Political science

জাতীয় শক্তির উপাদান গুলি লেখ| Write the elements of national energy in Bengali

 জাতীয় শক্তির উপাদান গুলি লেখ|Write the elements of national energy in Bengali

 

জাতীয় শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল

 

উত্তর। জাতীয় শক্তির নির্ধারক উপাদানগুলি কী—এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত পােষণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ কার (E. H. Carr) জাতীয় শক্তির উপাদানগুলিকে তিনভাগে ভাগ করেছেন, যথা (ক) সামরিক উপাদান, (খ) অর্থনৈতিক উপাদান, এবং (গ) জনমতের ওপর প্রভাব।

জাতীয়-শক্তির-উপাদান

 

অধ্যাপক পামার ও পারকি (Palmer and Perkins) জাতীয় শক্তির সাত প্রকার উপদানের উল্লেখ করেছে—(১) ভৌগােলিক উপাদান, (২) কাচামাল ও প্রাকৃতিক সম্পদ, (৩) জনসংখ্যা, (৪) প্রযুক্তিবিদ্যা, (৫) মতাদর্শ, (৬) জাতীর আত্মবিশ্বাস ও (৭) জাতীয় নেতৃত্ব।

 

ভ্যান ডাইক (V.V. Dyke) আবার জাতীয় শক্তির ১২টি উপাদানের উল্লেখ করেছে, যথা (১) ভৌগােলিক ভিত্তি, (২) জনসংখ্যা, (৩) উৎপাদন দক্ষতা, (৪) যাতায়াত ও যােগাযােগ, (৫) বৈজ্ঞানিক দক্ষতা, (৬) সরকারী সংগঠন ও প্রশাসন, (৭) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, (৮) সামরিক অবস্থান, (৯) ধ্যান ধারণা, (১০) গােয়েন্দা বিভাগ, (১১) সামরিক ব্যবস্থা এবং (১২) নেতৃত্বের প্রজ্ঞা (wisdom)।

জাতীয় শক্তির নির্ধারক উপাদান

অর্গাননস্কি (Organski) জাতীয় শক্তির নির্ধারক উপাদানগুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন—১) প্রাকৃতিক উপাদান এবং (২) সামাজিক উপাদান।

 

কৌলম্বিস ও উলফ (Couloumbis and Wolfe) জাতীয় শক্তির উপাদানগুলিকে বােধগম্য (Tangible) এবং বােধগম্যহীন (Intangible)—এই দুভাগে ভাগ করেছেন। জনসংখ্যা, ভূখণ্ড, প্রাকৃতিক সম্পদ, সামরিক শক্তি প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আর সরকারের প্রকৃতি, সুনাম, নেতৃত্ব, বিদেশী শক্তির সমর্থন, নির্ভরশীলতা দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

জাতীয় শক্তির উপাদান গুলি

মর্গেন্থাও (H. J. Morgenthau) আবার জাতীয় শক্তির উপাদানগুলিকে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী উপাদানসমূহ এবং পরিবর্তনশীল উপাদানসমূহ—এই দুভাগে ভাগ করেছে।

 

উপরােক্ত আলােচনার ভিত্তিতে জাতীয় শক্তির প্রধান প্রধান উপাদানগুলিকে নিন্মলিখিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

জাতীয় শক্তির ভৌগলিক উপাদান

১.ভৌগলিক উপাদান: জাতীয় শক্তির উপাদান হিসেবে ভুগোল এর ভূমিকা প্লেটো অ্যারিস্টোটলের আমল থেকেই স্বীকৃত আধুনিককালে ম্যাকাইভার মাহান প্রমূখ লেখকগণ ভুগলকে একটি দেশের

জাতীয় শক্তির প্রধান নির্ধারক উপাদান বলে গণ্য করেছেন। মরগেথাউ (Morgenthau) বলেছেন, “যেসকল স্থায়ী উপাদানের ওপর একটি দেশের শক্তি নির্ভর করে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য হল ভূগােল।” ভূগােল বলতে সাধারণভাবে কোন দেশের আয়তন, জলবায়ু, অবস্থান, ভূ-প্রকৃতিগত বিন্যাস ইত্যাদিকে বােঝানাে হয়ে থাকে।

 

(ক) আয়তন : ভূভাগের আয়তনের ওপর কোন দেশের শক্তির নির্ভরশীলতা প্রমাণের জন্য ভূতপূর্ব সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করাই যথেষ্ট। তবে কেবলমাত্র ভূভাগের আয়তনই শেষ কথা নয়, দেশের সম্পদ, ব্যবহারযােগ্য জমির পরিমাণ, ভূ-প্রকৃতির বিন্যাস প্রভৃতি বিষয়গুলিও বিবেচনা করা দরকার। গ্রেটব্রিটেন ও ফ্রান্স তার স্বল্প আয়তন নিয়েই সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল।

 

