কোড নেপােলিয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কোড নেপােলিয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

 

 ● ‘কোড নেপােলিয়ন’ সম্পর্কে কী জান? 

 

 উত্তর

 

নেপােলিয়নের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় কীর্তি হল ‘কোড নেপােলিয়ন’ প্রবর্তন।

 

কোড নেপােলিয়ন

 

১) আইনসমূহ রচনা; নেপােলিয়নের উদ্যোগে গঠিত কমিশন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের জন্য নতুন আইনসমূহ রচনা করেন। এটি ‘কোড নেপােলিয়ন (Code Napoleon) বা নেপােলিয়নের আইনসংহিতা’ নামে পরিচিত।

 

২) আইনসমূহের শ্রেণিবিভাগ : কোড নেপােলিয়নে মােট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) আইন ছিল। এর আইনগুলি মূলত তিনভাগে বিভক্ত ছিল, যথা i] দেওয়ানি আইন, [i] ফৌজদারি আইন এবং [ii] বাণিজ্যিক আইন।

কোড-নেপােলিয়ন-সম্পর্কে-বিস্তারিত-আলোচনা

 

৩) বৈশিষ্ট্য :

কোড নেপােলিয়নের দ্বারা i] আইনের চোখে দেশের সকল নাগরিকের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, [i] সামন্ততান্ত্রিক অসাম্যের বিলােপ ঘটানাে হয়, [iii] যােগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের ব্যবস্থা করা হয়, [iv] ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়, [v] সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, [vi] ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয় এবং (vii] অপরাধের শাস্তি হিসেবে জরিমানা, কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদণ্ড প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়।

 

৪) ত্রুটি : কোড নেপােলিয়নের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন—i] এতে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস করা হয়, [ii] স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, [ii] পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীকে বঞিত করা হয় এবং [iv] শ্রমিকশ্রেণি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

 

উপসংহারঃ কোড নেপােলিয়ন প্রবর্তনের মাধ্যমে নেপােলিয়ন ফ্রান্সের বিপ্লবপ্রসূত ভাবধারাগুলিকে আইনি স্বীকৃতি দেন। অবশ্য এই আইনসংহিতার কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থেকেই গিয়েছিল।

 

■ নেপােলিয়ন কী উদ্দেশ্যে ‘কোড নেপােলিয়ন’ প্রণয়ন করেন? এই আইনসংহিতার ধারা, ত্রুটি ও গুরুত্ব লেখাে।

 

উত্তরঃ

 

 ফরাসি নেপােলিয়নের বিভিন্ন সংস্কারগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষ। ছিল ‘কোড নেপােলিয়ন’-এর প্রবর্তন। তিনি চারজন বিশিষ্ট ওকে নিয়ে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘কোড নেপােলিয়ন’ বা আইনসংহিতা’ প্রণয়ন করেন।

 

‘কোড নেপােলিয়ন’ প্রণয়নের উদ্দেশ্য

 

কোড নেপােলিয়ন প্রণয়নের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল—[1] ফ্রান্সে বিভিন্ন পরস্পরবিরােধী আইন বাতিল করে দেশের সর্বত্র একই চালু করা। [2] পূর্বতন বৈষম্যমূলক আইনগুলি বাতিল করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

 

কোড নেপােলিয়ন’এর ধারা, ত্রুটি ও গুরুত্ব

 

ফরাসি সম্রাট নেপােলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে তার প্রণীত আইনবিধির নামকরণ করেন ‘কোড নেপােলিয়ন।

 

১)আইনে ধারা: ‘কোড নেপােলিয়ন’ তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল। যথা—[i] দেওয়ানি আইন, [i] ফৌজদারি আইন, [ii] বাণিজ্যিক আইন। এতে মােট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) আইন’ বা ধারা বর্তমান ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—[i] আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেকের সমান অধিকার, [ii] যযাগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি লাভের অধিকার, [ii] সামন্ততন্ত্রের বিলােপসাধন নতুন ভূমিবন্দোবস্ত আইন প্রণয়ন, [iv] ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বীকৃতি দান, [v] ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ, [vi] কৃষক ও মধ্যবিত্তরা বিপ্লবের সময় যে জমি পেয়েছিল তার বৈধতা দান প্রভৃতি।

 

২) ত্রুটি : নেপােলিয়নের ‘আইনসংহিতা’র বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। li] এতে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস করা হয়, [i] স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, [ii] পারিবারিক সম্পত্তির ওপর থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হয়, [iv] শ্রমিকশ্রেণিকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

 

৩) গুরুত্ব: কোড নেপােলিয়নের কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও এর বিভিন্ন গুরুত্বও ছিল। যেমন—

 

[i] সাম্য: নেপােলিয়ন সামন্ততান্ত্রিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে | এবং যােগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হন। এভাবে এই আইনসংহিতায় ফরাসি বিপ্লব প্রসূত সাম্যনীতি বিশেষ গুরুত্ব পায়।

 

[ii] স্বাধীনতা: ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় ভােগদখলের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা প্রভৃতির মাধ্যমে এই আইনসংহিতায় ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত গুরুত্বপূর্ণ ভাবধারা স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

 

[ii] আধুনিকতা: এই আইনের ধারাগুলি যুগের বিচারে অত্যন্ত প্রগতিশীল ছিল। আইনগুলি পরবর্তীকালে ইউরােপের বিভিন্ন দেশের আইনব্যবস্থায় স্থান পায়।

 

[iv] বিপ্লব রক্ষিত: ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত ভাবধারাগুলিকে এই আইনব্যবস্থায় স্থান দেওয়ার ফলে বিপ্লব রক্ষিত হয়।

