ত্রিশক্তি আঁতাত কি ভাবে গঠন হয়েছিল
ত্রিশক্তি আঁতাত কি ভাবে গঠন হয়েছিল
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা (১৮৯০-১৯১৪)
ত্রিশক্তি আঁতাত গঠন
রশ-ফরাসী মৈত্রী :
ফ্রান্স-প্রাশিয়া যুদ্ধে (১৮৭০ খ্রীঃ ) ফ্রাসের পরাজয়ের গ্লানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার সাম্রাজ্যের অঙ্গহানির (আলসাস লােবেন) বেদনা। উপরন্ত, তার পব সীমান্তের সন্নিকটে জার্মানীর উপস্থিতি ফ্রান্সের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছিল। এরপর বিসাক প্রথমে তি-সম্রাট মৈত্রী ও পরে ত্রিশক্তি মৈত্রী (১৮৮২ খ্রীঃ) গঠন করলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। নিবান্ধব ফ্রান্সের ভাবনার অন্ত ছিল না। বিসমাক যতদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন, ততদিন ফ্রান্স তার প্রতিশােধ-স্পৃহাও চরিতার্থ করতে পারেনি। কিন্তু কর্ণধারের বিদায়ের (১৮৯০ খ্রীঃ) পর এ ব্যাপারে ফ্রান্সের সযােগ উপস্থিত হয় ।
রাশিয়ার সঙ্গে কাইজারের মৈত্রী নাশ:
বিসমাকের পদত্যাগের পর জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়ম ও তাঁর পরামর্শদাতা মন্ত্রী হলস্টিন রুশ-জার্মান মৈত্রীর গুরুত্ব স্বীকার করেন নি। কাইজার ঐ বৎসরই রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইন্সিওরেন্স সন্ধি নাকচ করে দেন। এই মিত্র নাশের কারণগুলি হল ঃ (১) ঐ সময়ে ইঙ্গ-জার্মান সহযােগিতা শীর্ষবিন্দুতে পৌছেছিল—ইংল্যান্ড জার্মানীকে হেলিগােল্যান্ড প্রদান করেছিল, পরিবতে জাঞ্জিবার ও উচ্চতর নীলনদের উপত্যকার ইংল্যান্ডের আধিপত্য জার্মানী স্বীকার করে নিয়েছিল। রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী বজায় রাখলে এই ইঙ্গ-জামান সহযােগিতা ক্ষুন্ন হতে পারে এই আশঙ্কা ছিল। কেননা ইংল্যাস্ত রাশিয়ার ঘাের শত্রু, ছিল । (২) কাইজার ও হলস্টিন উভয়েই বিসমার্কীয় ভাবধারার প্রভাবমুক্ত স্বাধীন নীতি অবলম্বন করে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে চেয়েছিলেন। (৩) এর ফলে হলস্টিনের রুশ-বিরােধী মনােবৃত্তির পরিতৃপ্তি সাধিত হয়।
রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ফ্রান্স তার কুটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা পরিত্যাগ করবে এমন সম্ভাবনাকে জার্মানী আমল দেয় নি। কেননা প্রজাতান্ত্রিক ফ্রান্স ও স্বৈরতান্ত্রিক রাশিয়ার মধ্যে কোন ঐক্যসুত্র ছিল না। বস্তুতঃ রশ মৈত্রীলাভের জন্য ফ্রান্সের ব্যাকুলতা ছিল। রাশিয়ার অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে ফ্রান্স তাকে মাত্র ৩% সুদে প্রচুর ঋণ দেয় ; অস্ত্রশস্ত্রও বিক্রি করে। এ সব সত্ত্বেও ফ্রান্স রাশিয়ার কাছ থেকে মৈত্রীর আশানূরুপ আশ্বাস পায় নি। অবশেষে ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী সেনাপতি বইসডেফ্রে ও রুশ সেনাপতি ওব্ৰচেভের মধ্যে একটি সামরিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এতে স্থির হয় যে, সাধারণ শান্তি ভঙ্গকারী যে কোন বিষয় উভয় দেশ পরস্পরের সঙ্গে আলােচনা করবে। উভয়ের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তারা সম্ভাব্য কর্মপন্থা সম্বন্ধে একটা বােঝাপড়ায় আসবে। ফ্রান্সের আগ্রহাতিশয্যে ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে উভয় পক্ষে স্বাক্ষরিত হয় একটি সামরিক কনভেনশন। এতে স্থির হয় যে, উভয় পক্ষের মধ্যে কেউ যদি এ শক্তি মৈত্রীভুক্ত কোনা সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন উভয় পক্ষই একত্রে সৈন্য সমাবেশ করবে আর উভয় পক্ষের কেউ জার্মানীর দ্বারা অকান্ত হলে একে অন্যকে সাহায্য করবে। ফ্রান্সে পানামা কেলেঙ্কারীর জন্য ( চতুর্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য) চুক্তিটি উভয় পক্ষের অনুমোদন লাভে বিলম্ব ঘটে। ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারী চুক্তিটি অণ,মোদিত হলে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে আনুসঠানিক মৈত্রী গড়ে ওঠে।
ত্রিশক্তি আঁতাত এর গুরুত্ব:
রশ ফরাসী মৈত্রি। চুক্তি সম্পাদনের ফলে ইউরােপীয় রাজনীতিতে ফ্রাসের বিচ্ছিন্নতার অবসান হল। সম্ভাব্য জামান আক্রমণের বিরদ্ধে ফ্রান্স নিরাপত্তার নিশ্চিত আবাস লাভ করেছিল। অবশ্য জার্মানীর বিরুদ্ধে প্রতিশােধস্পৃহা চরিতার্থ করার কোন সুযােগ সে পায় নি। কেননা চুক্তিটি ছিল প্রধানতঃ আত্মরক্ষামুলক। একথা অবশ্যস্বীকার্য যে, চুক্তিটি ফরাসী কটনীতির একটি উল্লেখযােগ্য সাফল্যের সাক্ষ্য। এছাড়া, এটি ছিল ত্রি-শক্তি আঁতাত গঠনের প্রথম পদক্ষেপ।
রশ-ফরাসী মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পবে ইউরােপে শক্তিসাম্য ছিল না। জার্মানীর নেতৃত্বে ত্রিশক্তি মৈত্রী ( জার্মানী, অস্ট্রিয়া ও ইতালী) ছিল প্রবল শক্তিশালী গােষ্ঠী। নবসৃষ্ট এই মৈত্রী ত্রিশক্তি মৈত্রীর তুলনায় হীনবল হলেও ইউরােপে শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠায় এটি সহায়তা করেছিল। এই মৈত্রী ইউরােপে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিল। এই মৈত্র চুক্তি সম্পাদনের প্রথম দিকে জামান-ফরাসী বিরােধ হ্রাস পেয়েছিল। এর সুত্র ধরেই ত্রিশক্তি আঁতাত (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া) গঠিত হয়। একদিকে ত্রিশক্তি মৈত্রী, অন্যদিকে ত্রিশক্তি আঁতাত গঠনের ফলে ইউরােপ দুটি পরস্পর-বিরােধী শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত মােটা মটি শক্তিসাম্য বজায় ছিল।
ইঙ্গ-ফাশ আত্মরিক চুক্তি (Entente Cordiale ) :
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, জার্মানী রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইন্সিওরেস সন্ধি পুনর্নবীকরণ না করার অন্যতম কারণ ছিল ইঙ্গ-জামান সহযোগিতা। বিসমার্কের পতনের পর ইংল্যান্ড ও জার্মানীর মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মের ইংরেজ-প্রীতি ছিল। ইংল্যান্ডকে ত্রিশক্তি মৈত্রীর অন্তর্ভুক্তির কথাও জার্মান সরকার চিন্তা করেছিল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই ইংল্যান্ড সবিস্ময়ে দেখেছিল যে, আফ্রিকা বা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ব্রিটিশ বিস্তার নীতি অবলম্বিত হলেই সেখানে জার্মান ক্ষতিরণের দাবি নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিল। বুয়ের যুদ্ধের সময় জার্মানীর ব্রিটিশ বিরােধী কার্যকলাপে ইংল্যান্ড ক্ষুব্ধ হয় । এরপর জার্মানি নৌসেনাপতি তিরপিসের নেতৃত্বে জার্মান নৌবহর নির্মাণে ইংল্যাড শঙ্কিত হয়ে ওঠে।
জার্মান মৈত্রী কামনায় ব্যর্থতা:
তথাপি ব্রিটিশ মন্ত্রী চেম্বারলেন প্রমুখ একদল রাজনীতিবিদ ইঙ্গ-জামান মৈত্রীর ওপর গুরত্ব আরােপ করেন। কেননা আফগানিস্থান, তিবত, জার্মানি মৈত্রী কামনার পারস্য ও মাঞ্চুরিয়া নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এবং মিশর ও মরক্কো ব্যর্থতা নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে বিরােধ ছিল। সুতরাং রুশ-ফরাসী জোটের বিরদ্ধে দাঁড়াতে হলে জার্মান মৈত্রী অপরিহার্য বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু ১৮১১ থেকে ১৯০২ খ্রীঃ পর্যন্ত জামনি মৈত্রকামী ব্রিটিশ প্রস্তাবে জার্মান আশানূরুপ সাড়া দেয় নি। প্রকৃতপক্ষে কাইজারের পরামর্শদাতা হলস্টিন প্রমুখ একনল জার্মানি রাজনীতিবিদের ধারণা ছিল ইংল্যান্ড বনাম রাশিয়ার যুদ্ধ অনিবার্য এবং ইংল্যান্ডের জার্মান মৈত্রীর বিকল্প নেই। সুতরাং কালহরণ করে ইংল্যান্ডের সেই মৈত্র কামনাকে উদগ্র করে তার কাছ থেকে সযােগসুবিধা আদায় করা যাবে ।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পারস্পারিক মৈত্রী কামনা:
এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড তার গৌরবজনক একাকীত্বকে (যা বর্তমানে ভয়ঙ্কর) ভেঙে ফেলার ও মিত্র অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রথম সার্থক উদ্যোগ গ্রহণ করল ইঙ্গ জাপান মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে (১৯০২)। অন্যদিকে ফ্যাসােডা সংকটের পর ইংল্যান্ড ও ফ্রাসের মধ্যে বিরােধের তীব্রতা হ্রাস পায়। বিচক্ষণ ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রী দেলকাসে অনুভব করেন যে একই সঙ্গে ইংল্যান্ড ও জার্মানীর বিরুদ্ধাচারণ ফ্রান্সের পক্ষে অসম্ভব । তাঁর মতে ইংল্যান্ড নয়, জার্মানাই ফ্রান্সের প্রকৃত শত্রু। সুতরাং দেলকাসে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বিরােধ মিটিয়ে নিয়ে জার্মানীর বিরুদ্ধে তার সমর্থন পেতে চাইলেন। ইংল্যান্ডের এ ব্যাপারে কম আগ্রহ ছিল না। তদানীন্তন ইংলণ্ড-রাজ সপ্তম এডওয়ার্ড ও জামান-বিরােধী ছিলেন।
ত্রিশক্তি আঁতাত এর শর্তাবলী:
ইঙ্গ-ফরাসী মৈত্রীর সম্ভাবনায় উল্লসিত সপ্তম এডওয়াড প্যারিস পরিদর্শনে যান ( মে, ১৯০৩ খ্রীঃ)। ফরাসী প্রেসিডেন্টও লণ্ড পরিদর্শনে যান। এর ফলে ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসী আন্তরিক অাঁতাত বা মৈত্রী স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশ পারস্পরিক বিরােধ মিটিয়ে নেয়। এই চুক্তির ফলে মিশরে ইংল্যান্ডের এবং মরক্কোতে ফ্রাসের অধিকার স্বীকৃত হয়। মাদাগাস্কার, শ্যাম, নিউ ফাউন্ডল্যান্ড প্রভৃতি স্থানে নিজ নিজ প্রভাব-বলয় স্থির করা হয়। ইঙ্গফরাসী আন্তরিক চুক্তি কোন সামরিক চুক্তি ছিল না। এটি ছিল উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে বিবাদ নিষ্পত্তির চুক্তিমাত্র। অবশ্য বিবাদের নিষ্পত্তি হওয়ায় উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের পরিবেশ গড়ে ওঠে, তার ফলে ভবিষ্যতে উভয় রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিবিড় হয়ে ওঠে।
ইঙ্গ-ফরাসী আন্তরিক মৈত্রীর প্রকৃত গর,ত্ব এই যে, এটি ইংল্যান্ডের শতাব্দব্যাপী গৌরবময় বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটায়। ইংল্যান্ড জার্মান-বিরােধী শিবিরে যােগদান করে। এটি ছিল ত্রিশক্তি আঁতাত গঠনের দ্বিতীয় পদক্ষেপ। চুক্তিটি ফ্রান্সের পক্ষেও অতি প্রয়োজনীয় ছিল। জার্মানীর বিরদ্ধে ফ্রান্সের নিরাপত্তা বর্ধিত করেছিল। চুক্তিটি দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর ইঙ্গ-ফরাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর যবনিকাপাত করে উভয় দেশের মধ্যে সম্ভাবনাপুর্ণ মৈত্রীর সুত্রপাত ঘটিয়েছিল। তাই অনেক ঐতিহাসিক এটিকে ‘কুটনৈতিক বিপ্লব’ আখ্যা দিয়েছেন।
ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন (১৯০৭ ) :
রশ-জাপান যুদ্ধে (১৯০৪-০৫ খ্রীঃ) রাশিয়ার পরাজয়ের পর তার ব্রিটিশ মৈত্রীলাভের কামনা তীব্র হয়। বিজয়ী জাপান ছিল ইংল্যান্ডের মিত্রদেশ। সুতরাং রাশিয়া ইংল্যান্ডের সাহায্যে দুর-প্রাচ্যে ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে চেয়েছিল। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গণ-অসন্তোষকে প্রশমিত করার জন্য রাশিয়া বঙ্কোন অঞ্চলে বিস্তার নীতি পুনরায় অবলম্বনের পরিকল্পনা করছিল । সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ-বিরোধিতার সম্ভাবনা দূর করার প্রয়ােজনীয়তা ছিল। সর্বশেষে, পারস্য উপসাগরে জার্মানীর অগ্রগতি রুশ স্বার্থ বিপন্ন করতে উদ্যত হয়েছিল।
ইংল্যান্ডের রুশ মৈত্রী কামনা:
ইংল্যান্ডের দিক থেকে রুশ মৈত্রীর প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। রশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় এবং ১৯০৫ খ্রীস্টাস্টের বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের রশভীতি হ্রাস পায়। ইংল্যান্ড বুঝতে পারে যে, তার বিস্তার নীতির পথে প্রবল বাধাস্বরপ হল জার্মানী, রাশিয়া নয়।প্রধানতঃ এই অভিন্ন জার্মানভীতি ইংল্যান্ড ও রাশিয়াকে কাছাকাছি টেনে এনেছিল।
নিকলসন ইজভালস্কি আলোচনা:
এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের পারস্পরিক বিরােধগলির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য ফ্রান্স মধ্যস্থতা করে। অবশেষে ব্রিটিশ কুটনীতিবিদ স্যার অথরি নিকলসন সেন্ট পিটার্সবাগ সফরে যান। সেখানে তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইজভলকির সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করে। ইঙ্গ রুশ চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করেন।
শর্তাবলী:
১৯০৭ খ্রীষ্টাঙ্গে ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। এর দ্বারা (১) উভয় স্বাক্ষরকারী তিব্বত থেকে সরে দাঁড়ায়। (২) উভয়েই পারস্যের স্বাধীনতা ও সেখানে অন্যান্য জাতির বাণিজ্যিক অধিকার অক্ষম রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। মােটামুটিভাবে উত্তর পারস্য রাশিয়ার এবং দক্ষিণ পারস্য ইংল্যান্ডের প্রভাববলয় বলে স্থির হয়। (৩) আফগানিস্থানকে ব্রিটিশ প্রভাববলয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, পরিবর্তে ইংল্যান্ড প্রতিশ্রুতি দেয় যে সেখানে প্রচলিত রাজনৈতিক অবস্থায় কোন পরিবর্তন ঘটাবে না। ইঙ্গ-ফ্রান্স আন্তরিক চুক্তির মতই এই কনভেনশন ছিল স্বাক্ষরকারী দেশ দুটির বিবাদ-নিষ্পত্তির চুক্তিমাত্র। এতে কোন সামরিক ধারা সন্নিবিষ্ট ছিল না।
ত্রিশক্তি আঁতাত এর পরস্পর বিরোধী দুটি শিবির:
ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন স্বাক্ষরিত হবার সঙ্গে সঙ্গে ত্রিশক্তি আঁতাত (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া) গঠন সম্পণ হয়। এটি ছিল জার্মানী, অস্ট্রিয়া ও ইতালীর মধ্যে সম্পাদিত ত্রিশক্তি মৈত্রীর প্রত্যুত্তর। এর ফলে ইউরােপ দুটি পক্ষ-বিরােধী দুটি পরস্পর-বিবদমান শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুটি পক্ষই আত্মশিবির রক্ষার অজুহাতে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ হল। এতে ইউরােপীয় রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠলেও শক্তিসাম্য বজায় ছিল। তাই ১১১৪ খ্রীষ্টাব্দের আগে এই অস্ত্র প্রতিযােগিতা প্রকাশ্য যুদ্ধের রূপ ধারণ করে নি।