(খ) জলবায়ু : জলবায়ুর ওপর কোন দেশের সংস্কৃতি অর্থনীতি, জনসাধারণের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ভরশীল। চরম উষ্ণতা বা চরম শৈত্য কোনটাই দেশের সমৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক নয়। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়ােগের মাধ্যমে মানুষ প্রতিকূল জলবায়ুর প্রভাবকে অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে সত্য, কিন্তু জাতীয় শক্তির নির্ধারকরূপে জলবায়ুর ভূমিকা আজও গুরুত্বপূর্ণ।

 

(গ) অবস্থান : কোন দেশের ভৌগােলিক অবস্থান তার ক্ষমতা ও ভূমিকাকে নির্ধারণ করে। ভৌগােলিক অবস্থান একদিকে ব্রিটেনকে বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছে, অন্যদিকে পৃথিবীর সমস্ত দেশের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। সামরিক দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান ঐ অংশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে। তবে সাম্প্রতিককালে আণবিক মারণাস্ত্রের প্রসার, যােগাযােগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি প্রভৃতি বিষয়গুলি কোন দেশের অবস্থানগত ঐতিহ্যমন্ডিত সুযােগগুলিকে অনেকাংশে অর্থহীন করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ ইংলিশ চ্যানেল দ্বারা পরিবেষ্টিত ব্রিটেন এখন আর বিদেশী শক্তির কাছে দুর্ভেদ্য নয়।

 

(ঘ) ভূ-প্রকৃতি : ভূ-প্রকৃতির ওপর মৃত্তিকার অবস্থা, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রভৃতি নির্ভর করে। যে দেশের অভ্যন্তরে পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা ইত্যাদি বেশি থাকে, সেই দেশের যােগাযােগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বহু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যােগাযােগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অসুবিধা অর্থনৈতিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। আবার উল্টোভাবে কোন দেশের মধ্যে পর্যাপ্ত নদী, নালা থাকলে সেই দেশ জলসম্পদের সুবিধা ভােগ করতে পারে।

জাতীয় শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রাকৃতিক সম্পদ:

২)প্রাকৃতিক সম্পদ : জাতীয় শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রাকৃতিক সম্পদ। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী, মৃত্তিকার উর্বরতা প্রভৃতিকে বােঝায়। প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে যে কোন দেশ তার প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন করে। যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় এবং অন্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সেই দেশের একটি বিশেষ দুর্বলতা থেকে যায়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার জন্য জার্মানির পক্ষে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর। প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের শিল্পোন্নয়নকে সাহায্য করে। কয়লা, খনিজ তৈল, জলবিদ্যুৎ, লৌহ, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সােনা, রূপা ইত্যাদি দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে প্রয়ােজন।

 

৩। শিল্পের উন্নতি : প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাচামালে সমৃদ্ধ তর্জাতিক রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে থাকতে পারে যদি সেই দেশ শিল্পে উন্নত প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাচামালে ভারত যথেষ্ট সমৃদ্ধ। কিন্তু ভারতবর্ষ আজ পর্যন্ত : শর প্রথম শ্রেণীর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে নি, তার কারণ হল কাচামাল ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় শিল্পে অনগ্রসরতা। আবার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশগুলির জাতীয় শক্তির মূলে রয়েছে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি।

জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা:

৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : একটি দেশের জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হল তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কেবল জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান ও কল্যাণসাধনের সঙ্গে জড়িত থাকে না, পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যের জন্যও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রয়ােজন হয়। কোন দেশের সমরশিল্পের বিকাশ, প্রতিরক্ষার আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তিবিদ্যা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতি ইত্যাদি সেই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। মােট জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু আয়, শিল্পায়নের হার, জীবনযাত্রার মান, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা প্রভৃতিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচক হিসাবে গণ্য করা হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত দেশগুলিই অনুন্নত দেশগুলির ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

জাতীয় শক্তির সবথেকে প্রধান উপাদান হল সামরিক ক্ষমতা:

৫। সামরিক ক্ষমতা : জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হল সামরিক ক্ষমতা। নিরিক ক্ষমতা শুধু সৈন্যবাহিনীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সৈন্যদের নৈপুণ্য, সেনাপতির নেতৃত্ব এবং সমরাস্ত্রের উৎকর্ষের ওপর। আধুনিক আণবিক বােমা, আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মারণাস্ত্রের ওপর একটি দেশের সামরিক শক্তির প্রকৃতি নির্ভরশীল। আজকের দিনে প্রতিটি বৃহৎ শক্তিধর দেশেরই অন্যতম লক্ষ্য হল নিজেকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করা এবং অন্য রাষ্ট্রকে তার আক্রমণাত্মক নীতি ও কার্যাবলী থেকে বিরত রাখা। আণবিক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অন্যকে আণবিক আক্রমণ থেকে বিরত রাখার পদ্ধতিকে Nuclear deterrance বলা হয়।