 

উপসংহার: নেপােলিয়ন তার আইনসংহিতা প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রগতিশীল ফ্রান্স গঠন করতে চেয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ফিশারের মতে, নিজেও তার যুদ্ধ জয়ের চেয়ে এই আইনগুলিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে এই আইনগুলি বিপ্লবের স্থায়ী বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। নেপােলিয়ন মনে করতেন।

 

■ কোড নেপােলিয়নে কী কী ধারা রয়েছে? উত্তর

 

নেপােলিয়ন বােনাপার্টের সবচেয়ে গৌরবময় কীর্তি হল ‘কোড নেপােলিয়ন’ প্রবর্তন।

 

কোড নেপােলিয়নের ধারা

 

১) পরিচিতি: ফ্রান্সে প্রচলিত বিভিন্ন পরস্পরবিরােধী আইন বাতিল করে দেশের সর্বত্র সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নেপােলিয়ন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে চারজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞকে নিয়ে কোড নেপােলিয়ন বা আইনসংহিতা’ প্রণয়ন করেন। এতে মােট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) আইন’ বা ‘ধারা ছিল। এই আইনসংহিতাটি তিন ভাগে বিভক্ত ছিল, যথা—[i] দেওয়ানি আইন, [i] ফৌজদারি আইন এবং [ii] বাণিজ্যিক আইন।

 

২)আইনের বিভিন্ন ধারা; কোড নেপােলিয়নে মােট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) আইন’ বা ‘ধারা ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—[i] আইনের দৃষ্টিতে সকল ব্যক্তির সমানাধিকার, [i] যােগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি লাভের অধিকার, [ii] পৈত্রিক সম্পত্তিতে সকল সন্তানের সমানাধিকার, [iv] সামন্ততন্ত্রের বিলােপ সাধন এবং নতুন ভূমিবন্দোবস্ত আইন প্রণয়ন, [v] স্ত্রীর ওপর একমাত্র অধিকার স্বামীর, [i] সন্তানের ভরণ-পােষণের দায়ভার একমাত্র পিতার, (vii] বিচারব্যবস্থার সংগঠন সাধন এবং জুরি প্রথার প্রচলন, [vi] ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দান, [ix) ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ, [x] অপরাধের শাস্তি হিসেবে জরিমানা, কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদণ্ড প্রভৃতির ব্যবস্থা, (x] সাধারণ অপরাধী এবং রাজনৈতিক অপরাধীদের স্বতন্ত্রীকরণ, (xii] কৃষক ও মধ্যবিত্তরা বিপ্লবের সময় যে জমি পেয়েছিল তার বৈধতা দান।

 

উপসংহার: নেপােলিয়ন তার আইনসংহিতা’কে জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই ধারাগুলির সংযােজন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই ধারাগুলিই ছিল এই ‘আইনসংহিতা’র প্রাণ।

 

 * কোড নেপােলিয়ন বা নেপােলিয়নের আইনসংহিতার গুরুত্ব কী ছিল? 

 

উত্তর

 

সম্রাট নেপােলিয়নের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় কীর্তি হল ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘কোড নেপােলিয়ন’ নামে আইনসংহিতা রচনা।

 

কোড নেপােলিয়নের গুরুত্ব

 

কোড নেপােলিয়নের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। যেমন—

 

১)সাম্যের স্বীকৃতি : নেপােলিয়ন তার আইনসংহিতায় ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সাম্যনীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি [i] সামন্ততান্ত্রিক বৈষম্যের অবসান, [i] আইনের চোখে সকলের সমান মর্যাদা [ii] সরকারি চাকরিতে যােগ্যতার ভিত্তিতে নিয়ােগ প্রভৃতির মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হন।

 

২) স্বাধীনতার স্বীকৃতি : নেপােলিয়ন তার আইনসংহিতার মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত গুরুত্বপূর্ণ ভাবধারা স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেন। ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় ও ভােগদখলের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, প্রভৃতি ছিল এতে উল্লিখিত উল্লেখযােগ্য স্বাধীনতা।

 

 ৩) আধুনিকতা ; কোড নেপােলিয়নের আইনসমূহ সমকালীন যুগের বিচারে অত্যন্ত আধুনিক ছিল। ফ্রান্সে প্রচলিত হওয়ার পর ইউরােপের বিভিন্ন দেশের আইনব্যবস্থায় স্থান পায়। এই কৃতিত্বের জন্য নেপােলিয়নকে অনেকে ‘ দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলে অভিহিত করেন। 

 

৪) বিপ্লব রক্ষিত; ফরাসি বিপ্লবের মূল লক্ষ্যগুলিকে নেপােলিয়ন তার আইনব্যবস্থায় স্থান দেন। ফিশারের মতে, এই আইনগুলি বিপ্লবের স্থায়ী বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। নেপােলিয়ন নিজেও তার যুদ্ধজয়ের চেয়ে এই আইনগুলিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন।

 

উপসংহার: কোড নেপােলিয়নের গুরুত্ব স্বীকার করে ঐতিহাসি লেফেভর এই আইনবিধিকে ফরাসি সমাজের বাইবেল’ বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক ফিশারের মতে, এই আইনগুলি বিপ্লবের স্থা | ক্ষণস্থায়ী হলেও ফ্রান্সে তার অসামরিক সংস্কারগুলি গ্রানাইট পাথরের বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। তিনি বলেন, “নেপােলিয়নের সাম্রাজ শক্ত ভিতের ওপর স্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছিল।”

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *