কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা সহায়ক পাঠ টেকজ সঞ্জীব
কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা সহায়ক পাঠ টেকজ সঞ্জীব
কোনি
মতি নন্দী
কোনি উপন্যাসের বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।দশম শ্রেণীর বাংলা সহায়ক পাঠ
কোনি গল্পের বিষয়বস্তু
কোনি উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু
বিষয়-সংক্ষেপ
কোনি নামের সাঁতারু মেয়েটি উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলেও ক্ষিতীশ সিংহ পাশাপাশি আর-একটি উল্লেখযােগ্য চরিত্র। ক্ষিতীশ কোনিকে প্রথম দেখেছিলেন গঙ্গার ঘাটে বারুণী স্নানের দিন। ওই দিনই গঙ্গার ঘাটে বিষ্ণু ধরের সঙ্গে পরিচয়। বিষ্ণু ধরের শরীর তাে নয় যেন এক চর্বির পাহাড়। ক্ষিতীশ সিংহের একটা ছােটোখাটো ব্যাবসা থাকলেও আসলে জুপিটার নামে এক সাঁতারু ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষকের কাজ ছিল তার পেশা।
ক্লাবে কিছু ক্লাবকর্তা ষড়যন্ত্র করে ক্ষিতীশকে প্রশিক্ষকের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করেন। ক্ষিতীশ কিন্তু প্রশিক্ষক হিসেবে নিষ্ঠাবান, যত্নশীল এবং সত্যিকার সাঁতারু তৈরি করার কাজে খুবই নিয়মনিষ্ঠ। ক্লাব থেকে বহিষ্কার তিনি মেনে নিতে পারেননি। প্রশিক্ষক হিসেবে তার যােগ্যতা প্রমাণের জন্য তিনি কোনি’কে বেছে নেন।
কোনিরা খুবই গরিব। বাপ যক্ষ্মায় মারা গেছে। অনেকগুলি ভাই-বােন। তাদের দারিদ্রের ছাপ কোনির অপুষ্ট চেহারা ও পােশাকের মধ্যে স্পষ্ট। কোনিকে সাঁতার শেখানাের জন্য কোনির বাড়ির লােকের সম্মতি পাওয়ার পর তাকে জুপিটারে ভরতি করতে গিয়ে ক্ষিতীশ বড়াে রকমের ধাক্কা খান। শেষমেষ জুপিটারের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব অ্যাপোেলাের সাহায্য নিতে বাধ্য হন। ক্ষিতীশ।
কোনি উপন্যাস সারাংশ
কোনির সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু করেন ক্ষিতীশ। কোনি এর আগে গঙ্গায় সাঁতার কাটত। এপার-ওপার হতাে। তা থেকে কোনির ধারণা ছিল দু-দিনে শিখে যাবে সাঁতারের কলাকৌশল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ক্ষিতীশের নির্দেশ মতাে কিছুই করতে পারছে না। ক্ষিতীশ হাল ছাড়ার পাত্র নন। কোনির দাদা সাঁতার শিখতে গিয়ে বাড়ির দুরবস্থার জন্য সাঁতার শিখতে পারেনি। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সেই বােনের সাঁতার শেখায় সম্মতি জানিয়েছিল। কিন্তু যক্ষ্মায় অকালে সে মারা গেল। ক্ষিতীশ কোনিকে সে কথা মনে করিয়ে সাঁতারে উদ্বুদ্ধ করতে চাইলেন। কোনিকে ফিতীশ স্ত্রী লীলাবতীর ব্যাবসায় চাকরি দিয়ে। নিজের সংসারে আনিলেন। কোনির পুষ্টির জন্য পুষ্টিকর খাবারের। ব্যবস্থা করলেন। একদিন তার ছেড়ে উঠে পড়ার মতলবে কোনি। সচেষ্ট হতে ক্ষিতীশ লগি পাশ দিয়ে পিটিয়ে মারতে উদ্যত হলেন। এভাবে কঠোর শ্রমে, নিষ্ঠায়া কোনি সাতারে দক্ষ হতে লাগল।
অ্যাপােলাের ছত্রছায়ায় ক্ষিতীশের প্রশিক্ষণ জুপিটারের কর্তা মেনে নিতে পারেননি। জুপিটারের আয়ােজিত রাজ্যস্তরের সাঁতার প্রতিযােগিতায় কোনিকে প্রতিযােগী হিসেবে যােগ দেওয়াতে চাইলেন ক্ষিতীশ। কিন্তু জুপিটার কোনির নাম নানা অজুহাতে এন্ট্রি করল না। প্রতিযােগিতায় ক্ষিতীশ কায়দা করে ওদের সেরা প্রতিযােগী অমিয়া ও বেলার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কোনিকে নামিয়ে দিলেন। প্রতিযােগিতায় কোনি পেল অভূতপূর্ব সাফল্য।
ভারতের জাতীয় স্তরের প্রতিযােগিতার আসর বসল মাদ্রাজে। সেখানে রাজ্যস্তরের প্রতি যােগী নির্বাচনের সময় জুপিটার কোনির নির্বাচন নিয়ে আপত্তি খাড়া করল। শেষ পর্যন্ত আপত্তি খারিজ হলাে বটে, কিন্তু বাংলার সাঁতারু দল মাদ্রাজে হাজির হওয়ার পর জানা গেল জুপিটারের চক্রান্তে কোনি বা কনকচাপা পালের নাম তার অংশগ্রহণ করার চারটি আইটেম থেকে বাদ পড়েছে। কোনি একরাশ অভিমান ও ক্ষোভ নিয়ে গ্যালারি থেকে দর্শক হিসেবে খেলা দেখতে বাধ্য হলাে।
ওদিকে ক্ষিতীশ দলের সঙ্গে আসতে না পারলেও টিকিটবিহীন যাত্রী হিসেবে ট্রেনে চড়ে বসেছিলেন। পথে চেকার ধরে তাকে পুলিশের হাতে দেয়। জাতীয় প্রতিযােগিতার শেষ দিন সাঁতারের শেষ আইটেমের সময় ক্ষিতীশ পাগলের মতাে হতশ্রী অবস্থায় হাজির হন। এদিকে রিলে সাঁতারে আমরা অংশগ্রহণ করতে না পারায় দল কঠিন সমস্যার মুখােমুখি হয়ে পড়ে। বাংলা দলের কর্তারা কোনির শরণাপন্ন হন। কোনি অভিমান ও ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। শেষমেষ বাংলার সম্মান রক্ষার আবেদনে কোনি রাজি হয়। কোনি বাংলাকে দলগতভাবে জিতিয়ে সােনার পদকে শােভিত করে। ক্ষিতীশের প্রশিক্ষণ ও কোনির শিক্ষা, শ্রম ও জয়ী হওয়ার সুতীব্র বাসনা ও নিষ্ঠা ফলবতী হয়।
কোনি বড় প্রশ্ন উত্তর
প্ৰৱ) “ফাইট কোনি, ফাইট”সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকেকী ধরনের ফাইট করতে হয়েছিল, নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি। সমগ্র উপন্যাসে কোনির সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রামের কথা আবর্তিত হয়েছে।
উপন্যাসের শুরুতে গঙ্গার ঘাটে বারুণী উপলক্ষ্যে আম কুড়ােনােকে কেন্দ্র করে কোনির লড়াকু মানসিকতা ফুটে উঠেছে। দরিদ্র অভাবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কোনি প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পিতার মৃত্যুর পর দাদা অভাবী সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করলেও তার অকাল মৃত্যুতে শেষ পর্যন্ত কোনির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। কিন্তু তার লড়াকু মানসিকতার জন্য কোনাে প্রতিকূলতাই তাকে টলাতে পারেনি। নিজের প্রতিভার স্ফুরণে প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের ভূমিকাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখের দাবি রাখে। কোনির জেদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অবিরাম হাঁটা প্রতিযােগিতার মধ্য দিয়ে। তারপর রবীন্দ্র সরােবরে সাঁতার প্রতিযােগিতায় হিয়া মিত্রের কাছে সাঁতারের কৌশল না জানার কারণে পরাজিত হলেও কোনি ভেঙে পড়েনি। পরাজয়ের গ্লানি অতিক্রম করতে পেরেছে।
পরবর্তী সময়ে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের তত্ত্বাবধানে তার সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সংকীর্ণ ষড়যন্ত্রের জন্য জুপিটার ক্লাবে সাঁতার শেখার জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সে ক্লাবে ভরতি হতে পারেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা তার সাঁতার প্রশিক্ষণপর্বে এসে পড়ে। ক্ষিতীশের আপ্রাণ চেষ্টা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনি তার প্রতিভা সকলের সামনে উন্মােচিত করে। স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে নিজের যােগ্যতা ও কৃতিত্ব জানান দিলেও ঘৃণ্য চক্রান্তের সে শিকার হয়। প্রথম হলেও দ্বিতীয় স্থান করা ও প্রতিযােগিতাকালে দু-বার তাকে ডিসকোয়ালিফাই করা। জাতীয় চ্যাম্পিয়ানশিপে মাদ্রাজে গিয়েও । তাকে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়। তাকে না খেলিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। সতীর্থদের কাছে কোনিকে চোর প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনির সাফল্যকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারওর নেই। তাই বিশিষ্ট সাঁতারু অমিয়ার পরিবর্ত প্রতিযােগী হিসেবে নিজের কৃতিত্ব ও প্রতিভার প্রমাণ সে দিয়েছিল। আর এভাবেই কোনি ফাইট করতে হয়েছিল। একজন সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ান হয়ে উঠতে গিয়ে তাকে
প্রশ্ন ।। “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছে?
উওর : স্বনামধন্য ক্রীড়া সাংবাদিক ও সু-সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদের শেষ পঙক্তিটি আলােচ্য অংশে উদৃত। উক্ত উক্তিটির বক্তা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি -কনকলতা পাল।
অ্যাপােলাে ক্লাবে সাঁতার প্র্যাকটিসে না আসায় খোঁজ নিতে গিয়ে ক্ষিতীশ জানতে পারেন সেদিন রাতে কোনির দাদা মারা গেছে। দাদার মৃত্যুতে কোনি শােকবিহ্বল—দিশাহারা হয়ে যায়। ক্ষিতীশের কাছে কোনি তার ভবিষ্যতের প্রতি ইঙ্গিত দিতেই উপরােক্ত উক্তিটি করেছে।
কোনির পারিবারিক দারিদ্র্যে যাতে তার স্বপ্ন ব্যর্থ না হয়, তার জন্য ক্ষিতীশ অসহায় কোনির সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাকে নিজের টেলারিং দোকানে মাসিক চল্লিশ টাকা বেতনে কাজ দিয়েছেন। ক্ষিতীশের বাড়িতেই তার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। নিজের আর্থিক অনটনের মধ্যেও ক্ষিতীশ কোনির জন্য এইসহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কোনিস্বপ্নেমৃত দাদার কাছে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার জেদ ধরলে ক্ষিতীশ তাকে সেখানে বেড়াতে নিয়ে গেছেন। কোনির শারীরিক পুষ্টি বৃদ্ধি ও উৎসাহের জন্য উপযুক্ত খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যের ব্যবস্থা ক্ষিতীশ করেছেন। প্রতিদিন তিনি কোনির জন্য দুটো ডিম, দুটো কলা ও দুটো টোস্ট বরাদ্দ করেছেন। একজন দক্ষ সাঁতারু হিসেবে কোনিকে গড়ে তােলার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন ক্ষিতীশ।
কোনি উপন্যাস বড় প্রশ্ন উত্তর 2023
প্রশ্ন ) দারিদ্রতার বিরুদ্ধে কোনির যে লড়াই তা বর্ণনা করো
: উত্তর : বস্তির অপরিচ্ছন্ন ঘর, প্রবল দারিদ্র্য, বঞ্চনা আর ক্ষুধাকে নিয়ে কনকচাপা পাল ওরফে কোনির বেড়ে ওঠা। গঙ্গায় বারুণী উৎসব উপলক্ষ্যে কঁচা আম ভেসে গেলে সঙ্গীদের সঙ্গে সাঁতার কেটে তা সংগ্রহ করে পথের পাশে দোকানে বিক্রি করে বাঁচার অর্থ নিতান্ত কৈশােরে তাকে জোগাড় করতে হয়। পিতৃহীন দরিদ্র পরিবারে অন্নের সংস্থানের জন্য তাকে কুড়ি ঘণ্টার অবিরাম হাঁটা প্রতিযােগিতায়ও অংশ নিতে হয়।
সাঁতারের কোচ ক্ষিতীশ সিংহের সাহচর্যে বেড়ে ওঠে কোনি। ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতীর দোকানে ঝট দিয়ে, জল তুলে নানারকম ফরমাশ খেটে দুবেলা খাবারের সংস্থান করার পাশাপাশিচল্লিশটাকা মাইনেও পায়। ট্রেনিংয়ের সময় ক্ষিতীশের দেওয়া টাকাও নিজের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের জন্য খরচ করে।
অনেক অবিচার, বঞ্চনাকে অতিক্রম করে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযােগিতায় গিয়েও কর্মকর্তাদের জঘন্য অসহযােগিতায় সে প্রথমে সুযােগ পায় না। সামাজিক অবস্থান ভালাে না হওয়ায় সাঁতার দলের সদস্যরা তাকে চোরের অপবাদ দেয়, কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। অবশেষে ৪×১০০ মিটার রিলেতে দুরন্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে এই জলকন্যা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে গলায় সোনার মেডেল পরে জীবনযুদ্ধেও জয়ী হয়।
প্রশ্ন ।। “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়ােলােক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।”—বক্তা কাকে, কেন একথা বলেছিলেন?
উত্তর : বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ক্রীড়া-সাংবাদিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে নেওয়া প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটির বক্তা ক্ষিতীশ সিংহ। তিনি ধনী ব্যবসায়ী বিশালদেহী বিষ্ণুচরণ ধরের উদ্দেশে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
বারুণী উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে স্নান করতে আসাক্ষিতীশসিংহের সঙ্গে বিশালদেহী বিষ্ণুচরণ ধরের আলাপ হয়। ক্ষিতীশ সিংহ নিজে স্বাস্থ্য সচেতন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। উপন্যাসের কাহিনি। সূত্রে জানা যায় যে, তিনি একজন সাঁতার প্রশিক্ষক। বিষ্ণুচরণ ধরের গঙ্গার ঘাটে দীর্ঘ সময় ধরে মালিশ করানাে দেখে ক্ষিতীশ উপলদ্ধি করেন যে লােকটি মােটেই স্বাস্থ্য সচেতন নন। শরীরের ওজন তিন মন। ফলে দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য সে যে শারীরিক কষ্টের মধ্যে আছে—তা ক্ষিতীশ উপপদ্ধি করে। তাই সেধে আলাপ জমানাে বিষ্ণুচরণ ধরকে ক্ষিতীশ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেন। আর তাই তিনি প্রথমে বিষ্ণুচরণ ধরের রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল-এর মাত্রা জানতে চান। কিন্তু এতে বিষ্টুবাবু তাঁর প্রতি বিরক্ত হন এবং জানান গঙ্গার ঘাটে চান করতে এসেছেন—তিনি যেন চান করেই ফিরে যান। বিষ্টুবাবুর এই কথার সূত্রেই ক্ষিতীশ প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেন।
দশম শ্রেণীর কোনি গল্প বড় প্রশ্ন উত্তর
– প্রশ্ন ।। বুকের মধ্যে—কী পুষে রাখবে? কী কারণে এই পুষে রাখা?
উত্তর : বিখ্যাত ক্রীড়া-সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের নবম পরিচ্ছেদ থেকে আলােচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। কাহিনিসূত্রে জানা যায়, কোনি জীবনের প্রথম বার রবীন্দ্র সরােবরে অনুষ্ঠিত সাঁতার প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে কোনি সেদিন প্রশিক্ষিত রিয়া মিত্রের কাছে পরাজিত হয়। পরাজয়ের গ্লানি আর দাদার কাছে রাখা প্রতিজ্ঞা রাখতে পারার যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে, মনের প্রতিশােধস্পৃহার আগুন জ্বলে। আলােচ্য অংশে মানসিক যন্ত্রণা ও প্রতিশােধস্পৃহা পুষে রাখার কথাই বলা হয়েছে।
একজন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষকের কয়েকটি গুণ থাকা জরুরি—এ কথা জানেন ক্ষিতীশ। আর তাই সাঁতার শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। সাধারণজ্ঞানও খুব জরুরি বলে ক্ষিতীশের মত। একজন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষককে তাই শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা, মনের সুপ্ত বাসনাকে জাগিয়ে তােলার কাজটি করতে হয়। কোনির মনকে বুঝে—তার মতাে করে তাকে গড়ে তুলতে চান ক্ষিতীশ। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মানসিক প্রস্তুতিটা করতে হয় তার প্রশিক্ষককেই। এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানায় – কোনির প্রতিপক্ষ হিয়ার দিদিমণির কাছে জল চেয়ে না পাওয়ায়। ধনীর দুলালি হিয়ার প্রতি কোনির আক্রোশ তৈরি হয়। এই হিয়াই তাে কোনির আগামী দিনের মূল প্রতিপক্ষ। বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। জন্য হিয়াকে পরাজিত করতে হবে। আর তাই দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ এ কথা বােঝেন। হিয়ার প্রতি কোনির আক্রোশ ভবিষ্যতে যে-কোনাে প্রতিযােগিতায় তাকে সফল করে তুলবে। কোনিকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর তাই ক্ষিতীশ শিক্ষার্থী কোনির মনে উক্ত আক্রোশ পুষে রাখার কথা ভাবছেন।
প্রশ্নঃ ।। “ওইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই তাে আমি বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে গৃহীত আলােচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা কোনির ‘ ক্ষিদা’অর্থাৎ, ক্ষিতীশ সিংহ।
কোনিকে চ্যাম্পিয়ান বানানাের জন্য সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহকঠোর থেকে কঠোরতর অনুশীলন,শরীরচর্চা,খাওয়া-দাওয়া, এমনকি কোনির জীবনযাপনের ধারাকেও নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তিনি কোনিকে চ্যাম্পিয়ান করে গড়ে তােলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এর জন্য যন্ত্রণা তাকে কম সহ্য করতে হয়নি। সময়ও তাকে নানা সময় নাস্তানাবুদ করে তুলেছে। ক্ষিতীশ কোনির প্রতিভাকে চিনে নিয়ে তাকে সুশ খল প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সুযােগ্য খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। নানা সময়ে তাঁকে নানারকম প্রতিকুলতারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। দীর্থদিন যে ক্লাবের সদস্য, চিপ ট্রেনার ছিলেন, সেই জুপিটার ক্লাব তাকে ক্লাব থেকে মিথ্যে । নানা অভিযোগে তাভিযুক্ত করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এ যন্ত্রণা বুকের মধ্যে নিয়েই দরিদ্র, অসহায় এক প্রতিভামীকে সাতারু হিসেবে। প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রহ করেছেন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন। হয়ে কোনি যখন নিজের হাণার কথা গর ক্ষিতীশের কাছে ব্যস্ত। করছি তখ• শিষ্যাকে ক্ষিতীশ জানা যণার অন্য নাম তো।
ক্ষিতীশ নিজেই। সুতরাং, তাঁর শিষ্যার যন্ত্রণাটা তারও যন্ত্রণা। যন্ত্রণাটাই তাে তাকে আজ জীবনযুদ্ধে সাফল্যের দোরগােড়ায় পৌছে দিয়েছে।
প্রশ্ন ।। “অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।”—কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখাে।
| উত্তর : মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযােগিতায় কোনিকে বাংলা দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাস। সাঁতারের প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের প্রতি বিরূপ মনােভাব পােষণ করা জুপিটারের সদস্যরা কোনিকে নির্বাচিত করতে চাননি ক্ষিতীশের কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বলে। হিয়া মিত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনির পক্ষ যে হিয়ার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু নেবেন তা তারা ভাবতেও পারেননি। কোনিকে বাদ দিতে চাওয়া ধীরেন ঘােষ স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে কোনির আচরণের উল্লেখ করেন। যদিও কর্মকর্তারা চক্রান্ত করে দুটি ইভেন্টে কোনিকে ডিসকোয়ালিফাই করেন ও একটি ইভেন্টে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও তা মেনে নেননি। প্রণবেন্দু এই অবিচারের উল্লেখ করে কোনিকে বাংলা দলে নিতে চাইলে ক্রুদ্ধ ধীরেন ঘােষ টেবিলে ঘুষি মেরে কোনিকে বাংলা দলে না নেওয়ার কথা পুনরুচ্চারণ করেন। কিন্তু নাছােড়বান্দা প্রণবেন্দু বলেন, কোনিকে বাদ দিলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সুইমারদের তিনি দলভুক্ত করবেন না, তাদের উইথড্র করবেন।
প্রণবেন্দুর এই প্রস্তাব যে কখনােই সম্ভব নয় তা সবাই জানতেন। মূলত প্রণবেন্দু বিশ্বাসের একক লড়াইয়ের জন্য কোনি বাংলা সাঁতার দলে অন্তর্ভুক্ত হলাে। ধীরেন ঘােষ নীচ মনের পরিচয় দিয়ে প্রণবেন্দুর ব্যক্তিস্বার্থের উল্লেখ করলে প্রণবেন্দু বলেন মহারাষ্ট্রের রমা যােশিকে প্রতিহত করার জন্যই তিনি কোনিকে দলে চান, অন্য কোনাে স্বার্থ সেখানে নেই।
কোনি দশম শ্রেণী
প্রশ্ন ) ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যােগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও।
উওর : প্রখ্যাত ক্রীড়া-সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দীর ‘কোনি উপন্যাসের প্রধান চরিত্র যদি হয় কোনি ও ক্ষিতীশ, তাহলে এই দুই। চরিত্রকে ধারণ করেছে ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতী। সে ক্ষিতীশের। কেবল মেরুদণ্ড হিসেবেই কাজ করেনি, সমগ্র উপন্যাস জুড়ে এক প্রখর ব্যক্তিত্ব ও নিজস্বতারও ছাপ স্পষ্ট করে রেখেছে। আসলে উপন্যাসে স্বল্পসংখ্যক চরিত্রের মধ্যে লীলাবতী চরিত্রটি উজ্জ্বল ও সক্রিয় তথা প্রাণচঞ্চল।
স্বামী ক্ষিতীশের যােগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোনির সাফল্যে ক্ষিতীশের ভূমিকা অবিসংবাদিত হলেও লীলাবতীর নীরব সম্মতির কারণেই তা সম্ভবপর হয়েছে। ক্ষিতীশ একজন দক্ষ, সৎক্রীড়া প্রশিক্ষক। তাঁর আবেগ, তাঁর বিশ্বাস, তাঁর ইচ্ছার মর্যাদাদানে লীলাবতী কোনাে কার্পণ্য করেনি। স্বামীর স্বপ্ন—কোনিকে দক্ষ সাঁতারু হিসেবে তৈরি করা। স্বামীর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সংসার বিমুখ সাঁতার পাগল ক্ষিতীশের অনুপস্থিতিতে সংসারের হাল ধরেছে। স্বামীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের টেলারিং-এর দোকানে অভাবী কোনিকে ঠাই দিয়েছে। কারণ সে জানে ক্ষিতীশের লক্ষ্যপূরণের হাতিয়ার কোনি। দারিদ্রক্লিষ্ট কোনির জন্য সে আর্থিক সহযােগিতা পরােক্ষভাবে করেছে। স্বামী ক্ষিতীশের কোনির জন্য সময় ব্যয় করার পিছনে লীলাবতীর প্রচ্ছন্ন সায় ছিল। সমগ্র উপন্যাসে লীলাবতী স্বামী ক্ষিতীশের যােগ্য সহধর্মিণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
প্রশ্ন ।। ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানাের জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার পরিচয় দাও।
বাধ্য করেন। উত্তর : মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে প্রধান চরিত্র কনকচাঁপা গেল ওরফে কোনিকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষক ক্ষিতিশ সিংহরে চেষ্টার অন্ত ছিল না। বস্তির দরিদ্র মেয়ে কোনির মধ্যে যথার্থ সুইমারের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছিল কোচ ক্ষিতীশ সিংহ। কঠিন প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে কোনিকে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু বানানাের লক্ষ্যে অবিচল ক্ষিতীশ। দাদার অকাল মৃত্যুর পরে কোনির পাশে প্রিয় কোচ ক্ষিদা যেমন দাঁড়ান তেমনই দারিদ্র্যজনিত অপুষ্টির । হাত থেকে কোনিকে রক্ষা করার জন্য তার পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেন। তবে অনুশীলনের সময় এই ক্ষিতীশ আবার নির্মম। প্রবল ক্লান্তি গ্রাস করায় সাঁতার কাটতে কাটতে কোনি কাতর কণ্ঠে বলেন- পায়ে পড়ি ক্ষিদা, আর আমি পারছি না। কিন্তু ক্ষিতীশ কোনাে অজুহাত শুনতে চান না। কখনও ঢিল ছুড়ে, কখনও বাঁশের লগা দিয়ে আঘাতের ভয় দেখিয়ে তিনি কোনিকে অনুশীলনে সুইমিং পুলের প্লাটফর্ম ধরে কোনি মুখ বুজে কাদলে ও পাথরের মতাে মুখ নিয়ে ক্ষিতীশ সিংহ দাঁড়িয়ে থাকে। কোনি যাতে জল থেকে না ওঠে সেজন্য বাঁশের লগা হাতে ক্ষিতীশ সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কোনি হা হা করে বাতাস গেলে। কিন্তু প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ কোনির প্রতিভাকে আরও শানিত করার জন্য অনুশীলনে কঠোর থাকেন।
প্রশ্ন ।। দারিদ্র ও অপমান কোনির চরিত্রকে কীভাবে গড়ে দিয়েছে লেখাে।
উত্তর : কবি নজরুল বলেছেন—হে দারিদ্র্য, তুমি মােরে করেছ মহান। জীবনে দারিদ্রের প্রভাব অমােঘ। অপমানও মানুষের চরিত্রকে অব্যর্থ করে তােলে। দারিদ্র্য ও অপমান কোনিকে অটল, অদম্য, অপরাজেয় করে তুলেছে।
গঙ্গায় কোনির আম কুড়ানােয় দারিদ্র্য আছে। প্রাপ্য আম আদায়ে ও মারামারিতে প্রাপ্য মর্যাদা আদায়ে কোনি সফল। ২০ ঘণ্টা হাঁটা প্রতিযােগিতা শেষ করে সে মর্যাদা পেয়েছে। এক মাইল সাঁতার প্রতিযােগিতাও সম্পূর্ণ করে যথার্থ প্রতিযােগী হয়েছে। বিদ্রুপে কোনি অপমানিত। জুপিটারে ভর্তি না-নেওয়ায়ও অপমানিত।
অঢেল কষ্ট মেনেও কঠোর থেকে কঠোরতর প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে। ক্ষিদা’র আর্থিক ও মানসিক সাহায্য নিয়েছে, সেই দারিদ্র্যের। জন্যই। সেজন্যই লীলাবতীর দোকানে কাজ করেছে এবং অমিয়ার।
‘ঝি’-মন্তব্যও সহ্য করেছে। গরিবদের প্রতি বড়ােলােকেদের ঘেন্না সে বুঝে গেছে।
জুপিটারের প্রতিযােগিতায় অমিয়াকে হারিয়ে অপমানের শােধ নিয়েছে। চিপক-পরিবেশে কোনিকে গরিব, দেখতে খারাপ, নিরক্ষর, কারওর কথা না-বলা ও চোর-অপবাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র কথা শুনিয়েছে। ভণ্ডদের মুখােশ খুলে দিয়েছে। সাঁতার বেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন করে অভিনন্দন কুড়িয়েছে।
প্রশ্ন ) কোনির সাঁতারু জীবনের প্রেরণা ক্ষিদ্দা’আলােচনা করাে।
অথবা, ফিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল সে সম্পর্কে আলােচনা করাে।
উত্তর: বছর পনেরাে-ষােলাের ঘাের কালাে লিকলিকে শরীরের অতি গরিব ডানপিটে মেয়ে কোনি। সে গঙ্গায় খেলাচ্ছলে ১ সাঁতার কাটে, মারপিট করে, খুনসুটি করে। দৈবাৎ তীক্ষ্ণ সাঁতার প্রশিক্ষক ‘ ফিদ্দার নজরে আসে সে। এদিকে নিজের ক্লাবে মুখ্য প্রশিক্ষকের পদ থেকে চক্রান্তে একরকম বহিষ্কৃত হন তিনি। তাই ক্লাবের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ।