জাতীয় শক্তির উপাদান গুলি

৬। রাজনৈতিক কাঠামাে : একটি দেশের রাজনৈতিক কাঠামাে তথা সরকারের প্রকৃতির ওপর সেই দেশের ক্ষমতা ও সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার জনসমর্থনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকায় জাতির আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংকটে সেই সরকার সহজেই জনসাধারণের সহযােগিতা পেতে পারে। অপরপক্ষে স্বৈরতান্ত্রিক সহকারে পশ্চাতে ব্যাপক জনসমর্থন থাকে না। জনসাধারণের বিরােধিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত নরের হাত শক্তি বৃদ্ধির যেকোন উদ্যোগই ব্যর্থ হতে বাধ্য।

 

৭। নেতৃত্ব: জাতীয় শক্তির হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকাও কম নয়। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, ভৌগোলিক অবস্থান, মানবিক শক্তি, অর্থনেতিক বিকাশ, সামরিক দক্ষতা ইত্যাদি উপাদানকে কতটা, কখন এবং কীভাবে প্রয়োগ করলে জাতির উন্নতি ঘটবে তা স্থির করেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ । নেতৃবৃন্দ যদি দক্ষ, প্রজ্ঞাশীল ও বিচক্ষণ হন তাহলে দেশের সুনাম ও শক্তি বাড়ে।

 যদি দক্ষ ও অবিবেচক হন তাহলে জাতীয় শক্তি দুর্বল হয় , বর্তমানে চীনের উন্নতির মূলে রয়েছে রয়েছে ঐ দেশের বর্তমান নেতৃবৃন্দের দক্ষতা, যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা।

 

8. জনসংখ্যা: জাতীয় শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জনসংখ্যা বা মানবসম্পদ। তবে জনসংখ্যাকে দেশের প্রয়ােজন ও সম্পদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। জনসংখ্যা কম হলে দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয় না, আবার খুব বেশি হলে দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অশিক্ষা, বেকারত্ব প্রভৃতি অভিশাপগুলি দেশকে দুর্বল করে দেবে। ভারতবর্ষের দুর্বলতার অন্যতম কারণ মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা। দেশের উন্নতির প্রাথমিক শর্ত হল দক্ষ, শিক্ষিত ও কারিগরী জ্ঞানসম্পন্ন জনগণ। দক্ষ ও শিক্ষিত জনসাধাৰণ যেমন দেশের সম্পদ-স্বরূপ, ঠিক তেমনি অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও নৈপূণ্যহীন জনসাধারণ দেশের পক্ষে বােঝাস্বরূপ।

 

৯। নৈতিক শক্তি ও জাতীয় চরিত্র : কোন দেশের জন্যধারণের নৈতিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের ওপর সেই দেশের শক্তি ও সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে জাপান, জার্মানি প্রভৃতি দেশগুলি যেভাবে অল্পদিনের মধ্যে পুনরুত্থান করে তা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। আর এই পুনরুত্থানের মূল চাবিকাঠি হল জনগণের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও নৈতিকতা।

জাতীয় শক্তির ক্ষেত্রে কূটনীতির ভূমিকা

১০। কূটনীতি : জাতীয় শক্তির ক্ষেত্রে কূটনীতির ভূমিকাও কম নয়। মরগেনথাউ (Morgenthau)-এর মতে কোন দেশের সামরিক প্রস্তুতি, কাচামাল, ভৌগােলিক অবস্থান ইত্যাদি সবকিছু অর্থহীন হয়ে যেতে পারে, যদি না সেই দেশটি কূটনৈতিক দিক থেকে সাফল্য পায়। তাই তিনি বলেন, “কূটনীতি হল জাতীয় ক্ষমতার মস্তিস্বরূপ, আর জাতীয় চরিত্র হলো আত্মা”

 

উপসংহার :উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যাচ্ছে একটি দেশের ক্ষমতা অনেকগুলি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। উপাদানগুলির মধ্যে কোটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোটি কম গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। কারণ স্থান ও সময়ভেদে একটি উপাদান অন্য উপাদান থেকে অধিক কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ অতীতে ইংলিশ চ্যানেল যেভাবে ইংল্যাণ্ডকে বহিরাক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পেরেছে, আধুনিক মারণাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এখন আর তার সেই গুরুত্ব নেই। আবার অরগনস্কি (Organski) প্রমুখ লেখকদের মতে, জাতীয় শক্তি পরিমাপ করার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল, কারণ এর সঙ্গে বােধগম্যহীন (intangible) ধারণাও জড়িত থাকে। যেসব কারণে ক্ষমতার পরিমাপ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে সেগুলি হলঃ (ক) ক্ষমতার আপেক্ষিকতা, (খ) হিসাব অনুযায়ী যে ক্ষমতা দাঁড়ায় তার সঙ্গে বাস্তবের বিচারে অসঙ্গতি, (গ) ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত বেশকিছু বোধগম্যহীন ধারণা, ইত্যাদি। বস্তুত একটি দেশের ক্ষমতা অন্য দেশের সঙ্গে আপেক্ষিক (relative)। কোন একটি দেশ হঠাৎ করে পারমাণবিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠলে প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষমতার বিন্যাস ক্ষুন্ন হয়। আবার সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হতে গিয়ে অনেক দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে ভূতপূর্ব সোভিয়েত রাশিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *