কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ
কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ
কারক চেনার সহজ উপায়
৫. অপাদান কারক
অপাদান কারক কাকে বলে
তিলে তৈল হয়। চোখে ধারা বয়। ছেলেরা স্কুল পালিয়ে খেলা করছে। তিনি পাঠে বিরত হলেন। মৌমাছিরা ফুলে মধু সংগ্রহ করে।
উপরের বাক্যগুলিতে যথাক্রমে—তৈল কোথা থেকে উৎপন্ন হয়— এই প্রশ্নের উত্তর আসে ‘তিলে’ অর্থাৎ তিল থেকে ; কোথা থেকে ধারা বয়—উত্তরে আসে—‘চোখে’
অর্থাৎ চোখ থেকে ; কোথা থেকে পালিয়ে খেলা করছে—উত্তরে আসে—স্কুল’ অর্থাৎ স্কুল থেকে ; মধু সংগ্রহ কোথা থেকে করে—উত্তরে আসে—ফুলে’ অর্থাৎ ফুল থেকে এই পদগুলি পাওয়া যায়।
এখানে সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে ঘটনাগুলি ঘটছে কোনো কিছুর থেকে—যেমন তিল থেকে তেল উৎপন্ন, চোখ থেকে ধারা বওয়া, স্কুল থেকে পালানাে, ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ। এক্ষেত্রে প্রধান ক্রিয়াপদকে ধরে—‘কোথা থেকে’, ‘কী থেকে’, ‘কীসের থেকে প্রশ্ন করলে অপাদান-পদ বা অপাদানকারক পাওয়া যায়।
কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ
অপাদান কারক : যার থেকে কোনাে বস্তু বা ব্যক্তির বিচ্যুতি, উৎপন্ন, স্বালন, নির্গত, পতিত, নিঃসৃত, গ্রহণ, অপসারণ ইত্যাদি বােঝায় তাকে বলা হয় অপাদান পদ বা অপাদান কারক।
অপাদান কারকের প্রকারভেদ
অপাদান কারকের জটিল প্রকারভেদে না গিয়ে প্রচলিত ও সহজবােধ্য কয়েকটি দিক উল্লেখ করা যায়। কেননা এই প্রকারভেদগুলি জানলে অপাদান কারক চিহ্নিত করা অনেকটাই সহজ হবে।
১. আধার বা স্থানবাচক অপাদান ঃ যখন কর্তা কর্ম সম্পাদন করে কোনাে স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তখন যে-স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সেই স্থানকে স্থানবাচক অপাদান বলে।
যথা ঃ সে ছাদ থেকে পড়ে গেল। টাকাটা পকেট থেকে পড়ে গেছে।
২. কালবাচক অপাদান : অপাদান-পদটি যখন কোনাে সময় বা কালকে নির্দেশ করে তখন তাকে কালবাচক অপাদান বলে। এক্ষেত্রে কর্তার স্থানচ্যুতি ঘটে না।
যথা ঃ রাত্রি দশটা থেকে পড়ে চলছে। সকাল থেকে আকাশে মেঘ জমেছে।
৩, অবস্থান বাচক অপাদান ঃ কর্তা যখন কোনাে স্থানে অবস্থান করে কর্ম সম্পাদন করে তখন সেই অপাদান-পদটিকে বলা হয় অবস্থান বাচক অপাদান। এক্ষেত্রে কর্তার থানচ্যুতি ঘটে না।
যথাঃ জাহাজ থেকে দূরবীন দিয়ে দেখছে। পাহাড় থেকে চারজনকে চলে যেতে
৪. তারতম্য বাচক অপাদান : বাক্যে যে তাপাদানপদ দ্বারা তুলনা বা তারতম্য বােঝায় ত৫ে বলে তারতম্য বাচক অপাদান।
যথাঃ শ্যামের চেয়ে অমল বয়সে ছােটো। স্বর্গের চেয়ে জন্মভূমির গৌরব বেশি। প্রাণের অপেক্ষা প্রিয় আর কী আছে?