ক্ষিদার একমুখী বােধ, ট্যালেন্ট জন্মায় না। তাকে খুঁজে আনতে হয়, গড়ে তুলতে হয়। কোনি সেই গুড মেটিরিয়াল’। তার জেদ, কোনিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণে ভারত সেরা করে প্রতিপক্ষকে জবাব দেবেন। কিন্তু কোনি বস্তির দরিদ্র মেয়ে। খাবার, কস্টিউম, তােয়ালে পর্যন্ত তার নেই। তার অভিমান আছে, জেদ আছে। একদিকে তার ভাগ্যহত জীবন, অন্যদিকে সীমিত আর্থিক অবস্থা ও প্রবল প্রতিপক্ষতা সত্ত্বেও, ফিদ্দা তার কঠোর অনুশীলনে, সােহাগে ও যাবতীয় উজ্জীবিত নীতি-উপদেশে তাকে ইস্পাত-কঠিন করে তুলেছেন। কোনিও শিল্পীর হাতের শিল্প হয়ে গিয়েছে।
অতএব কোনির জীবনের সমস্ত প্রেরণা তথা কেন্দ্রবিন্দু শ্রদ্ধেয় ক্ষিদা। ক্ষিদার প্রেরণাতেই সাঁতারু কোনির ভারত বিজয়।
কোনি উপন্যাস দশম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ।। ‘কোনি’ উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দীর ‘কোনি উপন্যাসে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ একটি উল্লেখযােগ্য ও অন্যতম প্রধান চরিত্র। উপন্যাসের শুরু থেকেই তার বুদ্ধিমত্তার। সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটে। ধনী বিষ্ণু ধরের নির্বুদ্ধিতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের কার্যসিদ্ধি করেছেন।
জুপিটার ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযােগিতার বাইরে থেকেও কোনি গতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অমিয়াকে হারাতে পারে, সেই কৌশলও সম্ভব—ক্ষিতীশের মতাে প্রখর বুদ্ধিমান ব্যক্তির।
ক্ষিতীশ নিজেই। সুতরাং, তাঁর শিষ্যার যন্ত্রণাটা তারও যন্ত্রণা। যন্ত্রণাটাই তাে তাকে আজ জীবনযুদ্ধে সাফল্যের দোরগােড়ায় পৌছে দিয়েছে।
ক্ষিতীশ পয়ত্রিশ বছরের একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ছিলেন। তার টু-চোখে সেই অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ছাপ উপন্যাসের সমস্ত অংশ জুড়ে রয়েছে। কোনির প্রতিভাকে তাই চিনে নিতে তিনি ভুল করেননি।
কোনির সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে তাকে নানাভাবে অপমানিত হতে হয়েছে, নানা বাধারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি। অদম্য জেদ নিয়েই বাংলার সাঁতারু কোনিকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন।
– একজন যথার্থ গুরু ছিলেন ক্ষিতীশ। অভাবী সংসার হওয়া সত্ত্বেও কোনির সাঁতার শিক্ষার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। পিতৃহীনা কোনির পিতার অভাব মিটিয়েছেন তিনিই। যথার্থ গুরুর মতাে দার্শনিক প্রজ্ঞায় ঋদ্ধ ক্ষিতীশ। কোনিকে জীবনের সঠিক পথ দেখানাের কাজ করেছেন তিনি। জীবনে দুঃখ আসবে, যন্ত্রণা আসবে-তারপর সে দুঃখ ও যন্ত্রণা ছাপিয়ে একদিন আসবে সাফল্য-এই দার্শনিক সত্যকে যথার্থ গুরুর মতােই ক্ষিতীশ শিক্ষার্থী কোনির অন্তরে জাগিয়ে তুলেছেন।
প্রশ্ন ।। “এটাই ওকে উত্তেজিত করে বােমার মতাে ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে।” –কার মনে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : কোনিরসাঁতারপ্রশিক্ষকক্ষিতীশসিংহেরমনে এমন ধারণা হয়েছিল।
কোনিকে নিয়ে একদিন ঘুরতে বেরিয়ে ক্ষিতীশ চিড়িয়াখানার পুকুর ধারে এসে বসেছেন। এই সময় মেয়েদের স্কুলের তিরিশ জনের মতাে মেয়ে সামান্য দূরে এসে উপস্থিত হয়। দারােয়ান বাবার এগিয়ে দিলে তারা হৈ হৈ করে খেতে শুরু করে। এই সময় কোনি ড্রামের কাছে দাঁড়ানাে এক টিচারের কাছে জল চাইতে গিয়ে অপ্রতিভ হয়ে ফিরে আসে। ক্ষিতীশকে এসে জানায় বড়ােলােকদের মেয়েদের স্কুল বলে তারা জল দিল না।
তারা যখন কল থেকে জল আনতে যায় তখন হাতে জলে ভরতি দুটি প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে হিয়া মিত্র নামের এক ছাত্রী ছুটে আসে। টিচার মিস নন্দীর আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে একটা গ্লাস যখন কেনির দিকে এগিয়ে দেয় তখন কোনি সে গ্লাস হিয়ার থেকে ফেলে দেয়। সাতার প্রতিযােগিতায় হিয়ার কাছে এর আগে হেরে যাওয়া কেনির এই ভয়ানক আক্রোশ তাকে পরবর্তীকালে জিততে সাহায্য প্রবে বলে ক্ষিতীশের মনে হয়।
কোনি উপন্যাস
প্ৰশ্ন।। “ক্ষিতীশ এরপর কোনির ট্রেনিং আরও কঠিন করে তুলল।” –ক্ষিতীশ কে? তিনি কেন ট্রেনিং কঠিন করে তুললেন?
