন্য পূর্ব ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির অধিক কেন্দ্রীভবন বা একদেশীভবন ঘটেছে, যেমন—
1. কয়লার সহজলভ্যতা : ১. ভারতের পূর্বাঞ্চল দেশের সর্বাধিক কয়লাসমৃদ্ধ এলাকা
২. পশ্চিমবঙ্গের আসানসােল রানিগঞ্জ, ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, বোেকারাে, করণপুরা, গিরিডি; ওডিশার তালচের, রামপুর প্রভৃতি স্থান কয়লা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
2. বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা: পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওডিশা ও ঝাড়খণ্ড—পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্যই অত্যন্ত জনবহুল। এ ছাড়া, এই অঞ্চলে একাধিক শিল্পাঞ্চল, যেমন—পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শিল্পাঞ্চল, আসানসােল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর-ঘাটশিলা শিল্পাঞ্চল, সিনিবােকারাে ধানবাদ শিল্পাঞ্চল ও মুরি-হাতিয়া শিল্পাঞ্চল, ওডিশার রৌরকেলা শিল্পাঞ্চল অবস্থিত। এর ফলে এই শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
3, অন্যান্য শক্তি সম্পদের অভাব : ১. পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরিত হয় না। ২. পর্যাপ্ত পরিমাণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযােগী খরস্রোতা নদীও এখানে বিশেষ নেই। ফলে কয়লানির্ভর তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
4.ঐতিহাসিক কারণ ইংরেজ শাসনের সময় গড়ে ওঠা ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন নামে বিদ্যুৎ সংস্থার দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতের করা 100 ভাগই হল তাপবিদ্যুৎ। এই সংস্থার অধীনে আছে মূলাজোড়া, কাশীপুর, মেটিয়াবুরুজ, দিশেরগড়, টিটাগড়, বজবজ প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ লে এইসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তি কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্ত শিল্পাঞ্চলের জন্য প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটায়।
5.অন্যান্য সুবিধা ১. এই অঞ্চলে NH-2, 6, 23, 31, 33 প্রভৃতি জাতীয় সড়কপথ এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের মাধ্যমে গড়ে ওঠা উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, ২. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়ােজনীয় দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা এবং 3 শিল্পোন্নয়নের জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রভৃতিও এখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একদেশীভবনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
■ উত্তর ভারত অপেক্ষা দক্ষিণ ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধাগুলি লেখাে। জলবিদ্যুতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব লেখাে।
●উত্তর ভারত অপেক্ষা দক্ষিণ ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগােলিক অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়, যেমন
1. পলিমুক্ত জলপ্রবাহ: উত্তর ভারতের নদীগুলি দীর্ঘপথ কোমল শিলা ও পলি মৃত্তিকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে জলে পলির পরিমাণ বেশি। এর ফলে নদীগর্ভ যেমন দ্রুত পলিভরাট ও অগভীর হয়ে যায়, তেমন যন্ত্রপাতিতে পলি জমে সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির গতিপথের অধিকাংশ অংশ কঠিন শিলাগঠিত অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য নদীগুলির জল পলিমুক্ত থাকে এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা হয়।
2. স্বাভাবিক খরস্রোত : উত্তর ভারতের নদীগুলি বেশিরভাগই সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এগুলিতে স্রোত খুবই কম। অপরদিকে, দক্ষিণ ভারতের ভূমিরূপ বন্ধুর বলে এখানকার নদীগুলি স্বাভাবিকভাবে খরস্রোতা এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে বিশেষ উপযােগী।
3. সুঙ্গী পার্বত্যপ্রবাহ উত্তর ভারতের অধিকাংশ নদী প্রধানত হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে পরে সমভূমির ওপর দিয়ে দীর্ঘপথ প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে নদীর উর্ধ্ব বা পার্বত্যপ্রবাহের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় গতিপথের প্রায় সর্বত্রই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তােলা যায়।
4. শিলান্তরের প্রতি দক্ষিণ ভারতে অপ্ৰবেশ্য শিলাস্তর থাকায় এখানে বিশাল জলাধার নির্মাণ করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে সারাবছর জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্রা সব, কিন্তু উত্তর ভারতে তা সম্ভব নয়।
5. প্রাকৃতিক বিপর্যয় : উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে কিছুটা অস্থিতিশীল ও ভূমিকম্পপ্রবণ। এ ছাড়াও শীতকালে তুষারপাতের সমস্যাও বর্তমান। এর জন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে এইরূপ কোনাে প্রকার বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই।
6. অন্যান্য শঝিসম্পদের অভাব, উত্তর পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা প্রভৃতি রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে কয়লা পাওয়া যায় এবং নিকটবর্তী অসমে খনিজ তেলও কিছু পরিমাণে উত্তোলিত হয়। ফলে কয়লা ও খনিজ তেলের মতাে বিকল্প উৎস ব্যবহারের সহজ সুযােগ থাকায় উত্তর ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অপরদিকে, দক্ষিণ ভারত কয়লাসমৃদ্ধ নয় এবং এখানে খনিজ তেলও উত্তোলিত হয় সামান্য। কয়লা ও খনিজ তেলের এই অভাব দক্ষিণ ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
এইসব কারণে উত্তর ভারতের চেয়ে দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলি থেকে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
●জলবিদ্যুতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
জলবিদ্যুতের অর্থনৈতিক গুরুত্বগুলি হল—1. জলবিদ্যুৎ পুনর্ভব প্রবহমান সম্পদ অর্থাৎ এর উৎস কোনােদিন নিঃশেষিত হবে না। এজন্য বেশি পরিমাণে জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করলে খনিজ তেল ও কয়লার মতাে ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ সংরক্ষণ করা যায়। 2. জলবিদ্যুতের উৎপাদনে পরিবেশ দূষিত হয় না। 3. জলবিদ্যুৎ তুলনামূলকভাবে সস্তা। 4. জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প রূপায়ণের ফলে জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্যচাষ, পরিবহণ প্রভৃতি অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়।
■ অন্যান্য শক্তির উৎসের তুলনায় জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি লেখাে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অসুবিধাগুলি কী কী?
অন্যান্য শক্তির উৎসের তুলনায় জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল—
1. শক্তির অফুরন্ত ভাণ্ডার : জলবিদ্যুৎ হল অফুরন্ত শক্তির ভাণ্ডার, তাই একে বলে প্রবহমান শক্তি (flow energy)। কিন্তু কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম ও থােরিয়াম থেকে প্রাপ্ত শক্তি ক্ষয়িষ্ণু বা সঞ্চিত শক্তি (exhaustible or fund energy)।
2. উৎপাদন ব্যয় কম : জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক কিছুটা বেশি হলেও এর পৌনঃপুনিক ৰা আবির্তক ব্যয় (re:Curriro expenditure) অনেক কম। কিন্তু শক্তির অন্যান্য উৎরে (+ খনিজ তেল) ব্যবহারে প্রাথমিক ব্যর কিছুটা কম হলেও অব। ব্যয় খুব বেশি হয়।
3. পরিবেশবান্ধব : জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় ধোঁয়া, ছাই প্রকৃত বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয় না বলে এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশ দূমি হয় না অর্থাৎ এটি পরিচ্ছন্ন শক্তি। কিন্তু কয়লা বা খনিজ থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় ক্ষতিকর ছাই, ধোয়া প্রতিটি হয়, যা পরিবেশকে দূষিত করে।
4, তাপশক্তির পরিমাণ বেশি : কয়লা ও খনিজ তেলের তুল জলবিদ্যুৎ অধিক তাপশক্তি উৎপাদনে সক্ষম।
5. সহজ পরিবহণযােগ্য : কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি পবিত জন্য রেলপথ, পাইপলাইন বা নলপথের প্রয়ােজন হয়। জলবিদ্যুৎশক্তি সহজেই ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে এক হ্য। থেকে অন্যত্র প্রেরণ করা যায়।
6. শ্রমশক্তির প্রয়ােজন কম : জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে শ্রমশক্তি প্রয়ােজন কম হয়। কিন্তু কয়লা বা খনিজ তেলের ক্ষেত্রে উত্তে। থেকে শুরু করে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন পর্যন্ত প্রচুর শ্রমশ প্রয়ােজন হয়।
7. বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুবিধা : জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পর রূপায়ণের ফলে জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্যচাষ, পরিবহণ প্রতি বহুবিধ অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়।
● জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অসুবিধা
অসুবিধাগুলি হল— অন্যান্য শক্তির উৎসের তুলনায় জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের
1. উৎসের নিকট উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন : কেবল খরাত্রেতা বা জলপ্রপাতের কাছেই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হয় কয়লা ও খনিজ তেল অন্যত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়।
2. সঞ্চয়যােগ্য নয় : জলবিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করা যায় না কিন্তু কাল, খনিজ তেল সঞ্চয় করে রাখা যায়।
3. প্রচুর মূলধন ও উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার অভাব : জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রচুর মূলধন এবং উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়ােজন হয়। যা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। :
4. জীববৈচিত্র্যের বিনষ্টসাধন : জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের হন। নদীতে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করার প্রয়ােজন হয়। এসব নির্মাণের ফলে ভূপৃষ্ঠের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হয় এবং জৈববৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটে।
5. মানুষের পুনর্বাসনগত সমস্যা : জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের বাসস্থান, কৃষিজমি ইত্যাদি হারায়। ফলে এত বিপুল সংখ্যক লােকের জীবিকা ও বাসস্থানে সুবন্দোবস্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
■ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগােলিক পরিবেশ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করাে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকুল ডৌগােলিক গরিবেশ পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-১ প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ২. অপ্রাকৃতিক পরিবেশ।
: জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগােলিক
1. প্রাকৃতিক নিবশ ১. বধুর ভূপ্রকৃতি: নদী খরস্রোতা না হলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। বন্ধুর ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী খরস্রোতা হয় বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযােগী অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ ভারতে বন্ধুর ভূপ্রকৃতির জন্য অনেক বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ২. নিয়মিত ও পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ: নদী অববাহিকায় নিয়মিত ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, নদীতে বরফগলা জলের সরবরাহ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সহায়ক। উত্তর ভারতের নদীগুলি সারাবছর হিমালয়ের বরফগলা জল পায়। আর সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না বলে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত জলসরবরাহের জন্য নদীগুলিতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বড়াে বড়াে জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। ৩. বরফমুক্ত আবহাওয়া ও নাতিতীব্র গ্রীষ্মকাল: প্রচণ্ড ঠান্ডায় নদীর জল জমে যাতে বরফে পরিণত না হয় অথবা গ্রীষ্মকালের প্রখর উত্তাপে নদীর জল যাতে দ্রুত বাষ্পীভূত না হয়, সেজন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বরফমুক্ত আবহাওয়া এবং গ্রীষ্মকাল নাতিতীব্র হওয়া প্রয়ােজন। দক্ষিণ ভারতে এই আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। ৪. বনভূমির অস্তিত্ব: নদীর উৎস অঞ্চলে বনভূমি থাকলে মৃত্তিকাক্ষয় নিয়ন্ত্রিত হয় ও নদীগর্ভ দ্রুত ভরাট হয় না। এ ছাড়া বনভূমি বৃষ্টিপাতকেও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সংলগ্ন অঞ্চলে বনভূমি থাকলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা হয়। ৫. ভূতাত্ত্বিক গঠন: ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে স্থিতিশীল অঞ্চলেই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তােলা হয়। এজন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি থাকা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে, বিশেষত হিমালয় পার্বত্যভূমিতে জলবিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হয়। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে স্থিতিশীল বলে দক্ষিণ ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয়।
2 অপ্রাকৃতিক পরিবেশ ১. মূলধন: পাহাড়ি অঞ্চলে খরস্রোতা নদীর গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য প্রচুর মূলধন বিনিয়ােগ প্রয়ােজন। ২. চাহিদা: উৎপাদন কেন্দ্র থেকে তারের সাহায্যে 500 কিলােমিটারের বেশি দূরত্বে বিদ্যুৎ বণ্টন করা লাভজনক হয় না। আর বিদ্যুৎ সঞ্চয়ও করা যায় না। তাই স্থানীয় বা নিকটবর্তী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকলে প্রচুর টাকা ব্যয় করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা অলাভজনক। ৩. অন্যান্য শক্তির অপ্রাচুর্যতা: দেশে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি শক্তি সম্পদ কম থাকলে বা না থাকলে স্বাভাবিকভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়। এ ছাড়াও ৪. উন্নত যােগাযােগ ব্যবস্থা, ৫.অন্যান্য শক্তি সম্পদের অভাব, ৬. সুলভে দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা, ৭. উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি কারণ গুরুত্বপূর্ণ।
পারমাণবিক শক্তি বলতে কী বােঝ? ভারতে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের বন্টন উল্লেখ করাে। এই শক্তির ব্যবহার লেখাে।
পারমাণবিক শক্তি
, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পরমাণু চুল্লিতে তেজস্ক্রিয় বা পারমাণবিক খনিজের (যথা—ইউরেনিয়াম 235) পরমাণুর বিভাজনের মাধ্যমে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তার সাহায্যে জল গরম করে টারবাইন ঘােরানাে হলে, তখন টারবাইনের সঙ্গে সংযুক্ত জেনারেটার ওই গতিশক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করে। পরমাণু বিভাজনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদিত হয় বলে একে পারমাণবিক শক্তি নামে অভিহিত করা হয়। ইউরেনিয়াম, থােরিয়াম প্লুটোনিয়াম, লিথিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের মােট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় 15% পারমাণবিক শক্তি থেকে আসে। ভারতও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে পিছিয়ে নেই। ভারতে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের বণ্টন
ভারতে যে যে রাজ্যে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলি হল—
রাজ্য উৎপাদন কেন্দ্র মহারাষ্ট্র তারাপুর, জইতাপুর (নির্মীয়মান) তামিলনাড়ু কালপক্কম, কুদানকুলাম রাজধান কোটা, রাওয়াতভাটা কর্ণাটক কৈগা
রাজ্য উৎপাদন কেন্দ্র গুজরাত কাকরাপাড় উত্তরপ্রদেশ নারােরা। অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিভেন্দুলা (নির্মীয়মান)