অপাদান কারকে বিভক্তির প্রয়ােগ
(0) শূন্য বিভক্তির প্রয়োগ
ট্রেন হাওড়া (০) ছাড়ল। করিলাম না শ্ৰীবৃন্দাবন (০) বারেক আসিব ফিরে’। গতমাসে আমরা গয়া (0) ঘুরে এলাম। ছাত্রদের স্কুল (0) পালিয়ে সিনেমা দেখা উচিত নয়। গত সপ্তাহে বাবা বনগাঁ (0) ঘুরে এলেন।
এ (য়) বিভক্তির প্রয়ােগ ?
এ মেঘে (এ) বৃষ্টি হবে না। দুধ (এ) দই হয়। কুকর্মে (এ) বিরত হও। ঠাকুরমার মুখে (এ) অনেক গল্প শুনেছি। নর্দমায় (য়) গ্যাস উঠেছে। অর্জুন জননী কণ্ঠে (এ) এ কী শুনিলাম। বীজে (এ) গাছ জন্মায়। জলে (এ) বাপ হয়। বিপদে (এ) মােরে রক্ষা কর এ নহে মাের প্রার্থনা।
তে (এতে) বিভক্তির প্রয়ােগ ।
আমার চক্ষুতে (তে) জলধারা বহিতে লাগিল। তিলেতে (এ তে) তেল হয়। খনিতে (তে) কয়লা তেমন উঠছে না। সবার মুখেতে (এ তে) ঐ একই নিন্দা শুনেছি। আজকাল ওর কলমেতে (এ তে) ভাল লেখা তেমন বেরুচ্ছে না। আমি এক থালাতে (তে) খেতে পারব না। দুধেতে (এতে) ছানা হয়।
র (এর) বিভক্তির প্রয়ােগ
কখনাে কখনাে র (এর) বিভক্তির যােগেও অপাদান কারক হয়। ওর ভূতের (এর) ভয় নেই। যেখানে বাঘের (এর) ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। রতন বাবার (র) ভয়ে ঘরে ঢুকছে না। বাঘার (র) ভয়ে আত্মারাম খাঁচায়।
অপাদান কারকে অনুসর্গের প্রয়ােগ
তিল হইতে তৈল হয়। বীজ হইতে গাছ জন্মায়। ফুলটি গাছ থেকে খসে পড়ল। চোখ দিয়ে জল পড়ছে কেন? কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাকে ছাদ থেকে নামতে দেখেছি। বাঁশের চেয়ে কঞি শক্ত। গা দিয়ে ঘাম ঝরছে। অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশে। বাড়ি থেকে করা যাক। ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন’।
৫. অধিকরণ কারক
অধিকরণ কারক কাকে বলে
সে রােজ সন্ধ্যাবেলা পড়তে যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়। কলশিতে জল আছে। রাজীব অঙ্কে ভালাে। ছেলেরা মাঠে বল খেলে।
উপরের বাক্যগুলিতে যথাক্রমে কখন পড়তে যায়—উত্তরে আসে—সন্ধ্যাবেলা’ ; কোন্ সময়ে বৃষ্টি হয়—উত্তরে আসে বর্ষাকালে’; কোথায় জল আছে—উত্তরে আসেকলশিতে’ ; কোন্ বিষয়ে ভালো—উত্তরে আসে—অঙ্কে’ ; কোথায় খেলে—উত্তরে আসে—মাঠে। –
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন বাক্যে যে যে আধারে ক্রিয়াটি ঘটছে তা হল যথাক্রমে ‘সন্ধ্যাবেলা’, বর্ষাকালে’, ‘কলশিতে’, ‘অকে’ ও ‘মাঠে’ এবং এও বােঝা যায় কোনােটা বিষয়গত, কোনােটা পাত্র বা থানগত, কোনােটা কালগত। ক্রিয়ার আধার বলতে দেশ (থান, পাত্র), কাল ও বিষয়কে বােঝায়। এই আধারগুলির সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে বলা হয় অধিকরণ-সম্পর্ক বা অধিকরণ-পদ। আবার এই অধিকরণ-পদেরই হয় অধিকরণ কারক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ক্রিয়াপদকে ধরে কোথায়, কখন, কীসে করে, কোন বিষয়ে প্রশ্ন। করে উত্তরে অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
অধিকরণ কারক : যে আধারে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে বলে অধিকরণ পদ এবং তাকেই বলে অধিকরণ কারক।
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ
অধিকরণ-কারককে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়—(১) দেশাধিকরণ (স্থান ও পাত্র), (২) কালাধিকরণ, (৩) বিষয়াধিকরণ।
১. দেশাধিকরণ : প্রধানত স্থান ও পাত্রকে কেন্দ্র করে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে এই অধিকরণ গড়ে ওঠে। ক্রিয়াপদকে কোথায় প্রশ্ন করে উত্তরে এই অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
যথা ঃ আজ শহরে জল নেই। সে কলকাতায় থাকে। জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। চোখে জল আসে।
২. কালাধিকরণ : প্রধানত সময় ও কালকে কেন্দ্র করে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে এই অধিকরণ গড়ে ওঠে। ক্রিয়াপদকে কখন, কবে প্রশ্ন করে উত্তরে এই অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
যথা ঃ ছেলেবেলা অনেকেই স্বপ্ন দেখে। সে বিকেলে মাঠে খেলছে। গতকাল বাবা বাড়ি ফিরেছেন।
৩. বিষয়াধিকরণ : প্রধানত বিষয়কে অবলম্বন করে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে এই অধিকরণ কারক গড়ে ওঠে। ক্রিয়াপদকে কীসে’ বা ‘কোন্ বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তরে এই অধিকরণ কারক পাওয়া যায়।
যথা : পড়াশােনায় মন দিও। সে ব্যাকরণে দুর্বল। তর্করত্নমশাই ন্যায়শাস্ত্রে পণ্ডিত।
কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ
অধিকরণ কারকে বিভক্তির প্রয়ােগ
(0) শূন্য বিভক্তির প্রয়ােগ
• হাওড়া (0) পৌছােল। বাড়ি (০) বসে কাজ করা ভালো। সােমবার (0) তােমাদের বাড়ি যাব। পরকালের কর্ম বাড়ি (0) বসে করা যায়। সন্ধ্যাবেলা (0) কীর্তন হবে। পরের দিন (০) উৎসব তারস্ত হবে।
এ (য়) বিভক্তির প্রয়ােগ
সে সকালে (এ) সে। তার মাথায় (!) চুল নেই, গায়ে (এ) মাংস নেই। আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে (এ)। তিলে (এ) তৈল হয়। শরৎকালে (এ) দুর্গা পূজা হয়। অনেকক্ষণ বাহির দুয়ারে (এ) পঁড়িয়ে আছি। ওর মানসিকতায় (!) রয়েছে ধর্মের বীজ, দূরে দূরে (এ) গ্রাম দশ বারাে খানি’। সুরলােকে (এ) বাজে জয় শ’। ঐ গঙ্গায় (য়) ডুবিয়াছে। হায় ভারতের দিবাকর। ফেনাইয়া উঠে বণ্ডিত বুকে (এ) পুঞ্জিত অভিমান’। সে বাংলায় (য়) কঁাচা। পার্থ লেখাপড়ায় (য়) ভালাে, খেলাধুলায় (য়) ভালাে নয়। পায়ের তলায় (য়) মূৰ্ছে তুফান।
তে (এতে) বিভক্তির প্রয়োেগ ?
এত রাত্রিতে (তে) এসেছো কেন? সমাজে (এ) খুব কম সৎ লোক বাস করে। ঘরেতে (এ তে) ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে। আজকের পৃথিবীতে (তে) চলছে সন্ত্রাসের তান্ডব। বুঝি ওর পড়াশুনাতে (তে) মন লাগে না। সব জিনিস গাড়িতে (তে) তুলে দাও। এসাে নদীতে (তে) স্নান করা যাক। ফাকি দিয়ে উঁচুতে পৌছােনাে যায় না। অহংকারে (এ) যে পতনের বীজ ছিল তা বােঝা যায়। মনেতে (এ তে) জমেছে ব্যথা হৃদয় উদার। রসিদ মিঞা লাঠি খেলাতে (তে) ওস্তাদ। রাতেতে (এ তে) মশার জ্বালায় ঘুমােনাে যায় না। বৃষ্টি পড়ে টুপুর টাপুর জয়েতে (এ তে) এলাে বান।
কে বিভক্তির প্রয়ােগ :
অধিকরণে ‘কে’ বিভক্তির প্রয়ােগ যথেষ্ট সীমিত। তবে হয় না একথা বলা যায় না, প্রধানত কবিতায় ও পুরােনাে গদ্যরীতিতে এর কিছু প্রয়ােগ দেখা যায়।
যথা ঃ আজিকে (কে) যতেক বনস্পতির ভাগ্য দেখিযে মন্দ, কালিকে (কে) আসিও দ্বারে, দেব কিছু প্রাণ ভরে।
অধিকরণকারকে অনুসর্গের প্রয়ােগ
অধিকরণ কারকে অনুসর্গের ব্যাপক ব্যবহার না থাকলেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন বাক্যবিন্যাসে অনুসর্গের প্রয়ােগ দেখা যায়।
যথা : ঘরের মধ্যে অনেক লােক বসে আছে। ওর মনের মধ্যে কী আছে জানি না। মাথার উপরে মধ্যাহ্নের তপ্ত সূর্য। গঙ্গার পাশে বাস করছে বন্যা তাে সঙ্গী।
৬. নিমিত্তকারক
নিমিত্তকারক কাকে বলে
সে শুধু পাশের জন্য পড়ছে। বসু পরিবার তীর্থের জন্য পুরী যাত্রা করিলেন। মিত্র মশাই স্নানের নিমিত্ত গঙ্গায় যাত্রা করিয়াছেন। দাদা ভায়ের সন্ধানে বেরিয়েছে।
উপরের বাক্যগুলিতে যথাক্রমে—পড়ছে কীসের জন্য—উত্তরে আসে-পাশের জন্য’; পুরী যাত্রা করলেন—কী অভিপ্রায়ে—উত্তরে আসে—- -তীর্থের জন্য’; গতায় যাত্রা করলেন—কিসের জন্য—উত্তরে আসে—মানের নিমিত্ত ; কিসের জন্য বেরিয়েছেউত্তরে আসে—‘ভাইয়ের সন্ধানে। –
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাক্যগুলিতে ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে বিশেষ একটা আকাঙক্ষা বা ইচ্ছাপূরণের জন্য এবং এই আকাঙক্ষা কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য।
নিমিত্তকারক : বাক্যের মধ্যে যার জন্য আকাক্ষা বা ইচ্ছা প্রকাশ পায় তাকে বলে নিমিত্ত। যে বিশেষ বা সর্বনাম পদ এই নিমিত্তের নির্দেশ করে তাকে বলা হয় নিমিত্ত পদ বা নিমিত্ত কারক।
উaখ্য যে নিমিত্ত কারকে বিভক্তির চেয়ে অনুসর্গের প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রধানত নিমিত্ত করিকে ‘এ’ ও ‘কে’ বিভক্তির প্রয়ােগ হয়। তবে আধুনিক বাংলা ‘কে’ বিভক্তির প্রয়ােগ নেই বললেই চলে।
নিমিত্ত কারকে বিভক্তির প্রয়োগ
কে বিভক্তির প্রয়ােগ
অর্থ উপার্জনে (এ) এই প্রথম মুম্বাইয়ে এসেছি। মনস্থ করেছি আগামি মাসে তীর্থে (এ) যাব। দুই বন্ধু মিলে শিকারে (এ) গেলেন। ম| এখন স্নানে (এ) গেছে। বেলা যে পড়ে এল জলকে (কে) চল। রােগে (এ) ওযুধ, ভােগে (এ) অর্থ না হলে চলে না। এই হত্যার পাপে (এ) তাকে কঠিন প্রায়শ্চিত্ত করতে হল। একটি ভারতীয় দল নের অভিযানে (এ) যাত্রা করল।
নিমিত্তকারকে আনুসর্গের প্রয়োগ
নিমিত্ত কারকে জন্য, তরে, লাগিয়া (লাতি), নিমিত্ত, উদ্দেশে, কারণে, হে প্রভৃতি অনুসর্গের প্রয়োগ হয়। সাধারণত সম্বব বিভক্তি যুক্ত পূর্বপদের সঙ্গে অনুনগুলি ব্যবহৃত
যথা : এ দিকে মেয়েদের জন্য ভালাে স্কুল নেই। টাকার জন্য খেটে মরি। মহিন পড়ার জন্য বিদেশেতে যাত্রা করল। সুখের লাগিয়া এঘর বাধিন’। কিসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশ্বাস’। মাকে চিকিৎসার উদ্দেশে কলকাতায় আনা হয়েছে। স্বাস্থ্যের কারণে তার এখানে বাস। সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমার। পরের তরে। শাস্তির নিমিত্ত তিনি শহর ত্যাগ করিয়া গ্রামে বাস করিতেছে। আদর্শ রক্ষার জন্য মানুনকে অনেক ত্যাগ করতে হয়। সে খেলার জন্য বাড়ি ছেড়েছে। রান্নার নিমিত্ত | রান্নাঘরে গেলেন। ঐক্যের জন্য অনেক বেশি উদার হতে হয়। কীসের কারণে আপনার আগমন। চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুঃখ-পীড়িত গ্রামের মানুষ অন্নের জন্য হাহাকার
অকারক-পদ প্রসঙ্গ
অকারক-পদ
পূর্বে কারক-সম্পর্ক আলোচনায় আমরা জেনেছি ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের মধ্যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের প্রত্যক্ষভাবে অন্বয়কেই কারক বলা হয়। যার সঙ্গে এই প্রত্যক্ষ অন্বয় ঘটে তার কারক হয় না। কিন্তু বাক্যের মধ্যে এমন অনেক পদ থাকে যার সঙ্গে ক্রিয়ার কোনাে প্রত্যক্ত সম্পর্ক নেই। বাক্যে তারা শুধু পদ, কারক নয়। এ ধরনের পদকেই অকারক পদ বলে। বাংলাভাষার রূপতত্ত্ব বিচারে এ ধরনের অকারক পদ আছে দুটি—সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ।
অকারক পদ : বাক্যের মধ্যে কোনাে কোনাে পদ থাকে যা অন্য পদের সঙ্গে অন্বিত হয়, ক্রিয়ার সঙ্গে হয় না। আবার কোনাে পদ থাকে যা কারো সঙ্গেই অন্বিত হয় না— ক্রিয়া, না অন্য পদ। তাদেরই বলা হয় অকারক পদ।
যথা: শ্যামের বাবা মাঠে গেলেন। মহিম তুমি বাড়ি যেও।
“ন, “গের বিভক্তি ব্যবহূত হয়। আর এই শেয-সম্বন্ধ পদের সঙ্গে কারক-সম্বব * ন স রয়েছে।
কারক-সম্বন্ধ
.যহেতু কারক ছ-প্রকার সেহেতু কারক-সম্বন্ধ ও ছ-প্রকার—(১) কর্তৃ-সম্বন্ধ, ( ২ ) সন্ধ, (৩) করণ-সম্বন্ধ, (s) অপাদান-সম্বন্ধ, (৫) আধিকরণ-সম্বন্ধ, (৬) নিমিত্ত-সম্বন্ধ
১. কর্তৃসম্বন্ধ : ক্রিয়ার সম্পাদককে ঘিরে যে-সম্বন্ধ গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় কর্তৃসম্বন্ধ ।
যথা ঃ বাবার শাস্তি বড়াে কঠিন। শিক্ষক মশায়ের উপদেশ আমাদের সঠিক পথে চালিত করে। মায়ের স্নেহ আমাকে প্রাণিত করে। সুজয়ের বক্তৃতা আজকে সভা উত্তপ্ত করে তুলেছে। ছেলের কাজ আমাকে আশান্বিত করেছে। বাঘের ডাক আমাকে আতকিত করে। কাজীর বিচার ভয়ংকর।
অনুরূপভাবে আরও কয়েকটি কর্তা-সম্বন্ধ
সকলের পূজ্য, পুলিশের মার, সভাপতির বক্তৃতা, সরকারের আইন, পন্ডিতের বিচার। ২. কর্মসম্বন্ধ ও কর্ম-সম্পর্কের ভিত্তিতে যে-সম্বন্দ্ব গড়ে ওঠে তাকে বলে কর্ম-সম্বন্ধ। যথা ঃ তুমি ভাইয়ের ছাতা নিও না। সে আজ কাজের কাজ করেছে। রমেনবাবু সবসময় আর্তের সেবা করেন। সে শাস্ত্রের আলোচনা চালিয়ে গেল। দুঃখীর দুঃখ কেউ বােঝে না। আজকাল ধনীর কথা সবাই মান্য করে। সে অতিথির আপ্যায়ন করছে। অনুরূপভাবে আরো কয়েকটি কর্ম-সম্বন্ধ ও
কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ
ঈশ্বরের উপাসনা, দরিদ্রের সেবা, বিদ্যার চর্চা, পরের নিদা, দেবতার বিদায়, গৃহস্থের সন।
৩. করণ-সম্বন্ধ ও করণ-সম্পর্কের ভিত্তিতে যে-সম্বন্ধ গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় করণ
যথা : এ কলমের আঁচড়েই তার দুর্ভোগের শেষ নেই। সামান্য অপরাধে সে খুব বেতের বাড়ি খেল। ছবিটাতে অসাধারণ তুলির আঁচড় আছে। চোখের ইশারায় সে যা বোঝার বুঝেছে। সেদিনের দাঁদের কামড়ে ঘা হয়েছে। একবার চোখের দেখায় মানুষ চেনা
রূপভাবে আরও কয়েকটি করণ-সম্বন্ধ ?
মাটির তৈরি, কাগজের নৌকা, সােনার গহনা, ক্ষীরের পিঠা, খাড়ার ঘা, লাঠির ঘা, হাতের নারি ইত্যাদি।
৪. অপাদান-সম্বন্ধ : অপাদান-সম্পর্ককে ভিত্তি করে যে-সম্বন্ধ গড়ে ওঠে তাকে বলা হ অপাদানস
যথা বাঘের ভরে কে না ভতি হয়? ওর গলায় আওয়াজ বেরুচ্ছে না। বাঁশির শব্দে
না। ঘুম ভেঙে গেল। ওর চোখের জল দেখে াির হবি:| | |। মুখের কথা বিশ্বাস করে। মাঠের ধান তুলে আন।
অনুরূপভাবে আরও কয়েকটি অপাদান-সম্বন্ধ
সাপের ভয়, ঘরের বাইরে, বাজারের জিনিস, বারাসাতের উওরে, দূরের শব্দ, পথের টাকা।
৫. অধিকরণ-সম্বন্ধ : বাক্যে অধিকরণ-সম্পর্ককে ভিত্তি করে যে- সব গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় অধিকরণসম্বন্ধ।
যথা ঃ বনের পাখি বনেই মানায়। বিকেলের ডাক-চিঠি এসে গেছে। গ্রামের মানুষ ভিড় করেছে। জলের মাছ জলেই লাফায়। শীতের হাওয়া বইছে। দুপুরের খাওয়ার খাওয়া হল। ঘরের মানুষটা এখনও ফিরল না।
অনুরূপভাবে আরও কয়েকটি তাধিকরণ-সম্বন্ধ
টোলের পন্ডিত, গায়ের মােড়ল, খাঁচার পাখি, রাতের খাবার, আকাশের তারা, পালের গােদা, মন্দিরের পূজারি ইত্যাদি।
৬. নিমিত্তসম্বন্ধ ঃ নিমিত্ত-সম্পর্ককে ভিত্তি করে যে-সম্বন্দ্ব গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় নিমিত্ত-সম্বন্ধ।
যথা ঃ বিয়ের বাজনা বাজছে। জপের মালা সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছে। টাকার শােকে ওর ঘুম নেই। পুত্রের শােকে বাবা মারা গেলেন। ভােটের মিছিল রাস্তায় বেরিয়েছে। অনুরূপ ভাবে আরও কয়েকটি নিমিত্ত-সম্বন্ধ
খেলার মাঠ, রান্নার কাঠ, ঘােড়ার খাবার, বলির পাঁঠা, পুজার ফুল, রােগের ওষুধ, ছেলেদের স্কুল, মেয়েদের স্কুল ইত্যাদি।
কারক চেনার সহজ উপায় পার্ট টু বাংলা ব্যাকরণ