উত্তর : ক্ষিতীশ সিংহ হলেন সাঁতারের প্রশিক্ষক। তিনি কোনিকে সাঁতারের নানা বিষয় শেখান।
বস্তির হতদরিদ্র মেয়ে কোনির মধ্যে ক্ষিতীশ সিংহ প্রতিভার দ্যুতিকেই দেখেছিলেন। নিজের হাতে অতি যত্নে সাঁতারের নানা কলাকৌশল তিনি কোনিকে শেখাতেন। প্রচুর অনুশীলনের মাধ্যমে কোনিকে তিনি অসাধারণ এক সুইমার বানাতে চান।
একদিন খবরের কাগজের একটি প্রতিবেদন দেখে ক্ষিতীশ তা কেটে নিজের কাছে রেখে দেন। বােম্বাইতে অনুষ্ঠিত মহারাষ্ট্র স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে রমা যােশি নামে এক সুইমার ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে এক মিনিট বারাে সেকেন্ড সময় নিয়ে রেকর্ড করেছে। প্রতিবেদনে তা জেনে ক্ষিতীশ কোনির অনুশীলনকে আরও কঠিন করে তােলেন। কোনি যাতে তার টাইমিং আরও উন্নত করতে 1 পারে। সেজন্য কঠিন হয় অনুশীলন। এমনকি শীতের সময় যখন জলে কেউ নামে না তখনও দুবেলা কোনির অনুশীলন চলে। কোনি যাতে রমা যােশিকে হারিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সুইমার হতে পারে সেজন্য তার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ অনুশীলনকে কঠিনতর করে তােলেন।
প্রশ্ন ) “চিরকাল যেন তাকেঅতৃপ্ত থেকে যেতে হবে।” ‘তাকে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তাকে অতৃপ্ত থেকে যেতে হবে কেন?
উত্তর : ‘তাকে’ বলতে সাঁতারের প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের কথা বলা হয়েছে।
ক্ষিতীশ অনেক অপমান, অনেক কষ্ট নিয়ে কোনিকে তিলতিল করে পরিপূর্ণ এক সুইমারে রূপান্তরিত করছিলেন। কোনির মধ্যেই নিজের স্বপ্ন, সমস্ত অপমানের জবাব দেওয়ার পথ খুঁজে নিতে চান। অমিয়া নামের বাংলার সেরা মহিলা সুইমার বলেছিল ক্ষিতীশ সিংহের হাতে তৈরি কোনিকে পা ধােওয়া জল খাওয়াবে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ানশিপে ব্যাক স্ট্রোকে সােনা জেতা অমিয়াকে হারিয়ে সমস্ত অপমানের প্রতিশােধ নিতে চান ক্ষিতীশ।
ধীরেন ঘােষের মুখে ক্ষিতীশ শুনলেন অমিয়ার এটাই শেষ মরসুম। এরপর বিয়ে করে সে কানাডায় চলে যাবে। এই সংবাদ ক্ষিতীশকে সচকিত করে তােলে। কারণ তার হাতে গড়া কোনি যদি এবার অমিয়াকে না হারায় তবে তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ এরপর কোনাে কিছুতেই তৃপ্ত হতে পারবেন না। উদ্ধত অমিয়াকে কোনির মধ্যে দিয়ে
যথোচিত শিক্ষা দিতে না পারলে তার প্রশিক্ষক সত্তা কখনো তৃপ্তি খুজে পাবে না। চিরকাল এক অব্যক্ত যন্ত্রণাকে বয়ে বেড়াতে হবে।